আগের লাঙল যেভাবে যায়, পেছনের লাঙল সেভাবেই যায়

অনুগত বিরোধী দল হিসেবে জাতীয় পার্টির (জাপা) কেন্দ্রীয় নেতারা একসময় সরকারের কাছ থেকে বহুমুখী সুযোগ-সুবিধা নিয়েছেন। এর নেতিবাচক প্রভাব মাঠের নেতাদের মধ্যেও পড়েছে। সম্প্রতি ঢাকা-১৪ ও কুমিল্লা-৫ সংসদীয় আসনের উপনির্বাচনে ক্ষমতাসীনদের মাঠ খালি করে দিতে জাপার প্রার্থীরা ভোট থেকে সড়ে গেছেন। ওই ঘটনায় রাজনৈতিক মহলে ব্যাপক সমালোচনা হয়েছে।

একই ঘটনার পুনরাবৃত্তি কুমিল্লা-৭ আসনের উপনির্বাচনেও ঘটেছে। নৌকার প্রার্থী ডা. প্রাণ গোপাল দত্তকে মাঠ খালি করে দিয়ে গত বৃহস্পতিবার নির্বাচন থেকে সরে দাঁড়িয়েছেন জাপার প্রার্থী মো. লুৎফুর রেজা।

জানতে চাইলে জাপার এক প্রেসিডিয়াম সদস্য সংবাদকে বলেন, আঞ্চলিক একটা প্রবাদ আছে, ‘আগের লাঙল যেভাবে যায়, পেছনের লাঙল সেভাবেই যায়।’ আমাদের পার্টির অবস্থা এখন সেরকমই। তিনি বলেন, ‘নির্বাচনে থেকেই-বা কী হবে? সরে গেছে, ভালো হয়েছে। ফলাফল তো সবার জানা।’ প্রার্থী সরে গেলে যদি ভালো হয়, তাহলে প্রার্থী দেয়ার প্রয়োজন কী? সংবাদের এমন প্রশ্নের জবাবে তিনি বলেন, ‘সেটা পার্টির চেয়ারম্যানকে জিজ্ঞেস করেন।’ এ বিষয়ে কথা বলতে জাপার চেয়ারম্যান এবং মহাসচিব দুজনের মোবাইল ফোনে একাধিকবার চেষ্টা করেও কোন সাড়া পাওয়া যায়নি।

অভিযোগ রয়েছে, ক্ষমতাসীন দলের প্রার্থীদের কাছ থেকে আর্থিক সুবিধা নিয়েই জাপার প্রার্থীরা মনোনয়ন প্রত্যাহার করেছেন। সংশ্লিষ্ট এলাকার দলীয় (লাঙল) কর্মীদের মধ্যেও এমন আলোচনা রয়েছে। এ অভিযোগে কেন্দ্রের দায়িত্বশীল নেতাদের প্রশ্নের মুখোমুখি হতে হয়েছে জাপা প্রার্থীদের। যদিও এসব অভিযোগ মানতে নারাজ তারা।

একাধিক রাজনৈতিক বিশ্লেষকের মতে, জাতীয় পার্টির গত এক যুগ ক্ষমতাসীন আওয়ামী লীগের অনুগত রাজনীতি করেছে। বিরোধী দলে থেকেও মন্ত্রিত্ব নিয়েছেন দলটির জ্যেষ্ঠ নেতারা। কেন্দ্রীয় ছোটখাটো নেতারাও ক্ষমতাসীনদের সঙ্গে মিলেমিশে ব্যবসা-বাণিজ্য করেছেন। তদবিরবাজি, টেন্ডারবাজিসহ নানান অনৈতিক সুবিধাও নিয়েছেন অনেকে। এখন তৃণমূলেও সুযোগ হচ্ছে, রাজনীতি লাটে উঠাচ্ছেন সংশ্লিষ্ট নেতারা।

গত জুনে ঢাকা-১৪ সংসদীয় আসনে বিনা প্রতিদ্বন্দ্বিতায় নির্বাচিত হন শাহআলী থানা আওয়ামী লীগের সভাপতি আগা খান মিন্টু। প্রতিদ্বন্দ্বী তিন প্রার্থী- জাপার মোস্তাকুর রহমান, বিএনএফের কে ওয়াই এম কামরুল ইসলাম ও জাসদের আবু হানিফ মনোনয়ন প্রত্যাহার করে নেয়ায় এ আসনে ভোটের প্রয়োজন হয়নি।

একই সময় কুমিল্লা-৫ আসনে উপনির্বাচনে বিনা প্রতিদ্বন্দ্বিতায় নির্বাচিত হন আওয়ামী লীগের প্রার্থী মো. আবুল হাসেম খান। এই আসনে একমাত্র প্রতিদ্বন্দ্বী জাপার প্রার্থী মো. জসিম উদ্দিন ‘ব্যক্তিগত কারণ দেখিয়ে’ প্রার্থিতা প্রত্যাহার করে নেয়ায় ভোট ছাড়াই সংসদ সদস্য হন নৌকার প্রার্থী।

জাতীয় পার্টির কেন্দ্রীয় সূত্রে জানা গেছে, কেন্দ্রে না জানিয়ে ঢাকা-১৪ ও কুমিল্লা-৫ আসনের প্রার্থিতা প্রত্যাহার করার ঘটনা ভালোভাবে নেননি জাপার চেয়ারম্যান জি এম কাদের। তদন্ত কমিটি করে তিনি নেপথ্যের কারণ বের করার চেষ্টা করেছেন। তদন্ত কমিটি বলছে, মনোনয়নপত্র প্রত্যাহারের নেপথ্যে সবার বিরুদ্ধে ‘আর্থিক লেনদেনের’ অভিযোগ পাওয়া গেছে। তবে প্রমাণ জোগাড় করা সম্ভব হয়নি।

সর্বশেষ কুমিল্লা-৭ আসনে দলের প্রার্থীর সরে দাঁড়ানোর নেপথ্যের ঘটনা বের করতে কেন্দ্র থেকে অনুসন্ধান করা হচ্ছে।

তদন্তেই থেমে নেই দলের হাইকমান্ড। গত শুক্রবার লুৎফুর রেজাকে দল থেকে বহিষ্কার করা হয়েছে। তিনি জাপার কেন্দ্রীয় ভাইস চেয়ারম্যান ও কুমিল্লা উত্তর জেলার আহ্বায়ক ছিলেন। বহিষ্কারাদেশে কুমিল্লা উত্তর জেলার কমিটিও বিলুপ্ত ঘোষণা করেছে জাপা। এর আগে ঢাকা-১৪ আসনে দলীয় প্রার্থী মোস্তাকুর রহমান ও কুমিল্লা-৫ আসনের প্রার্থী জসিম উদ্দিনকেও দল থেকে বহিষ্কার করা হয়।

জাপার কেন্দ্রীয় এক নেতা বলেন, পার্টি চেয়ারম্যান জি এম কাদের তৃণমূলে দলকে শক্তিশালী করতে চান। জয়-পরাজয় যাইহোক, রাজনীতি চাঙা করার জন্য ভোটের মাঠে শেষ পর্যন্ত থাকা জরুরি বলে মনে করেন তিনি। যাদের লাঙ্গল প্রতীক দেয়া হয়েছে, সবাই শর্ত মেনেই মনোনয়ন পেয়েছেন। শেষ পর্যন্ত তারা কথা রাখেননি বলে মনোনয়নপত্র প্রত্যাহারের ঘটনা ঠেকানো যায়নি।

স্থানীয় নেতাকর্মীরা জানান, লুৎফুর রেজা জাতীয় পার্টিতে উপজেলা থেকে শুরু করে কেন্দ্রীয়ভাবে ভালো অবস্থানে ছিলেন। তারা বলছেন, ‘কী কারণে তিনি প্রার্থিতা প্রত্যাহার করে নিলেন, তা আমাদের বোধগম্য নয়।’

স্থানীয় একটি সূত্র বলছে, কুমিল্লা থেকে নির্বাচিত আওয়ামী লীগের এক সংসদ সদস্যের সঙ্গে ঢাকায় বৈঠক শেষে প্রার্থিতা প্রত্যাহার করেন জাপার লুৎফুর রেজা। এরপর তিনি গা ঢাকা দেন। এরপর থেকে তার ব্যক্তিগত মোবাইল নাম্বার বন্ধ রয়েছে।

জাপার প্রার্থীর পর বাংলাদেশ ন্যাশনাল আওয়ামী পার্টির (ন্যাপ) প্রার্থী মো. মনিরুল ইসলামও পারিবারিক কারণ দেখিয়ে নির্বাচন থেকে সরে দাঁড়ান।

জানতে চাইলে ন্যাপের ভারপ্রাপ্ত সাধারণ সম্পাদক ইসমাইল হোসেন গতকাল রোববার রাতে সংবাদকে বলেন, ‘কেন্দ্রের অনুমতি ছাড়াই মনিরুল ইসলাম প্রার্থিতা প্রত্যাহার করে নিয়েছেন।’ এক প্রশ্নের জবাবে ইসমাইল হোসেন বলেন, ‘আর্থিক সুবিধা নিয়ে তিনি (মনিরুল) এমনটি করেছেন, এমন কোন তথ্য বা অভিযোগ আমরা পাইনি। তবে তার প্রার্থিতা প্রত্যাহারের কারণ জানতে তদন্ত করা হবে।

সাধারণত, নির্বাচন থেকে সরে দাঁড়ানোর পর অনেক প্রার্থীই অভিযোগ করেন, ক্ষমতাসীন দলের প্রার্থীর পক্ষ থেকে তাদের নির্বাচন থেকে সরে যেতে চাপ দেয়া হয়েছে। কোন কোন ক্ষেত্রে ভয়ভীতিও দেখানোর কথা বলেন তারা।

এ বিষয়ে জাতীয় ছাত্রসমাজ কেন্দ্রীয় নির্বাহী কমিটির যুগ্ম সাধারণ সম্পাদক গাজী মো. আক্তার হোসেন সংবাদকে বলেন, ‘সম্প্রতি দুটি আসনের উপনির্বাচনে জাপার প্রার্থীদের মনোনয়ন প্রত্যাহারের বিষয়টি অত্যন্ত দুঃখজনক। আওয়ামী লীগ সরকার ক্ষমতায়। চাইলেও সরকারের সিদ্ধান্তের বাইরে গিয়ে আমরা কিছুই করতে পারি না। এ ক্ষেত্রে মাঠপর্যায়ে আমাদের দলের সাংগঠনিকভাবে শক্তিশালী অবস্থান না থাকায় ক্ষমতাসীন দলের নেতাকর্মীদের চাপসহ নানান কারণে মনোনয়ন প্রত্যাহারে বাধ্য হন প্রার্থীরা।’

তবে আওয়ামী লীগের প্রার্থী ডা. প্রাণ গোপাল দত্তের দাবি, কাউকে চাপ দিয়ে বা কোন কিছুর বিনিময়ে নির্বাচন থেকে সরানো হয়নি। তিনি সাংবাদিকদের বলেন, ‘ন্যাপের প্রার্থী মনিরুল আমার ছাত্র। তাই সে নির্বাচন করছে না। আর জাতীয় পার্টির লুৎফুর রেজা আমাকে আগেই বলেছিলেন, আমি নির্বাচন করলে তিনি নির্বাচন করবেন না।’

‘আর্থিক সুবিধা’ নিয়ে জাপা প্রার্থীদের ভোটের মাঠ ছাড়ার ঘটনা শুরু হয় একাদশ জাতীয় সংসদ নির্বাচনে। অভিযোগ রয়েছে, লক্ষ্মীপুর-২ আসনে টাকার বিনিময়ে ভোট থেকে সরে যান আওয়ামী লীগ নেতৃত্বাধীন মহাজোট থেকে মনোনয়ন পাওয়া জাপার প্রার্থী মোহাম্মদ নোমান। তিনি স্বতন্ত্র প্রার্থী শহিদ ইসলাম পাপুলের কাছ থেকে ১২ কোটি টাকা নিয়েছেন বলে তখন এলাকায় প্রচার ছিল। পাপুল ওই আসনে সংসদ সদস্য হন। আর দল থেকে বহিষ্কার হন নোমান।

সোমবার, ২০ সেপ্টেম্বর ২০২১ , ৫ আশ্বিন ১৪২৮ ১১ সফর ১৪৪৩

আগের লাঙল যেভাবে যায়, পেছনের লাঙল সেভাবেই যায়

নিজস্ব বার্তা পরিবেশক ও জেলা বার্তা পরিবেশক, কুমিল্লা

অনুগত বিরোধী দল হিসেবে জাতীয় পার্টির (জাপা) কেন্দ্রীয় নেতারা একসময় সরকারের কাছ থেকে বহুমুখী সুযোগ-সুবিধা নিয়েছেন। এর নেতিবাচক প্রভাব মাঠের নেতাদের মধ্যেও পড়েছে। সম্প্রতি ঢাকা-১৪ ও কুমিল্লা-৫ সংসদীয় আসনের উপনির্বাচনে ক্ষমতাসীনদের মাঠ খালি করে দিতে জাপার প্রার্থীরা ভোট থেকে সড়ে গেছেন। ওই ঘটনায় রাজনৈতিক মহলে ব্যাপক সমালোচনা হয়েছে।

একই ঘটনার পুনরাবৃত্তি কুমিল্লা-৭ আসনের উপনির্বাচনেও ঘটেছে। নৌকার প্রার্থী ডা. প্রাণ গোপাল দত্তকে মাঠ খালি করে দিয়ে গত বৃহস্পতিবার নির্বাচন থেকে সরে দাঁড়িয়েছেন জাপার প্রার্থী মো. লুৎফুর রেজা।

জানতে চাইলে জাপার এক প্রেসিডিয়াম সদস্য সংবাদকে বলেন, আঞ্চলিক একটা প্রবাদ আছে, ‘আগের লাঙল যেভাবে যায়, পেছনের লাঙল সেভাবেই যায়।’ আমাদের পার্টির অবস্থা এখন সেরকমই। তিনি বলেন, ‘নির্বাচনে থেকেই-বা কী হবে? সরে গেছে, ভালো হয়েছে। ফলাফল তো সবার জানা।’ প্রার্থী সরে গেলে যদি ভালো হয়, তাহলে প্রার্থী দেয়ার প্রয়োজন কী? সংবাদের এমন প্রশ্নের জবাবে তিনি বলেন, ‘সেটা পার্টির চেয়ারম্যানকে জিজ্ঞেস করেন।’ এ বিষয়ে কথা বলতে জাপার চেয়ারম্যান এবং মহাসচিব দুজনের মোবাইল ফোনে একাধিকবার চেষ্টা করেও কোন সাড়া পাওয়া যায়নি।

অভিযোগ রয়েছে, ক্ষমতাসীন দলের প্রার্থীদের কাছ থেকে আর্থিক সুবিধা নিয়েই জাপার প্রার্থীরা মনোনয়ন প্রত্যাহার করেছেন। সংশ্লিষ্ট এলাকার দলীয় (লাঙল) কর্মীদের মধ্যেও এমন আলোচনা রয়েছে। এ অভিযোগে কেন্দ্রের দায়িত্বশীল নেতাদের প্রশ্নের মুখোমুখি হতে হয়েছে জাপা প্রার্থীদের। যদিও এসব অভিযোগ মানতে নারাজ তারা।

একাধিক রাজনৈতিক বিশ্লেষকের মতে, জাতীয় পার্টির গত এক যুগ ক্ষমতাসীন আওয়ামী লীগের অনুগত রাজনীতি করেছে। বিরোধী দলে থেকেও মন্ত্রিত্ব নিয়েছেন দলটির জ্যেষ্ঠ নেতারা। কেন্দ্রীয় ছোটখাটো নেতারাও ক্ষমতাসীনদের সঙ্গে মিলেমিশে ব্যবসা-বাণিজ্য করেছেন। তদবিরবাজি, টেন্ডারবাজিসহ নানান অনৈতিক সুবিধাও নিয়েছেন অনেকে। এখন তৃণমূলেও সুযোগ হচ্ছে, রাজনীতি লাটে উঠাচ্ছেন সংশ্লিষ্ট নেতারা।

গত জুনে ঢাকা-১৪ সংসদীয় আসনে বিনা প্রতিদ্বন্দ্বিতায় নির্বাচিত হন শাহআলী থানা আওয়ামী লীগের সভাপতি আগা খান মিন্টু। প্রতিদ্বন্দ্বী তিন প্রার্থী- জাপার মোস্তাকুর রহমান, বিএনএফের কে ওয়াই এম কামরুল ইসলাম ও জাসদের আবু হানিফ মনোনয়ন প্রত্যাহার করে নেয়ায় এ আসনে ভোটের প্রয়োজন হয়নি।

একই সময় কুমিল্লা-৫ আসনে উপনির্বাচনে বিনা প্রতিদ্বন্দ্বিতায় নির্বাচিত হন আওয়ামী লীগের প্রার্থী মো. আবুল হাসেম খান। এই আসনে একমাত্র প্রতিদ্বন্দ্বী জাপার প্রার্থী মো. জসিম উদ্দিন ‘ব্যক্তিগত কারণ দেখিয়ে’ প্রার্থিতা প্রত্যাহার করে নেয়ায় ভোট ছাড়াই সংসদ সদস্য হন নৌকার প্রার্থী।

জাতীয় পার্টির কেন্দ্রীয় সূত্রে জানা গেছে, কেন্দ্রে না জানিয়ে ঢাকা-১৪ ও কুমিল্লা-৫ আসনের প্রার্থিতা প্রত্যাহার করার ঘটনা ভালোভাবে নেননি জাপার চেয়ারম্যান জি এম কাদের। তদন্ত কমিটি করে তিনি নেপথ্যের কারণ বের করার চেষ্টা করেছেন। তদন্ত কমিটি বলছে, মনোনয়নপত্র প্রত্যাহারের নেপথ্যে সবার বিরুদ্ধে ‘আর্থিক লেনদেনের’ অভিযোগ পাওয়া গেছে। তবে প্রমাণ জোগাড় করা সম্ভব হয়নি।

সর্বশেষ কুমিল্লা-৭ আসনে দলের প্রার্থীর সরে দাঁড়ানোর নেপথ্যের ঘটনা বের করতে কেন্দ্র থেকে অনুসন্ধান করা হচ্ছে।

তদন্তেই থেমে নেই দলের হাইকমান্ড। গত শুক্রবার লুৎফুর রেজাকে দল থেকে বহিষ্কার করা হয়েছে। তিনি জাপার কেন্দ্রীয় ভাইস চেয়ারম্যান ও কুমিল্লা উত্তর জেলার আহ্বায়ক ছিলেন। বহিষ্কারাদেশে কুমিল্লা উত্তর জেলার কমিটিও বিলুপ্ত ঘোষণা করেছে জাপা। এর আগে ঢাকা-১৪ আসনে দলীয় প্রার্থী মোস্তাকুর রহমান ও কুমিল্লা-৫ আসনের প্রার্থী জসিম উদ্দিনকেও দল থেকে বহিষ্কার করা হয়।

জাপার কেন্দ্রীয় এক নেতা বলেন, পার্টি চেয়ারম্যান জি এম কাদের তৃণমূলে দলকে শক্তিশালী করতে চান। জয়-পরাজয় যাইহোক, রাজনীতি চাঙা করার জন্য ভোটের মাঠে শেষ পর্যন্ত থাকা জরুরি বলে মনে করেন তিনি। যাদের লাঙ্গল প্রতীক দেয়া হয়েছে, সবাই শর্ত মেনেই মনোনয়ন পেয়েছেন। শেষ পর্যন্ত তারা কথা রাখেননি বলে মনোনয়নপত্র প্রত্যাহারের ঘটনা ঠেকানো যায়নি।

স্থানীয় নেতাকর্মীরা জানান, লুৎফুর রেজা জাতীয় পার্টিতে উপজেলা থেকে শুরু করে কেন্দ্রীয়ভাবে ভালো অবস্থানে ছিলেন। তারা বলছেন, ‘কী কারণে তিনি প্রার্থিতা প্রত্যাহার করে নিলেন, তা আমাদের বোধগম্য নয়।’

স্থানীয় একটি সূত্র বলছে, কুমিল্লা থেকে নির্বাচিত আওয়ামী লীগের এক সংসদ সদস্যের সঙ্গে ঢাকায় বৈঠক শেষে প্রার্থিতা প্রত্যাহার করেন জাপার লুৎফুর রেজা। এরপর তিনি গা ঢাকা দেন। এরপর থেকে তার ব্যক্তিগত মোবাইল নাম্বার বন্ধ রয়েছে।

জাপার প্রার্থীর পর বাংলাদেশ ন্যাশনাল আওয়ামী পার্টির (ন্যাপ) প্রার্থী মো. মনিরুল ইসলামও পারিবারিক কারণ দেখিয়ে নির্বাচন থেকে সরে দাঁড়ান।

জানতে চাইলে ন্যাপের ভারপ্রাপ্ত সাধারণ সম্পাদক ইসমাইল হোসেন গতকাল রোববার রাতে সংবাদকে বলেন, ‘কেন্দ্রের অনুমতি ছাড়াই মনিরুল ইসলাম প্রার্থিতা প্রত্যাহার করে নিয়েছেন।’ এক প্রশ্নের জবাবে ইসমাইল হোসেন বলেন, ‘আর্থিক সুবিধা নিয়ে তিনি (মনিরুল) এমনটি করেছেন, এমন কোন তথ্য বা অভিযোগ আমরা পাইনি। তবে তার প্রার্থিতা প্রত্যাহারের কারণ জানতে তদন্ত করা হবে।

সাধারণত, নির্বাচন থেকে সরে দাঁড়ানোর পর অনেক প্রার্থীই অভিযোগ করেন, ক্ষমতাসীন দলের প্রার্থীর পক্ষ থেকে তাদের নির্বাচন থেকে সরে যেতে চাপ দেয়া হয়েছে। কোন কোন ক্ষেত্রে ভয়ভীতিও দেখানোর কথা বলেন তারা।

এ বিষয়ে জাতীয় ছাত্রসমাজ কেন্দ্রীয় নির্বাহী কমিটির যুগ্ম সাধারণ সম্পাদক গাজী মো. আক্তার হোসেন সংবাদকে বলেন, ‘সম্প্রতি দুটি আসনের উপনির্বাচনে জাপার প্রার্থীদের মনোনয়ন প্রত্যাহারের বিষয়টি অত্যন্ত দুঃখজনক। আওয়ামী লীগ সরকার ক্ষমতায়। চাইলেও সরকারের সিদ্ধান্তের বাইরে গিয়ে আমরা কিছুই করতে পারি না। এ ক্ষেত্রে মাঠপর্যায়ে আমাদের দলের সাংগঠনিকভাবে শক্তিশালী অবস্থান না থাকায় ক্ষমতাসীন দলের নেতাকর্মীদের চাপসহ নানান কারণে মনোনয়ন প্রত্যাহারে বাধ্য হন প্রার্থীরা।’

তবে আওয়ামী লীগের প্রার্থী ডা. প্রাণ গোপাল দত্তের দাবি, কাউকে চাপ দিয়ে বা কোন কিছুর বিনিময়ে নির্বাচন থেকে সরানো হয়নি। তিনি সাংবাদিকদের বলেন, ‘ন্যাপের প্রার্থী মনিরুল আমার ছাত্র। তাই সে নির্বাচন করছে না। আর জাতীয় পার্টির লুৎফুর রেজা আমাকে আগেই বলেছিলেন, আমি নির্বাচন করলে তিনি নির্বাচন করবেন না।’

‘আর্থিক সুবিধা’ নিয়ে জাপা প্রার্থীদের ভোটের মাঠ ছাড়ার ঘটনা শুরু হয় একাদশ জাতীয় সংসদ নির্বাচনে। অভিযোগ রয়েছে, লক্ষ্মীপুর-২ আসনে টাকার বিনিময়ে ভোট থেকে সরে যান আওয়ামী লীগ নেতৃত্বাধীন মহাজোট থেকে মনোনয়ন পাওয়া জাপার প্রার্থী মোহাম্মদ নোমান। তিনি স্বতন্ত্র প্রার্থী শহিদ ইসলাম পাপুলের কাছ থেকে ১২ কোটি টাকা নিয়েছেন বলে তখন এলাকায় প্রচার ছিল। পাপুল ওই আসনে সংসদ সদস্য হন। আর দল থেকে বহিষ্কার হন নোমান।