তালা উপজেলা স্বাস্থ্য কমপ্লেক্স

বিশেষ স্বার্থে বন্ধ পড়ে থাকে অত্যাধুনিক অস্ত্রোপচার কক্ষ!

প্যাথলজি-আল্ট্রাসনোগ্রাম বন্ধ মাসের পর মাস

৫০ শয্যা বিশিষ্ট তালা উপজেলা স্বাস্থ্য কমপ্লেক্সে একটি মানসম্পন্ন অপারেশন থিয়েটার ও প্রয়োজনীয় অত্যাধুনিক যন্ত্রপাতি থাকলেও হয় না অপারেশন। এছাড়া প্যাথোলজি ও আল্ট্রাসনোগ্রাম বিভাগ দীর্ঘদিন বন্ধ থাকায় মূল্যবান যন্ত্রপাতিগুলো নষ্ট হবার উপক্রম। এতে একদিকে সরকারি সম্পত্তির ক্ষতি হচ্ছে, অপরদিকে জনভোগান্তি বাড়ছে। ফলে সচেতনমহলের মাঝে ক্ষোভ বৃদ্ধি পাচ্ছে।

জানা গেছে, তালা হাসপাতাল ৫০ শয্যায় উন্নীত হবার পর নতুন ভবনের নতুন অপারেশন থিয়েটারে নব-উদ্যোমে রোগীদের অপারেশন কার্যক্রম শুরু হয়। কিন্তু কিছুদিন যেতে না যেতে আকস্মিক অপারেশন কার্যক্রম বন্ধ হয়ে যায়। অভিযোগ ওঠে- নিজেদের বিশেষ স্বার্থে কতিপয় ডাক্তার এবং কর্মচারী যোগসাজশে হাসপাতালের অপারেশন কার্যক্রম বন্ধ করে দেন। এর বহু মাস পর জনদাবির মুখে হাসপাতালের স্বাস্থ্য কমিটি এবং স্থানীয় সংসদ সদস্য অ্যাড. মুস্তফা লুৎফুল্লাহ উদ্যোগ নিয়ে অপারেশন কার্যক্রম পুনরায় শুরু করেন। কিন্তু কিছুদিন যেতে না যেতে আবারও সেই কার্যক্রম বন্ধ হয়ে যায়।

সূত্র জানায়, অ্যানেস্থেশিয়া এবং অপারেশন বিশেষজ্ঞ নেই- এমন অযুহাত দিয়ে হাসপাতালের অপারেশন কার্যক্রম পরিকল্পিত ভাবে মাসের পর মাস বন্ধ রাখা হয়েছে। আর এখানকার অপারেশন কার্যক্রম স্থায়ীভাবে বন্ধ রাখার জন্য কর্তৃপক্ষ সবধরনের ব্যবস্থা নিচ্ছে! যার ধারাবাহিকতায় অপারেশন থিয়েটার সংশ্লিষ্ট “পোষ্ট অপারেটিভ রুম” বাতিল করে সেমিনার কক্ষ করা হয়েছে।

তালা নাগরীক কমিটির সাধারন সম্পাদক শফিকুল ইসলাম বলেন, তালা হাসপাতালে অপারেশন কার্যক্রম বন্ধ করে দিয়ে রোগীদের পাশ্ববর্তী বিভিন্ন প্রাইভেট ক্লিনিকে প্রেরন করা হয়। সেখানে যেয়ে হাসপাতালের ডাক্তাররা ওই রোগীদের অপারেশন করে মোটা অংকের টাকা হাতিয়ে নিচ্ছে। এমনকি অফিস সময়ে কোনও এক ডাক্তার ক্লিনিকে যেয়ে অপারেশন করেন বলে তথ্য রয়েছে।

তিনি বলেন, তালা হাসপাতালে বছরের পর বছর ধরে চরম দূর্নীতি, অব্যবস্থাপনা এবং অনিয়ম চলে আসছে। এই হাসপাতালের সাবেক এক স্টাফের নেতৃত্বে একটি সিন্ডিকেট এখনও হাসপাতালের অর্থনৈতিক কার্যক্রম পরিচালনা করে লাখ লাখ টাকা লুটপাট করে হাসপাতালকে ধ্বংসের দিকে নিচ্ছে। কিন্তু এসব দেখার কেউ নেই!

হাসপাতালের একটি সূত্র জানায়, পরিকল্পিতভাবে হাসপাতালের অপারেশন কার্যক্রম বন্ধ রাখার পাশাপাশি প্যাথোলজি ও আল্ট্রাসনোগ্রাম সেবা বন্ধ করে রাখা হয়েছে। এরফলে হাসপাতালে অপারেশন বা প্যাথোলজি বা আল্ট্রাসনো সেবা পেতে যে খরচ হয় তা বাইরের থেকে করাতে রোগীদের ক্ষেত্রে বিশেষ ৮/১০ গুন বেশি খরচ হচ্ছে। অতিরিক্ত এই টাকার একটি অংশ কমিশন হিসেবে সংশ্লিষ্ট কতিপয় ডাক্তার হিসেব করে পেয়ে যান। তবে উপজেলা স্বাস্থ্য কর্মকর্তা ডা. রাজিব সরদার এই অভিযোগগুলো অস্বীকার করে বলেন, অ্যানেস্থেশিয়া এবং কনসালটেন্ট না থাকায় দীর্ঘদিন অপারেশন কার্যক্রম বন্ধ রয়েছে। এছাড়া এখানকার ল্যাব টেকনিশিয়ান মাতৃত্বকালীন ছুটিতে থাকায় প্যাথলজি বন্ধ। আর আপাতত সপ্তাহে দু’দিন আল্ট্রাসনোগ্রাফি কার্যক্রম চালানো হচ্ছে। তিনি বলেন, বন্ধ থাকা এইসব সেবা কার্যক্রম অচিরেই আবার চালু করা হবে। এছাড়া একটিমহল হাসপাতাল ও তাঁর বিরুদ্ধে অপপ্রচার এবং ষড়যন্ত্র করছে বলে তিনি জানান।

এব্যপারে বীর মুক্তিযোদ্ধা আলাউদ্দীন জোয়াদ্দার বলেন, ডাক্তারদের কমিশন বানিজ্য বন্ধ করতে না পারলে হাসপাতালের উন্নতি হবেনা। এই হাসপাতালে ডাক্তার খুবই কম। যে ক’জন ডাক্তার রয়েছে তাদের সকলের কাছে রোগীরা যায়না, আবার অনেকে নিয়োমিত হাসপাতালে আসেননা। বর্তমানে ডা. আল আমীন সোহান এবং ডা. অতনু ঘোষ অন্যদের তুলনায় নিরলস পরিশ্রম করে রোগী দেখেন।

নাম প্রকাশে অনিচ্ছুক হাসপাতালের আর একটি সূত্র জানায়, দূর্নীতি এবং অনিয়মের যাঁতাকলে পড়ে হাসপাতালের অনেক সৎ ডাক্তার এবং স্টাফরা হয়রানীর শিকার হয়েছেন। দূর্নীতির প্রতিবাদ করায় অনেককে শোকজ করা সহ রাতারাতি হয়রানীকর বদলি করা হয়েছে। আবার মূখ বন্ধ রাখার জন্য এখনও অনেককে হুমকির মুখে রাখা হয়েছে।

উপজেলা স্বাস্থ্য কর্মকর্তা ডা. রাজিব সরদার কিছু সমস্যার কথা স্বীকার করে বলেন, বর্তমানে স্বচ্ছতার সাথে হাসপাতাল পরিচালনায় সকল ব্যবস্থা নেয়া হয়েছে। জানতে চাইলে তালা উপজেলা পরিষদ চেয়ারম্যান ঘোষ সনৎ কুমার বলেন, হাসপাতালের একটি স্বাস্থ্য কমিটি রয়েছে। কমিটির সভা অনেকদিন হয়নি। এখানে অপারেশন কার্যক্রম সহ প্যাথলজি এবং আল্ট্রাসনোগ্রাম বন্ধ রয়েছে তা’ আমার জানা নেই।

এব্যপারে উপজেলা স্বাস্থ্য কমপ্লেক্স’র স্বাস্থ্য কমিটির সভাপতি ও সংশ্লিষ্ট সাতক্ষীরা-১ (তালা-কলারোয়া) সংসদ সদস্য অ্যাড. মুস্তফা লুৎফুল্লাহ জানান, উপজেলা স্বাস্থ্য কর্মকর্তা ডা. রাজিব সরদারকে নিয়ে আমি বিব্রত। তাঁর বিষয়ে সিভিল সার্জনকে কয়েকবার অবহিত করা হয়েছে। তিনি ওই পদের জন্য উপযুক্ত কিনা তা আমার ভাল জানা নেই। স্বাস্থ্য কর্মকর্তার বিরুদ্ধে ইতোপূর্বে একাধিকবার নিউজ হয়েছে, নিউজে অসত্য কিছু পাওয়া যায়নি।

বৃহস্পতিবার, ৩০ সেপ্টেম্বর ২০২১ , ১৫ আশ্বিন ১৪২৮ ২১ সফর ১৪৪৩

তালা উপজেলা স্বাস্থ্য কমপ্লেক্স

বিশেষ স্বার্থে বন্ধ পড়ে থাকে অত্যাধুনিক অস্ত্রোপচার কক্ষ!

প্যাথলজি-আল্ট্রাসনোগ্রাম বন্ধ মাসের পর মাস

প্রতিনিধি, তালা (সাতক্ষীরা)

image

৫০ শয্যা বিশিষ্ট তালা উপজেলা স্বাস্থ্য কমপ্লেক্সে একটি মানসম্পন্ন অপারেশন থিয়েটার ও প্রয়োজনীয় অত্যাধুনিক যন্ত্রপাতি থাকলেও হয় না অপারেশন। এছাড়া প্যাথোলজি ও আল্ট্রাসনোগ্রাম বিভাগ দীর্ঘদিন বন্ধ থাকায় মূল্যবান যন্ত্রপাতিগুলো নষ্ট হবার উপক্রম। এতে একদিকে সরকারি সম্পত্তির ক্ষতি হচ্ছে, অপরদিকে জনভোগান্তি বাড়ছে। ফলে সচেতনমহলের মাঝে ক্ষোভ বৃদ্ধি পাচ্ছে।

জানা গেছে, তালা হাসপাতাল ৫০ শয্যায় উন্নীত হবার পর নতুন ভবনের নতুন অপারেশন থিয়েটারে নব-উদ্যোমে রোগীদের অপারেশন কার্যক্রম শুরু হয়। কিন্তু কিছুদিন যেতে না যেতে আকস্মিক অপারেশন কার্যক্রম বন্ধ হয়ে যায়। অভিযোগ ওঠে- নিজেদের বিশেষ স্বার্থে কতিপয় ডাক্তার এবং কর্মচারী যোগসাজশে হাসপাতালের অপারেশন কার্যক্রম বন্ধ করে দেন। এর বহু মাস পর জনদাবির মুখে হাসপাতালের স্বাস্থ্য কমিটি এবং স্থানীয় সংসদ সদস্য অ্যাড. মুস্তফা লুৎফুল্লাহ উদ্যোগ নিয়ে অপারেশন কার্যক্রম পুনরায় শুরু করেন। কিন্তু কিছুদিন যেতে না যেতে আবারও সেই কার্যক্রম বন্ধ হয়ে যায়।

সূত্র জানায়, অ্যানেস্থেশিয়া এবং অপারেশন বিশেষজ্ঞ নেই- এমন অযুহাত দিয়ে হাসপাতালের অপারেশন কার্যক্রম পরিকল্পিত ভাবে মাসের পর মাস বন্ধ রাখা হয়েছে। আর এখানকার অপারেশন কার্যক্রম স্থায়ীভাবে বন্ধ রাখার জন্য কর্তৃপক্ষ সবধরনের ব্যবস্থা নিচ্ছে! যার ধারাবাহিকতায় অপারেশন থিয়েটার সংশ্লিষ্ট “পোষ্ট অপারেটিভ রুম” বাতিল করে সেমিনার কক্ষ করা হয়েছে।

তালা নাগরীক কমিটির সাধারন সম্পাদক শফিকুল ইসলাম বলেন, তালা হাসপাতালে অপারেশন কার্যক্রম বন্ধ করে দিয়ে রোগীদের পাশ্ববর্তী বিভিন্ন প্রাইভেট ক্লিনিকে প্রেরন করা হয়। সেখানে যেয়ে হাসপাতালের ডাক্তাররা ওই রোগীদের অপারেশন করে মোটা অংকের টাকা হাতিয়ে নিচ্ছে। এমনকি অফিস সময়ে কোনও এক ডাক্তার ক্লিনিকে যেয়ে অপারেশন করেন বলে তথ্য রয়েছে।

তিনি বলেন, তালা হাসপাতালে বছরের পর বছর ধরে চরম দূর্নীতি, অব্যবস্থাপনা এবং অনিয়ম চলে আসছে। এই হাসপাতালের সাবেক এক স্টাফের নেতৃত্বে একটি সিন্ডিকেট এখনও হাসপাতালের অর্থনৈতিক কার্যক্রম পরিচালনা করে লাখ লাখ টাকা লুটপাট করে হাসপাতালকে ধ্বংসের দিকে নিচ্ছে। কিন্তু এসব দেখার কেউ নেই!

হাসপাতালের একটি সূত্র জানায়, পরিকল্পিতভাবে হাসপাতালের অপারেশন কার্যক্রম বন্ধ রাখার পাশাপাশি প্যাথোলজি ও আল্ট্রাসনোগ্রাম সেবা বন্ধ করে রাখা হয়েছে। এরফলে হাসপাতালে অপারেশন বা প্যাথোলজি বা আল্ট্রাসনো সেবা পেতে যে খরচ হয় তা বাইরের থেকে করাতে রোগীদের ক্ষেত্রে বিশেষ ৮/১০ গুন বেশি খরচ হচ্ছে। অতিরিক্ত এই টাকার একটি অংশ কমিশন হিসেবে সংশ্লিষ্ট কতিপয় ডাক্তার হিসেব করে পেয়ে যান। তবে উপজেলা স্বাস্থ্য কর্মকর্তা ডা. রাজিব সরদার এই অভিযোগগুলো অস্বীকার করে বলেন, অ্যানেস্থেশিয়া এবং কনসালটেন্ট না থাকায় দীর্ঘদিন অপারেশন কার্যক্রম বন্ধ রয়েছে। এছাড়া এখানকার ল্যাব টেকনিশিয়ান মাতৃত্বকালীন ছুটিতে থাকায় প্যাথলজি বন্ধ। আর আপাতত সপ্তাহে দু’দিন আল্ট্রাসনোগ্রাফি কার্যক্রম চালানো হচ্ছে। তিনি বলেন, বন্ধ থাকা এইসব সেবা কার্যক্রম অচিরেই আবার চালু করা হবে। এছাড়া একটিমহল হাসপাতাল ও তাঁর বিরুদ্ধে অপপ্রচার এবং ষড়যন্ত্র করছে বলে তিনি জানান।

এব্যপারে বীর মুক্তিযোদ্ধা আলাউদ্দীন জোয়াদ্দার বলেন, ডাক্তারদের কমিশন বানিজ্য বন্ধ করতে না পারলে হাসপাতালের উন্নতি হবেনা। এই হাসপাতালে ডাক্তার খুবই কম। যে ক’জন ডাক্তার রয়েছে তাদের সকলের কাছে রোগীরা যায়না, আবার অনেকে নিয়োমিত হাসপাতালে আসেননা। বর্তমানে ডা. আল আমীন সোহান এবং ডা. অতনু ঘোষ অন্যদের তুলনায় নিরলস পরিশ্রম করে রোগী দেখেন।

নাম প্রকাশে অনিচ্ছুক হাসপাতালের আর একটি সূত্র জানায়, দূর্নীতি এবং অনিয়মের যাঁতাকলে পড়ে হাসপাতালের অনেক সৎ ডাক্তার এবং স্টাফরা হয়রানীর শিকার হয়েছেন। দূর্নীতির প্রতিবাদ করায় অনেককে শোকজ করা সহ রাতারাতি হয়রানীকর বদলি করা হয়েছে। আবার মূখ বন্ধ রাখার জন্য এখনও অনেককে হুমকির মুখে রাখা হয়েছে।

উপজেলা স্বাস্থ্য কর্মকর্তা ডা. রাজিব সরদার কিছু সমস্যার কথা স্বীকার করে বলেন, বর্তমানে স্বচ্ছতার সাথে হাসপাতাল পরিচালনায় সকল ব্যবস্থা নেয়া হয়েছে। জানতে চাইলে তালা উপজেলা পরিষদ চেয়ারম্যান ঘোষ সনৎ কুমার বলেন, হাসপাতালের একটি স্বাস্থ্য কমিটি রয়েছে। কমিটির সভা অনেকদিন হয়নি। এখানে অপারেশন কার্যক্রম সহ প্যাথলজি এবং আল্ট্রাসনোগ্রাম বন্ধ রয়েছে তা’ আমার জানা নেই।

এব্যপারে উপজেলা স্বাস্থ্য কমপ্লেক্স’র স্বাস্থ্য কমিটির সভাপতি ও সংশ্লিষ্ট সাতক্ষীরা-১ (তালা-কলারোয়া) সংসদ সদস্য অ্যাড. মুস্তফা লুৎফুল্লাহ জানান, উপজেলা স্বাস্থ্য কর্মকর্তা ডা. রাজিব সরদারকে নিয়ে আমি বিব্রত। তাঁর বিষয়ে সিভিল সার্জনকে কয়েকবার অবহিত করা হয়েছে। তিনি ওই পদের জন্য উপযুক্ত কিনা তা আমার ভাল জানা নেই। স্বাস্থ্য কর্মকর্তার বিরুদ্ধে ইতোপূর্বে একাধিকবার নিউজ হয়েছে, নিউজে অসত্য কিছু পাওয়া যায়নি।