অপহরণ মামলার তদন্তে সন্ধান মিললো ছিনতাই চক্রের আস্তানার

আন্তঃজেলা ব্যাটারিচালিত রিকশা, মিশুক, ইজিবাইকের মতো তিন চাকার যানবাহন ছিনতাই চক্রের ৬ জনকে গ্রেফতারের কথা জানিয়েছে পুলিশ ব্যুরো অব ইনভেস্টিগেশনের (পিবিআই) নারায়ণগঞ্জ জেলা কার্যালয়। ব্যাটারিচালিত রিকশা (মিশুক) চালক আবদুল কুদ্দুস অপহরণ মামলার তদন্তে নেমে তাদের গ্রেপ্তার করা হয়েছে বলে জানায় পিবিআই। গতকাল দুপুর সাড়ে ১২টায় পিবিআইয়ের জেলা কার্যালয়ে সংবাদ সম্মেলনে সাংবাদিকদের বিস্তারিত জানান পুলিশ সুপার মনিরুল ইসলাম।

তিনি জানান, গত ৬ সেপ্টেম্বর বিকেলে নারায়ণগঞ্জের ফতুল্লার নরসিংহপুর কাউয়াপাড়া এলাকার জাহাঙ্গীরের গ্যারেজ থেকে ব্যাটারিচালিত মিশুক গাড়ি নিয়ে বের হন আবদুল কুদ্দুস। রাতে বাসায় না ফেরায় এবং কুদ্দুসের মোবাইল নম্বর বন্ধ পেয়ে বিভিন্ন জায়গায় তাকে খোঁজাখুঁজি করা হয়। পরে ১৮ সেপ্টেম্বর ফতুল্লা থানায় একটি সাধারণ ডায়েরি করে তার স্ত্রী রীনা খাতুন। পরে অপহরণ মামলা করলে পিবিআই মামলাটি তদন্তের দায়িত্ব নেয়।

পিবিআই নারায়ণগঞ্জের পুলিশ সুপার মনিরুল ইসলাম জানান, মামলাটি তদন্তের দায়িত্ব পান এসআই মাজহারুল ইসলাম। তাকে সহযোগিতা করেন এসআই শাকিল হোসেন। তারা তথ্য প্রযুক্তির সহায়তায় কুদ্দুস নিখোঁজের ঘটনার সঙ্গে জড়িত ৬ জনকে গ্রেপ্তার করে।

গ্রেপ্তারকৃত আসামিরা হলো : নারায়ণগঞ্জের বন্দর উপজেলার ধামগড় ইউপির চৌরারবাড়ি এলাকার আবদুস সালামের ছেলে শাহ্ আলম (৩৮), বরগুনার আমতলী এলাকার মৃত নুরুল ইসলামের ছেলে হালিম (৪২), পিরোজপুরের কাউখালী জোলাগাতি এলাকার আবদুল খালেকের ছেলে মো. শহিদুল (৩২), বরগুনার বউঠাকুরানী এলাকার মৃত আবদুর রবের ছেলে বাদশা (৪৭), নারায়ণগঞ্জের সোনারগাঁয়ের হাতুরাপাড়া এলাকার সালাম মিয়ার ছেলে মো. আসলাম (৩০), একই উপজেলার পেঁচাইন এলাকার মৃত আলী আকবরের ছেলে মো. মনির (৪০)। গত এক সপ্তাহ নারায়ণগঞ্জ জেলার সোনারগাঁ, আড়াইহাজার, নীলফামারী জেলার ডিমলা থানা এলাকা এবং ঢাকার বিভিন্ন জায়গায় অভিযান পরিচালনা করে তাদের গ্রেপ্তার করা হয় বলে জানায় পিবিআই। গ্রেপ্তার আসামি শাহ্ আলমের কাছ থেকে নিখোঁজ আবদুল কুদ্দুসের মোবাইল ও একটি চাকু (সুইচ গিয়ার) জব্দ করা হয়েছে।

পিবিআই বলছে, আসামিদের রিমান্ডে নিয়ে ব্যাপক জিজ্ঞাসাবাদ করা হলে তারা তাদের ব্যাটারিচালিত রিকশা, ইজিবাইক ছিনতাইয়ের অভিনব কৌশলের কথা জানায়। আসামিদের দেয়া তথ্যের বরাতে পিবিআই জানায়, তারা মূলত ৮-১০ জনের একটি দল নারায়ণগঞ্জ জেলাসহ আশেপাশের বিভিন্ন জেলায় রিকশা, ইজিবাইক ছিনতাই করে থাকে। চক্রটি ছিনতাইয়ের সময় তিনটি পদ্ধতি অবলম্বন করে। ছিনতাইয়ের প্রয়োজনে রিকশা বা ইজিবাইক চালককে হত্যাও করে তারা।

পিবিআইর এসপি মনিরুল ইসলাম বলেন, গত ৬ সেপ্টেম্বর সন্ধ্যা আনুমানিক ৭টার দিকে ছিনতাই চক্রের সদস্য আসামি শাহ্ আলম, হালিম এবং রাশেদ ওরফে রিয়ন ভুক্তভোগী মিশুক চালক কুদ্দুসকে নারায়ণগঞ্জ জেলার চিটাগাং রোড স্ট্যান্ড থেকে ৫০০ টাকা ভাড়ায় শহরের কালীরবাজারে আপ-ডাউন যাওয়ার উদ্দেশ্যে যাত্রা শুরু করে। পথিমধ্যে তারা আদমজী এলাকায় কুদ্দুসকে নিয়ে পূর্বনির্ধারিত চায়ের দোকানে নিয়ে চা খেয়ে ঘনিষ্ঠতা বাড়ায়। তারা নারায়ণগঞ্জ সদরের টানবাজারে গিয়ে ৩০০ টাকায় আধা লিটার মদ কিনে। মদ কেনার পর তারা খানপুর হাসপাতালের আশপাশের স্থানে গিয়ে নিজেরা মদ খায় এবং ভুক্তভোগী চালককে মদ খাওয়ার প্রস্তাব দিলে সেও মদ খেতে রাজি হয়। কৌশলে আসামি শাহ্ আলম মদের মধ্যে উচ্চমাত্রার ঘুমের ওষুধ মিশিয়ে দেয়। মদ খেয়ে কুদ্দুস অচেতন হয়ে পড়লে তাকে সিদ্ধিরগঞ্জের আদমজীর বিহারী পট্টি এলাকায় একটি ময়লার ভাগাড়ে ফেলে রেখে গাড়ি নিয়ে পালিয়ে যায় ছিনতাইকারী চক্র।

পরে ওই গাড়ি আসলামের কাছে ৩৬ হাজার টাকায় বিক্রি করে দেয়। পরে মনিরের মাধ্যমে সে গাড়ির বিভিন্ন অংশ রং করে পরিবর্তন করে ফেলে। আসামিদের দেয়া তথ্যমতে ছিনতাই হওয়া মিশুক (ব্যাটারিচালিত রিকশা) আসলাম ও মনিরের যৌথ মালিকানার গ্যারেজের পেছন থেকে উদ্ধার করা হয়। জিজ্ঞাসাবাদে আসামি জানিয়েছে, গত ৩ বছর ধরে চক্রটি এই ছিনতাই কার্যক্রম চালিয়ে আসছে। এই সময় তারা আড়াইশোরও বেশি ইজিবাইক, রিকশা ছিনতাই করেছে। তদন্তে ঢাকা, নারায়ণগঞ্জসহ আশপাশের এলাকায় আরও পাঁচটি চোরাই গ্যারেজের সন্ধান পেয়েছে বলে জানায় পিবিআই। ওইসব গ্যারেজেও অফিনার চালানো হবে এবং এই চক্রের অন্য সদস্যদেরও গ্রেপ্তার করা হবে বলে জানান এসপি মনিরুল ইসলাম।

এদিকে অপহরণ মামলার ভুক্তভোগী আবদুল কুদ্দুসকে এখনও উদ্ধার করা যায়নি বলে জানিয়েছে পিবিআই। তাকে উদ্ধারের চেষ্টা চলছে বলে জানায় সংস্থাটি।

আরও খবর
নারীদের বাদ দিয়ে ডেমোগ্রাফিক ডিভিডেন্টের সুবিধা অর্জন সম্ভব নয় : স্পিকার
নির্বাচন কমিশন গঠন করা উচিত সব রাজনৈতিক দলের ঐকমত্যে সিইসি
গণটিকায় নারীদের উপস্থিতি ছিল বেশি
দেশের ৫০ শতাংশ মানুষকে ডিসেম্বরের মধ্যে টিকার আওতায় আনা হবে
দ্বিতীয় ধাপে ৮৪৮ ইউপিতে ভোট ১১ নভেম্বর
আগাম জামিন পাননি বসুন্ধরার এমডি আনভীর
পরীমনির রিমান্ড নিয়ে দুই বিচারকের কাছে ফের ব্যাখ্যা চাইলেন হাইকোর্ট
সংসদীয় আসন ও ১০ পৌরসভার ভোট ২ নভেম্বর
ডেঙ্গু আক্রান্ত ১৮ হাজার ছাড়িয়েছে, মৃত্যু ৬৭
আরব আমিরাতে যেতে বাধা কাটলো প্রবাসীদের
নিম্ন আদালতের সব রায় প্রকাশ্যে দেয়ার নির্দেশ
৬ কর্মকর্তার সমন্বয়ে কমিটি গঠন ঢাকা ওয়াসার
যে গ্রামে ছিল হানাহানি সেখানে এখন বইছে সুবাতাস

বৃহস্পতিবার, ৩০ সেপ্টেম্বর ২০২১ , ১৫ আশ্বিন ১৪২৮ ২১ সফর ১৪৪৩

অপহরণ মামলার তদন্তে সন্ধান মিললো ছিনতাই চক্রের আস্তানার

প্রতিনিধি, নারায়ণগঞ্জ

আন্তঃজেলা ব্যাটারিচালিত রিকশা, মিশুক, ইজিবাইকের মতো তিন চাকার যানবাহন ছিনতাই চক্রের ৬ জনকে গ্রেফতারের কথা জানিয়েছে পুলিশ ব্যুরো অব ইনভেস্টিগেশনের (পিবিআই) নারায়ণগঞ্জ জেলা কার্যালয়। ব্যাটারিচালিত রিকশা (মিশুক) চালক আবদুল কুদ্দুস অপহরণ মামলার তদন্তে নেমে তাদের গ্রেপ্তার করা হয়েছে বলে জানায় পিবিআই। গতকাল দুপুর সাড়ে ১২টায় পিবিআইয়ের জেলা কার্যালয়ে সংবাদ সম্মেলনে সাংবাদিকদের বিস্তারিত জানান পুলিশ সুপার মনিরুল ইসলাম।

তিনি জানান, গত ৬ সেপ্টেম্বর বিকেলে নারায়ণগঞ্জের ফতুল্লার নরসিংহপুর কাউয়াপাড়া এলাকার জাহাঙ্গীরের গ্যারেজ থেকে ব্যাটারিচালিত মিশুক গাড়ি নিয়ে বের হন আবদুল কুদ্দুস। রাতে বাসায় না ফেরায় এবং কুদ্দুসের মোবাইল নম্বর বন্ধ পেয়ে বিভিন্ন জায়গায় তাকে খোঁজাখুঁজি করা হয়। পরে ১৮ সেপ্টেম্বর ফতুল্লা থানায় একটি সাধারণ ডায়েরি করে তার স্ত্রী রীনা খাতুন। পরে অপহরণ মামলা করলে পিবিআই মামলাটি তদন্তের দায়িত্ব নেয়।

পিবিআই নারায়ণগঞ্জের পুলিশ সুপার মনিরুল ইসলাম জানান, মামলাটি তদন্তের দায়িত্ব পান এসআই মাজহারুল ইসলাম। তাকে সহযোগিতা করেন এসআই শাকিল হোসেন। তারা তথ্য প্রযুক্তির সহায়তায় কুদ্দুস নিখোঁজের ঘটনার সঙ্গে জড়িত ৬ জনকে গ্রেপ্তার করে।

গ্রেপ্তারকৃত আসামিরা হলো : নারায়ণগঞ্জের বন্দর উপজেলার ধামগড় ইউপির চৌরারবাড়ি এলাকার আবদুস সালামের ছেলে শাহ্ আলম (৩৮), বরগুনার আমতলী এলাকার মৃত নুরুল ইসলামের ছেলে হালিম (৪২), পিরোজপুরের কাউখালী জোলাগাতি এলাকার আবদুল খালেকের ছেলে মো. শহিদুল (৩২), বরগুনার বউঠাকুরানী এলাকার মৃত আবদুর রবের ছেলে বাদশা (৪৭), নারায়ণগঞ্জের সোনারগাঁয়ের হাতুরাপাড়া এলাকার সালাম মিয়ার ছেলে মো. আসলাম (৩০), একই উপজেলার পেঁচাইন এলাকার মৃত আলী আকবরের ছেলে মো. মনির (৪০)। গত এক সপ্তাহ নারায়ণগঞ্জ জেলার সোনারগাঁ, আড়াইহাজার, নীলফামারী জেলার ডিমলা থানা এলাকা এবং ঢাকার বিভিন্ন জায়গায় অভিযান পরিচালনা করে তাদের গ্রেপ্তার করা হয় বলে জানায় পিবিআই। গ্রেপ্তার আসামি শাহ্ আলমের কাছ থেকে নিখোঁজ আবদুল কুদ্দুসের মোবাইল ও একটি চাকু (সুইচ গিয়ার) জব্দ করা হয়েছে।

পিবিআই বলছে, আসামিদের রিমান্ডে নিয়ে ব্যাপক জিজ্ঞাসাবাদ করা হলে তারা তাদের ব্যাটারিচালিত রিকশা, ইজিবাইক ছিনতাইয়ের অভিনব কৌশলের কথা জানায়। আসামিদের দেয়া তথ্যের বরাতে পিবিআই জানায়, তারা মূলত ৮-১০ জনের একটি দল নারায়ণগঞ্জ জেলাসহ আশেপাশের বিভিন্ন জেলায় রিকশা, ইজিবাইক ছিনতাই করে থাকে। চক্রটি ছিনতাইয়ের সময় তিনটি পদ্ধতি অবলম্বন করে। ছিনতাইয়ের প্রয়োজনে রিকশা বা ইজিবাইক চালককে হত্যাও করে তারা।

পিবিআইর এসপি মনিরুল ইসলাম বলেন, গত ৬ সেপ্টেম্বর সন্ধ্যা আনুমানিক ৭টার দিকে ছিনতাই চক্রের সদস্য আসামি শাহ্ আলম, হালিম এবং রাশেদ ওরফে রিয়ন ভুক্তভোগী মিশুক চালক কুদ্দুসকে নারায়ণগঞ্জ জেলার চিটাগাং রোড স্ট্যান্ড থেকে ৫০০ টাকা ভাড়ায় শহরের কালীরবাজারে আপ-ডাউন যাওয়ার উদ্দেশ্যে যাত্রা শুরু করে। পথিমধ্যে তারা আদমজী এলাকায় কুদ্দুসকে নিয়ে পূর্বনির্ধারিত চায়ের দোকানে নিয়ে চা খেয়ে ঘনিষ্ঠতা বাড়ায়। তারা নারায়ণগঞ্জ সদরের টানবাজারে গিয়ে ৩০০ টাকায় আধা লিটার মদ কিনে। মদ কেনার পর তারা খানপুর হাসপাতালের আশপাশের স্থানে গিয়ে নিজেরা মদ খায় এবং ভুক্তভোগী চালককে মদ খাওয়ার প্রস্তাব দিলে সেও মদ খেতে রাজি হয়। কৌশলে আসামি শাহ্ আলম মদের মধ্যে উচ্চমাত্রার ঘুমের ওষুধ মিশিয়ে দেয়। মদ খেয়ে কুদ্দুস অচেতন হয়ে পড়লে তাকে সিদ্ধিরগঞ্জের আদমজীর বিহারী পট্টি এলাকায় একটি ময়লার ভাগাড়ে ফেলে রেখে গাড়ি নিয়ে পালিয়ে যায় ছিনতাইকারী চক্র।

পরে ওই গাড়ি আসলামের কাছে ৩৬ হাজার টাকায় বিক্রি করে দেয়। পরে মনিরের মাধ্যমে সে গাড়ির বিভিন্ন অংশ রং করে পরিবর্তন করে ফেলে। আসামিদের দেয়া তথ্যমতে ছিনতাই হওয়া মিশুক (ব্যাটারিচালিত রিকশা) আসলাম ও মনিরের যৌথ মালিকানার গ্যারেজের পেছন থেকে উদ্ধার করা হয়। জিজ্ঞাসাবাদে আসামি জানিয়েছে, গত ৩ বছর ধরে চক্রটি এই ছিনতাই কার্যক্রম চালিয়ে আসছে। এই সময় তারা আড়াইশোরও বেশি ইজিবাইক, রিকশা ছিনতাই করেছে। তদন্তে ঢাকা, নারায়ণগঞ্জসহ আশপাশের এলাকায় আরও পাঁচটি চোরাই গ্যারেজের সন্ধান পেয়েছে বলে জানায় পিবিআই। ওইসব গ্যারেজেও অফিনার চালানো হবে এবং এই চক্রের অন্য সদস্যদেরও গ্রেপ্তার করা হবে বলে জানান এসপি মনিরুল ইসলাম।

এদিকে অপহরণ মামলার ভুক্তভোগী আবদুল কুদ্দুসকে এখনও উদ্ধার করা যায়নি বলে জানিয়েছে পিবিআই। তাকে উদ্ধারের চেষ্টা চলছে বলে জানায় সংস্থাটি।