ডেঙ্গু আক্রান্ত আগস্টের চেয়ে সেপ্টেম্বরে বেশি

রাজধানীর হাতিরপুলে বসবাসকারী চাকরিজীবী মো. সুমনের তিন বছরের শিশু ওমর গত ৪ দিন ধরে ডেঙ্গুজ্বরে আক্রান্ত। বঙ্গবন্ধু শেখ মুজিব মেডিকেল বিশ্ববিদ্যালয়ের শিশু বহিঃবিভাগের কর্মরত বিশেষজ্ঞরা পরীক্ষা নিরীক্ষা করে তার ডেঙ্গুর বিষয়টি নিশ্চিত করেছেন। ডেঙ্গু আক্রান্তের বিষয় নিশ্চিত হয়ে পুরো পরিবার এখন টেনশনে আছেন। শিশুটিকে কোথায় ভর্তি করবেন। হাসপাতালে ভর্তির জন্য সিট খালি পাওয়া যাবে কিনা তা নিয়ে চিন্তায় আছেন। ডেঙ্গু ভাইরাসে আক্রান্ত শিশুটি নিজ বাসায় বিছানায় শুয়ে যন্ত্রণায় ছটফট করছেন। আবার কখনও কান্না করছেন। মেডিকেল বিশ্ববিদ্যালয়ের বহিঃবিভাগের বিশেষজ্ঞরা বলছেন, আপাতত বাসায় রেখে চিকিৎসা করেন। অবস্থার অবনতি দেখলে দ্রুত হাসপাতালে নিয়ে আসবেন। ভর্তি করে দেয়া হবে। শিশু ওমরের মতো বহু শিশু ডেঙ্গুজ্বরে আক্রান্ত হয়েছেন। কেউ হাসপাতালে ভর্তি আছেন। কেউ বাসা বাড়িতে চিকিৎসাধীন আছেন। সেপ্টম্বর মাসে ডেঙ্গু আক্রান্তের সংখ্যা আগস্ট মাসের চেয়ে বেশি। এ অবস্থা অক্টোবরে থাকবে। নভেম্বরের মাঝামাঝি কমতে পারে বলে বিশেষজ্ঞরা মন্তব্য করেন। ডেঙ্গু আক্রান্তের সংখ্যা আগস্টের চেয়ে সেপ্টেম্বরে বেশি।

বঙ্গবন্ধু মেডিকেল বিশ্ববিদ্যালয়ের শিশু বিভাগের সহকারী অধ্যাপক (আরপি) ডা. মোজাম্মেল হক সংবাদকে জানান, মেডিকেল ভার্সিটিতে এখনও ৫ শিশু ভর্তি আছে। বহিঃবিভাগে দিনে ২০ থেকে ২৫ জনের চিকিৎসা দেয়া হয়। এখনও প্রতিদিন শিশু ডেঙ্গু আক্রান্ত রোগী পাওয়া যাচ্ছে। আক্রান্তের সংখ্যা এখনও কমেনি। অক্টোবরেও থাকবে। নভেম্বরের মাঝামাঝি কমার সম্ভবনা আছে।

ঢাকা শিশু হাসপাতালের পরিচালক প্রফেসর ডা. সৈয়দ সফি আহমেদ সংবাদকে জানান, ডেঙ্গুজ্বরে আক্রান্ত রোগী কমেনি। স্থিতিশীল আছে। হাসপাতালে এখনও ৩৯ জন শিশু ভর্তি আছে। তার মধ্যে আইসিইউতে আছে ৪ জন। এ পর্যন্ত ডেঙ্গুজ্বরে আক্রান্ত হয়ে ভর্তি হয়েছে ৭৫০ জন। তার মধ্যে মারা গেছে ১০ জন শিশু। হাসপাতালের বহিঃবিভাগে প্রতিদিন আক্রান্ত রোগী দেখতে হয়।

মহাখালী স্বাস্থ্য অধিদপ্তরের হেলথ্ ইমার্জেন্সি অপারেশন সেন্টার ও কন্ট্রোলরুমের দায়িত্বপ্রাপ্ত কর্মকর্তা ডা. কামরুল কিবরিয়ার দেয়া তথ্য মতে, গত ২৪ ঘণ্টায় ডেঙ্গজ্বরে আক্রান্ত হয়েছে ১৯০ জন। এরমধ্যে ঢাকায় ১৪৯ জন। ঢাকার বাইরে ৪১ জন। এ নিয়ে চলতি বছরের পহেলা জানুয়ারি থেকে গতকাল ৩০ সেপ্টম্বর সকাল ৮টা পর্যন্ত মোট ডেঙ্গুজ্বরে আক্রান্ত হয়েছে ১৮ হাজার ১৯৭ জন। চিকিৎসা শেষে হাসপাতাল থেকে ছাড়পত্র নিয়েছে ১৭ হাজার ১৭০ জন। চিকিৎসাধীন অবস্থায় মারা গেছে ৬৭ জন। এখনও ভর্তি আছে ৯৬০ জন।

গতকাল রাতে সর্বশেষ তথ্যে জানা গেছে, সেপ্টেম্বর মাসে ডেঙ্গুজ্বরের আক্রান্তের সংখ্যা কমেনি। বরং আগস্ট মাসের চেয়ে বাড়ছে। প্রাপ্ত তথ্য মতে, গত আগস্ট মাসে আক্রান্ত হয়েছে ৭৬৯৮ জন। আর সেপ্টেম্বর মাসে আক্রান্ত হয়েছে ৭ হাজার ৮৪১ জন। এভাবে এখনও ডেঙ্গুজ্বরে আক্রান্তের সংখ্যা বেড়েই চলছে। স্বাস্থ্য অধিদপ্তরের পরিসংখ্যানে এ তথ্য জানা গেলেও বেসরকারি হিসেবে এ সংখ্যা আরও অনেক বেশি হবে। কারণ যারা হাসপাতালের বহিঃবিভাগে চিকিৎসা নেয়। তাদের হিসাব স্বাস্থ্য অধিদপ্তরে নেই। যারা ডাক্তারের প্রাইভেট চেম্বারে গিয়ে চিকিৎসা নেন তাদের সংখ্যাও কম নয়।

শুক্রবার, ০১ অক্টোবর ২০২১ , ১৬ আশ্বিন ১৪২৮ ২২ সফর ১৪৪৩

ডেঙ্গু আক্রান্ত আগস্টের চেয়ে সেপ্টেম্বরে বেশি

নিজস্ব বার্তা পরিবেশক

image

ডেঙ্গু রোগী বেড়ে চলেছে, রাজধানীর হাসপাতালে ডেঙ্গু ওয়ার্ডে আর শয্যা খালি নেই। মিটফোর্ড হাসপাতালে ওয়ার্ডের বাইরে বারান্দায় বাড়ানো হয়েছে শয্যা -সংবাদ

রাজধানীর হাতিরপুলে বসবাসকারী চাকরিজীবী মো. সুমনের তিন বছরের শিশু ওমর গত ৪ দিন ধরে ডেঙ্গুজ্বরে আক্রান্ত। বঙ্গবন্ধু শেখ মুজিব মেডিকেল বিশ্ববিদ্যালয়ের শিশু বহিঃবিভাগের কর্মরত বিশেষজ্ঞরা পরীক্ষা নিরীক্ষা করে তার ডেঙ্গুর বিষয়টি নিশ্চিত করেছেন। ডেঙ্গু আক্রান্তের বিষয় নিশ্চিত হয়ে পুরো পরিবার এখন টেনশনে আছেন। শিশুটিকে কোথায় ভর্তি করবেন। হাসপাতালে ভর্তির জন্য সিট খালি পাওয়া যাবে কিনা তা নিয়ে চিন্তায় আছেন। ডেঙ্গু ভাইরাসে আক্রান্ত শিশুটি নিজ বাসায় বিছানায় শুয়ে যন্ত্রণায় ছটফট করছেন। আবার কখনও কান্না করছেন। মেডিকেল বিশ্ববিদ্যালয়ের বহিঃবিভাগের বিশেষজ্ঞরা বলছেন, আপাতত বাসায় রেখে চিকিৎসা করেন। অবস্থার অবনতি দেখলে দ্রুত হাসপাতালে নিয়ে আসবেন। ভর্তি করে দেয়া হবে। শিশু ওমরের মতো বহু শিশু ডেঙ্গুজ্বরে আক্রান্ত হয়েছেন। কেউ হাসপাতালে ভর্তি আছেন। কেউ বাসা বাড়িতে চিকিৎসাধীন আছেন। সেপ্টম্বর মাসে ডেঙ্গু আক্রান্তের সংখ্যা আগস্ট মাসের চেয়ে বেশি। এ অবস্থা অক্টোবরে থাকবে। নভেম্বরের মাঝামাঝি কমতে পারে বলে বিশেষজ্ঞরা মন্তব্য করেন। ডেঙ্গু আক্রান্তের সংখ্যা আগস্টের চেয়ে সেপ্টেম্বরে বেশি।

বঙ্গবন্ধু মেডিকেল বিশ্ববিদ্যালয়ের শিশু বিভাগের সহকারী অধ্যাপক (আরপি) ডা. মোজাম্মেল হক সংবাদকে জানান, মেডিকেল ভার্সিটিতে এখনও ৫ শিশু ভর্তি আছে। বহিঃবিভাগে দিনে ২০ থেকে ২৫ জনের চিকিৎসা দেয়া হয়। এখনও প্রতিদিন শিশু ডেঙ্গু আক্রান্ত রোগী পাওয়া যাচ্ছে। আক্রান্তের সংখ্যা এখনও কমেনি। অক্টোবরেও থাকবে। নভেম্বরের মাঝামাঝি কমার সম্ভবনা আছে।

ঢাকা শিশু হাসপাতালের পরিচালক প্রফেসর ডা. সৈয়দ সফি আহমেদ সংবাদকে জানান, ডেঙ্গুজ্বরে আক্রান্ত রোগী কমেনি। স্থিতিশীল আছে। হাসপাতালে এখনও ৩৯ জন শিশু ভর্তি আছে। তার মধ্যে আইসিইউতে আছে ৪ জন। এ পর্যন্ত ডেঙ্গুজ্বরে আক্রান্ত হয়ে ভর্তি হয়েছে ৭৫০ জন। তার মধ্যে মারা গেছে ১০ জন শিশু। হাসপাতালের বহিঃবিভাগে প্রতিদিন আক্রান্ত রোগী দেখতে হয়।

মহাখালী স্বাস্থ্য অধিদপ্তরের হেলথ্ ইমার্জেন্সি অপারেশন সেন্টার ও কন্ট্রোলরুমের দায়িত্বপ্রাপ্ত কর্মকর্তা ডা. কামরুল কিবরিয়ার দেয়া তথ্য মতে, গত ২৪ ঘণ্টায় ডেঙ্গজ্বরে আক্রান্ত হয়েছে ১৯০ জন। এরমধ্যে ঢাকায় ১৪৯ জন। ঢাকার বাইরে ৪১ জন। এ নিয়ে চলতি বছরের পহেলা জানুয়ারি থেকে গতকাল ৩০ সেপ্টম্বর সকাল ৮টা পর্যন্ত মোট ডেঙ্গুজ্বরে আক্রান্ত হয়েছে ১৮ হাজার ১৯৭ জন। চিকিৎসা শেষে হাসপাতাল থেকে ছাড়পত্র নিয়েছে ১৭ হাজার ১৭০ জন। চিকিৎসাধীন অবস্থায় মারা গেছে ৬৭ জন। এখনও ভর্তি আছে ৯৬০ জন।

গতকাল রাতে সর্বশেষ তথ্যে জানা গেছে, সেপ্টেম্বর মাসে ডেঙ্গুজ্বরের আক্রান্তের সংখ্যা কমেনি। বরং আগস্ট মাসের চেয়ে বাড়ছে। প্রাপ্ত তথ্য মতে, গত আগস্ট মাসে আক্রান্ত হয়েছে ৭৬৯৮ জন। আর সেপ্টেম্বর মাসে আক্রান্ত হয়েছে ৭ হাজার ৮৪১ জন। এভাবে এখনও ডেঙ্গুজ্বরে আক্রান্তের সংখ্যা বেড়েই চলছে। স্বাস্থ্য অধিদপ্তরের পরিসংখ্যানে এ তথ্য জানা গেলেও বেসরকারি হিসেবে এ সংখ্যা আরও অনেক বেশি হবে। কারণ যারা হাসপাতালের বহিঃবিভাগে চিকিৎসা নেয়। তাদের হিসাব স্বাস্থ্য অধিদপ্তরে নেই। যারা ডাক্তারের প্রাইভেট চেম্বারে গিয়ে চিকিৎসা নেন তাদের সংখ্যাও কম নয়।