নাসির-তামিমাকে আদালতের সমন

অন্যের স্ত্রীকে প্রলুব্ধ করে নিয়ে যাওয়া, ব্যাভিচার ও মানহানির অভিযোগে ক্রিকেটার নাসির হোসেন ও তার স্ত্রী তামিমা সুলতানা তাম্মির বিরুদ্ধে গ্রেপ্তারি পরোয়ানার আবেদনটি মঞ্জুর করে নাসির, তামিমা ও তামিমার মা সুমি আক্তারকে আগামী ৩১ অক্টোবরের মধ্যে আদালতে হাজির হওয়ার নির্দেশ দিয়েছেন আদালত। গতকাল ঢাকার মেট্রোপলিটন ম্যাজিস্ট্রেট মোহাম্মদ জসীমের আদালত এ আদেশ দেন। এদিন তাম্মির প্রথম স্বামী রাকিব হাসানের আইনজীবী অ্যাডভোকেট ইশরাত হাসান প্রতিবেদনটি আমলে নিয়ে গ্রেপ্তারি পরোয়ানা জারির আবেদন করেন আদালতে। এরপর আদালত নথি পর্যালোচনায় আদেশ পরে দেবেন বলে জানান।

গতকাল ক্রিকেটার নাসির ও তার স্ত্রী তামিমার বিরুদ্ধে প্রতিবেদন দেন মামলার তদন্ত কর্মকর্তা পিবিআইয়ের মিজানুর রহমান। তদন্তে ক্রিকেটার নাসির হোসেন, তামিমা সুলতানা তাম্মি ও তামিমার মা সুমি আক্তারকে দোষী উল্লেখ করে প্রতিবেদন জমা দেয়া হয়েছে। প্রতিবেদনে পিবিআই উল্লেখ করে, নাসির হোসেন ও তামিমার বিয়ে বৈধ উপায়ে হয়নি। তামিমা ও রাকিব হাসানের বিয়েবিচ্ছেদÑসংক্রান্ত নথি জালিয়াতির মাধ্যমে তৈরি করা হয়েছে। রাকিব হাসানকে ডিভোর্স না দিয়েই তাম্মি ক্রিকেটার নাসিরকে বিয়ে করেন বলে প্রতিবেদনে উল্লেখ করা হয়েছে। এর আগে ২৪ ফেব্রুয়ারি ঢাকা মেট্রোপলিটন ম্যাজিস্ট্রেট মোহাম্মদ জসীমের আদালতে তাম্মির সাবেক স্বামী মো. রাকিব হাসান মামলাটি দায়ের করেন। পরে আদালত বাদীর জবানবন্দি গ্রহণ করে নথি পর্যালোচনা শেষে মামলাটি পিবিআইকে তদন্তের নির্দেশ দেন।

মামলার এজাহারে উল্লেখ করা হয়েছে, ২০১১ সালের ২৬ ফেব্রুয়ারি তাম্মি ও রাকিবের বিয়ে হয়। তাদের ৮ বছরের একটি মেয়েও রয়েছে। তাম্মি পেশায় একজন কেবিন ক্রু। চলতি বছরের ১৪ ফেব্রুয়ারি তাম্মি ও ক্রিকেটার নাসির হোসেনের বিয়ের ছবি সামাজিক যোগাযোগমাধ্যমে ছড়িয়ে পড়িলে তা রাকিবের নজরে আসে। পরে পত্র-পত্রিকায় তিনি ঘটনার বিষয়ে সম্পূর্ণ জেনেছেন। মামলায় অভিযোগ করা হয়েছে, রাকিবের সঙ্গে বৈবাহিক সম্পর্ক চলমান অবস্থাতেই তাম্মি নাসিরকে বিয়ে করেছেন, যা ধর্মীয় এবং রাষ্ট্রীয় আইন অনুযায়ী সম্পূর্ণ অবৈধ। নাসির তাম্মিকে প্রলুব্ধ করে নিজের কাছে নিয়ে গেছেন। আরও বলা হয়েছে, তাম্মি ও নাসিরের এমন অনৈতিক ও অবৈধ সম্পর্কের কারণে রাকিব ও তার ৮ (আট) বছর বয়সী শিশুকন্যা মানসিকভাবে বিপর্যস্ত হয়েছেন। আসামিদের এহেন কার্যকলাপে রাকিবের চরমভাবে মানহানি হয়েছে, যা তার জন্য অপূরণীয় ক্ষতি।

এদিকে বিমানবালা তামিমা সুলতানা তাম্মির সঙ্গে বিয়ের সম্পর্কে জড়ানোর আগে তার আগের বিয়ের তালাকনামাটি সঠিক কি না, ক্রিকেটার নাসির হোসেনের তা যাচাই করা উচিত ছিল বলে মনে করেন পিবিআাই প্রধান বনজ কুমার মজুমদার। তিনি বলেছেন,প্রথম স্বামী রাকিব হাসানকে তালাক হওয়ার ক্ষেত্রে যে নিয়ম মানা দরকার ছিল তামিমার, তা মানা হয়নি। তামিমার মা সুমি আক্তার বেশ কিছু জালিয়াতিও করেছেন। মামলায় রাকিব অভিযোগ করেন,তার সঙ্গে আইনিভাবে বিচ্ছেদ না ঘটিয়েই নাসিরকে বিয়ে করেছেন তামিমা। মামলা হওয়ার পরদিন ঢাকার বনানীতে সংবাদ সম্মেলন করে নাসির ও তামিমা অভিযোগ অস্বীকার করেছিলেন। তামিমা বলেছিলেন, রাকিবকে ‘তালাক দিয়েই’ নাসিরের সঙ্গে ঘর বেঁধেছেন তিনি।

কিন্তু সাত মাস তদন্ত করে পিবিআই যে অভিযোগপত্র দিয়েছে, সেখানে বলা হয়েছে, আগের স্বামী রাকিব হাসানের সঙ্গে ‘যথাযথভাবে বিচ্ছেদ’ হওয়ার আগেই তামিমা ক্রিকেটার নাসিরকে বিয়ে করেন। সুতরাং তাদের এ বিয়ের ‘বৈধতা নেই’। সংবাদ সম্মেলন করে তালাকের বিষয়ে তারা যা বলেছেন, তার ‘সত্যতা মেলেনি’। ডিভোর্সের যে কাগজপত্র দেখানো হয়েছে, সেগুলো তৈরি করা হয়েছে ‘জালিয়াতির মাধ্যমে’। এ বিষয়ে জানতে চাইলে পিবিআাই প্রধান বনজ কুমার মজুমদার বলেন, তালাক দেয়ার ক্ষেত্রে তিনটি শর্ত থাকে। কাজীকে অবহিত করা, তালাক যাকে দেয়া হবে তার ঠিকানায় নোটিশ পাঠানো এবং ইউনিয়ন পরিষদের চেয়ারম্যানকে ডাক বিভাগের মাধ্যমে চিঠি দেয়া। এই তিনটি শর্তের পরের দুটি তামিমার ক্ষেত্রে সঠিকভাবে করা হয়নি।

অভিযোগপত্রে নাসিরের বিরুদ্ধে অন্যের স্ত্রীকে প্রলুব্ধ করে নিয়ে যাওয়া, ব্যাভিচার’ এবং তামিমার আগের স্বামীর মানহানি ঘটানোর অভিযোগ আনা হয়েছে। আর সব ‘জেনেও’ বিয়েতে সহায়তা করায় তামিমার মাকে অভিযোগপত্রে আসামি করা হয়েছে। এ বিষয়ে এক প্রশ্নের জবাবে বনজ কুমার মজুমদার বলেন, তালাকের ব্যাপারে যেসব কাগজ তৈরি করা হয়েছে, সেগুলো তামিমা সুলতানার মা সুমি আক্তার জালিয়াতির মাধ্যমে করেছেন। ডাক বিভাগের কাগজসহ যেগুলো জালিয়াতি করা হয়েছে, সেগুলো তিনিই করেছেন। পিবিআাই প্রধান বলেন, তামিমা দাবি করেছেন, রাকিবকে তিনি তালাক দিয়েছেন ২০১৬ সালে। অথচ ২০১৮ সালের তার তোলা পাসপোর্টে রাকিবকেই তিনি স্বামী হিসেবে উল্লেখ করেছেন। তার সমস্ত কর্মকা-কে এ বিষয়টিকে সাপোর্ট করছে। রাকিবকে যে ঠিকানায় চিঠি দেয়ার কথা তিনি বলেছেন, সেই ঠিকানায় রাকিব থাকতেন না। আর যে ইউনিয়ন পরিষদের চেয়ারম্যানের কাছে চিঠি পাঠানোর কথা বলা হয়েছে, সেই চেয়ারম্যানও কোন চিঠি পাননি। বনজ কুমার মজুমদার বলেন, এক সময় রাকিব হাসানের স্ত্রী ছিলেন তামিমা। কিন্ত নাসির হোসেন তামিমাকে আবারও বিয়ে করেছেন। সুতরাং আগের বিয়ের ডিভোর্স হয়েছে কি না তা আইনগতভাবে যাচাই-বাছাই করা উচিত ছিল নাসিরের।

শুক্রবার, ০১ অক্টোবর ২০২১ , ১৬ আশ্বিন ১৪২৮ ২২ সফর ১৪৪৩

নাসির-তামিমাকে আদালতের সমন

আদালত বার্তা পরিবেশক

অন্যের স্ত্রীকে প্রলুব্ধ করে নিয়ে যাওয়া, ব্যাভিচার ও মানহানির অভিযোগে ক্রিকেটার নাসির হোসেন ও তার স্ত্রী তামিমা সুলতানা তাম্মির বিরুদ্ধে গ্রেপ্তারি পরোয়ানার আবেদনটি মঞ্জুর করে নাসির, তামিমা ও তামিমার মা সুমি আক্তারকে আগামী ৩১ অক্টোবরের মধ্যে আদালতে হাজির হওয়ার নির্দেশ দিয়েছেন আদালত। গতকাল ঢাকার মেট্রোপলিটন ম্যাজিস্ট্রেট মোহাম্মদ জসীমের আদালত এ আদেশ দেন। এদিন তাম্মির প্রথম স্বামী রাকিব হাসানের আইনজীবী অ্যাডভোকেট ইশরাত হাসান প্রতিবেদনটি আমলে নিয়ে গ্রেপ্তারি পরোয়ানা জারির আবেদন করেন আদালতে। এরপর আদালত নথি পর্যালোচনায় আদেশ পরে দেবেন বলে জানান।

গতকাল ক্রিকেটার নাসির ও তার স্ত্রী তামিমার বিরুদ্ধে প্রতিবেদন দেন মামলার তদন্ত কর্মকর্তা পিবিআইয়ের মিজানুর রহমান। তদন্তে ক্রিকেটার নাসির হোসেন, তামিমা সুলতানা তাম্মি ও তামিমার মা সুমি আক্তারকে দোষী উল্লেখ করে প্রতিবেদন জমা দেয়া হয়েছে। প্রতিবেদনে পিবিআই উল্লেখ করে, নাসির হোসেন ও তামিমার বিয়ে বৈধ উপায়ে হয়নি। তামিমা ও রাকিব হাসানের বিয়েবিচ্ছেদÑসংক্রান্ত নথি জালিয়াতির মাধ্যমে তৈরি করা হয়েছে। রাকিব হাসানকে ডিভোর্স না দিয়েই তাম্মি ক্রিকেটার নাসিরকে বিয়ে করেন বলে প্রতিবেদনে উল্লেখ করা হয়েছে। এর আগে ২৪ ফেব্রুয়ারি ঢাকা মেট্রোপলিটন ম্যাজিস্ট্রেট মোহাম্মদ জসীমের আদালতে তাম্মির সাবেক স্বামী মো. রাকিব হাসান মামলাটি দায়ের করেন। পরে আদালত বাদীর জবানবন্দি গ্রহণ করে নথি পর্যালোচনা শেষে মামলাটি পিবিআইকে তদন্তের নির্দেশ দেন।

মামলার এজাহারে উল্লেখ করা হয়েছে, ২০১১ সালের ২৬ ফেব্রুয়ারি তাম্মি ও রাকিবের বিয়ে হয়। তাদের ৮ বছরের একটি মেয়েও রয়েছে। তাম্মি পেশায় একজন কেবিন ক্রু। চলতি বছরের ১৪ ফেব্রুয়ারি তাম্মি ও ক্রিকেটার নাসির হোসেনের বিয়ের ছবি সামাজিক যোগাযোগমাধ্যমে ছড়িয়ে পড়িলে তা রাকিবের নজরে আসে। পরে পত্র-পত্রিকায় তিনি ঘটনার বিষয়ে সম্পূর্ণ জেনেছেন। মামলায় অভিযোগ করা হয়েছে, রাকিবের সঙ্গে বৈবাহিক সম্পর্ক চলমান অবস্থাতেই তাম্মি নাসিরকে বিয়ে করেছেন, যা ধর্মীয় এবং রাষ্ট্রীয় আইন অনুযায়ী সম্পূর্ণ অবৈধ। নাসির তাম্মিকে প্রলুব্ধ করে নিজের কাছে নিয়ে গেছেন। আরও বলা হয়েছে, তাম্মি ও নাসিরের এমন অনৈতিক ও অবৈধ সম্পর্কের কারণে রাকিব ও তার ৮ (আট) বছর বয়সী শিশুকন্যা মানসিকভাবে বিপর্যস্ত হয়েছেন। আসামিদের এহেন কার্যকলাপে রাকিবের চরমভাবে মানহানি হয়েছে, যা তার জন্য অপূরণীয় ক্ষতি।

এদিকে বিমানবালা তামিমা সুলতানা তাম্মির সঙ্গে বিয়ের সম্পর্কে জড়ানোর আগে তার আগের বিয়ের তালাকনামাটি সঠিক কি না, ক্রিকেটার নাসির হোসেনের তা যাচাই করা উচিত ছিল বলে মনে করেন পিবিআাই প্রধান বনজ কুমার মজুমদার। তিনি বলেছেন,প্রথম স্বামী রাকিব হাসানকে তালাক হওয়ার ক্ষেত্রে যে নিয়ম মানা দরকার ছিল তামিমার, তা মানা হয়নি। তামিমার মা সুমি আক্তার বেশ কিছু জালিয়াতিও করেছেন। মামলায় রাকিব অভিযোগ করেন,তার সঙ্গে আইনিভাবে বিচ্ছেদ না ঘটিয়েই নাসিরকে বিয়ে করেছেন তামিমা। মামলা হওয়ার পরদিন ঢাকার বনানীতে সংবাদ সম্মেলন করে নাসির ও তামিমা অভিযোগ অস্বীকার করেছিলেন। তামিমা বলেছিলেন, রাকিবকে ‘তালাক দিয়েই’ নাসিরের সঙ্গে ঘর বেঁধেছেন তিনি।

কিন্তু সাত মাস তদন্ত করে পিবিআই যে অভিযোগপত্র দিয়েছে, সেখানে বলা হয়েছে, আগের স্বামী রাকিব হাসানের সঙ্গে ‘যথাযথভাবে বিচ্ছেদ’ হওয়ার আগেই তামিমা ক্রিকেটার নাসিরকে বিয়ে করেন। সুতরাং তাদের এ বিয়ের ‘বৈধতা নেই’। সংবাদ সম্মেলন করে তালাকের বিষয়ে তারা যা বলেছেন, তার ‘সত্যতা মেলেনি’। ডিভোর্সের যে কাগজপত্র দেখানো হয়েছে, সেগুলো তৈরি করা হয়েছে ‘জালিয়াতির মাধ্যমে’। এ বিষয়ে জানতে চাইলে পিবিআাই প্রধান বনজ কুমার মজুমদার বলেন, তালাক দেয়ার ক্ষেত্রে তিনটি শর্ত থাকে। কাজীকে অবহিত করা, তালাক যাকে দেয়া হবে তার ঠিকানায় নোটিশ পাঠানো এবং ইউনিয়ন পরিষদের চেয়ারম্যানকে ডাক বিভাগের মাধ্যমে চিঠি দেয়া। এই তিনটি শর্তের পরের দুটি তামিমার ক্ষেত্রে সঠিকভাবে করা হয়নি।

অভিযোগপত্রে নাসিরের বিরুদ্ধে অন্যের স্ত্রীকে প্রলুব্ধ করে নিয়ে যাওয়া, ব্যাভিচার’ এবং তামিমার আগের স্বামীর মানহানি ঘটানোর অভিযোগ আনা হয়েছে। আর সব ‘জেনেও’ বিয়েতে সহায়তা করায় তামিমার মাকে অভিযোগপত্রে আসামি করা হয়েছে। এ বিষয়ে এক প্রশ্নের জবাবে বনজ কুমার মজুমদার বলেন, তালাকের ব্যাপারে যেসব কাগজ তৈরি করা হয়েছে, সেগুলো তামিমা সুলতানার মা সুমি আক্তার জালিয়াতির মাধ্যমে করেছেন। ডাক বিভাগের কাগজসহ যেগুলো জালিয়াতি করা হয়েছে, সেগুলো তিনিই করেছেন। পিবিআাই প্রধান বলেন, তামিমা দাবি করেছেন, রাকিবকে তিনি তালাক দিয়েছেন ২০১৬ সালে। অথচ ২০১৮ সালের তার তোলা পাসপোর্টে রাকিবকেই তিনি স্বামী হিসেবে উল্লেখ করেছেন। তার সমস্ত কর্মকা-কে এ বিষয়টিকে সাপোর্ট করছে। রাকিবকে যে ঠিকানায় চিঠি দেয়ার কথা তিনি বলেছেন, সেই ঠিকানায় রাকিব থাকতেন না। আর যে ইউনিয়ন পরিষদের চেয়ারম্যানের কাছে চিঠি পাঠানোর কথা বলা হয়েছে, সেই চেয়ারম্যানও কোন চিঠি পাননি। বনজ কুমার মজুমদার বলেন, এক সময় রাকিব হাসানের স্ত্রী ছিলেন তামিমা। কিন্ত নাসির হোসেন তামিমাকে আবারও বিয়ে করেছেন। সুতরাং আগের বিয়ের ডিভোর্স হয়েছে কি না তা আইনগতভাবে যাচাই-বাছাই করা উচিত ছিল নাসিরের।