বিচার দাবি আন্তর্জাতিক সম্প্রদায়ের

আরাকান রোহিঙ্গা সোসাইটি ফর পিস অ্যান্ড হিউম্যান রাইটসের নেতা মোহাম্মদ মুহিবুল্লাহ হত্যাকাণ্ডের দ্রুত বিচারে সরকারের প্রতি চাপ সৃষ্টি করছে আন্তর্জাতিক সম্প্রদায়। একই সঙ্গে ঘটনায় নিন্দা জানানোর পাশাপাশি জাতিসংঘ, ইউরোপীয় ইউনিয়ন, হিউম্যান রাইটস ওয়াচ মুহিবুল্লাহ হত্যার সুষ্ঠু তদন্ত এবং বিচার দাবি করেছে।

রোহিঙ্গা এ নেতাকে হত্যার পর পশ্চিমা দেশগুলোর কূটনীতিকরা এই ইস্যুতে সরব হয়েছেন। তারা রীতিমতো বিবৃতি দিয়ে হত্যাকাণ্ডে জড়িত অপরাধীদের বিচারের আওতায় আনার দাবি জানিয়েছেন। প্রভারশালী দেশ হিসেবে বিবেচিত যুক্তরাষ্ট্র ও যুক্তরাজ্যের কূটনীতিকরাও এ ঘটনায় সরকার কি ধরনের পদক্ষেপ নেয় সেদিকেও সতর্ক দৃষ্টি রাখছেন। একইসঙ্গে রোহিঙ্গা ক্যাম্পে আইনশৃঙ্খলা পরিস্থিতির ওপরও নজর রাখছেন তারা। বিশেষ করে জাতিসংঘ শরণার্থী সংস্থা ইউএনএইচসসিআর এ ঘটনার পর ক্যাম্পে বসবাসরত রোহিঙ্গা শরণার্থীদের সুরক্ষা ও নিরাপত্তার দায়িত্বে থাকা আইন প্রয়োগকারী সংস্থা এবং বাংলাদেশ সরকারের সঙ্গে সার্বক্ষণিক যোগাযোগ রাখছে বলে জানাগেছে।

এদিকে, ২৭ রাষ্ট্রের জোট ইউরোপীয় ইউনিয়নের ঢাকা অফিস প্রচারিত টুইট বার্তায় বলা হয়, রোহিঙ্গা নেতা এবং হিউম্যান রাইটস অ্যাক্টিভিস্ট মুহিবুল্লাহকে হত্যা একটি মর্মান্তিক ঘটনা। আমরা (ইইউ) গভীর শোক প্রকাশ করছি তার পরিবারের প্রতি। একই সঙ্গে আশা করছি ওই হত্যাকাণ্ড যারা ঘটিয়েছে তাদের বিচারের মুখোমুখি করতে কর্তৃপক্ষ (বাংলাদেশ সরকার) সফল হবেন। ঢাকায় নিযুক্ত মার্কিন রাষ্ট্রদূত রবার্ট মিলার তাৎক্ষণিক এক টুইট বার্তায় জানান, রোহিঙ্গা জনগোষ্ঠীর মানবাধিকারের একজন সাহসী চ্যাম্পিয়ন মোহাম্মদ মুহিবুল্লাহর হত্যাকাণ্ডে শোকাহত ও বিচলিত। আমি তার পরিবারের প্রতি সমবেদনা জানাই এবং আশা করি অপরাধীদের বিচারের আওতায় আনা হবে। ঢাকাস্থ ব্রিটিশ হাইকমিশনার রবার্ট চ্যাটার্টন ডিকসন পৃথক টুইট বার্তায় জানান, আরাকান রোহিঙ্গা সোসাইটি ফর পিস অ্যান্ড হিউম্যান রাইটসের নেতা মুহিবুল্লাহ হত্যাকাণ্ডে আমরা মর্মাহত ও শোকাহত। তার পরিবার, বন্ধু-বান্ধব এবং রোহিঙ্গা সম্প্রদায়ের জন্য এটি এক মর্মান্তিক ক্ষতি, তাদের প্রতি আমার আন্তরিক সমবেদনা। ঢাকায় নিযুক্ত জাতিসংঘের আবাসিক সমন্বয়ক মিয়া সেপ্পো টুইট বার্তায় জানান, মুহিবুল্লাহর প্রতি আমাদের সম্মান, তিনি ছিলেন রোহিঙ্গা শরণার্থীদের কণ্ঠস্বর। এরা সেই জনগোষ্ঠী যারা মায়ানমারে তাদের অধিকার থেকে বঞ্চিত এবং বর্তমানে অনিশ্চিয়তা এবং নিরাপত্তাহীনতার মধ্যে বসবাস করছে। শরণার্থী শিবিরগুলোতে সহিংসতার শান্তিপূর্ণ সমাধানের জন্য কাজ করা অ্যাক্টিভিস্টরা কেমন হুমকির মধ্যে রয়েছেন, এই হত্যাকাণ্ড তাই স্মরণ করিয়ে দেয়।

বাংলাদেশে নেদারল্যান্ডসের রাষ্ট্রদূত আন্নে গেরার্ড ভেন লিউইন টুইট বার্তায় জানান, রোহিঙ্গা নেতা ও মানবাধিকার কর্মী মোহাম্মদ মুহিবুল্লাহ হত্যার ঘটনায় মর্মাহত ও ব্যথিত। আমি তার পরিবারের প্রতি সমবেদনা জানাই এবং আশা করি অপরাধীদের বিচারের আওতায় আনা হবে।

রোহিঙ্গা নেতা হিসেবে সারা পৃথিবীতে সুপরিচিত ছিলেন মুহিবুল্লাহ। যুক্তরাষ্ট্রের সাবেক প্রেসিডেন্ট ডোনাল্ড ট্রাম্পের সঙ্গে সাক্ষাতের পর আলোচনায় উঠে আসেন তিনি। এছাড়া রোহিঙ্গাদের মায়ানমারে ফিরে যাওয়ার দাবিতে কক্সবাজারে একটি মহাসমাবেশের আয়োজন করেছিলেন। সেটাই ছিল রোহিঙ্গাদের নিয়ে সবচেয়ে বড় সমাবেশ।

উল্লেখ্য, গত ২৯ সেপ্টেম্বর রাতে কক্সবাজারের উখিয়ার লম্বাশিয়া রোহিঙ্গা শিবিরে মুহিবুল্লাহকে গুলি করে হত্যা করে দুর্বৃত্তরা। বিশ্লেষকরা বলছেন, এ ঘটনায় রোহিঙ্গাদের পক্ষে কথা বলার মানুষটিকে হারালো নিপীড়িত জনগোষ্ঠীটি।

হত্যাকাণ্ডে ১ জন আটক

কক্সবাজার প্রতিনিধি জানান, কক্সবাজারে আশ্রয় নেয়া রোহিঙ্গাদের অন্যতম শীর্ষ নেতা মুহিবুল্লাহ হত্যাকাণ্ডের ঘটনায় সলিম নামে এক যুবককে আটক করেছে আর্মড পুলিশ ব্যাটালিয়ন (এপিবিএন)।

গতকাল বেলা সাড়ে ১১টার দিকে ৬ নম্বর ক্যাম্প থেকে তাকে আটক করা হয়। আটকের পর সলিমকে উখিয়া থানায় হস্তান্তর করেছে এপিবিএন।

এর আগে বৃহস্পতিবার রাতে উখিয়া থানায় নিহত মুহিবুল্লাহর ছোটভাই হাবিবুল্লাহ বাদী হয়ে মামলা দায়ের করেন।

মামলাটিতে অজ্ঞাতনামাদের আসামি করা হয়েছে। জড়িতদের ধরতে অভিযান অব্যাহত আছে বলে জানিয়েছে পুলিশ।

উল্লখ্য, গত বুধবার (২৯ সেপ্টেম্বর) রাত সাড়ে ৮টার দিকে নিজ অফিসে উপস্থিত অন্য রোহিঙ্গাদের সামনেই চিহ্নিত অস্ত্রধারীরা রোহিঙ্গা নেতা মুহিবুল্লাহকে হত্যা করে।

শনিবার, ০২ অক্টোবর ২০২১ , ১৭ আশ্বিন ১৪২৮ ২৩ সফর ১৪৪৩

বিচার দাবি আন্তর্জাতিক সম্প্রদায়ের

নিজস্ব বার্তা পরিবেশক

আরাকান রোহিঙ্গা সোসাইটি ফর পিস অ্যান্ড হিউম্যান রাইটসের নেতা মোহাম্মদ মুহিবুল্লাহ হত্যাকাণ্ডের দ্রুত বিচারে সরকারের প্রতি চাপ সৃষ্টি করছে আন্তর্জাতিক সম্প্রদায়। একই সঙ্গে ঘটনায় নিন্দা জানানোর পাশাপাশি জাতিসংঘ, ইউরোপীয় ইউনিয়ন, হিউম্যান রাইটস ওয়াচ মুহিবুল্লাহ হত্যার সুষ্ঠু তদন্ত এবং বিচার দাবি করেছে।

রোহিঙ্গা এ নেতাকে হত্যার পর পশ্চিমা দেশগুলোর কূটনীতিকরা এই ইস্যুতে সরব হয়েছেন। তারা রীতিমতো বিবৃতি দিয়ে হত্যাকাণ্ডে জড়িত অপরাধীদের বিচারের আওতায় আনার দাবি জানিয়েছেন। প্রভারশালী দেশ হিসেবে বিবেচিত যুক্তরাষ্ট্র ও যুক্তরাজ্যের কূটনীতিকরাও এ ঘটনায় সরকার কি ধরনের পদক্ষেপ নেয় সেদিকেও সতর্ক দৃষ্টি রাখছেন। একইসঙ্গে রোহিঙ্গা ক্যাম্পে আইনশৃঙ্খলা পরিস্থিতির ওপরও নজর রাখছেন তারা। বিশেষ করে জাতিসংঘ শরণার্থী সংস্থা ইউএনএইচসসিআর এ ঘটনার পর ক্যাম্পে বসবাসরত রোহিঙ্গা শরণার্থীদের সুরক্ষা ও নিরাপত্তার দায়িত্বে থাকা আইন প্রয়োগকারী সংস্থা এবং বাংলাদেশ সরকারের সঙ্গে সার্বক্ষণিক যোগাযোগ রাখছে বলে জানাগেছে।

এদিকে, ২৭ রাষ্ট্রের জোট ইউরোপীয় ইউনিয়নের ঢাকা অফিস প্রচারিত টুইট বার্তায় বলা হয়, রোহিঙ্গা নেতা এবং হিউম্যান রাইটস অ্যাক্টিভিস্ট মুহিবুল্লাহকে হত্যা একটি মর্মান্তিক ঘটনা। আমরা (ইইউ) গভীর শোক প্রকাশ করছি তার পরিবারের প্রতি। একই সঙ্গে আশা করছি ওই হত্যাকাণ্ড যারা ঘটিয়েছে তাদের বিচারের মুখোমুখি করতে কর্তৃপক্ষ (বাংলাদেশ সরকার) সফল হবেন। ঢাকায় নিযুক্ত মার্কিন রাষ্ট্রদূত রবার্ট মিলার তাৎক্ষণিক এক টুইট বার্তায় জানান, রোহিঙ্গা জনগোষ্ঠীর মানবাধিকারের একজন সাহসী চ্যাম্পিয়ন মোহাম্মদ মুহিবুল্লাহর হত্যাকাণ্ডে শোকাহত ও বিচলিত। আমি তার পরিবারের প্রতি সমবেদনা জানাই এবং আশা করি অপরাধীদের বিচারের আওতায় আনা হবে। ঢাকাস্থ ব্রিটিশ হাইকমিশনার রবার্ট চ্যাটার্টন ডিকসন পৃথক টুইট বার্তায় জানান, আরাকান রোহিঙ্গা সোসাইটি ফর পিস অ্যান্ড হিউম্যান রাইটসের নেতা মুহিবুল্লাহ হত্যাকাণ্ডে আমরা মর্মাহত ও শোকাহত। তার পরিবার, বন্ধু-বান্ধব এবং রোহিঙ্গা সম্প্রদায়ের জন্য এটি এক মর্মান্তিক ক্ষতি, তাদের প্রতি আমার আন্তরিক সমবেদনা। ঢাকায় নিযুক্ত জাতিসংঘের আবাসিক সমন্বয়ক মিয়া সেপ্পো টুইট বার্তায় জানান, মুহিবুল্লাহর প্রতি আমাদের সম্মান, তিনি ছিলেন রোহিঙ্গা শরণার্থীদের কণ্ঠস্বর। এরা সেই জনগোষ্ঠী যারা মায়ানমারে তাদের অধিকার থেকে বঞ্চিত এবং বর্তমানে অনিশ্চিয়তা এবং নিরাপত্তাহীনতার মধ্যে বসবাস করছে। শরণার্থী শিবিরগুলোতে সহিংসতার শান্তিপূর্ণ সমাধানের জন্য কাজ করা অ্যাক্টিভিস্টরা কেমন হুমকির মধ্যে রয়েছেন, এই হত্যাকাণ্ড তাই স্মরণ করিয়ে দেয়।

বাংলাদেশে নেদারল্যান্ডসের রাষ্ট্রদূত আন্নে গেরার্ড ভেন লিউইন টুইট বার্তায় জানান, রোহিঙ্গা নেতা ও মানবাধিকার কর্মী মোহাম্মদ মুহিবুল্লাহ হত্যার ঘটনায় মর্মাহত ও ব্যথিত। আমি তার পরিবারের প্রতি সমবেদনা জানাই এবং আশা করি অপরাধীদের বিচারের আওতায় আনা হবে।

রোহিঙ্গা নেতা হিসেবে সারা পৃথিবীতে সুপরিচিত ছিলেন মুহিবুল্লাহ। যুক্তরাষ্ট্রের সাবেক প্রেসিডেন্ট ডোনাল্ড ট্রাম্পের সঙ্গে সাক্ষাতের পর আলোচনায় উঠে আসেন তিনি। এছাড়া রোহিঙ্গাদের মায়ানমারে ফিরে যাওয়ার দাবিতে কক্সবাজারে একটি মহাসমাবেশের আয়োজন করেছিলেন। সেটাই ছিল রোহিঙ্গাদের নিয়ে সবচেয়ে বড় সমাবেশ।

উল্লেখ্য, গত ২৯ সেপ্টেম্বর রাতে কক্সবাজারের উখিয়ার লম্বাশিয়া রোহিঙ্গা শিবিরে মুহিবুল্লাহকে গুলি করে হত্যা করে দুর্বৃত্তরা। বিশ্লেষকরা বলছেন, এ ঘটনায় রোহিঙ্গাদের পক্ষে কথা বলার মানুষটিকে হারালো নিপীড়িত জনগোষ্ঠীটি।

হত্যাকাণ্ডে ১ জন আটক

কক্সবাজার প্রতিনিধি জানান, কক্সবাজারে আশ্রয় নেয়া রোহিঙ্গাদের অন্যতম শীর্ষ নেতা মুহিবুল্লাহ হত্যাকাণ্ডের ঘটনায় সলিম নামে এক যুবককে আটক করেছে আর্মড পুলিশ ব্যাটালিয়ন (এপিবিএন)।

গতকাল বেলা সাড়ে ১১টার দিকে ৬ নম্বর ক্যাম্প থেকে তাকে আটক করা হয়। আটকের পর সলিমকে উখিয়া থানায় হস্তান্তর করেছে এপিবিএন।

এর আগে বৃহস্পতিবার রাতে উখিয়া থানায় নিহত মুহিবুল্লাহর ছোটভাই হাবিবুল্লাহ বাদী হয়ে মামলা দায়ের করেন।

মামলাটিতে অজ্ঞাতনামাদের আসামি করা হয়েছে। জড়িতদের ধরতে অভিযান অব্যাহত আছে বলে জানিয়েছে পুলিশ।

উল্লখ্য, গত বুধবার (২৯ সেপ্টেম্বর) রাত সাড়ে ৮টার দিকে নিজ অফিসে উপস্থিত অন্য রোহিঙ্গাদের সামনেই চিহ্নিত অস্ত্রধারীরা রোহিঙ্গা নেতা মুহিবুল্লাহকে হত্যা করে।