আফগানিস্তানে মেয়ে শিক্ষার্থীদের বিক্ষোভ : স্কুলে ফিরতে চায়

আফগানিস্তানে স্কুল ও বিশ্ববিদ্যালয়ে মেয়েদের ফেরার দাবি জানিয়ে রাজধানী কাবুলে বিক্ষোভ করেছেন নারীরা। নতুন শাসকদলের এ পদক্ষেপ আফগান সমাজে নারীদের মৌলিক অধিকার লঙ্ঘনের শামিল বলে অভিযোগ বিক্ষুব্ধ নারীদের। তালেবানের নিরাপত্তা বাহিনীর সদস্যরা নারীদের বিক্ষোভ মিছিলে বাধা দিয়েছিল। সে বাধা উপেক্ষা করেই প্রতিবাদ কর্মসূচি অব্যাহত রাখেন নারীরা।

এর আগে তালেবান সরকারের তথ্য ও সংস্কৃতিবিষয়ক উপ-মন্ত্রী জাবিহুল্লাহ মুজাহিদ জানিয়েছিলেন, আন্দোলন করতে হলে আগে আইন মন্ত্রণালয়ের অনুমতি নিতে হবে বিক্ষোভকারীদের। তবে ছাত্রীদের জন্য মাধ্যমিক শিক্ষা প্রতিষ্ঠান ও বিশ্ববিদ্যালয় বন্ধ করে দেয়া নিয়ে বারবার উদ্বেগ জানাচ্ছেন আফগানিস্তানের সব পর্যায়ের শিক্ষকরা।

এ পদক্ষেপে দেশটিতে নারী শিক্ষার ভবিষ্যৎ বড় ধরনের অনিশ্চয়তায় পড়বে বলে শঙ্কিত তারা। বিষয়টিকে গুরুত্বের সঙ্গে নেয়ার জন্য নতুন প্রশাসনের প্রতি পরামর্শ তাদের। আফগান নারী শিক্ষার্থীরা বলছেন, ইসলাম ধর্ম ও আফগান আইন- দুটিতেই শিক্ষাগ্রহণ তাদের অধিকার এবং এ অধিকার লঙ্ঘনের ক্ষমতা কারও নেই।

তালেবান আফগানিস্তানের নিয়ন্ত্রণ নেয়ার পর থেকেই দেশটিতে কিশোরী ও নারীদের আনুষ্ঠানিক শিক্ষাগ্রহণ বন্ধ রয়েছে। চলতি মাসে মাধ্যমিক ও বিশ্ববিদ্যালয় পর্যায়ের ছাত্রীদের ছাড়াই শিক্ষাদান কার্যক্রম শুরু করে বিভিন্ন প্রতিষ্ঠান।

এর আগে আফগানিস্তানের নারী মন্ত্রণালয় স্থায়ীভাবে বন্ধ করে দেয় শাসকগোষ্ঠী। রাজধানী কাবুলে নগর প্রশাসনের নারী কর্মকর্তা-কর্মচারীদেরও বাড়িতে থাকার আদেশ দেয় তালেবান। প্রতিবেদনে বলা হয়েছে, কাবুলের পূর্বাঞ্চলের একটি উচ্চ বিদ্যালয়ের সামনে মেয়েদের স্কুলে ফেরার দাবিতে ছয়জন নারী জড়ো হয়ে বিক্ষোভ করছিলেন।

কয়েকদিন আগেই আফগানিস্তানের স্কুলগুলো খুললেও মেয়েদের আসার ব্যাপারে কোন নির্দেশনা দেয়নি তালেবান। ঘটনার সময় সেখানে উপস্থিত ছিলেন ফরাসি সংবাদমাধ্যম এএফপির সংবাদকর্মীরা। তাদের বর্ণনা অনুযায়ী, কাবুলের পূর্বাঞ্চলের একটি উচ্চ মাধ্যমিক স্কুলের সামনে ছয় জন নারী ছোট একটি মিছিল বের করেন।

মাধ্যমিক স্কুলে মেয়েদের ফেরার অধিকার আছে জানিয়ে সেøাগান দেন আন্দোলনকারীরা। তাদের ব্যানারে লেখা ছিল, আমাদের কলম ভাঙবেন না, আমাদের বই পুড়িয়ে দেবেন না, আমাদের স্কুল বন্ধ করবেন না। কিছুক্ষণের মধ্যেই তাদের বাধা দেয় সশস্ত্র তালেবান সদস্যরা। একপর্যায়ে তাদের ব্যানার ছিনিয়ে নিয়ে ফাঁকা গুলি ছোড়ে। তালেবানের বাধার মুখে ছত্রভঙ্গ হয়ে যায় তারা।

একজন বিদেশি সাংবাদিক ওই বিক্ষোভের দৃশ্য ধারণ করার সময় তাকে বাধা দেয়া হয় এবং তাকে রাইফেল দিয়ে আঘাত করা হয় বলে জানা গেছে। এ সময় এক তালেবান সদস্য তার স্বয়ংক্রিয় অস্ত্র দিয়ে শূন্যে গুলি ছোড়েন বলে ঘটনাস্থলে থাকা এএফপির সাংবাদিক জানিয়েছেন।

পরে বিক্ষোভকারীরা স্কুলের ভেতরে আশ্রয় নেয় বলে ওই প্রতিবেদনে বলা হয়েছে। এ ব্যাপারে তালেবান গার্ড মৌলভী নাসরাতুল্লাহ জানান, বিক্ষোভকারীরা নিরাপত্তা বাহিনীকে সহযোগিতা করেননি। তিনি বলেন, তারা অনুমতি ছাড়াই মিছিল বের করেন। অন্য দেশের মতো আমাদের দেশেও সবারই আন্দোলন করার অধিকার আছে। কিন্তু তার আগে কর্তৃপক্ষকে অবগত করতে হবে।

১৫ আগস্ট দ্বিতীয় দফায় ক্ষমতা দখলের পর তালেবান আগের কঠোর মনোভাব থেকে সরিয়ে আসার ঘোষণা দিয়েছিল। কিন্তু নারীদের স্কুলে ফেরা এবং কর্মক্ষেত্রে ফেরার ব্যাপারে নিষেধাজ্ঞাসহ নারীদের প্রতি তালেবানের বিরূপ মনোভাব অব্যাহত রয়েছে। নব্বইয়ের দশকে প্রথম দফার শাসনামলেও নারীদের শিক্ষাগ্রহণ, জীবিকা উপার্জনসহ সব মৌলেক অধিকার বাতিল করেছিল তালেবান।

১৯৯৬-২০০১ সালে তালেবান সরকারের অধীনে নারীদের অধিকার সম্পূর্ণ হরণ করা হয়। কেন মেয়ে স্কুলে যেতে পারতো না, বাইরে কাজ করতে পারতো না। সবাইকে বোরকা ও হিজাব পরিধান করতে হতো এবং বের হতে হলে পরিবারের একজন পুরুষ সদস্যকে বাধ্যতামূলত সঙ্গে রাখা লাগতো। এ ছাড়া তাদের জোর করে বাল্যবিবাহ দিতো তালেবান শাসকগোষ্ঠী।

image

তালেবান ক্ষমতায় আসার পর নারীদের বিরুদ্ধে একের পর এক সিদ্ধান্ত দিচ্ছে। অধিকার আদায়ে রাজপথে আফগান নারীরা -রয়টার্স

আরও খবর
আফগানিস্তানে জরুরি সহায়তা পাঠালো চীন
দোহা চুক্তি নিয়ে ভারতকে অন্ধকারে রাখে যুক্তরাষ্ট্র
আজারবাইজান সীমান্তে ইরানের সামরিক মহড়া
মায়ানমারে বাড়ছে দরিদ্র মানুষের সংখ্যা : জাতিসংঘ

শনিবার, ০২ অক্টোবর ২০২১ , ১৭ আশ্বিন ১৪২৮ ২৩ সফর ১৪৪৩

আফগানিস্তানে মেয়ে শিক্ষার্থীদের বিক্ষোভ : স্কুলে ফিরতে চায়

image

তালেবান ক্ষমতায় আসার পর নারীদের বিরুদ্ধে একের পর এক সিদ্ধান্ত দিচ্ছে। অধিকার আদায়ে রাজপথে আফগান নারীরা -রয়টার্স

আফগানিস্তানে স্কুল ও বিশ্ববিদ্যালয়ে মেয়েদের ফেরার দাবি জানিয়ে রাজধানী কাবুলে বিক্ষোভ করেছেন নারীরা। নতুন শাসকদলের এ পদক্ষেপ আফগান সমাজে নারীদের মৌলিক অধিকার লঙ্ঘনের শামিল বলে অভিযোগ বিক্ষুব্ধ নারীদের। তালেবানের নিরাপত্তা বাহিনীর সদস্যরা নারীদের বিক্ষোভ মিছিলে বাধা দিয়েছিল। সে বাধা উপেক্ষা করেই প্রতিবাদ কর্মসূচি অব্যাহত রাখেন নারীরা।

এর আগে তালেবান সরকারের তথ্য ও সংস্কৃতিবিষয়ক উপ-মন্ত্রী জাবিহুল্লাহ মুজাহিদ জানিয়েছিলেন, আন্দোলন করতে হলে আগে আইন মন্ত্রণালয়ের অনুমতি নিতে হবে বিক্ষোভকারীদের। তবে ছাত্রীদের জন্য মাধ্যমিক শিক্ষা প্রতিষ্ঠান ও বিশ্ববিদ্যালয় বন্ধ করে দেয়া নিয়ে বারবার উদ্বেগ জানাচ্ছেন আফগানিস্তানের সব পর্যায়ের শিক্ষকরা।

এ পদক্ষেপে দেশটিতে নারী শিক্ষার ভবিষ্যৎ বড় ধরনের অনিশ্চয়তায় পড়বে বলে শঙ্কিত তারা। বিষয়টিকে গুরুত্বের সঙ্গে নেয়ার জন্য নতুন প্রশাসনের প্রতি পরামর্শ তাদের। আফগান নারী শিক্ষার্থীরা বলছেন, ইসলাম ধর্ম ও আফগান আইন- দুটিতেই শিক্ষাগ্রহণ তাদের অধিকার এবং এ অধিকার লঙ্ঘনের ক্ষমতা কারও নেই।

তালেবান আফগানিস্তানের নিয়ন্ত্রণ নেয়ার পর থেকেই দেশটিতে কিশোরী ও নারীদের আনুষ্ঠানিক শিক্ষাগ্রহণ বন্ধ রয়েছে। চলতি মাসে মাধ্যমিক ও বিশ্ববিদ্যালয় পর্যায়ের ছাত্রীদের ছাড়াই শিক্ষাদান কার্যক্রম শুরু করে বিভিন্ন প্রতিষ্ঠান।

এর আগে আফগানিস্তানের নারী মন্ত্রণালয় স্থায়ীভাবে বন্ধ করে দেয় শাসকগোষ্ঠী। রাজধানী কাবুলে নগর প্রশাসনের নারী কর্মকর্তা-কর্মচারীদেরও বাড়িতে থাকার আদেশ দেয় তালেবান। প্রতিবেদনে বলা হয়েছে, কাবুলের পূর্বাঞ্চলের একটি উচ্চ বিদ্যালয়ের সামনে মেয়েদের স্কুলে ফেরার দাবিতে ছয়জন নারী জড়ো হয়ে বিক্ষোভ করছিলেন।

কয়েকদিন আগেই আফগানিস্তানের স্কুলগুলো খুললেও মেয়েদের আসার ব্যাপারে কোন নির্দেশনা দেয়নি তালেবান। ঘটনার সময় সেখানে উপস্থিত ছিলেন ফরাসি সংবাদমাধ্যম এএফপির সংবাদকর্মীরা। তাদের বর্ণনা অনুযায়ী, কাবুলের পূর্বাঞ্চলের একটি উচ্চ মাধ্যমিক স্কুলের সামনে ছয় জন নারী ছোট একটি মিছিল বের করেন।

মাধ্যমিক স্কুলে মেয়েদের ফেরার অধিকার আছে জানিয়ে সেøাগান দেন আন্দোলনকারীরা। তাদের ব্যানারে লেখা ছিল, আমাদের কলম ভাঙবেন না, আমাদের বই পুড়িয়ে দেবেন না, আমাদের স্কুল বন্ধ করবেন না। কিছুক্ষণের মধ্যেই তাদের বাধা দেয় সশস্ত্র তালেবান সদস্যরা। একপর্যায়ে তাদের ব্যানার ছিনিয়ে নিয়ে ফাঁকা গুলি ছোড়ে। তালেবানের বাধার মুখে ছত্রভঙ্গ হয়ে যায় তারা।

একজন বিদেশি সাংবাদিক ওই বিক্ষোভের দৃশ্য ধারণ করার সময় তাকে বাধা দেয়া হয় এবং তাকে রাইফেল দিয়ে আঘাত করা হয় বলে জানা গেছে। এ সময় এক তালেবান সদস্য তার স্বয়ংক্রিয় অস্ত্র দিয়ে শূন্যে গুলি ছোড়েন বলে ঘটনাস্থলে থাকা এএফপির সাংবাদিক জানিয়েছেন।

পরে বিক্ষোভকারীরা স্কুলের ভেতরে আশ্রয় নেয় বলে ওই প্রতিবেদনে বলা হয়েছে। এ ব্যাপারে তালেবান গার্ড মৌলভী নাসরাতুল্লাহ জানান, বিক্ষোভকারীরা নিরাপত্তা বাহিনীকে সহযোগিতা করেননি। তিনি বলেন, তারা অনুমতি ছাড়াই মিছিল বের করেন। অন্য দেশের মতো আমাদের দেশেও সবারই আন্দোলন করার অধিকার আছে। কিন্তু তার আগে কর্তৃপক্ষকে অবগত করতে হবে।

১৫ আগস্ট দ্বিতীয় দফায় ক্ষমতা দখলের পর তালেবান আগের কঠোর মনোভাব থেকে সরিয়ে আসার ঘোষণা দিয়েছিল। কিন্তু নারীদের স্কুলে ফেরা এবং কর্মক্ষেত্রে ফেরার ব্যাপারে নিষেধাজ্ঞাসহ নারীদের প্রতি তালেবানের বিরূপ মনোভাব অব্যাহত রয়েছে। নব্বইয়ের দশকে প্রথম দফার শাসনামলেও নারীদের শিক্ষাগ্রহণ, জীবিকা উপার্জনসহ সব মৌলেক অধিকার বাতিল করেছিল তালেবান।

১৯৯৬-২০০১ সালে তালেবান সরকারের অধীনে নারীদের অধিকার সম্পূর্ণ হরণ করা হয়। কেন মেয়ে স্কুলে যেতে পারতো না, বাইরে কাজ করতে পারতো না। সবাইকে বোরকা ও হিজাব পরিধান করতে হতো এবং বের হতে হলে পরিবারের একজন পুরুষ সদস্যকে বাধ্যতামূলত সঙ্গে রাখা লাগতো। এ ছাড়া তাদের জোর করে বাল্যবিবাহ দিতো তালেবান শাসকগোষ্ঠী।