বিদেশি চ্যানেলের সম্প্রচার বন্ধ, বিজ্ঞাপনমুক্ত চ্যানেল চায়

সরকারি নির্দেশে গতকাল থেকে ভারতীয়সহ সব বিদেশি চ্যানেলের সম্প্রচার বন্ধ। দেশে হঠাৎ করে টিভিতে ভারতীয় ও বিদেশি উল্লেখযোগ্য জনপ্রিয় সিরিয়াল ও ছবিনির্ভর কয়েকটি চ্যানেল দেখতে না পেয়ে ‘সংবাদের’ কাছে রাজধানীর বিভিন্ন স্থান থেকে কেউ বিরূপ মন্তব্য করেছেন, কেউ বা আবার সরকারের এ সিদ্ধান্তকে একটি ভালো উদ্যোগ বলে মন্তব্য করেছেন।

জুরাইন থেকে সোনিয়া হোসাইন সংবাদকে জানান, শুক্রবার থেকে ভারতীয় চ্যানেল জি-বাংলা, স্টার জলসা চ্যানেলসহ অন্য চ্যানেলগুলো দেখতে পারছি না। স্টার জলসার ‘মন পাগল’ ও জি-বাংলার ‘স্বর্গজয়া’ সিরিয়াল নাটক দেখতে ভালো লাগতো। এখন আর দেখতে পারব না। এজন্য মনটা খারাপ। বাংলা চ্যানেলের ছবি ভালো লাগে না।

জুরাইন মুরাদপুরের সিনথিয়া কবির নামে এক স্কুলশিক্ষার্থী জানান, টিভি খুলে দেখি ভারতীয় চ্যানেল জি-বাংলা,স্টার জলসা আসে না। পড়া লেখার ফাঁকে অবসরে দাদুর সঙ্গে বসে ভারতীয় চ্যানেলের কিছু ছবি, নাটক দেখতাম। বন্ধ হয়ে গেছে শুনে মনটা ভালো না।

সিদ্ধিরগঞ্জ কদমতলীর বৃষ্টি নামে এক গৃহবধূ জানান, আমরা এই এলাকায় স্টার জলসা, জি-বাংলা ও অন্যান্য চ্যানেল দেখতে পাচ্ছি। তবে দেখতে না পারলে কি আর করমু। সময় কাটবে না।

যাত্রাবাড়ী থেকে মাসুরা নামে আরেক গৃহবধূ জানান, সরকার বিদেশি, ভারতীয় চ্যানেলগুলো বন্ধ করে ভালো করেছে। এখন আমার মেয়ের মতো অন্য পড়ালেখা করা ছেলেমেয়েরা পড়ার টেবিলে মনযোগ দেবে।

তথ্য মন্ত্রণালয়ের নির্দেশনায় এই কাজটি বাস্তবায়ন করছে ক্যাবল অপারেটরা। কেবল অপারেটরস অ্যাসোসিয়েশন অব বাংলাদেশের (কোয়াব) সভাপতি এসএম আনোয়ার পারভেজ সাংবাদিকদের এ তথ্য জানিয়েছেন।

কোয়াব সভাপতি বলেন, গত ১৩ সেপ্টেম্বর তথ্য মন্ত্রণালয় থেকে একটি পরিপত্র জারি হয়েছে। তাতে বলা হয়েছে ১ অক্টোবর থেকে বিদেশি যেসব চ্যানেল বিজ্ঞাপন প্রদর্শন করে সেগুলো প্রচার করা যাবে না। তারই পরিপ্রেক্ষিতে ১ অক্টোবর থেকে বাংলাদেশি চ্যানেল ব্যতিত সবগুলো চ্যানেল বন্ধ করা হয়েছে।

এক প্রশ্নের জবাবে এস এম আনোয়ার পারভেজ বলেন, বিদেশি সব চ্যানেলই বিজ্ঞাপন প্রচার করে। যেহেতু সরকার বিজ্ঞাপনমুক্ত বিদেশি চ্যানেল চাইছে সেহেতু বিজ্ঞাপন প্রচার করে এমন চ্যানেল তো আমরা প্রচার করতে পারি না। তাই বিদেশি সব চ্যানেল বন্ধ রয়েছে।

এর আগে গত বৃহস্পতিবার সচিবালয়ে তথ্য ও সম্প্রচার মন্ত্রণালয়ের সভাকক্ষে সাংবাদিকদের সঙ্গে আলাপকালে তথ্যমন্ত্রী ড. হাছান মাহমুদ জানান, আইন অনুযায়ী দেশে বিদেশি চ্যানেলগুলোর বিজ্ঞাপনমুক্ত (ক্লিনফিড) সম্প্রচার বাস্তবায়নে ১ অক্টোবর থেকে মোবাইল কোর্ট পরিচালনা করা হবে। মন্ত্রণালয়ের পূর্বঘোষিত সিদ্ধান্ত অনুযায়ী আইন প্রয়োগে এ ব্যবস্থার কথা জানান মন্ত্রী।

তিনি বলেন, ‘১ অক্টোবর থেকে আমরা সারাদেশে মোবাইল কোর্ট পরিচালনা করবো। কোন বিদেশি চ্যানেলে ক্লিনফিড দেখান না হলে এবং মন্ত্রণালয়, টেলিভিশন ওনার্স অ্যাসোসিয়েশন ও ক্যাবল অপারেটর ত্রিপক্ষীয় বৈঠকের মাধ্যমে ক্যাবল লাইনে সম্প্রচারের জন্য টেলিভিশনগুলোর নির্ধারিত ক্রমের ব্যত্যয় হলে বা কোন ক্যাবল অপারেটর আইন ভঙ্গ করে নিজেরা বিজ্ঞাপন, অনুষ্ঠান প্রদর্শন করলে বা আইনের অন্য কোন ব্যত্যয় ঘটালে সংশ্লিষ্ট চ্যানেল ডাউনলিংকের অনুমতিপ্রাপ্ত ডিস্ট্রিবিউটরদের এবং ক্যাবল অপারেটরদের ওপরই আইন ভঙ্গের দায় বর্তাবে এবং গতকাল থেকে আইন অনুযায়ী ব্যবস্থা নেয়া হবে।’

শনিবার, ০২ অক্টোবর ২০২১ , ১৭ আশ্বিন ১৪২৮ ২৩ সফর ১৪৪৩

বিদেশি চ্যানেলের সম্প্রচার বন্ধ, বিজ্ঞাপনমুক্ত চ্যানেল চায়

নিজস্ব বার্তা পরিবেশক

সরকারি নির্দেশে গতকাল থেকে ভারতীয়সহ সব বিদেশি চ্যানেলের সম্প্রচার বন্ধ। দেশে হঠাৎ করে টিভিতে ভারতীয় ও বিদেশি উল্লেখযোগ্য জনপ্রিয় সিরিয়াল ও ছবিনির্ভর কয়েকটি চ্যানেল দেখতে না পেয়ে ‘সংবাদের’ কাছে রাজধানীর বিভিন্ন স্থান থেকে কেউ বিরূপ মন্তব্য করেছেন, কেউ বা আবার সরকারের এ সিদ্ধান্তকে একটি ভালো উদ্যোগ বলে মন্তব্য করেছেন।

জুরাইন থেকে সোনিয়া হোসাইন সংবাদকে জানান, শুক্রবার থেকে ভারতীয় চ্যানেল জি-বাংলা, স্টার জলসা চ্যানেলসহ অন্য চ্যানেলগুলো দেখতে পারছি না। স্টার জলসার ‘মন পাগল’ ও জি-বাংলার ‘স্বর্গজয়া’ সিরিয়াল নাটক দেখতে ভালো লাগতো। এখন আর দেখতে পারব না। এজন্য মনটা খারাপ। বাংলা চ্যানেলের ছবি ভালো লাগে না।

জুরাইন মুরাদপুরের সিনথিয়া কবির নামে এক স্কুলশিক্ষার্থী জানান, টিভি খুলে দেখি ভারতীয় চ্যানেল জি-বাংলা,স্টার জলসা আসে না। পড়া লেখার ফাঁকে অবসরে দাদুর সঙ্গে বসে ভারতীয় চ্যানেলের কিছু ছবি, নাটক দেখতাম। বন্ধ হয়ে গেছে শুনে মনটা ভালো না।

সিদ্ধিরগঞ্জ কদমতলীর বৃষ্টি নামে এক গৃহবধূ জানান, আমরা এই এলাকায় স্টার জলসা, জি-বাংলা ও অন্যান্য চ্যানেল দেখতে পাচ্ছি। তবে দেখতে না পারলে কি আর করমু। সময় কাটবে না।

যাত্রাবাড়ী থেকে মাসুরা নামে আরেক গৃহবধূ জানান, সরকার বিদেশি, ভারতীয় চ্যানেলগুলো বন্ধ করে ভালো করেছে। এখন আমার মেয়ের মতো অন্য পড়ালেখা করা ছেলেমেয়েরা পড়ার টেবিলে মনযোগ দেবে।

তথ্য মন্ত্রণালয়ের নির্দেশনায় এই কাজটি বাস্তবায়ন করছে ক্যাবল অপারেটরা। কেবল অপারেটরস অ্যাসোসিয়েশন অব বাংলাদেশের (কোয়াব) সভাপতি এসএম আনোয়ার পারভেজ সাংবাদিকদের এ তথ্য জানিয়েছেন।

কোয়াব সভাপতি বলেন, গত ১৩ সেপ্টেম্বর তথ্য মন্ত্রণালয় থেকে একটি পরিপত্র জারি হয়েছে। তাতে বলা হয়েছে ১ অক্টোবর থেকে বিদেশি যেসব চ্যানেল বিজ্ঞাপন প্রদর্শন করে সেগুলো প্রচার করা যাবে না। তারই পরিপ্রেক্ষিতে ১ অক্টোবর থেকে বাংলাদেশি চ্যানেল ব্যতিত সবগুলো চ্যানেল বন্ধ করা হয়েছে।

এক প্রশ্নের জবাবে এস এম আনোয়ার পারভেজ বলেন, বিদেশি সব চ্যানেলই বিজ্ঞাপন প্রচার করে। যেহেতু সরকার বিজ্ঞাপনমুক্ত বিদেশি চ্যানেল চাইছে সেহেতু বিজ্ঞাপন প্রচার করে এমন চ্যানেল তো আমরা প্রচার করতে পারি না। তাই বিদেশি সব চ্যানেল বন্ধ রয়েছে।

এর আগে গত বৃহস্পতিবার সচিবালয়ে তথ্য ও সম্প্রচার মন্ত্রণালয়ের সভাকক্ষে সাংবাদিকদের সঙ্গে আলাপকালে তথ্যমন্ত্রী ড. হাছান মাহমুদ জানান, আইন অনুযায়ী দেশে বিদেশি চ্যানেলগুলোর বিজ্ঞাপনমুক্ত (ক্লিনফিড) সম্প্রচার বাস্তবায়নে ১ অক্টোবর থেকে মোবাইল কোর্ট পরিচালনা করা হবে। মন্ত্রণালয়ের পূর্বঘোষিত সিদ্ধান্ত অনুযায়ী আইন প্রয়োগে এ ব্যবস্থার কথা জানান মন্ত্রী।

তিনি বলেন, ‘১ অক্টোবর থেকে আমরা সারাদেশে মোবাইল কোর্ট পরিচালনা করবো। কোন বিদেশি চ্যানেলে ক্লিনফিড দেখান না হলে এবং মন্ত্রণালয়, টেলিভিশন ওনার্স অ্যাসোসিয়েশন ও ক্যাবল অপারেটর ত্রিপক্ষীয় বৈঠকের মাধ্যমে ক্যাবল লাইনে সম্প্রচারের জন্য টেলিভিশনগুলোর নির্ধারিত ক্রমের ব্যত্যয় হলে বা কোন ক্যাবল অপারেটর আইন ভঙ্গ করে নিজেরা বিজ্ঞাপন, অনুষ্ঠান প্রদর্শন করলে বা আইনের অন্য কোন ব্যত্যয় ঘটালে সংশ্লিষ্ট চ্যানেল ডাউনলিংকের অনুমতিপ্রাপ্ত ডিস্ট্রিবিউটরদের এবং ক্যাবল অপারেটরদের ওপরই আইন ভঙ্গের দায় বর্তাবে এবং গতকাল থেকে আইন অনুযায়ী ব্যবস্থা নেয়া হবে।’