২০ দলীয় জোট ছাড়লো খেলাফতে মজলিস

খেলাফত মজলিস ২০ দলীয় জোট ছাড়ছে- এমন গুঞ্জন অনেকদিনের। অবশেষে সেই গুঞ্জনই সত্যি হলো। আনুষ্ঠানিকভাবে ২০ দলীয় জোটসহ সব রাজনৈতিক জোটের সঙ্গে সম্পর্ক ছিন্ন করেছে দলটি। গতকাল রাজধানীর পুরানা পল্টনের সীগাল রেস্টুরেন্টে এক সংবাদ সম্মেলনে দলটির পক্ষ থেকে এই ঘোষণা দেয়া হয়। দলের আমির মাওলানা মুহাম্মাদ ইসহাকের পক্ষে এ ঘোষণা দেন ভারপ্রাপ্ত মহাসচিব অ্যাডভোকেট জাহাঙ্গীর হোসাইন। এর আগে দলের সর্বোচ্চ ফোরামের শুরা বৈঠক করে দলটি।

খেলাফত মজলিসের আমির মাওলানা মুহাম্মদ ইসহাক সংবাদ সম্মেলনে লিখিত বক্তব্যে বলেন, খেলাফত মজলিস একটি নিবন্ধিত রাজনৈতিক দল হিসেবে জাতির প্রয়োজনে সর্বদা সক্রিয় ভূমিকা পালন করে আসছে। নিয়মতান্ত্রিক-শান্তিপূর্ণ আন্দোলন-সংগ্রামে খেলাফত মজলিস বিশ্বাসী। একটি সুশৃঙ্খল সংগঠন হিসেবে দীর্ঘ তিন দশকেরও বেশি সময় রাজনৈতিক অঙ্গনে দেশ, জাতি, ইসলাম ও জনগণের পক্ষে ইতিবাচক ভূমিকা পালন করে আসছে দলটি। খেলাফত মজলিস মনে করে, দেশের প্রতিটি নাগরিকের রাজনৈতিক মতাদর্শ লালন করার অধিকার আছে, যা আমাদের সংবিধানেও স্বীকৃত। একটি সরব সক্রিয় নিবন্ধিত রাজনৈতিক দল হিসেবে খেলাফত মজলিসের রাজনৈতিক কর্মকৌশল সাংগঠনিক প্রক্রিয়ায় সময় পর্যালোচনা করে, দলের সর্বোচ্চ নীতিনির্ধারণী ফোরাম কেন্দ্রীয় মজলিসে শুরা প্রয়োজনীয় সিদ্ধান্ত গ্রহণ করে থাকে।

তিনি বলেন, ২০১৯ সালের ২৫ জানুয়ারি অনুষ্ঠিত মজলিসে শুরার অধিবেশনে ২০ দলীয় জোটের বিষয়ে সিদ্ধান্ত গ্রহণ করে যে পরবর্তী সিদ্ধান্তের আগ পর্যন্ত খেলাফত মজলিস জোটের কার্যক্রমে অংশগ্রহণ না করে রাজনৈতিক পরিস্থিতি গভীরভাবে পর্যবেক্ষণ করবে। সে অনুযায়ী দীর্ঘ দুই বছরের বেশি সময় ধরে রাজনৈতিক পরিস্থিতি পর্যবেক্ষণ করে আসছে।

মাওলানা ইসহাক বলেন, রাজনৈতিক জোট ইস্যুকেন্দ্রিক গঠিত হয়। জোট কোন স্থায়ী বিষয় নয়। খেলাফত মজলিস ২০ দলীয় জোটে দীর্ঘ ২২ বছর ধরে আছে। ২০১৯ সাল থেকে ২০ দলীয় জোটের দৃশ্যমান রাজনৈতিক তৎপরতা ও কর্মসূচি নেই। ২০১৮ সালে জাতীয় ঐক্যফ্রন্ট গঠনের মধ্য দিয়ে ২০ দলীয় জোটকে কার্যত রাজনৈতিকভাবে অকার্যকরও করা হয়। এমতাবস্থায় আদর্শিক, সাংগঠনিক ও রাজনৈতিক পরিস্থিতি বিবেচনায় ২০১৯ সালে মজলিসে শুরায় গৃহীত সিদ্ধান্ত অনুযায়ী খেলাফত মজলিস আজকের অধিবেশনে সিদ্ধান্ত গ্রহণ করে যে, খেলাফত মজলিস একটি আদর্শিক রাজনৈতিক সংগঠন হিসেবে স্বকীয়-স্বাতন্ত্র বৈশিষ্ট্য নিয়ে ময়দানে ভূমিকা রাখবে এবং এখন থেকে ২০ দলীয় জোটসহ সব রাজনৈতিক জোটের সঙ্গে সম্পর্ক ত্যাগ করছে।

নানা কারণে এরই মধ্যে ২০ দলীয় জোট ছেড়ে গেছে বেশ কয়েকটি দল। গত ১৪ জুলাই জোট থেকে বেরিয়ে যায় জমিয়তে উলামায়ে ইসলাম। এরপর থেকেই শোনা যাচ্ছিল খেলাফত মজলিসও জোট থেকে বেরিয়ে যাচ্ছে। ১৯৯৯ সালের ৬ জানুয়ারি জাতীয় পার্টি, জামায়াতে ইসলামী ও ইসলামি ঐক্যজোটকে সঙ্গে নিয়ে ‘চারদলীয় জোট’ গঠন করে বিএনপি। পরে এরশাদের নেতৃত্বাধীন জাতীয় পার্টি বেরিয়ে গেলে যুক্ত হয় নাজিউর রহমান মঞ্জুর বাংলাদেশ জাতীয় পার্টি (বিজেপি)। পরবর্তীতে ২০১২ সালে হয় ১৮ দল হয়। এরপর আরও দুই দল যুক্ত হয়ে হয় ২০ দলীয় জোট। ২০ দলীয় জোট থেকে ইসলামি ঐক্যজোট, এনপিপি, ন্যাপ ও এনডিপি বেরিয়ে গেলেও একই নামে এসব দলের একাংশকে জোটে রেখে দেয় বিএনপি। খেলাফত মজলিস বেরিয়ে গেলে এই নামে কোন অংশকে জোটে রাখবে কি না, সেই বিষয়ে এখনও কিছু জানা যায়নি।

শনিবার, ০২ অক্টোবর ২০২১ , ১৭ আশ্বিন ১৪২৮ ২৩ সফর ১৪৪৩

২০ দলীয় জোট ছাড়লো খেলাফতে মজলিস

নিজস্ব বার্তা পরিবেশক

খেলাফত মজলিস ২০ দলীয় জোট ছাড়ছে- এমন গুঞ্জন অনেকদিনের। অবশেষে সেই গুঞ্জনই সত্যি হলো। আনুষ্ঠানিকভাবে ২০ দলীয় জোটসহ সব রাজনৈতিক জোটের সঙ্গে সম্পর্ক ছিন্ন করেছে দলটি। গতকাল রাজধানীর পুরানা পল্টনের সীগাল রেস্টুরেন্টে এক সংবাদ সম্মেলনে দলটির পক্ষ থেকে এই ঘোষণা দেয়া হয়। দলের আমির মাওলানা মুহাম্মাদ ইসহাকের পক্ষে এ ঘোষণা দেন ভারপ্রাপ্ত মহাসচিব অ্যাডভোকেট জাহাঙ্গীর হোসাইন। এর আগে দলের সর্বোচ্চ ফোরামের শুরা বৈঠক করে দলটি।

খেলাফত মজলিসের আমির মাওলানা মুহাম্মদ ইসহাক সংবাদ সম্মেলনে লিখিত বক্তব্যে বলেন, খেলাফত মজলিস একটি নিবন্ধিত রাজনৈতিক দল হিসেবে জাতির প্রয়োজনে সর্বদা সক্রিয় ভূমিকা পালন করে আসছে। নিয়মতান্ত্রিক-শান্তিপূর্ণ আন্দোলন-সংগ্রামে খেলাফত মজলিস বিশ্বাসী। একটি সুশৃঙ্খল সংগঠন হিসেবে দীর্ঘ তিন দশকেরও বেশি সময় রাজনৈতিক অঙ্গনে দেশ, জাতি, ইসলাম ও জনগণের পক্ষে ইতিবাচক ভূমিকা পালন করে আসছে দলটি। খেলাফত মজলিস মনে করে, দেশের প্রতিটি নাগরিকের রাজনৈতিক মতাদর্শ লালন করার অধিকার আছে, যা আমাদের সংবিধানেও স্বীকৃত। একটি সরব সক্রিয় নিবন্ধিত রাজনৈতিক দল হিসেবে খেলাফত মজলিসের রাজনৈতিক কর্মকৌশল সাংগঠনিক প্রক্রিয়ায় সময় পর্যালোচনা করে, দলের সর্বোচ্চ নীতিনির্ধারণী ফোরাম কেন্দ্রীয় মজলিসে শুরা প্রয়োজনীয় সিদ্ধান্ত গ্রহণ করে থাকে।

তিনি বলেন, ২০১৯ সালের ২৫ জানুয়ারি অনুষ্ঠিত মজলিসে শুরার অধিবেশনে ২০ দলীয় জোটের বিষয়ে সিদ্ধান্ত গ্রহণ করে যে পরবর্তী সিদ্ধান্তের আগ পর্যন্ত খেলাফত মজলিস জোটের কার্যক্রমে অংশগ্রহণ না করে রাজনৈতিক পরিস্থিতি গভীরভাবে পর্যবেক্ষণ করবে। সে অনুযায়ী দীর্ঘ দুই বছরের বেশি সময় ধরে রাজনৈতিক পরিস্থিতি পর্যবেক্ষণ করে আসছে।

মাওলানা ইসহাক বলেন, রাজনৈতিক জোট ইস্যুকেন্দ্রিক গঠিত হয়। জোট কোন স্থায়ী বিষয় নয়। খেলাফত মজলিস ২০ দলীয় জোটে দীর্ঘ ২২ বছর ধরে আছে। ২০১৯ সাল থেকে ২০ দলীয় জোটের দৃশ্যমান রাজনৈতিক তৎপরতা ও কর্মসূচি নেই। ২০১৮ সালে জাতীয় ঐক্যফ্রন্ট গঠনের মধ্য দিয়ে ২০ দলীয় জোটকে কার্যত রাজনৈতিকভাবে অকার্যকরও করা হয়। এমতাবস্থায় আদর্শিক, সাংগঠনিক ও রাজনৈতিক পরিস্থিতি বিবেচনায় ২০১৯ সালে মজলিসে শুরায় গৃহীত সিদ্ধান্ত অনুযায়ী খেলাফত মজলিস আজকের অধিবেশনে সিদ্ধান্ত গ্রহণ করে যে, খেলাফত মজলিস একটি আদর্শিক রাজনৈতিক সংগঠন হিসেবে স্বকীয়-স্বাতন্ত্র বৈশিষ্ট্য নিয়ে ময়দানে ভূমিকা রাখবে এবং এখন থেকে ২০ দলীয় জোটসহ সব রাজনৈতিক জোটের সঙ্গে সম্পর্ক ত্যাগ করছে।

নানা কারণে এরই মধ্যে ২০ দলীয় জোট ছেড়ে গেছে বেশ কয়েকটি দল। গত ১৪ জুলাই জোট থেকে বেরিয়ে যায় জমিয়তে উলামায়ে ইসলাম। এরপর থেকেই শোনা যাচ্ছিল খেলাফত মজলিসও জোট থেকে বেরিয়ে যাচ্ছে। ১৯৯৯ সালের ৬ জানুয়ারি জাতীয় পার্টি, জামায়াতে ইসলামী ও ইসলামি ঐক্যজোটকে সঙ্গে নিয়ে ‘চারদলীয় জোট’ গঠন করে বিএনপি। পরে এরশাদের নেতৃত্বাধীন জাতীয় পার্টি বেরিয়ে গেলে যুক্ত হয় নাজিউর রহমান মঞ্জুর বাংলাদেশ জাতীয় পার্টি (বিজেপি)। পরবর্তীতে ২০১২ সালে হয় ১৮ দল হয়। এরপর আরও দুই দল যুক্ত হয়ে হয় ২০ দলীয় জোট। ২০ দলীয় জোট থেকে ইসলামি ঐক্যজোট, এনপিপি, ন্যাপ ও এনডিপি বেরিয়ে গেলেও একই নামে এসব দলের একাংশকে জোটে রেখে দেয় বিএনপি। খেলাফত মজলিস বেরিয়ে গেলে এই নামে কোন অংশকে জোটে রাখবে কি না, সেই বিষয়ে এখনও কিছু জানা যায়নি।