ভবানীপুর উপনির্বাচনসহ আরও দুটি কেন্দ্রে সাধারণ নির্বাচন বৃহস্পতিবার সম্পন্ন হয়েছে। কি ফলাফল হবে তার দিকে তাকিয়ে রয়েছে গোটা রাজ্যের রাজনৈতিক মহল। আদতে ভবানীপুরের ভোটের আঁচ সাধারণ নির্বাচনের চেয়ে বেশিই ছিল। দুই পক্ষই যুদ্ধংদেহী মনোভাবে ঝাঁপিয়ে পড়েছে। একদিকে তৃণমূলের হেভিওয়েট প্রার্থী মমতা বন্দ্যোপাধ্যায়। অন্যদিকে বিজেপির ঝাঁঝালো প্রচার। দিলীপ ঘোষ, সুকান্ত মজুমদার, শুভেন্দু অধিকারী থেকে শুরু করে মোদি সরকারের হেভিওয়েট মন্ত্রীরা।
লড়াই কঠিন জেনেও ভোটপ্রচারে জোর টক্কর দিয়েছেন বিজেপি প্রার্থী প্রিয়াঙ্কা টিবরেওয়াল। বিজেপি অভিযোগ করেছে মানুষের ব্যাপক সমর্থন পেলেও শেষ পর্যন্ত তৃণমূলে সন্ত্রাস এবং কারচুপি গণতন্ত্রকে প্রহসনে পরিণত করেছে। এর মাঝে উপনির্বাচন সম্পন্ন হওয়ার ঠিক পরের দিন অর্থাৎ শুক্রবার বড়সড় ধাক্কা খেল ভারতীয় জনতা পার্টি।
উত্তর দিনাজপুর কেন্দ্রের বিজেপির টিকিটে নির্বাচিত বিধায়ক কৃষ্ণ কল্যাণী এদিন সাংবাদিক সম্মেলন করে দলের সঙ্গে সমস্ত সম্পর্ক ছিন্ন করে বিজেপি ছেড়েছেন। ভোটের মাঝে এই ঘটনাকে রীতিমত চাঞ্চল্যের সৃষ্টি করেছে রাজনৈতিক মহলে। দলের কাছেও চিন্তার কারণ হয়েছে। প্রাক্তন মন্ত্রী দেবশ্রী চৌধুরীর সঙ্গে সম্পর্ক তলানিতে পৌঁছানোর কারণেই বিজেপি ছাড়তে হয়েছে তাকে, সাংবাদিক সম্মেলনে এমনটিই বলেছেন কৃষ্ণ কল্যাণী।
রোববার ফলাফল ভবানীপুর থেকে বড়সড় লিড নিয়ে মমতা বন্দ্যোপাধ্যায় যে জয়ী হবে সে ব্যাপারে একরকম আত্মপ্রত্যয়ী তৃণমূল নেতৃত্ব। এছাড়া সমসেরগঞ্জ ও জঙ্গিপুর আসনেও অনেক বেশি ব্যবধানে জয়ী হবে বলেও তারা দাবি করছেন। তাই ভবানীপুর জয়ের পর ২০২৪ সালের লোকসভা ভোটে দিল্লি মসনদ থেকে বিজেপিকে হঠানোর ডাক দেবেন তৃণমূল নেত্রী মমতা বন্দ্যোপাধ্যায়। কিন্তু বিরোধীদলীয় নেতা শুভেন্দু অধিকারী বলেছেন, আগে মমতা বন্দোপাধ্যায় ভবানীপুর থেকে জিতে আসুন তার পরে ভারত বিজয় করুন। আমার তো মনে হয় আপনার ভাগ্যে আবারও নন্দিগ্রামের পুনরাবৃত্তি ঘটবে।
সূত্র বলছে, দক্ষিণ কলকাতা বরাবরই জোড়াফুল শিবিরের শক্ত ঘাঁটি হিসেবে পরিচিত। আর ভবানীপুরের ঘরের মেয়ে খোদ রাজ্যের মুখ্যমন্ত্রী। কালের নিয়মে ভবানীপুরে শক্তি বেড়েছে বিজেপিরও। ২০১১ সাল থেকে প্রতিটি ভোটে বাম-কংগ্রেসের রক্তক্ষরণ হয়েছে। সেই পরিসর দখল করেছে গেরুয়া শিবির। সেই নিরিখে ২০১১ বিধানসভা নির্বাচনে বিজেপি প্রার্থী রামচন্দ্র জয়সওয়াল পেয়েছিলেন ৫,০৭৮ ভোট। ২০১৬-র নির্বাচনে বিজেপি প্রার্থী চন্দ্র বোস ২৬,৯৯৯ ভোট পেয়েছিলেন। ২০২১ বিধানসভা নির্বাচনে বিজেপি প্রার্থী রুদ্রনীল ঘোষের ঝুলিতে পড়েছিল ৪৪,৭৮৬ ভোট।
গত বিধানসভা ভোটে ২১৩ আসন তৃণমূল জিতলেও নন্দীগ্রামে হেরেছেন মমতা। উপভোটেও তৃণমূল নেত্রীকে মাত করতে চাইছে বিজেপি। ২০২৪ সালের আগে মমতা যেভাবে বিরোধী মুখ হয়ে উঠছেন, ধাক্কা খাবে সেই প্রক্রিয়া। এই সত্বেও তৃণমূলের কাছে ভবানীপুর ২০২৪-র শঙ্খনাদের মঞ্চ। ফলে উপভোট হলেও বৃহত্তর প্রেক্ষাপটে ভবানীপুর প্রকৃত অর্থেই মমতার কাছে ‘ভ-এ ভারত’।
বৃহস্পতিবারের ভোট নিয়ে বিরোধীদের আনা অনেক অভিযোগই ভিত্তিহীন বলে উড়িয়ে দিয়েছে কমিশন। এই প্রসঙ্গে দিলীপ ঘোষ বলেন, ‘কমিশন যদি মমতাকে জেতানোর জন্য ভোট করে, তাহলে স্বাভাবিক অন্যদের অভিযোগ নেবে কেন? আমার ওপর আক্রমণ হয়েছে। অর্জুন সিংয়ের ওপর আক্রমণ হয়েছে। সভাপতিকে পুলিস চ্যাঙদোলা করে সরিয়ে দিচ্ছে।’
শনিবার, ০২ অক্টোবর ২০২১ , ১৭ আশ্বিন ১৪২৮ ২৩ সফর ১৪৪৩
দীপক মুখার্জী, কলকাতা
ভবানীপুর উপনির্বাচনসহ আরও দুটি কেন্দ্রে সাধারণ নির্বাচন বৃহস্পতিবার সম্পন্ন হয়েছে। কি ফলাফল হবে তার দিকে তাকিয়ে রয়েছে গোটা রাজ্যের রাজনৈতিক মহল। আদতে ভবানীপুরের ভোটের আঁচ সাধারণ নির্বাচনের চেয়ে বেশিই ছিল। দুই পক্ষই যুদ্ধংদেহী মনোভাবে ঝাঁপিয়ে পড়েছে। একদিকে তৃণমূলের হেভিওয়েট প্রার্থী মমতা বন্দ্যোপাধ্যায়। অন্যদিকে বিজেপির ঝাঁঝালো প্রচার। দিলীপ ঘোষ, সুকান্ত মজুমদার, শুভেন্দু অধিকারী থেকে শুরু করে মোদি সরকারের হেভিওয়েট মন্ত্রীরা।
লড়াই কঠিন জেনেও ভোটপ্রচারে জোর টক্কর দিয়েছেন বিজেপি প্রার্থী প্রিয়াঙ্কা টিবরেওয়াল। বিজেপি অভিযোগ করেছে মানুষের ব্যাপক সমর্থন পেলেও শেষ পর্যন্ত তৃণমূলে সন্ত্রাস এবং কারচুপি গণতন্ত্রকে প্রহসনে পরিণত করেছে। এর মাঝে উপনির্বাচন সম্পন্ন হওয়ার ঠিক পরের দিন অর্থাৎ শুক্রবার বড়সড় ধাক্কা খেল ভারতীয় জনতা পার্টি।
উত্তর দিনাজপুর কেন্দ্রের বিজেপির টিকিটে নির্বাচিত বিধায়ক কৃষ্ণ কল্যাণী এদিন সাংবাদিক সম্মেলন করে দলের সঙ্গে সমস্ত সম্পর্ক ছিন্ন করে বিজেপি ছেড়েছেন। ভোটের মাঝে এই ঘটনাকে রীতিমত চাঞ্চল্যের সৃষ্টি করেছে রাজনৈতিক মহলে। দলের কাছেও চিন্তার কারণ হয়েছে। প্রাক্তন মন্ত্রী দেবশ্রী চৌধুরীর সঙ্গে সম্পর্ক তলানিতে পৌঁছানোর কারণেই বিজেপি ছাড়তে হয়েছে তাকে, সাংবাদিক সম্মেলনে এমনটিই বলেছেন কৃষ্ণ কল্যাণী।
রোববার ফলাফল ভবানীপুর থেকে বড়সড় লিড নিয়ে মমতা বন্দ্যোপাধ্যায় যে জয়ী হবে সে ব্যাপারে একরকম আত্মপ্রত্যয়ী তৃণমূল নেতৃত্ব। এছাড়া সমসেরগঞ্জ ও জঙ্গিপুর আসনেও অনেক বেশি ব্যবধানে জয়ী হবে বলেও তারা দাবি করছেন। তাই ভবানীপুর জয়ের পর ২০২৪ সালের লোকসভা ভোটে দিল্লি মসনদ থেকে বিজেপিকে হঠানোর ডাক দেবেন তৃণমূল নেত্রী মমতা বন্দ্যোপাধ্যায়। কিন্তু বিরোধীদলীয় নেতা শুভেন্দু অধিকারী বলেছেন, আগে মমতা বন্দোপাধ্যায় ভবানীপুর থেকে জিতে আসুন তার পরে ভারত বিজয় করুন। আমার তো মনে হয় আপনার ভাগ্যে আবারও নন্দিগ্রামের পুনরাবৃত্তি ঘটবে।
সূত্র বলছে, দক্ষিণ কলকাতা বরাবরই জোড়াফুল শিবিরের শক্ত ঘাঁটি হিসেবে পরিচিত। আর ভবানীপুরের ঘরের মেয়ে খোদ রাজ্যের মুখ্যমন্ত্রী। কালের নিয়মে ভবানীপুরে শক্তি বেড়েছে বিজেপিরও। ২০১১ সাল থেকে প্রতিটি ভোটে বাম-কংগ্রেসের রক্তক্ষরণ হয়েছে। সেই পরিসর দখল করেছে গেরুয়া শিবির। সেই নিরিখে ২০১১ বিধানসভা নির্বাচনে বিজেপি প্রার্থী রামচন্দ্র জয়সওয়াল পেয়েছিলেন ৫,০৭৮ ভোট। ২০১৬-র নির্বাচনে বিজেপি প্রার্থী চন্দ্র বোস ২৬,৯৯৯ ভোট পেয়েছিলেন। ২০২১ বিধানসভা নির্বাচনে বিজেপি প্রার্থী রুদ্রনীল ঘোষের ঝুলিতে পড়েছিল ৪৪,৭৮৬ ভোট।
গত বিধানসভা ভোটে ২১৩ আসন তৃণমূল জিতলেও নন্দীগ্রামে হেরেছেন মমতা। উপভোটেও তৃণমূল নেত্রীকে মাত করতে চাইছে বিজেপি। ২০২৪ সালের আগে মমতা যেভাবে বিরোধী মুখ হয়ে উঠছেন, ধাক্কা খাবে সেই প্রক্রিয়া। এই সত্বেও তৃণমূলের কাছে ভবানীপুর ২০২৪-র শঙ্খনাদের মঞ্চ। ফলে উপভোট হলেও বৃহত্তর প্রেক্ষাপটে ভবানীপুর প্রকৃত অর্থেই মমতার কাছে ‘ভ-এ ভারত’।
বৃহস্পতিবারের ভোট নিয়ে বিরোধীদের আনা অনেক অভিযোগই ভিত্তিহীন বলে উড়িয়ে দিয়েছে কমিশন। এই প্রসঙ্গে দিলীপ ঘোষ বলেন, ‘কমিশন যদি মমতাকে জেতানোর জন্য ভোট করে, তাহলে স্বাভাবিক অন্যদের অভিযোগ নেবে কেন? আমার ওপর আক্রমণ হয়েছে। অর্জুন সিংয়ের ওপর আক্রমণ হয়েছে। সভাপতিকে পুলিস চ্যাঙদোলা করে সরিয়ে দিচ্ছে।’