শিক্ষাপ্রতিষ্ঠানে দুই সপ্তাহে উপস্থিতি কমেছে ৫ শতাংশ

বিদ্যালয়ে শিক্ষার্থীদের উপস্থিতি কমছে। শিক্ষা এবং প্রাথমিক ও গণশিক্ষা মন্ত্রণালয়ের নানা প্রচেষ্টা সত্ত্বেও শ্রেণীকক্ষে উপস্থিতি বাড়ছে না। বিদ্যালয় পুনরায় খোলার দুই সপ্তাহ পর উপস্থিতি ৫ শতাংশ কমেছে। শিক্ষার্থীদের অনুপস্থিতির কারণ খুঁজতে বিদ্যালয় পরিদর্শন জোরালো করছে শিক্ষা প্রশাসন।

গত বৃস্পতিবার পর্যন্ত মাধ্যমিক ও উচ্চ শিক্ষা অধিদপ্তরের (মাউশি) আওতাধীন সারাদেশের ১৮ হাজার ২৪১টি নি¤œ-মাধ্যমিক ও মাধ্যমিক বিদ্যালয়ে ছাত্রছাত্রীর উপস্থিতির হার ছিল ৫৫ শতাংশ।

অথচ গত ১২ সেপ্টেম্বর সারাদেশের শিক্ষাপ্রতিষ্ঠানে শ্রেণি কার্যক্রম শুরুর পর ১৫ সেপ্টেম্বর পর্যন্ত বিদ্যালয়ে উপস্থিতির হার ছিল ৬০ দশমিক ২৭ শতাংশ। উপস্থিতি কমার ন্যূনতম পাঁচটি কারণ চিহ্নিত করেছে মাউশি কর্তৃপক্ষ।

এছাড়াও মাউশি থেকে অনলাইনে নিয়মিত যে ‘অ্যাসাইনমেন্ট’ (বাড়ির জন্য নির্ধারিত পাঠলাভ) সেই ‘অ্যাসাইনমেন্ট’ গ্রহণ করছে ৯২ দশমিক ৭৫ শতাংশ শিক্ষার্থী। কিন্তু এর মধ্যে দুই শতাংশ শিক্ষার্থী বিদ্যালয়ে ‘অ্যাসাইনমেন্ট’ জমাই দিচ্ছে না। এ হিসেবে ‘অ্যাসাইনমেন্ট’র আওতার বাইরে থেকে যাচ্ছে প্রায় ৯ শতাংশ শিক্ষার্থী। এই শিক্ষার্থীরা ঝরে পড়ছে কী না সে নিয়ে নানা প্রশ্ন থেকে যাচ্ছে।

উপস্থিতি কমার পাঁচ কারণ চিহ্নিত

উপস্থিতির হার কমার বিষয়ে জানতে চাইলে মাউশির মনিটরিং অ্যান্ড ইভ্যালুয়েশন উইংয়ের পরিচালক প্রফেসর আমির হোসেন সংবাদকে বলেন, ‘সারাদেশেই মনিটরিং বাড়ানো হয়েছে। উপস্থিতি কম হওয়ার কারণও খুঁজে বের করা হচ্ছে। সে অনুযায়ী প্রয়োজনীয় সব পদক্ষেপ নেয়া হচ্ছে, আমরা আশা করছি উপস্থিতি বাড়বে।’

এখন পর্যন্ত উপস্থিতি কম হওয়ার পাঁচটি কারণ চিহ্নিত করা হয়েছে জানিয়ে মাউশি পরিচালক বলেন, ‘অভিভাবকদের সচেতনতার অভাব রয়েছে, অনেকেই ভাবছেন- করোনা সংক্রমণ একেবারে নির্মূল হয়নি। এ জন্য অনেকেই সন্তানকে স্কুলে পাঠাচ্ছেন না। অভিভাবকরা চাইলে স্কুলে দ্রুত উপস্থিতি বাড়বে।’

করোনায় টানা দেড় বছর শিক্ষাপ্রতিষ্ঠান বন্ধ থাকায় অনেক অভিভাবক সন্তানকে প্রাইভেট টিউটর বা কোচিং সেন্টারে ভর্তি করেছিলেন উল্লেখ করে অধ্যাপক আমির হোসেন বলেন, ‘এ কারণে অনেক শিক্ষার্থী আগাম সিলেবাস সম্পন্ন করেছে, এসব শিক্ষার্থী এখন স্কুলে আসতে আগ্রহ দেখাচ্ছে না।’

এছাড়া ‘সিলেবাস ছোট করা ও অনলাইনে দেয়া অ্যাসাইনমেন্ট বাসায় সম্পন্ন করা, বাল্যবিবাহ এবং এসএসসি ও এইচএসসি পরীক্ষার্থীদের কোর্স শেষ হওয়ায় শ্রেণীকক্ষে উপস্থিতি কমছে বলে মনে করছেন মাউশি পরিচালক আমির হোসেন।

উপস্থিতির সর্বশেষ চিত্র

মাউশি জানিয়েছে, গত ২৮ সেপ্টেম্বর দেশের ১৫ হাজার ৯০২টি শিক্ষাপ্রতিষ্ঠানে যে তথ্য পাওয়া গেছে তাতে ওইসব বিদ্যালয়ের মোট ৪২ লাখ ১৯ হাজার ৯৭৯ জন ছাত্রছাত্রীর মধ্যে ওইদিন উপস্থিত ছিল ২৩ লাখ ২২ হাজার ৭৩০ জন। এ হিসেবে বিদ্যালয়ে মোট উপস্থিতির হার পাওয়া গেছে ৫৫ শতাংশ।

এর মধ্যে পঞ্চম শ্রেণী পর্যন্ত উপস্থিতি ৭০ শতাংশ, ১০ম শ্রেণী পর্যন্ত ৬১ শতাংশ, এসএসসি পরীক্ষার্থীদের উপস্থিতি ৬০ শতাংশ, একাদ্বশ শ্রেণীতে ৪৮ শতাংশ এবং দ্বাদশ শ্রেণীতে উপস্থিত ছিল ৪২ শতাংশ।

যদিও অধ্যাপক আমির হোসেন মনে করছেন, পরিসংখ্যানে বিদ্যালয়ে উপস্থিতির হার ৫৫ শতাংশ হলেও বাস্তবে এই সংখ্যা আরও বেশি। কারণ যে শিক্ষার্থী আজ স্কুলে আসছে, আগামীকাল যে হয়তো আসছে না। তার মানে সে ঝরে পড়েনি। একদিন বা দুদিন পর সে আবার স্কুলে আসবে।

ঢাকায় উপস্থিতি বাড়াতে এক ডজন কমিটি, শুরুতেই বিপত্তি

রাজধানীর শিক্ষাপ্রতিষ্ঠানের শ্রেণী কার্যক্রম পরিদর্শনের জন্য শিক্ষা মন্ত্রণালয়ের মাধ্যমিক ও উচ্চ শিক্ষা বিভাগের অতিরিক্ত সচিব, যুগ্ম সচিব ও উপসচিবদের নেতৃত্বে সম্প্রতি ১০/১২টি কমিটি গঠন করা হয়েছে।

কিন্তু কমিটিগুলোকে দুই সিটি করপোরেশনের অঞ্চলভিত্তিক দায়িত্ব দেয়া হয়েছে। এতে দেখা গেছে, যে কর্মকর্তা মিরপুরে বসবাস করেন, তাকে উত্তরার শিক্ষাপ্রতিষ্ঠান পরিদর্শনের দায়িত্ব দেয়া হয়েছে। আবার যে কর্মকর্তার বাসা উত্তরায় তাকে যাত্রাবাড়ি এলাকার শিক্ষাপ্রতিষ্ঠান পরিদর্শনের দায়িত্ব দেয়া হয়েছে। এতে একটি প্রতিষ্ঠান পরিদর্শনেই একদিন চলে যাচ্ছে।

নাম প্রকাশ না করার শর্তে তিনজন কর্মকর্তা সংবাদকে জানান, কর্মকর্তাদের আবাসন সুবিধা বিবেচনায় নিয়ে কর্মবণ্টন করা উচিৎ ছিল। তাছাড়া সিটি করপোরেশনের অঞ্চলভিত্তিক কর্মবণ্টন না করে সরাসরি শিক্ষাপ্রতিষ্ঠানের অবস্থান অনুযায়ী পরিদর্শনের দায়িত্ব দেয়া হলে নির্দিষ্ট সময়ের মধ্যেই আরও বেশি প্রতিষ্ঠান পরিদর্শন করা যেত।

অপর এক কর্মকর্তা সংবাদকে বলেন, ‘আমাকে মন্ত্রণালয়ের দায়িত্বের পাশাপাশি স্কুল পরিদর্শন করতে হচ্ছে। আর পরিদর্শনে গেলে আমাকে আগে সিটি করপোরেশনের অঞ্চল খুঁজতে হয়, এরপর স্কুল খুুঁজতে হয়, এতে অহেতুক সময় নষ্ট হচ্ছে। কিন্তু কর্মকর্তাদের আবাসন সুবিধা বিবেচনায় নিয়ে পরিদর্শনের দায়িত্ব দেয়া হলে দৈনিক দু’তিনটি প্রতিষ্ঠান পরিদর্শন করা যেতো।’

প্রাথমিকে উপস্থিতি বাড়াতে নিয়মিত পরিদর্শন

প্রাথমিক ও গণশিক্ষা মন্ত্রণালয়ের সংশ্লিষ্ট একাধিক কর্মকর্তা জানিয়েছেন, সারাদেশে গড়ে প্রাথমিক বিদ্যালয়ে উপস্থিতির হার ৭০ শতাংশের কাছাকাছি। গত ১৫ সেপ্টেম্বর পর্যন্ত উপস্থিতি ছিল প্রায় ৮০ শতাংশ।

উপস্থিতি বাড়াতে দেশের সব উপজেলা ও জেলা শিক্ষা কর্মকর্তা এবং সহকারী শিক্ষা কর্মকর্তাদের ইতোমধ্যে নির্দেশ দেয়া হয়েছে। পাশাপাশি সচিবসহ মন্ত্রণালয়ের কর্মকর্তারাও নিয়মিত বিদ্যালয় পরিদর্শন করছেন।

প্রাথমিক ও গণশিক্ষা মন্ত্রণালয়ের একজন যুগ্ম সচিব ও একজন উপসচিব সংবাদকে জানিয়েছেন, যেসব জেলা ও উপজেলায় উপস্থিতির হার তুলনামূলক কম সেখানে এর কারণ খুঁজে বের করতে মাঠ পর্যায়ের কর্মকর্তাদের নির্দেশ দেয়া হয়েছে। আবার যেসব শিক্ষার্থী স্কুলে আসছে না, কিন্তু তাদের পরিবার এলাকায় অবস্থান করছে, সেক্ষেত্রে ওইসব শিশুকে বিদ্যালয়ে ফেরাতে অভিভাবকদের সঙ্গে সরাসরি যোগাযোগ করতে কর্মকর্তাদের নির্দেশ দেয়া হয়েছে।

সারাদেশে মোট ৬৫ হাজার ৫৬৬টি সরকারি প্রাথমিক বিদ্যালয় রয়েছে। গত বছরের তথ্য অনুযায়ী, দেশে প্রাথমিক স্তরে মোট শিক্ষার্থী ছিল চার কোটি ২৭ লাখ ৫২ হাজার ১৫৮ জন।

করোনা সংক্রমণের কারণে গত বছরের ১৭ মার্চ থেকে দেশের সব ধরনের শিক্ষাপ্রতিষ্ঠান ছুটি ছিল। গত ১২ সেপ্টেম্বর প্রাথমিক থেকে উচ্চ মাধ্যমিক স্তর পর্যন্ত সব ধরনের শিক্ষাপ্রতিষ্ঠান খুলে দিয়েছে সরকার।

রবিবার, ০৩ অক্টোবর ২০২১ , ১৮ আশ্বিন ১৪২৮ ২৪ সফর ১৪৪৩

শিক্ষাপ্রতিষ্ঠানে দুই সপ্তাহে উপস্থিতি কমেছে ৫ শতাংশ

নিজস্ব বার্তা পরিবেশক

বিদ্যালয়ে শিক্ষার্থীদের উপস্থিতি কমছে। শিক্ষা এবং প্রাথমিক ও গণশিক্ষা মন্ত্রণালয়ের নানা প্রচেষ্টা সত্ত্বেও শ্রেণীকক্ষে উপস্থিতি বাড়ছে না। বিদ্যালয় পুনরায় খোলার দুই সপ্তাহ পর উপস্থিতি ৫ শতাংশ কমেছে। শিক্ষার্থীদের অনুপস্থিতির কারণ খুঁজতে বিদ্যালয় পরিদর্শন জোরালো করছে শিক্ষা প্রশাসন।

গত বৃস্পতিবার পর্যন্ত মাধ্যমিক ও উচ্চ শিক্ষা অধিদপ্তরের (মাউশি) আওতাধীন সারাদেশের ১৮ হাজার ২৪১টি নি¤œ-মাধ্যমিক ও মাধ্যমিক বিদ্যালয়ে ছাত্রছাত্রীর উপস্থিতির হার ছিল ৫৫ শতাংশ।

অথচ গত ১২ সেপ্টেম্বর সারাদেশের শিক্ষাপ্রতিষ্ঠানে শ্রেণি কার্যক্রম শুরুর পর ১৫ সেপ্টেম্বর পর্যন্ত বিদ্যালয়ে উপস্থিতির হার ছিল ৬০ দশমিক ২৭ শতাংশ। উপস্থিতি কমার ন্যূনতম পাঁচটি কারণ চিহ্নিত করেছে মাউশি কর্তৃপক্ষ।

এছাড়াও মাউশি থেকে অনলাইনে নিয়মিত যে ‘অ্যাসাইনমেন্ট’ (বাড়ির জন্য নির্ধারিত পাঠলাভ) সেই ‘অ্যাসাইনমেন্ট’ গ্রহণ করছে ৯২ দশমিক ৭৫ শতাংশ শিক্ষার্থী। কিন্তু এর মধ্যে দুই শতাংশ শিক্ষার্থী বিদ্যালয়ে ‘অ্যাসাইনমেন্ট’ জমাই দিচ্ছে না। এ হিসেবে ‘অ্যাসাইনমেন্ট’র আওতার বাইরে থেকে যাচ্ছে প্রায় ৯ শতাংশ শিক্ষার্থী। এই শিক্ষার্থীরা ঝরে পড়ছে কী না সে নিয়ে নানা প্রশ্ন থেকে যাচ্ছে।

উপস্থিতি কমার পাঁচ কারণ চিহ্নিত

উপস্থিতির হার কমার বিষয়ে জানতে চাইলে মাউশির মনিটরিং অ্যান্ড ইভ্যালুয়েশন উইংয়ের পরিচালক প্রফেসর আমির হোসেন সংবাদকে বলেন, ‘সারাদেশেই মনিটরিং বাড়ানো হয়েছে। উপস্থিতি কম হওয়ার কারণও খুঁজে বের করা হচ্ছে। সে অনুযায়ী প্রয়োজনীয় সব পদক্ষেপ নেয়া হচ্ছে, আমরা আশা করছি উপস্থিতি বাড়বে।’

এখন পর্যন্ত উপস্থিতি কম হওয়ার পাঁচটি কারণ চিহ্নিত করা হয়েছে জানিয়ে মাউশি পরিচালক বলেন, ‘অভিভাবকদের সচেতনতার অভাব রয়েছে, অনেকেই ভাবছেন- করোনা সংক্রমণ একেবারে নির্মূল হয়নি। এ জন্য অনেকেই সন্তানকে স্কুলে পাঠাচ্ছেন না। অভিভাবকরা চাইলে স্কুলে দ্রুত উপস্থিতি বাড়বে।’

করোনায় টানা দেড় বছর শিক্ষাপ্রতিষ্ঠান বন্ধ থাকায় অনেক অভিভাবক সন্তানকে প্রাইভেট টিউটর বা কোচিং সেন্টারে ভর্তি করেছিলেন উল্লেখ করে অধ্যাপক আমির হোসেন বলেন, ‘এ কারণে অনেক শিক্ষার্থী আগাম সিলেবাস সম্পন্ন করেছে, এসব শিক্ষার্থী এখন স্কুলে আসতে আগ্রহ দেখাচ্ছে না।’

এছাড়া ‘সিলেবাস ছোট করা ও অনলাইনে দেয়া অ্যাসাইনমেন্ট বাসায় সম্পন্ন করা, বাল্যবিবাহ এবং এসএসসি ও এইচএসসি পরীক্ষার্থীদের কোর্স শেষ হওয়ায় শ্রেণীকক্ষে উপস্থিতি কমছে বলে মনে করছেন মাউশি পরিচালক আমির হোসেন।

উপস্থিতির সর্বশেষ চিত্র

মাউশি জানিয়েছে, গত ২৮ সেপ্টেম্বর দেশের ১৫ হাজার ৯০২টি শিক্ষাপ্রতিষ্ঠানে যে তথ্য পাওয়া গেছে তাতে ওইসব বিদ্যালয়ের মোট ৪২ লাখ ১৯ হাজার ৯৭৯ জন ছাত্রছাত্রীর মধ্যে ওইদিন উপস্থিত ছিল ২৩ লাখ ২২ হাজার ৭৩০ জন। এ হিসেবে বিদ্যালয়ে মোট উপস্থিতির হার পাওয়া গেছে ৫৫ শতাংশ।

এর মধ্যে পঞ্চম শ্রেণী পর্যন্ত উপস্থিতি ৭০ শতাংশ, ১০ম শ্রেণী পর্যন্ত ৬১ শতাংশ, এসএসসি পরীক্ষার্থীদের উপস্থিতি ৬০ শতাংশ, একাদ্বশ শ্রেণীতে ৪৮ শতাংশ এবং দ্বাদশ শ্রেণীতে উপস্থিত ছিল ৪২ শতাংশ।

যদিও অধ্যাপক আমির হোসেন মনে করছেন, পরিসংখ্যানে বিদ্যালয়ে উপস্থিতির হার ৫৫ শতাংশ হলেও বাস্তবে এই সংখ্যা আরও বেশি। কারণ যে শিক্ষার্থী আজ স্কুলে আসছে, আগামীকাল যে হয়তো আসছে না। তার মানে সে ঝরে পড়েনি। একদিন বা দুদিন পর সে আবার স্কুলে আসবে।

ঢাকায় উপস্থিতি বাড়াতে এক ডজন কমিটি, শুরুতেই বিপত্তি

রাজধানীর শিক্ষাপ্রতিষ্ঠানের শ্রেণী কার্যক্রম পরিদর্শনের জন্য শিক্ষা মন্ত্রণালয়ের মাধ্যমিক ও উচ্চ শিক্ষা বিভাগের অতিরিক্ত সচিব, যুগ্ম সচিব ও উপসচিবদের নেতৃত্বে সম্প্রতি ১০/১২টি কমিটি গঠন করা হয়েছে।

কিন্তু কমিটিগুলোকে দুই সিটি করপোরেশনের অঞ্চলভিত্তিক দায়িত্ব দেয়া হয়েছে। এতে দেখা গেছে, যে কর্মকর্তা মিরপুরে বসবাস করেন, তাকে উত্তরার শিক্ষাপ্রতিষ্ঠান পরিদর্শনের দায়িত্ব দেয়া হয়েছে। আবার যে কর্মকর্তার বাসা উত্তরায় তাকে যাত্রাবাড়ি এলাকার শিক্ষাপ্রতিষ্ঠান পরিদর্শনের দায়িত্ব দেয়া হয়েছে। এতে একটি প্রতিষ্ঠান পরিদর্শনেই একদিন চলে যাচ্ছে।

নাম প্রকাশ না করার শর্তে তিনজন কর্মকর্তা সংবাদকে জানান, কর্মকর্তাদের আবাসন সুবিধা বিবেচনায় নিয়ে কর্মবণ্টন করা উচিৎ ছিল। তাছাড়া সিটি করপোরেশনের অঞ্চলভিত্তিক কর্মবণ্টন না করে সরাসরি শিক্ষাপ্রতিষ্ঠানের অবস্থান অনুযায়ী পরিদর্শনের দায়িত্ব দেয়া হলে নির্দিষ্ট সময়ের মধ্যেই আরও বেশি প্রতিষ্ঠান পরিদর্শন করা যেত।

অপর এক কর্মকর্তা সংবাদকে বলেন, ‘আমাকে মন্ত্রণালয়ের দায়িত্বের পাশাপাশি স্কুল পরিদর্শন করতে হচ্ছে। আর পরিদর্শনে গেলে আমাকে আগে সিটি করপোরেশনের অঞ্চল খুঁজতে হয়, এরপর স্কুল খুুঁজতে হয়, এতে অহেতুক সময় নষ্ট হচ্ছে। কিন্তু কর্মকর্তাদের আবাসন সুবিধা বিবেচনায় নিয়ে পরিদর্শনের দায়িত্ব দেয়া হলে দৈনিক দু’তিনটি প্রতিষ্ঠান পরিদর্শন করা যেতো।’

প্রাথমিকে উপস্থিতি বাড়াতে নিয়মিত পরিদর্শন

প্রাথমিক ও গণশিক্ষা মন্ত্রণালয়ের সংশ্লিষ্ট একাধিক কর্মকর্তা জানিয়েছেন, সারাদেশে গড়ে প্রাথমিক বিদ্যালয়ে উপস্থিতির হার ৭০ শতাংশের কাছাকাছি। গত ১৫ সেপ্টেম্বর পর্যন্ত উপস্থিতি ছিল প্রায় ৮০ শতাংশ।

উপস্থিতি বাড়াতে দেশের সব উপজেলা ও জেলা শিক্ষা কর্মকর্তা এবং সহকারী শিক্ষা কর্মকর্তাদের ইতোমধ্যে নির্দেশ দেয়া হয়েছে। পাশাপাশি সচিবসহ মন্ত্রণালয়ের কর্মকর্তারাও নিয়মিত বিদ্যালয় পরিদর্শন করছেন।

প্রাথমিক ও গণশিক্ষা মন্ত্রণালয়ের একজন যুগ্ম সচিব ও একজন উপসচিব সংবাদকে জানিয়েছেন, যেসব জেলা ও উপজেলায় উপস্থিতির হার তুলনামূলক কম সেখানে এর কারণ খুঁজে বের করতে মাঠ পর্যায়ের কর্মকর্তাদের নির্দেশ দেয়া হয়েছে। আবার যেসব শিক্ষার্থী স্কুলে আসছে না, কিন্তু তাদের পরিবার এলাকায় অবস্থান করছে, সেক্ষেত্রে ওইসব শিশুকে বিদ্যালয়ে ফেরাতে অভিভাবকদের সঙ্গে সরাসরি যোগাযোগ করতে কর্মকর্তাদের নির্দেশ দেয়া হয়েছে।

সারাদেশে মোট ৬৫ হাজার ৫৬৬টি সরকারি প্রাথমিক বিদ্যালয় রয়েছে। গত বছরের তথ্য অনুযায়ী, দেশে প্রাথমিক স্তরে মোট শিক্ষার্থী ছিল চার কোটি ২৭ লাখ ৫২ হাজার ১৫৮ জন।

করোনা সংক্রমণের কারণে গত বছরের ১৭ মার্চ থেকে দেশের সব ধরনের শিক্ষাপ্রতিষ্ঠান ছুটি ছিল। গত ১২ সেপ্টেম্বর প্রাথমিক থেকে উচ্চ মাধ্যমিক স্তর পর্যন্ত সব ধরনের শিক্ষাপ্রতিষ্ঠান খুলে দিয়েছে সরকার।