তিন মাসে ২১২ কোটি টাকা হাতিয়েছে ‘রিং আইডি’

সামাজিক নেটওয়ার্কিং প্ল্যাটফর্ম ‘রিং আইডি’ কমিউনিটি জবস খাতে বিজ্ঞাপন দেখিয়ে উপার্জনের কথা বলে জনগণের কাছ থেকে বিপুল পরিমাণ অর্থ হাতিয়ে নিয়েছে। সিআইডি বলছে, কেবল কমিউনিটি জবস খাত থেকেই গত মে মাসে ২৩ কোটি ৯৪ লাখ টাকা, জুন মাসে ১০৯ কোটি ১৩ লাখ ও জুলাই মাসে ৭৯ কোটি ৩৮ লাখ টাকা অবৈধভাবে সংগ্রহ করেছে রিং আইডি। তিন মাসে সব মিলিয়ে তারা হাতিয়ে নিয়েছে মোট ২১২ কোটি ৪৫ লাখ টাকা। রিং আইডি যেন অবৈধভাবে দেশের টাকা বাইরে পাচার করতে না পারে সেজন্য ইতোমধ্যে তাদের সব ব্যাংক অ্যাকাউন্ট ফ্রিজ করতে বাংলাদেশ ব্যাংককে অনুরোধ জানানো হয়েছে।

রাজধানীর গুলশান এলাকা থেকে রিং আইডির পরিচালক সাইফুল ইসলামকে (৪১) গ্রেপ্তারের পর সিআইডির পক্ষ থেকে এ তথ্য জানানো হয়। রাজধানীর ভাটারা থানায় করা ডিজিটাল নিরাপত্তা আইনের মামলায় গ্রেপ্তার দেখিয়ে গতকাল আদালতে পাঠানো হলে আদালত তার দুই দিনের রিমান্ড মঞ্জুর করে।

মামলার তদন্ত কর্মকর্তা সিআইডির উপপরিদর্শক সোহেল রানা আসামি সাইফুলকে আদালতে হাজির করে জিজ্ঞাসাবাদের জন্য পাঁচ দিনের রিমান্ডে নিতে আবেদন করেন। পরে শুনানি শেষে ঢাকা মহানগর হাকিম সাদবীর ইয়াছির আহসান চৌধুরী রিমান্ডে নেয়ার নির্দেশ দেন। এর আগে, গত শুক্রবার রাতে গুলশানের একটি বাসা থেকে সাইফুল ইসলামকে গ্রেপ্তার করা হয়।

সিআইডির সাইবার পুলিশ সেন্টারের বিশেষ এসএসপি রেজাউল মাসুদ জানান, রিং আইডি প্রথমে সামাজিক যোগাযোগমাধ্যম হিসেবে যাত্রা শুরু করে। একপর্যায়ে এই মাধ্যমে বিভিন্ন সার্ভিস যুক্ত করে গ্রাহকদের টাকা হাতিয়ে নেয়া শুরু করে। এর মধ্যে একটি প্রক্রিয়া ছিল, তাদের কাছ থেকে ১২ হাজার ৫০০ বা ২৫ হাজার টাকার বিনিময়ে রিং আইডি কিনতে হতো। আইডি ব্যবহার করে শুধুমাত্র বিজ্ঞাপন দেখেই মাসে সাড়ে ১২ হাজার বা ১৫ হাজার টাকা উপার্জনের প্রলোভন দেখানো হতো। বিজ্ঞাপন দেখেই আয়ের বিষয়টি কোনভাবেই সম্ভব নয়। এটি এক ধরনের এমএলএম এর মতো গ্রাহকের কাছ থেকে টাকা হাতিয়ে নেয়ার কৌশল। অনেকের কাছ থেকে টাকা সংগ্রহ করে হয়তো কিছু মানুষকে সামান্য টাকা ফেরত দিত।

কিন্তু বাস্তবে এর কোন ভিত্তি নেই বলে মনে করছেন সংশ্লিষ্টরা। এছাড়া সম্প্রতি ইকমার্স সাইটের মতো তারাও অস্বাভাবিক ডিসকাউন্টে বিভিন্ন পণ্য বিক্রির নামে ই-ওয়ালেটের মাধ্যমে লেনদেন পরিচালনা করছিল। এভাবে শুধুমাত্র গত জুন-জুলাই মাসেই প্রায় ২০০ কোটি টাকা হাতিয়ে নিয়েছে প্রতিষ্ঠানটি।

গ্রেপ্তার সাইফুলকে প্রাথমিক জিজ্ঞাসাবাদের ভিত্তিতে সিআইডি কর্মকর্তা জানান, এ বিপুল পরিমাণ অর্থ গ্রহণের কোন অনুমোদন তিনি বা তার প্রতিষ্ঠান গ্রহণ করেনি। তাদের এ কার্যক্রমের সঙ্গে কারা, কীভাবে জড়িত রয়েছে এবং বিপুল পরিমাণ অর্থ কোথায়-কীভাবে সংরক্ষণ করা হয়েছে, সে বিষয়ে রিমান্ডে জিজ্ঞাসাবাদ করা হবে।

প্রসঙ্গত, সাইফুল ইসলামের নামে ভাটারা থানায় ডিজিটাল নিরাপত্তা আইন ও মাল্টিলেভেল মার্কেটিং নিয়ন্ত্রণ আইনে দুটি মামলা রয়েছে। এর মধ্যে রিং আইডিতে বিনিয়োগ করে প্রতারিত একজন ভুক্তভোগী গত ৩০ সেপ্টেম্বর পরিচালক সাইফুলসহ রিং আইডির ১০ জনের নাম উল্লেখ করে অজ্ঞাত আরো ১০-১৫ জনের বিরুদ্ধে ডিজিটাল নিরাপত্তা আইনের মামলা মামলাটি দায়ের করেন। এর পর থেকে মামলার তদন্ত শুরু করে সিআইডির সাইবার পুলিশ সেন্টার। রিং আইডির প্রতারণায় জড়িত অন্যদের গ্রেপ্তারে সিআইডির অভিযান অব্যাহত রয়েছে বলে জানিয়েছেন এসএসপি রেজাউল মাসুদ।

রবিবার, ০৩ অক্টোবর ২০২১ , ১৮ আশ্বিন ১৪২৮ ২৪ সফর ১৪৪৩

কমিউনিটি জবস এর ফাঁদে প্রতারণা

তিন মাসে ২১২ কোটি টাকা হাতিয়েছে ‘রিং আইডি’

নিজস্ব বার্তা পরিবেশক

সামাজিক নেটওয়ার্কিং প্ল্যাটফর্ম ‘রিং আইডি’ কমিউনিটি জবস খাতে বিজ্ঞাপন দেখিয়ে উপার্জনের কথা বলে জনগণের কাছ থেকে বিপুল পরিমাণ অর্থ হাতিয়ে নিয়েছে। সিআইডি বলছে, কেবল কমিউনিটি জবস খাত থেকেই গত মে মাসে ২৩ কোটি ৯৪ লাখ টাকা, জুন মাসে ১০৯ কোটি ১৩ লাখ ও জুলাই মাসে ৭৯ কোটি ৩৮ লাখ টাকা অবৈধভাবে সংগ্রহ করেছে রিং আইডি। তিন মাসে সব মিলিয়ে তারা হাতিয়ে নিয়েছে মোট ২১২ কোটি ৪৫ লাখ টাকা। রিং আইডি যেন অবৈধভাবে দেশের টাকা বাইরে পাচার করতে না পারে সেজন্য ইতোমধ্যে তাদের সব ব্যাংক অ্যাকাউন্ট ফ্রিজ করতে বাংলাদেশ ব্যাংককে অনুরোধ জানানো হয়েছে।

রাজধানীর গুলশান এলাকা থেকে রিং আইডির পরিচালক সাইফুল ইসলামকে (৪১) গ্রেপ্তারের পর সিআইডির পক্ষ থেকে এ তথ্য জানানো হয়। রাজধানীর ভাটারা থানায় করা ডিজিটাল নিরাপত্তা আইনের মামলায় গ্রেপ্তার দেখিয়ে গতকাল আদালতে পাঠানো হলে আদালত তার দুই দিনের রিমান্ড মঞ্জুর করে।

মামলার তদন্ত কর্মকর্তা সিআইডির উপপরিদর্শক সোহেল রানা আসামি সাইফুলকে আদালতে হাজির করে জিজ্ঞাসাবাদের জন্য পাঁচ দিনের রিমান্ডে নিতে আবেদন করেন। পরে শুনানি শেষে ঢাকা মহানগর হাকিম সাদবীর ইয়াছির আহসান চৌধুরী রিমান্ডে নেয়ার নির্দেশ দেন। এর আগে, গত শুক্রবার রাতে গুলশানের একটি বাসা থেকে সাইফুল ইসলামকে গ্রেপ্তার করা হয়।

সিআইডির সাইবার পুলিশ সেন্টারের বিশেষ এসএসপি রেজাউল মাসুদ জানান, রিং আইডি প্রথমে সামাজিক যোগাযোগমাধ্যম হিসেবে যাত্রা শুরু করে। একপর্যায়ে এই মাধ্যমে বিভিন্ন সার্ভিস যুক্ত করে গ্রাহকদের টাকা হাতিয়ে নেয়া শুরু করে। এর মধ্যে একটি প্রক্রিয়া ছিল, তাদের কাছ থেকে ১২ হাজার ৫০০ বা ২৫ হাজার টাকার বিনিময়ে রিং আইডি কিনতে হতো। আইডি ব্যবহার করে শুধুমাত্র বিজ্ঞাপন দেখেই মাসে সাড়ে ১২ হাজার বা ১৫ হাজার টাকা উপার্জনের প্রলোভন দেখানো হতো। বিজ্ঞাপন দেখেই আয়ের বিষয়টি কোনভাবেই সম্ভব নয়। এটি এক ধরনের এমএলএম এর মতো গ্রাহকের কাছ থেকে টাকা হাতিয়ে নেয়ার কৌশল। অনেকের কাছ থেকে টাকা সংগ্রহ করে হয়তো কিছু মানুষকে সামান্য টাকা ফেরত দিত।

কিন্তু বাস্তবে এর কোন ভিত্তি নেই বলে মনে করছেন সংশ্লিষ্টরা। এছাড়া সম্প্রতি ইকমার্স সাইটের মতো তারাও অস্বাভাবিক ডিসকাউন্টে বিভিন্ন পণ্য বিক্রির নামে ই-ওয়ালেটের মাধ্যমে লেনদেন পরিচালনা করছিল। এভাবে শুধুমাত্র গত জুন-জুলাই মাসেই প্রায় ২০০ কোটি টাকা হাতিয়ে নিয়েছে প্রতিষ্ঠানটি।

গ্রেপ্তার সাইফুলকে প্রাথমিক জিজ্ঞাসাবাদের ভিত্তিতে সিআইডি কর্মকর্তা জানান, এ বিপুল পরিমাণ অর্থ গ্রহণের কোন অনুমোদন তিনি বা তার প্রতিষ্ঠান গ্রহণ করেনি। তাদের এ কার্যক্রমের সঙ্গে কারা, কীভাবে জড়িত রয়েছে এবং বিপুল পরিমাণ অর্থ কোথায়-কীভাবে সংরক্ষণ করা হয়েছে, সে বিষয়ে রিমান্ডে জিজ্ঞাসাবাদ করা হবে।

প্রসঙ্গত, সাইফুল ইসলামের নামে ভাটারা থানায় ডিজিটাল নিরাপত্তা আইন ও মাল্টিলেভেল মার্কেটিং নিয়ন্ত্রণ আইনে দুটি মামলা রয়েছে। এর মধ্যে রিং আইডিতে বিনিয়োগ করে প্রতারিত একজন ভুক্তভোগী গত ৩০ সেপ্টেম্বর পরিচালক সাইফুলসহ রিং আইডির ১০ জনের নাম উল্লেখ করে অজ্ঞাত আরো ১০-১৫ জনের বিরুদ্ধে ডিজিটাল নিরাপত্তা আইনের মামলা মামলাটি দায়ের করেন। এর পর থেকে মামলার তদন্ত শুরু করে সিআইডির সাইবার পুলিশ সেন্টার। রিং আইডির প্রতারণায় জড়িত অন্যদের গ্রেপ্তারে সিআইডির অভিযান অব্যাহত রয়েছে বলে জানিয়েছেন এসএসপি রেজাউল মাসুদ।