অসহায়ত্বের চূড়ান্ত নমুনা

মোহাম্মদ আবু নোমান

ছোট দোকান চালিয়ে ভালোই চলছিল শওকত আলীর সংসার। করোনার কারণে ছোট ব্যবসাটিও বন্ধ হয়ে যায়। তাই বাধ্য হয়ে কয়েক মাস ধরে মোটরসাইকেলে রাইড শেয়ার করে সংসার চালাচ্ছিলেন তিনি। গত ২৭ সেপ্টেম্বর সকাল সাড়ে ৯টার দিকে মোটরসাইকেল নিয়ে বাড্ডা লিংক রোডে যাত্রীর অপেক্ষায় ছিলেন। এ সময় ট্রাফিক সার্জেন্ট এসে তার কাগজপত্র নিয়ে যান। মামলা না দিতে অনুরোধ করে পুলিশের কাছে গাড়ির কাগজপত্র ফেরত চান শওকত আলীর। কাগজপত্র ফেরত না পেয়ে হতাশ হয়ে মোটরসাইকেলে আগুন ধরিয়ে দেন।

কি পরিমাণ মানসিক কষ্টে থাকলে এভাবে নিজের আয়ের একমাত্র উৎসে আগুন লাগিয়ে ক্ষোভের বহিঃপ্রকাশ ঘটাতে পারে, তা একমাত্র ভুক্তভোগীই বুঝবেন। মানুষের আয় রোজগার বাড়েনি, পরিবারের চাহিদা বেড়েছে, পণ্যমূল্যের দাম আকাশ ছোঁয়া, সংসারের যিনি প্রধানকর্তা তার মাথায় কতো চাপ! আজ হয়তো শওকত আলী লাইম লাইটে এসেছেন। কিন্তু বাস্তবে তার মত এমন অনেক বাইকার আছে যারা অসহায় হয়ে রাস্তা নেমেছেন। দেশে নানা পর্যায়ে অবিচার, অব্যবস্থাপনা, দুর্নীতির ভিড়ে যে কোন শোষিতের বিবেক, বিবেচনা ও তার স্বীয় অস্তিত্বও খুঁজে না পাওয়া অস্বাভাবিক নয়! সঙ্গে কষ্টের জীবিকার অতিষ্ঠ জীবন তো আছেই। অন্যদিকে প্রশাসনের বিবেক আর মানবিকতা সে তো ডুমুরের ফুল!

ভালো খেয়াল নেই, অনেক আগে গল্পে পড়েছিলাম। ‘এককালে গফুর তার মহেশকে পিটিয়ে মেরে ফেলেছিল। মহান জমিদার বা ব্রাহ্মণদের তো আর পিটিয়ে মারা যায় না।’ যুগ বদলেছে! আজ শওকত তার বাইকটাকে জ্বালিয়ে দিয়েছে। মহান সরকার বা পুলিশ সার্জেন্টদের তো আর জ্বালিয়ে দেয়া যায় না। ‘বোকা রাখাল গফুর আফসোস করতো, ওদের অনেক আছে, তবুও দেয় না। আসলে, বোকালোকটা বুঝতোই না, রাখাল, কৃষক, মজদুরের রক্ত চুষেই এতো এতো অনেক জমিয়ে ওরা জমিদার!’

ঢাকা বিভিন্ন রাস্তা ও গলির মধ্যে দেখা যায়, বাস, ট্রাক, লেগুনা, কভার্টভ্যান, পাশাপাশি দুই লাইন, তিন লাইন করে দাঁড়িয়ে থাকে, কোন ট্রাফিক পুলিশকে তাদের কিছু বলতে দেখা যায় না। এসব কারণে পুরো রাস্তায় যানজট লেগেই থাকে। অথচ জীবন-জীবিকার তাগিদে যারা মোটরসাইকেল নিয়ে রাস্তায় নামে তাদেরই যতো দোষ! লক্কড়-ঝক্কড় মার্কা ফিটনেসবিহীন, নাম্বারবিহীন সিএনজি, বাস, প্রাইভেটকার অহরহ চলছে। অন্যদিকে একটা বাইকের সামান্য অপরাধের জন্য মামলা দেয়া হয় তখন বাইকারদের আর কি করার থাকে।

ট্রাফিক আইন কঠোরভাবে প্রয়োগ করলে সব খানেই কঠোর হতে হবে। আইন কারো জন্য আলাদা নয়! লক্কড়-ঝক্কড় বাস, লেগুনা, সিএনজির বেআইনি চলাফেরা পুলিশের মাসিক ইনকাম সোর্স। অন্যদিকে নানা বাহানা ও ছুতোয় মোটরসাইকেল, প্রাইভেটকার থেকে ‘রোজকার’ রোজগার ধরে এগুলোকে টার্গেট করেই রাস্তায় নেমে থাকে পুলিশ। অটোচার্জার, লাইসেন্সবিহীন সিএসজি, নসিমন, করিমন, ভটভটি, ফিটনেসবিহীন বাস, ট্রাক, ট্রাকটর, এসবের জন্য কি আইন নেই? শুধুই কি মোটরসাইকেল পার্কিংই রাস্তার যানজটের কারণ? বাসগুলো যখন রাস্তা বন্ধ করে যাত্রীর ওঠানামা ও অপেক্ষায় থাকে রাস্তা বন্ধ করে রাখে যেগুলোর বিরুদ্ধে পুলিশের যথাযথ কোন পদক্ষেপ থাকে না কেন?

ভবন নির্মাণ হচ্ছে, আর রাস্তার অর্ধেক দখল করে রেখেছে ওই নির্মাণাধীন ভবনের বালি, পাথর, ইট, সুরকি। সব নিয়ম আর নীতি যেন এই দুই চাকার বাহনের ওপর। রাস্তায় দেখা যায় ১৪/১৫ বছরের বাচ্চারা লেগুনা, বাস, পিকআপ, অটো রিকশা, চালাচ্ছে। ওভারলোড করে ২০ থেকে ৫০ জন যাত্রীর ভার নিয়ে, যা ইচ্ছে তাই তাদের চালানোর ধরন। গাড়িগুলোর ‘চেহারা’ দেখলেই বোঝা যায় ফিটনেস নেই, সঙ্গে ড্রাইভারের ‘বয়স’ দেখলেই বোঝা যায় লাইসেন্স নেই। লাইনম্যান থেকে টাকা নিয়ে লেগুনা জাতীয় ছোট ছোট অবৈধ গাড়ি চলে থাকে। পুলিশ সেগুলোর দিকে তাকায়ও না। এসব অবৈধ প্যাসেঞ্জারবাহী গাড়ির দাপটে টেকা দায়! তারা দুর্ঘটনাও ঘটিয়ে থাকে। ওরা লাইসেন্স পেল কী করে? আর কে দিল লাইসেন্স? কিছু যায় আসে না! কারণ, ওরা তো নিয়োমিত প্রতি রুটে চাঁদা দিয়ে থাকে। এছাড়া আগে তো আমাদের মার্কেটের প্রয়োজনে নিউ মার্কেট, গাউছিয়ায় যেতে হতো। এখন তো পুরো ঢাকাই নিউমার্কেট, গাউছিয়া, গুলিস্তান হয়ে রয়েছে। মানুষের চলাচলের যায়গা পর্যন্ত নেই। কাদের পাওয়ারে ফুটপাত, রাস্তা দখল করে দোকানপাট বসে। এতে কি রাস্তায় যানজট হয় না! শুধু ৫/১০ মিনিটের জন্য মোটরসাইকেল রাস্তায় রাখলেই যানজট হয়? আসলে শওকত আলী জাতিকে চোখে আঙ্গুল দিয়ে বুঝিয়ে দিয়েছেন, তারা কত অসহায় ও অবিচারের স্বীকার। বাংলাদেশের আইন হলো মাকড়শার জালের মতো, ক্ষুদ্র কেউ পরলে আটকে যায়, বড়োরা ছেড়ে-ফিরে বেড়িয়ে যায়।

দেশের আইনে পার্কিং নিষেধ আছে, কিন্তু কোথায় পার্কিং করা যাবে তার বিধিমালা নেই। অথচ রাইডারদের কাছ থেকে সরকার / বিআরটিএ বাৎসরিক ৭০০ টাকা করে রাইড সেয়ারিংয়ের জন্য নেয়। মোটর সাইকেল সামান্য ব্যক্তিগত বাহন মাত্র। সাধারণত শুধু নিজের কাজে ব্যবহার করে। অথচ মোটরসাইকেলের ওপর সব আইন প্রয়োগ করা হয়। গাড়ির কাগজপত্র তৈরি ও চালকের লাইসেন্স পেতে দেশের বিআরটিয়ের অফিসের কচ্ছপগতি, অন্যদিকে অসীম ক্ষমতাধর পুলিশ বরাবরই মামলা দেয়ার ক্ষমতাকে অপব্যবহার করে থাকেন।

নানা পর্যায়ে পুলিশের অত্যাচার আসলেই দিনকে দিন সিমার বাইরে চলে যাচ্ছে। এর একটা প্রতিকার দরকার। শওকত আলী নিজের বাইকে যে আগুন দিয়েছেন, এ আগুন শত মানুষের মনের ভেতরও জ্বলছে। আইনশৃঙ্খলা, স্বাস্থ্য, শিক্ষা, চিকিৎসাসহ কোনও সেবা সংস্থার কাছেই দেশবাসী কাক্সিক্ষত তো নয়ই, ন্যূনতম সদাচারণ থেকেও বঞ্চিত। এসব দেখার বা শোনার কেউ নেই। মানুষ বাকরুদ্ধ। রাস্তায় ট্রাফিক পুলিশের আচরণ বেশিরভাগ ক্ষেত্রে জনবান্ধব নয়। রাস্তায় পুলিশ নিয়োজিত করা হয় সর্বসাধারণের সেবা ও নিরাপত্তার জন্য, হয়রানির জন্য নয়।

আমাদের দেশ ছোট, জনসংখ্যা বেশি। গাড়ি বা যানবাহনও বেশি। গাড়ি পার্কিংটা শওকত আলীর অন্যায় এটা মানলাম। কিন্তু জায়গাতো নেই। বাস্তবতার নিরীখে পুলিশের সহনশীল মনমানসিকতার অভাব ছিল।

শওকত আলীর মতো হাজারো মোটরসাইকেলের পেছেনে লুকিয়ে আছে পরিবার ও সন্তানদের মুখে দু’মুঠো ভাত তুলে দেয়ার গল্প! অথচ মোটরসাইকেলের সঙ্গে আইনশৃঙ্খলা বাহিনী এমন সিরিয়াস আচরণ করেন যে, মোটরসাইকেল একটি বিশাল গাড়ি এবং চালক একজন মহা অপরাধী। এই ধরনের মনমানসিকতা পরিবর্তন হওয়াটা জরুরি। বাড্ডার ঘটনাটি অত্যন্ত মর্মান্তিক। হয়রানির জন্য একজন চালক তার মোটরসাইকেলে আগুন ধরিয়ে দিয়েছেন। এ ধরনের ঘটনাও যদি পুলিশকে নাড়া না দেয়, তাহলে কি আত্মহুতী দিলে তাদের বিবেক নাড়া দেবে?

রবিবার, ০৩ অক্টোবর ২০২১ , ১৮ আশ্বিন ১৪২৮ ২৪ সফর ১৪৪৩

অসহায়ত্বের চূড়ান্ত নমুনা

মোহাম্মদ আবু নোমান

ছোট দোকান চালিয়ে ভালোই চলছিল শওকত আলীর সংসার। করোনার কারণে ছোট ব্যবসাটিও বন্ধ হয়ে যায়। তাই বাধ্য হয়ে কয়েক মাস ধরে মোটরসাইকেলে রাইড শেয়ার করে সংসার চালাচ্ছিলেন তিনি। গত ২৭ সেপ্টেম্বর সকাল সাড়ে ৯টার দিকে মোটরসাইকেল নিয়ে বাড্ডা লিংক রোডে যাত্রীর অপেক্ষায় ছিলেন। এ সময় ট্রাফিক সার্জেন্ট এসে তার কাগজপত্র নিয়ে যান। মামলা না দিতে অনুরোধ করে পুলিশের কাছে গাড়ির কাগজপত্র ফেরত চান শওকত আলীর। কাগজপত্র ফেরত না পেয়ে হতাশ হয়ে মোটরসাইকেলে আগুন ধরিয়ে দেন।

কি পরিমাণ মানসিক কষ্টে থাকলে এভাবে নিজের আয়ের একমাত্র উৎসে আগুন লাগিয়ে ক্ষোভের বহিঃপ্রকাশ ঘটাতে পারে, তা একমাত্র ভুক্তভোগীই বুঝবেন। মানুষের আয় রোজগার বাড়েনি, পরিবারের চাহিদা বেড়েছে, পণ্যমূল্যের দাম আকাশ ছোঁয়া, সংসারের যিনি প্রধানকর্তা তার মাথায় কতো চাপ! আজ হয়তো শওকত আলী লাইম লাইটে এসেছেন। কিন্তু বাস্তবে তার মত এমন অনেক বাইকার আছে যারা অসহায় হয়ে রাস্তা নেমেছেন। দেশে নানা পর্যায়ে অবিচার, অব্যবস্থাপনা, দুর্নীতির ভিড়ে যে কোন শোষিতের বিবেক, বিবেচনা ও তার স্বীয় অস্তিত্বও খুঁজে না পাওয়া অস্বাভাবিক নয়! সঙ্গে কষ্টের জীবিকার অতিষ্ঠ জীবন তো আছেই। অন্যদিকে প্রশাসনের বিবেক আর মানবিকতা সে তো ডুমুরের ফুল!

ভালো খেয়াল নেই, অনেক আগে গল্পে পড়েছিলাম। ‘এককালে গফুর তার মহেশকে পিটিয়ে মেরে ফেলেছিল। মহান জমিদার বা ব্রাহ্মণদের তো আর পিটিয়ে মারা যায় না।’ যুগ বদলেছে! আজ শওকত তার বাইকটাকে জ্বালিয়ে দিয়েছে। মহান সরকার বা পুলিশ সার্জেন্টদের তো আর জ্বালিয়ে দেয়া যায় না। ‘বোকা রাখাল গফুর আফসোস করতো, ওদের অনেক আছে, তবুও দেয় না। আসলে, বোকালোকটা বুঝতোই না, রাখাল, কৃষক, মজদুরের রক্ত চুষেই এতো এতো অনেক জমিয়ে ওরা জমিদার!’

ঢাকা বিভিন্ন রাস্তা ও গলির মধ্যে দেখা যায়, বাস, ট্রাক, লেগুনা, কভার্টভ্যান, পাশাপাশি দুই লাইন, তিন লাইন করে দাঁড়িয়ে থাকে, কোন ট্রাফিক পুলিশকে তাদের কিছু বলতে দেখা যায় না। এসব কারণে পুরো রাস্তায় যানজট লেগেই থাকে। অথচ জীবন-জীবিকার তাগিদে যারা মোটরসাইকেল নিয়ে রাস্তায় নামে তাদেরই যতো দোষ! লক্কড়-ঝক্কড় মার্কা ফিটনেসবিহীন, নাম্বারবিহীন সিএনজি, বাস, প্রাইভেটকার অহরহ চলছে। অন্যদিকে একটা বাইকের সামান্য অপরাধের জন্য মামলা দেয়া হয় তখন বাইকারদের আর কি করার থাকে।

ট্রাফিক আইন কঠোরভাবে প্রয়োগ করলে সব খানেই কঠোর হতে হবে। আইন কারো জন্য আলাদা নয়! লক্কড়-ঝক্কড় বাস, লেগুনা, সিএনজির বেআইনি চলাফেরা পুলিশের মাসিক ইনকাম সোর্স। অন্যদিকে নানা বাহানা ও ছুতোয় মোটরসাইকেল, প্রাইভেটকার থেকে ‘রোজকার’ রোজগার ধরে এগুলোকে টার্গেট করেই রাস্তায় নেমে থাকে পুলিশ। অটোচার্জার, লাইসেন্সবিহীন সিএসজি, নসিমন, করিমন, ভটভটি, ফিটনেসবিহীন বাস, ট্রাক, ট্রাকটর, এসবের জন্য কি আইন নেই? শুধুই কি মোটরসাইকেল পার্কিংই রাস্তার যানজটের কারণ? বাসগুলো যখন রাস্তা বন্ধ করে যাত্রীর ওঠানামা ও অপেক্ষায় থাকে রাস্তা বন্ধ করে রাখে যেগুলোর বিরুদ্ধে পুলিশের যথাযথ কোন পদক্ষেপ থাকে না কেন?

ভবন নির্মাণ হচ্ছে, আর রাস্তার অর্ধেক দখল করে রেখেছে ওই নির্মাণাধীন ভবনের বালি, পাথর, ইট, সুরকি। সব নিয়ম আর নীতি যেন এই দুই চাকার বাহনের ওপর। রাস্তায় দেখা যায় ১৪/১৫ বছরের বাচ্চারা লেগুনা, বাস, পিকআপ, অটো রিকশা, চালাচ্ছে। ওভারলোড করে ২০ থেকে ৫০ জন যাত্রীর ভার নিয়ে, যা ইচ্ছে তাই তাদের চালানোর ধরন। গাড়িগুলোর ‘চেহারা’ দেখলেই বোঝা যায় ফিটনেস নেই, সঙ্গে ড্রাইভারের ‘বয়স’ দেখলেই বোঝা যায় লাইসেন্স নেই। লাইনম্যান থেকে টাকা নিয়ে লেগুনা জাতীয় ছোট ছোট অবৈধ গাড়ি চলে থাকে। পুলিশ সেগুলোর দিকে তাকায়ও না। এসব অবৈধ প্যাসেঞ্জারবাহী গাড়ির দাপটে টেকা দায়! তারা দুর্ঘটনাও ঘটিয়ে থাকে। ওরা লাইসেন্স পেল কী করে? আর কে দিল লাইসেন্স? কিছু যায় আসে না! কারণ, ওরা তো নিয়োমিত প্রতি রুটে চাঁদা দিয়ে থাকে। এছাড়া আগে তো আমাদের মার্কেটের প্রয়োজনে নিউ মার্কেট, গাউছিয়ায় যেতে হতো। এখন তো পুরো ঢাকাই নিউমার্কেট, গাউছিয়া, গুলিস্তান হয়ে রয়েছে। মানুষের চলাচলের যায়গা পর্যন্ত নেই। কাদের পাওয়ারে ফুটপাত, রাস্তা দখল করে দোকানপাট বসে। এতে কি রাস্তায় যানজট হয় না! শুধু ৫/১০ মিনিটের জন্য মোটরসাইকেল রাস্তায় রাখলেই যানজট হয়? আসলে শওকত আলী জাতিকে চোখে আঙ্গুল দিয়ে বুঝিয়ে দিয়েছেন, তারা কত অসহায় ও অবিচারের স্বীকার। বাংলাদেশের আইন হলো মাকড়শার জালের মতো, ক্ষুদ্র কেউ পরলে আটকে যায়, বড়োরা ছেড়ে-ফিরে বেড়িয়ে যায়।

দেশের আইনে পার্কিং নিষেধ আছে, কিন্তু কোথায় পার্কিং করা যাবে তার বিধিমালা নেই। অথচ রাইডারদের কাছ থেকে সরকার / বিআরটিএ বাৎসরিক ৭০০ টাকা করে রাইড সেয়ারিংয়ের জন্য নেয়। মোটর সাইকেল সামান্য ব্যক্তিগত বাহন মাত্র। সাধারণত শুধু নিজের কাজে ব্যবহার করে। অথচ মোটরসাইকেলের ওপর সব আইন প্রয়োগ করা হয়। গাড়ির কাগজপত্র তৈরি ও চালকের লাইসেন্স পেতে দেশের বিআরটিয়ের অফিসের কচ্ছপগতি, অন্যদিকে অসীম ক্ষমতাধর পুলিশ বরাবরই মামলা দেয়ার ক্ষমতাকে অপব্যবহার করে থাকেন।

নানা পর্যায়ে পুলিশের অত্যাচার আসলেই দিনকে দিন সিমার বাইরে চলে যাচ্ছে। এর একটা প্রতিকার দরকার। শওকত আলী নিজের বাইকে যে আগুন দিয়েছেন, এ আগুন শত মানুষের মনের ভেতরও জ্বলছে। আইনশৃঙ্খলা, স্বাস্থ্য, শিক্ষা, চিকিৎসাসহ কোনও সেবা সংস্থার কাছেই দেশবাসী কাক্সিক্ষত তো নয়ই, ন্যূনতম সদাচারণ থেকেও বঞ্চিত। এসব দেখার বা শোনার কেউ নেই। মানুষ বাকরুদ্ধ। রাস্তায় ট্রাফিক পুলিশের আচরণ বেশিরভাগ ক্ষেত্রে জনবান্ধব নয়। রাস্তায় পুলিশ নিয়োজিত করা হয় সর্বসাধারণের সেবা ও নিরাপত্তার জন্য, হয়রানির জন্য নয়।

আমাদের দেশ ছোট, জনসংখ্যা বেশি। গাড়ি বা যানবাহনও বেশি। গাড়ি পার্কিংটা শওকত আলীর অন্যায় এটা মানলাম। কিন্তু জায়গাতো নেই। বাস্তবতার নিরীখে পুলিশের সহনশীল মনমানসিকতার অভাব ছিল।

শওকত আলীর মতো হাজারো মোটরসাইকেলের পেছেনে লুকিয়ে আছে পরিবার ও সন্তানদের মুখে দু’মুঠো ভাত তুলে দেয়ার গল্প! অথচ মোটরসাইকেলের সঙ্গে আইনশৃঙ্খলা বাহিনী এমন সিরিয়াস আচরণ করেন যে, মোটরসাইকেল একটি বিশাল গাড়ি এবং চালক একজন মহা অপরাধী। এই ধরনের মনমানসিকতা পরিবর্তন হওয়াটা জরুরি। বাড্ডার ঘটনাটি অত্যন্ত মর্মান্তিক। হয়রানির জন্য একজন চালক তার মোটরসাইকেলে আগুন ধরিয়ে দিয়েছেন। এ ধরনের ঘটনাও যদি পুলিশকে নাড়া না দেয়, তাহলে কি আত্মহুতী দিলে তাদের বিবেক নাড়া দেবে?