অপরিকল্পিত মৎস্যঘেরে নিকাশি বন্ধ : বৃষ্টি হলেই ভাসে পারুলিয়া

অতিবৃষ্টির কারণে পানিবন্দী হয়ে পড়েছে দেবহাটা উপজেলার দক্ষিণ নাজিরেরঘের এলাকার মানুষ। ক্রমশয় বেড়ে চলেছে মানুষের দুর্ভোগ। কোথাও হাটু পানি আবার কোথাও বুক পানিতে ডুবে আছে। এতে ভেঙে পড়েছে যোগাযোগ ব্যবস্থা। নেই কোন শুকনো জায়গা। ভেঙ্গে পগেছে স্যানিটেশন ব্যবস্থা। বেড়েছে সাপের উপদ্রব। অপসারণ হয়নি খালের নেটপাটা। অপরিকল্পিত মাছের ঘেরের কারণে পানি নিস্কাশন বন্ধ হয়ে এ অবস্থার সৃষ্টি হয়েছে বলে জানা গেছে। সরেজমিনে দেখা গেছে পারুলিয়া ইউনিয়নের ৮নং ওয়ার্ডের দক্ষিণ নাজিরেরঘের এলাকায় অপরিকল্পিত মৎস্যঘের হওয়ায় টানা বৃষ্টিতে গোটা এলাকা নিমজ্জিত হয়ে পড়েছে। পানি নিস্কাশন ব্যবস্থা না থাকায় হাজার হাজার বিঘা মৎস্যঘের ভেসে গেছে। বাড়তি পানির চাপে প্লাবিত হয়েছে পুরো এলাকা। পানিতে ভাসছে পুরো গ্রাম। নেই শুকনো মাটি। সর্বত্র পানি আর পানি। বাড়ির আঙ্গিনা সহ ঘরের মধ্যে হাটু পানি। বিষাক্ত পোকামাকড় ঘরে ঢুকে যাচ্ছে। টানা ৩ মাসের বেশি সময় পানি বন্দি থাকায় অনেকে আক্রান্ত হচ্ছে পানিবাহিত রোগে। স্থানীয় খালে নেটপাটা দেওয়ার কারণে পানি সরতে পারে না। যার ফলে অতিবৃষ্টিতে তাদের বাড়িঘরে পানি ঢুকেছে। চুলায় রান্না করতে পারছেন না। বর্তমানে যে অবস্থা, তাতে কেউ মারা গেলে লাশ মাটি দেওয়ার জায়গা নেই। তাছাড়া জরুরী প্রয়োজন বা বাজারে যেতে হলে কয়েক কিলোমিটার পথ নৌকায় করে পাড়ি দিতে হচ্ছে। এতে ভোগান্তির পরিমান বেড়ে চলেছে। চলাচলের রাস্তা ডুবে থাকায় নৌকা ছাড়া কোন উপায় থাকলে না এলাকাবাসীর। তবে নৌকায় পার হতে গেলেও থাকে প্রাণ ঝুঁকি। পানি বন্দি এলাকায় নারী ও শিশুরা সবচেয়ে ঝুঁকিতে পড়েছেন। স্থানীয় বাসিন্দা ময়না বেগম (৬৫) জানান, লোনা পানি তার বাড়িতে ঢুকে বসবাসের অযোগ্য হয়ে পড়েছে। ঘরের ভিতর পানি উঠে যাওয়ায় থাকা খাওয়া খুবই কষ্ট হচ্ছে। পরিবারের সদস্যদের নিয়ে খুবই ভোগান্তিতে আছেন তারা। বর্তমানে তাদের খুবই অসহায় দিন কাটছে। মোজাহিদ হোসেন (২৫) জানান, টানা ৩ মাসের বেশি সময় ধরে তারা গোটা এলাকা পানি বন্দি জীবন যাপন করছে। কোন পানি নিস্কাশনের ব্যবস্থা নেই। বাড়ির উঠান, রাস্তা, মৎস্যঘের সব একাকার। এলাকার মানুষের জীবন জীবিকা নির্বাহ হুমকি স্বরুপ হয়ে পড়েছে। পানি বন্দি হওয়ার ফলে রাস্তাঘাট ডুবে গেছে। কোথাও যাওয়ার দরকার হলে নৌকা ছাড়া উপায় নেই। তাও আবার ঘন্টার পর ঘন্টা অপেক্ষা করতে হয়। রাতে আবার ঘেরের উপর দিয়ে নৌকা চলাচল করতে দেওয়া হয় না। এপর্যন্ত খুবই কষ্টের মধ্য দিয়ে দিন পর করলেও কোন সহায়তা পায়নি এলাকাবাসী। স্থানীয় ঘের ব্যবসায়ী আলহাজ্ব মুনছুর আলী জানান, বৃষ্টি পানিতে সৃষ্ট বন্যায় পুরো এলাকা প্লাবিত। কোটি কোটি টাকার মৎস্য ঘের ভেসে গেছে। এমন কোন ভেড়ি নেই জেগে আছে। আমরা মৎস্যঘের মালিকরা এবার ব্যাপক ক্ষতির মুখে পড়েছি। জানিনা এ পরিস্থিতি করে কাটবে। মানুষ মসজিদেও আসতে পারছে না বন্যার কারনে। এখানের মানুষের দূর্ভোগ বলে শেষ করা যাবে না। আমরা চাই সরকারের কর্মকর্তারা যাতে আমাদের এই দূর্ভোগ লাঘবে উদ্যোগ নেন। স্থানীয় ইউপি সদস্য ইয়ামিন মোড়ল জানান, বন্যার ফলে তার নিজ বাড়ির উঠান পানিতে ডুবে আছে। মাছেরঘের ডুবে শেষ। মানুষের জীবন যাপন হুমকিতে। বিষযটি নিয়ে আমরা প্রশাসনের সাথে কথা বলেছি। তিনি আরো বলেন, আমরা এই এলাকার মানুষের চলাচলের জন্য রাস্তাটি যাতে দ্রুত সম্পন্ন করা যায় সে বিষয়ে উদ্যোগ নিয়েছি। রাস্তাটি নির্মান হলে অন্তর্ত মানুষ রাস্তা দিয়ে যাতায়াত করতে পারে। উপজেলা প্রকল্প বাস্তবায়ন অফিসার শফিউল বশার জানান, বিষয়টি শুনেছি। উপজেলা নির্বাহী অফিসার ও জেলার উদ্ধর্তন কর্তৃপক্ষকে বিষয়টি জানানো হবে।

সোমবার, ০৪ অক্টোবর ২০২১ , ১৯ আশ্বিন ১৪২৮ ২৫ সফর ১৪৪৩

অপরিকল্পিত মৎস্যঘেরে নিকাশি বন্ধ : বৃষ্টি হলেই ভাসে পারুলিয়া

মীর খায়রুল আলম, দেবহাটা (সাতক্ষীরা)

image

দেবহাটা (সাতক্ষীরা) : জলমগ্ন চারপাশ হাঁটু জল মাড়িয়ে চলাচলের বাধ্য হচ্ছেন গ্রামবাসী -সংবাদ

অতিবৃষ্টির কারণে পানিবন্দী হয়ে পড়েছে দেবহাটা উপজেলার দক্ষিণ নাজিরেরঘের এলাকার মানুষ। ক্রমশয় বেড়ে চলেছে মানুষের দুর্ভোগ। কোথাও হাটু পানি আবার কোথাও বুক পানিতে ডুবে আছে। এতে ভেঙে পড়েছে যোগাযোগ ব্যবস্থা। নেই কোন শুকনো জায়গা। ভেঙ্গে পগেছে স্যানিটেশন ব্যবস্থা। বেড়েছে সাপের উপদ্রব। অপসারণ হয়নি খালের নেটপাটা। অপরিকল্পিত মাছের ঘেরের কারণে পানি নিস্কাশন বন্ধ হয়ে এ অবস্থার সৃষ্টি হয়েছে বলে জানা গেছে। সরেজমিনে দেখা গেছে পারুলিয়া ইউনিয়নের ৮নং ওয়ার্ডের দক্ষিণ নাজিরেরঘের এলাকায় অপরিকল্পিত মৎস্যঘের হওয়ায় টানা বৃষ্টিতে গোটা এলাকা নিমজ্জিত হয়ে পড়েছে। পানি নিস্কাশন ব্যবস্থা না থাকায় হাজার হাজার বিঘা মৎস্যঘের ভেসে গেছে। বাড়তি পানির চাপে প্লাবিত হয়েছে পুরো এলাকা। পানিতে ভাসছে পুরো গ্রাম। নেই শুকনো মাটি। সর্বত্র পানি আর পানি। বাড়ির আঙ্গিনা সহ ঘরের মধ্যে হাটু পানি। বিষাক্ত পোকামাকড় ঘরে ঢুকে যাচ্ছে। টানা ৩ মাসের বেশি সময় পানি বন্দি থাকায় অনেকে আক্রান্ত হচ্ছে পানিবাহিত রোগে। স্থানীয় খালে নেটপাটা দেওয়ার কারণে পানি সরতে পারে না। যার ফলে অতিবৃষ্টিতে তাদের বাড়িঘরে পানি ঢুকেছে। চুলায় রান্না করতে পারছেন না। বর্তমানে যে অবস্থা, তাতে কেউ মারা গেলে লাশ মাটি দেওয়ার জায়গা নেই। তাছাড়া জরুরী প্রয়োজন বা বাজারে যেতে হলে কয়েক কিলোমিটার পথ নৌকায় করে পাড়ি দিতে হচ্ছে। এতে ভোগান্তির পরিমান বেড়ে চলেছে। চলাচলের রাস্তা ডুবে থাকায় নৌকা ছাড়া কোন উপায় থাকলে না এলাকাবাসীর। তবে নৌকায় পার হতে গেলেও থাকে প্রাণ ঝুঁকি। পানি বন্দি এলাকায় নারী ও শিশুরা সবচেয়ে ঝুঁকিতে পড়েছেন। স্থানীয় বাসিন্দা ময়না বেগম (৬৫) জানান, লোনা পানি তার বাড়িতে ঢুকে বসবাসের অযোগ্য হয়ে পড়েছে। ঘরের ভিতর পানি উঠে যাওয়ায় থাকা খাওয়া খুবই কষ্ট হচ্ছে। পরিবারের সদস্যদের নিয়ে খুবই ভোগান্তিতে আছেন তারা। বর্তমানে তাদের খুবই অসহায় দিন কাটছে। মোজাহিদ হোসেন (২৫) জানান, টানা ৩ মাসের বেশি সময় ধরে তারা গোটা এলাকা পানি বন্দি জীবন যাপন করছে। কোন পানি নিস্কাশনের ব্যবস্থা নেই। বাড়ির উঠান, রাস্তা, মৎস্যঘের সব একাকার। এলাকার মানুষের জীবন জীবিকা নির্বাহ হুমকি স্বরুপ হয়ে পড়েছে। পানি বন্দি হওয়ার ফলে রাস্তাঘাট ডুবে গেছে। কোথাও যাওয়ার দরকার হলে নৌকা ছাড়া উপায় নেই। তাও আবার ঘন্টার পর ঘন্টা অপেক্ষা করতে হয়। রাতে আবার ঘেরের উপর দিয়ে নৌকা চলাচল করতে দেওয়া হয় না। এপর্যন্ত খুবই কষ্টের মধ্য দিয়ে দিন পর করলেও কোন সহায়তা পায়নি এলাকাবাসী। স্থানীয় ঘের ব্যবসায়ী আলহাজ্ব মুনছুর আলী জানান, বৃষ্টি পানিতে সৃষ্ট বন্যায় পুরো এলাকা প্লাবিত। কোটি কোটি টাকার মৎস্য ঘের ভেসে গেছে। এমন কোন ভেড়ি নেই জেগে আছে। আমরা মৎস্যঘের মালিকরা এবার ব্যাপক ক্ষতির মুখে পড়েছি। জানিনা এ পরিস্থিতি করে কাটবে। মানুষ মসজিদেও আসতে পারছে না বন্যার কারনে। এখানের মানুষের দূর্ভোগ বলে শেষ করা যাবে না। আমরা চাই সরকারের কর্মকর্তারা যাতে আমাদের এই দূর্ভোগ লাঘবে উদ্যোগ নেন। স্থানীয় ইউপি সদস্য ইয়ামিন মোড়ল জানান, বন্যার ফলে তার নিজ বাড়ির উঠান পানিতে ডুবে আছে। মাছেরঘের ডুবে শেষ। মানুষের জীবন যাপন হুমকিতে। বিষযটি নিয়ে আমরা প্রশাসনের সাথে কথা বলেছি। তিনি আরো বলেন, আমরা এই এলাকার মানুষের চলাচলের জন্য রাস্তাটি যাতে দ্রুত সম্পন্ন করা যায় সে বিষয়ে উদ্যোগ নিয়েছি। রাস্তাটি নির্মান হলে অন্তর্ত মানুষ রাস্তা দিয়ে যাতায়াত করতে পারে। উপজেলা প্রকল্প বাস্তবায়ন অফিসার শফিউল বশার জানান, বিষয়টি শুনেছি। উপজেলা নির্বাহী অফিসার ও জেলার উদ্ধর্তন কর্তৃপক্ষকে বিষয়টি জানানো হবে।