নিষেধাজ্ঞাকালে যমুনায় ইলিশ শিকারে জোর প্রস্তুতি জেলেদের

৪ অক্টোবর থেকে ২৫ অক্টোবর প্রজনন মৌসুমে ইলিশ ধরা, বিক্রি, বিপনন নিষিদ্ধ ঘোষণা করা হলেও ইলিশ প্রজননের উত্তরবঙ্গের প্রধান মোহনা সিরাজগঞ্জের চৌহালী-এনায়েতপুরে যমুনায় মাছ শিকারে বসে নেই লোভী জেলেরা। এবার অন্যান্য বছরের চেয়ে রেকর্ড পরিমান নতুন জাল ও নৌকা তৈরী করেছে তারা। তবে প্রশাসন ও মৎস্য বিভাগ মা ইলিশ রক্ষায় স্বচেষ্ট ভুমিকায় থাকার কথা জানিয়েছে। জানা যায়, যমুনার চরাঞ্চল ঘেরা দুর্গম জনপদ নদী ভাঙ্গনে বিপর্যস্ত চৌহালী উপজেলার অধিকাংশ অভাবী মানুষের কৃষির পরেই প্রধান পেশা মাছ শিকার। নিবন্ধিত ১ হাজার ৩৩ জন জেলে সহ প্রায় ৫ সহস্রাদিক জেলে এ কাজে জড়িত। ইলিশ, বাইম, গোলশা, ঘাইড়া, আইড়, কাজলী, চিংড়ি সহ নদীর হরেক রকম সুস্বাদু মাছ ধরতে তাদের ঘের জাল ও নিষিদ্ধ ক্যারেন্ট জালই হচ্ছে প্রধান উপকরন। চৌহালীর উমরপুর, বাঘুটিয়া, খাসকাউলিয়া, ঘোরজান, খাসপুকুরিয়া ও এনায়েতপুর থানার স্থল, সদিয়াচাঁদপুর, খুকনী ও জালালপুর ইউনিয়নের এসব জেলেরা তাদের ছোট-বড় ইঞ্জিন চালিত নৌকা করে দিন-রাত চালিয়ে আসছেন মাছ আহরনের কাজ। এসব জেলে তাদের ছোট-বড় ইঞ্জিন চালিত নৌকা করে দিন-রাত করছেন মাছ আহরন পেশার সাথে যুক্ত। প্রতি বছরের ন্যায় ইলিশের বংশ বিস্তারের জন্য ৪ অক্টোবর থেকে ২৫ অক্টোবর পর্যন্ত প্রজনন মৌসুমে ইলিশ ধরা, বিক্রি, বিপনন, মজুদ নিষিদ্ধ ঘোষনা করেছে সরকার। তবে চলতি মৌসুমে এ অঞ্চলে ব্যাপক ভাবে এই মাছ যমুনার মিঠা পানিতে প্রজননের জন্য আসায় গত কয়েক বছর নিষেধাজ্ঞার মৌসুমে জেলেরা কোন কিছুর তোয়াক্কা না করে ব্যাপক ইলিশ নিধন করেছে। এবারো এর ব্যতিক্রম নেই। অন্যান্য বছরের সকল রেকর্ড ভেঙ্গে কৌশলে দ্বিগুন ক্যারেন্ট জাল ও নৌকা তৈরী করেছে চৌহালী, এনায়েতপুর থানার যমুনা পাড়ের অসাধু জেলারা। সরজমিনে বেতিল, চাঁনপুর, জালালপুর ও স্থলচর, ঘোরজান ও খাসকাউলিয়া আজিমুদ্দি মোড় ও সলিমাবাদ এলাকায় গিয়ে দেখা যায়, উন্মুক্ত ভাবেই জেলেরা নতুন জাল বুনতে ব্যস্ত সময় পাড় করছে নদী পাড়ে। সংবাদকর্মীদের দেখে অধিকাংশ জেলেরা পালিয়ে গেলেও ইলিশ ধরা অবৈধ ক্যারেন্ট জাল তৈরির সময় হাতে-নাতে দেখা মেলে খাসকাউলিয়া ও শৈলজানা চরে কয়েকজন অভাবী জেলেদের। এ ব্যাপারে চৌহালী উপজেলা মৎস্যজীবী সমিতির সভাপতি মাজেম আলী মিয়া জানান, এবার অনেকেই গোপনে জাল তৈরি করেছে বলে শুনেছি। তবে সবাইকে মিটিং করে মাছ না ধরার জন্য অনুরোধ করেছি। না শুনলে আমি নিজেও অভিযানে শরিক হয়ে অসাধু জেলেদের ধরে দেব। তবে আমাদের বেকার জেলেদের যে প্রণোদনা দেয়া হচ্ছে তা একেবারেই অপ্রতুল। আবার নিবন্ধিত ও অনিবদ্ধিত জেলেরাও পাচ্ছে না। এ ব্যাপারে এনায়েতপুর থানার ওসি আনিসুর রহমান ও চৌহালীর ওসি রফিকুল ইসলাম জানান, আমরা এবার অসাধু জেলেদের কোনভাবেই ইলিশ শিকার করতে দেব না। উপজেলা প্রশাসনের সঙ্গে সমন্বয় করে সব রকম পদক্ষেপ নেয়া হবে। জাল নৌকা দেখলেই ধরে জেল-জরিমানা করা হবে। এদিকে মাছ ধরা বন্ধে সচেতনতার পাশাপাশি এবার নিবন্ধিত ১ হাজার ৩৩ জন জেলের মধ্যে ৯২৩ জন বেকার জেলেকে ২০ কেজি চাল বিতরণ করা হবে বলে জানিয়েছেন চৌহালী উপজেলা মৎস্য মনোয়ার হোসেন। ইলিশ রক্ষায় গণমাধ্যম কর্মীদের সহযোগিতা চেয়ে বেলকুচি উপজেলা নির্বাহী অফিসার (চৌহালীর অতিরিক্ত দায়িত্বপ্রাপ্ত) আনিসুর রহমান জানান, আমরা ২ সপ্তাহ আগে থেকেই মা ইলিশ ধরা বন্ধে জেলে ও সচেতন ব্যক্তিদের সাথে নিয়ে বিভিন্ন প্রোগ্রাম করেছি। আসা করছি অসাধু জেলেদের অপতৎপরতা বন্ধে এবারও সফল হবো আমরা।

সোমবার, ০৪ অক্টোবর ২০২১ , ১৯ আশ্বিন ১৪২৮ ২৫ সফর ১৪৪৩

নিষেধাজ্ঞাকালে যমুনায় ইলিশ শিকারে জোর প্রস্তুতি জেলেদের

প্রতিনিধি, চৌহালী (সিরাজগঞ্জ)

image

চৌহালী (সিরাজগঞ্জ) : ইলিশ শিকারের জন্য জাল প্রস্তুত করছেন একজন জেলে -সংবাদ

৪ অক্টোবর থেকে ২৫ অক্টোবর প্রজনন মৌসুমে ইলিশ ধরা, বিক্রি, বিপনন নিষিদ্ধ ঘোষণা করা হলেও ইলিশ প্রজননের উত্তরবঙ্গের প্রধান মোহনা সিরাজগঞ্জের চৌহালী-এনায়েতপুরে যমুনায় মাছ শিকারে বসে নেই লোভী জেলেরা। এবার অন্যান্য বছরের চেয়ে রেকর্ড পরিমান নতুন জাল ও নৌকা তৈরী করেছে তারা। তবে প্রশাসন ও মৎস্য বিভাগ মা ইলিশ রক্ষায় স্বচেষ্ট ভুমিকায় থাকার কথা জানিয়েছে। জানা যায়, যমুনার চরাঞ্চল ঘেরা দুর্গম জনপদ নদী ভাঙ্গনে বিপর্যস্ত চৌহালী উপজেলার অধিকাংশ অভাবী মানুষের কৃষির পরেই প্রধান পেশা মাছ শিকার। নিবন্ধিত ১ হাজার ৩৩ জন জেলে সহ প্রায় ৫ সহস্রাদিক জেলে এ কাজে জড়িত। ইলিশ, বাইম, গোলশা, ঘাইড়া, আইড়, কাজলী, চিংড়ি সহ নদীর হরেক রকম সুস্বাদু মাছ ধরতে তাদের ঘের জাল ও নিষিদ্ধ ক্যারেন্ট জালই হচ্ছে প্রধান উপকরন। চৌহালীর উমরপুর, বাঘুটিয়া, খাসকাউলিয়া, ঘোরজান, খাসপুকুরিয়া ও এনায়েতপুর থানার স্থল, সদিয়াচাঁদপুর, খুকনী ও জালালপুর ইউনিয়নের এসব জেলেরা তাদের ছোট-বড় ইঞ্জিন চালিত নৌকা করে দিন-রাত চালিয়ে আসছেন মাছ আহরনের কাজ। এসব জেলে তাদের ছোট-বড় ইঞ্জিন চালিত নৌকা করে দিন-রাত করছেন মাছ আহরন পেশার সাথে যুক্ত। প্রতি বছরের ন্যায় ইলিশের বংশ বিস্তারের জন্য ৪ অক্টোবর থেকে ২৫ অক্টোবর পর্যন্ত প্রজনন মৌসুমে ইলিশ ধরা, বিক্রি, বিপনন, মজুদ নিষিদ্ধ ঘোষনা করেছে সরকার। তবে চলতি মৌসুমে এ অঞ্চলে ব্যাপক ভাবে এই মাছ যমুনার মিঠা পানিতে প্রজননের জন্য আসায় গত কয়েক বছর নিষেধাজ্ঞার মৌসুমে জেলেরা কোন কিছুর তোয়াক্কা না করে ব্যাপক ইলিশ নিধন করেছে। এবারো এর ব্যতিক্রম নেই। অন্যান্য বছরের সকল রেকর্ড ভেঙ্গে কৌশলে দ্বিগুন ক্যারেন্ট জাল ও নৌকা তৈরী করেছে চৌহালী, এনায়েতপুর থানার যমুনা পাড়ের অসাধু জেলারা। সরজমিনে বেতিল, চাঁনপুর, জালালপুর ও স্থলচর, ঘোরজান ও খাসকাউলিয়া আজিমুদ্দি মোড় ও সলিমাবাদ এলাকায় গিয়ে দেখা যায়, উন্মুক্ত ভাবেই জেলেরা নতুন জাল বুনতে ব্যস্ত সময় পাড় করছে নদী পাড়ে। সংবাদকর্মীদের দেখে অধিকাংশ জেলেরা পালিয়ে গেলেও ইলিশ ধরা অবৈধ ক্যারেন্ট জাল তৈরির সময় হাতে-নাতে দেখা মেলে খাসকাউলিয়া ও শৈলজানা চরে কয়েকজন অভাবী জেলেদের। এ ব্যাপারে চৌহালী উপজেলা মৎস্যজীবী সমিতির সভাপতি মাজেম আলী মিয়া জানান, এবার অনেকেই গোপনে জাল তৈরি করেছে বলে শুনেছি। তবে সবাইকে মিটিং করে মাছ না ধরার জন্য অনুরোধ করেছি। না শুনলে আমি নিজেও অভিযানে শরিক হয়ে অসাধু জেলেদের ধরে দেব। তবে আমাদের বেকার জেলেদের যে প্রণোদনা দেয়া হচ্ছে তা একেবারেই অপ্রতুল। আবার নিবন্ধিত ও অনিবদ্ধিত জেলেরাও পাচ্ছে না। এ ব্যাপারে এনায়েতপুর থানার ওসি আনিসুর রহমান ও চৌহালীর ওসি রফিকুল ইসলাম জানান, আমরা এবার অসাধু জেলেদের কোনভাবেই ইলিশ শিকার করতে দেব না। উপজেলা প্রশাসনের সঙ্গে সমন্বয় করে সব রকম পদক্ষেপ নেয়া হবে। জাল নৌকা দেখলেই ধরে জেল-জরিমানা করা হবে। এদিকে মাছ ধরা বন্ধে সচেতনতার পাশাপাশি এবার নিবন্ধিত ১ হাজার ৩৩ জন জেলের মধ্যে ৯২৩ জন বেকার জেলেকে ২০ কেজি চাল বিতরণ করা হবে বলে জানিয়েছেন চৌহালী উপজেলা মৎস্য মনোয়ার হোসেন। ইলিশ রক্ষায় গণমাধ্যম কর্মীদের সহযোগিতা চেয়ে বেলকুচি উপজেলা নির্বাহী অফিসার (চৌহালীর অতিরিক্ত দায়িত্বপ্রাপ্ত) আনিসুর রহমান জানান, আমরা ২ সপ্তাহ আগে থেকেই মা ইলিশ ধরা বন্ধে জেলে ও সচেতন ব্যক্তিদের সাথে নিয়ে বিভিন্ন প্রোগ্রাম করেছি। আসা করছি অসাধু জেলেদের অপতৎপরতা বন্ধে এবারও সফল হবো আমরা।