নেমেছে তিন শতাংশের নিচে
দীর্ঘ সাত মাস পর দেশে করোনা সংক্রমণ তিন শতাংশের নিচে নেমেছে। টানা ১৩ দিন ধরে সংক্রমণ রয়েছে পাঁচ শতাংশের নিচে। করোনা সংক্রমণের এই অবস্থাকে ‘স্বস্তিদায়ক’ হিসেবে দেখছে স্বাস্থ্য অধিদপ্তর।
বিশ্ব স্বাস্থ্য সংস্থার তথ্য অনুযায়ী, কোন দেশে টানা তিন সপ্তাহ সংক্রমণ হার পাঁচ শতাংশের কম থাকলে ধরে নেয়া হয়, সেখানে আর মহামারী নেই, অর্থাৎ সংক্রমণ নিয়ন্ত্রণে রয়েছে। বাংলাদেশে সর্বশেষ ২৪ ঘণ্টায় সংক্রমণ হার ছিল দুই দশমিক ৯০ শতাংশ। আর গত ২১ সেপ্টেম্বর থেকে সংক্রমণ পাঁচ শতাংশের নিচে রয়েছে। তবে জনস্বাস্থ্যবিদরা বলছেন, সংক্রমণের ঝুঁকি এখনও রয়েছে। বিশে^র সব দেশ ও অঞ্চলে সংক্রমণ নির্মূল না হওয়া পর্যন্ত কোন দেশই ঝুঁকিমুক্ত থাকবে না। কারণ, যে কোন ভাইরাসের চরিত্রটাই এমন যে, এটি কখনও কমবে, কখনও বাড়বে।
সীমান্তবর্তী কয়েকটি জেলায় ‘ভারতীয় ভ্যারিয়েন্ট’ (ডেল্টা) সংক্রমণের মধ্য দিয়ে গত জুনে দেশে করোনার ‘ভয়াবহ’ দ্বিতীয় ধাক্কা শুরু হয়েছিল। সেইসব এলাকায় সংক্রমণ ও মৃত্যু এখন প্রায় শূন্যে নেমেছে।
দেশের ৩২টি সীমান্তবর্তী জেলার মধ্যে গতকাল ন্যূনতম ২৮টি জেলায় করোনায় কারোর মৃত্যু হয়নি। জেলাগুলোতে শনাক্তের হারও প্রায় শূন্যে নেমে এসেছে। গত ফেব্রুয়ারিতেও দেশে সংক্রমণ তিন শতাংশের নিচে নেমেছিল। কিন্তু মার্চের শুরুতে পুনরায় বাড়তে থাকে সংক্রমণ। এরপর মে মাসে করোনার ‘ভারতীয় ভ্যারিয়েন্ট’ সীমান্তবর্তী কয়েকটি জেলায় ছড়িয়ে পড়ে। পরবর্তীতে জুন, জুলাই ও আগস্টে দেশব্যাপী সংক্রমণ ‘ভয়াবহ’ রূপ নেয়।
স্বাস্থ্য অধিদপ্তরের মুখপাত্র ও পরিচালক (রোগ নিয়ন্ত্রণ বিভাগ) অধ্যাপক ডা. নাজমুল ইসলাম গতকাল এক ভার্চুয়াল বুলেটিনে বলেন, দেশে সংক্রমণ ও মৃত্যুর পরিসংখ্যান বিবেচনায় করোনার সার্বিক পরিস্থিতি ‘অত্যন্ত স্বস্তিদায়ক’। গত দু-তিন সপ্তাহে অব্যাহতভাবে সংক্রমণ কমছে, যা স্বস্তি ফিরিয়ে আনছে সবার মনে।
তবে এ নিয়ে এখনই আত্মতুষ্টির কোন কারণ নেই বলে মনে করেন নাজমুল ইসলাম। তিনি এ জন্য সবাইকে স্বাস্থ্যবিধি মেনে চলার আহ্বান জানান।
এ বিষয়ে জানতে চাইলে সরকারের রোগতত্ত্ব, রোগনিয়ন্ত্রণ ও গবেষণা প্রতিষ্ঠানের (আইইডিসিআর) উপদেষ্টা ডা. মুস্তাক হোসেন সংবাদকে বলেন, ‘সংক্রমণের ঝুঁকি অবশ্যই রয়েছে। সংক্রমণ বাড়ার ইতিহাস বাংলাদেশেও রয়েছে, সারা বিশে^ই রয়েছে। যতক্ষণ পর্যন্ত সারাবিশ^ থেকে করোনা সংক্রমণ নির্মূল না হবে, ততক্ষণ পর্যন্ত কোর দেশই ঝুঁকিমুক্ত নয়।’
‘ভাইরাসের চরিত্রটাই এমন যে, ঢেউ নেমে যাবে, আবারও ওপরে উঠবে’- মন্তব্য করে এই জনস্বাস্থ্য বিশেষজ্ঞ আরও বলেন, ‘কারণ মানুষের মধ্যে সংক্রমণ প্রতিরোধী এমন কোন ব্যবস্থা আমরা চালু করতে পারিনি। আবার সরকারের পক্ষ্য থেকেও এমন কোন ফ্রুটফুল সিস্টেমও করা হয়নি যে, সংক্রমণ আর বাড়বে না। তাছাড়া যেসব দেশ বিশেষ করে, ভিয়েতনাম প্রথমদিকে ভালোভাবেই সংক্রমণ নিয়ন্ত্রণ রেখেছিল। কিন্তু এখন দেশটিতে সবচেয়ে বেশি সংক্রমণ হচ্ছে। একই সঙ্গে মালয়েশিয়া ও অস্ট্রেলিয়ায়ও এখন বেশি সংক্রমণ হচ্ছে।’
‘টিকা দিলে সংক্রমণ বাড়লেও মৃত্যু কমবে’- মন্তব্য করে আইইডিসিআরের সাবেক প্রধান বৈজ্ঞানিক কর্মকর্তা ডা. মুস্তাক হোসেন বলেন, ‘বাংলাদেশ সেইভাবে টিকা দিতে পারেনি। উন্নয়নশীল দেশ সবগুলোরও একই অবস্থা। ইউরোপ ও আমেরিকায় টিকা দিতে পেরেছে। এরপরও সংক্রমণ হচ্ছে। কিন্তু মৃত্যুর হারটা সেখানে কমেছে।’
জনসাধারণকে স্বাস্থ্যবিধি মেনে চলার পরামর্শ দিয়ে ডা. মুস্তাক হোসেন বলেন, ‘এখনও দৈনিক যেসব রোগী শনাক্ত হচ্ছে.... প্রত্যেকটি রোগীর ব্যবস্থাপনা অর্থাৎ রোগীকে আলাদা করা, যথাযথভাবে চিকিৎসা দেয়ার ব্যবস্থা করতে হবে। অন্যথায় একজন থেকে অন্যজনে সংক্রমণ ছড়াতেই থাকবে।’
স্বাস্থ্য অধিদপ্তরের মুখপাত্র অধ্যাপক নাজমুল ইসলাম জানিয়েছেন, গত এক সপ্তাহে দেশে সংক্রমণের হার চার শতাংশ থেকে কমে তিন দশমিক ৪১ শতাংশে এসে দাঁড়িয়েছে। তিনি বলেন, ‘এ স্বস্তিকর অবস্থা ধরে রাখতে হলে প্রয়োজনীয় স্বাস্থ্যবিধি সঠিকভাবে মেনে চলা ও সবার চেষ্টায় সংক্রমণের হার আরও কমানো সম্ভব।’
এ মুহূর্তে গোটা বিশ্বে করোনা পরিস্থিতি অতীতের যে কোন সময়ের চেয়ে অনেকখানি নিয়ন্ত্রণে রয়েছে জানিয়ে অধ্যাপক নাজমুল ইসলাম বলেন, এ স্বস্তিকর অবস্থা ধরে রাখতে সবাইকে একসঙ্গে কাজ করতে হবে। দক্ষিণ-পূর্ব এশিয়ার মধ্যে ও গত এক সপ্তাহে ভারতে এক হাজার ৯৭১ জন, থাইল্যান্ডে ৮৩৪ জন, ইন্দোনেশিয়ায় ৭৬৮ জন এবং বাংলাদেশে ১৬৩ জনের মৃত্যু হয়।
স্বাস্থ্য অধিদপ্তরের সংবাদ বিজ্ঞপ্তিতে গতকাল বিকেলে বলা হয়, সকাল আটটা পর্যন্ত ২৪ ঘণ্টায় করোনায় দেশে ১৮ জনের মৃত্যু হয়েছে। তাদের মধ্যে ঢাকা ও চট্টগ্রাম বিভাগের আছেন সাতজন করে এবং রাজশাহী ও খুলনা বিভাগের দুইজন করে রোগীর মৃত্যু হয়েছে।
স্বাস্থ্য অধিদপ্তরের গত শনিবারের তথ্য অনুযায়ী, সাতদিনে দেশে এক লাখ ৭৩ হাজার ৩১৫টি নমুনা পরীক্ষা করা হয়, যা আগের সপ্তাহের চেয়ে সাত হাজার ৫৮১টি কম। এক সপ্তাহে শনাক্ত রোগীর সংখ্যা ছয় হাজার ৫৭৩ জন, যা আগের সপ্তাহের চেয়ে প্রায় ২৩ শতাংশ কম। গত এক সপ্তাহে আগের সপ্তাহের চেয়ে ৪৯ জন কম রোগীর মৃত্যু হয়েছে, অর্থাৎ আগের সপ্তাহের তুলনায় ২৩ শতাংশ মৃত্যু কমেছে।
সাতমাস পর শনাক্ত তিন শতাংশের নিচে
স্বাস্থ্য অধিদপ্তরের গতকালের তথ্য অনুযায়ী, সর্বশেষ ২৪ ঘণ্টায় দেশে ৬১৭ জনের দেহে করোনা সংক্রমণ শনাক্ত হয়েছে। এদিন নমুনা পরীক্ষা বিবেচনায় রোগী শনাক্তের হার ছিল দুই দশমিক ৯০ শতাংশ।
এর আগে গত ২৮ ফেব্রুয়ারিও শনাক্তের হার তিন শতাংশের নিচে ছিল। ওইদিন নমুনা পরীক্ষার বিপরীতে শনাক্তের হার ছিল ২ দশমিক ৮৭ শতাংশ।
একদিনে শনাক্ত হওয়া ৬১৭ জনকে নিয়ে দেশে এ পর্যন্ত ১৫ লাখ ৫৭ হাজার ৯৬৪ জনের দেহে করোনা সংক্রমণ শনাক্ত হয়েছে।
আর একদিনে মৃত্যু হওয়া ১৮ জনকে নিয়ে দেশে করোনা সংক্রমণে মোট মৃত্যুর সংখ্যা দাঁড়ালো ২৭ হাজার ৫৭৩ জনে।
করোনায় আক্রান্তদের মধ্যে একদিনে সুস্থ হয়েছেন এক হাজার ১১২ জন। এ নিয়ে করোনায় আক্রান্তদের মধ্যে মোট সুস্থ হলেন ১৫ লাখ ১৮ হাজার ৭৫৪ জন।
স্বাস্থ্য অধিদপ্তর জানিয়েছে, সর্বশেষ ২৪ ঘণ্টায় দেশে করোনার নমুনা পরীক্ষা হয়েছে ২১ হাজার ২৪৬টি। দেশে এ পর্যন্ত করোনার মোট নমুনা পরীক্ষা হয়েছে ৯৭ লাখ ৯৪ হাজার ৪৯০টি।
দেশে এ পর্যন্ত নমুনা পরীক্ষা অনুপাতে করোনা শনাক্তের হার ১৫ দশমিক ৯১ শতাংশ। শনাক্ত বিবেচনায় সুস্থতার হার ৯৭ দশমিক ৪৮ শতাংশ এবং শনাক্ত বিবেচনায় মৃত্যু হার এক দশমিক ৭৭ শতাংশ।
২৪ ঘণ্টায় মারা যাওয়া ১৮ জনের মধ্যে পুরুষ ৯ জন এবং নারী ৯ জন। দেশে এ পর্যন্ত করোনায় মৃত্যু হওয়া লোকজনের মধ্যে পুরুষ ১৭ হাজার ৬৯২ জন এবং নারী ছিলেন ৯ হাজার ৮৮১ জন।
বয়সভিত্তিক বিশ্লেষণে দেখা গেছে, ২৪ ঘণ্টায় মৃত্যু হওয়া লোকজনের মধ্যে দুইজনের বয়স ছিল ৮১ থেকে ৯০ বছরের মধ্যে। এছাড়া ৬১ থেকে ৭০ বছরের মধ্যে তিনজন, ৫১ থেকে ৬০ বছরের মধ্যে পাঁচজন, ৪১ থেকে ৫০ বছরের মধ্যে পাঁচজন, ৩১ থেকে ৪০ বছরের মধ্যে দুইজন এবং একজনের বয়স শূন্য থেকে ১০ বছরের মধ্যে ছিল। তাদের মধ্যে সরকারি হাসপাতালে ১৫ জন এবং বেসরকারি হাসপাতালে মারা গেছেন তিনজন।
সোমবার, ০৪ অক্টোবর ২০২১ , ১৯ আশ্বিন ১৪২৮ ২৫ সফর ১৪৪৩
নেমেছে তিন শতাংশের নিচে
দীর্ঘ সাত মাস পর দেশে করোনা সংক্রমণ তিন শতাংশের নিচে নেমেছে। টানা ১৩ দিন ধরে সংক্রমণ রয়েছে পাঁচ শতাংশের নিচে। করোনা সংক্রমণের এই অবস্থাকে ‘স্বস্তিদায়ক’ হিসেবে দেখছে স্বাস্থ্য অধিদপ্তর।
বিশ্ব স্বাস্থ্য সংস্থার তথ্য অনুযায়ী, কোন দেশে টানা তিন সপ্তাহ সংক্রমণ হার পাঁচ শতাংশের কম থাকলে ধরে নেয়া হয়, সেখানে আর মহামারী নেই, অর্থাৎ সংক্রমণ নিয়ন্ত্রণে রয়েছে। বাংলাদেশে সর্বশেষ ২৪ ঘণ্টায় সংক্রমণ হার ছিল দুই দশমিক ৯০ শতাংশ। আর গত ২১ সেপ্টেম্বর থেকে সংক্রমণ পাঁচ শতাংশের নিচে রয়েছে। তবে জনস্বাস্থ্যবিদরা বলছেন, সংক্রমণের ঝুঁকি এখনও রয়েছে। বিশে^র সব দেশ ও অঞ্চলে সংক্রমণ নির্মূল না হওয়া পর্যন্ত কোন দেশই ঝুঁকিমুক্ত থাকবে না। কারণ, যে কোন ভাইরাসের চরিত্রটাই এমন যে, এটি কখনও কমবে, কখনও বাড়বে।
সীমান্তবর্তী কয়েকটি জেলায় ‘ভারতীয় ভ্যারিয়েন্ট’ (ডেল্টা) সংক্রমণের মধ্য দিয়ে গত জুনে দেশে করোনার ‘ভয়াবহ’ দ্বিতীয় ধাক্কা শুরু হয়েছিল। সেইসব এলাকায় সংক্রমণ ও মৃত্যু এখন প্রায় শূন্যে নেমেছে।
দেশের ৩২টি সীমান্তবর্তী জেলার মধ্যে গতকাল ন্যূনতম ২৮টি জেলায় করোনায় কারোর মৃত্যু হয়নি। জেলাগুলোতে শনাক্তের হারও প্রায় শূন্যে নেমে এসেছে। গত ফেব্রুয়ারিতেও দেশে সংক্রমণ তিন শতাংশের নিচে নেমেছিল। কিন্তু মার্চের শুরুতে পুনরায় বাড়তে থাকে সংক্রমণ। এরপর মে মাসে করোনার ‘ভারতীয় ভ্যারিয়েন্ট’ সীমান্তবর্তী কয়েকটি জেলায় ছড়িয়ে পড়ে। পরবর্তীতে জুন, জুলাই ও আগস্টে দেশব্যাপী সংক্রমণ ‘ভয়াবহ’ রূপ নেয়।
স্বাস্থ্য অধিদপ্তরের মুখপাত্র ও পরিচালক (রোগ নিয়ন্ত্রণ বিভাগ) অধ্যাপক ডা. নাজমুল ইসলাম গতকাল এক ভার্চুয়াল বুলেটিনে বলেন, দেশে সংক্রমণ ও মৃত্যুর পরিসংখ্যান বিবেচনায় করোনার সার্বিক পরিস্থিতি ‘অত্যন্ত স্বস্তিদায়ক’। গত দু-তিন সপ্তাহে অব্যাহতভাবে সংক্রমণ কমছে, যা স্বস্তি ফিরিয়ে আনছে সবার মনে।
তবে এ নিয়ে এখনই আত্মতুষ্টির কোন কারণ নেই বলে মনে করেন নাজমুল ইসলাম। তিনি এ জন্য সবাইকে স্বাস্থ্যবিধি মেনে চলার আহ্বান জানান।
এ বিষয়ে জানতে চাইলে সরকারের রোগতত্ত্ব, রোগনিয়ন্ত্রণ ও গবেষণা প্রতিষ্ঠানের (আইইডিসিআর) উপদেষ্টা ডা. মুস্তাক হোসেন সংবাদকে বলেন, ‘সংক্রমণের ঝুঁকি অবশ্যই রয়েছে। সংক্রমণ বাড়ার ইতিহাস বাংলাদেশেও রয়েছে, সারা বিশে^ই রয়েছে। যতক্ষণ পর্যন্ত সারাবিশ^ থেকে করোনা সংক্রমণ নির্মূল না হবে, ততক্ষণ পর্যন্ত কোর দেশই ঝুঁকিমুক্ত নয়।’
‘ভাইরাসের চরিত্রটাই এমন যে, ঢেউ নেমে যাবে, আবারও ওপরে উঠবে’- মন্তব্য করে এই জনস্বাস্থ্য বিশেষজ্ঞ আরও বলেন, ‘কারণ মানুষের মধ্যে সংক্রমণ প্রতিরোধী এমন কোন ব্যবস্থা আমরা চালু করতে পারিনি। আবার সরকারের পক্ষ্য থেকেও এমন কোন ফ্রুটফুল সিস্টেমও করা হয়নি যে, সংক্রমণ আর বাড়বে না। তাছাড়া যেসব দেশ বিশেষ করে, ভিয়েতনাম প্রথমদিকে ভালোভাবেই সংক্রমণ নিয়ন্ত্রণ রেখেছিল। কিন্তু এখন দেশটিতে সবচেয়ে বেশি সংক্রমণ হচ্ছে। একই সঙ্গে মালয়েশিয়া ও অস্ট্রেলিয়ায়ও এখন বেশি সংক্রমণ হচ্ছে।’
‘টিকা দিলে সংক্রমণ বাড়লেও মৃত্যু কমবে’- মন্তব্য করে আইইডিসিআরের সাবেক প্রধান বৈজ্ঞানিক কর্মকর্তা ডা. মুস্তাক হোসেন বলেন, ‘বাংলাদেশ সেইভাবে টিকা দিতে পারেনি। উন্নয়নশীল দেশ সবগুলোরও একই অবস্থা। ইউরোপ ও আমেরিকায় টিকা দিতে পেরেছে। এরপরও সংক্রমণ হচ্ছে। কিন্তু মৃত্যুর হারটা সেখানে কমেছে।’
জনসাধারণকে স্বাস্থ্যবিধি মেনে চলার পরামর্শ দিয়ে ডা. মুস্তাক হোসেন বলেন, ‘এখনও দৈনিক যেসব রোগী শনাক্ত হচ্ছে.... প্রত্যেকটি রোগীর ব্যবস্থাপনা অর্থাৎ রোগীকে আলাদা করা, যথাযথভাবে চিকিৎসা দেয়ার ব্যবস্থা করতে হবে। অন্যথায় একজন থেকে অন্যজনে সংক্রমণ ছড়াতেই থাকবে।’
স্বাস্থ্য অধিদপ্তরের মুখপাত্র অধ্যাপক নাজমুল ইসলাম জানিয়েছেন, গত এক সপ্তাহে দেশে সংক্রমণের হার চার শতাংশ থেকে কমে তিন দশমিক ৪১ শতাংশে এসে দাঁড়িয়েছে। তিনি বলেন, ‘এ স্বস্তিকর অবস্থা ধরে রাখতে হলে প্রয়োজনীয় স্বাস্থ্যবিধি সঠিকভাবে মেনে চলা ও সবার চেষ্টায় সংক্রমণের হার আরও কমানো সম্ভব।’
এ মুহূর্তে গোটা বিশ্বে করোনা পরিস্থিতি অতীতের যে কোন সময়ের চেয়ে অনেকখানি নিয়ন্ত্রণে রয়েছে জানিয়ে অধ্যাপক নাজমুল ইসলাম বলেন, এ স্বস্তিকর অবস্থা ধরে রাখতে সবাইকে একসঙ্গে কাজ করতে হবে। দক্ষিণ-পূর্ব এশিয়ার মধ্যে ও গত এক সপ্তাহে ভারতে এক হাজার ৯৭১ জন, থাইল্যান্ডে ৮৩৪ জন, ইন্দোনেশিয়ায় ৭৬৮ জন এবং বাংলাদেশে ১৬৩ জনের মৃত্যু হয়।
স্বাস্থ্য অধিদপ্তরের সংবাদ বিজ্ঞপ্তিতে গতকাল বিকেলে বলা হয়, সকাল আটটা পর্যন্ত ২৪ ঘণ্টায় করোনায় দেশে ১৮ জনের মৃত্যু হয়েছে। তাদের মধ্যে ঢাকা ও চট্টগ্রাম বিভাগের আছেন সাতজন করে এবং রাজশাহী ও খুলনা বিভাগের দুইজন করে রোগীর মৃত্যু হয়েছে।
স্বাস্থ্য অধিদপ্তরের গত শনিবারের তথ্য অনুযায়ী, সাতদিনে দেশে এক লাখ ৭৩ হাজার ৩১৫টি নমুনা পরীক্ষা করা হয়, যা আগের সপ্তাহের চেয়ে সাত হাজার ৫৮১টি কম। এক সপ্তাহে শনাক্ত রোগীর সংখ্যা ছয় হাজার ৫৭৩ জন, যা আগের সপ্তাহের চেয়ে প্রায় ২৩ শতাংশ কম। গত এক সপ্তাহে আগের সপ্তাহের চেয়ে ৪৯ জন কম রোগীর মৃত্যু হয়েছে, অর্থাৎ আগের সপ্তাহের তুলনায় ২৩ শতাংশ মৃত্যু কমেছে।
সাতমাস পর শনাক্ত তিন শতাংশের নিচে
স্বাস্থ্য অধিদপ্তরের গতকালের তথ্য অনুযায়ী, সর্বশেষ ২৪ ঘণ্টায় দেশে ৬১৭ জনের দেহে করোনা সংক্রমণ শনাক্ত হয়েছে। এদিন নমুনা পরীক্ষা বিবেচনায় রোগী শনাক্তের হার ছিল দুই দশমিক ৯০ শতাংশ।
এর আগে গত ২৮ ফেব্রুয়ারিও শনাক্তের হার তিন শতাংশের নিচে ছিল। ওইদিন নমুনা পরীক্ষার বিপরীতে শনাক্তের হার ছিল ২ দশমিক ৮৭ শতাংশ।
একদিনে শনাক্ত হওয়া ৬১৭ জনকে নিয়ে দেশে এ পর্যন্ত ১৫ লাখ ৫৭ হাজার ৯৬৪ জনের দেহে করোনা সংক্রমণ শনাক্ত হয়েছে।
আর একদিনে মৃত্যু হওয়া ১৮ জনকে নিয়ে দেশে করোনা সংক্রমণে মোট মৃত্যুর সংখ্যা দাঁড়ালো ২৭ হাজার ৫৭৩ জনে।
করোনায় আক্রান্তদের মধ্যে একদিনে সুস্থ হয়েছেন এক হাজার ১১২ জন। এ নিয়ে করোনায় আক্রান্তদের মধ্যে মোট সুস্থ হলেন ১৫ লাখ ১৮ হাজার ৭৫৪ জন।
স্বাস্থ্য অধিদপ্তর জানিয়েছে, সর্বশেষ ২৪ ঘণ্টায় দেশে করোনার নমুনা পরীক্ষা হয়েছে ২১ হাজার ২৪৬টি। দেশে এ পর্যন্ত করোনার মোট নমুনা পরীক্ষা হয়েছে ৯৭ লাখ ৯৪ হাজার ৪৯০টি।
দেশে এ পর্যন্ত নমুনা পরীক্ষা অনুপাতে করোনা শনাক্তের হার ১৫ দশমিক ৯১ শতাংশ। শনাক্ত বিবেচনায় সুস্থতার হার ৯৭ দশমিক ৪৮ শতাংশ এবং শনাক্ত বিবেচনায় মৃত্যু হার এক দশমিক ৭৭ শতাংশ।
২৪ ঘণ্টায় মারা যাওয়া ১৮ জনের মধ্যে পুরুষ ৯ জন এবং নারী ৯ জন। দেশে এ পর্যন্ত করোনায় মৃত্যু হওয়া লোকজনের মধ্যে পুরুষ ১৭ হাজার ৬৯২ জন এবং নারী ছিলেন ৯ হাজার ৮৮১ জন।
বয়সভিত্তিক বিশ্লেষণে দেখা গেছে, ২৪ ঘণ্টায় মৃত্যু হওয়া লোকজনের মধ্যে দুইজনের বয়স ছিল ৮১ থেকে ৯০ বছরের মধ্যে। এছাড়া ৬১ থেকে ৭০ বছরের মধ্যে তিনজন, ৫১ থেকে ৬০ বছরের মধ্যে পাঁচজন, ৪১ থেকে ৫০ বছরের মধ্যে পাঁচজন, ৩১ থেকে ৪০ বছরের মধ্যে দুইজন এবং একজনের বয়স শূন্য থেকে ১০ বছরের মধ্যে ছিল। তাদের মধ্যে সরকারি হাসপাতালে ১৫ জন এবং বেসরকারি হাসপাতালে মারা গেছেন তিনজন।