ইলিশের সবচেয়ে বড় প্রজনন ক্ষেত্র নিয়ে শঙ্কা

ইলিশের চলতি ভরা মৌসুমে এখন সবচেয়ে বেশি আলোচিত বিষয় নদ-নদীতে ইলিশ সংকট। বিষয়টি নিয়ে এ বছর মৎস্য বিশেষজ্ঞদের কপালেও চিন্তার ভাঁজ পড়েছে। ইলিশ নিয়ে এমন দুঃসময়ের মধ্যে আরেকটি উদ্বেগজনক খবর পাচ্ছে ইলিশ বিশেষজ্ঞগণ। ইলিশের ষষ্ঠ অভয়াশ্রম মেঘনার মাঝে দ্বীপের মতো জেগে উঠা চরমেঘায় সরকার একটি অর্থনৈতিক অঞ্চল স্থাপনের সিদ্ধান্ত নিয়েছে।

বরিশালের হিজলা উপজেলার চারদিকেই মেঘনা নদী বেষ্টিত ইউনিয়নের নাম গৌরবদী। এই গৌরবদী ইউনিয়নভুক্ত হচ্ছে মেঘনার বুক চিরে উঠা এই দুর্গম চরমেঘা অঞ্চলটি। প্রায় ত্রিশ বছর আগে এই চরটি জেগে উঠে। এখানে বিশেষ কোন জনবসতি না থাকলেও এটি গৌরবদী ইউনিয়নের ৯নং ওয়ার্ডভুক্ত। এখানে বাংলাদেশ অর্থনৈতিক অঞ্চল কর্তৃপক্ষ (বেজা) তাদের আওতাধীন একটি নতুন অঞ্চল গড়ে তোলার পরিকল্পনা করছে বলে জানা গেছে।

মৎস্য অধিদপ্তরের দায়িত্বশীলরা বলছেন, চরমেঘায় অর্থনৈতিক অঞ্চল স্থাপিত হলে তা হবে ইলিশের জন্য মারাত্মক ক্ষতির কারণ। মেঘনার এ অংশটি ইলিশসহ বিভিন্ন প্রজাতির মৎস্যপ্রাণীর সবচেয়ে বড় প্রজননক্ষেত্র। বিশেষজ্ঞদের মতে, এতে শুধু ইলিশ নয়, মেঘনায় জীববৈচিত্রই হুমকির মুখে পড়বে। এর আগে ইলিশের আরেক অভয়াশ্রম বরগুনার পায়রা নদীর তীরে তাপবিদ্যুৎ কেন্দ্র স্থাপনের পর সেখানেও ইলিশসহ অন্য মৎস্য প্রাণিকুলের নেতিবাচক প্রভাব পড়েছে।

বরিশালের জেলা প্রশাসক মো. জসীম উদ্দীন হায়দার জানান, চরমেঘায় অর্থনৈতিক অঞ্চল স্থাপনের জন্য প্রস্তাব ইতোমধ্যে মন্ত্রণালয়ে পাঠানো হয়েছে। অনুমোদিত হলেই প্রশাসনিক কার্যক্রম শুরু হবে। সম্প্রতি তিনি জানতে পেরেছেন ওই এলাকাটি ইলিশসহ অন্য মাছের প্রজননক্ষেত্র। দেশের মৎস্যসম্পদ রক্ষার বিষয়টিও তারা গুরুত্ব সহকারে নিয়েছেন। প্রজননক্ষেত্র নিরাপদ রেখে অর্থনৈতিক অঞ্চল স্থাপনের বিষয়ে নতুন করে ভাবা হচ্ছে।

উল্লেখ্য, এর আগে ২০১৭ সালে পরমাণু শক্তি কমিশন চরমেঘায় ২ হাজার ৪০০ মেগাওয়াট ক্ষমতাসম্পন্ন পারমাণবিক বিদ্যুৎকেন্দ্র স্থাপনের উদ্যোগ নিলে মৎস্য অধিদপ্তরের তীব্র আপত্তির মুখে তা নাকচ করা হয়।

মৎস্য অধিদপ্তরের বরিশাল বিভাগীয় উপপরিচালক মো. আনিছুর রহমান বলেন, চরমেঘায় অর্থনৈতিক অঞ্চল হলে মৎস্যসম্পদের কি ধরনের ক্ষতি হতে পারে তার প্রতিবেদন অধিদপ্তরের প্রধান কার্যালয় থেকে তার কাছে চাওয়া হলে জেলা মৎস্য কর্মকর্তা মো. আসাদুজ্জামনের সঙ্গে সমম্বয় করে তিনি (উপ-পরিচালক) এ বিষয়ে বিস্তারিত প্রতিবেদন গত সপ্তাহে মন্ত্রণালয়ে পাঠিয়েছেন।

মো. আনিছুর রহমান আরও বলেন, হিজলা-মেহেন্দিগঞ্জ উপজেলার পাশ দিয়ে প্রবাহিত মেঘনা দেশের সব প্রজাতির মৎস্যসম্পদের বড় প্রজননক্ষেত্র। চরমেঘায় অর্থনৈতিক অঞ্চল স্থাপিত হলে সেখানে গড়ে উঠবে শিল্প-কারখানা। এর বিরূপ প্রভাব মেঘনার মৎস্যসম্পদের ওপর পড়বে। এর বেশি কিছু বলতে তিনি অপারগতা প্রকাশ করেন।

অর্থনৈতিক অঞ্চল হলে কি ধরনের ক্ষতি হতে পারে সে বিষয়ে নাম প্রকাশে অনিচ্ছুক মৎস্য অধিদপ্তরের মাঠ পর্যায়ের এক কর্মকর্তা বলেন, ইলিশসহ অন্য মাছ প্রজননের জন্য নদীর নির্জন এলাকা প্রয়োজন। চরমেঘাসংলগ্ন মেঘনা তেমনই একটি নির্জন নদী। প্রজননের জন্য মা মাছ গত কয়েক বছরে এ এলাকাটি বেছে নিয়েছে। সেখানে অর্থনৈতিক অঞ্চল হলে শিল্প-কারখানায় এলাকাটি কর্মমুখর হবে। নিয়মিত সেখানে বিভিন্ন ধরনের নৌযান আসা যাওয়া করবে। এতে ওই অঞ্চলের নীরবতা নষ্ট হবে। কলকারখানার বর্জ্য পড়বে নদীতে। মেঘনার পানি উষ্ণ হবে। ফলে ইলিশসহ সব ধরনের মাছ ওই এলাকা ত্যাগ করবে। অর্থনৈতিক অঞ্চল হলে দেশের অর্থনীতিতে কিছুটা সুবাতাস বইবে। হয়তো ২০/২৫ হাজার মানুষের কর্মসংস্থান হবে। কিন্তু এই অঞ্চল থেকে মাছ প্রজনন বন্ধ করে দিলে জেলেসহ মৎস্য ক্ষেত্রের লক্ষাধিক মানুষ বেকার হবে।

রাজশাহী বিশ্ববিদ্যালয়ের মৎস্যবিজ্ঞান বিভাগের অধ্যাপক ড. ইয়ামিন হোসেন হিজলার চরমেঘায় অর্থনৈতিক অঞ্চল স্থাপনের সিদ্ধান্ত মৎস্যসম্পদের জন্য ভয়ংকর ক্ষতি বলে মন্তব্য করেছেন। তিনি ২০১৯ সাল থেকে বিশ্বব্যাংকের আর্থিক সহায়তায় দেশের উপকূলীয় অঞ্চলে ‘স্টক অ্যাসেসমেন্ট অব কমার্শিয়ালি ইনপরটেন্ট ফিসেশ ইন দ্যা বে অব বেঙ্গল’ নামক গবেষক দলের নেতৃত্ব দিচ্ছেন। প্রায় ২০ বছর আগে প্রথম চাকরিজীবনে তিনি হিজলা উপজেলা মৎস্য কর্মকর্তা ছিলেন। যে কারণে মেঘনার মৎস্যসম্পদ নিয়ে তার ব্যাপক ধারণাও রয়েছে।

ড. ইয়ামিন বলেন, হিজলা-মেহেন্দিগঞ্জের পাশ দিয়ে প্রবাহিত মেঘনা মাছের প্রজনন উপযোগী নির্জন নদী। এ কারণে ওই অঞ্চলে শুধু ইলিশ নয়, ক্যাটফিস প্রজাতির পাঙ্গাস, আইড়, বোয়াল মাছেরও বড় প্রজননক্ষেত্র। তাছাড়া ক্যাটফিস প্রজাতির মাছের প্রধান খাবার হচ্ছে ইলিশের ডিম। এই ডিমের লোভে বিভিন্ন নদীর ক্যাটফিস মেঘনায় ছুটে আসে। কিন্তু এখানে অর্থনৈতিক অঞ্চল হলে কি হতে পারে তার উদহারণ হিসেবে ড. ইয়ামিন বলেন, যমুনা সেতুর টাঙ্গাইল প্রান্তে আগে রুই, কাতল ও মৃগেল মাছের প্রজননক্ষেত্র ছিল। সেতু স্থাপনে তা হারিয়ে গেছে।

অপরদিকে বেজার দায়িত্বশীল সূত্র থেকে জানা গেছে, ২০৩০ সালের মধ্যে দেশে মোট ১০০টি অর্থনৈতিক অঞ্চল স্থাপনের সিদ্ধান্ত নিয়েছে বেজা। এরই ধারাবাহিকতায় ২০২০ সালের আগস্টে বেজার গভর্নিং বোর্ডের সভায় হিজলার চরমেঘাসহ দেশের ১০ স্থানে ১০টি অর্থনৈতিক অঞ্চল অনুমোদিত হয়।

জানা গেছে, বরিশাল অঞ্চলে একটি অর্থনৈতিক অঞ্চল প্রতিষ্ঠার জন্য ‘বেজা’ কর্তৃপক্ষ ইতোপূর্বে আগৈলঝাড়া উপজেলার পয়সারহাটে ৩০০ একর জমি পছন্দ করলেও জমি ভরাট ও অধিগ্রহণ ব্যয় দেখিয়ে বেজা সেখান থেকে পিছুহটে। পরে ঢাকা-বরিশাল মহাসড়কের উজিরপুরের জয়শ্রীতে ২০০ একরের আরেকটি জমি পছন্দের পরও একই কারণ দেখায় বেজা। এরপরেই স্থানীয় এক শীর্ষ জনপ্রতিনিধির মাধ্যমে বেজার চোখ পড়ে চরমেঘায়। চরমেঘার ২ হাজার ২৫৫ দশমিক ৯৬ একর খাসজমিতে নেই কোন স্থায়ী জনবসতি। এখানে অর্থনৈতিক অঞ্চল স্থাপিত হলে ভূমি অধিগ্রহণ কিম্বা পুনর্বাসন ব্যয় হবে না। নদীপথের বিষয়টিকেও বিশেষ গুরুত্ব দেয়া হয়েছে।

সোমবার, ০৪ অক্টোবর ২০২১ , ১৯ আশ্বিন ১৪২৮ ২৫ সফর ১৪৪৩

ইলিশের সবচেয়ে বড় প্রজনন ক্ষেত্র নিয়ে শঙ্কা

মানবেন্দ্র বটব্যাল, বরিশাল

image

ইলিশের চলতি ভরা মৌসুমে এখন সবচেয়ে বেশি আলোচিত বিষয় নদ-নদীতে ইলিশ সংকট। বিষয়টি নিয়ে এ বছর মৎস্য বিশেষজ্ঞদের কপালেও চিন্তার ভাঁজ পড়েছে। ইলিশ নিয়ে এমন দুঃসময়ের মধ্যে আরেকটি উদ্বেগজনক খবর পাচ্ছে ইলিশ বিশেষজ্ঞগণ। ইলিশের ষষ্ঠ অভয়াশ্রম মেঘনার মাঝে দ্বীপের মতো জেগে উঠা চরমেঘায় সরকার একটি অর্থনৈতিক অঞ্চল স্থাপনের সিদ্ধান্ত নিয়েছে।

বরিশালের হিজলা উপজেলার চারদিকেই মেঘনা নদী বেষ্টিত ইউনিয়নের নাম গৌরবদী। এই গৌরবদী ইউনিয়নভুক্ত হচ্ছে মেঘনার বুক চিরে উঠা এই দুর্গম চরমেঘা অঞ্চলটি। প্রায় ত্রিশ বছর আগে এই চরটি জেগে উঠে। এখানে বিশেষ কোন জনবসতি না থাকলেও এটি গৌরবদী ইউনিয়নের ৯নং ওয়ার্ডভুক্ত। এখানে বাংলাদেশ অর্থনৈতিক অঞ্চল কর্তৃপক্ষ (বেজা) তাদের আওতাধীন একটি নতুন অঞ্চল গড়ে তোলার পরিকল্পনা করছে বলে জানা গেছে।

মৎস্য অধিদপ্তরের দায়িত্বশীলরা বলছেন, চরমেঘায় অর্থনৈতিক অঞ্চল স্থাপিত হলে তা হবে ইলিশের জন্য মারাত্মক ক্ষতির কারণ। মেঘনার এ অংশটি ইলিশসহ বিভিন্ন প্রজাতির মৎস্যপ্রাণীর সবচেয়ে বড় প্রজননক্ষেত্র। বিশেষজ্ঞদের মতে, এতে শুধু ইলিশ নয়, মেঘনায় জীববৈচিত্রই হুমকির মুখে পড়বে। এর আগে ইলিশের আরেক অভয়াশ্রম বরগুনার পায়রা নদীর তীরে তাপবিদ্যুৎ কেন্দ্র স্থাপনের পর সেখানেও ইলিশসহ অন্য মৎস্য প্রাণিকুলের নেতিবাচক প্রভাব পড়েছে।

বরিশালের জেলা প্রশাসক মো. জসীম উদ্দীন হায়দার জানান, চরমেঘায় অর্থনৈতিক অঞ্চল স্থাপনের জন্য প্রস্তাব ইতোমধ্যে মন্ত্রণালয়ে পাঠানো হয়েছে। অনুমোদিত হলেই প্রশাসনিক কার্যক্রম শুরু হবে। সম্প্রতি তিনি জানতে পেরেছেন ওই এলাকাটি ইলিশসহ অন্য মাছের প্রজননক্ষেত্র। দেশের মৎস্যসম্পদ রক্ষার বিষয়টিও তারা গুরুত্ব সহকারে নিয়েছেন। প্রজননক্ষেত্র নিরাপদ রেখে অর্থনৈতিক অঞ্চল স্থাপনের বিষয়ে নতুন করে ভাবা হচ্ছে।

উল্লেখ্য, এর আগে ২০১৭ সালে পরমাণু শক্তি কমিশন চরমেঘায় ২ হাজার ৪০০ মেগাওয়াট ক্ষমতাসম্পন্ন পারমাণবিক বিদ্যুৎকেন্দ্র স্থাপনের উদ্যোগ নিলে মৎস্য অধিদপ্তরের তীব্র আপত্তির মুখে তা নাকচ করা হয়।

মৎস্য অধিদপ্তরের বরিশাল বিভাগীয় উপপরিচালক মো. আনিছুর রহমান বলেন, চরমেঘায় অর্থনৈতিক অঞ্চল হলে মৎস্যসম্পদের কি ধরনের ক্ষতি হতে পারে তার প্রতিবেদন অধিদপ্তরের প্রধান কার্যালয় থেকে তার কাছে চাওয়া হলে জেলা মৎস্য কর্মকর্তা মো. আসাদুজ্জামনের সঙ্গে সমম্বয় করে তিনি (উপ-পরিচালক) এ বিষয়ে বিস্তারিত প্রতিবেদন গত সপ্তাহে মন্ত্রণালয়ে পাঠিয়েছেন।

মো. আনিছুর রহমান আরও বলেন, হিজলা-মেহেন্দিগঞ্জ উপজেলার পাশ দিয়ে প্রবাহিত মেঘনা দেশের সব প্রজাতির মৎস্যসম্পদের বড় প্রজননক্ষেত্র। চরমেঘায় অর্থনৈতিক অঞ্চল স্থাপিত হলে সেখানে গড়ে উঠবে শিল্প-কারখানা। এর বিরূপ প্রভাব মেঘনার মৎস্যসম্পদের ওপর পড়বে। এর বেশি কিছু বলতে তিনি অপারগতা প্রকাশ করেন।

অর্থনৈতিক অঞ্চল হলে কি ধরনের ক্ষতি হতে পারে সে বিষয়ে নাম প্রকাশে অনিচ্ছুক মৎস্য অধিদপ্তরের মাঠ পর্যায়ের এক কর্মকর্তা বলেন, ইলিশসহ অন্য মাছ প্রজননের জন্য নদীর নির্জন এলাকা প্রয়োজন। চরমেঘাসংলগ্ন মেঘনা তেমনই একটি নির্জন নদী। প্রজননের জন্য মা মাছ গত কয়েক বছরে এ এলাকাটি বেছে নিয়েছে। সেখানে অর্থনৈতিক অঞ্চল হলে শিল্প-কারখানায় এলাকাটি কর্মমুখর হবে। নিয়মিত সেখানে বিভিন্ন ধরনের নৌযান আসা যাওয়া করবে। এতে ওই অঞ্চলের নীরবতা নষ্ট হবে। কলকারখানার বর্জ্য পড়বে নদীতে। মেঘনার পানি উষ্ণ হবে। ফলে ইলিশসহ সব ধরনের মাছ ওই এলাকা ত্যাগ করবে। অর্থনৈতিক অঞ্চল হলে দেশের অর্থনীতিতে কিছুটা সুবাতাস বইবে। হয়তো ২০/২৫ হাজার মানুষের কর্মসংস্থান হবে। কিন্তু এই অঞ্চল থেকে মাছ প্রজনন বন্ধ করে দিলে জেলেসহ মৎস্য ক্ষেত্রের লক্ষাধিক মানুষ বেকার হবে।

রাজশাহী বিশ্ববিদ্যালয়ের মৎস্যবিজ্ঞান বিভাগের অধ্যাপক ড. ইয়ামিন হোসেন হিজলার চরমেঘায় অর্থনৈতিক অঞ্চল স্থাপনের সিদ্ধান্ত মৎস্যসম্পদের জন্য ভয়ংকর ক্ষতি বলে মন্তব্য করেছেন। তিনি ২০১৯ সাল থেকে বিশ্বব্যাংকের আর্থিক সহায়তায় দেশের উপকূলীয় অঞ্চলে ‘স্টক অ্যাসেসমেন্ট অব কমার্শিয়ালি ইনপরটেন্ট ফিসেশ ইন দ্যা বে অব বেঙ্গল’ নামক গবেষক দলের নেতৃত্ব দিচ্ছেন। প্রায় ২০ বছর আগে প্রথম চাকরিজীবনে তিনি হিজলা উপজেলা মৎস্য কর্মকর্তা ছিলেন। যে কারণে মেঘনার মৎস্যসম্পদ নিয়ে তার ব্যাপক ধারণাও রয়েছে।

ড. ইয়ামিন বলেন, হিজলা-মেহেন্দিগঞ্জের পাশ দিয়ে প্রবাহিত মেঘনা মাছের প্রজনন উপযোগী নির্জন নদী। এ কারণে ওই অঞ্চলে শুধু ইলিশ নয়, ক্যাটফিস প্রজাতির পাঙ্গাস, আইড়, বোয়াল মাছেরও বড় প্রজননক্ষেত্র। তাছাড়া ক্যাটফিস প্রজাতির মাছের প্রধান খাবার হচ্ছে ইলিশের ডিম। এই ডিমের লোভে বিভিন্ন নদীর ক্যাটফিস মেঘনায় ছুটে আসে। কিন্তু এখানে অর্থনৈতিক অঞ্চল হলে কি হতে পারে তার উদহারণ হিসেবে ড. ইয়ামিন বলেন, যমুনা সেতুর টাঙ্গাইল প্রান্তে আগে রুই, কাতল ও মৃগেল মাছের প্রজননক্ষেত্র ছিল। সেতু স্থাপনে তা হারিয়ে গেছে।

অপরদিকে বেজার দায়িত্বশীল সূত্র থেকে জানা গেছে, ২০৩০ সালের মধ্যে দেশে মোট ১০০টি অর্থনৈতিক অঞ্চল স্থাপনের সিদ্ধান্ত নিয়েছে বেজা। এরই ধারাবাহিকতায় ২০২০ সালের আগস্টে বেজার গভর্নিং বোর্ডের সভায় হিজলার চরমেঘাসহ দেশের ১০ স্থানে ১০টি অর্থনৈতিক অঞ্চল অনুমোদিত হয়।

জানা গেছে, বরিশাল অঞ্চলে একটি অর্থনৈতিক অঞ্চল প্রতিষ্ঠার জন্য ‘বেজা’ কর্তৃপক্ষ ইতোপূর্বে আগৈলঝাড়া উপজেলার পয়সারহাটে ৩০০ একর জমি পছন্দ করলেও জমি ভরাট ও অধিগ্রহণ ব্যয় দেখিয়ে বেজা সেখান থেকে পিছুহটে। পরে ঢাকা-বরিশাল মহাসড়কের উজিরপুরের জয়শ্রীতে ২০০ একরের আরেকটি জমি পছন্দের পরও একই কারণ দেখায় বেজা। এরপরেই স্থানীয় এক শীর্ষ জনপ্রতিনিধির মাধ্যমে বেজার চোখ পড়ে চরমেঘায়। চরমেঘার ২ হাজার ২৫৫ দশমিক ৯৬ একর খাসজমিতে নেই কোন স্থায়ী জনবসতি। এখানে অর্থনৈতিক অঞ্চল স্থাপিত হলে ভূমি অধিগ্রহণ কিম্বা পুনর্বাসন ব্যয় হবে না। নদীপথের বিষয়টিকেও বিশেষ গুরুত্ব দেয়া হয়েছে।