ইলিশ শিকার ২২ দিন বন্ধ

ইলিশের প্রজনন নির্বিঘ্নের মাধ্যমে উৎপাদন বৃদ্ধির লক্ষ্যে গতকাল মধ্যরাত থেকে ২২ দিনের জন্য দেশের উপকূলের ৭ হাজার বর্গ কিলোমিটার এলাকায় সব ধরনের মাছ এবং অভ্যন্তরীণ নদ-নদীতে ইলিশের আহরণসহ সারাদেশে পরিবহন ও বিপণনে নিষেধাজ্ঞা কার্যকর হয়েছে। মৎস্য বিজ্ঞানীদের সুপারিশের ভিওত্তিতে ইতিপূর্বে আশ্বিনের বড় পূর্ণিমার আগে পরের ২২ দিন এই নিষেধাজ্ঞা কার্যকর হলেও সাম্প্রতিক বছরগুলোতে ইলিশের প্রজনন সময় নিয়ে মতপার্থক্য দেখা দেয়ায় নিষেধাজ্ঞার সময়সীমায় কিছু পরিবর্তন করে নিষেধাজ্ঞার সময় কিছুটা এগিয়ে আনা হয়েছে। নিষেধাজ্ঞা কার্যকর করতে সারাদেশের মতো দক্ষিণাঞ্চলসহ উপকূলভাগে পুলিশ, র‌্যাব, কোস্টগার্ড এবং বাংলাদেশ নৌবাহিনী অভ্যন্তরীণ ও উপকূলীয় নদ-নদীসহ উপকূলভাগে নজরদারি জোরদার করছে। এ লক্ষ্যে বিভাগ থেকে ইউনিয়ন পর্যায়ে টাস্কফোর্সও গঠন করা হয়েছে।

একটানা ২২ দিন ইলিশ আহরণে বিরত বিশাল জেলে সম্প্রদায়ের সামাজিক নিরাপত্তা নিশ্চিতকরণে ২০ কেজি করে চাল প্রদান করা হবে। এর মধ্যে শুধুমাত্র বরিশাল বিভাগের সাড়ে ৩ লাখ জেলের মধ্যে ৩ লাখ ৭ হাজার ১২৪ জনকে প্রায় ৭ হাজার টন চাল বিতরণ করা হবে আগামী সপ্তাহেই। আশ্বিনের ভরা মৌসুমে ভোলার পশ্চিম আউলিয়া পয়েন্ট-তজুমদ্দিন, মনপুরা দ্বীপ, পটুয়াখালীর কলাপাড়ার লতাচাপলি পয়েন্টের ধলচর দ্বীপ, মৌলভীরচর দ্বীপ ও কালিরচর দ্বীপ, মায়ানী পয়েন্টের মিরসরাই ছাড়াও কুতুবদিয়া পয়েন্ট এলাকায় মা ইলিশের অত্যধিক প্রাচুর্য থাকায় ওইসব এলাকার ৭ হাজার বর্গ কিলোমিটারে আগামী ২২ দিনের জন্য সব ধরনের মৎস্য আহরণ সম্পূর্ণ নিষিদ্ধ থাকছে।

‘হিলসা ফিসারিজ ম্যানেজমেন্ট অ্যাকশন প্ল্যান’ এর আওতায় ২০০৫ সালেই প্রথম প্রধান প্রজনন মৌসুমে ১০ দিন ইলিশের আহরণ বন্ধ রাখা হয়। মৎস্য বিজ্ঞানীদের সুপারিশে ২০১১ সালে তা ১১ দিন এবং ২০১৫ সালে ১৫ দিন ও ২০১৬ সালে থেকে ২২ দিনে উন্নীত করা হয়েছে। ইলিশ নিয়ে নানামুখী বৈজ্ঞানিক পদক্ষেপ গ্রহণের ফলে দেশে ইলিশের উৎপাদন এক সময়ের ১ দশমিক ৯৮ লাখ টন থেকে বর্তমানে সাড়ে ৫ লাখ টনের উপরে উন্নীত হয়েছে। এমনকি সারা বিশে^র ৬০%-এরও বেশি ইলিশ এখন বাংলাদেশেই উৎপাদন হচ্ছে। তবে এ বছর নদ-নদীতে ইলিশের আকাল ছিল।

প্রতিদিন স্রোতের বিপরীতে ৭১ কিলোমিটার পর্যন্ত ছুটে চলা অভিপ্রয়াণী মাছ ইলিশ জীবনচক্রে স্বাদুপানি থেকে সমুদ্রের নোনা পানিতে এবং সেখান থেকে পুনরায় স্বাদু পানিতে অভিপ্রয়াণ করে। মৎস্য বিজ্ঞানীদের মতে, উপকূলের ৭ হাজার বর্গ কিলোমিটারের মূল প্রজনন ক্ষেত্রে মুক্ত-ভাসমান অবস্থায় ছাড়া ডিম থেকে ফুটে বের হয়ে ইলিশের লার্ভা, স্বাদুপানি ও নোনাপানির নার্সারি ক্ষেত্রসমূহে বিচরণ করে খাবার খেয়ে বড় হতে থাকে। নার্সারি ক্ষেত্রসমূহে ৭-১০ সপ্তাহ ভেসে বেড়াবার পরে জাটকা হিসেবে সমুদ্রে চলে যায় পরিপক্বতা অর্জনের জন্য। বঙ্গোপসাগরের বিভিন্ন এলাকায় ১২-১৮ মাস অবস্থানের পরে পরিপক্ব হয়েই পূর্র্ণাঙ্গ ইলিশ হিসেবে প্রজননের লক্ষ্যে আবার স্বাদুপানিতে ফিরে এসে ডিম ছাড়ে।

সোমবার, ০৪ অক্টোবর ২০২১ , ১৯ আশ্বিন ১৪২৮ ২৫ সফর ১৪৪৩

ইলিশ শিকার ২২ দিন বন্ধ

নিজস্ব বার্তা পরিবেশক, বরিশাল

ইলিশের প্রজনন নির্বিঘ্নের মাধ্যমে উৎপাদন বৃদ্ধির লক্ষ্যে গতকাল মধ্যরাত থেকে ২২ দিনের জন্য দেশের উপকূলের ৭ হাজার বর্গ কিলোমিটার এলাকায় সব ধরনের মাছ এবং অভ্যন্তরীণ নদ-নদীতে ইলিশের আহরণসহ সারাদেশে পরিবহন ও বিপণনে নিষেধাজ্ঞা কার্যকর হয়েছে। মৎস্য বিজ্ঞানীদের সুপারিশের ভিওত্তিতে ইতিপূর্বে আশ্বিনের বড় পূর্ণিমার আগে পরের ২২ দিন এই নিষেধাজ্ঞা কার্যকর হলেও সাম্প্রতিক বছরগুলোতে ইলিশের প্রজনন সময় নিয়ে মতপার্থক্য দেখা দেয়ায় নিষেধাজ্ঞার সময়সীমায় কিছু পরিবর্তন করে নিষেধাজ্ঞার সময় কিছুটা এগিয়ে আনা হয়েছে। নিষেধাজ্ঞা কার্যকর করতে সারাদেশের মতো দক্ষিণাঞ্চলসহ উপকূলভাগে পুলিশ, র‌্যাব, কোস্টগার্ড এবং বাংলাদেশ নৌবাহিনী অভ্যন্তরীণ ও উপকূলীয় নদ-নদীসহ উপকূলভাগে নজরদারি জোরদার করছে। এ লক্ষ্যে বিভাগ থেকে ইউনিয়ন পর্যায়ে টাস্কফোর্সও গঠন করা হয়েছে।

একটানা ২২ দিন ইলিশ আহরণে বিরত বিশাল জেলে সম্প্রদায়ের সামাজিক নিরাপত্তা নিশ্চিতকরণে ২০ কেজি করে চাল প্রদান করা হবে। এর মধ্যে শুধুমাত্র বরিশাল বিভাগের সাড়ে ৩ লাখ জেলের মধ্যে ৩ লাখ ৭ হাজার ১২৪ জনকে প্রায় ৭ হাজার টন চাল বিতরণ করা হবে আগামী সপ্তাহেই। আশ্বিনের ভরা মৌসুমে ভোলার পশ্চিম আউলিয়া পয়েন্ট-তজুমদ্দিন, মনপুরা দ্বীপ, পটুয়াখালীর কলাপাড়ার লতাচাপলি পয়েন্টের ধলচর দ্বীপ, মৌলভীরচর দ্বীপ ও কালিরচর দ্বীপ, মায়ানী পয়েন্টের মিরসরাই ছাড়াও কুতুবদিয়া পয়েন্ট এলাকায় মা ইলিশের অত্যধিক প্রাচুর্য থাকায় ওইসব এলাকার ৭ হাজার বর্গ কিলোমিটারে আগামী ২২ দিনের জন্য সব ধরনের মৎস্য আহরণ সম্পূর্ণ নিষিদ্ধ থাকছে।

‘হিলসা ফিসারিজ ম্যানেজমেন্ট অ্যাকশন প্ল্যান’ এর আওতায় ২০০৫ সালেই প্রথম প্রধান প্রজনন মৌসুমে ১০ দিন ইলিশের আহরণ বন্ধ রাখা হয়। মৎস্য বিজ্ঞানীদের সুপারিশে ২০১১ সালে তা ১১ দিন এবং ২০১৫ সালে ১৫ দিন ও ২০১৬ সালে থেকে ২২ দিনে উন্নীত করা হয়েছে। ইলিশ নিয়ে নানামুখী বৈজ্ঞানিক পদক্ষেপ গ্রহণের ফলে দেশে ইলিশের উৎপাদন এক সময়ের ১ দশমিক ৯৮ লাখ টন থেকে বর্তমানে সাড়ে ৫ লাখ টনের উপরে উন্নীত হয়েছে। এমনকি সারা বিশে^র ৬০%-এরও বেশি ইলিশ এখন বাংলাদেশেই উৎপাদন হচ্ছে। তবে এ বছর নদ-নদীতে ইলিশের আকাল ছিল।

প্রতিদিন স্রোতের বিপরীতে ৭১ কিলোমিটার পর্যন্ত ছুটে চলা অভিপ্রয়াণী মাছ ইলিশ জীবনচক্রে স্বাদুপানি থেকে সমুদ্রের নোনা পানিতে এবং সেখান থেকে পুনরায় স্বাদু পানিতে অভিপ্রয়াণ করে। মৎস্য বিজ্ঞানীদের মতে, উপকূলের ৭ হাজার বর্গ কিলোমিটারের মূল প্রজনন ক্ষেত্রে মুক্ত-ভাসমান অবস্থায় ছাড়া ডিম থেকে ফুটে বের হয়ে ইলিশের লার্ভা, স্বাদুপানি ও নোনাপানির নার্সারি ক্ষেত্রসমূহে বিচরণ করে খাবার খেয়ে বড় হতে থাকে। নার্সারি ক্ষেত্রসমূহে ৭-১০ সপ্তাহ ভেসে বেড়াবার পরে জাটকা হিসেবে সমুদ্রে চলে যায় পরিপক্বতা অর্জনের জন্য। বঙ্গোপসাগরের বিভিন্ন এলাকায় ১২-১৮ মাস অবস্থানের পরে পরিপক্ব হয়েই পূর্র্ণাঙ্গ ইলিশ হিসেবে প্রজননের লক্ষ্যে আবার স্বাদুপানিতে ফিরে এসে ডিম ছাড়ে।