আজ বিশ্ব শিশু দিবস

সরকার সব শিশুর সমঅধিকার নিশ্চিত করতে কাজ করে যাচ্ছে : প্রধানমন্ত্রী

অক্টোবর মাসের প্রথম সোমবার আজ। বিশ্ব শিশু দিবস। বিশ্বের অন্যান্য দেশের মতো বাংলাদেশেও দিবসটি পালন করা হচ্ছে। একই সঙ্গে পালিত হচ্ছে শিশু অধিকার সপ্তাহ।

বিশ্ব শিশু দিবস ও শিশু অধিকার সপ্তাহের এবারের প্রতিপাদ্য : ‘শিশুর জন্য বিনিয়োগ করি, সমৃদ্ধ দেশ গড়ি’। শিশু দিবস ও শিশু অধিকার সপ্তাহ উপলক্ষে বাণী দিয়েছেন প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা।

দেশের সব শিশুর সমঅধিকার নিশ্চিত করে সুন্দব ভবিষ্যৎ গড়ার পাশাপাশি শিশুর সার্বিক বিকাশ ও অধিকার বাস্তবায়নে এবং শিশুদের প্রতি সহিংস আচরণ নির্যাতন বন্ধের ক্ষেত্রে বাবা-মা, পরিবার ও সমাজের সবাইকে দায়িত্ব পালন করার আহ্বান জানিয়ে প্রধানমন্ত্রী, ‘শিশুর অধিকার বাস্তবায়নে মা-বাবা, পরিবার ও সমাজের সবার ভূমিকা অপরিসীম। তিনি সরকারের পাশাপাশি বেসরকারি সংস্থাসহ সচেতন নাগরিককে শিশুদের কল্যাণে এগিয়ে আসার আহ্বান জানান।’

শিশুদের জন্য বিভিন্ন কর্মকা- তুলে ধরে প্রধানমন্ত্রী বলেন, ‘আজকের শিশুরাই আগামীতে নেতৃত্ব দেবে। আওয়ামী লীগ সরকার শিশুদের স্বাস্থ্য, শিক্ষা, বিনোদন ও কল্যাণ নিশ্চিত করতে ব্যাপক কর্মসূচি বাস্তবায়ন করে যাচ্ছে। শিশুশ্রম নিরসন নীতি-২০১০, শিশু আইন ২০১৩, প্রতিবন্ধী ব্যক্তিদের অধিকার ও সুরক্ষা আইন-২০১৩ এবং শিশু দিবাযতœ কেন্দ্র আইন-২০২১ প্রণয়ন করেছি।’ প্রধানমন্ত্রী আরও বলেন, ‘পথশিশু, ঝুঁকিপূর্ণ কাজে নিয়োজিত শিশু, বিদ্যালয় থেকে ঝরেপড়া ও প্রতিবন্ধী শিশুদের কল্যাণে আমরা আর্থিক সহায়তা প্রদান করছি। আমরা পরিত্যক্ত শিশুদের সেবা ও ভাতা প্রদান, পথশিশুদের পুনর্বাসনসহ তাদের জীবনমাান উন্নত করতে বিভিন্ন কার্যক্রম বাস্তবায়ন করে যাচ্ছি।’

শিশু দিবস শিশুদের নিয়ে উদযাপিত একটি দিবস। এটি পৃথিবীর বিভিন্ন দেশে বিভিন্ন সময় পালিত হয়ে থাকে। শিশু দিবসটি ১৯২০ সালের ২৩ এপ্রিল প্রথমবার তুরস্কে পালিত হয়েছিল।

জাতির জনক বঙ্গবন্ধু শেখ মুজিবুর রহমানের জন্মদিনটিকে বাংলাদেশে শিশু দিবস হিসেবে পালনের সিদ্ধান্ত নেয়া হয় ১৯৯৬ সালে। আর অক্টোবর মাসের প্রথম সোমবার পালন করা হয় বিশ্ব শিশু দিবস।

শিশু দিবসটি পালনের সিদ্ধান্ত গ্রহণ করা হয় এক বিশেষ সময়ে। দ্বিতীয় বিশ্বযুদ্ধের পরপরই সিদ্ধান্ত নেয়া হয়। দ্বিতীয় বিশ্বযুদ্ধের ভয়াবহতা শিশুদের অধিকার নিয়ে নতুন করে ভাবতে বাধ্য করে। এ যুদ্ধে অসংখ্য শিশু মারা যায়। অসুস্থ হয়ে পড়ে আরও অনেক শিশু। এসব শিশুদের রক্ষা ও তাদের কল্যাণে এগিয়ে আসে জাতিসংঘ কল্যাণ তহবিল (ইউনিসেফ)। শিশুদের নিরাপত্তা ও মানসিক বিকাশে জনগণের মধ্যে সচেতনতা বৃদ্ধির লক্ষ্যে তারা নানা কর্মসূচি গ্রহণ করে। এর অংশ হিসেবে তারা একটি দিনকে শিশুদের উৎসর্গ করার প্রয়োজনীয়তা অনুধাবন করে। তাই তারা বিশ্ব শিশু দিবস পালনের সিদ্ধান্ত গ্রহণ করে। ১৯৫৪ সালে জাতিসংঘের সাধারণ পরিষদে বিশ্বব্যাপী দিবসটি পালনের সিদ্ধান্ত গ্রহণ করা হয়।

উন্নয়নকর্মী স্বপনা রেজা বলেন, একজন সাধারণ মানুষের মতোই একটি শিশুর অধিকার সমান। মানুষের মৌলিক অধিকার- অন্ন, বস্ত্র, বাসস্থান, চিকিৎসা ও শিক্ষা এই পাঁচটি বিষয়কে যদি আমরা পুরোপুরিভাবে শিশুদের জন্য নিশ্চিত করতে পারি, তাহলে তাদেরকে সুনাগরিক হিসেবে গড়ে তোলা হয়তোবা খুব কঠিন হবে না। নিরাপদ ও সুরক্ষিত জীবন শিশুর অন্যতম অধিকার। কিন্তু আজও দারিদ্র্য, পুষ্টিহীনতা ও নানা প্রাণঘাতী রোগ প্রতিদিনই হাজার হাজার শিশুর মৃত্যু ঘটাচ্ছে। শিশুদের বেঁচে থাকার জন্য ন্যূনতম যে অধিকারসমূহ সমাজের কাছে পাওনা, তা যথাযথভাবে দিতে পারলেই শিশুদের অধিকার অনেকটাই পূরণ করা সম্ভব।

বিশ্ব শিশু দিবস উপলক্ষে শিশু একাডেমির সাবেক পরিচালক আনজির লিটন বলেন, ‘শিশুর জন্য ‘হ্যাঁ’ বলুন। আমাদের ইতিবাচকতাই তৈরি করতে পারে তাদের সুন্দর ভবিষ্যৎ, বদলে দিতে পারে অসহায় ও নির্যাতিত শিশুদের জীবন। এতে যেমন একটি দেশ ও জাতি সমৃদ্ধ হবে, তেমনি বিশ্ব হবে আলোকিত। তাই শিশুদের মানসিক বিকাশে উপযুক্ত পরিবেশ সৃষ্টির চেষ্টা এবং তাদের অধিকারগুলো প্রদানের প্রয়াস আমাদের সবার থাকা উচিত। শুধু নিজের শিশু নয়, সমাজের অবহেলিত অন্য শিশুদের ক্ষেত্রেও তা প্রযোজ্য হওয়া উচিত।’

সোমবার, ০৪ অক্টোবর ২০২১ , ১৯ আশ্বিন ১৪২৮ ২৫ সফর ১৪৪৩

আজ বিশ্ব শিশু দিবস

সরকার সব শিশুর সমঅধিকার নিশ্চিত করতে কাজ করে যাচ্ছে : প্রধানমন্ত্রী

image

অক্টোবর মাসের প্রথম সোমবার আজ। বিশ্ব শিশু দিবস। বিশ্বের অন্যান্য দেশের মতো বাংলাদেশেও দিবসটি পালন করা হচ্ছে। একই সঙ্গে পালিত হচ্ছে শিশু অধিকার সপ্তাহ।

বিশ্ব শিশু দিবস ও শিশু অধিকার সপ্তাহের এবারের প্রতিপাদ্য : ‘শিশুর জন্য বিনিয়োগ করি, সমৃদ্ধ দেশ গড়ি’। শিশু দিবস ও শিশু অধিকার সপ্তাহ উপলক্ষে বাণী দিয়েছেন প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা।

দেশের সব শিশুর সমঅধিকার নিশ্চিত করে সুন্দব ভবিষ্যৎ গড়ার পাশাপাশি শিশুর সার্বিক বিকাশ ও অধিকার বাস্তবায়নে এবং শিশুদের প্রতি সহিংস আচরণ নির্যাতন বন্ধের ক্ষেত্রে বাবা-মা, পরিবার ও সমাজের সবাইকে দায়িত্ব পালন করার আহ্বান জানিয়ে প্রধানমন্ত্রী, ‘শিশুর অধিকার বাস্তবায়নে মা-বাবা, পরিবার ও সমাজের সবার ভূমিকা অপরিসীম। তিনি সরকারের পাশাপাশি বেসরকারি সংস্থাসহ সচেতন নাগরিককে শিশুদের কল্যাণে এগিয়ে আসার আহ্বান জানান।’

শিশুদের জন্য বিভিন্ন কর্মকা- তুলে ধরে প্রধানমন্ত্রী বলেন, ‘আজকের শিশুরাই আগামীতে নেতৃত্ব দেবে। আওয়ামী লীগ সরকার শিশুদের স্বাস্থ্য, শিক্ষা, বিনোদন ও কল্যাণ নিশ্চিত করতে ব্যাপক কর্মসূচি বাস্তবায়ন করে যাচ্ছে। শিশুশ্রম নিরসন নীতি-২০১০, শিশু আইন ২০১৩, প্রতিবন্ধী ব্যক্তিদের অধিকার ও সুরক্ষা আইন-২০১৩ এবং শিশু দিবাযতœ কেন্দ্র আইন-২০২১ প্রণয়ন করেছি।’ প্রধানমন্ত্রী আরও বলেন, ‘পথশিশু, ঝুঁকিপূর্ণ কাজে নিয়োজিত শিশু, বিদ্যালয় থেকে ঝরেপড়া ও প্রতিবন্ধী শিশুদের কল্যাণে আমরা আর্থিক সহায়তা প্রদান করছি। আমরা পরিত্যক্ত শিশুদের সেবা ও ভাতা প্রদান, পথশিশুদের পুনর্বাসনসহ তাদের জীবনমাান উন্নত করতে বিভিন্ন কার্যক্রম বাস্তবায়ন করে যাচ্ছি।’

শিশু দিবস শিশুদের নিয়ে উদযাপিত একটি দিবস। এটি পৃথিবীর বিভিন্ন দেশে বিভিন্ন সময় পালিত হয়ে থাকে। শিশু দিবসটি ১৯২০ সালের ২৩ এপ্রিল প্রথমবার তুরস্কে পালিত হয়েছিল।

জাতির জনক বঙ্গবন্ধু শেখ মুজিবুর রহমানের জন্মদিনটিকে বাংলাদেশে শিশু দিবস হিসেবে পালনের সিদ্ধান্ত নেয়া হয় ১৯৯৬ সালে। আর অক্টোবর মাসের প্রথম সোমবার পালন করা হয় বিশ্ব শিশু দিবস।

শিশু দিবসটি পালনের সিদ্ধান্ত গ্রহণ করা হয় এক বিশেষ সময়ে। দ্বিতীয় বিশ্বযুদ্ধের পরপরই সিদ্ধান্ত নেয়া হয়। দ্বিতীয় বিশ্বযুদ্ধের ভয়াবহতা শিশুদের অধিকার নিয়ে নতুন করে ভাবতে বাধ্য করে। এ যুদ্ধে অসংখ্য শিশু মারা যায়। অসুস্থ হয়ে পড়ে আরও অনেক শিশু। এসব শিশুদের রক্ষা ও তাদের কল্যাণে এগিয়ে আসে জাতিসংঘ কল্যাণ তহবিল (ইউনিসেফ)। শিশুদের নিরাপত্তা ও মানসিক বিকাশে জনগণের মধ্যে সচেতনতা বৃদ্ধির লক্ষ্যে তারা নানা কর্মসূচি গ্রহণ করে। এর অংশ হিসেবে তারা একটি দিনকে শিশুদের উৎসর্গ করার প্রয়োজনীয়তা অনুধাবন করে। তাই তারা বিশ্ব শিশু দিবস পালনের সিদ্ধান্ত গ্রহণ করে। ১৯৫৪ সালে জাতিসংঘের সাধারণ পরিষদে বিশ্বব্যাপী দিবসটি পালনের সিদ্ধান্ত গ্রহণ করা হয়।

উন্নয়নকর্মী স্বপনা রেজা বলেন, একজন সাধারণ মানুষের মতোই একটি শিশুর অধিকার সমান। মানুষের মৌলিক অধিকার- অন্ন, বস্ত্র, বাসস্থান, চিকিৎসা ও শিক্ষা এই পাঁচটি বিষয়কে যদি আমরা পুরোপুরিভাবে শিশুদের জন্য নিশ্চিত করতে পারি, তাহলে তাদেরকে সুনাগরিক হিসেবে গড়ে তোলা হয়তোবা খুব কঠিন হবে না। নিরাপদ ও সুরক্ষিত জীবন শিশুর অন্যতম অধিকার। কিন্তু আজও দারিদ্র্য, পুষ্টিহীনতা ও নানা প্রাণঘাতী রোগ প্রতিদিনই হাজার হাজার শিশুর মৃত্যু ঘটাচ্ছে। শিশুদের বেঁচে থাকার জন্য ন্যূনতম যে অধিকারসমূহ সমাজের কাছে পাওনা, তা যথাযথভাবে দিতে পারলেই শিশুদের অধিকার অনেকটাই পূরণ করা সম্ভব।

বিশ্ব শিশু দিবস উপলক্ষে শিশু একাডেমির সাবেক পরিচালক আনজির লিটন বলেন, ‘শিশুর জন্য ‘হ্যাঁ’ বলুন। আমাদের ইতিবাচকতাই তৈরি করতে পারে তাদের সুন্দর ভবিষ্যৎ, বদলে দিতে পারে অসহায় ও নির্যাতিত শিশুদের জীবন। এতে যেমন একটি দেশ ও জাতি সমৃদ্ধ হবে, তেমনি বিশ্ব হবে আলোকিত। তাই শিশুদের মানসিক বিকাশে উপযুক্ত পরিবেশ সৃষ্টির চেষ্টা এবং তাদের অধিকারগুলো প্রদানের প্রয়াস আমাদের সবার থাকা উচিত। শুধু নিজের শিশু নয়, সমাজের অবহেলিত অন্য শিশুদের ক্ষেত্রেও তা প্রযোজ্য হওয়া উচিত।’