বিশ্বমানের মাদকাসক্ত নিরাময় কেন্দ্র ওয়েসিস চালু হচ্ছে

বাংলাদেশ পুলিশ কল্যাণ ট্রাস্টের উদ্যোগে রাজধানীর অদূরে দক্ষিণ কেরানীগঞ্জে বিশ্বমানের মাদকাসক্তি নিরাময় ও মানসিক স্বাস্থ্য পরামর্শ কেন্দ্র ওয়েসিস চালু করা হচ্ছে। শীঘ্রই এ প্রতিষ্ঠানের কার্যক্রম শুরু হবে। এ লক্ষ্যে পুলিশ সদর দপ্তরের প্রস্তুতি চলছে। আগামী ৭ অক্টোবর এ প্রতিষ্ঠানটি আনুষ্ঠানিকভাবে উদ্বোধন করা হবে।

পুলিশ হেডকোয়ার্টার্স থেকে জানা গেছে, দক্ষিণ কেরানীগঞ্জে কোলাহলমুক্ত, নিরিবিলি পরিবেশে ওয়েসিস মাদকাসক্তি নিরাময়কেন্দ্র প্রতিষ্ঠা করা হয়েছে। এতে মাদক নিরাময় ও পুনর্বাসন কেন্দ্রে বিশেষজ্ঞ চিকিৎসকদের সর্বক্ষণিক নিবিড় পর্যবেক্ষণ, দেশের খ্যাতনামা এবং দীর্ঘ অভিজ্ঞতাসম্পন্ন মনোচিকিৎসক, বিশেষজ্ঞ চিকিৎসক টিম, সাইকোলজিস্ট, সাইকোথেরাপিস্ট, ফিজিওথেরাপিস্ট, ইয়োগা এক্সপার্ট এবং অভিজ্ঞ এডিকশন কাউন্সেলারদের মাধ্যমে বিশ্বমানের সর্বাধুনিক চিকিৎসা সেবা দেয়া হবে।

চিকিৎসা সেবার মধ্যে থাকবে, নেশামুক্তকরণের চিকিৎসা, রোগীকে চিকিৎসা গ্রহণে উৎসাহিত করা, হাসপাতালে ভর্তি থাকা ছাড়া মাদকাসক্তি ও মানসিক রোগের চিকিৎসা কখনও সম্ভব নয়। এ প্রতিষ্ঠানের ইনডোর ও আউটডোর রোগীদের মাদকসক্তি নির্ণয় করে চার থেকে ছয় সপ্তাহে বিশেষজ্ঞ ডাক্তার, নার্স ও ওয়ার্ডবয়ের মাধ্যমে পর্যবেক্ষণ করা হবে।

মাদকাসক্ত রোগীর অবস্থা দেখে রোগী ও পরিবারের সঙ্গে কথা বলে আলোচনা সাপেক্ষে কাউন্সিলিং-এর ব্যবস্থা করা হবে। প্রতিদিন সকালে ঘুম থেকে ওঠার পর থেকে রাতে ঘুমানোর আগ পর্যন্ত নিদিষ্ট রুটিন মেনে চলা। নিরাময় কেন্দ্রে অত্যাধুনিক ব্যায়ামাগার, থেরাপি ও বিনোদনের ব্যবস্থা আছে। আর মহিলা রোগীদের জন্য সার্বক্ষণিক মহিলা ডাক্তার আলাদা সার্ভিসকর্মী ও নার্স দ্বারা সেবা দেয়া হবে।

দেশের বিভিন্ন স্থান থেকে অ্যাম্বুলেন্সযোগে এ প্রতিষ্ঠানে রোগী আনা হবে। যে সব মাদকাসক্ত রোগীর বারবার চিকিৎসা করে ব্যর্থ হয়েছে এবং নতুন করে আবার ড্রাগ নিচ্ছেন, তারা মানসিক রোগে আক্রান্ত হচ্ছেন। তাদের এ প্রতিষ্ঠানে উন্নত চিকিৎসার ব্যবস্থা নিশ্চিত করা হবে।

মাদক নিয়ন্ত্রণ অধিদপ্তরের প্রধান রাসায়নিক পরীক্ষক ডা. দুলাল কৃষ্ণ সাহা সংবাদকে জানান, মাদক নিয়ন্ত্রণ অধিদপ্তরের চারটি (সরকারি) নিরাময়কেন্দ্র রয়েছে। এর মধ্যে তেজগাঁয়ে ১২৪ বেডের নিরাময়কেন্দ্র আছে। চট্টগ্রাম, খুলনা ও রাজশাহীতে ২৫ বেডের নিরাময়কেন্দ্র আছে। এছাড়াও বিভিন্ন জেলায় ৩০৫টি বেসরকারি নিরাময়কেন্দ্র রয়েছে। তার মতে, মাদকের চিকিৎসা খুবই জটিল। কে কোন ড্রাগ নেয় তা শনাক্ত করে চিকিৎসা দিতে হয়। তারপরও বিশেষজ্ঞ টিম কাজ করে যাচ্ছেন।

মাদক প্রতিরোধে মাদক নিয়ন্ত্রণ অধিদপ্তর কর্তৃপক্ষ এখন দেশজুড়ে অভিযান জোরদার করেছেন। মাদকের বিরুদ্ধে জিরো টলারেন্স নীতি অনুসরণ করে অভিযান চালানো হচ্ছে। কাউকে ছাড় দেয়া হচ্ছে না। মাদক নিয়ন্ত্রণ অধিদপ্তর ছাড়াও পুলিশের বিভিন্ন ইউনিটগুলো মাদকবিরোধী অভিযান অব্যাহত রেখেছেন। র‌্যাব ও গোয়েন্দা পুলিশ এবং থানা পুলিশ এমনকি বিজিবিসহ অন্যান্য আইনশৃঙ্খলা বাহিনীর মাদকবিরোধী অভিযান অব্যাহত আছে। এরপরও থামছে না মাদক কেনাবেচা।

বিশেষজ্ঞদের মতে, বাংলাদেশকে মদ্যম আয়ের উন্নত দেশে পরিণত হওয়ার জন্য মাদকমুক্ত বাংলাদেশ গড়তে হবে। তার জন্য বিভিন্ন সংস্থাগুলো কাজ করে যাচ্ছেন। কিন্তু মায়ানমার সীমান্তবর্তী এলাকাসহ বিভিন্ন এলাকা দিয়ে দেশে এখনও মাদকের চালান আনা হচ্ছে। তবে আটকও হচ্ছে।

সোমবার, ০৪ অক্টোবর ২০২১ , ১৯ আশ্বিন ১৪২৮ ২৫ সফর ১৪৪৩

বিশ্বমানের মাদকাসক্ত নিরাময় কেন্দ্র ওয়েসিস চালু হচ্ছে

বাকী বিল্লাহ

বাংলাদেশ পুলিশ কল্যাণ ট্রাস্টের উদ্যোগে রাজধানীর অদূরে দক্ষিণ কেরানীগঞ্জে বিশ্বমানের মাদকাসক্তি নিরাময় ও মানসিক স্বাস্থ্য পরামর্শ কেন্দ্র ওয়েসিস চালু করা হচ্ছে। শীঘ্রই এ প্রতিষ্ঠানের কার্যক্রম শুরু হবে। এ লক্ষ্যে পুলিশ সদর দপ্তরের প্রস্তুতি চলছে। আগামী ৭ অক্টোবর এ প্রতিষ্ঠানটি আনুষ্ঠানিকভাবে উদ্বোধন করা হবে।

পুলিশ হেডকোয়ার্টার্স থেকে জানা গেছে, দক্ষিণ কেরানীগঞ্জে কোলাহলমুক্ত, নিরিবিলি পরিবেশে ওয়েসিস মাদকাসক্তি নিরাময়কেন্দ্র প্রতিষ্ঠা করা হয়েছে। এতে মাদক নিরাময় ও পুনর্বাসন কেন্দ্রে বিশেষজ্ঞ চিকিৎসকদের সর্বক্ষণিক নিবিড় পর্যবেক্ষণ, দেশের খ্যাতনামা এবং দীর্ঘ অভিজ্ঞতাসম্পন্ন মনোচিকিৎসক, বিশেষজ্ঞ চিকিৎসক টিম, সাইকোলজিস্ট, সাইকোথেরাপিস্ট, ফিজিওথেরাপিস্ট, ইয়োগা এক্সপার্ট এবং অভিজ্ঞ এডিকশন কাউন্সেলারদের মাধ্যমে বিশ্বমানের সর্বাধুনিক চিকিৎসা সেবা দেয়া হবে।

চিকিৎসা সেবার মধ্যে থাকবে, নেশামুক্তকরণের চিকিৎসা, রোগীকে চিকিৎসা গ্রহণে উৎসাহিত করা, হাসপাতালে ভর্তি থাকা ছাড়া মাদকাসক্তি ও মানসিক রোগের চিকিৎসা কখনও সম্ভব নয়। এ প্রতিষ্ঠানের ইনডোর ও আউটডোর রোগীদের মাদকসক্তি নির্ণয় করে চার থেকে ছয় সপ্তাহে বিশেষজ্ঞ ডাক্তার, নার্স ও ওয়ার্ডবয়ের মাধ্যমে পর্যবেক্ষণ করা হবে।

মাদকাসক্ত রোগীর অবস্থা দেখে রোগী ও পরিবারের সঙ্গে কথা বলে আলোচনা সাপেক্ষে কাউন্সিলিং-এর ব্যবস্থা করা হবে। প্রতিদিন সকালে ঘুম থেকে ওঠার পর থেকে রাতে ঘুমানোর আগ পর্যন্ত নিদিষ্ট রুটিন মেনে চলা। নিরাময় কেন্দ্রে অত্যাধুনিক ব্যায়ামাগার, থেরাপি ও বিনোদনের ব্যবস্থা আছে। আর মহিলা রোগীদের জন্য সার্বক্ষণিক মহিলা ডাক্তার আলাদা সার্ভিসকর্মী ও নার্স দ্বারা সেবা দেয়া হবে।

দেশের বিভিন্ন স্থান থেকে অ্যাম্বুলেন্সযোগে এ প্রতিষ্ঠানে রোগী আনা হবে। যে সব মাদকাসক্ত রোগীর বারবার চিকিৎসা করে ব্যর্থ হয়েছে এবং নতুন করে আবার ড্রাগ নিচ্ছেন, তারা মানসিক রোগে আক্রান্ত হচ্ছেন। তাদের এ প্রতিষ্ঠানে উন্নত চিকিৎসার ব্যবস্থা নিশ্চিত করা হবে।

মাদক নিয়ন্ত্রণ অধিদপ্তরের প্রধান রাসায়নিক পরীক্ষক ডা. দুলাল কৃষ্ণ সাহা সংবাদকে জানান, মাদক নিয়ন্ত্রণ অধিদপ্তরের চারটি (সরকারি) নিরাময়কেন্দ্র রয়েছে। এর মধ্যে তেজগাঁয়ে ১২৪ বেডের নিরাময়কেন্দ্র আছে। চট্টগ্রাম, খুলনা ও রাজশাহীতে ২৫ বেডের নিরাময়কেন্দ্র আছে। এছাড়াও বিভিন্ন জেলায় ৩০৫টি বেসরকারি নিরাময়কেন্দ্র রয়েছে। তার মতে, মাদকের চিকিৎসা খুবই জটিল। কে কোন ড্রাগ নেয় তা শনাক্ত করে চিকিৎসা দিতে হয়। তারপরও বিশেষজ্ঞ টিম কাজ করে যাচ্ছেন।

মাদক প্রতিরোধে মাদক নিয়ন্ত্রণ অধিদপ্তর কর্তৃপক্ষ এখন দেশজুড়ে অভিযান জোরদার করেছেন। মাদকের বিরুদ্ধে জিরো টলারেন্স নীতি অনুসরণ করে অভিযান চালানো হচ্ছে। কাউকে ছাড় দেয়া হচ্ছে না। মাদক নিয়ন্ত্রণ অধিদপ্তর ছাড়াও পুলিশের বিভিন্ন ইউনিটগুলো মাদকবিরোধী অভিযান অব্যাহত রেখেছেন। র‌্যাব ও গোয়েন্দা পুলিশ এবং থানা পুলিশ এমনকি বিজিবিসহ অন্যান্য আইনশৃঙ্খলা বাহিনীর মাদকবিরোধী অভিযান অব্যাহত আছে। এরপরও থামছে না মাদক কেনাবেচা।

বিশেষজ্ঞদের মতে, বাংলাদেশকে মদ্যম আয়ের উন্নত দেশে পরিণত হওয়ার জন্য মাদকমুক্ত বাংলাদেশ গড়তে হবে। তার জন্য বিভিন্ন সংস্থাগুলো কাজ করে যাচ্ছেন। কিন্তু মায়ানমার সীমান্তবর্তী এলাকাসহ বিভিন্ন এলাকা দিয়ে দেশে এখনও মাদকের চালান আনা হচ্ছে। তবে আটকও হচ্ছে।