দগ্ধ নানি-নাতি মৃত্যুর সঙ্গে লড়ছে, আসামি সবুজ গ্রেপ্তার

সাতক্ষীরার কাজলায় শাশুড়ি ও স্ত্রীর আগের পক্ষের সন্তানকে পেট্রল ঢেলে আগুন লাগিয়ে হত্যাচেষ্টা মামলার প্রধান আসামি সবুজ গাতিদারকে গ্রেপ্তার করেছে পুলিশ। গতকাল দুপুরে সাতক্ষীরা জজ কোর্ট এলাকার আবদুল মান্নানের হোটেল থেকে তাকে গ্রেপ্তার করা হয়। তিনি দেবহাটার পারুলিয়া গ্রামের নবাব আলী গাতিদারের ছেলে। এর আগে শনিবার রাতে কালিগঞ্জ উপজেলার কাজলা গ্রামে শাশুড়ি ফাতেমা খাতুন (৪৫) ও স্থানীয় একটি প্রাথমিক বিদ্যালয়ের তৃতীয় শ্রেণীর ছাত্র নাজমুলকে (৮) বাইরে থেকে তালা দিয়ে পেট্রল ঢেলে আগুন লাগিয়ে দেয়ার অভিযোগ উঠে সবুজ গাতিদারের বিরুদ্ধে। স্ত্রীর দেয়া তালাকের প্রতিশোধ নিতে শাশুড়ি ও স্ত্রীর আগের পক্ষের সন্তানকে হত্যার উদ্দেশ্যে ঘরে তিনি আগুন লাগিয়েছেন বলে ধারণা করেছে পুলিশ। এদিকে, মুমূর্ষু অবস্থায় নানি ফতেমা খাতুন ও নাতি নাজমুলকে ঢাকা মেডিকেলের শেখ হাসিনা বার্ন ইউনিটে ভর্তি করা হয়েছে।

কালীগঞ্জ উপজেলার কাজলা গ্রামের আবদুস সাত্তার সরদার জানান, তার মেয়ে নাজমা খাতুনের সঙ্গে সাতক্ষীরা সদর উপজেলার চৌবাড়িয়া গ্রামের জাহাঙ্গীর আলমের ছেলে ভোমরা বন্দরের শ্রমিক আল আমিনের বিয়ে হয়। নাজমুল নামে তাদের আট বছরের এক ছেলে আছে। শ্বশুরবাড়ির নির্যাতন সহ্য করতে না পেরে নাজমা গত বছরের এপ্রিল মাসে তার ভাই শরিফুলের সঙ্গে ভারতের তামিলনাড়ুতে কাজ করতে যায়। তিন মাস পর ফিরে এলে আল আমিন তাকে তালাক দিয়ে ছেলে নাজমুলসহ নাজমাকে তাদের বাড়ি পাঠিয়ে দেয়। নাজমুল আমাদের বাড়িতে থেকে ইছাপুর সরকারি প্রাথমিক বিদ্যালয়ে পড়ালেখা করে।

এরই মধ্যে নাজমাকে তার খালাত ভাই দেবহাটার পারুলিয়ার বাসিন্দা সবুজ গাতিদার বিয়ের জন্য বিরক্ত করতো। গত বছরের ডিসেম্বর মাসে নাজমার সঙ্গে সবুজ গাতিদারের বিয়ে হয়।

আবদুস সাত্তার আরও জানান, বিয়ের পরপরই সবুজের চেহারা পাল্টাতে থাকে। যৌতুকের জন্য প্রায়ই নির্যাতন চালাত সে। কিছুদিন পরে নাজমাকে নিয়ে রাজবাড়িতে একটি কারখানায় কাজে লাগিয়ে দেয় সবুজ। সেখানেও নাজমার ওপরে নির্যাতন চালাতো। জীবন বাঁচাতে পালিয়ে বাড়ি আসে নাজমা। আগস্ট মাসের শেষের দিকে নাজমা সবুজকে তালাক দেয়। এদিকে, নাজমা চাকরি নিয়ে সৌদি আরবে যেতে ভাষা শিক্ষার জন্য গত ১৮ সেপ্টেম্বর ঢাকায় যায়। এতে আরও ক্ষিপ্ত হয়ে উঠে দেবহাটা থানার অস্ত্র ও

ে পৃষ্ঠা : ২ ক : ৪

দগ্ধ নানি-নাতি

(১২ পৃষ্ঠার পর)

ডাকাতিসহ ছয়টি মামলার আসামি সবুজ।

আবদুস সাত্তার সরদার আরও বলেন, প্রতিশোধ নিতে বেপরোয়া হয়ে উঠা সবুজ শনিবার রাত দুইটার দিকে তাদের বাড়ির দরজায় তালা লাগিয়ে পেট্রল ছিটিয়ে একটি লাঠির মাথায় কাপড় জড়িয়ে তাতে আগুন লাগিয়ে ঘরের মধ্যে ছুঁড়ে দেয়। ঘরের মধ্যে আগুন দাউ দাউ করে জ্বলার একপর্যায়ে তার স্ত্রী ফাতেমা ও নাতি নাজমুল ঘর থেকে বের হওয়ার চেষ্টা করে। বাইরের দিক থেকে দরজায় তালা লাগিয়ে দেয়ায় তারা আর বের হতে পারেনি। পরবর্তীতে স্থানীয়রা তাকে উদ্ধার করে।

কালীগঞ্জ থানার ওসি গোলাম মোস্তফা জানান, ফাতেমা খাতুন ও নাজমুল হোসেনকে ঘরের মধ্যে রেখে বাইরে থেকে তালা লাগিয়ে পেট্রল ঢেলে আগুন লাগানোর অভিযোগ উঠেছে সবুজসহ তার পরিবারের বিরুদ্ধে। স্থানীয়রা তাদের উদ্ধার করে প্রথমে স্থানীয় হাসপাতালে ও পরে ঢাকায় ভর্তি করে। এ ঘটনায় আবদুস সাত্তার সরদার বাদী হয়ে সবুজ গাতিদার, তার ভাই সুমন গাতিদার, তাদের বাবা নবাব আলী গাতিদার, মা মর্জিনা খাতুনের নাম উল্লেখসহ অজ্ঞাতনামা আরও তিনজনের বিরুদ্ধে শনিবার থানায় একটি মামলা (নং ৫) দায়ের করেছেন। মামলার প্রধান আসামি সবুজ গাতিদারকে সাতক্ষীরা জজ কোর্ট এলাকার আবদুল মান্নানের হোটেল থেকে গতকাল দুপুর সোয়া একটার দিকে গ্রেপ্তার করা হয়েছে।

ঢাকা মেডিকেল কলেজ হাসপাতালের বার্ন ইউনিটের কর্তর‌্যরত চিকিৎসক ডা. তৌফিক আহম্মেদ বলেন, নাজমুলের শরীরের ৯৫ শতাংশ ও ফাতেমার ৭৫ শতাংশ পুড়ে গেছে পেট্রলের আগুনে। তাদের বাঁচানো কঠিন হলেও তারা চেষ্টা চালিয়ে যাচ্ছেন।

সোমবার, ০৪ অক্টোবর ২০২১ , ১৯ আশ্বিন ১৪২৮ ২৫ সফর ১৪৪৩

সাতক্ষীরায় প্রতিশোধের আগুনে

দগ্ধ নানি-নাতি মৃত্যুর সঙ্গে লড়ছে, আসামি সবুজ গ্রেপ্তার

প্রতিনিধি, সাতক্ষীরা

সাতক্ষীরার কাজলায় শাশুড়ি ও স্ত্রীর আগের পক্ষের সন্তানকে পেট্রল ঢেলে আগুন লাগিয়ে হত্যাচেষ্টা মামলার প্রধান আসামি সবুজ গাতিদারকে গ্রেপ্তার করেছে পুলিশ। গতকাল দুপুরে সাতক্ষীরা জজ কোর্ট এলাকার আবদুল মান্নানের হোটেল থেকে তাকে গ্রেপ্তার করা হয়। তিনি দেবহাটার পারুলিয়া গ্রামের নবাব আলী গাতিদারের ছেলে। এর আগে শনিবার রাতে কালিগঞ্জ উপজেলার কাজলা গ্রামে শাশুড়ি ফাতেমা খাতুন (৪৫) ও স্থানীয় একটি প্রাথমিক বিদ্যালয়ের তৃতীয় শ্রেণীর ছাত্র নাজমুলকে (৮) বাইরে থেকে তালা দিয়ে পেট্রল ঢেলে আগুন লাগিয়ে দেয়ার অভিযোগ উঠে সবুজ গাতিদারের বিরুদ্ধে। স্ত্রীর দেয়া তালাকের প্রতিশোধ নিতে শাশুড়ি ও স্ত্রীর আগের পক্ষের সন্তানকে হত্যার উদ্দেশ্যে ঘরে তিনি আগুন লাগিয়েছেন বলে ধারণা করেছে পুলিশ। এদিকে, মুমূর্ষু অবস্থায় নানি ফতেমা খাতুন ও নাতি নাজমুলকে ঢাকা মেডিকেলের শেখ হাসিনা বার্ন ইউনিটে ভর্তি করা হয়েছে।

কালীগঞ্জ উপজেলার কাজলা গ্রামের আবদুস সাত্তার সরদার জানান, তার মেয়ে নাজমা খাতুনের সঙ্গে সাতক্ষীরা সদর উপজেলার চৌবাড়িয়া গ্রামের জাহাঙ্গীর আলমের ছেলে ভোমরা বন্দরের শ্রমিক আল আমিনের বিয়ে হয়। নাজমুল নামে তাদের আট বছরের এক ছেলে আছে। শ্বশুরবাড়ির নির্যাতন সহ্য করতে না পেরে নাজমা গত বছরের এপ্রিল মাসে তার ভাই শরিফুলের সঙ্গে ভারতের তামিলনাড়ুতে কাজ করতে যায়। তিন মাস পর ফিরে এলে আল আমিন তাকে তালাক দিয়ে ছেলে নাজমুলসহ নাজমাকে তাদের বাড়ি পাঠিয়ে দেয়। নাজমুল আমাদের বাড়িতে থেকে ইছাপুর সরকারি প্রাথমিক বিদ্যালয়ে পড়ালেখা করে।

এরই মধ্যে নাজমাকে তার খালাত ভাই দেবহাটার পারুলিয়ার বাসিন্দা সবুজ গাতিদার বিয়ের জন্য বিরক্ত করতো। গত বছরের ডিসেম্বর মাসে নাজমার সঙ্গে সবুজ গাতিদারের বিয়ে হয়।

আবদুস সাত্তার আরও জানান, বিয়ের পরপরই সবুজের চেহারা পাল্টাতে থাকে। যৌতুকের জন্য প্রায়ই নির্যাতন চালাত সে। কিছুদিন পরে নাজমাকে নিয়ে রাজবাড়িতে একটি কারখানায় কাজে লাগিয়ে দেয় সবুজ। সেখানেও নাজমার ওপরে নির্যাতন চালাতো। জীবন বাঁচাতে পালিয়ে বাড়ি আসে নাজমা। আগস্ট মাসের শেষের দিকে নাজমা সবুজকে তালাক দেয়। এদিকে, নাজমা চাকরি নিয়ে সৌদি আরবে যেতে ভাষা শিক্ষার জন্য গত ১৮ সেপ্টেম্বর ঢাকায় যায়। এতে আরও ক্ষিপ্ত হয়ে উঠে দেবহাটা থানার অস্ত্র ও

ে পৃষ্ঠা : ২ ক : ৪

দগ্ধ নানি-নাতি

(১২ পৃষ্ঠার পর)

ডাকাতিসহ ছয়টি মামলার আসামি সবুজ।

আবদুস সাত্তার সরদার আরও বলেন, প্রতিশোধ নিতে বেপরোয়া হয়ে উঠা সবুজ শনিবার রাত দুইটার দিকে তাদের বাড়ির দরজায় তালা লাগিয়ে পেট্রল ছিটিয়ে একটি লাঠির মাথায় কাপড় জড়িয়ে তাতে আগুন লাগিয়ে ঘরের মধ্যে ছুঁড়ে দেয়। ঘরের মধ্যে আগুন দাউ দাউ করে জ্বলার একপর্যায়ে তার স্ত্রী ফাতেমা ও নাতি নাজমুল ঘর থেকে বের হওয়ার চেষ্টা করে। বাইরের দিক থেকে দরজায় তালা লাগিয়ে দেয়ায় তারা আর বের হতে পারেনি। পরবর্তীতে স্থানীয়রা তাকে উদ্ধার করে।

কালীগঞ্জ থানার ওসি গোলাম মোস্তফা জানান, ফাতেমা খাতুন ও নাজমুল হোসেনকে ঘরের মধ্যে রেখে বাইরে থেকে তালা লাগিয়ে পেট্রল ঢেলে আগুন লাগানোর অভিযোগ উঠেছে সবুজসহ তার পরিবারের বিরুদ্ধে। স্থানীয়রা তাদের উদ্ধার করে প্রথমে স্থানীয় হাসপাতালে ও পরে ঢাকায় ভর্তি করে। এ ঘটনায় আবদুস সাত্তার সরদার বাদী হয়ে সবুজ গাতিদার, তার ভাই সুমন গাতিদার, তাদের বাবা নবাব আলী গাতিদার, মা মর্জিনা খাতুনের নাম উল্লেখসহ অজ্ঞাতনামা আরও তিনজনের বিরুদ্ধে শনিবার থানায় একটি মামলা (নং ৫) দায়ের করেছেন। মামলার প্রধান আসামি সবুজ গাতিদারকে সাতক্ষীরা জজ কোর্ট এলাকার আবদুল মান্নানের হোটেল থেকে গতকাল দুপুর সোয়া একটার দিকে গ্রেপ্তার করা হয়েছে।

ঢাকা মেডিকেল কলেজ হাসপাতালের বার্ন ইউনিটের কর্তর‌্যরত চিকিৎসক ডা. তৌফিক আহম্মেদ বলেন, নাজমুলের শরীরের ৯৫ শতাংশ ও ফাতেমার ৭৫ শতাংশ পুড়ে গেছে পেট্রলের আগুনে। তাদের বাঁচানো কঠিন হলেও তারা চেষ্টা চালিয়ে যাচ্ছেন।