বেগমগঞ্জে চাঞ্চল্যকর ধর্ষণ মামলায় ২ জনের যাবজ্জীবন

নোয়াখালীর বেগমগঞ্জের একলাশপুর ইউনিয়নের জয়কৃঞ্চপুর গ্রামে এক গৃহবধূকে (৩৭) ধর্ষণের মামলায় দুই আসামিকে যাবজ্জীবন কারাদণ্ড দিয়েছেন আদালত। এছাড়া উভয় আসামিকে ৫০ হাজার টাকা জরিমানা এবং অনাদায়ে আরও তিন মাসের বিনাশ্রম কারাদাণ্ড দেয়া হয়।

যাবজ্জীবন দণ্ডপ্রাপ্ত আসামিরা হলেন, স্থানীয় যুবলীগ নেতা ও দেলোয়ার বাহিনীপ্রধান দেলোয়ার হোসেন ওরফে দেলু ও তার ঘনিষ্ঠ সহযোগী মোহাম্মদ আলী ওরফে আবুল কালাম। আসামিরা বেগমগঞ্জ উপজেলার একলাশপুর ইউনিয়নের বাসিন্দা। আদালতে পিবি আই চার্জশিট দাখিল করার ১৩ কার্যদিবসে এ চাঞ্চল্যকর মামলার রায় ঘোষণা করলেন নোয়াখালী নাশিনি ট্রাইব্যাল-১ এর বিচারক ( জেলা জজ) জয়নাল আবেদীন।

গতকাল বেলা ১১টার দিকে নোয়াখালী নারী ও শিশু নির্যাতন দমন ট্রাইব্যুনাল-১ এর বিচারক জয়নাল আবেদীন আসামিদের উপস্থিতিতে এ রায় দেন। এ সময় রাষ্ট্রপক্ষে মামলাটি পরিচালনা করেন অ্যাডভোকেট মামুনুর রশীদ লাবলু, বাদীপক্ষে ছিলেন অ্যাডভোকেট মোল্লা হাবিবুর রসুল মামুন ও আসামিপক্ষে মামলা পরিচালনা করেন অ্যাডভোকেট জসিম উদ্দিন বাদল।

মামলায় রাষ্ট্রপক্ষের কৌঁসুলি পাবলিক প্রসিকিউটর (পিপি) অ্যাডভোকেট মামুনুর রশীদ লাবলু জানান, গৃহবধূ ধর্ষণের আলোচিত মামলাটিতে আমরা বিজ্ঞ আদালতে সাক্ষী উপস্থাপন, জেরা ও জবানবন্দি সঠিকভাবে উপস্থাপন করতে সক্ষম হয়েছি। এ মামলায় রাষ্ট্রপক্ষে ১২ জন ও আসামিপক্ষে তিনজন সাফাই সাক্ষী প্রদান করেন। বিজ্ঞ আদালত দুই আসামিকে যাবজ্জীবন কারাদণ্ড দিয়েছেন। একই সঙ্গে উভয় আসামিকে ৫০ হাজার টাকা জরিমানা এবং অনাদায়ে আরও তিন মাসের বিনাশ্রম কারাদাণ্ড দেয়া হয়।

আদালত সূত্রে জানা গেছে, এর আগে গত ১৭ ফেব্রুয়ারি আসামিদের বিরুদ্ধে চার্জ গঠন করেন আদালত। পরে গত ১৮ আগস্ট আসামিদের উপস্থিতিতে বাদীর সাক্ষ্য গ্রহণ করা হয়।

সূত্র আরও জানায়, ওই নারীকে দুই দফায় ধর্ষণের অভিযোগে ২০২০ সালের ৬ অক্টোবর বেগমগঞ্জ থানায় দুজনকে আসামি করে এ ধর্ষণ মামলা দায়ের করা হয়। এর পর গত ১৭ ফেব্রুয়ারি আদালতে দুই আসামির বিরুদ্ধে অভিযোগ গঠন করা হয়। পরে মামলাটি পুলিশ ব্যুরো অব ইনভেস্টিগেশনে (পিবিআই) হস্তান্তর করা হয়। পিবিআই আদালতে মামলার চার্জশিট দেয় ২০২০ সালের ১৫ ডিসেম্বর।

উল্লেখ্য, ২০২০ সালের ২ সেপ্টেম্বর একলাশপুর ইউনিয়নের জয়কৃষ্ণপুর গ্রামে দেলোয়ার বাহিনীর সদস্যরা ওই নারীকে মধ্যযুগীয় কায়দায় তার নিজ ঘরে বিবস্ত্র করে ধর্ষণের চেষ্টায় ব্যর্থ হয়ে নির্যাতন চালায়। পরে সন্ত্রাসীদের ভয়ে ভুক্তভোগী বাধ্য হয়ে আত্মগোপনে যায়। একপর্যায়ে ঘটনার ৩২ দিন পর ওই নির্যাতনের একটি ভিডিও সামাজিক যোগাযোগমাধ্যমে ব্যাপকভাবে ছড়িয়ে পড়ে। এরপর পুলিশ আত্মগোপনে থাকা নারীকে উদ্ধার করে তাদের হেফাজতে নেয়। গৃহবধূকে বিবস্ত্র করে নির্যাতন এবং ভিডিও সামাজিক যোগাযোগমাধ্যমে ছড়িয়ে দেয়ায় নারী ও শিশু নির্যাতন দমন অইন এবং পর্ণগ্রাফি আইনে আরও দুটি মামলাসহ এ ঘটনায় মোট তিনটি মামলা করেন ভুক্তভোগী নারী।

মঙ্গলবার, ০৫ অক্টোবর ২০২১ , ২০ আশ্বিন ১৪২৮ ২৬ সফর ১৪৪৩

বেগমগঞ্জে চাঞ্চল্যকর ধর্ষণ মামলায় ২ জনের যাবজ্জীবন

প্রতিনিধি, নোয়াখালী

নোয়াখালীর বেগমগঞ্জের একলাশপুর ইউনিয়নের জয়কৃঞ্চপুর গ্রামে এক গৃহবধূকে (৩৭) ধর্ষণের মামলায় দুই আসামিকে যাবজ্জীবন কারাদণ্ড দিয়েছেন আদালত। এছাড়া উভয় আসামিকে ৫০ হাজার টাকা জরিমানা এবং অনাদায়ে আরও তিন মাসের বিনাশ্রম কারাদাণ্ড দেয়া হয়।

যাবজ্জীবন দণ্ডপ্রাপ্ত আসামিরা হলেন, স্থানীয় যুবলীগ নেতা ও দেলোয়ার বাহিনীপ্রধান দেলোয়ার হোসেন ওরফে দেলু ও তার ঘনিষ্ঠ সহযোগী মোহাম্মদ আলী ওরফে আবুল কালাম। আসামিরা বেগমগঞ্জ উপজেলার একলাশপুর ইউনিয়নের বাসিন্দা। আদালতে পিবি আই চার্জশিট দাখিল করার ১৩ কার্যদিবসে এ চাঞ্চল্যকর মামলার রায় ঘোষণা করলেন নোয়াখালী নাশিনি ট্রাইব্যাল-১ এর বিচারক ( জেলা জজ) জয়নাল আবেদীন।

গতকাল বেলা ১১টার দিকে নোয়াখালী নারী ও শিশু নির্যাতন দমন ট্রাইব্যুনাল-১ এর বিচারক জয়নাল আবেদীন আসামিদের উপস্থিতিতে এ রায় দেন। এ সময় রাষ্ট্রপক্ষে মামলাটি পরিচালনা করেন অ্যাডভোকেট মামুনুর রশীদ লাবলু, বাদীপক্ষে ছিলেন অ্যাডভোকেট মোল্লা হাবিবুর রসুল মামুন ও আসামিপক্ষে মামলা পরিচালনা করেন অ্যাডভোকেট জসিম উদ্দিন বাদল।

মামলায় রাষ্ট্রপক্ষের কৌঁসুলি পাবলিক প্রসিকিউটর (পিপি) অ্যাডভোকেট মামুনুর রশীদ লাবলু জানান, গৃহবধূ ধর্ষণের আলোচিত মামলাটিতে আমরা বিজ্ঞ আদালতে সাক্ষী উপস্থাপন, জেরা ও জবানবন্দি সঠিকভাবে উপস্থাপন করতে সক্ষম হয়েছি। এ মামলায় রাষ্ট্রপক্ষে ১২ জন ও আসামিপক্ষে তিনজন সাফাই সাক্ষী প্রদান করেন। বিজ্ঞ আদালত দুই আসামিকে যাবজ্জীবন কারাদণ্ড দিয়েছেন। একই সঙ্গে উভয় আসামিকে ৫০ হাজার টাকা জরিমানা এবং অনাদায়ে আরও তিন মাসের বিনাশ্রম কারাদাণ্ড দেয়া হয়।

আদালত সূত্রে জানা গেছে, এর আগে গত ১৭ ফেব্রুয়ারি আসামিদের বিরুদ্ধে চার্জ গঠন করেন আদালত। পরে গত ১৮ আগস্ট আসামিদের উপস্থিতিতে বাদীর সাক্ষ্য গ্রহণ করা হয়।

সূত্র আরও জানায়, ওই নারীকে দুই দফায় ধর্ষণের অভিযোগে ২০২০ সালের ৬ অক্টোবর বেগমগঞ্জ থানায় দুজনকে আসামি করে এ ধর্ষণ মামলা দায়ের করা হয়। এর পর গত ১৭ ফেব্রুয়ারি আদালতে দুই আসামির বিরুদ্ধে অভিযোগ গঠন করা হয়। পরে মামলাটি পুলিশ ব্যুরো অব ইনভেস্টিগেশনে (পিবিআই) হস্তান্তর করা হয়। পিবিআই আদালতে মামলার চার্জশিট দেয় ২০২০ সালের ১৫ ডিসেম্বর।

উল্লেখ্য, ২০২০ সালের ২ সেপ্টেম্বর একলাশপুর ইউনিয়নের জয়কৃষ্ণপুর গ্রামে দেলোয়ার বাহিনীর সদস্যরা ওই নারীকে মধ্যযুগীয় কায়দায় তার নিজ ঘরে বিবস্ত্র করে ধর্ষণের চেষ্টায় ব্যর্থ হয়ে নির্যাতন চালায়। পরে সন্ত্রাসীদের ভয়ে ভুক্তভোগী বাধ্য হয়ে আত্মগোপনে যায়। একপর্যায়ে ঘটনার ৩২ দিন পর ওই নির্যাতনের একটি ভিডিও সামাজিক যোগাযোগমাধ্যমে ব্যাপকভাবে ছড়িয়ে পড়ে। এরপর পুলিশ আত্মগোপনে থাকা নারীকে উদ্ধার করে তাদের হেফাজতে নেয়। গৃহবধূকে বিবস্ত্র করে নির্যাতন এবং ভিডিও সামাজিক যোগাযোগমাধ্যমে ছড়িয়ে দেয়ায় নারী ও শিশু নির্যাতন দমন অইন এবং পর্ণগ্রাফি আইনে আরও দুটি মামলাসহ এ ঘটনায় মোট তিনটি মামলা করেন ভুক্তভোগী নারী।