চিরঅম্লান হয়ে থাকবেন মুনীরুজ্জামান

জ্ঞানকে যে মানুষ অন্যের জন্য বিলিয়ে দেয় সেই প্রকৃত মানুষ। মুনীরুজ্জামানকে নিয়ে যে গ্রন্থটির মোড়ক উন্মোচন করা হলো, এই গ্রন্থে যারা লিখেছেন সেখান থেকে তথ্য নিয়ে বুঝতে পারছি মুনীরুজ্জামান কতটা কীর্তিমান। যারা মানুষের কল্যাণে এবং সাম্যবাদে বিশ্বাস করতেন, মুনীরুজ্জামান তাদেরই একজন।

বিশিষ্ট সাংবাদিক প্রয়াত খন্দকার মুনীরুজ্জামানকে নিয়ে এমন মন্তব্য করেছেন বাংলা একাডেমির মহাপরিচালক কবি নুরুল হুদা।

গতকাল জীবন নিবেদিত ‘মুক্তির সংগ্রামে মুনীরুজ্জামান’ স্মারক গ্রন্থটি জাতীয় প্রেসক্লাবে জহুর হোসেন চৌধুরী হলে বইয়ের মোড়ক উন্মোচন করা হয়। স্মারক সংকলন প্রকাশনা সম্পাদনা পরিষদের আয়োজনে মোড়ক উন্মোচন অনুষ্ঠানে মহিলা পরিষদের সভানেত্রী ড. ফওজিয়া মোসলেমের সভাপতিত্বে প্রধান অতিথি হিসেবে ছিলেন বাংলা একাডেমির মহাপরিচালক মুহম্মদ নুরুল হুদা।

অনুষ্ঠানের সভাপতি ফওজিয়া মোসলেম বলেন, করোনায় অনেকেই মারা গেছেন। কিন্তু মুনীরের মৃত্যু মেনে নিতে কষ্ট হয় আজও। কারণ মুনীর ছিল বেশ স্বাস্থ্য সচেতন। ওর যখন করোনা হয়, আমি ওর স্ত্রীকে নিয়ে ভয় পাচ্ছিলাম। ওকে বারবার সতর্ক করছিলাম। মুনীরকে কিছু বলি নাই। এ কথা মনে হলে আজও আমার একটা অপরাধ বোধ কাজ করে।

কিশোর বয়স থেকে একসঙ্গে বেড়ে ওঠা বন্ধু বাংলাদেশ কমিউনিস্ট পার্টির সভাপতি মুজাহিদুল ইসলাম সেলিম বলেন, ‘মুনীরের চলে যাওয়া নেই, কোন কিছু হারিয়ে যাওয়া কেবল বেদনার। মুনীরের চলে যাওয়াটা বেদনারও ওপর কিছু। কত হাজারও স্মৃতি। প্রচার বিমুখ কিন্তু, জ্ঞানে অগাধ মুনীরের কাছ থেকে উপন্যাস, সাহিত্য নানা ধরনের বই ধার করে নিয়ে পড়তাম। একটা বিষয় বলতেই হয়, তা হলো সংগ্রামের কথা। এখানেও মুনীরের ভূমিকা ছিল চোখেপড়ার মতো। সংগ্রাম ছিল আইয়ুব খানের বিরুদ্ধে, আইয়ুবের পুলিশ বাহিনীর বিরুদ্ধে, সা¤্রাজ্যবাদের বিরুদ্ধে, সাম্প্রদায়িকতার বিরুদ্ধে, আমাদের জাতীয় অধিকারের জন্য আমরা যখন সোচ্চার তখন মুনীরের ভূমিকার কথা বলে শেষ করা যাবে না।’

দৈনিক ডেইলি স্টারের সম্পাদক মাহফুজ আনাম বলেন, আমার সৌভাগ্য হয়েছিল আমি তার সঙ্গে নানা বিষয় নিয়ে কাজ করতে পেরেছি। বিশ্ববিদ্যালয় পড়ার সময়টা ছিল স্বাধীনতা চেতনার উন্মেষের সময়, একটা জাতীয়তাবাদী উন্মেষের সময়। সেই সময় থেকে শুরু করে শেষ সময় পর্যন্ত তাকে যেভাবে দেখেছি, তার সময় চেতনাবোধ, মানবতাবোধ আর চমৎকার ব্যক্তিত্ব যা ভুলবার নয়। তার স্মৃতি চিরঅম্লান হোক সেটাই কামনা করছি।’

ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের গণযোগাযোগ ও সাংবাদিকতা বিভাগের অধ্যাপক কাবেরী গায়েন বলেন, তার সঙ্গে আমার মাত্র দুবার যোগাযোগ হয়েছে, দেখা হয়েছে একবার। উনার লেখা আমি পড়েছি। খুবই গর্বের সঙ্গে এখন আমি বলি উনাকে আমি জানি। উনি সাংবাদিকতায় পড়তে চেয়েও পড়তে পারেননি। কারণ উনি দেশের ডাকে সাড়া দিয়েছিলেন। এই বইটা পড়ে আমার মনে হয়েছে, এই বইটা শুধু একটা মুনীরুজ্জামান ভাইয়ের না, এখানে যারা লিখেছেন তাদের সবার জীবনের সঙ্গে এই বইটা এবং লেখকদের সঙ্গে তার নিবিড় সম্পর্ক আমাদের ভাবতে শেখায়। সমাজতান্ত্রিক ধারণার সঙ্গে যখন আমাদের জাতীয়তাবাদী ধারণাকে যুক্ত করে বাংলাদেশ নামের রাষ্ট্র তৈরি হলো, সেই তৈরিতে যারা ছিলেন তাদের মধ্যে মুনীরুজ্জামান একজন।

মুক্তিযুদ্ধ জাদুঘরের ট্রাস্টি মফিদুল হক বলেন, এ যেন এক দুঃস্বপ্ন। আমরা সবাই আছি, তার মধ্যে মুনীর খসে পড়লো। একদিকে আনন্দ একদিকে দুঃখ। আনন্দ এই জন্য আজ মুনীরের জন্য আমরা সবাই একসঙ্গে হয়েছি। আর দুঃখ যাকে নিয়ে, এতসব আলোচনা, সবার একত্রিত হওয়া, সেই মুনীর নেই। মুনীর ছিল আমাদের ভরসার জায়গা। ও লিখেছে কম, কিন্তু চাইলেই লিখতে পারত।’

মুনীরুজ্জামানের বড় ভাই সাংবাদিক রফিকুজ্জামান বলেন, আমার চেয়ে ৬ বছরের ছোট ভাই আমাদের ছেড়ে চলে গেল। আমার বাবা-মা মারা যাওয়ার পর যে কষ্ট পাই নাই, মনীর মারা যাওয়ার পর সেই কষ্ট পেয়েছি।’

মুক্তিযুদ্ধ জাদুঘরের আরেকজন ট্রাস্টি ডা. সারোয়ার আলী বলেন, মুনীরের মৃত্যুটা আজও বিশ্বাস করতে পারি না। সব কাজের মধ্যে ছিল মুনীরের নিষ্ঠা আর একাগ্রতা। পরিশ্রমী ও ঝুঁকি নেয়া মানুষ মুনীর মধ্য বয়সে এসে সাংবাদিকতায় যোগ দিলেন এবং সফল হলেন। এটা মুনীরের দ্বারাই সম্ভব ছিল।’

জাতীয় শ্রমিক জোটের সভাপতি ও অংকুর প্রকাশনীর প্রকাশক মেজবাহ উদ্দিন আহমেদ আবেগেঘন কন্ঠে বলেন, প্রচারবিমুখ মানুষ কোনদিন নিজের কথা বলতেন না। আমি যখন হ্যারিপটারের অনুবাদক খুঁজছিলাম তখন কেউ একজন তার কথা বলেন। ঠিকই তাই, উনি সব রকম সহযোগিতা করলেন।

সংবাদের বার্তা সম্পাদক কাজী রফিক স্মৃতিচারণ করতে গিয়ে আবেগাপ্লুত হয়ে পড়েন। তিনি বলেন, দীর্ঘদিন একসঙ্গে কাজ করার হাজারও স্মৃতি জ্বলজ্বল করছে। তার কোন দিকটা বলব, শুধু বলতে চাই একজন সাংবাদিক হিসেবে তিনি সফল। সাংবাদিকতার জগতেও তার রয়েছে অপরিসীম অবদান। তিনি প্রগতিশীল রাজনৈতিক, সাংস্কৃতিক এবং মুক্তিযুদ্ধের চেতনার পক্ষে গণআন্দোলনের সহযোদ্ধা। প্রগতিশীল রাজনীতির ধারায় তিনি এক সময় নেতৃত্ব দিয়েছিলেন।

সব শেষে প্রয়াত সাংবাদিক মুনীরুজ্জামানের স্ত্রী ড. রোকেয়া খাতুন উপস্থিত সবাইকে ধন্যবাদ জানিয়ে বলেন, দুজন দু’পেশার মানুষ হলেও আমরা ছিলাম স্বাধীন। কেউ কারও কাজে হস্তক্ষেপ করতাম না। তিনি বলেন, মুনীরের আরও কিছু লেখা আছে, শীঘ্রই সে সব প্রকাশে হাত দেব।

দৈনিক সংবাদের ভারপ্রাপ্ত সম্পাদক খন্দকার মুনীরুজ্জামান করোনোয় আক্রান্ত হয়ে গত বছরের ২৪ নভেম্বর মৃত্যুবরণ করেন। তার মৃত্যুর পর তার শুভাকাক্সক্ষী, রাজনৈতিক সহকর্মী, বন্ধুজন এবং বিশিষ্ট সাংবাদিকরা মুনীরুজ্জামান স্মরণে একটি স্মারক গ্রন্থ প্রকাশের উদ্যোগ গ্রহণ করেন। পরে ‘জীবন নিবেদিত মুক্তির সংগ্রামে’ শীর্ষক স্মারক গ্রন্থটি প্রকাশিত হয়।

image

গতকাল জাতীয় প্রেসক্লাবে মোড়ক উন্মোচনের পর ‘মুক্তির সংগ্রামে মুনীরুজ্জামান’ স্মারক গ্রন্থ হাতে অতিথিরা -সংবাদ

আরও খবর
অর্থ সংকটের কারণে আটকে আছে ফ্র্যাঞ্চাইজি পদ্ধতি চালু
শিশুদের টিকা দেয়ার বিষয়টি পর্যালোচনার নির্দেশ প্রধানমন্ত্রীর
ক্লিনফিড দেয়া বিদেশি চ্যানেল চালাতে বাধা নেই : তথ্যমন্ত্রী
নির্দিষ্ট মেয়াদের বেশি পৌর মেয়র থাকতে পারবে না
ই-কমার্স ‘কিউকম’ বাজার পেতে লোভনীয় অফার, আটকে গেল গ্রাহকের আড়াইশ কোটি টাকা
প্রতারণা, এসপিসি ওয়ার্ল্ডের এমডি আল আমিন স্ত্রীসহ কারাগারে
তামাক সেবন নিষিদ্ধের সুপারিশ
মমতার শপথ পাঠ নিয়ে জটিলতা, রাজভবন থেকে আসছে না সবুজ সংকেত
চিরচেনা রঙে ফিরেছে ঢাবি ক্যাম্পাস
বোনকে ধর্ষণ, ভাইকে হত্যা, দুই আসামি ফের জেলহাজতে
অল্প সময়ে বেশি টাকার মালিক হতে নানা কৌশল

মঙ্গলবার, ০৫ অক্টোবর ২০২১ , ২০ আশ্বিন ১৪২৮ ২৬ সফর ১৪৪৩

চিরঅম্লান হয়ে থাকবেন মুনীরুজ্জামান

নিজস্ব বার্তা পরিবেশক

image

গতকাল জাতীয় প্রেসক্লাবে মোড়ক উন্মোচনের পর ‘মুক্তির সংগ্রামে মুনীরুজ্জামান’ স্মারক গ্রন্থ হাতে অতিথিরা -সংবাদ

জ্ঞানকে যে মানুষ অন্যের জন্য বিলিয়ে দেয় সেই প্রকৃত মানুষ। মুনীরুজ্জামানকে নিয়ে যে গ্রন্থটির মোড়ক উন্মোচন করা হলো, এই গ্রন্থে যারা লিখেছেন সেখান থেকে তথ্য নিয়ে বুঝতে পারছি মুনীরুজ্জামান কতটা কীর্তিমান। যারা মানুষের কল্যাণে এবং সাম্যবাদে বিশ্বাস করতেন, মুনীরুজ্জামান তাদেরই একজন।

বিশিষ্ট সাংবাদিক প্রয়াত খন্দকার মুনীরুজ্জামানকে নিয়ে এমন মন্তব্য করেছেন বাংলা একাডেমির মহাপরিচালক কবি নুরুল হুদা।

গতকাল জীবন নিবেদিত ‘মুক্তির সংগ্রামে মুনীরুজ্জামান’ স্মারক গ্রন্থটি জাতীয় প্রেসক্লাবে জহুর হোসেন চৌধুরী হলে বইয়ের মোড়ক উন্মোচন করা হয়। স্মারক সংকলন প্রকাশনা সম্পাদনা পরিষদের আয়োজনে মোড়ক উন্মোচন অনুষ্ঠানে মহিলা পরিষদের সভানেত্রী ড. ফওজিয়া মোসলেমের সভাপতিত্বে প্রধান অতিথি হিসেবে ছিলেন বাংলা একাডেমির মহাপরিচালক মুহম্মদ নুরুল হুদা।

অনুষ্ঠানের সভাপতি ফওজিয়া মোসলেম বলেন, করোনায় অনেকেই মারা গেছেন। কিন্তু মুনীরের মৃত্যু মেনে নিতে কষ্ট হয় আজও। কারণ মুনীর ছিল বেশ স্বাস্থ্য সচেতন। ওর যখন করোনা হয়, আমি ওর স্ত্রীকে নিয়ে ভয় পাচ্ছিলাম। ওকে বারবার সতর্ক করছিলাম। মুনীরকে কিছু বলি নাই। এ কথা মনে হলে আজও আমার একটা অপরাধ বোধ কাজ করে।

কিশোর বয়স থেকে একসঙ্গে বেড়ে ওঠা বন্ধু বাংলাদেশ কমিউনিস্ট পার্টির সভাপতি মুজাহিদুল ইসলাম সেলিম বলেন, ‘মুনীরের চলে যাওয়া নেই, কোন কিছু হারিয়ে যাওয়া কেবল বেদনার। মুনীরের চলে যাওয়াটা বেদনারও ওপর কিছু। কত হাজারও স্মৃতি। প্রচার বিমুখ কিন্তু, জ্ঞানে অগাধ মুনীরের কাছ থেকে উপন্যাস, সাহিত্য নানা ধরনের বই ধার করে নিয়ে পড়তাম। একটা বিষয় বলতেই হয়, তা হলো সংগ্রামের কথা। এখানেও মুনীরের ভূমিকা ছিল চোখেপড়ার মতো। সংগ্রাম ছিল আইয়ুব খানের বিরুদ্ধে, আইয়ুবের পুলিশ বাহিনীর বিরুদ্ধে, সা¤্রাজ্যবাদের বিরুদ্ধে, সাম্প্রদায়িকতার বিরুদ্ধে, আমাদের জাতীয় অধিকারের জন্য আমরা যখন সোচ্চার তখন মুনীরের ভূমিকার কথা বলে শেষ করা যাবে না।’

দৈনিক ডেইলি স্টারের সম্পাদক মাহফুজ আনাম বলেন, আমার সৌভাগ্য হয়েছিল আমি তার সঙ্গে নানা বিষয় নিয়ে কাজ করতে পেরেছি। বিশ্ববিদ্যালয় পড়ার সময়টা ছিল স্বাধীনতা চেতনার উন্মেষের সময়, একটা জাতীয়তাবাদী উন্মেষের সময়। সেই সময় থেকে শুরু করে শেষ সময় পর্যন্ত তাকে যেভাবে দেখেছি, তার সময় চেতনাবোধ, মানবতাবোধ আর চমৎকার ব্যক্তিত্ব যা ভুলবার নয়। তার স্মৃতি চিরঅম্লান হোক সেটাই কামনা করছি।’

ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের গণযোগাযোগ ও সাংবাদিকতা বিভাগের অধ্যাপক কাবেরী গায়েন বলেন, তার সঙ্গে আমার মাত্র দুবার যোগাযোগ হয়েছে, দেখা হয়েছে একবার। উনার লেখা আমি পড়েছি। খুবই গর্বের সঙ্গে এখন আমি বলি উনাকে আমি জানি। উনি সাংবাদিকতায় পড়তে চেয়েও পড়তে পারেননি। কারণ উনি দেশের ডাকে সাড়া দিয়েছিলেন। এই বইটা পড়ে আমার মনে হয়েছে, এই বইটা শুধু একটা মুনীরুজ্জামান ভাইয়ের না, এখানে যারা লিখেছেন তাদের সবার জীবনের সঙ্গে এই বইটা এবং লেখকদের সঙ্গে তার নিবিড় সম্পর্ক আমাদের ভাবতে শেখায়। সমাজতান্ত্রিক ধারণার সঙ্গে যখন আমাদের জাতীয়তাবাদী ধারণাকে যুক্ত করে বাংলাদেশ নামের রাষ্ট্র তৈরি হলো, সেই তৈরিতে যারা ছিলেন তাদের মধ্যে মুনীরুজ্জামান একজন।

মুক্তিযুদ্ধ জাদুঘরের ট্রাস্টি মফিদুল হক বলেন, এ যেন এক দুঃস্বপ্ন। আমরা সবাই আছি, তার মধ্যে মুনীর খসে পড়লো। একদিকে আনন্দ একদিকে দুঃখ। আনন্দ এই জন্য আজ মুনীরের জন্য আমরা সবাই একসঙ্গে হয়েছি। আর দুঃখ যাকে নিয়ে, এতসব আলোচনা, সবার একত্রিত হওয়া, সেই মুনীর নেই। মুনীর ছিল আমাদের ভরসার জায়গা। ও লিখেছে কম, কিন্তু চাইলেই লিখতে পারত।’

মুনীরুজ্জামানের বড় ভাই সাংবাদিক রফিকুজ্জামান বলেন, আমার চেয়ে ৬ বছরের ছোট ভাই আমাদের ছেড়ে চলে গেল। আমার বাবা-মা মারা যাওয়ার পর যে কষ্ট পাই নাই, মনীর মারা যাওয়ার পর সেই কষ্ট পেয়েছি।’

মুক্তিযুদ্ধ জাদুঘরের আরেকজন ট্রাস্টি ডা. সারোয়ার আলী বলেন, মুনীরের মৃত্যুটা আজও বিশ্বাস করতে পারি না। সব কাজের মধ্যে ছিল মুনীরের নিষ্ঠা আর একাগ্রতা। পরিশ্রমী ও ঝুঁকি নেয়া মানুষ মুনীর মধ্য বয়সে এসে সাংবাদিকতায় যোগ দিলেন এবং সফল হলেন। এটা মুনীরের দ্বারাই সম্ভব ছিল।’

জাতীয় শ্রমিক জোটের সভাপতি ও অংকুর প্রকাশনীর প্রকাশক মেজবাহ উদ্দিন আহমেদ আবেগেঘন কন্ঠে বলেন, প্রচারবিমুখ মানুষ কোনদিন নিজের কথা বলতেন না। আমি যখন হ্যারিপটারের অনুবাদক খুঁজছিলাম তখন কেউ একজন তার কথা বলেন। ঠিকই তাই, উনি সব রকম সহযোগিতা করলেন।

সংবাদের বার্তা সম্পাদক কাজী রফিক স্মৃতিচারণ করতে গিয়ে আবেগাপ্লুত হয়ে পড়েন। তিনি বলেন, দীর্ঘদিন একসঙ্গে কাজ করার হাজারও স্মৃতি জ্বলজ্বল করছে। তার কোন দিকটা বলব, শুধু বলতে চাই একজন সাংবাদিক হিসেবে তিনি সফল। সাংবাদিকতার জগতেও তার রয়েছে অপরিসীম অবদান। তিনি প্রগতিশীল রাজনৈতিক, সাংস্কৃতিক এবং মুক্তিযুদ্ধের চেতনার পক্ষে গণআন্দোলনের সহযোদ্ধা। প্রগতিশীল রাজনীতির ধারায় তিনি এক সময় নেতৃত্ব দিয়েছিলেন।

সব শেষে প্রয়াত সাংবাদিক মুনীরুজ্জামানের স্ত্রী ড. রোকেয়া খাতুন উপস্থিত সবাইকে ধন্যবাদ জানিয়ে বলেন, দুজন দু’পেশার মানুষ হলেও আমরা ছিলাম স্বাধীন। কেউ কারও কাজে হস্তক্ষেপ করতাম না। তিনি বলেন, মুনীরের আরও কিছু লেখা আছে, শীঘ্রই সে সব প্রকাশে হাত দেব।

দৈনিক সংবাদের ভারপ্রাপ্ত সম্পাদক খন্দকার মুনীরুজ্জামান করোনোয় আক্রান্ত হয়ে গত বছরের ২৪ নভেম্বর মৃত্যুবরণ করেন। তার মৃত্যুর পর তার শুভাকাক্সক্ষী, রাজনৈতিক সহকর্মী, বন্ধুজন এবং বিশিষ্ট সাংবাদিকরা মুনীরুজ্জামান স্মরণে একটি স্মারক গ্রন্থ প্রকাশের উদ্যোগ গ্রহণ করেন। পরে ‘জীবন নিবেদিত মুক্তির সংগ্রামে’ শীর্ষক স্মারক গ্রন্থটি প্রকাশিত হয়।