ই-কমার্স প্রতিষ্ঠান কিউকম বিভিন্ন পণ্য অনলাইনে কেনাবেচা করে আসছিল। তাদের নিজস্ব ব্র্যান্ডিং করার জন্য ব্যাপকভাবে মোটরসাইকেল বিক্রি করত। বিভিন্ন অফারের মাধ্যমে লোভনীয় দামে পণ্য বিক্রি করার বিজ্ঞাপন দিয়ে আসছিল। এভাবে বিপুল সংখ্যক গ্রাহকের ২৫০ কোটি টাকা আটকে রেখেছে কিউকম। নির্দিষ্ট সময়ের মধ্যে পণ্য না পেয়ে হতাশায় ভুগছেন তারা। অবশেষে এক গ্রাহকের মামলার প্রেক্ষিতে প্রতিষ্ঠানটির সিইও মো. রিপন মিয়াকে গ্রেপ্তার করেছে ঢাকা মহানগর গোয়েন্দা পুলিশের (ডিবি) মতিঝিল বিভাগ। গত রোববার রাতে ধানমন্ডি এলাকা থেকে তাকে আটকের পর এক ভুক্তভোগী গ্রাহক পল্টন থানায় প্রতারণার অভিযোগে একটি মামলা করেন। এছাড়া ডিজিটাল নিরাপত্তা আইনে তার বিরুদ্ধে আরেকটি মামলা করা হয়।
গতকাল দুপুর ১২টায় ডিএমপির মিডিয়া সেন্টারে এক সংবাদ সম্মেলনে অতিরিক্ত কমিশনার (ডিবি) একেএম হাফিজ আক্তার বলেন, করোনাকালীন ই-কমার্স ব্যবসার দ্রুত প্রসার ঘটে। নাগরিকরাও এতে অভস্ত হয়ে উঠেছেন। তবে বেশ কিছু বড় ই-কমার্স প্রতিষ্ঠান ভালোভাবে তাদের কার্যক্রম পরিচালনা করতে পারেনি। তারা অনেক বদনাম করে ফেলেছে। কিউকমও করোনাকালীন তাদের ব্যবসা শুরু করে। কিন্তু কিউকমের অনেক ক্রেতাই পণ্য অর্ডার করে মালামাল না পেয়ে প্রতারিত হচ্ছে। বর্তমানে গ্রাহকরা পণ্যই পাচ্ছে না। বাজারে যেই মোটরসাইকেলের দাম ১ লাখ ৬৭ হাজার টাকা, সেটি তারা ১ লাখ ২০ হাজার টাকায় বিক্রি করার বিজ্ঞাপন দিত। বিপুল সংখ্যক ক্রেতা অর্ডার করে মোটরসাইকেল না পেয়ে হতাশায় ভোগছে। এক্ষেত্রে রিপন মিয়া জানিয়েছে, সে মোটরসাইকেল ডেলিভারি না দিয়ে ১ লাখ ২০ থেকে ৩০ হাজার টাকা চেক দিয়ে দিত গ্রাহকদের। তবে পণ্য বিক্রির তালিকায় লক্ষাধিক গ্রাহকের সংখ্যা উল্লেখ রয়েছে।
যিনি কিউকমের বিরুদ্ধে মামলা করেছেন, তিনি বেশ কয়েকটি মোটরসাইকেল অর্ডার করে পেমেন্ট দিয়েছেন। কিন্তু পেমেন্ট দেয়ার পরেও তিনি মোটরসাইকেলের ডেলিভারি পাননি, এই অভিযোগ করেছেন এজাহারে। রিপনকে গ্রেপ্তারের পর অসংখ্যক ভুক্তভোগী আমাদের কাছে তার বিরুদ্ধে অভিযোগ করতে এসেছে। সে এখন মালামাল না দিয়ে চেক দেয়া শুরু করেছে। এছাড়া চেক দিয়ে সে গ্রাহকদের যে কমিটমেন্ট দিয়েছিল, সেটিরও বরখেলাপ করছে। তবে যাদের চেক দেয়া হয়েছে, তাদের মধ্যে অনেকে টাকা তুলতে পেরেছে বলে জানতে পেরেছি।
বর্তমানে বাংলাদেশ ব্যাংক জুন মাস থেকে এস্ক্রো সিস্টেম চালু করে। এর অধীনে তৃতীয় পক্ষের মাধ্যমে পেমেন্ট গেটওয়ে সিস্টেম চালু করে। তৃতীয় পক্ষ হিসেবে ফোস্টার নামে একটি কোম্পানিকে এ দায়িত্ব দিয়েছে বাংলাদেশ ব্যাংক। এই নিয়ম অনুযায়ী গ্রাহকের পেমেন্টটি ফোস্টারের কাছে থাকবে, পণ্য ডেলিভারির পর পেমেন্ট প্রতিষ্ঠানের কাছে পাঠাবে ফোস্টার। কিউকমের পণ্য ডেলিভারি না দিয়ে চেক প্রদানের বিষয়টি ফোস্টারের নজরে আসে। পরে ফোস্টার কিউকমের সব পেমেন্ট আটকিয়ে দেয়। ফোস্টার এখন পর্যন্ত কিউকমের ৩৯৭ কোটি টাকা মোটরসাইকেলের পেমেন্ট আটকে দিয়েছে বলে রিপন মিয়া আমাদের কাছে দাবি করে। এছাড়া তার কাছে গ্রাহকদের পণ্য ডেলিভারির ২৫০ কোটি টাকা আটকে আছে। তবে গ্রাহকদের টাকা ফিরিয়ে দিয়ে এ সমস্যা থেকে বের হতে পারবে বলে রিপন মিয়া জানিয়েছে।
কিউকমের ৩৯৭ কোটি টাকা ফোস্টারের কাছে আছে। সেক্ষেত্রে গ্রাহকদের টাকা ফেরত পাওয়ার সম্ভাবনা আছে কিনা জানতে চাইলে তিনি বলেন, যেহেতু এটা শুধুমাত্র মোটরসাইকেলের টাকা। মোটরসাইকেলের ডেলিভারি যারা দিয়েছেন তাদের টাকা পাওয়ার সম্ভাবনা আছে।
এগ্রেসিভ মার্কেটিং পলিসি নিয়ে ই-কমার্স প্রতারণার কাজগুলো করছে জানিয়ে ডিবি প্রধান বলেন, ই-কমার্স প্রতিষ্ঠানগুলো বড় ধরনের মূল্যছাড় দিয়ে প্রতারণা করছে। জনগণের স্বার্থে আমরা ই-কমার্স সাইটগুলোকে ধরছি। হাতেগোনা ৪-৫টি প্রতিষ্ঠান অনিয়ম করছে। আশা করছি, যথাযথ পদক্ষেপ নিলে ই-কমার্সের সুফল পাবে নাগরিকরা। তবে মামলা হলেই আমরা তাদের বিরুদ্ধে ব্যবস্থা নিতে পারি, এছাড়া নয়। রিপন অন্য কোন এমএলএম কোম্পানির সঙ্গে জড়িত আছে কিনা সেটি তদন্তের আগ পর্যন্ত নিশ্চিত হতে পারছে না ডিবি।
ই-কর্মাস প্রতারণার সঙ্গে জড়িতদের বিষয়ে হাফিজ আক্তার বলেন, যারা প্রতারণা করছে তাদের বিরুদ্ধে ব্যবস্থা নিচ্ছি এবং নেব। সম্প্রতি দেখা গেছে, অনেকে অনলাইনে টাকা ঋণ দিয়ে সুদের ব্যবসা করছে। তিন হাজার টাকায়, পাঁচ হাজার টাকা দেয়া হবে বলে প্রচারণা চালানো হচ্ছে। তাদের বিরুদ্ধেও ব্যবস্থা নেয়া হবে। যেহেতু ই-কমার্সের মাধ্যমে বিপুল পরিমাণ টাকা লেনদেন হয়, সেহেতু এ বিষয়টি বাণিজ্য মন্ত্রণালয় ভালোভাবে দেখভাল করবেন। গ্রাহকদেরও লোভনীয় অফার দেখে পণ্য অর্ডারের আগে সচেতন হওয়া উচিত।
দুই দিনের রিমান্ড মঞ্জুর- এদিকে দুই মামলায় রিপন মিয়ার দুই দিনের রিমান্ড মঞ্জুর করেছেন আদালত। সোমবার তাকে ঢাকা মহানগর হাকিম আদালতে হাজির করে পুলিশ। এরপর পল্টন থানায় ডিজিটাল নিরাপত্তা আইন ও প্রতারণার অভিযোগে করা মামলার সুষ্ঠু তদন্তের জন্য তাকে ১০ দিনের রিমান্ডে নিতে আবেদন করে মামলার তদন্ত সংস্থা ডিবি। শুনানি শেষে ঢাকা মহানগর হাকিম আশেক ইমাম দুই দিনের রিমান্ড মঞ্জুর করেন।
মঙ্গলবার, ০৫ অক্টোবর ২০২১ , ২০ আশ্বিন ১৪২৮ ২৬ সফর ১৪৪৩
নিজস্ব বার্তা পরিবেশক
ই-কমার্স প্রতিষ্ঠান কিউকম বিভিন্ন পণ্য অনলাইনে কেনাবেচা করে আসছিল। তাদের নিজস্ব ব্র্যান্ডিং করার জন্য ব্যাপকভাবে মোটরসাইকেল বিক্রি করত। বিভিন্ন অফারের মাধ্যমে লোভনীয় দামে পণ্য বিক্রি করার বিজ্ঞাপন দিয়ে আসছিল। এভাবে বিপুল সংখ্যক গ্রাহকের ২৫০ কোটি টাকা আটকে রেখেছে কিউকম। নির্দিষ্ট সময়ের মধ্যে পণ্য না পেয়ে হতাশায় ভুগছেন তারা। অবশেষে এক গ্রাহকের মামলার প্রেক্ষিতে প্রতিষ্ঠানটির সিইও মো. রিপন মিয়াকে গ্রেপ্তার করেছে ঢাকা মহানগর গোয়েন্দা পুলিশের (ডিবি) মতিঝিল বিভাগ। গত রোববার রাতে ধানমন্ডি এলাকা থেকে তাকে আটকের পর এক ভুক্তভোগী গ্রাহক পল্টন থানায় প্রতারণার অভিযোগে একটি মামলা করেন। এছাড়া ডিজিটাল নিরাপত্তা আইনে তার বিরুদ্ধে আরেকটি মামলা করা হয়।
গতকাল দুপুর ১২টায় ডিএমপির মিডিয়া সেন্টারে এক সংবাদ সম্মেলনে অতিরিক্ত কমিশনার (ডিবি) একেএম হাফিজ আক্তার বলেন, করোনাকালীন ই-কমার্স ব্যবসার দ্রুত প্রসার ঘটে। নাগরিকরাও এতে অভস্ত হয়ে উঠেছেন। তবে বেশ কিছু বড় ই-কমার্স প্রতিষ্ঠান ভালোভাবে তাদের কার্যক্রম পরিচালনা করতে পারেনি। তারা অনেক বদনাম করে ফেলেছে। কিউকমও করোনাকালীন তাদের ব্যবসা শুরু করে। কিন্তু কিউকমের অনেক ক্রেতাই পণ্য অর্ডার করে মালামাল না পেয়ে প্রতারিত হচ্ছে। বর্তমানে গ্রাহকরা পণ্যই পাচ্ছে না। বাজারে যেই মোটরসাইকেলের দাম ১ লাখ ৬৭ হাজার টাকা, সেটি তারা ১ লাখ ২০ হাজার টাকায় বিক্রি করার বিজ্ঞাপন দিত। বিপুল সংখ্যক ক্রেতা অর্ডার করে মোটরসাইকেল না পেয়ে হতাশায় ভোগছে। এক্ষেত্রে রিপন মিয়া জানিয়েছে, সে মোটরসাইকেল ডেলিভারি না দিয়ে ১ লাখ ২০ থেকে ৩০ হাজার টাকা চেক দিয়ে দিত গ্রাহকদের। তবে পণ্য বিক্রির তালিকায় লক্ষাধিক গ্রাহকের সংখ্যা উল্লেখ রয়েছে।
যিনি কিউকমের বিরুদ্ধে মামলা করেছেন, তিনি বেশ কয়েকটি মোটরসাইকেল অর্ডার করে পেমেন্ট দিয়েছেন। কিন্তু পেমেন্ট দেয়ার পরেও তিনি মোটরসাইকেলের ডেলিভারি পাননি, এই অভিযোগ করেছেন এজাহারে। রিপনকে গ্রেপ্তারের পর অসংখ্যক ভুক্তভোগী আমাদের কাছে তার বিরুদ্ধে অভিযোগ করতে এসেছে। সে এখন মালামাল না দিয়ে চেক দেয়া শুরু করেছে। এছাড়া চেক দিয়ে সে গ্রাহকদের যে কমিটমেন্ট দিয়েছিল, সেটিরও বরখেলাপ করছে। তবে যাদের চেক দেয়া হয়েছে, তাদের মধ্যে অনেকে টাকা তুলতে পেরেছে বলে জানতে পেরেছি।
বর্তমানে বাংলাদেশ ব্যাংক জুন মাস থেকে এস্ক্রো সিস্টেম চালু করে। এর অধীনে তৃতীয় পক্ষের মাধ্যমে পেমেন্ট গেটওয়ে সিস্টেম চালু করে। তৃতীয় পক্ষ হিসেবে ফোস্টার নামে একটি কোম্পানিকে এ দায়িত্ব দিয়েছে বাংলাদেশ ব্যাংক। এই নিয়ম অনুযায়ী গ্রাহকের পেমেন্টটি ফোস্টারের কাছে থাকবে, পণ্য ডেলিভারির পর পেমেন্ট প্রতিষ্ঠানের কাছে পাঠাবে ফোস্টার। কিউকমের পণ্য ডেলিভারি না দিয়ে চেক প্রদানের বিষয়টি ফোস্টারের নজরে আসে। পরে ফোস্টার কিউকমের সব পেমেন্ট আটকিয়ে দেয়। ফোস্টার এখন পর্যন্ত কিউকমের ৩৯৭ কোটি টাকা মোটরসাইকেলের পেমেন্ট আটকে দিয়েছে বলে রিপন মিয়া আমাদের কাছে দাবি করে। এছাড়া তার কাছে গ্রাহকদের পণ্য ডেলিভারির ২৫০ কোটি টাকা আটকে আছে। তবে গ্রাহকদের টাকা ফিরিয়ে দিয়ে এ সমস্যা থেকে বের হতে পারবে বলে রিপন মিয়া জানিয়েছে।
কিউকমের ৩৯৭ কোটি টাকা ফোস্টারের কাছে আছে। সেক্ষেত্রে গ্রাহকদের টাকা ফেরত পাওয়ার সম্ভাবনা আছে কিনা জানতে চাইলে তিনি বলেন, যেহেতু এটা শুধুমাত্র মোটরসাইকেলের টাকা। মোটরসাইকেলের ডেলিভারি যারা দিয়েছেন তাদের টাকা পাওয়ার সম্ভাবনা আছে।
এগ্রেসিভ মার্কেটিং পলিসি নিয়ে ই-কমার্স প্রতারণার কাজগুলো করছে জানিয়ে ডিবি প্রধান বলেন, ই-কমার্স প্রতিষ্ঠানগুলো বড় ধরনের মূল্যছাড় দিয়ে প্রতারণা করছে। জনগণের স্বার্থে আমরা ই-কমার্স সাইটগুলোকে ধরছি। হাতেগোনা ৪-৫টি প্রতিষ্ঠান অনিয়ম করছে। আশা করছি, যথাযথ পদক্ষেপ নিলে ই-কমার্সের সুফল পাবে নাগরিকরা। তবে মামলা হলেই আমরা তাদের বিরুদ্ধে ব্যবস্থা নিতে পারি, এছাড়া নয়। রিপন অন্য কোন এমএলএম কোম্পানির সঙ্গে জড়িত আছে কিনা সেটি তদন্তের আগ পর্যন্ত নিশ্চিত হতে পারছে না ডিবি।
ই-কর্মাস প্রতারণার সঙ্গে জড়িতদের বিষয়ে হাফিজ আক্তার বলেন, যারা প্রতারণা করছে তাদের বিরুদ্ধে ব্যবস্থা নিচ্ছি এবং নেব। সম্প্রতি দেখা গেছে, অনেকে অনলাইনে টাকা ঋণ দিয়ে সুদের ব্যবসা করছে। তিন হাজার টাকায়, পাঁচ হাজার টাকা দেয়া হবে বলে প্রচারণা চালানো হচ্ছে। তাদের বিরুদ্ধেও ব্যবস্থা নেয়া হবে। যেহেতু ই-কমার্সের মাধ্যমে বিপুল পরিমাণ টাকা লেনদেন হয়, সেহেতু এ বিষয়টি বাণিজ্য মন্ত্রণালয় ভালোভাবে দেখভাল করবেন। গ্রাহকদেরও লোভনীয় অফার দেখে পণ্য অর্ডারের আগে সচেতন হওয়া উচিত।
দুই দিনের রিমান্ড মঞ্জুর- এদিকে দুই মামলায় রিপন মিয়ার দুই দিনের রিমান্ড মঞ্জুর করেছেন আদালত। সোমবার তাকে ঢাকা মহানগর হাকিম আদালতে হাজির করে পুলিশ। এরপর পল্টন থানায় ডিজিটাল নিরাপত্তা আইন ও প্রতারণার অভিযোগে করা মামলার সুষ্ঠু তদন্তের জন্য তাকে ১০ দিনের রিমান্ডে নিতে আবেদন করে মামলার তদন্ত সংস্থা ডিবি। শুনানি শেষে ঢাকা মহানগর হাকিম আশেক ইমাম দুই দিনের রিমান্ড মঞ্জুর করেন।