মমতার শপথ পাঠ নিয়ে জটিলতা, রাজভবন থেকে আসছে না সবুজ সংকেত

গত রোববার ছিল ভবানীপুর উপনির্বাচনের ভোট গণনা। রেকর্ড ভোটে জয়ী হয়েছেন মমতা বন্দোপাধ্যায়। এবার মুখ্যমন্ত্রীর বিধায়ক পদে শপথ গ্রহণ শুধু সময়ের অপেক্ষা। শোনা যাচ্ছে, মহালয়ার ঠিক পরের দিন অর্থাৎ ৭ অক্টোবর শপথ নিতে পারেন তিনি। তবে মমতা বন্দ্যোপাধ্যায়সহ নবনির্বাচিত তিন বিধায়কের শপথবাক্য পাঠ করাবেন কে? কবেই বা এই শপথবাক্য পাঠ করানো হবে? সমস্ত বিষয় নিয়েই এই মুহূর্তে তৈরি হয়েছে চরম জটিলতা। আর এই জটিলতার অন্যতম কারণ, সেই রাজ্য-রাজভবন দ্বন্দ্ব। তাই রাজভবন থেকে সবুজ সংকেত না আসায় এবার মমতার শপথপাঠ নিয়ে অনিশ্চয়তা দেখা দিয়েছে।

সংবিধান অনুযায়ী মন্ত্রী ও বিধায়কদের শপথবাক্য পাঠ করাবেন রাজ্যপাল। সঙ্গে এ কথাও বলা আছে, রাজ্যপাল চাইলে বিধায়কদের শপথবাক্য পাঠ করানোর ক্ষমতা অন্য কারও হাতে (বিশেষ করে বিধানসভার অধ্যক্ষের হাতেই মূলত যা দেয়া হয়) তিনি তুলে দিতে পারেন। সেই মতোই সপ্তদশ বিধানসভার ক্যাবিনেট সদস্যরা যেদিন শপথ নেন, রাজ্যপাল জগদীপ ধনখড়ই সেই শপথবাক্য পাঠ করান। বাকি বিধায়কদের ক্ষেত্রে বিধানসভায় যেদিন শপথবাক্য পাঠ করানো হয়, পোর্টেম স্পিকার সুব্রত মুখোপাধ্যায় এবং স্পিকার বিমান বন্দ্যোপাধ্যায়কে শুধু শপথবাক্য পড়িয়েছিলেন জগদীপ ধনখড়।

এরপরই স্পিকার বিমান বন্দ্যোপাধ্যায়ের হাতে তিনি বাকি বিধায়কদের শপথবাক্য পাঠ করানোর অধিকার ন্যস্ত করেন। সেই মতো বিমান বন্দ্যোপাধ্যায় শপথবাক্যও পড়ান। এই অবধি সবকিছু ঠিকই চলছিল। কিন্তু কিছুদিন আগে রাজভবন থেকে বিধানসভার সচিবালয়ে একটি চিঠি আসে। যেখানে বলা হয়, অধ্যক্ষকে শপথবাক্য পাঠ করানোর যে অধিকার রাজ্যপাল দিয়েছিলেন, তা তিনি প্রত্যাহার করে নিচ্ছেন। অর্থাৎ এবার আর অধ্যক্ষ নন, নতুন বিধায়কদের শপথ নিতে হবে রাজ্যপালের কাছ থেকে।

এর পরই বিধানসভা থেকে আবারও রাজভবনে চিঠি দিয়ে জানানো হয় যে, কোন রাজনৈতিক দলের যে কোন প্রতিনিধিই বিধায়ক পদে জিতে শপথ নিতে আসতে পারেন। তাই এই প্রত্যাহার করা ক্ষমতা যেন অধ্যক্ষকে ফিরিয়ে দেয়া হয়। কিন্তু সেই চিঠির কোন সদর্থক জবাব এখনও বিধানসভার স্পিকারের কাছে পাঠানো হয়নি। অর্থাৎ নতুন নির্বাচিত তিন বিধায়ক মমতা বন্দ্যোপাধ্যায় (ভবানীপুর), জাকির হোসেন (জঙ্গিপুর), আমিরুল ইসলাম (সামশেরগঞ্জ)-এর শপথবাক্য কে পড়াবেন, কবে পড়ানো হবে তা নিয়ে এখনও অনিশ্চিত। তবে এই পর্ব তখনই সম্ভব, যখন রাজভবনের তরফ থেকে কোন সবুজ সংকেত আসবে। কেননা, সংবিধান অনুযায়ী রাজ্যপালই হচ্ছেন মন্ত্রী, বিধায়কদের শপথ পাঠ করানোর প্রথম চাবিকাঠি। তিনি যতক্ষণ না কাউকে তা হস্তান্তর করছেন, ততক্ষণ অন্য কেউ শপথ পাঠ করাতে পারবেন না। এ প্রসঙ্গে অধ্যক্ষ বিমান বন্দ্যোপাধ্যায় বলেন, ‘বিধায়ক হিসেবে মুখ্যমন্ত্রী বিধানসভায় শপথ নেন। সেটাই বাঞ্চনীয়। তবে এখনও রাজ্যপাল কোন অনুমতি দেননি।

এখন প্রশ্ন থাকছে, তবে কী রাজ্যপাল জগদীপ ধনখড়ই বিধায়ক মমতা বন্দ্যোপাধ্যায়কে শপথবাক্য পাঠ করাতে চাইছেন? সে কারণেই কী বিধানসভার হাতে অধিকার দিচ্ছেন না। তেমনটা হলেও নজির তৈরি হবে। কারণ, উপনির্বাচনে জয়ী কোন বিধায়ককে রাজ্যপাল শপথ পাঠ করাচ্ছেন, এমন ঘটনার খুব একটা দৃষ্টান্ত নেই।

মঙ্গলবার, ০৫ অক্টোবর ২০২১ , ২০ আশ্বিন ১৪২৮ ২৬ সফর ১৪৪৩

মমতার শপথ পাঠ নিয়ে জটিলতা, রাজভবন থেকে আসছে না সবুজ সংকেত

দীপক মুখার্জী, কলকাতা

গত রোববার ছিল ভবানীপুর উপনির্বাচনের ভোট গণনা। রেকর্ড ভোটে জয়ী হয়েছেন মমতা বন্দোপাধ্যায়। এবার মুখ্যমন্ত্রীর বিধায়ক পদে শপথ গ্রহণ শুধু সময়ের অপেক্ষা। শোনা যাচ্ছে, মহালয়ার ঠিক পরের দিন অর্থাৎ ৭ অক্টোবর শপথ নিতে পারেন তিনি। তবে মমতা বন্দ্যোপাধ্যায়সহ নবনির্বাচিত তিন বিধায়কের শপথবাক্য পাঠ করাবেন কে? কবেই বা এই শপথবাক্য পাঠ করানো হবে? সমস্ত বিষয় নিয়েই এই মুহূর্তে তৈরি হয়েছে চরম জটিলতা। আর এই জটিলতার অন্যতম কারণ, সেই রাজ্য-রাজভবন দ্বন্দ্ব। তাই রাজভবন থেকে সবুজ সংকেত না আসায় এবার মমতার শপথপাঠ নিয়ে অনিশ্চয়তা দেখা দিয়েছে।

সংবিধান অনুযায়ী মন্ত্রী ও বিধায়কদের শপথবাক্য পাঠ করাবেন রাজ্যপাল। সঙ্গে এ কথাও বলা আছে, রাজ্যপাল চাইলে বিধায়কদের শপথবাক্য পাঠ করানোর ক্ষমতা অন্য কারও হাতে (বিশেষ করে বিধানসভার অধ্যক্ষের হাতেই মূলত যা দেয়া হয়) তিনি তুলে দিতে পারেন। সেই মতোই সপ্তদশ বিধানসভার ক্যাবিনেট সদস্যরা যেদিন শপথ নেন, রাজ্যপাল জগদীপ ধনখড়ই সেই শপথবাক্য পাঠ করান। বাকি বিধায়কদের ক্ষেত্রে বিধানসভায় যেদিন শপথবাক্য পাঠ করানো হয়, পোর্টেম স্পিকার সুব্রত মুখোপাধ্যায় এবং স্পিকার বিমান বন্দ্যোপাধ্যায়কে শুধু শপথবাক্য পড়িয়েছিলেন জগদীপ ধনখড়।

এরপরই স্পিকার বিমান বন্দ্যোপাধ্যায়ের হাতে তিনি বাকি বিধায়কদের শপথবাক্য পাঠ করানোর অধিকার ন্যস্ত করেন। সেই মতো বিমান বন্দ্যোপাধ্যায় শপথবাক্যও পড়ান। এই অবধি সবকিছু ঠিকই চলছিল। কিন্তু কিছুদিন আগে রাজভবন থেকে বিধানসভার সচিবালয়ে একটি চিঠি আসে। যেখানে বলা হয়, অধ্যক্ষকে শপথবাক্য পাঠ করানোর যে অধিকার রাজ্যপাল দিয়েছিলেন, তা তিনি প্রত্যাহার করে নিচ্ছেন। অর্থাৎ এবার আর অধ্যক্ষ নন, নতুন বিধায়কদের শপথ নিতে হবে রাজ্যপালের কাছ থেকে।

এর পরই বিধানসভা থেকে আবারও রাজভবনে চিঠি দিয়ে জানানো হয় যে, কোন রাজনৈতিক দলের যে কোন প্রতিনিধিই বিধায়ক পদে জিতে শপথ নিতে আসতে পারেন। তাই এই প্রত্যাহার করা ক্ষমতা যেন অধ্যক্ষকে ফিরিয়ে দেয়া হয়। কিন্তু সেই চিঠির কোন সদর্থক জবাব এখনও বিধানসভার স্পিকারের কাছে পাঠানো হয়নি। অর্থাৎ নতুন নির্বাচিত তিন বিধায়ক মমতা বন্দ্যোপাধ্যায় (ভবানীপুর), জাকির হোসেন (জঙ্গিপুর), আমিরুল ইসলাম (সামশেরগঞ্জ)-এর শপথবাক্য কে পড়াবেন, কবে পড়ানো হবে তা নিয়ে এখনও অনিশ্চিত। তবে এই পর্ব তখনই সম্ভব, যখন রাজভবনের তরফ থেকে কোন সবুজ সংকেত আসবে। কেননা, সংবিধান অনুযায়ী রাজ্যপালই হচ্ছেন মন্ত্রী, বিধায়কদের শপথ পাঠ করানোর প্রথম চাবিকাঠি। তিনি যতক্ষণ না কাউকে তা হস্তান্তর করছেন, ততক্ষণ অন্য কেউ শপথ পাঠ করাতে পারবেন না। এ প্রসঙ্গে অধ্যক্ষ বিমান বন্দ্যোপাধ্যায় বলেন, ‘বিধায়ক হিসেবে মুখ্যমন্ত্রী বিধানসভায় শপথ নেন। সেটাই বাঞ্চনীয়। তবে এখনও রাজ্যপাল কোন অনুমতি দেননি।

এখন প্রশ্ন থাকছে, তবে কী রাজ্যপাল জগদীপ ধনখড়ই বিধায়ক মমতা বন্দ্যোপাধ্যায়কে শপথবাক্য পাঠ করাতে চাইছেন? সে কারণেই কী বিধানসভার হাতে অধিকার দিচ্ছেন না। তেমনটা হলেও নজির তৈরি হবে। কারণ, উপনির্বাচনে জয়ী কোন বিধায়ককে রাজ্যপাল শপথ পাঠ করাচ্ছেন, এমন ঘটনার খুব একটা দৃষ্টান্ত নেই।