করোনাকালীন শিক্ষা ও বিশ্ব শিক্ষক দিবস

আকমল হোসেন

৫ অক্টোবর বিশ্ব শিক্ষক দিবস, প্রতি বছরের মতো এবারও পৃথিবীর বিভিন্ন দেশের ন্যায় বাংলাদেশেও পালিত হচ্ছে, তবে বিশ্বব্যাপী মহামারী করোনার কারণে আগের মতো দিবসটি কোথাও পালিত হচ্ছে না, বাংলাদেশে তো নয়ই, তবু জাতিসংঘের সহযোগী সংস্থা ইউনেস্কো প্রতিবারের মতো দিবসটির প্রতিপাদ্য বিষয় ঘোষণা করেছে। ২০২১ সালের বিশ্ব শিক্ষক দিবসের প্রতিপাদ্য হচ্ছে ‘ঞবধপযবৎং ধঃ ঃযব ঐবধৎঃ ড়ভ ঃযব ঊফঁপধঃরড়হ জবপড়াবৎু’ যার বাংলা করা হয়েছে শিক্ষকই শিক্ষা পুনরুদ্ধারের কেন্দ্রবিন্দুতে” মহামারী করোনার কারণে বন্ধ থাকা শিক্ষার ক্ষতি পোষাতে শিক্ষকরাই মূল শক্তি, শিক্ষার জন্য শিক্ষকের গুরুত্ব অনুধাবন করেই ইউনেস্কো এমন প্রতিপাদ্য বিষয় নির্ধারণ করেছে।

৫ অক্টোবর এমনই একটি দিবস যেটি পালিত হচ্ছে বিশ্ব শিক্ষক দিবস হিসেবে। ১৯৯৪ সালে ইউনেস্কোর ২৬তম সাধারণ অধিবেশনে ৫ অক্টোবরকে বিশ্ব শিক্ষক হিসেবে পালনের সিদ্ধান্ত গৃহীত হয়। দ্বিতীয় জন্মদাতা অথবা জাতি গড়ার কারিগর বলে বিবেচিত শিক্ষক সমাজের দায়িত্য কর্তব্য ও অধিকার নিশ্চিত করার চিন্তাভাবনা থেকে দিবসটি পালনের উদ্যোগ। শিক্ষার অধিকার মানবিক এবং মৌলিক অধিকার বিবেচনায় এবং জাতিসংঘের ঘোষণা বাস্তবায়নে ১৯৬৬ সালের ফ্রান্সের প্যারিসে আন্তঃসরকার সম্মেলন অনুষ্ঠিত হয়। ওই সভার সুপারিশ থেকে বিশ্বের সব শিক্ষকের মর্যাদা রক্ষা সব রাষ্ট্রের উপযোগী শিক্ষাব্যবস্থা, মানব সম্পদের পরিপূর্ণ বিকাশে সহায়ক কর্মসূচিতে স্বাক্ষর করেন জাতিসংঘের শিক্ষা বিজ্ঞান সাংস্কৃতিক সংস্থার (ইউনেস্কো) মহাপরিচালক ও সম্মেলনের সভাপতি। সম্মেলনে যোগদানকারী সরকারপ্রধান বা প্রতিনিধিরা তাতে সম্মতি জানিয়ে স্বাক্ষর করেন এবং তাদের দেশে সেটা বাস্তবায়নের অঙ্গীকার করেন। সম্মেলনে গৃহীত সুপারিশের মধ্যে প্রধান বিষয়গুলো ছিল শিক্ষকদের মর্যাদা ও সম্মান নিশ্চিতকরণ, মাধ্যমিক স্তরে সরকারি-বেসরকারি সবার জন্য স্তর নির্বিশেষে শ্রেণী বৈষম্যহীন একই শিক্ষা নীতিমালা, শিক্ষার উদ্দেশ্য, শিক্ষার গুণগতমান উন্নয়ন, পদোন্নতি, পেশাগত আচরণ লঙ্ঘনের শাস্তি, নারী শিক্ষকদের জন্য কর্মপযোগী পরিবেশ, শিক্ষকদের অধিকার ও নিরাপত্তা এবং পেশাগত স্বাধীনতা নিশ্চিত করার বিধান ওই সম্মেলনে গৃহীত হয়েছিল। এই কর্মযজ্ঞ বাস্তবায়নে যথেষ্ট টাকার প্রয়োজন, সেটা বিবেচনা করে ওই সংস্থাটি প্রত্যেক দেশকে তার দেশের জিডিপির ৭% বা পরবর্তীতে ৮% শিক্ষা খাতে ব্যয় করার তাগিত দিয়েছিল এবং সদস্য দেশগুলো তাতে একমত হয়েছিল। বিষয়গুলো বিবেচনায় রেখেই স্বাধীন বাংলাদেশে ১৯৭২ সালের সংবিধানে ১৫ ধারায় মৌলিক অধিকার হিসেবে এবং ১৭ ধারায় একই ধারার অসাম্প্রদায়িক সর্বজনীন এবং বিজ্ঞানভিত্তিক শিক্ষা বাস্তবায়নের রাষ্ট্রীয় কমিটমেন্ট ঘোষিত হয়েছিল, বাংলাদেশের বিশিষ্ট বিজ্ঞানী ড. কুদরত-ই-খুদার নেতৃত্বে শিক্ষা কমিশন গঠিত হয়েছিল, একদিকে যুদ্ধ বিধ্বস্ত দেশ, ভঙ্গুর অর্থনীতি অন্যদিকে সাংবিধানিক কমিটমেন্ট এবং ইউনেস্কোকে দেয়া প্রতিশ্রুতি, সব মিলে খুদা কমিশন ওই সময়ের জন্য শিক্ষা খাতে জিডিপির ৫ শতাংশ, পর্যায়ক্রমে বাড়িয়ে ৭ শতাংশ করার সুপারিশ করেছিল।

২০০৬ সালে সেনেগালের রাজধানী ডাকার-এ ইউনেস্কোভুক্ত তৃতীয় বিশ্বের দেশগুলোর শিক্ষামন্ত্রীদের বৈঠকে তাদের আর্থিক সীমাবদ্ধতা বিবেচনা করে আপাতত জিডিপির ৬ শতাংশ ব্যয় করার জন্য প্রতিশ্রুতিবদ্ধ হয়েছিল কিন্তু দুঃখজনক হলেও সত্য বাংলাদেশের জন্য তার অর্ধেকও শিক্ষা খাতে বরাদ্দ করা হয়নি। ২০১৫ সালে দক্ষিণ কোরিয়ার ইনচনে ওয়ার্ল্ড এডুকেশন ফোরামের সম্মেলনে প্রত্যেক দেশে ১২ ক্লাস অর্থাৎ দ্বাদশ শ্রেণী পর্যন্ত শিক্ষার ব্যয়ভার রাষ্ট্র বহন করবে এমন সিদ্ধান্তে বাংলাদেশ সরকার স্বাক্ষর করে এসেছে, কিন্তু সরকার ঘোষিত বাজেটগুলোতে শিক্ষায় বরাদ্দের চিত্রে সরকারের আন্তরিকতার প্রকাশ ঘটেনি, টাকার অবমূল্যায়ন এবং মুদ্রাস্ফীতির কারণে শিক্ষা খাতে বরাদ্দকৃত টাকার অঙ্ক বাড়লেও শতাংশ হারে কমেছে। ১৯৯৫ সালে শিক্ষা খাতে জিডিপির ২.৪ শতাংশ, ২০০০-০১ সালে ২.৩ শতাংশ, ২০০১-০২ সালে ২.২১ শতাংশ, ২০০৯-১০ সালে ২.২ শতাংশ। শিক্ষা খাতে জিডিপির ৮ শতাংশ ৬ শতাংশ ও ৫ শতাংশ বরাদ্দের বিভিন্ন সরকারের রাষ্ট্রীয় প্রতিশ্রুতি থাকলেও সেখানে বরাদ্দ ২.৪ শতাংশের উপরে ৫০ বছরে কখনও উঠেনি, ফলে উপেক্ষিত হয়েছে আমাদের শিক্ষা এবং বঞ্চিত হচ্ছে গোটা শিক্ষক সমাজ, এর মধ্যে বেশি বঞ্চনার স্বীকার বেসরকারি স্কুল-কলেজ ও মাদরাসার শিক্ষক কর্মচারীরা। শিক্ষা খাতে যেটুকুই বাস্তবায়নে ৫০ বছরের শাসক মহল রাষ্ট্রীয় কমিটমেন্ট রক্ষা করেনি। এমপি, মন্ত্রী আর আমলার আর্থিক সুযোগ সুবিধা বাড়লেও সুবিধা বাড়েনি ১০ লক্ষাধিক বেসরকারি শিক্ষক-কর্মচারীর।

আর্থ-সামাজিক বাস্তবতা ও সক্ষমতায় বাংলাদেশের কাছাকাছি এমনকি দুর্বল অবস্থার অনেক দেশও শিক্ষা খাতে বাংলাদেশের তুলনায় অনেক বেশি ব্যয় করছে। নিম্নলিখিত দেশগুলো তাদের জিডিপির নিম্নলিখিত তালিকা অনুযায়ী শিক্ষা খাতে ব্যয় করছে। ভুটান ৪.৮, মালদ্বীপ ১১.২০, ভারত ৩.১ শতাংশ হারে ব্যয় করছে, সেখানে বাংলাদেশের অবস্থান ২.৯ (২০১৮) বাংলাদেশের শিক্ষা ও শিক্ষকদের অবস্থান বিশ্বায়নের বিবেচনায় খুবই দুঃখজনক। দেশের ৮০ ভাগ শিক্ষা এখনও পরিচালিত হচ্ছে বেসরকারি স্কুল কলেজ ও মাদরাসার মাধ্যমে। বাকি ২০ ভাগ সরকারি এবং প্রাইভেট শিক্ষার মাধ্যমে। সরকারি শিক্ষাপ্রতিষ্ঠান ও শিক্ষক-কর্মচারী বেসরকারিদের তুলনায় ভালো থাকলেও আন্তর্জাতিক মানে অনেক নিচে রয়েছে। আর বেসরকারি শিক্ষার ক্ষেত্রে অনন্ত সমস্যা। এ সেক্টরে ১০ লক্ষাধিক শিক্ষক-কর্মচারী এদের মধ্যে ৫ লক্ষাধিক শিক্ষক-কর্মচারী এমপিওভুক্ত হলেও বিরাট একটা অংশ এমপিওভুক্ত নয়। সাড়ে সাত হাজার বেসরকারি শিক্ষক প্রতিষ্ঠানকে বিভিন্ন সময় সরকার থেকে একাডেমিক স্বীকৃতি দিলেও তাদের বেতন ভাতা দেয়া হচ্ছে না ১০-১২ বছর যাবৎ। এমপিওভুক্ত শিক্ষকরা মূল বেতনের শতভাগ পেলেও ১০০০ টাকার বাড়ি ভাড়া ৫০০ টাকার চিকিৎসা ভাতা, উৎসব বোনাস পান শিক্ষকরা মূল বেতনের ২৫ শতাংশ এবং কর্মচারীরা ৫০ শতাংশ। সারা চাকরি জীবনে একবার পদোন্নতি, প্রভাষক থেকে সহকারী অধ্যাপক। সেটাও ১৯৯৫ সালের সুখ্যাত জনবল কাঠামোর মাধ্যমে সাতজন প্রভাষকের মধ্যে দুজন হবেন সহকারী অধ্যাপক, বাকিরা থাকবেন প্রভাষক, তবে ৮ বছর পরে তারা একটি সিলেকশন গ্রেড পাবেন। ২০২০ সালের জুলাইতে জারিকৃত জনবল কাঠামোতে ১৬ বছর সন্তোসজনক চাকরির পর ২ঃ১ অনুপাতে সহকারী অধ্যাপক হবেন তবে তার জন্য ৫টি শর্ত পূরণ করতে হবে, ওই শর্তগুলোকে বা কারা কোন প্রক্রিয়ায় সুপারভিষণ করাবে তার জন্য এখনও কোন নির্দেশনা আসেনি, ১০ বছর চাকরির পর সবাই ৯ম গ্রেড থেকে ৮ম গ্রেডে পদোন্নতির ক্ষেত্রে কোন বিভাগীয় পরীক্ষা নেই, শুধুই সময়ের ভিত্তিতে এটা করার পেশাগত মানবৃদ্ধির জায়গাটা দুর্বল হয়ে পরেছে।

বিশ্বায়নের যুগে আমরা কেউই এটা থেকে দূরে নয়, সরকার তো নয়ই। এর ভালো-মন্দ দুটিই আছে, কিন্তু বাংলাদেশের শিক্ষক সমাজ অসম বিশ্বায়নের দ্বারা নিষ্পেষিত। আন্তর্জাতিক বাজারে বিভিন্ন পণ্য ও সেবার দাম বৃদ্ধির কারণে বাংলাদেশের বাজারেও সেটা বাড়ছে এবং সরকারও সেটা বাড়িয়ে থাকে, পুঁজিবাদী বা খোলা বাজার অর্থনীতির এটাই নাকি নীতি? ক্ষেত্র বিশেষে সরকার জনগণের স্বার্থ বিবেচনা করে সে সঙ্গে ভর্তুকি দিয়ে থাকেন। কিন্তু বেসরকারি শিক্ষক-কর্মচারীদের ক্ষেত্রে সেটা হচ্ছে না। দ্রব্যমূল্য পরিস্থিতি বিবেচনা করে আমাদের দেশে, এমপি, মন্ত্রী, বিচারপতিদের বেতন ভাতা বাড়ানো হয়েছে অনেকবার, সেই তুলনায় স্বাধীনতার ৫০ বছরে বেসরকারি শিক্ষাপ্রতিষ্ঠানের শিক্ষক-কর্মচারীদের আর্থিক বিষয়টি সুনিশ্চিত হয়নি। বাড়ি ভাড়া অধ্যক্ষ থেকে পিয়ন সবারই মাসিক ১০০০ টাকা আর চিকিৎসা ভাতা মাসিক ৫০০ টাকায় আটকে আছে। বিশ্বায়নের কথা বলে বাংলাদেশের পণ্য ও সেবা কর্মের দাম বৃদ্ধি করা হয়, সেখানে বিশ্বায়নের কারণে শিক্ষক-কর্মচারীর বেতন বাড়বেনা কেন? তৃতীয় বিশ্বের দেশ ভেনিজুয়েলায় একজন প্রাইমারি স্কুলশিক্ষকের মাসিক ৮০০ ডলার, হাইস্কুলের শিক্ষককে মাসিক ১৪০০ ডলার, ভারতে একজন প্রভাষককে ২৮০০০ রুপি একজন সহকারী অধ্যাপককে ৪২০০০ রুপি বেতন দিচ্ছেন, তারা কীভাবে পারেন? বিষয়টি শাসক মহলের বিবেচনা করা প্রয়োজন।

শিক্ষক সংগঠনের অবস্থান : বিশ্ব শিক্ষক দিবসের ঐতিহাসিক ঘোষণা এবং ১৯৭২ সালের সংবিধানের আলোকে শিক্ষা ব্যবস্থার জাতীয়করণের দাবিতে বাংলাদেশের শিক্ষকরা বিভিন্ন সময়ের মতো বর্তমানে আন্দোলনে রয়েছেন। আন্দোলন সংগ্রামের মাধ্যমেই ১৯৮২ সালের জানুয়ারি মাসে থেকে মূল বেতনের ৫০ শতাংশ নিয়ে এমপিওভুক্ত হয়ে বর্তমানে মূল বেতনের ১০০ ভাগের অধিকারী হয়েছেন। বাড়িভাড়া ১০০০ টাকা, চিকিৎসা ভাতা ৫০০ টাকা, উৎসব বোনাস মূলবেতনের ২৫ ভাগ ও ১টি পদোন্নতির শিকলে আটকে আছে বর্তমান সরকার বাংলা নববর্ষের বৈশাখী ভাতা দিলেও সেটা পেতে ২ বছর সময় লেগেছে, বকেয়াটা আর দেয়া হয়নি, আদালতের মাধ্যমে আদায় করা যে কত কঠিন তা ভুক্তভোগী ছাড়া কারো বোঝার কথা নয়Ñএক সময় শিক্ষকদেও দাবি-দাওয়া আদায়ে বৃহৎ আন্দোলন হয়েছে। এখন আর তেমনটা হয় না, সরকারের পক্ষ থেকে শিক্ষকদের মধ্যে যেমন বিভাজনের অভিযোগ রয়েছে তেমনি সরকার সমর্থিত শিক্ষক নেতাদের দোদুল্যমানতার কারণে এবং শিক্ষক আন্দোলন পেশাদারিত্ব ছেড়ে কেউ সরকারকে ক্ষমতায় রাখা আবার কেউ ক্ষমতাচ্যুত করার আন্দোলনে বেশি তৎপর, এই সুযোগে সাধারণ শিক্ষকরা নিরাপদ দূরত্বে সুবিধাবাদী অবস্থানে বসে আছে।

গভর্নিংবডি দলীয়করণ হওয়ায় সামাজিক মর্যাদায়ও শিক্ষকরা পিছিয়ে। ডিগ্রি কলেজ এবং উচ্চ মাধ্যমিক বিদ্যালয়গুলোতে সংসদ সদস্যরা সভাপতি হতে পারবে না এমন নির্দেশনা থাকলেও উচ্চ মাধ্যমক বিদ্যালয়গুলোতে সংসদ সদস্যদের মনোনীতরাই সভাপতি রয়েছে, আর ডিগ্রি কলেজগুলোতে সংসদ সদস্যদের অলিখিত নিদেশনার বাইরে কিছুই করার থাকছে না, এ অবস্থা থেকে শিক্ষক সমাজ মুক্তি পাওয়ার জন্য শিক্ষাব্যবস্থার জাতীয়করণ পৃথক নিয়োগ কমিশন, বিভাগীয় পরীক্ষার মাধ্যমে প্রভাষক থেকে অধ্যাপক পর্যন্ত পদোন্নতি চান। শিক্ষকরা শুধু ট্রেড ইউনিয়নের জায়গা থেকে তাদের ভূমিকা পালন নয়, জাতি গড়ার কারিগর হিসেবে, দক্ষ, যোগ্য মানবসম্পদ তৈরিতে অবদান রাখতে চান। তাদের দিয়ে এই কাজগুলো করে নিতে সরকারকে উদ্যোগী হতে হবে, শিক্ষার দর্শন, ব্যবস্থাপনা ও অর্থায়নের ক্ষেত্রে গুরুত্ব বাড়াতে হবে, দলীয় সংকীর্ণতার ঊর্ধ্বে উঠে মেধাবীদের শিক্ষার সঙ্গে সম্পৃক্ত করার বিকল্প নেই। ইউনেস্কো এবং সংবিধানের শিক্ষা প্রসঙ্গে তারা যে অঙ্গিকারবদ্ধ হয়েছেন তা যথাযথ বাস্তবায়নের মাধ্যমে বাংলাদেশের শিক্ষার মান বৃদ্ধিসহ বিশ্ব শিক্ষক দিবসের তাৎপর্য রক্ষা করা সম্ভব।

[লেখক : কলেজ অধ্যক্ষ, সাংগঠনিক সম্পাদক বাংলাদেশ কলেজ-বিশ্ববিদ্যালয় শিক্ষক সমিতি, কেন্দ্রীয় কমিটি]

মঙ্গলবার, ০৫ অক্টোবর ২০২১ , ২০ আশ্বিন ১৪২৮ ২৬ সফর ১৪৪৩

করোনাকালীন শিক্ষা ও বিশ্ব শিক্ষক দিবস

আকমল হোসেন

৫ অক্টোবর বিশ্ব শিক্ষক দিবস, প্রতি বছরের মতো এবারও পৃথিবীর বিভিন্ন দেশের ন্যায় বাংলাদেশেও পালিত হচ্ছে, তবে বিশ্বব্যাপী মহামারী করোনার কারণে আগের মতো দিবসটি কোথাও পালিত হচ্ছে না, বাংলাদেশে তো নয়ই, তবু জাতিসংঘের সহযোগী সংস্থা ইউনেস্কো প্রতিবারের মতো দিবসটির প্রতিপাদ্য বিষয় ঘোষণা করেছে। ২০২১ সালের বিশ্ব শিক্ষক দিবসের প্রতিপাদ্য হচ্ছে ‘ঞবধপযবৎং ধঃ ঃযব ঐবধৎঃ ড়ভ ঃযব ঊফঁপধঃরড়হ জবপড়াবৎু’ যার বাংলা করা হয়েছে শিক্ষকই শিক্ষা পুনরুদ্ধারের কেন্দ্রবিন্দুতে” মহামারী করোনার কারণে বন্ধ থাকা শিক্ষার ক্ষতি পোষাতে শিক্ষকরাই মূল শক্তি, শিক্ষার জন্য শিক্ষকের গুরুত্ব অনুধাবন করেই ইউনেস্কো এমন প্রতিপাদ্য বিষয় নির্ধারণ করেছে।

৫ অক্টোবর এমনই একটি দিবস যেটি পালিত হচ্ছে বিশ্ব শিক্ষক দিবস হিসেবে। ১৯৯৪ সালে ইউনেস্কোর ২৬তম সাধারণ অধিবেশনে ৫ অক্টোবরকে বিশ্ব শিক্ষক হিসেবে পালনের সিদ্ধান্ত গৃহীত হয়। দ্বিতীয় জন্মদাতা অথবা জাতি গড়ার কারিগর বলে বিবেচিত শিক্ষক সমাজের দায়িত্য কর্তব্য ও অধিকার নিশ্চিত করার চিন্তাভাবনা থেকে দিবসটি পালনের উদ্যোগ। শিক্ষার অধিকার মানবিক এবং মৌলিক অধিকার বিবেচনায় এবং জাতিসংঘের ঘোষণা বাস্তবায়নে ১৯৬৬ সালের ফ্রান্সের প্যারিসে আন্তঃসরকার সম্মেলন অনুষ্ঠিত হয়। ওই সভার সুপারিশ থেকে বিশ্বের সব শিক্ষকের মর্যাদা রক্ষা সব রাষ্ট্রের উপযোগী শিক্ষাব্যবস্থা, মানব সম্পদের পরিপূর্ণ বিকাশে সহায়ক কর্মসূচিতে স্বাক্ষর করেন জাতিসংঘের শিক্ষা বিজ্ঞান সাংস্কৃতিক সংস্থার (ইউনেস্কো) মহাপরিচালক ও সম্মেলনের সভাপতি। সম্মেলনে যোগদানকারী সরকারপ্রধান বা প্রতিনিধিরা তাতে সম্মতি জানিয়ে স্বাক্ষর করেন এবং তাদের দেশে সেটা বাস্তবায়নের অঙ্গীকার করেন। সম্মেলনে গৃহীত সুপারিশের মধ্যে প্রধান বিষয়গুলো ছিল শিক্ষকদের মর্যাদা ও সম্মান নিশ্চিতকরণ, মাধ্যমিক স্তরে সরকারি-বেসরকারি সবার জন্য স্তর নির্বিশেষে শ্রেণী বৈষম্যহীন একই শিক্ষা নীতিমালা, শিক্ষার উদ্দেশ্য, শিক্ষার গুণগতমান উন্নয়ন, পদোন্নতি, পেশাগত আচরণ লঙ্ঘনের শাস্তি, নারী শিক্ষকদের জন্য কর্মপযোগী পরিবেশ, শিক্ষকদের অধিকার ও নিরাপত্তা এবং পেশাগত স্বাধীনতা নিশ্চিত করার বিধান ওই সম্মেলনে গৃহীত হয়েছিল। এই কর্মযজ্ঞ বাস্তবায়নে যথেষ্ট টাকার প্রয়োজন, সেটা বিবেচনা করে ওই সংস্থাটি প্রত্যেক দেশকে তার দেশের জিডিপির ৭% বা পরবর্তীতে ৮% শিক্ষা খাতে ব্যয় করার তাগিত দিয়েছিল এবং সদস্য দেশগুলো তাতে একমত হয়েছিল। বিষয়গুলো বিবেচনায় রেখেই স্বাধীন বাংলাদেশে ১৯৭২ সালের সংবিধানে ১৫ ধারায় মৌলিক অধিকার হিসেবে এবং ১৭ ধারায় একই ধারার অসাম্প্রদায়িক সর্বজনীন এবং বিজ্ঞানভিত্তিক শিক্ষা বাস্তবায়নের রাষ্ট্রীয় কমিটমেন্ট ঘোষিত হয়েছিল, বাংলাদেশের বিশিষ্ট বিজ্ঞানী ড. কুদরত-ই-খুদার নেতৃত্বে শিক্ষা কমিশন গঠিত হয়েছিল, একদিকে যুদ্ধ বিধ্বস্ত দেশ, ভঙ্গুর অর্থনীতি অন্যদিকে সাংবিধানিক কমিটমেন্ট এবং ইউনেস্কোকে দেয়া প্রতিশ্রুতি, সব মিলে খুদা কমিশন ওই সময়ের জন্য শিক্ষা খাতে জিডিপির ৫ শতাংশ, পর্যায়ক্রমে বাড়িয়ে ৭ শতাংশ করার সুপারিশ করেছিল।

২০০৬ সালে সেনেগালের রাজধানী ডাকার-এ ইউনেস্কোভুক্ত তৃতীয় বিশ্বের দেশগুলোর শিক্ষামন্ত্রীদের বৈঠকে তাদের আর্থিক সীমাবদ্ধতা বিবেচনা করে আপাতত জিডিপির ৬ শতাংশ ব্যয় করার জন্য প্রতিশ্রুতিবদ্ধ হয়েছিল কিন্তু দুঃখজনক হলেও সত্য বাংলাদেশের জন্য তার অর্ধেকও শিক্ষা খাতে বরাদ্দ করা হয়নি। ২০১৫ সালে দক্ষিণ কোরিয়ার ইনচনে ওয়ার্ল্ড এডুকেশন ফোরামের সম্মেলনে প্রত্যেক দেশে ১২ ক্লাস অর্থাৎ দ্বাদশ শ্রেণী পর্যন্ত শিক্ষার ব্যয়ভার রাষ্ট্র বহন করবে এমন সিদ্ধান্তে বাংলাদেশ সরকার স্বাক্ষর করে এসেছে, কিন্তু সরকার ঘোষিত বাজেটগুলোতে শিক্ষায় বরাদ্দের চিত্রে সরকারের আন্তরিকতার প্রকাশ ঘটেনি, টাকার অবমূল্যায়ন এবং মুদ্রাস্ফীতির কারণে শিক্ষা খাতে বরাদ্দকৃত টাকার অঙ্ক বাড়লেও শতাংশ হারে কমেছে। ১৯৯৫ সালে শিক্ষা খাতে জিডিপির ২.৪ শতাংশ, ২০০০-০১ সালে ২.৩ শতাংশ, ২০০১-০২ সালে ২.২১ শতাংশ, ২০০৯-১০ সালে ২.২ শতাংশ। শিক্ষা খাতে জিডিপির ৮ শতাংশ ৬ শতাংশ ও ৫ শতাংশ বরাদ্দের বিভিন্ন সরকারের রাষ্ট্রীয় প্রতিশ্রুতি থাকলেও সেখানে বরাদ্দ ২.৪ শতাংশের উপরে ৫০ বছরে কখনও উঠেনি, ফলে উপেক্ষিত হয়েছে আমাদের শিক্ষা এবং বঞ্চিত হচ্ছে গোটা শিক্ষক সমাজ, এর মধ্যে বেশি বঞ্চনার স্বীকার বেসরকারি স্কুল-কলেজ ও মাদরাসার শিক্ষক কর্মচারীরা। শিক্ষা খাতে যেটুকুই বাস্তবায়নে ৫০ বছরের শাসক মহল রাষ্ট্রীয় কমিটমেন্ট রক্ষা করেনি। এমপি, মন্ত্রী আর আমলার আর্থিক সুযোগ সুবিধা বাড়লেও সুবিধা বাড়েনি ১০ লক্ষাধিক বেসরকারি শিক্ষক-কর্মচারীর।

আর্থ-সামাজিক বাস্তবতা ও সক্ষমতায় বাংলাদেশের কাছাকাছি এমনকি দুর্বল অবস্থার অনেক দেশও শিক্ষা খাতে বাংলাদেশের তুলনায় অনেক বেশি ব্যয় করছে। নিম্নলিখিত দেশগুলো তাদের জিডিপির নিম্নলিখিত তালিকা অনুযায়ী শিক্ষা খাতে ব্যয় করছে। ভুটান ৪.৮, মালদ্বীপ ১১.২০, ভারত ৩.১ শতাংশ হারে ব্যয় করছে, সেখানে বাংলাদেশের অবস্থান ২.৯ (২০১৮) বাংলাদেশের শিক্ষা ও শিক্ষকদের অবস্থান বিশ্বায়নের বিবেচনায় খুবই দুঃখজনক। দেশের ৮০ ভাগ শিক্ষা এখনও পরিচালিত হচ্ছে বেসরকারি স্কুল কলেজ ও মাদরাসার মাধ্যমে। বাকি ২০ ভাগ সরকারি এবং প্রাইভেট শিক্ষার মাধ্যমে। সরকারি শিক্ষাপ্রতিষ্ঠান ও শিক্ষক-কর্মচারী বেসরকারিদের তুলনায় ভালো থাকলেও আন্তর্জাতিক মানে অনেক নিচে রয়েছে। আর বেসরকারি শিক্ষার ক্ষেত্রে অনন্ত সমস্যা। এ সেক্টরে ১০ লক্ষাধিক শিক্ষক-কর্মচারী এদের মধ্যে ৫ লক্ষাধিক শিক্ষক-কর্মচারী এমপিওভুক্ত হলেও বিরাট একটা অংশ এমপিওভুক্ত নয়। সাড়ে সাত হাজার বেসরকারি শিক্ষক প্রতিষ্ঠানকে বিভিন্ন সময় সরকার থেকে একাডেমিক স্বীকৃতি দিলেও তাদের বেতন ভাতা দেয়া হচ্ছে না ১০-১২ বছর যাবৎ। এমপিওভুক্ত শিক্ষকরা মূল বেতনের শতভাগ পেলেও ১০০০ টাকার বাড়ি ভাড়া ৫০০ টাকার চিকিৎসা ভাতা, উৎসব বোনাস পান শিক্ষকরা মূল বেতনের ২৫ শতাংশ এবং কর্মচারীরা ৫০ শতাংশ। সারা চাকরি জীবনে একবার পদোন্নতি, প্রভাষক থেকে সহকারী অধ্যাপক। সেটাও ১৯৯৫ সালের সুখ্যাত জনবল কাঠামোর মাধ্যমে সাতজন প্রভাষকের মধ্যে দুজন হবেন সহকারী অধ্যাপক, বাকিরা থাকবেন প্রভাষক, তবে ৮ বছর পরে তারা একটি সিলেকশন গ্রেড পাবেন। ২০২০ সালের জুলাইতে জারিকৃত জনবল কাঠামোতে ১৬ বছর সন্তোসজনক চাকরির পর ২ঃ১ অনুপাতে সহকারী অধ্যাপক হবেন তবে তার জন্য ৫টি শর্ত পূরণ করতে হবে, ওই শর্তগুলোকে বা কারা কোন প্রক্রিয়ায় সুপারভিষণ করাবে তার জন্য এখনও কোন নির্দেশনা আসেনি, ১০ বছর চাকরির পর সবাই ৯ম গ্রেড থেকে ৮ম গ্রেডে পদোন্নতির ক্ষেত্রে কোন বিভাগীয় পরীক্ষা নেই, শুধুই সময়ের ভিত্তিতে এটা করার পেশাগত মানবৃদ্ধির জায়গাটা দুর্বল হয়ে পরেছে।

বিশ্বায়নের যুগে আমরা কেউই এটা থেকে দূরে নয়, সরকার তো নয়ই। এর ভালো-মন্দ দুটিই আছে, কিন্তু বাংলাদেশের শিক্ষক সমাজ অসম বিশ্বায়নের দ্বারা নিষ্পেষিত। আন্তর্জাতিক বাজারে বিভিন্ন পণ্য ও সেবার দাম বৃদ্ধির কারণে বাংলাদেশের বাজারেও সেটা বাড়ছে এবং সরকারও সেটা বাড়িয়ে থাকে, পুঁজিবাদী বা খোলা বাজার অর্থনীতির এটাই নাকি নীতি? ক্ষেত্র বিশেষে সরকার জনগণের স্বার্থ বিবেচনা করে সে সঙ্গে ভর্তুকি দিয়ে থাকেন। কিন্তু বেসরকারি শিক্ষক-কর্মচারীদের ক্ষেত্রে সেটা হচ্ছে না। দ্রব্যমূল্য পরিস্থিতি বিবেচনা করে আমাদের দেশে, এমপি, মন্ত্রী, বিচারপতিদের বেতন ভাতা বাড়ানো হয়েছে অনেকবার, সেই তুলনায় স্বাধীনতার ৫০ বছরে বেসরকারি শিক্ষাপ্রতিষ্ঠানের শিক্ষক-কর্মচারীদের আর্থিক বিষয়টি সুনিশ্চিত হয়নি। বাড়ি ভাড়া অধ্যক্ষ থেকে পিয়ন সবারই মাসিক ১০০০ টাকা আর চিকিৎসা ভাতা মাসিক ৫০০ টাকায় আটকে আছে। বিশ্বায়নের কথা বলে বাংলাদেশের পণ্য ও সেবা কর্মের দাম বৃদ্ধি করা হয়, সেখানে বিশ্বায়নের কারণে শিক্ষক-কর্মচারীর বেতন বাড়বেনা কেন? তৃতীয় বিশ্বের দেশ ভেনিজুয়েলায় একজন প্রাইমারি স্কুলশিক্ষকের মাসিক ৮০০ ডলার, হাইস্কুলের শিক্ষককে মাসিক ১৪০০ ডলার, ভারতে একজন প্রভাষককে ২৮০০০ রুপি একজন সহকারী অধ্যাপককে ৪২০০০ রুপি বেতন দিচ্ছেন, তারা কীভাবে পারেন? বিষয়টি শাসক মহলের বিবেচনা করা প্রয়োজন।

শিক্ষক সংগঠনের অবস্থান : বিশ্ব শিক্ষক দিবসের ঐতিহাসিক ঘোষণা এবং ১৯৭২ সালের সংবিধানের আলোকে শিক্ষা ব্যবস্থার জাতীয়করণের দাবিতে বাংলাদেশের শিক্ষকরা বিভিন্ন সময়ের মতো বর্তমানে আন্দোলনে রয়েছেন। আন্দোলন সংগ্রামের মাধ্যমেই ১৯৮২ সালের জানুয়ারি মাসে থেকে মূল বেতনের ৫০ শতাংশ নিয়ে এমপিওভুক্ত হয়ে বর্তমানে মূল বেতনের ১০০ ভাগের অধিকারী হয়েছেন। বাড়িভাড়া ১০০০ টাকা, চিকিৎসা ভাতা ৫০০ টাকা, উৎসব বোনাস মূলবেতনের ২৫ ভাগ ও ১টি পদোন্নতির শিকলে আটকে আছে বর্তমান সরকার বাংলা নববর্ষের বৈশাখী ভাতা দিলেও সেটা পেতে ২ বছর সময় লেগেছে, বকেয়াটা আর দেয়া হয়নি, আদালতের মাধ্যমে আদায় করা যে কত কঠিন তা ভুক্তভোগী ছাড়া কারো বোঝার কথা নয়Ñএক সময় শিক্ষকদেও দাবি-দাওয়া আদায়ে বৃহৎ আন্দোলন হয়েছে। এখন আর তেমনটা হয় না, সরকারের পক্ষ থেকে শিক্ষকদের মধ্যে যেমন বিভাজনের অভিযোগ রয়েছে তেমনি সরকার সমর্থিত শিক্ষক নেতাদের দোদুল্যমানতার কারণে এবং শিক্ষক আন্দোলন পেশাদারিত্ব ছেড়ে কেউ সরকারকে ক্ষমতায় রাখা আবার কেউ ক্ষমতাচ্যুত করার আন্দোলনে বেশি তৎপর, এই সুযোগে সাধারণ শিক্ষকরা নিরাপদ দূরত্বে সুবিধাবাদী অবস্থানে বসে আছে।

গভর্নিংবডি দলীয়করণ হওয়ায় সামাজিক মর্যাদায়ও শিক্ষকরা পিছিয়ে। ডিগ্রি কলেজ এবং উচ্চ মাধ্যমিক বিদ্যালয়গুলোতে সংসদ সদস্যরা সভাপতি হতে পারবে না এমন নির্দেশনা থাকলেও উচ্চ মাধ্যমক বিদ্যালয়গুলোতে সংসদ সদস্যদের মনোনীতরাই সভাপতি রয়েছে, আর ডিগ্রি কলেজগুলোতে সংসদ সদস্যদের অলিখিত নিদেশনার বাইরে কিছুই করার থাকছে না, এ অবস্থা থেকে শিক্ষক সমাজ মুক্তি পাওয়ার জন্য শিক্ষাব্যবস্থার জাতীয়করণ পৃথক নিয়োগ কমিশন, বিভাগীয় পরীক্ষার মাধ্যমে প্রভাষক থেকে অধ্যাপক পর্যন্ত পদোন্নতি চান। শিক্ষকরা শুধু ট্রেড ইউনিয়নের জায়গা থেকে তাদের ভূমিকা পালন নয়, জাতি গড়ার কারিগর হিসেবে, দক্ষ, যোগ্য মানবসম্পদ তৈরিতে অবদান রাখতে চান। তাদের দিয়ে এই কাজগুলো করে নিতে সরকারকে উদ্যোগী হতে হবে, শিক্ষার দর্শন, ব্যবস্থাপনা ও অর্থায়নের ক্ষেত্রে গুরুত্ব বাড়াতে হবে, দলীয় সংকীর্ণতার ঊর্ধ্বে উঠে মেধাবীদের শিক্ষার সঙ্গে সম্পৃক্ত করার বিকল্প নেই। ইউনেস্কো এবং সংবিধানের শিক্ষা প্রসঙ্গে তারা যে অঙ্গিকারবদ্ধ হয়েছেন তা যথাযথ বাস্তবায়নের মাধ্যমে বাংলাদেশের শিক্ষার মান বৃদ্ধিসহ বিশ্ব শিক্ষক দিবসের তাৎপর্য রক্ষা করা সম্ভব।

[লেখক : কলেজ অধ্যক্ষ, সাংগঠনিক সম্পাদক বাংলাদেশ কলেজ-বিশ্ববিদ্যালয় শিক্ষক সমিতি, কেন্দ্রীয় কমিটি]