সহকারী অধ্যাপক পদে পদোন্নতিতে হ-য-ব-র-ল নিয়ম

শরীফুর রহমান আদিল

সরকার এমপিওভুক্ত শিক্ষাপ্রতিষ্ঠানের জন্য এমপিও নীতিমালা-২১ প্রণয়ন করে। এ নীতিমালায় পূর্বে প্রণীত নীতিমালার চাইতে কিছুক্ষেত্রে ইতিবাচক পরিবর্তন আনা হয় তন্নধ্যে কলেজ পর্যায়ে সহকারী অধ্যাপক পদে ৫ঃ২ অনুপাত প্রথাটি বিলুপ্ত করে তারস্থলে মোট শিক্ষকের ৫০ শতাংশ শিক্ষককে মূল্যায়নের বিভিন্ন সূচকের ভিত্তিতে সহকারী অধ্যাপক পদে পদোন্নতি দেয়ার বিষয়টি অন্যতম। অর্থাৎ, এমপিও নীতিমালা-২০২১ এর ১১.৪ ধারায় প্রভাষক থেকে সহকারী অধ্যাপক পদোন্নতির বিষয়ে বলা আছে। এ ধারা অনুযায়ী-প্রভাষকরা এমপিওভুক্তের ৮ বছর পূর্ণ হলে ৫০ শতাংশ শিক্ষক ‘সহকারী অধ্যাপক’ পদে পদোন্নতি পাবেন। বাকি শিক্ষকরা চাকরিকাল ১০ বছর সন্তোষজনকভাবে পূর্ণ করলে উচ্চতর গ্রেড পাবেন এবং পরবর্তীতে ৬ বছর নিরবচ্ছিন্নভাবে চাকরি করলে অর্থাৎ ১৬ বছর পূর্ণ হলে তারা ‘সহকারী অধ্যাপক’ পদে পদোন্নতি পাবেন। কিন্তু এ ধারা নিয়ে তৈরি হয়েছে ধোয়াশা। তৈরি হয়েছে হতাশা ও জেগেছে বিভিন্ন প্রশ্ন। এসব প্রশ্নের মধ্যে রয়েছে।

১, উক্ত বিধিটি কি নতুন কলেজগুলোর ক্ষেত্রে প্রযোজ্য না নতুন- পুরোনো সব কলেজের জন্য প্রযোজ্য? এটা যদি কেবল নতুন কলেজের জন্য প্রযোজ্য হয় তবে পুরাতন কলেজগুলো কোন নিয়ম অনুসরণ করে শিক্ষকদের ‘সহকারী অধ্যাপক’ পদে পদোন্নতি দেয়া হবে? আর যদি পুরোনো কলেজের ক্ষেত্রেও এ বিধি প্রযোজ্য হয় তবে এ ক্ষেত্রে কি ৫০ শতাংশ যে নিয়ম তা কি বিদ্যমান থাকবে? যদি জারী না থাকে তবে বিষয়টি ভালো ও প্রশংসনীয় উদ্যোগও বটে কিন্তু যদি জারী থাকে তবে তারা তো মূল্যায়ন ছাড়াই কেবল জ্যেষ্ঠতার ভিত্তিতে ‘সহকারী অধ্যাপক’ পদে পদোন্নতি পাবেন তবে মূল্যায়নের বিভিন্ন সূচকের কথা কেন নীতিমালায় উল্লেখ করা হলো? অন্যকথায়, এ মূল্যায়নের সূচক কোথায় কখন প্রয়োগ করা হবে?

২, আবার যদি সহকারী অধ্যাপক পদে ৫০ শতাংশ কোটা বিদ্যমান রেখে ১৬ বছর পূর্ণ হওয়া শিক্ষকদের সহকারী অধ্যাপক পদে পদোন্নতি দেয়া হয় তবে পরবর্তী যে সব শিক্ষক উচ্চতর ডিগ্রিধারী ও জার্নালে প্রকাশনাসহ আরও বেশকিছু প্রশংসনীয় যোগ্যতা রয়েছে তারা তো ‘সহকারী অধ্যাপক’ পদে পদোন্নতির জন্য আবেদনই করতে পারবে না। কেননা, তার আগেই তো সহকারী অধ্যাপকের পদ পূর্ণ হয়ে যাবে। এক্ষেত্রে মূল্যায়নের সূচক প্রণয়নের উদ্দেশ্য বাস্তবায়িত হবে কি? অন্যকথায়, এসব শিক্ষকের প্রতি কি বৈষম্যের করা কিংবা তাদের যোগ্যতাকে অবমূল্যয়ন করা হবে না?

৩, এমপিও নীতিমালার ১১.৪ ধারার সহকারী অধ্যাপক পদে পদোন্নতি পাওয়ার জন্য বিধিটি জাতীয় বিশ^বিদ্যালয় কর্তৃক প্রণীত বেসরকারী শিক্ষক চাকরি বিধি-২০১৯ এর সঙ্গে সাংঘর্ষিক। কেননা, জাতীয় বিশ^বিদ্যালয়ের বিধি অনুসারে সহকারী অধ্যাপক পদে পদোন্নতির জন্য শিক্ষকদের কমপক্ষে ৫ বছর সন্তোষজনক শিক্ষকতার অভিজ্ঞতা ও কমপক্ষে দুটি গবেষণামূলক প্রকাশনা জার্নালে প্রকাশিত হওয়ার বাধ্যবাধ্যকতা রয়েছে।

৪, বর্তমানে অনেক স্নাতক কলেজ রয়েছে যেখানে ২০ কিংবা ৩০ বা তারোধিক শিক্ষক রয়েছে এবং এসব কলেজে পূর্বের নীতিমালা অনুযায়ী প্রতি ৭ জনে ২ জন শিক্ষক সহকারী অধ্যাপক পদে পদোন্নতি পেয়েছে। বাকি শিক্ষকদের মধ্যে একটি অংশ ১৬-২২ বছর প্রভাষক পদে চাকরি করছেন। বর্তমান নীতিমালায় ১৬ বছর পূর্ণ হলে সহকারী অধ্যাপক হওয়ার যে বিধান সে অনুযায়ী পদোন্নতি পেলে তাদের কয়েক বছর পরে নিয়োগ পাওয়া শিক্ষক যাদের চাকুরী অভিজ্ঞতা ৬-১৫ বছর তারাতো পদোন্নতি প্রাপ্ত শিক্ষকদের অবসরে যাওয়ার আগ পর্ষন্ত যতই উচ্চতর ডিগ্রী, জার্নালে প্রকাশনা সহ অন্যান্য মূল্যায়নের সূচকের অধিকারী হোক না কেন ৫০ শতাংশ কোটা পূরণ হয়ে যাওয়ায় তারাতো আবেদনই করতে পারবে না। এ বিষয়গুলো মন্ত্রণালয় কীভাবে মূল্যায়ন করবে?

৫, এমপিও নীতিমালা-২১ এ মূল্যায়নের ধারণা অত্যন্ত ভালো তবে মূল্যায়ন সূচকে নির্দিষ্ট মার্ক পাওয়ার শর্ত ও কোন কোন বিষয়টি পদোন্নতির জন্য আবশ্যিক শর্ত বা বাধ্যতামূলক থাকতেই হবে তার একটা গাইড লাইন না থাকলে মূল্যায়ন সূচকের ১০০ নম্বরের মধ্যে ২০ নম্বর পেয়েও শুধু জ্যেষ্ঠতার জন্য শিক্ষকদের একটা অংশ সহকারী অধ্যাপক পদে পদোন্নতি পাবেন এবং অপরাপর শিক্ষকদের উল্লেখযোগ্য একটা অংশ মূল্যায়ন সূচকের ১০০ নম্বরের মধ্যে ৮০ পেলেও শুধু ৮ বছর হতে ২-৩ বছর ঘাটতি থাকায় তাকে সহকারী অধ্যাপক পদে পদোন্নতি পেতে ১৬ -২০ বছর অপেক্ষা করতে হবে!

৬, আরেকটি বিষয় হলো- যদি ১৬ বছরে সবাই সহকারী অধ্যাপক হয় সেক্ষেত্রে সহযোগী অধ্যাপক পদটি চালুকরণ প্রয়োজন। কেননা, সহকারী অধ্যাপক গণ মাত্র ছয় বছরে সহযোগী অধ্যাপক পদের বেসিক অতিক্রম করেন। সুতরাং এদের প্রকাশনা ও গবেষণার ওপর ভিত্তি করে সহযোগী অধ্যাপক ও অধ্যাপক পদে পদোন্নতি দিলে সরকারের এক্ষেত্রে বাড়তি কোন টাকাই খরচ হবে না। বরং প্রতিষ্ঠানে একটা চেইন অব কমান্ড আসবে।

উপরোক্ত সমস্যা থেকে পরিত্রাণ পাওয়ার জন্য পথ হলো দুটি প্রথমত, জাতীয় বিশ^বিদ্যালয় প্রণীত বেসরকারি শিক্ষাপ্রতিষ্ঠান শিক্ষকদের চাকরি বিধিমালা অনুসরণ করা। জাতীয় বিশ^বিদ্যালয় ‘জাতীয় বিশ^বিদ্যালয় অধিভুক্ত বেসরকারি কলেজ শিক্ষকদের চাকরির শর্তাবলী রেগুলেশন (সংশোধিত)-২০১৯’ শিরোনামে যে বিধি প্রণয়ন করেছেন সেখানে এ বিষয়ে সুস্পষ্ট ও সুন্দর নির্দেশনা দেয়া আছে সেটি বাস্তবায়ন করলেই উপরোক্ত সমস্যার সুন্দর সুরাহা হয়। সুতরাং গবেষণাকে প্রাধান্য দিয়ে ‘সহকারী অধ্যাপক’ পদে পদোন্নতির জন্য জাতীয় বিশ^বিদ্যালয় কর্তৃক বিধিটি মানলে আর কোন বৈষম্য কিংবা কোন সমস্যার সৃষ্টি হবে না। এ বিধি মানা হলে কোন শিক্ষক বঞ্চিত হওয়ার কোন পথ থাকবে না আবার অযোগ্য কেউই সহকারী অধ্যাপক পদে অধিষ্ঠিত হতে পারবে না। কেননা, জাতীয় বিশ^বিদ্যালয় তার অধিভুক্ত বেসরকারি শিক্ষকদের জন্য যে বিধি প্রণয়ন করেছেন তাতে সহকারী অধ্যাপক পদে পদোন্নতির জন্য ৫ বছরের শিক্ষকতার অভিজ্ঞতা ও স্বীকৃত মানের জার্নালে দুটি গবেষণাপত্র প্রকাশ করার বাধ্যবাধকতা রয়েছে। এখন যদি কোন শিক্ষক তা ১৫ বছরেও কোন গবেষণামূলক প্রবন্ধ স্বীকৃত জার্নালে না প্রকাশ করতে পারে তবে তিনি ১৫ বছর হলেও সহকারী অধ্যাপক হতে পারবেন না এবং এ না পারার জন্য নিজে ছাড়া অন্য কাউকে দায়ী করার ও কোন সুযোগ থাকবে না।

দ্বিতীয়ত, অন্যভাবেও এ সমস্যাটির আপাতত সমাধান করা যায় আর পন্থাটি হলোÑ শিক্ষকতার অভিজ্ঞতা বিশ^বিদ্যালয়ের নীতির মতো ৩ বছর রেখে সবাইকে সহকারী অধ্যাপক পদে আবেদন করার সুযোগ তৈরি করে দেয়া যেতে পারে। এতে অধিকতর সিনিয়র শিক্ষকদের বঞ্চিত হওয়ার সুযোগ থাকবে না কেননা, মূল্যায়ন সূচকে জ্যেষ্ঠতার জন্য ১৫ নম্বর দেয়া রয়েছে। এবং জুনিয়র শিক্ষকদের মধ্যে যারা অধিকতর যোগ্যতাসম্পন্ন তারাও তাদের যোগ্যতার যোগ্য মূল্যায়ন পাবে। আমাদের মনে রাখতে হবে প্রধানমন্ত্রী ২০১৯ সালে জনপ্রশাসন কর্মকর্তাদের সঙ্গে একটি মিটিংয়ে বলেছিলেন “বয়সের ভিত্তিতে পদোন্নতি নয়” এবং বর্তমানে প্রধানমন্ত্রী গবেষণাকে সবচাইতে বেশি প্রাধান্য দিচ্ছেন, জাতীয় বিশ^বিদ্যালয় তার প্রণীত বিধিতে উল্লেখ করেছে একজন শিক্ষক অধ্যাপনার পাশাপাশি গবেষণারত থাকবেন। সুতরাং গবেষণা ও উচ্চতর ডিগ্রিকে পদোন্নতিতে সবচাইতে বেশি প্রাধান্য দেয়া উচিত।

তবে মূল্যায়ন সূচকের নাম্বার ও মূল্যায়নের পদ্ধতি নিয়ে কিছু প্রশ্ন সঙ্গে আশঙ্কা থেকে যায় যেমন- মূল্যায়ন সূচকের মধ্যে একটি বিষয় রয়েছে সর্বাধিক ক্লাসে উপস্থিতি। এটার মানে কি? ক্লাস রুটিনে শিক্ষককে যে কয়টা ক্লাস দেয়া হয় সে ততটা ক্লাস করে। এতে কীভাবে সর্বাধিক ক্লাসের হিসাব করবে? এছাড়াও সৃজনশীল বা অনুকরণীয় কাজের কিছু উদাহরণ যুক্ত করে দিলে মূল্যায়ন কমিটির নাম্বারিং করতে অনেকটা সহজ হবে। পরিশেষে র্জানালে প্রতিটি আর্টিকেলের জন্য কত নম্বর তা স্পষ্ট করা প্রয়োজন। শিক্ষাবিদরা মনে করেন- যেখানে প্রধানমন্ত্রী গবেষণাকে প্রাধান্য দিয়েছেন সেখানে ‘সহকারী অধ্যাপক’ পদোন্নতিতে গবেষণাকে মূল্যায়ন সূচকে কম গুরুত্ব দেয়া হয়েছে। মূল্যায়ন সূচকে স্বীকৃত মানের জার্নালে প্রতিটি আর্টিকেলের জন্য ১০ নম্বর হিসেব করে মোট ২০ নাম্বার বরাদ্দ করা উচিত এবং সহকারী অধ্যাপক পদোন্নতি পাওয়ার জন্য কমপক্ষে দুটি প্রকাশনা আবশ্যিক করা প্রয়োজন। একইসঙ্গে এম.ফিল বা পিএইচডির জন্য ১৫-২০ নাম্বার যুক্ত করলে আরও অর্থবহ ও গ্রহণযোগ্য হবে। যেহেতু বর্তমানে সহকারী অধ্যাপক পদটি বিশ^বিদ্যালয় পর্যায়ে শিক্ষকদের ক্ষেত্রে ব্যবহৃত হবে সুতরাং বিশ^বিদ্যালয়ের একজন শিক্ষককে সহকারী অধ্যাপক হতে হলে যেসব যোগ্যতার প্রমাণ দিতে হয় এখানেও সেগুলোর প্রতি গুরুত্ব দেয়া উচিত।

[লেখক : প্রভাষক, দর্শন বিভাগ,

ফেনী সাউথ-ইস্ট ডিগ্রি কলেজ]

মঙ্গলবার, ০৫ অক্টোবর ২০২১ , ২০ আশ্বিন ১৪২৮ ২৬ সফর ১৪৪৩

সহকারী অধ্যাপক পদে পদোন্নতিতে হ-য-ব-র-ল নিয়ম

শরীফুর রহমান আদিল

সরকার এমপিওভুক্ত শিক্ষাপ্রতিষ্ঠানের জন্য এমপিও নীতিমালা-২১ প্রণয়ন করে। এ নীতিমালায় পূর্বে প্রণীত নীতিমালার চাইতে কিছুক্ষেত্রে ইতিবাচক পরিবর্তন আনা হয় তন্নধ্যে কলেজ পর্যায়ে সহকারী অধ্যাপক পদে ৫ঃ২ অনুপাত প্রথাটি বিলুপ্ত করে তারস্থলে মোট শিক্ষকের ৫০ শতাংশ শিক্ষককে মূল্যায়নের বিভিন্ন সূচকের ভিত্তিতে সহকারী অধ্যাপক পদে পদোন্নতি দেয়ার বিষয়টি অন্যতম। অর্থাৎ, এমপিও নীতিমালা-২০২১ এর ১১.৪ ধারায় প্রভাষক থেকে সহকারী অধ্যাপক পদোন্নতির বিষয়ে বলা আছে। এ ধারা অনুযায়ী-প্রভাষকরা এমপিওভুক্তের ৮ বছর পূর্ণ হলে ৫০ শতাংশ শিক্ষক ‘সহকারী অধ্যাপক’ পদে পদোন্নতি পাবেন। বাকি শিক্ষকরা চাকরিকাল ১০ বছর সন্তোষজনকভাবে পূর্ণ করলে উচ্চতর গ্রেড পাবেন এবং পরবর্তীতে ৬ বছর নিরবচ্ছিন্নভাবে চাকরি করলে অর্থাৎ ১৬ বছর পূর্ণ হলে তারা ‘সহকারী অধ্যাপক’ পদে পদোন্নতি পাবেন। কিন্তু এ ধারা নিয়ে তৈরি হয়েছে ধোয়াশা। তৈরি হয়েছে হতাশা ও জেগেছে বিভিন্ন প্রশ্ন। এসব প্রশ্নের মধ্যে রয়েছে।

১, উক্ত বিধিটি কি নতুন কলেজগুলোর ক্ষেত্রে প্রযোজ্য না নতুন- পুরোনো সব কলেজের জন্য প্রযোজ্য? এটা যদি কেবল নতুন কলেজের জন্য প্রযোজ্য হয় তবে পুরাতন কলেজগুলো কোন নিয়ম অনুসরণ করে শিক্ষকদের ‘সহকারী অধ্যাপক’ পদে পদোন্নতি দেয়া হবে? আর যদি পুরোনো কলেজের ক্ষেত্রেও এ বিধি প্রযোজ্য হয় তবে এ ক্ষেত্রে কি ৫০ শতাংশ যে নিয়ম তা কি বিদ্যমান থাকবে? যদি জারী না থাকে তবে বিষয়টি ভালো ও প্রশংসনীয় উদ্যোগও বটে কিন্তু যদি জারী থাকে তবে তারা তো মূল্যায়ন ছাড়াই কেবল জ্যেষ্ঠতার ভিত্তিতে ‘সহকারী অধ্যাপক’ পদে পদোন্নতি পাবেন তবে মূল্যায়নের বিভিন্ন সূচকের কথা কেন নীতিমালায় উল্লেখ করা হলো? অন্যকথায়, এ মূল্যায়নের সূচক কোথায় কখন প্রয়োগ করা হবে?

২, আবার যদি সহকারী অধ্যাপক পদে ৫০ শতাংশ কোটা বিদ্যমান রেখে ১৬ বছর পূর্ণ হওয়া শিক্ষকদের সহকারী অধ্যাপক পদে পদোন্নতি দেয়া হয় তবে পরবর্তী যে সব শিক্ষক উচ্চতর ডিগ্রিধারী ও জার্নালে প্রকাশনাসহ আরও বেশকিছু প্রশংসনীয় যোগ্যতা রয়েছে তারা তো ‘সহকারী অধ্যাপক’ পদে পদোন্নতির জন্য আবেদনই করতে পারবে না। কেননা, তার আগেই তো সহকারী অধ্যাপকের পদ পূর্ণ হয়ে যাবে। এক্ষেত্রে মূল্যায়নের সূচক প্রণয়নের উদ্দেশ্য বাস্তবায়িত হবে কি? অন্যকথায়, এসব শিক্ষকের প্রতি কি বৈষম্যের করা কিংবা তাদের যোগ্যতাকে অবমূল্যয়ন করা হবে না?

৩, এমপিও নীতিমালার ১১.৪ ধারার সহকারী অধ্যাপক পদে পদোন্নতি পাওয়ার জন্য বিধিটি জাতীয় বিশ^বিদ্যালয় কর্তৃক প্রণীত বেসরকারী শিক্ষক চাকরি বিধি-২০১৯ এর সঙ্গে সাংঘর্ষিক। কেননা, জাতীয় বিশ^বিদ্যালয়ের বিধি অনুসারে সহকারী অধ্যাপক পদে পদোন্নতির জন্য শিক্ষকদের কমপক্ষে ৫ বছর সন্তোষজনক শিক্ষকতার অভিজ্ঞতা ও কমপক্ষে দুটি গবেষণামূলক প্রকাশনা জার্নালে প্রকাশিত হওয়ার বাধ্যবাধ্যকতা রয়েছে।

৪, বর্তমানে অনেক স্নাতক কলেজ রয়েছে যেখানে ২০ কিংবা ৩০ বা তারোধিক শিক্ষক রয়েছে এবং এসব কলেজে পূর্বের নীতিমালা অনুযায়ী প্রতি ৭ জনে ২ জন শিক্ষক সহকারী অধ্যাপক পদে পদোন্নতি পেয়েছে। বাকি শিক্ষকদের মধ্যে একটি অংশ ১৬-২২ বছর প্রভাষক পদে চাকরি করছেন। বর্তমান নীতিমালায় ১৬ বছর পূর্ণ হলে সহকারী অধ্যাপক হওয়ার যে বিধান সে অনুযায়ী পদোন্নতি পেলে তাদের কয়েক বছর পরে নিয়োগ পাওয়া শিক্ষক যাদের চাকুরী অভিজ্ঞতা ৬-১৫ বছর তারাতো পদোন্নতি প্রাপ্ত শিক্ষকদের অবসরে যাওয়ার আগ পর্ষন্ত যতই উচ্চতর ডিগ্রী, জার্নালে প্রকাশনা সহ অন্যান্য মূল্যায়নের সূচকের অধিকারী হোক না কেন ৫০ শতাংশ কোটা পূরণ হয়ে যাওয়ায় তারাতো আবেদনই করতে পারবে না। এ বিষয়গুলো মন্ত্রণালয় কীভাবে মূল্যায়ন করবে?

৫, এমপিও নীতিমালা-২১ এ মূল্যায়নের ধারণা অত্যন্ত ভালো তবে মূল্যায়ন সূচকে নির্দিষ্ট মার্ক পাওয়ার শর্ত ও কোন কোন বিষয়টি পদোন্নতির জন্য আবশ্যিক শর্ত বা বাধ্যতামূলক থাকতেই হবে তার একটা গাইড লাইন না থাকলে মূল্যায়ন সূচকের ১০০ নম্বরের মধ্যে ২০ নম্বর পেয়েও শুধু জ্যেষ্ঠতার জন্য শিক্ষকদের একটা অংশ সহকারী অধ্যাপক পদে পদোন্নতি পাবেন এবং অপরাপর শিক্ষকদের উল্লেখযোগ্য একটা অংশ মূল্যায়ন সূচকের ১০০ নম্বরের মধ্যে ৮০ পেলেও শুধু ৮ বছর হতে ২-৩ বছর ঘাটতি থাকায় তাকে সহকারী অধ্যাপক পদে পদোন্নতি পেতে ১৬ -২০ বছর অপেক্ষা করতে হবে!

৬, আরেকটি বিষয় হলো- যদি ১৬ বছরে সবাই সহকারী অধ্যাপক হয় সেক্ষেত্রে সহযোগী অধ্যাপক পদটি চালুকরণ প্রয়োজন। কেননা, সহকারী অধ্যাপক গণ মাত্র ছয় বছরে সহযোগী অধ্যাপক পদের বেসিক অতিক্রম করেন। সুতরাং এদের প্রকাশনা ও গবেষণার ওপর ভিত্তি করে সহযোগী অধ্যাপক ও অধ্যাপক পদে পদোন্নতি দিলে সরকারের এক্ষেত্রে বাড়তি কোন টাকাই খরচ হবে না। বরং প্রতিষ্ঠানে একটা চেইন অব কমান্ড আসবে।

উপরোক্ত সমস্যা থেকে পরিত্রাণ পাওয়ার জন্য পথ হলো দুটি প্রথমত, জাতীয় বিশ^বিদ্যালয় প্রণীত বেসরকারি শিক্ষাপ্রতিষ্ঠান শিক্ষকদের চাকরি বিধিমালা অনুসরণ করা। জাতীয় বিশ^বিদ্যালয় ‘জাতীয় বিশ^বিদ্যালয় অধিভুক্ত বেসরকারি কলেজ শিক্ষকদের চাকরির শর্তাবলী রেগুলেশন (সংশোধিত)-২০১৯’ শিরোনামে যে বিধি প্রণয়ন করেছেন সেখানে এ বিষয়ে সুস্পষ্ট ও সুন্দর নির্দেশনা দেয়া আছে সেটি বাস্তবায়ন করলেই উপরোক্ত সমস্যার সুন্দর সুরাহা হয়। সুতরাং গবেষণাকে প্রাধান্য দিয়ে ‘সহকারী অধ্যাপক’ পদে পদোন্নতির জন্য জাতীয় বিশ^বিদ্যালয় কর্তৃক বিধিটি মানলে আর কোন বৈষম্য কিংবা কোন সমস্যার সৃষ্টি হবে না। এ বিধি মানা হলে কোন শিক্ষক বঞ্চিত হওয়ার কোন পথ থাকবে না আবার অযোগ্য কেউই সহকারী অধ্যাপক পদে অধিষ্ঠিত হতে পারবে না। কেননা, জাতীয় বিশ^বিদ্যালয় তার অধিভুক্ত বেসরকারি শিক্ষকদের জন্য যে বিধি প্রণয়ন করেছেন তাতে সহকারী অধ্যাপক পদে পদোন্নতির জন্য ৫ বছরের শিক্ষকতার অভিজ্ঞতা ও স্বীকৃত মানের জার্নালে দুটি গবেষণাপত্র প্রকাশ করার বাধ্যবাধকতা রয়েছে। এখন যদি কোন শিক্ষক তা ১৫ বছরেও কোন গবেষণামূলক প্রবন্ধ স্বীকৃত জার্নালে না প্রকাশ করতে পারে তবে তিনি ১৫ বছর হলেও সহকারী অধ্যাপক হতে পারবেন না এবং এ না পারার জন্য নিজে ছাড়া অন্য কাউকে দায়ী করার ও কোন সুযোগ থাকবে না।

দ্বিতীয়ত, অন্যভাবেও এ সমস্যাটির আপাতত সমাধান করা যায় আর পন্থাটি হলোÑ শিক্ষকতার অভিজ্ঞতা বিশ^বিদ্যালয়ের নীতির মতো ৩ বছর রেখে সবাইকে সহকারী অধ্যাপক পদে আবেদন করার সুযোগ তৈরি করে দেয়া যেতে পারে। এতে অধিকতর সিনিয়র শিক্ষকদের বঞ্চিত হওয়ার সুযোগ থাকবে না কেননা, মূল্যায়ন সূচকে জ্যেষ্ঠতার জন্য ১৫ নম্বর দেয়া রয়েছে। এবং জুনিয়র শিক্ষকদের মধ্যে যারা অধিকতর যোগ্যতাসম্পন্ন তারাও তাদের যোগ্যতার যোগ্য মূল্যায়ন পাবে। আমাদের মনে রাখতে হবে প্রধানমন্ত্রী ২০১৯ সালে জনপ্রশাসন কর্মকর্তাদের সঙ্গে একটি মিটিংয়ে বলেছিলেন “বয়সের ভিত্তিতে পদোন্নতি নয়” এবং বর্তমানে প্রধানমন্ত্রী গবেষণাকে সবচাইতে বেশি প্রাধান্য দিচ্ছেন, জাতীয় বিশ^বিদ্যালয় তার প্রণীত বিধিতে উল্লেখ করেছে একজন শিক্ষক অধ্যাপনার পাশাপাশি গবেষণারত থাকবেন। সুতরাং গবেষণা ও উচ্চতর ডিগ্রিকে পদোন্নতিতে সবচাইতে বেশি প্রাধান্য দেয়া উচিত।

তবে মূল্যায়ন সূচকের নাম্বার ও মূল্যায়নের পদ্ধতি নিয়ে কিছু প্রশ্ন সঙ্গে আশঙ্কা থেকে যায় যেমন- মূল্যায়ন সূচকের মধ্যে একটি বিষয় রয়েছে সর্বাধিক ক্লাসে উপস্থিতি। এটার মানে কি? ক্লাস রুটিনে শিক্ষককে যে কয়টা ক্লাস দেয়া হয় সে ততটা ক্লাস করে। এতে কীভাবে সর্বাধিক ক্লাসের হিসাব করবে? এছাড়াও সৃজনশীল বা অনুকরণীয় কাজের কিছু উদাহরণ যুক্ত করে দিলে মূল্যায়ন কমিটির নাম্বারিং করতে অনেকটা সহজ হবে। পরিশেষে র্জানালে প্রতিটি আর্টিকেলের জন্য কত নম্বর তা স্পষ্ট করা প্রয়োজন। শিক্ষাবিদরা মনে করেন- যেখানে প্রধানমন্ত্রী গবেষণাকে প্রাধান্য দিয়েছেন সেখানে ‘সহকারী অধ্যাপক’ পদোন্নতিতে গবেষণাকে মূল্যায়ন সূচকে কম গুরুত্ব দেয়া হয়েছে। মূল্যায়ন সূচকে স্বীকৃত মানের জার্নালে প্রতিটি আর্টিকেলের জন্য ১০ নম্বর হিসেব করে মোট ২০ নাম্বার বরাদ্দ করা উচিত এবং সহকারী অধ্যাপক পদোন্নতি পাওয়ার জন্য কমপক্ষে দুটি প্রকাশনা আবশ্যিক করা প্রয়োজন। একইসঙ্গে এম.ফিল বা পিএইচডির জন্য ১৫-২০ নাম্বার যুক্ত করলে আরও অর্থবহ ও গ্রহণযোগ্য হবে। যেহেতু বর্তমানে সহকারী অধ্যাপক পদটি বিশ^বিদ্যালয় পর্যায়ে শিক্ষকদের ক্ষেত্রে ব্যবহৃত হবে সুতরাং বিশ^বিদ্যালয়ের একজন শিক্ষককে সহকারী অধ্যাপক হতে হলে যেসব যোগ্যতার প্রমাণ দিতে হয় এখানেও সেগুলোর প্রতি গুরুত্ব দেয়া উচিত।

[লেখক : প্রভাষক, দর্শন বিভাগ,

ফেনী সাউথ-ইস্ট ডিগ্রি কলেজ]