জাতি গঠনের কারিগর

আনোয়ার হোসেন রাজু

বলা হয়ে থাকে শিক্ষাই জাতির মেরুদ-। আর সেই মেরুদ- গঠনের কারিগরের নামই হচ্ছে শিক্ষক। জন্মের পর পরিবার থেকে আামাদের শিক্ষা জীবনের উন্মেষ ঘটে। পরিবারেই আমাদের প্রাথমিক শিক্ষার হাতেখড়ি। আমাদের জীবনাচরণের প্রাথমিক দিকগুলো পরিবার থেকেই অর্জন করে থাকি। কিন্তু আমাদের শিক্ষার পরিপূর্ণতা অর্জনের নিমিত্তে প্রাতিষ্ঠানিক কার্যক্রমের অন্তর্ভুক্ত হতে হয়। সেখানেই আমরা আলোকিত জাতি গঠনের কারিগর শিক্ষক সমাজের সংস্পর্শ পেয়ে থাকি। যেখানে আমাদের চলার পথের প্রতিটা প্রদক্ষেপে শিক্ষক নামক শব্দটি জড়িয়ে যায়। প্রতিটা শিক্ষিত জনশক্তি সৃষ্টির পেছনে অজস্র শিক্ষকের মেধা, শ্রম, শাসন, দিকনির্দেশনার গল্প মিশে থাকে। যারা আমাদের শিক্ষা দেন সততা, নীতি-নৈতিকতা ও উত্তম চরিত্র গঠনসহ জীবন সাজানোর সব নিয়মকানুন। সমাজ সভ্যতার নিমিত্তে নিজেদের হাতে অগ্নিশিখা ধারণ করে জাতিকে পথ দেখিয়ে সম্মুখে যাওয়ার শক্তি জোগান দেন। নিজেদের জ্ঞানের আলো ছড়িয়ে দেন দিগ-দিগন্তে। তারা নিজেরা মোমের মতো পুড়ে গলে উন্নত জাতি গঠন করেন। আর সেই গঠিত প্রতিটি মনুষ্য হৃদয়েই তারা বেঁচে থাকেন। অনেক সময় তাদের শাসন বারণে আমরা অনেক বেশি রাগান্বিত হয়ে উঠি। কিন্তু পরবর্তী ব্যক্তিজীবনে অনুধাবন করতে পারি, জীবনের উন্নতির শিখরে পৌঁছাতে তাদের শাসন বারণের অপরিহার্যতা। আমাদের জীবনের পদচারণার প্রতিটি বক্ররেখাকে সরল করার পথ তৈরি করে দেন একজন শিক্ষক।

১৯৯৪ সাল থেকে জাতিসংঘের অঙ্গসংস্থা ইউনেস্কোর উদ্যেগে প্রতিবছর ৫ অক্টোবর সারা বিশ্বে শিক্ষক দিবস উদ্্যাপিত হয়ে আসছে। সারা বিশ্বের মতো বাংলাদেশেও অনেকটা নীরবতার সঙ্গে হলেও দিবসটি পালন করা হয়ে থাকে। শিক্ষক সম্পর্কে উইলিয়াম আর্থার বলেন, একজন সাধারণ শিক্ষক বক্তৃতা করেন, একজন ভালো শিক্ষক বিশ্লেষণ করেন, একজন উত্তম শিক্ষক প্রদর্শন করেন, একজন শ্রেষ্ঠ শিক্ষক অনুপ্রাণিত করেন। আমেরিকার ইতিহাসবিদ হেনরি এডামস শিক্ষকের গুরুত্ব সম্পর্কে বলেছেন, একজন শিক্ষক সামগ্রিকভাবে প্রভাব ফেলেন, কেউ বলতে পারে না তার প্রভাব কোথায় গিয়ে শেষ হয়। দার্শনিক বাট্রার্ন্ড রাসেল এ বিষয়ে বলেছেন, শিক্ষক সমাজ হচ্ছেন প্রকৃত সমাজ ও সভ্যতার বিবেক।

তবে আমাদের সমাজে দিন দিন শিক্ষকরা তাদের সম্মানের জায়গা হারিয়ে ফেলছেন। এর পেছনে কিছু কারণ নিহীত আছে। আমরা সবাই জানি, যে জাতি যত বেশি সু-শিক্ষিত, সে জাতি তত বেশি উন্নত। তবে আরও একটা কথাও জানি, দুর্জন বিদ্বান হলেও পরিত্যজ্য। শিক্ষকদের হতে হয় ন্যায়পরায়ন, চরিত্রবান ও দায়িত্ববোধ সম্পন্ন। বর্তমানে খুবই অনুতাপ এবং হতাশার একটা বিষয় হচ্ছে অনেক শিক্ষক দুর্নীতি, জালিয়াতি, ঘুষ এমনকি ধর্ষণের মতো অনৈতিক কাজের সঙ্গে জড়িয়ে যাচ্ছে। যার কারণে অনেক অভিভাবক তাদের আস্থার জায়গা হারাচ্ছে। এই উদ্বেগজনক পরিস্থিতি মোকাবিলায় সরকারকে যথাযথ ব্যবস্থা গ্রহণ করতে হবে। তা না হলে সারা বিশ্বের শ্রেষ্ঠ সম্মানজনক পেশা হিসেবে বিবেচিত শিক্ষকতা পেশা তার সম্মানের জায়গা অচিরেই হারিয়ে ফেলবে।

[লেখক : শিক্ষার্থী জগন্নাথ বিশ্ববিদ্যালয়]

মঙ্গলবার, ০৫ অক্টোবর ২০২১ , ২০ আশ্বিন ১৪২৮ ২৬ সফর ১৪৪৩

জাতি গঠনের কারিগর

আনোয়ার হোসেন রাজু

বলা হয়ে থাকে শিক্ষাই জাতির মেরুদ-। আর সেই মেরুদ- গঠনের কারিগরের নামই হচ্ছে শিক্ষক। জন্মের পর পরিবার থেকে আামাদের শিক্ষা জীবনের উন্মেষ ঘটে। পরিবারেই আমাদের প্রাথমিক শিক্ষার হাতেখড়ি। আমাদের জীবনাচরণের প্রাথমিক দিকগুলো পরিবার থেকেই অর্জন করে থাকি। কিন্তু আমাদের শিক্ষার পরিপূর্ণতা অর্জনের নিমিত্তে প্রাতিষ্ঠানিক কার্যক্রমের অন্তর্ভুক্ত হতে হয়। সেখানেই আমরা আলোকিত জাতি গঠনের কারিগর শিক্ষক সমাজের সংস্পর্শ পেয়ে থাকি। যেখানে আমাদের চলার পথের প্রতিটা প্রদক্ষেপে শিক্ষক নামক শব্দটি জড়িয়ে যায়। প্রতিটা শিক্ষিত জনশক্তি সৃষ্টির পেছনে অজস্র শিক্ষকের মেধা, শ্রম, শাসন, দিকনির্দেশনার গল্প মিশে থাকে। যারা আমাদের শিক্ষা দেন সততা, নীতি-নৈতিকতা ও উত্তম চরিত্র গঠনসহ জীবন সাজানোর সব নিয়মকানুন। সমাজ সভ্যতার নিমিত্তে নিজেদের হাতে অগ্নিশিখা ধারণ করে জাতিকে পথ দেখিয়ে সম্মুখে যাওয়ার শক্তি জোগান দেন। নিজেদের জ্ঞানের আলো ছড়িয়ে দেন দিগ-দিগন্তে। তারা নিজেরা মোমের মতো পুড়ে গলে উন্নত জাতি গঠন করেন। আর সেই গঠিত প্রতিটি মনুষ্য হৃদয়েই তারা বেঁচে থাকেন। অনেক সময় তাদের শাসন বারণে আমরা অনেক বেশি রাগান্বিত হয়ে উঠি। কিন্তু পরবর্তী ব্যক্তিজীবনে অনুধাবন করতে পারি, জীবনের উন্নতির শিখরে পৌঁছাতে তাদের শাসন বারণের অপরিহার্যতা। আমাদের জীবনের পদচারণার প্রতিটি বক্ররেখাকে সরল করার পথ তৈরি করে দেন একজন শিক্ষক।

১৯৯৪ সাল থেকে জাতিসংঘের অঙ্গসংস্থা ইউনেস্কোর উদ্যেগে প্রতিবছর ৫ অক্টোবর সারা বিশ্বে শিক্ষক দিবস উদ্্যাপিত হয়ে আসছে। সারা বিশ্বের মতো বাংলাদেশেও অনেকটা নীরবতার সঙ্গে হলেও দিবসটি পালন করা হয়ে থাকে। শিক্ষক সম্পর্কে উইলিয়াম আর্থার বলেন, একজন সাধারণ শিক্ষক বক্তৃতা করেন, একজন ভালো শিক্ষক বিশ্লেষণ করেন, একজন উত্তম শিক্ষক প্রদর্শন করেন, একজন শ্রেষ্ঠ শিক্ষক অনুপ্রাণিত করেন। আমেরিকার ইতিহাসবিদ হেনরি এডামস শিক্ষকের গুরুত্ব সম্পর্কে বলেছেন, একজন শিক্ষক সামগ্রিকভাবে প্রভাব ফেলেন, কেউ বলতে পারে না তার প্রভাব কোথায় গিয়ে শেষ হয়। দার্শনিক বাট্রার্ন্ড রাসেল এ বিষয়ে বলেছেন, শিক্ষক সমাজ হচ্ছেন প্রকৃত সমাজ ও সভ্যতার বিবেক।

তবে আমাদের সমাজে দিন দিন শিক্ষকরা তাদের সম্মানের জায়গা হারিয়ে ফেলছেন। এর পেছনে কিছু কারণ নিহীত আছে। আমরা সবাই জানি, যে জাতি যত বেশি সু-শিক্ষিত, সে জাতি তত বেশি উন্নত। তবে আরও একটা কথাও জানি, দুর্জন বিদ্বান হলেও পরিত্যজ্য। শিক্ষকদের হতে হয় ন্যায়পরায়ন, চরিত্রবান ও দায়িত্ববোধ সম্পন্ন। বর্তমানে খুবই অনুতাপ এবং হতাশার একটা বিষয় হচ্ছে অনেক শিক্ষক দুর্নীতি, জালিয়াতি, ঘুষ এমনকি ধর্ষণের মতো অনৈতিক কাজের সঙ্গে জড়িয়ে যাচ্ছে। যার কারণে অনেক অভিভাবক তাদের আস্থার জায়গা হারাচ্ছে। এই উদ্বেগজনক পরিস্থিতি মোকাবিলায় সরকারকে যথাযথ ব্যবস্থা গ্রহণ করতে হবে। তা না হলে সারা বিশ্বের শ্রেষ্ঠ সম্মানজনক পেশা হিসেবে বিবেচিত শিক্ষকতা পেশা তার সম্মানের জায়গা অচিরেই হারিয়ে ফেলবে।

[লেখক : শিক্ষার্থী জগন্নাথ বিশ্ববিদ্যালয়]