করোনায় যারা মারা গেছেন অধিকাংশের অন্য রোগও ছিল

করোনা সংক্রমণে বয়স্ক এবং ‘কো-মরবিডিটি’ ছিল- এমন মানুষই সবচেয়ে বেশি মারা গেছেন। করোনায় সবচেয়ে বেশি মৃত্যু হয়েছে ৬১ থেকে ৭০ বছর বয়সী নাগরিকদের। মোট মৃত্যুর ৩১ শতাংশই ছিল ওই বয়সী রোগী। এই বয়সে মানুষ এমনিতেই ‘কো-মরবিডিটি’তে বেশি ভোগেন বলে চিকিৎসা বিশেষজ্ঞরা জানিয়েছেন। ‘কো-মরবিডিটি’ বলতে সাধারণত নানা ধরনের ক্রনিক বা দীর্ঘমেয়াদি অসুখকে বোঝায়। যেমন, হার্টের সমস্যা, ফুসফুসের সমস্যা, উচ্চ রক্তচাপ, কিডনি জটিলতা এবং ডায়াবেটিস।

৬১ থেকে ৭০ বছর বয়সীদের বেশি মৃত্যুর কারণ জানতে চাইলে সরকারের রোগতত্ত্ব, রোগনিয়ন্ত্রণ ও গবেষণা প্রতিষ্ঠানের (আইইডিসিআর) উপদেষ্টা ডা. মুস্তাক হোসেন সংবাদকে বলেন, ‘কো-মরবিডিটি হলে মৃত্যুর ঝুঁকি এমনিতেই বেশি থাকে। তারা সুস্থ ছিল- এমনটি মনে করার কোন কারণ নেই। তাদের হয়তো বয়স বেশি বা অন্য কোন কন্ডিশন ছিল, যেখানে হয়তো রোগপ্রতিরোধ ক্ষমতা কম ছিল।’

এই জনস্বাস্থ্যবিদ আরও বলেন, ‘যারা চিকিৎসা নিতে পারেনি, হাসপাতালে আসার পর মৃত্যুবরণ করেছেন, তাদের ডাটা পরে নেয়া হচ্ছে। কাজেই তাদের কো-মরবিডিটি নেই, সেটি বলা যাচ্ছে না। তাদের মরনোত্তর তথ্য সংগ্রহ করা হচ্ছে কি না, তারা ঠিকমতো ওষুধ সেবন করেছিলেন কি না, তাদের ডায়াবেটিস ছিল কি না এবং দীর্ঘমেয়াদি কোন অসুখ ছিল কি না, সেগুলো দেখার বিষয়।’

গত ৪ অক্টোবর স্বাস্থ্য অধিদপ্তরের করোনা সংক্রমণ-সংক্রান্ত এক প্রতিবেদনে বলা হয়, গত সপ্তাহে (২৭ সেপ্টেম্বর থেকে ৩ অক্টোবর) করোনায় আক্রান্ত হয়ে মারা গেছেন ১৫৯ জন। তাদের মধ্যে আগে থেকেই উচ্চ রক্তচাপে আক্রান্ত ছিলেন ৬৭ শতাংশ। এছাড়া ডায়াবেটিসে আক্রান্ত ৬২ দশমিক পাঁচ শতাংশ, হৃদরোগে আক্রান্ত ১৮ শতাংশ এবং বক্ষব্যাধি ও কিডনি রোগে আক্রান্ত ছিলেন ১৪ দশমিক আট শতাংশ রোগী।

তবে এর আগের সপ্তাহে (২০ থেকে ২৬ সেপ্টেম্বর) করোনায় ১৮৯ জনের মৃত্যু হয়েছিল। এর মধ্যে ডায়াবেটিস ছিল ৬৯ দশমিক এক শতাংশের, উচ্চ রক্তচাপও ছিল ৬৯ দশমিক এক শতাংশের, বক্ষব্যাধি ছিল ১০ শতাংশের, হৃদরোগ ছিল ২০ দশমিক ৯ শতাংশের ও কিডনিজনিত রোগ ছিল ১৫ দশমিক পাঁচ শতাংশ করোনা রোগীর।

ঢাকা বিভাগের একটি জেলার সিভিল সার্জন সংবাদকে জানিয়েছেন, করোনা সংক্রমণে ৫০ বছরের বেশি বয়সী যারা মারা গেছেন, তাদের অধিকাংশের ‘কো-মরবিডিটি’ ছিল। আগে থেকে নানা রোগে ভুগলেও তারা হয়তো ঠিকমতো চিকিৎসা নেননি, ওষুধ সেবন করেননি, করোনার টিকা নেননি। এ কারণে তাদের শরীরে করোনাভাইরাসের সংক্রমণ ঘটার পর খুব দ্রুত অবস্থার অবনতি ঘটেছিল। এই ধরনের সমস্যার কারণে বয়স্ক নাগরিকদের মৃত্যু বেশি হয়েছে।

স্বাস্থ্য অধিদপ্তরের বরাত দিয়ে ওই সিভিল সার্জন আরও জানান, মঙ্গলবার (গতকাল) পর্যন্ত করোনা সংক্রমণে শূন্য থেকে ১০ বছর বয়সী ৭৬ শিশুর মৃত্যু হয়েছে। তাদের প্রায় সবারই আগে থেকে কোন না কোন জটিল রোগ ছিল।

স্বাস্থ্য অধিদপ্তরের প্রতিবেদনে বলা হয়েছে, গত এক সপ্তাহে করোনায় যারা মারা গেছেন, তাদের মধ্যে আগে থেকেই স্ট্রোক এবং ক্যানসারে আক্রান্ত ছিলেন পাঁচ দশমিক সাত শতাংশ, নিউরোলজিক্যাল এবং থাইরয়েডজনিত রোগে আক্রান্ত ছিলেন দুই দশমিক তিন শতাংশ, বাতজনিত রোগ ও রক্তরোগে আক্রান্ত ছিলেন এক দশমিক এক শতাংশ। তবে লিভারজনিত রোগ ও মানসিক সমস্যাজনিত রোগে আক্রান্ত কেউ গত সপ্তাহে করোনায় মারা যাননি।

৩ অক্টোবর পর্যন্ত এক সপ্তাহে করোনা সংক্রমণে ১৫৯ জনের মৃত্যু হয়েছে। এর মধ্যে পুরুষ ৮৭ জন এবং নারী ছিলেন ৭২ জন। তাদের মধ্যে ৭১ দশমিক সাত শতাংশই করোনা ভাইরাসের টিকা নেননি বলে স্বাস্থ্য অধিদপ্তরের প্রতিবেদনে উল্লেখ করা হয়েছে।

এক সপ্তাহে যে ১৫৯ জন মারা গেছেন, তাদের মধ্যে করোনাভাইরাস প্রতিরোধী টিকা নেননি ১১৪ জন, টিকা পেয়েছেন ১৪ জন। তবে ৩১ জনের তথ্য পাওয়া যায়নি। আর যে ১৪ জন টিকা নিয়েছিলেন, তাদের মধ্যে প্রথম ডোজ নিয়েছিলেন পাঁচজন ও দ্বিতীয় ডোজ নিয়েছিলেন ৯ জন।

স্বাস্থ্য অধিদপ্তর জানিয়েছে, এক সপ্তাহে মৃত্যু হওয়া ১৫৯ জনের মধ্যে ‘কো-মরবিডিটি’ ছিল ৮৮ জনের, যা মোট মৃত্যুর ৫৫ দশমিক তিন শতাংশ। এর আগের সপ্তাহে (২০ থেকে ২৬ সেপ্টেম্বর) করোনা সংক্রমণে ১৮৯ জনের মৃত্যু হয়েছিল। এর মধ্যে ১১০ জনের ‘কো-মরবিডিটি’ ছিল, যা মোট মৃত্যুর ৫৮ দশমিক দুই শতাংশ।

মৃত্যু বেশি বয়স্ক রোগীদের

স্বাস্থ্য অধিদপ্তরের গতকালের তথ্য অনুযায়ী, করোনা সংক্রমণে দেশে এ পর্যন্ত মোট ২৭ হাজার ৬১৪ জন মারা গেছেন। এর মধ্যে সর্বোচ্চ আট হাজার ৫৭২ জনের বয়স ছিল ৬১ থেকে ৭০ বছরের মধ্যে। এটি মোট মৃত্যুর ৩১ দশমিক চার শতাংশ। দ্বিতীয় সর্বোচ্চ ছয় হাজার ৫২১ জনের বয়স ছিল ৫১ থেকে ৬০ বছরের মধ্যে, যা মোট মৃত্যুর ২৩ দশমিক ৬১ শতাংশ।

এছাড়াও শূন্য থেকে ১০ বছর বয়সীদের মৃত্যুহার শূন্য দশমিক ২৮ শতাংশ, ১১ থেকে ২০ বছর বয়সীদের মৃত্যুহার শূন্য দশমিক ৬৪ শতাংশ, ২১ থেকে ৩০ বছর বয়সীদের মৃত্যুহার দুই দশমিক ৩০ শতাংশ, ৩১ থেকে ৪০ বছর বয়সীদের মৃত্যুহার পাঁচ দশমিক ৯৬ শতাংশ এবং ৪১ থেকে ৫০ বছর বয়সীদের মৃত্যুহার ছিল ১১ দশমিক ৮৩ শতাংশ।

তবে ৭০ বছরের বেশি বয়সী নাগরিকদের মধ্যে মৃত্যুহার কিছুটা কম। ৭১ থেকে ৮০ বছর বয়সীদের মধ্যে মৃত্যুহার ১৭ দশমিক ৩৯ শতাংশ, ৮১ থেকে ৯০ বছর বয়সীদের মৃত্যুহার পাঁচ দশমিক ৬৫ শতাংশ, ৯১ থেকে ১০০ বছর বয়সীদের মৃত্যুহার এক দশমিক ১৮ শতাংশ এবং একশ বছরের বেশি বয়সীদের মৃত্যুহার শূন্য দশমিক ১২ শতাংশ। করোনা সংক্রমণে এ পর্যন্ত দেশে একশ বছরের বেশি বয়সী ৩৩ জন মারা গেছেন।

২৪ ঘণ্টায় করোনায় মৃত্যু বেড়ে ২৩, শনাক্তের হার ২.৭২

সারাদেশে গত ২৪ ঘণ্টায় করোনাভাইরাসে আক্রান্ত হয়ে আরও ২৩ জনের মৃত্যু হয়েছে। এ নিয়ে ভাইরাসটিতে মৃতের সংখ্যা বেড়ে দাঁড়ালো ২৭ হাজার ৬১৪ জনে।

গত ২৪ ঘণ্টায় নমুনা পরীক্ষায় নতুন রোগী শনাক্ত হয়েছেন আরও ৬৯৪ জন। এ নিয়ে মোট আক্রান্ত রোগীর সংখ্যা ১৫ লাখ ৬৯ হাজার ৪৫২ জন।

গতকাল স্বাস্থ্য অধিদপ্তর থেকে পাঠানো করোনাবিষয়ক সংবাদ বিজ্ঞপ্তিতে এ তথ্য জানা গেছে।

স্বাস্থ্য অধিদপ্তরের বিজ্ঞপ্তিতে বলা হয়েছে, গত ২৪ ঘণ্টায় করোনা থেকে সুস্থ হয়েছেন ৭০৮ জন। এ পর্যন্ত মোট সুস্থ হয়েছেন ১৫ লাখ ২০ হাজার ২৯৬ জন।

গত ২৪ ঘণ্টায় ২৫ হাজার ৪২২ জনের নমুনা সংগ্রহ করা হয়। পরীক্ষা করা হয় ২৫ হাজার ৪৯৯টি নমুনা। পরীক্ষার বিপরীতে রোগী শনাক্তের হার ২ দশমিক ৭২ শতাংশ। এ পর্যন্ত মোট ৯৮ লাখ ৪৪ হাজার ৯১৭টি নমুনা পরীক্ষায় শনাক্তের হার ১৫ দশমিক ৮৪ শতাংশ। মোট শনাক্ত বিবেচনায় সুস্থতার হার ৯৭ দশমিক ৪৯ শতাংশ ও মৃত্যুর হার ১ দশমিক ৭৭ শতাংশ।

গত ২৪ ঘণ্টায় মৃতদের মধ্যে পুরুষ ১৫ ও নারী ৮ জন। এদের মধ্যে সরকারি হাসপাতালে মৃত্যুবরণ করেছেন ১৯ জন, বেসরকারি হাসপাতালে ২ জন এবং বাড়িতে ২ জন।

একই সময়ে ঢাকা বিভাগে সর্বোচ্চ ১৩ জন করোনায় মারা গেছেন। এছাড়া চট্টগ্রাম বিভাগে ৫ জন, খুলনা বিভাগে ২ জন এবং রাজশাহী, বরিশাল, ময়মনসিংহ বিভাগে ১ জন করে মারা গেছেন। গত ২৪ ঘণ্টায় রংপুর ও সিলেট বিভাগে কেউ মারা যাননি।

গত বছরের ৮ মার্চ দেশে প্রথম তিনজনের দেহে করোনাভাইরাস শনাক্ত হয়। এর ১০ দিন পর ওই বছরের ১৮ মার্চ দেশে এ করোনাভাইরাসে আক্রান্ত হয়ে প্রথম একজনের মৃত্যু হয়।

বুধবার, ০৬ অক্টোবর ২০২১ , ২১ আশ্বিন ১৪২৮ ২৭ সফর ১৪৪৩

করোনায় যারা মারা গেছেন অধিকাংশের অন্য রোগও ছিল

রাকিব উদ্দিন

করোনা সংক্রমণে বয়স্ক এবং ‘কো-মরবিডিটি’ ছিল- এমন মানুষই সবচেয়ে বেশি মারা গেছেন। করোনায় সবচেয়ে বেশি মৃত্যু হয়েছে ৬১ থেকে ৭০ বছর বয়সী নাগরিকদের। মোট মৃত্যুর ৩১ শতাংশই ছিল ওই বয়সী রোগী। এই বয়সে মানুষ এমনিতেই ‘কো-মরবিডিটি’তে বেশি ভোগেন বলে চিকিৎসা বিশেষজ্ঞরা জানিয়েছেন। ‘কো-মরবিডিটি’ বলতে সাধারণত নানা ধরনের ক্রনিক বা দীর্ঘমেয়াদি অসুখকে বোঝায়। যেমন, হার্টের সমস্যা, ফুসফুসের সমস্যা, উচ্চ রক্তচাপ, কিডনি জটিলতা এবং ডায়াবেটিস।

৬১ থেকে ৭০ বছর বয়সীদের বেশি মৃত্যুর কারণ জানতে চাইলে সরকারের রোগতত্ত্ব, রোগনিয়ন্ত্রণ ও গবেষণা প্রতিষ্ঠানের (আইইডিসিআর) উপদেষ্টা ডা. মুস্তাক হোসেন সংবাদকে বলেন, ‘কো-মরবিডিটি হলে মৃত্যুর ঝুঁকি এমনিতেই বেশি থাকে। তারা সুস্থ ছিল- এমনটি মনে করার কোন কারণ নেই। তাদের হয়তো বয়স বেশি বা অন্য কোন কন্ডিশন ছিল, যেখানে হয়তো রোগপ্রতিরোধ ক্ষমতা কম ছিল।’

এই জনস্বাস্থ্যবিদ আরও বলেন, ‘যারা চিকিৎসা নিতে পারেনি, হাসপাতালে আসার পর মৃত্যুবরণ করেছেন, তাদের ডাটা পরে নেয়া হচ্ছে। কাজেই তাদের কো-মরবিডিটি নেই, সেটি বলা যাচ্ছে না। তাদের মরনোত্তর তথ্য সংগ্রহ করা হচ্ছে কি না, তারা ঠিকমতো ওষুধ সেবন করেছিলেন কি না, তাদের ডায়াবেটিস ছিল কি না এবং দীর্ঘমেয়াদি কোন অসুখ ছিল কি না, সেগুলো দেখার বিষয়।’

গত ৪ অক্টোবর স্বাস্থ্য অধিদপ্তরের করোনা সংক্রমণ-সংক্রান্ত এক প্রতিবেদনে বলা হয়, গত সপ্তাহে (২৭ সেপ্টেম্বর থেকে ৩ অক্টোবর) করোনায় আক্রান্ত হয়ে মারা গেছেন ১৫৯ জন। তাদের মধ্যে আগে থেকেই উচ্চ রক্তচাপে আক্রান্ত ছিলেন ৬৭ শতাংশ। এছাড়া ডায়াবেটিসে আক্রান্ত ৬২ দশমিক পাঁচ শতাংশ, হৃদরোগে আক্রান্ত ১৮ শতাংশ এবং বক্ষব্যাধি ও কিডনি রোগে আক্রান্ত ছিলেন ১৪ দশমিক আট শতাংশ রোগী।

তবে এর আগের সপ্তাহে (২০ থেকে ২৬ সেপ্টেম্বর) করোনায় ১৮৯ জনের মৃত্যু হয়েছিল। এর মধ্যে ডায়াবেটিস ছিল ৬৯ দশমিক এক শতাংশের, উচ্চ রক্তচাপও ছিল ৬৯ দশমিক এক শতাংশের, বক্ষব্যাধি ছিল ১০ শতাংশের, হৃদরোগ ছিল ২০ দশমিক ৯ শতাংশের ও কিডনিজনিত রোগ ছিল ১৫ দশমিক পাঁচ শতাংশ করোনা রোগীর।

ঢাকা বিভাগের একটি জেলার সিভিল সার্জন সংবাদকে জানিয়েছেন, করোনা সংক্রমণে ৫০ বছরের বেশি বয়সী যারা মারা গেছেন, তাদের অধিকাংশের ‘কো-মরবিডিটি’ ছিল। আগে থেকে নানা রোগে ভুগলেও তারা হয়তো ঠিকমতো চিকিৎসা নেননি, ওষুধ সেবন করেননি, করোনার টিকা নেননি। এ কারণে তাদের শরীরে করোনাভাইরাসের সংক্রমণ ঘটার পর খুব দ্রুত অবস্থার অবনতি ঘটেছিল। এই ধরনের সমস্যার কারণে বয়স্ক নাগরিকদের মৃত্যু বেশি হয়েছে।

স্বাস্থ্য অধিদপ্তরের বরাত দিয়ে ওই সিভিল সার্জন আরও জানান, মঙ্গলবার (গতকাল) পর্যন্ত করোনা সংক্রমণে শূন্য থেকে ১০ বছর বয়সী ৭৬ শিশুর মৃত্যু হয়েছে। তাদের প্রায় সবারই আগে থেকে কোন না কোন জটিল রোগ ছিল।

স্বাস্থ্য অধিদপ্তরের প্রতিবেদনে বলা হয়েছে, গত এক সপ্তাহে করোনায় যারা মারা গেছেন, তাদের মধ্যে আগে থেকেই স্ট্রোক এবং ক্যানসারে আক্রান্ত ছিলেন পাঁচ দশমিক সাত শতাংশ, নিউরোলজিক্যাল এবং থাইরয়েডজনিত রোগে আক্রান্ত ছিলেন দুই দশমিক তিন শতাংশ, বাতজনিত রোগ ও রক্তরোগে আক্রান্ত ছিলেন এক দশমিক এক শতাংশ। তবে লিভারজনিত রোগ ও মানসিক সমস্যাজনিত রোগে আক্রান্ত কেউ গত সপ্তাহে করোনায় মারা যাননি।

৩ অক্টোবর পর্যন্ত এক সপ্তাহে করোনা সংক্রমণে ১৫৯ জনের মৃত্যু হয়েছে। এর মধ্যে পুরুষ ৮৭ জন এবং নারী ছিলেন ৭২ জন। তাদের মধ্যে ৭১ দশমিক সাত শতাংশই করোনা ভাইরাসের টিকা নেননি বলে স্বাস্থ্য অধিদপ্তরের প্রতিবেদনে উল্লেখ করা হয়েছে।

এক সপ্তাহে যে ১৫৯ জন মারা গেছেন, তাদের মধ্যে করোনাভাইরাস প্রতিরোধী টিকা নেননি ১১৪ জন, টিকা পেয়েছেন ১৪ জন। তবে ৩১ জনের তথ্য পাওয়া যায়নি। আর যে ১৪ জন টিকা নিয়েছিলেন, তাদের মধ্যে প্রথম ডোজ নিয়েছিলেন পাঁচজন ও দ্বিতীয় ডোজ নিয়েছিলেন ৯ জন।

স্বাস্থ্য অধিদপ্তর জানিয়েছে, এক সপ্তাহে মৃত্যু হওয়া ১৫৯ জনের মধ্যে ‘কো-মরবিডিটি’ ছিল ৮৮ জনের, যা মোট মৃত্যুর ৫৫ দশমিক তিন শতাংশ। এর আগের সপ্তাহে (২০ থেকে ২৬ সেপ্টেম্বর) করোনা সংক্রমণে ১৮৯ জনের মৃত্যু হয়েছিল। এর মধ্যে ১১০ জনের ‘কো-মরবিডিটি’ ছিল, যা মোট মৃত্যুর ৫৮ দশমিক দুই শতাংশ।

মৃত্যু বেশি বয়স্ক রোগীদের

স্বাস্থ্য অধিদপ্তরের গতকালের তথ্য অনুযায়ী, করোনা সংক্রমণে দেশে এ পর্যন্ত মোট ২৭ হাজার ৬১৪ জন মারা গেছেন। এর মধ্যে সর্বোচ্চ আট হাজার ৫৭২ জনের বয়স ছিল ৬১ থেকে ৭০ বছরের মধ্যে। এটি মোট মৃত্যুর ৩১ দশমিক চার শতাংশ। দ্বিতীয় সর্বোচ্চ ছয় হাজার ৫২১ জনের বয়স ছিল ৫১ থেকে ৬০ বছরের মধ্যে, যা মোট মৃত্যুর ২৩ দশমিক ৬১ শতাংশ।

এছাড়াও শূন্য থেকে ১০ বছর বয়সীদের মৃত্যুহার শূন্য দশমিক ২৮ শতাংশ, ১১ থেকে ২০ বছর বয়সীদের মৃত্যুহার শূন্য দশমিক ৬৪ শতাংশ, ২১ থেকে ৩০ বছর বয়সীদের মৃত্যুহার দুই দশমিক ৩০ শতাংশ, ৩১ থেকে ৪০ বছর বয়সীদের মৃত্যুহার পাঁচ দশমিক ৯৬ শতাংশ এবং ৪১ থেকে ৫০ বছর বয়সীদের মৃত্যুহার ছিল ১১ দশমিক ৮৩ শতাংশ।

তবে ৭০ বছরের বেশি বয়সী নাগরিকদের মধ্যে মৃত্যুহার কিছুটা কম। ৭১ থেকে ৮০ বছর বয়সীদের মধ্যে মৃত্যুহার ১৭ দশমিক ৩৯ শতাংশ, ৮১ থেকে ৯০ বছর বয়সীদের মৃত্যুহার পাঁচ দশমিক ৬৫ শতাংশ, ৯১ থেকে ১০০ বছর বয়সীদের মৃত্যুহার এক দশমিক ১৮ শতাংশ এবং একশ বছরের বেশি বয়সীদের মৃত্যুহার শূন্য দশমিক ১২ শতাংশ। করোনা সংক্রমণে এ পর্যন্ত দেশে একশ বছরের বেশি বয়সী ৩৩ জন মারা গেছেন।

২৪ ঘণ্টায় করোনায় মৃত্যু বেড়ে ২৩, শনাক্তের হার ২.৭২

সারাদেশে গত ২৪ ঘণ্টায় করোনাভাইরাসে আক্রান্ত হয়ে আরও ২৩ জনের মৃত্যু হয়েছে। এ নিয়ে ভাইরাসটিতে মৃতের সংখ্যা বেড়ে দাঁড়ালো ২৭ হাজার ৬১৪ জনে।

গত ২৪ ঘণ্টায় নমুনা পরীক্ষায় নতুন রোগী শনাক্ত হয়েছেন আরও ৬৯৪ জন। এ নিয়ে মোট আক্রান্ত রোগীর সংখ্যা ১৫ লাখ ৬৯ হাজার ৪৫২ জন।

গতকাল স্বাস্থ্য অধিদপ্তর থেকে পাঠানো করোনাবিষয়ক সংবাদ বিজ্ঞপ্তিতে এ তথ্য জানা গেছে।

স্বাস্থ্য অধিদপ্তরের বিজ্ঞপ্তিতে বলা হয়েছে, গত ২৪ ঘণ্টায় করোনা থেকে সুস্থ হয়েছেন ৭০৮ জন। এ পর্যন্ত মোট সুস্থ হয়েছেন ১৫ লাখ ২০ হাজার ২৯৬ জন।

গত ২৪ ঘণ্টায় ২৫ হাজার ৪২২ জনের নমুনা সংগ্রহ করা হয়। পরীক্ষা করা হয় ২৫ হাজার ৪৯৯টি নমুনা। পরীক্ষার বিপরীতে রোগী শনাক্তের হার ২ দশমিক ৭২ শতাংশ। এ পর্যন্ত মোট ৯৮ লাখ ৪৪ হাজার ৯১৭টি নমুনা পরীক্ষায় শনাক্তের হার ১৫ দশমিক ৮৪ শতাংশ। মোট শনাক্ত বিবেচনায় সুস্থতার হার ৯৭ দশমিক ৪৯ শতাংশ ও মৃত্যুর হার ১ দশমিক ৭৭ শতাংশ।

গত ২৪ ঘণ্টায় মৃতদের মধ্যে পুরুষ ১৫ ও নারী ৮ জন। এদের মধ্যে সরকারি হাসপাতালে মৃত্যুবরণ করেছেন ১৯ জন, বেসরকারি হাসপাতালে ২ জন এবং বাড়িতে ২ জন।

একই সময়ে ঢাকা বিভাগে সর্বোচ্চ ১৩ জন করোনায় মারা গেছেন। এছাড়া চট্টগ্রাম বিভাগে ৫ জন, খুলনা বিভাগে ২ জন এবং রাজশাহী, বরিশাল, ময়মনসিংহ বিভাগে ১ জন করে মারা গেছেন। গত ২৪ ঘণ্টায় রংপুর ও সিলেট বিভাগে কেউ মারা যাননি।

গত বছরের ৮ মার্চ দেশে প্রথম তিনজনের দেহে করোনাভাইরাস শনাক্ত হয়। এর ১০ দিন পর ওই বছরের ১৮ মার্চ দেশে এ করোনাভাইরাসে আক্রান্ত হয়ে প্রথম একজনের মৃত্যু হয়।