স্বয়ংক্রিয় উৎসে কর কর্তন সিস্টেম চালু

স্বয়ংক্রিয়ভাবে উৎসে কর কর্তন ও মামলার জট কমানোসহ কর ব্যবস্থাপনায় যুগান্তকারী পরিবর্তন আনতে চালু হলো ই-টিডিএস সিস্টেম। গতকাল জাতীয় রাজস্ব বোর্ডের উদ্ভাবিত এই ডিজিটাল প্ল্যাটফর্মের উদ্বোধন হয়। এনবিআর চেয়ারম্যান আবু হেনা মো. রহমাতুল মুনিমের আশা, ‘কর ব্যবস্থাপনায় ই-টিডিএস সিস্টেম উৎসে কর কর্তন ও সরকারি কোষাগারে জমাদান এবং রিপোর্টিংয়ের অটোমেটেড সিস্টেম যুগান্তকারী ভূমিকা রাখবে। মামলার জট কমে আসবে। এছাড়া রাজস্ব ফাঁকি কমবে এবং রাজস্ব আদায় বৃদ্ধি পাবে।’

অনুষ্ঠানে প্রধান অতিথি ও বিশেষ অতিথি ছিলেন মহা-হিসাব নিরীক্ষক ও নিয়ন্ত্রক মোহাম্মদ মুসলিম চৌধুরী এবং অর্থ বিভাগের জ্যেষ্ঠ সচিব আবদুর রউফ তালুকদার।

জানা যায়, আয়কর আইনে ৩৪টি ধারায় উৎসে কর কর্তন এবং ১৯টি ধারায় উৎসে কর সংগ্রহের বিধান রয়েছে। এসব ধারার অধীনে উৎসে কর কর্তন ও সংগ্রহ ম্যানুয়ালি মনিটরিং করা সময় সাপেক্ষ ও কষ্টসাধ্য। প্রতিটি উৎসে কর কর্তন করে কর্তৃপক্ষকে দুটি অর্ধবার্ষিক রিটার্ন এবং ২৪টি মাসিক বিবরণীসহ মোট ২৬টি রিপোর্ট দাখিল করতে হয়।

এছাড়া নির্ধারিত হারে কর কর্তন, সঠিক কোডে ও যথাসময়ে উৎসে কর কর্তন কর্তৃপক্ষের জন্য বড় চ্যালেঞ্জ। নব উদ্ভাবিত এই স্বয়ংক্রিয় ব্যবস্থা কার্যকরের ফলে রাজস্বের প্রধান খাত উৎসে কর ব্যবস্থাপনায় আর্থিক শৃঙ্খলা জোরদারকরণে সহায়তা পাবে আয়কর প্রশাসন। ফলে রাজস্ব ফাঁকি কমবে এবং রাজস্ব আদায় বৃদ্ধি পাবে। এনবিআরের কর্মকর্তারা বলছেন, স্বয়ংক্রিয় ব্যবস্থার ফলে উৎসে কর খাতে বিপুল পরিমাণ কাগজপত্র ও এর সঙ্গে সংযুক্ত চালান জমা দিতে দুর্ভোগ এবং বিভিন্ন গাণিতিক হিসাব পরিগণনায় বিভ্রান্তি দূর হবে। ই-টিডিএস সিস্টেমে একজন উৎসে কর কর্তনকারী কর্তৃপক্ষ লগ-ইন করে তার যাবতীয় কার্যক্রম সম্পন্ন ও এই চালান সিস্টেমের মাধ্যমে তাৎক্ষণিক কর পরিশোধ করতে পারবেন। ফলে আয়কর কর্তৃপক্ষ সহজেই মনিটরিং কার্যক্রম পরিচালনা করতে পারবে।

২০২০ সালের মে মাসে ই-টিডিএস সিস্টেমের কাজ শুরু হয়। গত বছরের ১ ডিসেম্বর থেকে জাতীয় রাজস্ব বোর্ডের বৃহৎ করদাতা ইউনিট ও কর অঞ্চল ১, ২ ও ৬-এ এর পরীক্ষামূলক কার্যক্রম চলেছে। একইদিন ই-টিডিএস ল্যাবের উদ্বোধন হয়।

সিএজি মুসলিম চৌধুরী এ সংস্কারকে ‘যুগান্তকারী’ উল্লেখ করে বলেন, ‘বর্তমানে উৎসে কর মোট আয়করের ৬০ ভাগ। অটোমেশন কার্যকর হওয়ায় উৎসে কর আদায় বেড়ে ৮৫ ভাগ হবে বলে আশা করা যাচ্ছে। আমাদের রিফান্ড ব্যবস্থায় (ট্যাক্স ফেরত) বড় ধরনের জটিলতা আছে। এটা নিয়ে কোনো হাংকি পাংকি করা চলবে না। এ কাজে অবশ্যই স্বচ্ছতা নিশ্চিত করতে হবে।’

অর্থসচিব আবদুর রউফ তালুকদার বলেন, ‘আমাদের কর সংস্কৃতি খুবই দুর্বল। মাত্র ১০ পারসেন্ট লোক কর দেয়। অথচ ২ কোটি লোক ট্যাক্স দেওয়ার সামর্থ্য রাখে। আমি সবসময় বলি ট্যাক্স রেট কমাতে। কারণ ট্যাক্স রেট কমালে আওতা বাড়বে। আমরা এখন উৎসে কর কর্তনের ফাইলিং সিস্টেম চালু করেছি। আমাদের পেমেন্টের দিকে যেতে হবে।’

বৃহস্পতিবার, ০৭ অক্টোবর ২০২১ , ২২ আশ্বিন ১৪২৮ ২৮ সফর ১৪৪৩

স্বয়ংক্রিয় উৎসে কর কর্তন সিস্টেম চালু

অর্থনৈতিক বার্তা পরিবেশক

image

স্বয়ংক্রিয়ভাবে উৎসে কর কর্তন ও মামলার জট কমানোসহ কর ব্যবস্থাপনায় যুগান্তকারী পরিবর্তন আনতে চালু হলো ই-টিডিএস সিস্টেম। গতকাল জাতীয় রাজস্ব বোর্ডের উদ্ভাবিত এই ডিজিটাল প্ল্যাটফর্মের উদ্বোধন হয়। এনবিআর চেয়ারম্যান আবু হেনা মো. রহমাতুল মুনিমের আশা, ‘কর ব্যবস্থাপনায় ই-টিডিএস সিস্টেম উৎসে কর কর্তন ও সরকারি কোষাগারে জমাদান এবং রিপোর্টিংয়ের অটোমেটেড সিস্টেম যুগান্তকারী ভূমিকা রাখবে। মামলার জট কমে আসবে। এছাড়া রাজস্ব ফাঁকি কমবে এবং রাজস্ব আদায় বৃদ্ধি পাবে।’

অনুষ্ঠানে প্রধান অতিথি ও বিশেষ অতিথি ছিলেন মহা-হিসাব নিরীক্ষক ও নিয়ন্ত্রক মোহাম্মদ মুসলিম চৌধুরী এবং অর্থ বিভাগের জ্যেষ্ঠ সচিব আবদুর রউফ তালুকদার।

জানা যায়, আয়কর আইনে ৩৪টি ধারায় উৎসে কর কর্তন এবং ১৯টি ধারায় উৎসে কর সংগ্রহের বিধান রয়েছে। এসব ধারার অধীনে উৎসে কর কর্তন ও সংগ্রহ ম্যানুয়ালি মনিটরিং করা সময় সাপেক্ষ ও কষ্টসাধ্য। প্রতিটি উৎসে কর কর্তন করে কর্তৃপক্ষকে দুটি অর্ধবার্ষিক রিটার্ন এবং ২৪টি মাসিক বিবরণীসহ মোট ২৬টি রিপোর্ট দাখিল করতে হয়।

এছাড়া নির্ধারিত হারে কর কর্তন, সঠিক কোডে ও যথাসময়ে উৎসে কর কর্তন কর্তৃপক্ষের জন্য বড় চ্যালেঞ্জ। নব উদ্ভাবিত এই স্বয়ংক্রিয় ব্যবস্থা কার্যকরের ফলে রাজস্বের প্রধান খাত উৎসে কর ব্যবস্থাপনায় আর্থিক শৃঙ্খলা জোরদারকরণে সহায়তা পাবে আয়কর প্রশাসন। ফলে রাজস্ব ফাঁকি কমবে এবং রাজস্ব আদায় বৃদ্ধি পাবে। এনবিআরের কর্মকর্তারা বলছেন, স্বয়ংক্রিয় ব্যবস্থার ফলে উৎসে কর খাতে বিপুল পরিমাণ কাগজপত্র ও এর সঙ্গে সংযুক্ত চালান জমা দিতে দুর্ভোগ এবং বিভিন্ন গাণিতিক হিসাব পরিগণনায় বিভ্রান্তি দূর হবে। ই-টিডিএস সিস্টেমে একজন উৎসে কর কর্তনকারী কর্তৃপক্ষ লগ-ইন করে তার যাবতীয় কার্যক্রম সম্পন্ন ও এই চালান সিস্টেমের মাধ্যমে তাৎক্ষণিক কর পরিশোধ করতে পারবেন। ফলে আয়কর কর্তৃপক্ষ সহজেই মনিটরিং কার্যক্রম পরিচালনা করতে পারবে।

২০২০ সালের মে মাসে ই-টিডিএস সিস্টেমের কাজ শুরু হয়। গত বছরের ১ ডিসেম্বর থেকে জাতীয় রাজস্ব বোর্ডের বৃহৎ করদাতা ইউনিট ও কর অঞ্চল ১, ২ ও ৬-এ এর পরীক্ষামূলক কার্যক্রম চলেছে। একইদিন ই-টিডিএস ল্যাবের উদ্বোধন হয়।

সিএজি মুসলিম চৌধুরী এ সংস্কারকে ‘যুগান্তকারী’ উল্লেখ করে বলেন, ‘বর্তমানে উৎসে কর মোট আয়করের ৬০ ভাগ। অটোমেশন কার্যকর হওয়ায় উৎসে কর আদায় বেড়ে ৮৫ ভাগ হবে বলে আশা করা যাচ্ছে। আমাদের রিফান্ড ব্যবস্থায় (ট্যাক্স ফেরত) বড় ধরনের জটিলতা আছে। এটা নিয়ে কোনো হাংকি পাংকি করা চলবে না। এ কাজে অবশ্যই স্বচ্ছতা নিশ্চিত করতে হবে।’

অর্থসচিব আবদুর রউফ তালুকদার বলেন, ‘আমাদের কর সংস্কৃতি খুবই দুর্বল। মাত্র ১০ পারসেন্ট লোক কর দেয়। অথচ ২ কোটি লোক ট্যাক্স দেওয়ার সামর্থ্য রাখে। আমি সবসময় বলি ট্যাক্স রেট কমাতে। কারণ ট্যাক্স রেট কমালে আওতা বাড়বে। আমরা এখন উৎসে কর কর্তনের ফাইলিং সিস্টেম চালু করেছি। আমাদের পেমেন্টের দিকে যেতে হবে।’