শরতে ভারি বর্ষণে দুঃসহ জলাবদ্ধতা

কিশোরগঞ্জে ৭০ ভাগ ভবন নির্মাণ ড্রেনের গাইডওয়াল ঘেঁষে : মেয়র

শরতের শেষ সময়ের বর্ষণে কিশোরগঞ্জ শহরের অনেক এলাকায় তৈরি হয়েছে দুঃসহ জলাবদ্ধতা। জনজীবনের স্বাভাবিক কাজকর্মও বাধাগ্রস্ত হচ্ছে। এদিকে পৌর মেয়র মাহমুদ পারভেজ বলেছেন, জলাবদ্ধতা নিরসনের দায়িত্ব কেবল পৌর কর্তৃপক্ষের নয়, পৌরবাসীকেও সচেতন হতে হবে। শহরের অন্তত ৭০ ভাগ ভবন তৈরি করা হয়েছে ড্রেনের গাইডওয়াল থেকে। ফলে সময়ের প্রয়োজনে ড্রেনগুলো প্রশস্ত করার সুযোগ কমে গেছে।

কয়েকদিন ধরেই বৃষ্টিপাত হলেও দু’দিন ধরে হচ্ছে ভারী বর্ষণ। এর ফলে জেলা শহরের পুরনো কালেক্টরেট এলাকা থৈ থৈ পানিতে নিমজ্জিত। বিভিন্ন অফিসে পানি ঢুকে মূল্যবান কম্পিউটার সামগ্রিসহ আসবাবপত্র ক্ষতিগ্রস্ত হয়েছে বলে জানা গেছে। পুরনো কালেক্টরেট এলাকায় রেকর্ড রুম, জেলা তথ্য অফিস, জেলা মহিলা বিষয়ক অধিদপ্তর, জেলা শিশু একাডেমি এবং ট্রাফিক অফিস রয়েছে। এর পাশেই রয়েছে আবাসিক এলাকা। ফলে পুরো এলাকার অফিস স্টাফ এবং অধিবাসীগণ এখন জলরুদ্ধ অবস্থায় রয়েছেন। পার্শ্ববর্তী সরকারী মহিলা কলেজেও তৈরি হয়েছে জলাবদ্ধতা।

মহিলা অধিদপ্তরের উপ-পরিচালক মামুন-অর রশিদ জানালেন, তিনি গত মঙ্গলবার পানি মাড়িয়ে অফিসে গিয়ে দেখেন, পুরো অফিসের সবগুলো কক্ষে পানি থৈ থৈ করছে। তার অফিসের কম্পিউটার সামগ্রি এবং আসবাবপত্র অনেকটাই পানিতে ডুবে আছে। এগুলি বেশ ক্ষতিগ্রস্ত হয়েছে। সিনিয়র জেলা তথ্য কর্মকর্তা মো. সামছুল হক জানান, তিনিও অফিসে গিয়ে পানির জন্য ঢুকতে পারেননি, বেরিয়ে গেছেন। শিশু একাডেমিতে শিশুদের নিয়ে যেতে মায়েদেরও চরম ভোগান্তি পোহাতে হয়।

বহু বছর ধরেই পুরনো কালেক্টরেট এলাকায় বৃষ্টির মৌসুমে পানি জমে যায়। আশপাশের এলাকা থেকে কালেক্টরেট এলাকাটি নীচু হবার কারণে পানি নিষ্কাশনের ব্যবস্থা নেই। ফলে এখানকার সকল অফিস স্টাফ এর হাত থেকে পরিত্রাণ চান। এছাড়াও ভারী বৃষ্টিপাত হলে শহরের বিভিন্ন এলাকায় জলাবদ্ধতা তৈরি হয়। অপরিকল্পিত ভবন নির্মাণ, বাসাবাড়ির উঠোন বা মেঝের চেয়ে ড্রেন এবং রাস্তার উচ্চতা বেশি, অপ্রশস্ত ড্রেন আর অপরিচ্ছন্নতার কারণেই মূলত জলাবদ্ধতার সৃষ্টি হয় বলে ভুক্তভোগীদের অভিমত। অসচেতন জনগণও খোলা ড্রেনে ডাবের খোসা, প্লাস্টিকের বোতল আর পলিথিনসহ বিভিন্ন ধরনের কঠিন বর্জ্য ফেলে ড্রেনগুলোকে অকার্যকর করে তোলে। এটাও জলাবদ্ধতার একটি অন্যতম কারণ হিসেবে শহরবাসী মনে করেন।

কিশোরগঞ্জ পৌরসভার মেয়র মাহমুদ পারভেজ বলেছেন, বিগত দিনগুলোতে পৌর এলাকায় বেশ কিছু মাস্টার ড্রেন নির্মাণ করা হয়েছে। তবে শহরের অনেকেই তাদের ভবন নির্মাণের সময় ড্রেন প্রশস্ত করার মত জায়গা রেখে ভবনটি নির্মাণ করেননি। শহরের অন্তত ৭০ ভাগ ভবন তৈরি করা হয়েছে ড্রেনের গাইড ওয়ালের ওপর থেকে।

এছাড়া পৌরসভার পক্ষ থেকে একদিকে ড্রেনগুলো পরিষ্কার করা হয়, অন্যদিকে পৌরবাসী ড্রেনে বর্জ্য ফেলে পানি নিষ্কাশনে প্রতিবন্ধকতা তৈরি করেন। ফলে জলাবদ্ধতা নিরসনে পৌর কর্তৃপক্ষের যেমন দায়িত্ব রয়েছে, জনগণেরও দায়িত্ব রয়েছে বলে তিনি মনে করেন।

তিনি আরও বলেন, পুরনো কালেক্টরেট এলাকাটি অত্যন্ত নীচু। পৌরসভার বর্তমান ড্রেনেজ ব্যবস্থায় এই এলাকার পানি নিষ্কাশন করা সম্ভব নয়। এলাকাটি উঁচু করা হলে জলাবদ্ধতার নিরসন হবে বলে তিনি মনে করেন।

বৃহস্পতিবার, ০৭ অক্টোবর ২০২১ , ২২ আশ্বিন ১৪২৮ ২৮ সফর ১৪৪৩

শরতে ভারি বর্ষণে দুঃসহ জলাবদ্ধতা

কিশোরগঞ্জে ৭০ ভাগ ভবন নির্মাণ ড্রেনের গাইডওয়াল ঘেঁষে : মেয়র

জেলা বার্তা পরিবেশক, কিশোরগঞ্জ

image

কিশোরগঞ্জ : পুরনো কালেক্টরেটে অফিসের সামনে জলাবদ্ধতার কারণে দুর্ভোগের পড়েছেন কর্মকর্তা-কর্মচারীরা -সংবাদ

শরতের শেষ সময়ের বর্ষণে কিশোরগঞ্জ শহরের অনেক এলাকায় তৈরি হয়েছে দুঃসহ জলাবদ্ধতা। জনজীবনের স্বাভাবিক কাজকর্মও বাধাগ্রস্ত হচ্ছে। এদিকে পৌর মেয়র মাহমুদ পারভেজ বলেছেন, জলাবদ্ধতা নিরসনের দায়িত্ব কেবল পৌর কর্তৃপক্ষের নয়, পৌরবাসীকেও সচেতন হতে হবে। শহরের অন্তত ৭০ ভাগ ভবন তৈরি করা হয়েছে ড্রেনের গাইডওয়াল থেকে। ফলে সময়ের প্রয়োজনে ড্রেনগুলো প্রশস্ত করার সুযোগ কমে গেছে।

কয়েকদিন ধরেই বৃষ্টিপাত হলেও দু’দিন ধরে হচ্ছে ভারী বর্ষণ। এর ফলে জেলা শহরের পুরনো কালেক্টরেট এলাকা থৈ থৈ পানিতে নিমজ্জিত। বিভিন্ন অফিসে পানি ঢুকে মূল্যবান কম্পিউটার সামগ্রিসহ আসবাবপত্র ক্ষতিগ্রস্ত হয়েছে বলে জানা গেছে। পুরনো কালেক্টরেট এলাকায় রেকর্ড রুম, জেলা তথ্য অফিস, জেলা মহিলা বিষয়ক অধিদপ্তর, জেলা শিশু একাডেমি এবং ট্রাফিক অফিস রয়েছে। এর পাশেই রয়েছে আবাসিক এলাকা। ফলে পুরো এলাকার অফিস স্টাফ এবং অধিবাসীগণ এখন জলরুদ্ধ অবস্থায় রয়েছেন। পার্শ্ববর্তী সরকারী মহিলা কলেজেও তৈরি হয়েছে জলাবদ্ধতা।

মহিলা অধিদপ্তরের উপ-পরিচালক মামুন-অর রশিদ জানালেন, তিনি গত মঙ্গলবার পানি মাড়িয়ে অফিসে গিয়ে দেখেন, পুরো অফিসের সবগুলো কক্ষে পানি থৈ থৈ করছে। তার অফিসের কম্পিউটার সামগ্রি এবং আসবাবপত্র অনেকটাই পানিতে ডুবে আছে। এগুলি বেশ ক্ষতিগ্রস্ত হয়েছে। সিনিয়র জেলা তথ্য কর্মকর্তা মো. সামছুল হক জানান, তিনিও অফিসে গিয়ে পানির জন্য ঢুকতে পারেননি, বেরিয়ে গেছেন। শিশু একাডেমিতে শিশুদের নিয়ে যেতে মায়েদেরও চরম ভোগান্তি পোহাতে হয়।

বহু বছর ধরেই পুরনো কালেক্টরেট এলাকায় বৃষ্টির মৌসুমে পানি জমে যায়। আশপাশের এলাকা থেকে কালেক্টরেট এলাকাটি নীচু হবার কারণে পানি নিষ্কাশনের ব্যবস্থা নেই। ফলে এখানকার সকল অফিস স্টাফ এর হাত থেকে পরিত্রাণ চান। এছাড়াও ভারী বৃষ্টিপাত হলে শহরের বিভিন্ন এলাকায় জলাবদ্ধতা তৈরি হয়। অপরিকল্পিত ভবন নির্মাণ, বাসাবাড়ির উঠোন বা মেঝের চেয়ে ড্রেন এবং রাস্তার উচ্চতা বেশি, অপ্রশস্ত ড্রেন আর অপরিচ্ছন্নতার কারণেই মূলত জলাবদ্ধতার সৃষ্টি হয় বলে ভুক্তভোগীদের অভিমত। অসচেতন জনগণও খোলা ড্রেনে ডাবের খোসা, প্লাস্টিকের বোতল আর পলিথিনসহ বিভিন্ন ধরনের কঠিন বর্জ্য ফেলে ড্রেনগুলোকে অকার্যকর করে তোলে। এটাও জলাবদ্ধতার একটি অন্যতম কারণ হিসেবে শহরবাসী মনে করেন।

কিশোরগঞ্জ পৌরসভার মেয়র মাহমুদ পারভেজ বলেছেন, বিগত দিনগুলোতে পৌর এলাকায় বেশ কিছু মাস্টার ড্রেন নির্মাণ করা হয়েছে। তবে শহরের অনেকেই তাদের ভবন নির্মাণের সময় ড্রেন প্রশস্ত করার মত জায়গা রেখে ভবনটি নির্মাণ করেননি। শহরের অন্তত ৭০ ভাগ ভবন তৈরি করা হয়েছে ড্রেনের গাইড ওয়ালের ওপর থেকে।

এছাড়া পৌরসভার পক্ষ থেকে একদিকে ড্রেনগুলো পরিষ্কার করা হয়, অন্যদিকে পৌরবাসী ড্রেনে বর্জ্য ফেলে পানি নিষ্কাশনে প্রতিবন্ধকতা তৈরি করেন। ফলে জলাবদ্ধতা নিরসনে পৌর কর্তৃপক্ষের যেমন দায়িত্ব রয়েছে, জনগণেরও দায়িত্ব রয়েছে বলে তিনি মনে করেন।

তিনি আরও বলেন, পুরনো কালেক্টরেট এলাকাটি অত্যন্ত নীচু। পৌরসভার বর্তমান ড্রেনেজ ব্যবস্থায় এই এলাকার পানি নিষ্কাশন করা সম্ভব নয়। এলাকাটি উঁচু করা হলে জলাবদ্ধতার নিরসন হবে বলে তিনি মনে করেন।