সরকারের দেয়া প্রণোদনার টাকা পাওয়ার আশায় প্রতারক চক্রের ফাঁদে পড়ে কারাগারে যাওয়া কুড়িগ্রামের ৫ দিনমজুরকে এক বছরের জামিন দিয়েছেন হাইকোর্ট। এ সময় লুটপাটকারীদের পরিবর্তে সাধারণ দিনমজুর কৃষককে মামলার জালে জড়ানোয় অসন্তোষ প্রকাশ করেছেন হাইকোর্ট। আদালত বলেছেন, লুটপাটকারীদের পরিবর্তে সাধারণ কৃষককে কেন ফাঁসানো হলো? গতকাল বিচারপতি মোস্তফা জামান ইসলাম ও বিচারপতি মোহাম্মদ আলীর হাইকোর্ট বেঞ্চ তাদের জামিন মঞ্জুর করে আদেশ দেন।
জামিনপ্রাপ্তরা হলেন, কুড়িগ্রামের ফুলবাড়ী উপজেলার বড়ভিটা ইউনিয়নের নওদাবস গ্রামের দিনমজুর বিধবা ফুলমনি রানি, রণজিৎ কুমার, প্রভাস চন্দ্র, কমল চন্দ্র রায় ও নিখিল চন্দ্র বর্মন। আদালতে ৫ কৃষকের পক্ষে বিনা পয়সায় আইনি লড়াই করেন অ্যাডভোকেট মোহাম্মদ শিশির মনির। রাষ্ট্রপক্ষে শুনানি করেন ডেপুটি অ্যাটর্নি জেনারেল অমিত দাস গুপ্ত।
মামলার শুনানির শুরুতে অ্যাডভোকেট মোহাম্মদ শিশির মনির বলেন, আমি যাদের জামিন আবেদন নিয়ে এসেছি, তারা সবাই সংখ্যালঘু সম্প্রদায়ের দরিদ্র মানুষ। তাদের বাড়ি কুড়িগ্রামে। তাদের করোনার প্রণোদনা দেয়ার কথা বলে ব্যাংক অ্যাকাউন্ট খোলা হয়। এভাবে ফাঁসানো হয়েছে।
তখন আদালত বলেন, মামলা তো হয়েছে গাজীপুরে। আদালত জানতে চান তারা জেলে আছেন কতদিন? তখন আইনজীবী বলেন, তারা ৩ জুলাই থেকে জেলে আছেন। তাদের কোন অবলম্বন নেই। তখন জামিনের বিরোধিতা করে রাষ্ট্রপক্ষের আইনজীবী ডেপুটি অ্যাটর্নি জেনারেল অমিত দাস গুপ্ত বলেন, এটা ব্যাংকের টাকা আত্মসাতের মামলা। তখন হাইকোর্ট একটি অনলাইন সংবাদ মাধ্যমে প্রকাশিত প্রতিবেদনসহ মামলার নথি দেখে বলেন, যারা লুটপাট করেছে তাদের বিরুদ্ধে মামলা হলো না। দিনমজুর সাধারণ মানুষকে কেন ফাঁসানো হলো? এরপর আদালত প্রতারক চক্রের ফাঁদে পড়ে কারাগারে যাওয়া কুড়িগ্রামের ফুলবাড়ী উপজেলার বড়ভিটা ইউনিয়নের নওদাবস গ্রামের ওই পাঁচজনকে এক বছরের জামিন দেন।
এর আগে গত ৩ অক্টোবর প্রতারক চক্রের ফাঁদে পড়ে কারাগারে যাওয়া ওই পাঁচজনের জামিন চেয়ে হাইকোর্টে আবেদন করেন অ্যাডভোকেট মোহাম্মদ শিশির মনির। জামিন আবেদনে সংযুক্ত করা পত্রিকার প্রতিবেদন থেকে জানা যায়, গাজীপুরের শ্রীপুর উপজেলা হিসাবরক্ষণ অফিসের মাস্টাররোল কর্মচারী কুড়িগ্রামের ভুরুঙ্গামারীর তানভীর ইসলাম স্বপন (৩০) করোনাকালীন সরকারি প্রণোদনা পাইয়ে দেয়ার কথা বলে তাদের পাঁচজনকে নিয়ে সোনালী ব্যাংকের নাগেশ্বরী শাখায় যান। সেখানে তাদের নামে ব্যাংক হিসাব চালু করেন এবং শ্রীপুরে নিয়ে গিয়ে ব্যাংকের চেক বই ও বিভিন্ন কাগজপত্রে টিপসই নেন।
একপর্যায়ে তাদের কাছ থেকে ব্যাংকের সব কাগজপত্র ও চেক বই নিয়ে নেন এবং প্রতিশ্রুতি দেন যে তাদের এই ব্যাংক অ্যাকাউন্টে প্রণোদনার টাকা পাঠানো হবে। এর কিছুদিন পর পাঁচ দিনমজুরের হিসাব নম্বরে ২ কোটি ৪৬ লাখ ৯ হাজার ৯৬০ টাকা চলে আসে। এসব টাকা আসে সোনালী ব্যাংক হেডকোয়ার্টার শাখা থেকে। যার মধ্যে রণজিতের সঞ্চয়ী হিসাবে ৪৮ লাখ ৪৫ হাজার ৭২০ টাকা, প্রভাষের হিসাব নম্বরে ৬৫ লাখ ৭২ হাজার ১২০ টাকা, সুবলের হিসাব নম্বরে ৪০ লাখ ৭১ হাজার ৭২০ টাকা, কমলের হিসাব নম্বরে ৪২ লাখ ৪৯ হাজার ৮৮০ টাকা এবং ফুলমণি রানির হিসাব নম্বরে ৪৮ লাখ ৭০ হাজার ৫২০ টাকা আসে।
কয়েকদিন পর অপরিচিত ৩-৪ জন লোক এসব হিসাব নম্বর থেকে টাকা তুলতে এলে ব্যাংক কর্মকর্তাদের সন্দেহ হয় এবং তারা শ্রীপুর শাখায় টাকা উত্তোলন বন্ধ করে দেন। তবে টাকা তুলতে আসা অপরিচিত লোকগুলোকে আটকের আগেই তারা ব্যাংক থেকে সরে যায়। ওই ঘটনায় সোনালী ব্যাংকের শ্রীপুর শাখার ব্যবস্থাপক রেজাউল হকের করা মামলায় পাঁচ দিনমজুরসহ শ্রীপুর উপজেলা হিসাবরক্ষণ কর্মকর্তা বজলুর রশিদ, হিসাবরক্ষণ অফিসের অডিটর আরিফুর রহমান, মাস্টাররোল কর্মচারী তানভীর ইসলাম স্বপন ও ঢাকার উত্তরখান জামতলা এলাকার বাসিন্দা শাহেনা আক্তারকে আসামি করা হয়।
এরপর গত ২ জুলাই এই মামলার আসামি চার দিনমজুরকে তাদের বাড়ি থেকে গ্রেপ্তার করে পুলিশ। পরে আসামিরা নিম্ন আদালতে জামিন আবেদন করলে আদালত আবেদন নামঞ্জুর করেন। এরপর হাইকোর্টে জামিন আবেদন করা হয়।
বৃহস্পতিবার, ০৭ অক্টোবর ২০২১ , ২২ আশ্বিন ১৪২৮ ২৮ সফর ১৪৪৩
আদালত বার্তা পরিবেশক
সরকারের দেয়া প্রণোদনার টাকা পাওয়ার আশায় প্রতারক চক্রের ফাঁদে পড়ে কারাগারে যাওয়া কুড়িগ্রামের ৫ দিনমজুরকে এক বছরের জামিন দিয়েছেন হাইকোর্ট। এ সময় লুটপাটকারীদের পরিবর্তে সাধারণ দিনমজুর কৃষককে মামলার জালে জড়ানোয় অসন্তোষ প্রকাশ করেছেন হাইকোর্ট। আদালত বলেছেন, লুটপাটকারীদের পরিবর্তে সাধারণ কৃষককে কেন ফাঁসানো হলো? গতকাল বিচারপতি মোস্তফা জামান ইসলাম ও বিচারপতি মোহাম্মদ আলীর হাইকোর্ট বেঞ্চ তাদের জামিন মঞ্জুর করে আদেশ দেন।
জামিনপ্রাপ্তরা হলেন, কুড়িগ্রামের ফুলবাড়ী উপজেলার বড়ভিটা ইউনিয়নের নওদাবস গ্রামের দিনমজুর বিধবা ফুলমনি রানি, রণজিৎ কুমার, প্রভাস চন্দ্র, কমল চন্দ্র রায় ও নিখিল চন্দ্র বর্মন। আদালতে ৫ কৃষকের পক্ষে বিনা পয়সায় আইনি লড়াই করেন অ্যাডভোকেট মোহাম্মদ শিশির মনির। রাষ্ট্রপক্ষে শুনানি করেন ডেপুটি অ্যাটর্নি জেনারেল অমিত দাস গুপ্ত।
মামলার শুনানির শুরুতে অ্যাডভোকেট মোহাম্মদ শিশির মনির বলেন, আমি যাদের জামিন আবেদন নিয়ে এসেছি, তারা সবাই সংখ্যালঘু সম্প্রদায়ের দরিদ্র মানুষ। তাদের বাড়ি কুড়িগ্রামে। তাদের করোনার প্রণোদনা দেয়ার কথা বলে ব্যাংক অ্যাকাউন্ট খোলা হয়। এভাবে ফাঁসানো হয়েছে।
তখন আদালত বলেন, মামলা তো হয়েছে গাজীপুরে। আদালত জানতে চান তারা জেলে আছেন কতদিন? তখন আইনজীবী বলেন, তারা ৩ জুলাই থেকে জেলে আছেন। তাদের কোন অবলম্বন নেই। তখন জামিনের বিরোধিতা করে রাষ্ট্রপক্ষের আইনজীবী ডেপুটি অ্যাটর্নি জেনারেল অমিত দাস গুপ্ত বলেন, এটা ব্যাংকের টাকা আত্মসাতের মামলা। তখন হাইকোর্ট একটি অনলাইন সংবাদ মাধ্যমে প্রকাশিত প্রতিবেদনসহ মামলার নথি দেখে বলেন, যারা লুটপাট করেছে তাদের বিরুদ্ধে মামলা হলো না। দিনমজুর সাধারণ মানুষকে কেন ফাঁসানো হলো? এরপর আদালত প্রতারক চক্রের ফাঁদে পড়ে কারাগারে যাওয়া কুড়িগ্রামের ফুলবাড়ী উপজেলার বড়ভিটা ইউনিয়নের নওদাবস গ্রামের ওই পাঁচজনকে এক বছরের জামিন দেন।
এর আগে গত ৩ অক্টোবর প্রতারক চক্রের ফাঁদে পড়ে কারাগারে যাওয়া ওই পাঁচজনের জামিন চেয়ে হাইকোর্টে আবেদন করেন অ্যাডভোকেট মোহাম্মদ শিশির মনির। জামিন আবেদনে সংযুক্ত করা পত্রিকার প্রতিবেদন থেকে জানা যায়, গাজীপুরের শ্রীপুর উপজেলা হিসাবরক্ষণ অফিসের মাস্টাররোল কর্মচারী কুড়িগ্রামের ভুরুঙ্গামারীর তানভীর ইসলাম স্বপন (৩০) করোনাকালীন সরকারি প্রণোদনা পাইয়ে দেয়ার কথা বলে তাদের পাঁচজনকে নিয়ে সোনালী ব্যাংকের নাগেশ্বরী শাখায় যান। সেখানে তাদের নামে ব্যাংক হিসাব চালু করেন এবং শ্রীপুরে নিয়ে গিয়ে ব্যাংকের চেক বই ও বিভিন্ন কাগজপত্রে টিপসই নেন।
একপর্যায়ে তাদের কাছ থেকে ব্যাংকের সব কাগজপত্র ও চেক বই নিয়ে নেন এবং প্রতিশ্রুতি দেন যে তাদের এই ব্যাংক অ্যাকাউন্টে প্রণোদনার টাকা পাঠানো হবে। এর কিছুদিন পর পাঁচ দিনমজুরের হিসাব নম্বরে ২ কোটি ৪৬ লাখ ৯ হাজার ৯৬০ টাকা চলে আসে। এসব টাকা আসে সোনালী ব্যাংক হেডকোয়ার্টার শাখা থেকে। যার মধ্যে রণজিতের সঞ্চয়ী হিসাবে ৪৮ লাখ ৪৫ হাজার ৭২০ টাকা, প্রভাষের হিসাব নম্বরে ৬৫ লাখ ৭২ হাজার ১২০ টাকা, সুবলের হিসাব নম্বরে ৪০ লাখ ৭১ হাজার ৭২০ টাকা, কমলের হিসাব নম্বরে ৪২ লাখ ৪৯ হাজার ৮৮০ টাকা এবং ফুলমণি রানির হিসাব নম্বরে ৪৮ লাখ ৭০ হাজার ৫২০ টাকা আসে।
কয়েকদিন পর অপরিচিত ৩-৪ জন লোক এসব হিসাব নম্বর থেকে টাকা তুলতে এলে ব্যাংক কর্মকর্তাদের সন্দেহ হয় এবং তারা শ্রীপুর শাখায় টাকা উত্তোলন বন্ধ করে দেন। তবে টাকা তুলতে আসা অপরিচিত লোকগুলোকে আটকের আগেই তারা ব্যাংক থেকে সরে যায়। ওই ঘটনায় সোনালী ব্যাংকের শ্রীপুর শাখার ব্যবস্থাপক রেজাউল হকের করা মামলায় পাঁচ দিনমজুরসহ শ্রীপুর উপজেলা হিসাবরক্ষণ কর্মকর্তা বজলুর রশিদ, হিসাবরক্ষণ অফিসের অডিটর আরিফুর রহমান, মাস্টাররোল কর্মচারী তানভীর ইসলাম স্বপন ও ঢাকার উত্তরখান জামতলা এলাকার বাসিন্দা শাহেনা আক্তারকে আসামি করা হয়।
এরপর গত ২ জুলাই এই মামলার আসামি চার দিনমজুরকে তাদের বাড়ি থেকে গ্রেপ্তার করে পুলিশ। পরে আসামিরা নিম্ন আদালতে জামিন আবেদন করলে আদালত আবেদন নামঞ্জুর করেন। এরপর হাইকোর্টে জামিন আবেদন করা হয়।