মহিবুল্লাহ হত্যাকারীদের চিহ্নিত করেছে পুলিশ, শীঘ্রই গ্রেপ্তার

রোহিঙ্গাদের শীর্ষ নেতা আরাকান রোহিঙ্গা সোসাইটি ফর পিস অ্যান্ড হিউম্যান রাইটসের চেয়ারম্যান মহিবুল্লাহ হত্যায় কারা জড়িত, তাদের চিহ্নিত করতে পেরেছে পুলিশ। এ ঘটনার পর থেকে অনুসন্ধান করে কক্সবাজার জেলা পুলিশসহ নানা তদন্তকারী সংস্থা হত্যাকা-ের পেছনের খবর জেনেছে। এ কারণে যেকোন সময় হত্যাকা-ের মূল আসামিদের গ্রেপ্তার করা সম্ভব হবে। গতকাল কক্সবাজার জেলা পুলিশ সুপার কার্যালয়ে সাংবাদিকদের এসব কথা জানান পুলিশ সুপার হাসানুজ্জামান।

তিনি জানান, রোহিঙ্গা নেতা মহিবুল্লাহ হত্যাকা-ের পর ক্যাম্পে জেলা পুলিশের পাশাপাশি এপিবিএন, সিআইডি থেকে শুরু করে অনেক তদন্তকারী সংস্থা একযোগে কাজ করছে। যদিও জেলা পুলিশ মামলার তদন্তের কাজটি করছে। তবে ঘটনার মোটিভ এবং ঘটনার পেছনে সরাসরি কারা যুক্ত, এসব বিষয়ে আমরা একটি সম্মুখ ধারণা পেয়েছি। সেদিক দিয়ে আমরা বলতে পারি যে, তদন্তের কাজ অনেক এগিয়েছি। এ কারণে ঘটনার মূল অভিযুক্তদের খুব দ্রুত সময়ের মধ্যে গ্রেপ্তার করতে সক্ষম হবো।

ক্যাম্পে পর্যাপ্ত নিরাপত্তা বাড়ানোর কথা উল্লেখ করে পুলিশ সুপার হাসানুজ্জামান আরও জানান, ‘উক্ত হত্যাকা-ের ঘটনায় ইতোমধ্যে যারা গ্রেপ্তার হয়েছে, আমরা তাদের ব্যাপক জিজ্ঞাসাবাদ করছি এবং বিভিন্ন উৎস থেকে আসা নানা তথ্য নোট নিচ্ছি। যেহেতু তদন্তাধীন বিষয় সবকিছু উম্মুক্ত করা যায় না। আমরা আমাদের মত করে মামলার তদন্ত কাযক্রম চালিয়ে যাচ্ছি। এতে আমরা আশান্বিত।

এদিকে, উক্ত মামলায় গ্রেপ্তারকৃত আরও ৩ জনকে আদালতের মাধ্যমে জিজ্ঞাসাবাদের জন্য প্রত্যেককে ৩ দিন করে রিমান্ডে নিয়েছে পুলিশ। বুধবার দুপুরে কক্সবাজার সিনিয়র জুডিশিয়াল ম্যাজিস্ট্রেট তামান্না ফারাহর আদালত ৩ জনের ৩ দিন রিমান্ড মঞ্জুর করেন। এর আগে সকালে উখিয়ার কুতুপালং লম্বাশিয়া ১ ইস্ট রোহিঙ্গা ক্যাম্প ১৫ ব্লকের বাসিন্দা জকির আহমদের ছেলে জিয়াউর রহমান, লম্বাশিয়া ৮ ডব্লিউ ক্যাম্পের এইচ ৫৪ নং ব্লকের মৃত মকবুল আহমদের ছেলে মোহাম্মদ সালাম ও ৫নং ক্যাম্পের রজক আলীর ছেলে মো. ইলিয়াছকে আদালতে আনে পুলিশ। এ নিয়ে উক্ত মামলার ৫ জন রোহিঙ্গা যুবককে তিন দিন করে রিমান্ড মঞ্জুর করেছে আদালত।

গত ২৯ সেপ্টেম্বর রাত সাড়ে ৮টার দিকে অজ্ঞাত বন্দুকধারীদের হাতে নিহত হন রোহিঙ্গাদের শীর্ষ নেতা মহিবুল্লাহ। এ সময় নিজ অফিসে অস্ত্রধারীরা তার বুকে পরপর ৫ রাউন্ড গুলি করে। এ সময় ৩ রাউন্ড গুলি তার বুকে লাগে। এতে সে ঘটনাস্থলে পড়ে যায়। খবর পেয়ে এপিবিএন সদস্যরা তাকে উদ্ধার করে ‘এমএসএফ’ হাসপাতালে নিয়ে গেলে কর্তব্যরত চিকিৎসক তাকে মৃত ঘোষণা করেন।

এ ঘটনায় নিহত মহিবুল্লাহর ছোট ভাই হাবিব উল্লাহ বাদী হয়ে উখিয়া থানায় অজ্ঞাত আসামিদের বিরুদ্ধে একখানা হত্যা মামলা দায়ের করেন। এরপর ক্যাম্পে দায়িত্বরত এপিবিএন সদস্য ও উখিয়া থানা পুলিশ পৃথকভাবে ৫ জন আসামিকে গ্রেপ্তার করে।

এদিকে ১৪ এপিবিএনের অধিনায়ক এসপি নাইমুল হক জানান, ‘মহিবুল্লাহ হত্যায় জড়িত সন্দেহে অভিযুক্তদের গ্রেপ্তার করে আইনের আওতায় আনা হচ্ছে। যারা এ পর্যন্ত গ্রেপ্তার হয়েছে, তাদের রিমান্ড ও জিজ্ঞাসাবাদ চলছে। তারা মহিবুল্লাহ হত্যাকা-ের ব্যাপারে গুরুত্বপূর্ণ তথ্য দিচ্ছে। এ ঘটনায় আর কারা জড়িত আছে, সেই ব্যাপারেও তারা তথ্য দিচ্ছে। সবমিলিয়ে মহিবুল্লাহ হত্যার সঙ্গে জড়িতদের পুলিশের জালে আনার চেষ্টা অব্যাহত আছে। খুব শীঘ্রই অপরাধীদের আইনের আওতায় আনা হবে।

নিহত মহিবুল্লাহর ছোট ভাই হাবিবুল্লাহ জানান, আমার ভাই রোহিঙ্গাদের জন্য কথা বলার কন্ঠস্বর ছিল। রোহিঙ্গাদের বিপদে-আপদে এবং অধিকার আদায়ে সব সময় তিনি কথা বলতেন। এমনকি সুষ্ঠু সমাধান প্রক্রিয়ার মাধ্যমে রোহিঙ্গা প্রত্যাবাসন নিয়েও তিনি সোচ্চার ছিলেন। যার কারণে প্রত্যাবাসন বিরোধী তথা রোহিঙ্গা সন্ত্রাসীরা তাকে বাঁচতে দেয়নি। সন্ত্রাসীদের চোখে আমার ভাইয়ের অপরাধ ছিল রোহিঙ্গাদের পাশে থাকা ও তাদের জন্য কথা বলা। আমি আমার ভাইয়ের হত্যাকারীদের বিচার চাই। তাদের যেনো ফাঁসিতে ঝুলিয়ে মারা হয়।

এদিকে, রোহিঙ্গাদের শীর্ষ পাঁচ নেতার একজন ছিলেন মাস্টার মহিবুল্লাহ। সন্ত্রাসীদের গুলিতে তিনি নিহত হওয়ার ঘটনায় রোহিঙ্গাদের মাঝে ক্ষোভ বিরাজমান। প্রিয় নেতা হত্যাকারীদের গ্রেপ্তার করে ফাঁসিতে ঝুলানোর দাবি জানিয়েছে রোহিঙ্গারা।

বৃহস্পতিবার, ০৭ অক্টোবর ২০২১ , ২২ আশ্বিন ১৪২৮ ২৮ সফর ১৪৪৩

মহিবুল্লাহ হত্যাকারীদের চিহ্নিত করেছে পুলিশ, শীঘ্রই গ্রেপ্তার

জসিম সিদ্দিকী, কক্সবাজার

রোহিঙ্গাদের শীর্ষ নেতা আরাকান রোহিঙ্গা সোসাইটি ফর পিস অ্যান্ড হিউম্যান রাইটসের চেয়ারম্যান মহিবুল্লাহ হত্যায় কারা জড়িত, তাদের চিহ্নিত করতে পেরেছে পুলিশ। এ ঘটনার পর থেকে অনুসন্ধান করে কক্সবাজার জেলা পুলিশসহ নানা তদন্তকারী সংস্থা হত্যাকা-ের পেছনের খবর জেনেছে। এ কারণে যেকোন সময় হত্যাকা-ের মূল আসামিদের গ্রেপ্তার করা সম্ভব হবে। গতকাল কক্সবাজার জেলা পুলিশ সুপার কার্যালয়ে সাংবাদিকদের এসব কথা জানান পুলিশ সুপার হাসানুজ্জামান।

তিনি জানান, রোহিঙ্গা নেতা মহিবুল্লাহ হত্যাকা-ের পর ক্যাম্পে জেলা পুলিশের পাশাপাশি এপিবিএন, সিআইডি থেকে শুরু করে অনেক তদন্তকারী সংস্থা একযোগে কাজ করছে। যদিও জেলা পুলিশ মামলার তদন্তের কাজটি করছে। তবে ঘটনার মোটিভ এবং ঘটনার পেছনে সরাসরি কারা যুক্ত, এসব বিষয়ে আমরা একটি সম্মুখ ধারণা পেয়েছি। সেদিক দিয়ে আমরা বলতে পারি যে, তদন্তের কাজ অনেক এগিয়েছি। এ কারণে ঘটনার মূল অভিযুক্তদের খুব দ্রুত সময়ের মধ্যে গ্রেপ্তার করতে সক্ষম হবো।

ক্যাম্পে পর্যাপ্ত নিরাপত্তা বাড়ানোর কথা উল্লেখ করে পুলিশ সুপার হাসানুজ্জামান আরও জানান, ‘উক্ত হত্যাকা-ের ঘটনায় ইতোমধ্যে যারা গ্রেপ্তার হয়েছে, আমরা তাদের ব্যাপক জিজ্ঞাসাবাদ করছি এবং বিভিন্ন উৎস থেকে আসা নানা তথ্য নোট নিচ্ছি। যেহেতু তদন্তাধীন বিষয় সবকিছু উম্মুক্ত করা যায় না। আমরা আমাদের মত করে মামলার তদন্ত কাযক্রম চালিয়ে যাচ্ছি। এতে আমরা আশান্বিত।

এদিকে, উক্ত মামলায় গ্রেপ্তারকৃত আরও ৩ জনকে আদালতের মাধ্যমে জিজ্ঞাসাবাদের জন্য প্রত্যেককে ৩ দিন করে রিমান্ডে নিয়েছে পুলিশ। বুধবার দুপুরে কক্সবাজার সিনিয়র জুডিশিয়াল ম্যাজিস্ট্রেট তামান্না ফারাহর আদালত ৩ জনের ৩ দিন রিমান্ড মঞ্জুর করেন। এর আগে সকালে উখিয়ার কুতুপালং লম্বাশিয়া ১ ইস্ট রোহিঙ্গা ক্যাম্প ১৫ ব্লকের বাসিন্দা জকির আহমদের ছেলে জিয়াউর রহমান, লম্বাশিয়া ৮ ডব্লিউ ক্যাম্পের এইচ ৫৪ নং ব্লকের মৃত মকবুল আহমদের ছেলে মোহাম্মদ সালাম ও ৫নং ক্যাম্পের রজক আলীর ছেলে মো. ইলিয়াছকে আদালতে আনে পুলিশ। এ নিয়ে উক্ত মামলার ৫ জন রোহিঙ্গা যুবককে তিন দিন করে রিমান্ড মঞ্জুর করেছে আদালত।

গত ২৯ সেপ্টেম্বর রাত সাড়ে ৮টার দিকে অজ্ঞাত বন্দুকধারীদের হাতে নিহত হন রোহিঙ্গাদের শীর্ষ নেতা মহিবুল্লাহ। এ সময় নিজ অফিসে অস্ত্রধারীরা তার বুকে পরপর ৫ রাউন্ড গুলি করে। এ সময় ৩ রাউন্ড গুলি তার বুকে লাগে। এতে সে ঘটনাস্থলে পড়ে যায়। খবর পেয়ে এপিবিএন সদস্যরা তাকে উদ্ধার করে ‘এমএসএফ’ হাসপাতালে নিয়ে গেলে কর্তব্যরত চিকিৎসক তাকে মৃত ঘোষণা করেন।

এ ঘটনায় নিহত মহিবুল্লাহর ছোট ভাই হাবিব উল্লাহ বাদী হয়ে উখিয়া থানায় অজ্ঞাত আসামিদের বিরুদ্ধে একখানা হত্যা মামলা দায়ের করেন। এরপর ক্যাম্পে দায়িত্বরত এপিবিএন সদস্য ও উখিয়া থানা পুলিশ পৃথকভাবে ৫ জন আসামিকে গ্রেপ্তার করে।

এদিকে ১৪ এপিবিএনের অধিনায়ক এসপি নাইমুল হক জানান, ‘মহিবুল্লাহ হত্যায় জড়িত সন্দেহে অভিযুক্তদের গ্রেপ্তার করে আইনের আওতায় আনা হচ্ছে। যারা এ পর্যন্ত গ্রেপ্তার হয়েছে, তাদের রিমান্ড ও জিজ্ঞাসাবাদ চলছে। তারা মহিবুল্লাহ হত্যাকা-ের ব্যাপারে গুরুত্বপূর্ণ তথ্য দিচ্ছে। এ ঘটনায় আর কারা জড়িত আছে, সেই ব্যাপারেও তারা তথ্য দিচ্ছে। সবমিলিয়ে মহিবুল্লাহ হত্যার সঙ্গে জড়িতদের পুলিশের জালে আনার চেষ্টা অব্যাহত আছে। খুব শীঘ্রই অপরাধীদের আইনের আওতায় আনা হবে।

নিহত মহিবুল্লাহর ছোট ভাই হাবিবুল্লাহ জানান, আমার ভাই রোহিঙ্গাদের জন্য কথা বলার কন্ঠস্বর ছিল। রোহিঙ্গাদের বিপদে-আপদে এবং অধিকার আদায়ে সব সময় তিনি কথা বলতেন। এমনকি সুষ্ঠু সমাধান প্রক্রিয়ার মাধ্যমে রোহিঙ্গা প্রত্যাবাসন নিয়েও তিনি সোচ্চার ছিলেন। যার কারণে প্রত্যাবাসন বিরোধী তথা রোহিঙ্গা সন্ত্রাসীরা তাকে বাঁচতে দেয়নি। সন্ত্রাসীদের চোখে আমার ভাইয়ের অপরাধ ছিল রোহিঙ্গাদের পাশে থাকা ও তাদের জন্য কথা বলা। আমি আমার ভাইয়ের হত্যাকারীদের বিচার চাই। তাদের যেনো ফাঁসিতে ঝুলিয়ে মারা হয়।

এদিকে, রোহিঙ্গাদের শীর্ষ পাঁচ নেতার একজন ছিলেন মাস্টার মহিবুল্লাহ। সন্ত্রাসীদের গুলিতে তিনি নিহত হওয়ার ঘটনায় রোহিঙ্গাদের মাঝে ক্ষোভ বিরাজমান। প্রিয় নেতা হত্যাকারীদের গ্রেপ্তার করে ফাঁসিতে ঝুলানোর দাবি জানিয়েছে রোহিঙ্গারা।