ইয়াবার ২০ গুণ বেশি ক্ষতিকর ক্রিস্টাল মাদক অবাধে ঢুকছে

অভিজাত এলাকায় এর চাহিদা বেশি

ইয়াবা থেকে ২০ গুণ বেশি ক্ষতিকর মাদক ক্রিস্টাল মেথ আইস। কিন্তু লাভও বেশি, তাই সংঘবদ্ধ চোরাচালানী চক্র এখন ইয়াবা নয়, ক্রিস্টাল মেথ আইসের চালান নিয়ে আসছে। এ মাদক অত্যন্ত উত্তেজক। ক্রিস্টাল মিথাইল অ্যামপিটামিন কাঁচামাল ব্যবহার করে এ মাদক তৈরি হচ্ছে। ইয়াবাতে অন্যান্য উপকরণ মিশানো হলেও এ আইসে অন্য উপকরণ মেশানো হয় না। এ মাদক সেবনে হার্ট অ্যাটাক, কিডনি ও ব্রেইনসহ শরীরে নানা সমস্যা দেখা দেয়। মাদক নিয়ন্ত্রণ অধিদপ্তরের বিশেষজ্ঞরা এ সব তথ্য জানিয়েছেন।

বিজিবির এক তথ্যে জানানো হয়েছে, গত ৫ অক্টোবর বিজিবির টেকনাফ ব্যাটালিয়ন সদরের একটি বিশেষ টহলদল টেকনাফ উপজেলার গোদারবিল বাজার সংলগ্ন প্রধান সড়কে অভিযান চালিয়ে দেড় (১.৫) কেজি ক্রিস্টাল মেথ আইস উদ্ধার করছে। এ ঘটনায় জড়িত থাকার অভিযোগে আবদুল মজিদ নামে টেকনাফের এক যুবককে গ্রেপ্তার করেছে। উদ্ধারকৃত মাদকের মূল্য ৭ কোটি ৫০ লাখ টাকা বলে বিজিবি দাবি করছেন।

বিজিবি মাদকের বিরুদ্ধে জিরো ট্রলারেন্স নীতি অনুসরণ করে মাদকবিরোধী অভিযান জোরদার করেছে। ক্রিস্টাল মেথ আইস উদ্ধার অভিযান চালানোর সময় মাদক ব্যবসায়ীরা একটি মোটরসাইকেলযোগে দ্রুত পালানোর চেষ্টা করে। বিজিবির টহলদলের ধাওয়ার মুখে একজন মোটরসাইকেল রেখে একটি বাড়িতে ঢুকে পালানোর চেষ্টা করে। তবে বিজিবির টিম তল্লাশি চালিয়ে মাদক ব্যবসায়ীকে আটক ও তার কাছ থেকে দুটি প্যাকেট ভর্তি আইস উদ্ধার করে। আটককৃত মাদক ব্যবসায়ীর বিরুদ্ধে টেকনাফ থানায় আইনি ব্যবস্থা নেয়া হয়েছে।

টেকনাফ প্রতিনিধি জানান, সম্প্রতি আইনশৃঙ্খলা বাহিনী টেকনাফে আরও দুটি ক্রিস্টাল মেথ আইসের চালান জব্দ করেছে। এর মধ্যে প্রথম চালানে দুই কেজি ও দ্বিতীয় চালানে তিন কেজি মাদক উদ্ধার হয়েছে। সবশেষ বিজিবি দেড় কেজি ক্রিস্টাল মেথ আইস উদ্ধার করছে।

রোহিঙ্গা মাদক ব্যবসায়ীরা আগে ইয়াবার চালান এনে বিক্রি করত। এখন তারা আইসের দিকে ঝুঁকছে। আইস বিক্রিতে লাভ বেশি। সীমান্ত দিয়ে মায়ানমার থেকে এ মাদক আনা হচ্ছে।

মাদক নিয়ন্ত্রণ অধিদপ্তরের এক কর্মকর্তা সংবাদকে মুঠোফোনে বলেন, ক্রিস্টাল মেথ আইস ইয়াবা থেকে ২০ গুণ বেশি শক্তিশালী ও মারাত্মক ক্ষতিকর। সম্প্রতি রাজধানীর বনানী ও উত্তরা থেকে আধা কেজি আইসসহ ১০ জনকে গ্রেপ্তার করা হয়েছে। রমনা এলাকায় অভিযান চালিয়ে পাঁচ গ্রাম ক্রিস্টাল মেথ আইসসহ একজনকে গ্রেপ্তার করা হয়েছে। কুড়িল বিশ্ব রোড থেকে ৯০ গ্রাম ক্রিস্টাল মেথ আইস ও চারশ পিস ইয়াবা উদ্ধার করা হয়েছে।

মাদক নিয়ন্ত্রণ অধিদপ্তরের কর্মকর্তারা জানান, ক্রিস্টাল মেথ আইসে বেশি লাভ হওয়ায় সব ইয়াবা ব্যবসায়ী এখন আইসের দিকে ঝুঁকছে। যে সব রুট দিয়ে ইয়াবা আসত এখন সে সব রুট দিয়ে আইস আনা হচ্ছে।

যেভাবে আইস আনছে

সীমান্তবর্তী নাফ নদী দিয়ে ক্রিস্টাল মেথ আইসের চালান আনা হয়। আর গভীর সমুদ্র দিয়ে হাত বদল হয়ে এ সব চালান দেশে ঢুকে। এখন এই মাদক ছড়িয়ে পড়ছে রাজধানীসহ সারাদেশে।

মাদক নিয়ন্ত্রণ অধিদপ্তরের কর্মকর্তা খুরশিদ আলম বলেন, এক গ্রাম ক্রিস্টাল মেথ আইসের দাম সাত থেকে ১২ হাজার টাকা। মায়ানমারের বিভিন্ন এলাকায় এর উৎপাদন হয়। সম্প্রতি বিভিন্ন সময় অভিযান চালিয়ে এ মাদক উদ্ধার করা হয়েছে। এসব মাদক সাধারণত ধনীর দুলালীরা সেবন করে। বিদেশে লেখাপড়া করে দেশে ফিরেছে। এমন কয়েকজনকে এ মাদকসহ গ্রেপ্তার করা হয়েছে। অনেকেই লোভে পড়ে এ মাদকের ব্যবসা করছেন। একটি চালান বিক্রি করতে পারলে একটি একটি গাড়ি কিনতে পারবে, এমন টার্গেট নিয়ে তারা আইসের ব্যবসায় নামছে।

সূত্র মতে, আইস, এলএসডিসহ নতুন নতুন মাদক এখন দেশে ঢুকছে। এর ভয়াবহতা সম্পর্কে সচেতনতা সৃষ্টির জন্য যেমন নানা উদ্যোগ নেয়া হয়েছে। তেমনি প্রতিরোধে কার্যকর পদক্ষেপ নেয়া হয়েছে। পুলিশ, গোয়েন্দা পুলিশ ও র‌্যাবের বিভিন্ন ইউনিট মাদক চোরাচালানীদেরকে ধরতে অভিযান অব্যাহত রেখেছে। এরপরও থামছে না মাদক বেচাকেনা।

বৃহস্পতিবার, ০৭ অক্টোবর ২০২১ , ২২ আশ্বিন ১৪২৮ ২৮ সফর ১৪৪৩

ইয়াবার ২০ গুণ বেশি ক্ষতিকর ক্রিস্টাল মাদক অবাধে ঢুকছে

অভিজাত এলাকায় এর চাহিদা বেশি

বাকী বিল্লাহ

ইয়াবা থেকে ২০ গুণ বেশি ক্ষতিকর মাদক ক্রিস্টাল মেথ আইস। কিন্তু লাভও বেশি, তাই সংঘবদ্ধ চোরাচালানী চক্র এখন ইয়াবা নয়, ক্রিস্টাল মেথ আইসের চালান নিয়ে আসছে। এ মাদক অত্যন্ত উত্তেজক। ক্রিস্টাল মিথাইল অ্যামপিটামিন কাঁচামাল ব্যবহার করে এ মাদক তৈরি হচ্ছে। ইয়াবাতে অন্যান্য উপকরণ মিশানো হলেও এ আইসে অন্য উপকরণ মেশানো হয় না। এ মাদক সেবনে হার্ট অ্যাটাক, কিডনি ও ব্রেইনসহ শরীরে নানা সমস্যা দেখা দেয়। মাদক নিয়ন্ত্রণ অধিদপ্তরের বিশেষজ্ঞরা এ সব তথ্য জানিয়েছেন।

বিজিবির এক তথ্যে জানানো হয়েছে, গত ৫ অক্টোবর বিজিবির টেকনাফ ব্যাটালিয়ন সদরের একটি বিশেষ টহলদল টেকনাফ উপজেলার গোদারবিল বাজার সংলগ্ন প্রধান সড়কে অভিযান চালিয়ে দেড় (১.৫) কেজি ক্রিস্টাল মেথ আইস উদ্ধার করছে। এ ঘটনায় জড়িত থাকার অভিযোগে আবদুল মজিদ নামে টেকনাফের এক যুবককে গ্রেপ্তার করেছে। উদ্ধারকৃত মাদকের মূল্য ৭ কোটি ৫০ লাখ টাকা বলে বিজিবি দাবি করছেন।

বিজিবি মাদকের বিরুদ্ধে জিরো ট্রলারেন্স নীতি অনুসরণ করে মাদকবিরোধী অভিযান জোরদার করেছে। ক্রিস্টাল মেথ আইস উদ্ধার অভিযান চালানোর সময় মাদক ব্যবসায়ীরা একটি মোটরসাইকেলযোগে দ্রুত পালানোর চেষ্টা করে। বিজিবির টহলদলের ধাওয়ার মুখে একজন মোটরসাইকেল রেখে একটি বাড়িতে ঢুকে পালানোর চেষ্টা করে। তবে বিজিবির টিম তল্লাশি চালিয়ে মাদক ব্যবসায়ীকে আটক ও তার কাছ থেকে দুটি প্যাকেট ভর্তি আইস উদ্ধার করে। আটককৃত মাদক ব্যবসায়ীর বিরুদ্ধে টেকনাফ থানায় আইনি ব্যবস্থা নেয়া হয়েছে।

টেকনাফ প্রতিনিধি জানান, সম্প্রতি আইনশৃঙ্খলা বাহিনী টেকনাফে আরও দুটি ক্রিস্টাল মেথ আইসের চালান জব্দ করেছে। এর মধ্যে প্রথম চালানে দুই কেজি ও দ্বিতীয় চালানে তিন কেজি মাদক উদ্ধার হয়েছে। সবশেষ বিজিবি দেড় কেজি ক্রিস্টাল মেথ আইস উদ্ধার করছে।

রোহিঙ্গা মাদক ব্যবসায়ীরা আগে ইয়াবার চালান এনে বিক্রি করত। এখন তারা আইসের দিকে ঝুঁকছে। আইস বিক্রিতে লাভ বেশি। সীমান্ত দিয়ে মায়ানমার থেকে এ মাদক আনা হচ্ছে।

মাদক নিয়ন্ত্রণ অধিদপ্তরের এক কর্মকর্তা সংবাদকে মুঠোফোনে বলেন, ক্রিস্টাল মেথ আইস ইয়াবা থেকে ২০ গুণ বেশি শক্তিশালী ও মারাত্মক ক্ষতিকর। সম্প্রতি রাজধানীর বনানী ও উত্তরা থেকে আধা কেজি আইসসহ ১০ জনকে গ্রেপ্তার করা হয়েছে। রমনা এলাকায় অভিযান চালিয়ে পাঁচ গ্রাম ক্রিস্টাল মেথ আইসসহ একজনকে গ্রেপ্তার করা হয়েছে। কুড়িল বিশ্ব রোড থেকে ৯০ গ্রাম ক্রিস্টাল মেথ আইস ও চারশ পিস ইয়াবা উদ্ধার করা হয়েছে।

মাদক নিয়ন্ত্রণ অধিদপ্তরের কর্মকর্তারা জানান, ক্রিস্টাল মেথ আইসে বেশি লাভ হওয়ায় সব ইয়াবা ব্যবসায়ী এখন আইসের দিকে ঝুঁকছে। যে সব রুট দিয়ে ইয়াবা আসত এখন সে সব রুট দিয়ে আইস আনা হচ্ছে।

যেভাবে আইস আনছে

সীমান্তবর্তী নাফ নদী দিয়ে ক্রিস্টাল মেথ আইসের চালান আনা হয়। আর গভীর সমুদ্র দিয়ে হাত বদল হয়ে এ সব চালান দেশে ঢুকে। এখন এই মাদক ছড়িয়ে পড়ছে রাজধানীসহ সারাদেশে।

মাদক নিয়ন্ত্রণ অধিদপ্তরের কর্মকর্তা খুরশিদ আলম বলেন, এক গ্রাম ক্রিস্টাল মেথ আইসের দাম সাত থেকে ১২ হাজার টাকা। মায়ানমারের বিভিন্ন এলাকায় এর উৎপাদন হয়। সম্প্রতি বিভিন্ন সময় অভিযান চালিয়ে এ মাদক উদ্ধার করা হয়েছে। এসব মাদক সাধারণত ধনীর দুলালীরা সেবন করে। বিদেশে লেখাপড়া করে দেশে ফিরেছে। এমন কয়েকজনকে এ মাদকসহ গ্রেপ্তার করা হয়েছে। অনেকেই লোভে পড়ে এ মাদকের ব্যবসা করছেন। একটি চালান বিক্রি করতে পারলে একটি একটি গাড়ি কিনতে পারবে, এমন টার্গেট নিয়ে তারা আইসের ব্যবসায় নামছে।

সূত্র মতে, আইস, এলএসডিসহ নতুন নতুন মাদক এখন দেশে ঢুকছে। এর ভয়াবহতা সম্পর্কে সচেতনতা সৃষ্টির জন্য যেমন নানা উদ্যোগ নেয়া হয়েছে। তেমনি প্রতিরোধে কার্যকর পদক্ষেপ নেয়া হয়েছে। পুলিশ, গোয়েন্দা পুলিশ ও র‌্যাবের বিভিন্ন ইউনিট মাদক চোরাচালানীদেরকে ধরতে অভিযান অব্যাহত রেখেছে। এরপরও থামছে না মাদক বেচাকেনা।