টিকার নিবন্ধন করতে লাগে এক হাজার টাকা

বৈশ্বিক মহামারী করোনাভাইরাসে যখন পুরো বিশ^ থমথমে, ঠিক তখনই দেশে এক শ্রেণীর অসাধু ব্যক্তিরা গড়ে তুলেছে তাদের অবৈধ বাণিজ্য। মানুষের অসহায়ত্ব ও অজ্ঞতাকে কাজে লাগিয়ে প্রতিদিন কামিয়ে নিচ্ছে লাখ লাখ টাকা। তেমনি মুন্সীগঞ্জে একশ্রেণীর লোকজন বিদেশগামী যাত্রীদের টিকা নিবন্ধন করতে ফাইল প্রতি ৯শত থেকে ১ হাজার টাকা নিচ্ছে। তবে কারো কারো কাছে আরও বেশি। যেখানে সরকারি সর্বোচ্চ খরচ ৩০০ শত টাকা। সেখানে নিবন্ধন করতে অগ্রিম টাকা দিয়েও পড়তে হচ্ছে নানান ভোগান্তিতে। জানা গেছে, প্রতিদিন ৮০ থেকে ১২০ জন বিদেশগামী মানুষ জেলার দূরদূরান্ত থেকে টিকা নিবন্ধন করতে আসে।

সরেজমিনে গিয়ে দেখা গেছে, মুন্সীগঞ্জ জেলা কর্মসংস্থান ও জনশক্তি রপ্তানি অফিসের নিচে একটি দোকান ও দর্পনা সিনেমা হল (কমিউনিটি সেন্টার) নিচে তিনটি টেবিল এর উপর তিনটি ল্যাপটপ ও প্রিন্টার বসিয়ে বিদেশগামী যাত্রীদের টিকা নিবন্ধনের কাজ করছে মো. রুবেল, জুয়েল, সুজন ও রিনাসহ আরও বেশ কয়েকজন। একটু ভিতরে গিয়ে আরও দেখা যায়, প্রতিটি টিকা নিবন্ধন করতে সেবা প্রার্থীদের কাছ থেকে টিকার নিবন্ধন ফি বাবদ ৯০০ থেকে ১০০০ টাকা নেয়া হচ্ছে। এর কম কেউ দিতে চাইলে তাকে জেলা কর্মসংস্থান ও জনশক্তি রপ্তানি অফিস থেকে করে নিতে বলা হচ্ছে। বাড়তি ঝামেলা এড়াতে জেলার দূরদূরান্ত থেকে আশা সেবা প্রার্থীরা এক প্রকার বাধ্য হয়ে অতিরিক্ত টাকা দিয়ে তাদের দিয়ে নিবন্ধন করছে।

অতিরিক্ত টাকার নেয়ার ব্যাপারে তাদের জিজ্ঞাসা করলে তারা বলেন, আমরা কাউকে ডেকে নিয়ে আসি না। সবাই আমাদের কাছে আসে। সরকারি ফি ২০০ থেকে ৩০০ টাকা। তবে আমাদের মাধ্যমে করাতে হলে ১০০০ টাকা লাগবে। এ ব্যাপারে এসপি-ডিসি জানে, আপনি সংবাদ প্রকাশ করে কি করবেন!

মুন্সীগঞ্জে টিকার নিবন্ধন করতে আসা কেরানীগঞ্জের মো. আনিছ মল্লিক জানান, গত মাসে টিকা নিবন্ধন করতে রুবেল ভাইয়ের সঙ্গে ১০০০ টার চুক্তি করি। সকালে এসে ১২টার পর টিকার নিবন্ধনপত্র হাতে পাই। জেলা কর্মসংস্থান ও জনশক্তি রপ্তানি অফিস ও স্থানীয়দের সহযোগিতায় তারা এ ধরনের কাজ করছে বলে অভিযোগ করেন তিনি।

টঙ্গীবাড়ির আড়িয়ল থেকে আসা জয়নাল বেপারি (৩৪) বলেন, অফিসে গিয়ে টিকার নিবন্ধনের জন্য আবেদন করলে বিএমটি কার্ড ও ভিসার কপির অজুহাত দেখিয়ে এক প্রকার বাহির থেকে নিবন্ধন করতে বাধ্য করে। নিচে এসে ৯০০ শত টাকা চুক্তির মাধ্যমে শুধুমাত্র পাসপোর্ট দিয়ে নিবন্ধনের জন্য আবেদন করি। টাকা হলে ভিসা কপিও লাগে না।

আবদুল সাত্তার (২৭) বলেন, রীতিমতো বিদেশগামী যাত্রীরা জেলা কর্মসংস্থান ও জনশক্তি রপ্তানি অফিস ও বাহিরের দালালদের কাছে জিম্মি। মানুষের অসহায়ত্ব ও অজ্ঞতাকে কাজে লাগিয়ে তারা ৩০০ টাকার নিবন্ধন ১০০০ টাকা রাখছে। আমি বিকাশের মাধ্যমে আমার টিকা নিবন্ধন করেছি।

এ ব্যাপারে মুন্সীগঞ্জ জেলা কর্মসংস্থান ও জনশক্তি রপ্তানি অফিস সহকারী পরিচালক রফিকুল ইসলাম বলেন, এ ব্যাপারে জেলা প্রশাসক স্যারের সঙ্গে কথা বলেছি। কিন্তু লিখিত অভিযোগ না থাকায় তাদের বিরুদ্ধে আমরা আইনগত ব্যবস্থা নিতে পারছি না।

এ বিষয়ে মুন্সীগঞ্জ সদর উপজেলা নির্বাহী কর্মকর্তা (ইউএনও) মো. হামিদুর রহমানকে এসব তথ্য জানালে তিনি তাদের বিরুদ্ধে ব্যবস্থা নেয়ার কথা বললেও বাস্তবে তাদের বিরুদ্ধে এখনও কোন ব্যবস্থা নেয়া হয়নি।

image

মুন্সীগঞ্জ : টিকা গ্রহীতাদের ভিড় এবং দীর্ঘ অপেক্ষা টিকাকেন্দ্রে -সংবাদ

আরও খবর
নিবন্ধন না হলে চালু হবে না অনলাইন পোর্টাল : তথ্যমন্ত্রী
এসএসসির সিলেবাস আর সংক্ষিপ্ত করার সুযোগ নেই শিক্ষামন্ত্রী
রসায়নে নোবেল পেলেন দুই বিজ্ঞানী
সংবাদের খন্দকার মুনীরুজ্জামানসহ জাতীয় প্রেসক্লাবের প্রয়াত ৩৪ সদস্যকে স্মরণ
ক্লিনফিড তালিকা থেকে ১১টি চ্যানেল বন্ধ
ডেঙ্গু আক্রান্ত ১৯ হাজার ছাড়িয়েছে
খুলনায় গণধর্ষণ ৪ ধর্ষক গ্রেপ্তার
স্বাধীন জীবনযাপনের উদ্দেশ্যে গৃহত্যাগ করেছিল তারা
মহালয়ার মধ্য দিয়ে শুরু দুর্গোৎসবের দিন গোনার পালা
রবীন্দ্রনাথের লন্ডনের স্মৃতি বিজড়িত বাড়ি বিক্রি হয়ে যাচ্ছে
মমতার শপথ আজ

বৃহস্পতিবার, ০৭ অক্টোবর ২০২১ , ২২ আশ্বিন ১৪২৮ ২৮ সফর ১৪৪৩

টিকার নিবন্ধন করতে লাগে এক হাজার টাকা

মাহাবুব আলম লিটন, মুন্সীগঞ্জ

image

মুন্সীগঞ্জ : টিকা গ্রহীতাদের ভিড় এবং দীর্ঘ অপেক্ষা টিকাকেন্দ্রে -সংবাদ

বৈশ্বিক মহামারী করোনাভাইরাসে যখন পুরো বিশ^ থমথমে, ঠিক তখনই দেশে এক শ্রেণীর অসাধু ব্যক্তিরা গড়ে তুলেছে তাদের অবৈধ বাণিজ্য। মানুষের অসহায়ত্ব ও অজ্ঞতাকে কাজে লাগিয়ে প্রতিদিন কামিয়ে নিচ্ছে লাখ লাখ টাকা। তেমনি মুন্সীগঞ্জে একশ্রেণীর লোকজন বিদেশগামী যাত্রীদের টিকা নিবন্ধন করতে ফাইল প্রতি ৯শত থেকে ১ হাজার টাকা নিচ্ছে। তবে কারো কারো কাছে আরও বেশি। যেখানে সরকারি সর্বোচ্চ খরচ ৩০০ শত টাকা। সেখানে নিবন্ধন করতে অগ্রিম টাকা দিয়েও পড়তে হচ্ছে নানান ভোগান্তিতে। জানা গেছে, প্রতিদিন ৮০ থেকে ১২০ জন বিদেশগামী মানুষ জেলার দূরদূরান্ত থেকে টিকা নিবন্ধন করতে আসে।

সরেজমিনে গিয়ে দেখা গেছে, মুন্সীগঞ্জ জেলা কর্মসংস্থান ও জনশক্তি রপ্তানি অফিসের নিচে একটি দোকান ও দর্পনা সিনেমা হল (কমিউনিটি সেন্টার) নিচে তিনটি টেবিল এর উপর তিনটি ল্যাপটপ ও প্রিন্টার বসিয়ে বিদেশগামী যাত্রীদের টিকা নিবন্ধনের কাজ করছে মো. রুবেল, জুয়েল, সুজন ও রিনাসহ আরও বেশ কয়েকজন। একটু ভিতরে গিয়ে আরও দেখা যায়, প্রতিটি টিকা নিবন্ধন করতে সেবা প্রার্থীদের কাছ থেকে টিকার নিবন্ধন ফি বাবদ ৯০০ থেকে ১০০০ টাকা নেয়া হচ্ছে। এর কম কেউ দিতে চাইলে তাকে জেলা কর্মসংস্থান ও জনশক্তি রপ্তানি অফিস থেকে করে নিতে বলা হচ্ছে। বাড়তি ঝামেলা এড়াতে জেলার দূরদূরান্ত থেকে আশা সেবা প্রার্থীরা এক প্রকার বাধ্য হয়ে অতিরিক্ত টাকা দিয়ে তাদের দিয়ে নিবন্ধন করছে।

অতিরিক্ত টাকার নেয়ার ব্যাপারে তাদের জিজ্ঞাসা করলে তারা বলেন, আমরা কাউকে ডেকে নিয়ে আসি না। সবাই আমাদের কাছে আসে। সরকারি ফি ২০০ থেকে ৩০০ টাকা। তবে আমাদের মাধ্যমে করাতে হলে ১০০০ টাকা লাগবে। এ ব্যাপারে এসপি-ডিসি জানে, আপনি সংবাদ প্রকাশ করে কি করবেন!

মুন্সীগঞ্জে টিকার নিবন্ধন করতে আসা কেরানীগঞ্জের মো. আনিছ মল্লিক জানান, গত মাসে টিকা নিবন্ধন করতে রুবেল ভাইয়ের সঙ্গে ১০০০ টার চুক্তি করি। সকালে এসে ১২টার পর টিকার নিবন্ধনপত্র হাতে পাই। জেলা কর্মসংস্থান ও জনশক্তি রপ্তানি অফিস ও স্থানীয়দের সহযোগিতায় তারা এ ধরনের কাজ করছে বলে অভিযোগ করেন তিনি।

টঙ্গীবাড়ির আড়িয়ল থেকে আসা জয়নাল বেপারি (৩৪) বলেন, অফিসে গিয়ে টিকার নিবন্ধনের জন্য আবেদন করলে বিএমটি কার্ড ও ভিসার কপির অজুহাত দেখিয়ে এক প্রকার বাহির থেকে নিবন্ধন করতে বাধ্য করে। নিচে এসে ৯০০ শত টাকা চুক্তির মাধ্যমে শুধুমাত্র পাসপোর্ট দিয়ে নিবন্ধনের জন্য আবেদন করি। টাকা হলে ভিসা কপিও লাগে না।

আবদুল সাত্তার (২৭) বলেন, রীতিমতো বিদেশগামী যাত্রীরা জেলা কর্মসংস্থান ও জনশক্তি রপ্তানি অফিস ও বাহিরের দালালদের কাছে জিম্মি। মানুষের অসহায়ত্ব ও অজ্ঞতাকে কাজে লাগিয়ে তারা ৩০০ টাকার নিবন্ধন ১০০০ টাকা রাখছে। আমি বিকাশের মাধ্যমে আমার টিকা নিবন্ধন করেছি।

এ ব্যাপারে মুন্সীগঞ্জ জেলা কর্মসংস্থান ও জনশক্তি রপ্তানি অফিস সহকারী পরিচালক রফিকুল ইসলাম বলেন, এ ব্যাপারে জেলা প্রশাসক স্যারের সঙ্গে কথা বলেছি। কিন্তু লিখিত অভিযোগ না থাকায় তাদের বিরুদ্ধে আমরা আইনগত ব্যবস্থা নিতে পারছি না।

এ বিষয়ে মুন্সীগঞ্জ সদর উপজেলা নির্বাহী কর্মকর্তা (ইউএনও) মো. হামিদুর রহমানকে এসব তথ্য জানালে তিনি তাদের বিরুদ্ধে ব্যবস্থা নেয়ার কথা বললেও বাস্তবে তাদের বিরুদ্ধে এখনও কোন ব্যবস্থা নেয়া হয়নি।