স্বাধীন জীবনযাপনের উদ্দেশ্যে গৃহত্যাগ করেছিল তারা

বাসা থেকে টাকা, স্বর্ণালঙ্কার ও শিক্ষা সনদ নিয়ে গৃহত্যাগ করা রাজধানীর পল্লবীর কলেজপড়ুয়া সেই তিন ছাত্রীকে উদ্ধার করেছে র‌্যাপিড অ্যাকশন ব্যাটালিয়ন (র‌্যাব)। উদ্ধারকৃতরা হলেন, মিরপুর গার্লস আইডিয়াল ল্যাবরেটরি ইনস্টিটিউটের শিক্ষার্থী কাজী দিলখুশ জান্নাত নিসা, পল্লবী ডিগ্রি কলেজের শিক্ষার্থী কানিজ ফাতেমা ও দুয়ারীপাড়া কলেজের শিক্ষার্থী স্নেহা আক্তার। গতকাল ভোরে রাজধানীর আবদুল্লাহপুর বেড়িবাঁধ এলাকা থেকে তাদের উদ্ধার করা হয়। তারা কক্সবাজার থেকে ঢাকায় ফিরছিল। র‌্যাব বলছে, অতিরিক্ত বিধি-নিষেধের ফলে তারা পরিবারের প্রতি বিরক্ত হয়ে পড়ে। একপর্যায়ে বিভিন্ন সামাজিক যোগাযোগ মাধ্যম বিভিন্ন অপসংস্কৃতিতে আসক্ত হয়ে যায়। পরে স্বাধীন জীবনযাপন ও উচ্চশিক্ষার উদ্দেশ্যে কক্সবাজারের সমুদ্রপথে জাপান যাওয়ার পরিকল্পনা করে গৃহত্যাগ করে।

র‌্যাব-৪ এর অধিনায়ক অতিরিক্ত ডিআইজি মোজাম্মেল হক বলেন, গত বৃহস্পতিবার ওই তিন ছাত্রী নিখোঁজ হওয়ার পর নিশার বড় বোন অ্যাডভোকেট কাজী রওশন দিল আফরোজ বাদী হয়ে পল্লবী থানায় একটি মামলা দায়ের করেন। ওই মামলার ছায়া তদন্তে ওই তিন ছাত্রীর অবস্থান কক্সবাজার বলে নিশ্চিত হয় র‌্যাব। পরে র‌্যাবের একটি টিম তাদের উদ্ধারে কক্সবাজারে গেলে, তারা মঙ্গলবার রাতে একটি বাসে ঢাকার উদ্দেশ্যে রওনা হয়। এরপর আবদুল্লাহপুর এলাকা থেকে তাদের উদ্ধার করা হয়েছে। তাদের পরিবারের কাছে হস্তান্তর করা হবে।

ওই তিন ছাত্রীকে জিজ্ঞাসাবাদে জানা গেছে, তারা তিন বান্ধবী বিভিন্ন সামাজিক যোগাযোগ মাধ্যম বিভিন্ন অপসংস্কৃতিতে আসক্ত হয়ে পরে। দিনদিন লেখাপড়ার প্রতি তারা আগ্রহ হারিয়ে ফেলে। যার ফলশ্রুতিতে তাদের পরিবার পড়াশোনার জন্য ও ধর্মীয় বিধি-বিধান মেনে চলার জন্য চাপ দিত। অতিরিক্ত পারিবারিক বিধি-নিষেধের ফলে তারা পরিবারের প্রতি বিরক্ত হয়ে পড়ে। তাদের পরিবারের এসব আচরণ তাদের কাছে অত্যাচার মনে হতো। তারা মূলত উচ্চাভিলাসী জীবনযাপন পছন্দ করত। দীর্ঘদিন বাসায় আবদ্ধ থাকার সময় তারা পশ্চিমা সংস্কৃতি বিশেষ করে জাপানি সংস্কৃতির প্রতি আসক্ত হয়ে পরে।

তারা অধিক পরিমাণে জাপানি সিনেমা-সিরিয়াল, সাংস্কৃতিক প্রোগাম দেখে দেখে জাপানি ভাষায় কিছুটা আয়ত্ত করে নেয়। তারা দেশ ছেড়ে স্বাধীন জীবনযাপন ও উচ্চশিক্ষার উদ্দেশ্যে জাপান যাওয়ার পরিকল্পনা করে। কারণ জাপানি সংস্কৃতিতে নারী-পুরুষের সমঅধিকার, স্বাধীনতা, দত্তক হওয়ার সুযোগ রয়েছে এবং অন্যান্য ধর্মীয় ও সামাজিক বিধি-নিষেধ নেই।

এরই ধারাবাহিকতায় তারা ২ মাস আগে তাদের বন্ধু তরিকুলের সঙ্গে দিয়াবাড়ী এলাকায় ঘুরতে গিয়ে হাফসা চৌধুরী নামে এক নারীর সঙ্গে পরিচয় হয়। হাফসার সঙ্গে পরিকল্পনা করে কক্সবাজার রুট দিয়ে নৌপথে জাপান যাওয়ার উদ্দেশ্যে তারা তিন বান্ধবী গৃহত্যাগ করে। আইনশৃঙ্খলা বাহিনীর হাত থেকে বাঁচতে তারা বাসা থেকে বের হওয়ার পর মোবাইল ভেঙে ফেলে। পরে তারা হাফসার পাঠানো দুইজন লোকের মাধ্যমে তারা একটি মাইক্রোবাসে কমলাপুর রেল স্টেশনে পৌঁছায়। চট্টগ্রামের ট্রেন না পেয়ে তারা বাসযোগে কুমিল্লা ময়নামতি যায়। পথিমধ্যে তারা নতুন মোবাইল কেনাসহ পশ্চিমা বেশ-ভূষা ধারণ করে। চট্টগ্রাম থেকে তারা বাসে কক্সবাজার যায়। গত শুক্রবার থেকে গত মঙ্গলবার পর্যন্ত তারা কলাতলিতে একটি হোটেলে অবস্থান করে। এ সময় হাফসার লোক পরিচয়ে আসিফ এবং শফিক নামের দুই লোক তাদের কাছে থাকা স্বর্ণালঙ্কার ও কিছু নগদ টাকা নিয়ে নেয়। এতে তারা আতঙ্কিত হয়ে আবার নিজেদের বাসায় ফিরে আসার সিদ্ধান্ত নেয়।

উল্লেখ্য, গত বৃহস্পতিবার সকালে পল্লবী থেকে তারা কলেজ ড্রেস পরে নিজ নিজ বাসা থেকে বের হন। সে সময় তারা বাসা থেকে নগদ টাকা, স্বর্ণালঙ্কার, স্কুল সার্টিফিকেট ও মূল্যবান সামগ্রী নিয়ে যান। নিখোঁজ শিক্ষার্থী দিলখুশ জান্নাত নিসার বড় বোন অ্যাডভোকেট কাজী রওশন দিল আফরোজ জানান, আমার বোন ও তার বান্ধীদের বিদেশে নেয়ার প্রলোভন দেখানো হয়েছে। এজন্য তারা বাড়ি ছেড়ে পালিয়েছে। তিনি জানান, বৃহস্পতিবার সকালে সবাই কলেজ ড্রেস পরে বের হয়েছে। কলেজের ব্যাগ ছিল সঙ্গে। আমাদের মহল্লার প্রতিবেশী তরিকুল, রকিবুল ও জিনিয়া এ ঘটনার সঙ্গে জড়িত।

বৃহস্পতিবার, ০৭ অক্টোবর ২০২১ , ২২ আশ্বিন ১৪২৮ ২৮ সফর ১৪৪৩

পল্লবীর সেই তিন ছাত্রী ঢাকায় উদ্ধার

স্বাধীন জীবনযাপনের উদ্দেশ্যে গৃহত্যাগ করেছিল তারা

নিজস্ব বার্তা পরিবেশক

বাসা থেকে টাকা, স্বর্ণালঙ্কার ও শিক্ষা সনদ নিয়ে গৃহত্যাগ করা রাজধানীর পল্লবীর কলেজপড়ুয়া সেই তিন ছাত্রীকে উদ্ধার করেছে র‌্যাপিড অ্যাকশন ব্যাটালিয়ন (র‌্যাব)। উদ্ধারকৃতরা হলেন, মিরপুর গার্লস আইডিয়াল ল্যাবরেটরি ইনস্টিটিউটের শিক্ষার্থী কাজী দিলখুশ জান্নাত নিসা, পল্লবী ডিগ্রি কলেজের শিক্ষার্থী কানিজ ফাতেমা ও দুয়ারীপাড়া কলেজের শিক্ষার্থী স্নেহা আক্তার। গতকাল ভোরে রাজধানীর আবদুল্লাহপুর বেড়িবাঁধ এলাকা থেকে তাদের উদ্ধার করা হয়। তারা কক্সবাজার থেকে ঢাকায় ফিরছিল। র‌্যাব বলছে, অতিরিক্ত বিধি-নিষেধের ফলে তারা পরিবারের প্রতি বিরক্ত হয়ে পড়ে। একপর্যায়ে বিভিন্ন সামাজিক যোগাযোগ মাধ্যম বিভিন্ন অপসংস্কৃতিতে আসক্ত হয়ে যায়। পরে স্বাধীন জীবনযাপন ও উচ্চশিক্ষার উদ্দেশ্যে কক্সবাজারের সমুদ্রপথে জাপান যাওয়ার পরিকল্পনা করে গৃহত্যাগ করে।

র‌্যাব-৪ এর অধিনায়ক অতিরিক্ত ডিআইজি মোজাম্মেল হক বলেন, গত বৃহস্পতিবার ওই তিন ছাত্রী নিখোঁজ হওয়ার পর নিশার বড় বোন অ্যাডভোকেট কাজী রওশন দিল আফরোজ বাদী হয়ে পল্লবী থানায় একটি মামলা দায়ের করেন। ওই মামলার ছায়া তদন্তে ওই তিন ছাত্রীর অবস্থান কক্সবাজার বলে নিশ্চিত হয় র‌্যাব। পরে র‌্যাবের একটি টিম তাদের উদ্ধারে কক্সবাজারে গেলে, তারা মঙ্গলবার রাতে একটি বাসে ঢাকার উদ্দেশ্যে রওনা হয়। এরপর আবদুল্লাহপুর এলাকা থেকে তাদের উদ্ধার করা হয়েছে। তাদের পরিবারের কাছে হস্তান্তর করা হবে।

ওই তিন ছাত্রীকে জিজ্ঞাসাবাদে জানা গেছে, তারা তিন বান্ধবী বিভিন্ন সামাজিক যোগাযোগ মাধ্যম বিভিন্ন অপসংস্কৃতিতে আসক্ত হয়ে পরে। দিনদিন লেখাপড়ার প্রতি তারা আগ্রহ হারিয়ে ফেলে। যার ফলশ্রুতিতে তাদের পরিবার পড়াশোনার জন্য ও ধর্মীয় বিধি-বিধান মেনে চলার জন্য চাপ দিত। অতিরিক্ত পারিবারিক বিধি-নিষেধের ফলে তারা পরিবারের প্রতি বিরক্ত হয়ে পড়ে। তাদের পরিবারের এসব আচরণ তাদের কাছে অত্যাচার মনে হতো। তারা মূলত উচ্চাভিলাসী জীবনযাপন পছন্দ করত। দীর্ঘদিন বাসায় আবদ্ধ থাকার সময় তারা পশ্চিমা সংস্কৃতি বিশেষ করে জাপানি সংস্কৃতির প্রতি আসক্ত হয়ে পরে।

তারা অধিক পরিমাণে জাপানি সিনেমা-সিরিয়াল, সাংস্কৃতিক প্রোগাম দেখে দেখে জাপানি ভাষায় কিছুটা আয়ত্ত করে নেয়। তারা দেশ ছেড়ে স্বাধীন জীবনযাপন ও উচ্চশিক্ষার উদ্দেশ্যে জাপান যাওয়ার পরিকল্পনা করে। কারণ জাপানি সংস্কৃতিতে নারী-পুরুষের সমঅধিকার, স্বাধীনতা, দত্তক হওয়ার সুযোগ রয়েছে এবং অন্যান্য ধর্মীয় ও সামাজিক বিধি-নিষেধ নেই।

এরই ধারাবাহিকতায় তারা ২ মাস আগে তাদের বন্ধু তরিকুলের সঙ্গে দিয়াবাড়ী এলাকায় ঘুরতে গিয়ে হাফসা চৌধুরী নামে এক নারীর সঙ্গে পরিচয় হয়। হাফসার সঙ্গে পরিকল্পনা করে কক্সবাজার রুট দিয়ে নৌপথে জাপান যাওয়ার উদ্দেশ্যে তারা তিন বান্ধবী গৃহত্যাগ করে। আইনশৃঙ্খলা বাহিনীর হাত থেকে বাঁচতে তারা বাসা থেকে বের হওয়ার পর মোবাইল ভেঙে ফেলে। পরে তারা হাফসার পাঠানো দুইজন লোকের মাধ্যমে তারা একটি মাইক্রোবাসে কমলাপুর রেল স্টেশনে পৌঁছায়। চট্টগ্রামের ট্রেন না পেয়ে তারা বাসযোগে কুমিল্লা ময়নামতি যায়। পথিমধ্যে তারা নতুন মোবাইল কেনাসহ পশ্চিমা বেশ-ভূষা ধারণ করে। চট্টগ্রাম থেকে তারা বাসে কক্সবাজার যায়। গত শুক্রবার থেকে গত মঙ্গলবার পর্যন্ত তারা কলাতলিতে একটি হোটেলে অবস্থান করে। এ সময় হাফসার লোক পরিচয়ে আসিফ এবং শফিক নামের দুই লোক তাদের কাছে থাকা স্বর্ণালঙ্কার ও কিছু নগদ টাকা নিয়ে নেয়। এতে তারা আতঙ্কিত হয়ে আবার নিজেদের বাসায় ফিরে আসার সিদ্ধান্ত নেয়।

উল্লেখ্য, গত বৃহস্পতিবার সকালে পল্লবী থেকে তারা কলেজ ড্রেস পরে নিজ নিজ বাসা থেকে বের হন। সে সময় তারা বাসা থেকে নগদ টাকা, স্বর্ণালঙ্কার, স্কুল সার্টিফিকেট ও মূল্যবান সামগ্রী নিয়ে যান। নিখোঁজ শিক্ষার্থী দিলখুশ জান্নাত নিসার বড় বোন অ্যাডভোকেট কাজী রওশন দিল আফরোজ জানান, আমার বোন ও তার বান্ধীদের বিদেশে নেয়ার প্রলোভন দেখানো হয়েছে। এজন্য তারা বাড়ি ছেড়ে পালিয়েছে। তিনি জানান, বৃহস্পতিবার সকালে সবাই কলেজ ড্রেস পরে বের হয়েছে। কলেজের ব্যাগ ছিল সঙ্গে। আমাদের মহল্লার প্রতিবেশী তরিকুল, রকিবুল ও জিনিয়া এ ঘটনার সঙ্গে জড়িত।