লন্ডনে বিশ্বকবি রবীন্দ্রনাথ ঠাকুরের স্মৃতিবিজড়িত বাড়িটি বিক্রি হয়ে যাচ্ছে। হ্যাম্পস্টেডের এই ঐতিহ্যময় বাড়িটিতে একদা ছিলেন তিনি।

১৯১২ সালে ব্রিটেনে গিয়ে এই বাড়িতেই থাকতেন রবীন্দ্রনাথ। এই বাড়িতেই কবির সঙ্গে দেখা হয়েছিল আইরিশ কবি ডব্লিউ বি ইয়েটস ছাড়াও অনেক কবি ও সাহিত্যমনস্ক ব্যক্তিত্বের। এই বাড়িতে রবীন্দ্রনাথ ঠাকুর তার সর্বাধিক পরিচিতি এবং যার মাধ্যমে নোবেল পুরস্কার লাভ করেছেন গীতাঞ্জলী কাব্যগ্রন্থ লেখে। সুরম্য এই বাড়িতে রয়েছে তিনটি বেড রুম, দুটি বাথসহ সব রকম উপকরণ। বাড়িটির সামনের আঙ্গিনায় রয়েছে একটি বাগান এবং পেছনে রয়েছে একটি প্রশস্ত পুকুর। বাড়িটি ইংলিশ হেরিটেজ দ্বারা পরিচালিত হয়ে আসছিল।

লন্ডনবাসী বাঙালিরা জানিয়েছেন, সেই বাড়ি যিনি বর্তমানে কিনতে আগ্রহী বা কিনতে চলেছেন রবীন্দ্রনাথকে ঘিরে কোনই আবেগ নেই তার। ওই বাড়িটি এবং জমির প্রতি শুধু আগ্রহ তার। তাই লন্ডন প্রবাসী বাঙালিরা পশ্চিমবঙ্গের মুখ্যমন্ত্রী মমতা ব্যানার্জির কাছে আবেদন জানিয়েছেন, এই বাড়িটি ভারত সরকারের অনাপত্তিতে বাংলার সরকার যদি কিনে নেয়ার ব্যবস্থা করেন, তাহলেই এই বাড়িটি রক্ষা করা সম্ভব হবে। সেই সঙ্গে এই বাড়িটিকে বিশ্বকবির স্মৃতিসৌধ বা যাদুঘর হিসেবে রূপান্তর করা যেতে পারে। আর তা না হলে ব্রিটেনে রবীন্দ্রনাথ ঠাকুরের প্রাচীনতম স্মৃতিময় এই বাড়িটিকে রক্ষা করা আর সম্ভব হবে না।

লন্ডন প্রবাসী বাঙালিরা জানিয়েছেন, বাংলার মুখ্যমন্ত্রী মমতা বন্দোপাধ্যায় যেবার লন্ডন সফরে এসেছিলেন, তখন দেশে ফিরে প্রধানমন্ত্রী মনমোহন সিংহের সঙ্গে যোগাযোগ করেছিলেন তিনি। মুখ্যমন্ত্রীর আগ্রহ দেখে প্রাক্তন প্রধানমন্ত্রী মনমোহন সিং আগ্রহ প্রকাশ করেছিলেন এবং এই জন্য তিনি কেন্দ্রীয় তথ্য ও সংস্কৃতি মন্ত্রকের স্ট্যান্ডিং কমিটির কাছে জানতে চেয়েছিলেন কিন্তু স্ট্যান্ডিং কমিটি জানায়, বাড়িটি যেহেতু বেসরকারি মালিকানাধীন, তাই মালিকের হাত থেকে ভারত সরকার বাড়িটি রক্ষা করতে পারবে না। এর পরে এ ব্যাপারে আর কোন উদ্যোগ নেয়া হয়নি।

লন্ডনের বাঙালিরা নানা ব্যস্ততার মাঝে বাড়িটির খোঁজ-খবর রাখতে পারেনি। তার মাঝেই স্মৃতিময় ওই বাড়ি বিক্রির প্রক্রিয়া অনেক দূর এগিয়ে গেছে। বাড়িটির দাম ধার্য হয়েছে ২৬ লাখ ৯০ হাজার পাউন্ড। ভারতের বা রাজ্য সরকারের পক্ষ থেকে কোন যোগাযোগও করা হয়নি। এবারও লন্ডন প্রবাসী বাঙালিদের পক্ষ থেকে ভারত সরকার ও রাজ্য সরকারের কছে আবেদন জানিয়ে বাড়িটি কেনার জন্য অনুরোধ জানিয়েছেন। তারা অবিলম্বে বাড়ির মালিকের সঙ্গে যোগাযোগ করা না হলে কিনতে ইচ্ছুক যেকোন ব্যক্তির কাছেই বিক্রি করে দেয়া হবে এই বাড়ি।