মিহির কুমার রায়
গত ১৬ সেপ্টেম্বর হঠাৎ করে ঘোষণার মাধ্যমে বিশ্বব্যাংক তাদের ‘ইজ অব ডুয়িং বিজনেস’ বা ব্যবসা সহজীকরণ পরিবেশ সূচক প্রকাশনা স্থগিত করেছে। বিষয়টি নিয়ে এক রকমের জট পাকানো পরিস্থিতি সৃষ্টি হয়েছে। আইনি সংস্থা উইলমারহেলের নিরপেক্ষ প্রতিবেদনে ডুয়িং বিজনেস সূচক প্রকাশকে ঘিরে বিশ্বব্যাংকের অনৈতিক কিছু বিষয় উঠে এসেছে। এর শুরু ২০১৭ প্রকাশিত সূচকে চীন ও সৌদি আরবের ব্যবসায়িক পরিবেশের অবস্থার উন্নতি দেখাতে অনিয়ম করার মাধ্যমে। ব্যবসা সহজীকরণ পরিবেশ সূচকের মাধ্যমে বিশ্বের বিভিন্ন দেশের ব্যবসায়িক পরিস্থিতি সম্পর্কে ধারণা পাওয়া যায় যে, বিশ্বের কোন কোন দেশে সবচেয়ে কম ঝামেলায় ব্যবসায়িক কার্যক্রম পরিচালনা করা যায়।
একটি দেশের ব্যবসায়-বাণিজ্যের বিদ্যমান সুবিধা যাচাই করার একটি সহজ ও গ্রহণযোগ্য পদ্ধতি হচ্ছে ‘ইজ অব ডুয়িং বিজনেস সূচক।’ প্রতিটি দেশই তাদের অভ্যন্তরীণ ব্যবসায়-বাণিজ্যের পরিবেশ নিয়ে এমনভাবে বিষয়টি উপস্থাপন করে থাকে, যা সেই দেশের ব্যবসায়-বাণিজ্যের সুন্দর পরিবেশ বিশ্বের কাছে পরিচিতি লাভ করে। যদিও এসব তথ্য-উপাত্ত নির্ভরযোগ্যতা নিয়ে প্রবাসী বিনিয়োগকারীদের বিচলিত হওয়ার আশঙ্কার সুযোগ থাকে, যা পরবর্তীতে নিরপেক্ষ পরীক্ষা-নীরিক্ষার মাধ্যমে নির্ধারিত হয়ে থাকে। বিশ্বব্যাংকের ‘ইজ অব ডুয়িং বিজনেস’ সূচক সেই পরিবেশ যাচাইয়ের একটি গ্রহণযোগ্য মাধ্যম মাত্র। বিশ্বব্যাংক ২০০৬ সাল থেকে বিশ্বের ১৯০টি দেশকে বিবেচনায় রেখে প্রতি বছর ‘ইজ অব ডুয়িং বিজনেস সূচক’ প্রকাশ করে চলেছে। এর আগে এই প্রতিবেদন নিয়ে তেমন কোন আপত্তি উত্থাপিত হয়নি। এই প্রতিবেদন বিদেশি বিনিয়োগকারীদের জন্য অত্যন্ত প্রয়োজনীয় একটি গাইডলাইন হিসেবে বিবেচিত হচ্ছে
২০১৮ এবং ২০২০ সালের ‘ইজ অব ডুয়িং বিজনেস’ সূচক প্রকাশ করা হয়, সেখানে কিছু তথ্যের গরমিল পরিলক্ষিত হয়। ২০১৮ সালে বিশ্বব্যাংকের ‘ইজ অব ডুয়িং বিজনেস’ সূচকের অসংগতি তুলে ধরেন বিশ্বব্যাংকের তৎকালীন প্রধান অর্থনীতিবিদ পল রোমার বলেন, বিশ্বব্যাংকের একজন সাবেক পরিচালক জালিয়াতির মাধ্যমে এমনভাবে ‘ইজ অব ডুয়িং বিজনেস’ সূচক প্রণয়ন করেছিলেন, যা চিলির ক্ষমতাসীন সমাজতান্ত্রিক সরকারকে ক্ষমতাচ্যুত করার ক্ষেত্রে ব্যবহার করা হয়েছিল। বিশ্বব্যাংকের সাবেক নির্বাহী পরিচালক ২০১৮ এবং ২০২০ সালে চাপের মুখে পড়ে কারসাজি করে চীন ও আরও কয়েকটি দেশের রেটিং এমনভাবে করেছিলেন যেন চীন ‘ইজ অব ডুয়িং বিজনেস’ সূচকে ওপরের দিকে থাকে।
বিশ্বব্যাংক সেই সময় অতিরিক্ত পুঁজি সংগ্রহণের জন্য চেষ্টা চালাচ্ছিল। তাদের ধারণা ছিল, চীনের রেটিং ভালো দেখানো হলে চীন বিশ্বব্যাংকের জন্য পুঁজি সরবরাহে এগিয়ে আসতে পারে। তাই তারা কোনোভাবেই চীনকে চটাতে চায়নি। বিশ্বব্যাংক সারা বিশ্বে সুশাসন নিশ্চিত করার জন্য পরামর্শ দিয়ে আসছে অনেক দিন ধরেই। তারা বিশেষ করে দরিদ্র দেশের ক্ষেত্রে, উন্নয়ন অর্থায়নের ক্ষেত্রে নানা ধরনের জটিল শর্তারোপ করে থাকে। উদাহরণ স্বরূপ বলা যায় পদ্মা সেতু নির্মাণকাজে কথিত দুর্নীতির অভিযোগ উত্থাপন করে বিশ্বব্যাংক এই সেতু প্রকল্পে অর্থায়ন বন্ধ করে দেয়। বাংলাদেশ তখন নিজস্ব অর্থায়নে পদ্মা সেতু নির্মাণকাজের উদ্যোগ নিলে বিশ্বব্যাংক কিছু দিন পর বাংলাদেশের সঙ্গে সম্পর্ক উন্নয়নের উদ্যোগ গ্রহণ করে। তারই অংশ হিসাবে বিশ্বব্যাংকের প্রেসিডেন্ট বাংলাদেশ সফর করেন এবং বাংলাদেশকে বর্ধিত আকারে আর্থিক সহায়তা প্রদানের অঙ্গীকার করেন। বিশ্বব্যাংক পৃথিবীব্যাপী সততা-নৈতিকতার শিক্ষা দেয় আর সেই প্রতিষ্ঠানটির বিরুদ্ধে সূচক জালিয়াতির যে অভিযোগ উত্থাপিত হয়েছেÑতা অগ্রহণযোগ্য। বিশ্বব্যাংকের আন্তর্জাতিক গ্রহণযোগ্যতা এতে মারাত্মকভাবে প্রশ্নবিদ্ধ হলেও তাই বলে এই সূচকে প্রয়োজনীয়তা ফোরিয়ে যায়নি।
ডুয়িং বিজনেস প্রতিবেদন প্রসঙ্গে একটি স্বচ্ছ ও নিরপেক্ষ কমিশনের কাছে তদন্তের দায়িত্ব দেয়া হয়েছে বিশ্বব্যাংকের পক্ষ থেকে, যা প্রশংসনীয়। যার ফলে বর্তমানে কিছু উদ্যোগ নেয়ারও বাধ্যবাধকতা তৈরি রয়েছে। এ ব্যাপারে বিশ্বব্যাংকের প্রধান অর্থনীতিবিদ কৌশিক বসু বলেন, বিশ্বের ১৮৯টি দেশ থেকে তথ্য সংগ্রহের কাজটি মোটেও সহজ নয়, এরপর কোন দেশটি তালিকার শীর্ষস্থান দখল করবে আর কোন দেশটি সবচেয়ে পিছিয়ে পড়বে, সেসব বিবেচনায় না নিয়ে তালিকা তৈরি করা হতো। সুতরাং একটি সম্পূর্ণ নতুন ডুয়িং বিজনেস সূচক কেমন হতে পারে?
প্রথমত, বিশ্বব্যাংককে প্রকৃত তথ্য সংগ্রহ করতে হবে। বর্তমানে কিংবা বাস্তবে কী ঘটছেÑতা থেকে নয়, বরং ডুয়িং বিজনেস প্রতিবেদনটি স্বাধীন পর্যালোচনা প্যানেলের নিয়মনীতি অনুসারে তৈরি হতে হবে। দ্বিতীয়ত, ডুয়িং বিজনেস প্রতিবেদন তৈরি করার সময় এখনো শ্রম আইন ও প্রবিধান সম্পর্কিত সূচকগুলো অন্তর্ভুক্ত করা হয় না যা অন্তর্ভুক্ত করা উচিত। তৃতীয়ত: বিশ্বব্যাংকের ডুয়িং বিজনেস প্রতিবেদনের পরিপূরক তৈরি করে তা সংশোধনের সুযোগ রয়েছে, যা দেশগুলোকে ‘বিং জাস্ট’ নামের নতুন একটি র্যাংকিংয়ে সুযোগ তৈরি করে দেবে। বিং জাস্ট র্যাংকিং একটি দেশের আইন ও বিধি কতটা ন্যায্য ও ন্যায়সংগতÑতা মূল্যায়ন করবে। প্রথমে ছোট পরিসরে এটি শুরু করা যেতে পাওে যেমন ডুয়িং বিজনেস প্রতিবেদনটি প্রকাশের সঙ্গেই বিং জাস্ট র্যাংকিং প্রকাশ করা যেতে পারে।
ব্যবসার জন্য ভালো হওয়া এবং ন্যায্য ও ন্যায়সংগত হওয়া-এ দুটির মধ্যকার সংযোগ খতিয়ে দেখার ক্ষেত্রে উদ্যোগটি স্বাভাবিকভাবেই গবেষকদের আগ্রহী করে তুলবে। এই উদ্যোগটি উদ্যোগী দেশগুলোকে উভয় ক্ষেত্রে উৎকর্ষ অর্জনের জন্য উৎসাহিত করে তুলবে। আরও এর মাধ্যমে বিশ্বব্যাংক কার্যকর ও নিরপেক্ষ র্যাংকিং তৈরি করে তাদের হারানো ভাবমূর্তি উদ্ধার করতে সক্ষম হতে পারে। চতুর্থত: বিশ্বব্যাপী বিদেশি বিনিয়োগকারীরা কোন দেশে বিনিয়োগের আগে বিশ্বব্যাংকের ‘ইজ অব ডুয়িং বিজনেস’ সূচক বিশেষভাবে বিবেচনায় রাখে। একই সঙ্গে তারা ট্রান্সপারেন্সি ইন্টারন্যাশনালের দুর্নীতির ধারণা সূচকও বিবেচনায় নেন। বিশ্বের অধিকাংশ দেশ বিশ্বব্যাংকের ‘ইজ অব ডুয়িং বিজনেস’ সূচকে উন্নতি সাধনের জন্য নানা ধরনের সংস্কার কার্যক্রম গ্রহণ করে থাকে। তাই বন্ধ না করে এই সূটকের সংস্কার প্রয়োজন যা আগে বর্ণিত হয়েছে এবং এতে করোনা-উত্তর বিশ্ব অর্থনীতিতে বিনিয়োগের ক্ষেত্রে চাঞ্চল্য সৃষ্টি হবে। যার ফলে উন্নত দেশ তৃতীয় বিশ্বের দেশগুলোতে বিনিয়োগে এগিয়ে আসবে।
[লেখক : অধ্যাপক (অর্থনীতি), ডিন ও সিন্ডিকেট সদস্য, সিটি ইউনিভার্সিটি]
বৃহস্পতিবার, ০৭ অক্টোবর ২০২১ , ২২ আশ্বিন ১৪২৮ ২৮ সফর ১৪৪৩
মিহির কুমার রায়
গত ১৬ সেপ্টেম্বর হঠাৎ করে ঘোষণার মাধ্যমে বিশ্বব্যাংক তাদের ‘ইজ অব ডুয়িং বিজনেস’ বা ব্যবসা সহজীকরণ পরিবেশ সূচক প্রকাশনা স্থগিত করেছে। বিষয়টি নিয়ে এক রকমের জট পাকানো পরিস্থিতি সৃষ্টি হয়েছে। আইনি সংস্থা উইলমারহেলের নিরপেক্ষ প্রতিবেদনে ডুয়িং বিজনেস সূচক প্রকাশকে ঘিরে বিশ্বব্যাংকের অনৈতিক কিছু বিষয় উঠে এসেছে। এর শুরু ২০১৭ প্রকাশিত সূচকে চীন ও সৌদি আরবের ব্যবসায়িক পরিবেশের অবস্থার উন্নতি দেখাতে অনিয়ম করার মাধ্যমে। ব্যবসা সহজীকরণ পরিবেশ সূচকের মাধ্যমে বিশ্বের বিভিন্ন দেশের ব্যবসায়িক পরিস্থিতি সম্পর্কে ধারণা পাওয়া যায় যে, বিশ্বের কোন কোন দেশে সবচেয়ে কম ঝামেলায় ব্যবসায়িক কার্যক্রম পরিচালনা করা যায়।
একটি দেশের ব্যবসায়-বাণিজ্যের বিদ্যমান সুবিধা যাচাই করার একটি সহজ ও গ্রহণযোগ্য পদ্ধতি হচ্ছে ‘ইজ অব ডুয়িং বিজনেস সূচক।’ প্রতিটি দেশই তাদের অভ্যন্তরীণ ব্যবসায়-বাণিজ্যের পরিবেশ নিয়ে এমনভাবে বিষয়টি উপস্থাপন করে থাকে, যা সেই দেশের ব্যবসায়-বাণিজ্যের সুন্দর পরিবেশ বিশ্বের কাছে পরিচিতি লাভ করে। যদিও এসব তথ্য-উপাত্ত নির্ভরযোগ্যতা নিয়ে প্রবাসী বিনিয়োগকারীদের বিচলিত হওয়ার আশঙ্কার সুযোগ থাকে, যা পরবর্তীতে নিরপেক্ষ পরীক্ষা-নীরিক্ষার মাধ্যমে নির্ধারিত হয়ে থাকে। বিশ্বব্যাংকের ‘ইজ অব ডুয়িং বিজনেস’ সূচক সেই পরিবেশ যাচাইয়ের একটি গ্রহণযোগ্য মাধ্যম মাত্র। বিশ্বব্যাংক ২০০৬ সাল থেকে বিশ্বের ১৯০টি দেশকে বিবেচনায় রেখে প্রতি বছর ‘ইজ অব ডুয়িং বিজনেস সূচক’ প্রকাশ করে চলেছে। এর আগে এই প্রতিবেদন নিয়ে তেমন কোন আপত্তি উত্থাপিত হয়নি। এই প্রতিবেদন বিদেশি বিনিয়োগকারীদের জন্য অত্যন্ত প্রয়োজনীয় একটি গাইডলাইন হিসেবে বিবেচিত হচ্ছে
২০১৮ এবং ২০২০ সালের ‘ইজ অব ডুয়িং বিজনেস’ সূচক প্রকাশ করা হয়, সেখানে কিছু তথ্যের গরমিল পরিলক্ষিত হয়। ২০১৮ সালে বিশ্বব্যাংকের ‘ইজ অব ডুয়িং বিজনেস’ সূচকের অসংগতি তুলে ধরেন বিশ্বব্যাংকের তৎকালীন প্রধান অর্থনীতিবিদ পল রোমার বলেন, বিশ্বব্যাংকের একজন সাবেক পরিচালক জালিয়াতির মাধ্যমে এমনভাবে ‘ইজ অব ডুয়িং বিজনেস’ সূচক প্রণয়ন করেছিলেন, যা চিলির ক্ষমতাসীন সমাজতান্ত্রিক সরকারকে ক্ষমতাচ্যুত করার ক্ষেত্রে ব্যবহার করা হয়েছিল। বিশ্বব্যাংকের সাবেক নির্বাহী পরিচালক ২০১৮ এবং ২০২০ সালে চাপের মুখে পড়ে কারসাজি করে চীন ও আরও কয়েকটি দেশের রেটিং এমনভাবে করেছিলেন যেন চীন ‘ইজ অব ডুয়িং বিজনেস’ সূচকে ওপরের দিকে থাকে।
বিশ্বব্যাংক সেই সময় অতিরিক্ত পুঁজি সংগ্রহণের জন্য চেষ্টা চালাচ্ছিল। তাদের ধারণা ছিল, চীনের রেটিং ভালো দেখানো হলে চীন বিশ্বব্যাংকের জন্য পুঁজি সরবরাহে এগিয়ে আসতে পারে। তাই তারা কোনোভাবেই চীনকে চটাতে চায়নি। বিশ্বব্যাংক সারা বিশ্বে সুশাসন নিশ্চিত করার জন্য পরামর্শ দিয়ে আসছে অনেক দিন ধরেই। তারা বিশেষ করে দরিদ্র দেশের ক্ষেত্রে, উন্নয়ন অর্থায়নের ক্ষেত্রে নানা ধরনের জটিল শর্তারোপ করে থাকে। উদাহরণ স্বরূপ বলা যায় পদ্মা সেতু নির্মাণকাজে কথিত দুর্নীতির অভিযোগ উত্থাপন করে বিশ্বব্যাংক এই সেতু প্রকল্পে অর্থায়ন বন্ধ করে দেয়। বাংলাদেশ তখন নিজস্ব অর্থায়নে পদ্মা সেতু নির্মাণকাজের উদ্যোগ নিলে বিশ্বব্যাংক কিছু দিন পর বাংলাদেশের সঙ্গে সম্পর্ক উন্নয়নের উদ্যোগ গ্রহণ করে। তারই অংশ হিসাবে বিশ্বব্যাংকের প্রেসিডেন্ট বাংলাদেশ সফর করেন এবং বাংলাদেশকে বর্ধিত আকারে আর্থিক সহায়তা প্রদানের অঙ্গীকার করেন। বিশ্বব্যাংক পৃথিবীব্যাপী সততা-নৈতিকতার শিক্ষা দেয় আর সেই প্রতিষ্ঠানটির বিরুদ্ধে সূচক জালিয়াতির যে অভিযোগ উত্থাপিত হয়েছেÑতা অগ্রহণযোগ্য। বিশ্বব্যাংকের আন্তর্জাতিক গ্রহণযোগ্যতা এতে মারাত্মকভাবে প্রশ্নবিদ্ধ হলেও তাই বলে এই সূচকে প্রয়োজনীয়তা ফোরিয়ে যায়নি।
ডুয়িং বিজনেস প্রতিবেদন প্রসঙ্গে একটি স্বচ্ছ ও নিরপেক্ষ কমিশনের কাছে তদন্তের দায়িত্ব দেয়া হয়েছে বিশ্বব্যাংকের পক্ষ থেকে, যা প্রশংসনীয়। যার ফলে বর্তমানে কিছু উদ্যোগ নেয়ারও বাধ্যবাধকতা তৈরি রয়েছে। এ ব্যাপারে বিশ্বব্যাংকের প্রধান অর্থনীতিবিদ কৌশিক বসু বলেন, বিশ্বের ১৮৯টি দেশ থেকে তথ্য সংগ্রহের কাজটি মোটেও সহজ নয়, এরপর কোন দেশটি তালিকার শীর্ষস্থান দখল করবে আর কোন দেশটি সবচেয়ে পিছিয়ে পড়বে, সেসব বিবেচনায় না নিয়ে তালিকা তৈরি করা হতো। সুতরাং একটি সম্পূর্ণ নতুন ডুয়িং বিজনেস সূচক কেমন হতে পারে?
প্রথমত, বিশ্বব্যাংককে প্রকৃত তথ্য সংগ্রহ করতে হবে। বর্তমানে কিংবা বাস্তবে কী ঘটছেÑতা থেকে নয়, বরং ডুয়িং বিজনেস প্রতিবেদনটি স্বাধীন পর্যালোচনা প্যানেলের নিয়মনীতি অনুসারে তৈরি হতে হবে। দ্বিতীয়ত, ডুয়িং বিজনেস প্রতিবেদন তৈরি করার সময় এখনো শ্রম আইন ও প্রবিধান সম্পর্কিত সূচকগুলো অন্তর্ভুক্ত করা হয় না যা অন্তর্ভুক্ত করা উচিত। তৃতীয়ত: বিশ্বব্যাংকের ডুয়িং বিজনেস প্রতিবেদনের পরিপূরক তৈরি করে তা সংশোধনের সুযোগ রয়েছে, যা দেশগুলোকে ‘বিং জাস্ট’ নামের নতুন একটি র্যাংকিংয়ে সুযোগ তৈরি করে দেবে। বিং জাস্ট র্যাংকিং একটি দেশের আইন ও বিধি কতটা ন্যায্য ও ন্যায়সংগতÑতা মূল্যায়ন করবে। প্রথমে ছোট পরিসরে এটি শুরু করা যেতে পাওে যেমন ডুয়িং বিজনেস প্রতিবেদনটি প্রকাশের সঙ্গেই বিং জাস্ট র্যাংকিং প্রকাশ করা যেতে পারে।
ব্যবসার জন্য ভালো হওয়া এবং ন্যায্য ও ন্যায়সংগত হওয়া-এ দুটির মধ্যকার সংযোগ খতিয়ে দেখার ক্ষেত্রে উদ্যোগটি স্বাভাবিকভাবেই গবেষকদের আগ্রহী করে তুলবে। এই উদ্যোগটি উদ্যোগী দেশগুলোকে উভয় ক্ষেত্রে উৎকর্ষ অর্জনের জন্য উৎসাহিত করে তুলবে। আরও এর মাধ্যমে বিশ্বব্যাংক কার্যকর ও নিরপেক্ষ র্যাংকিং তৈরি করে তাদের হারানো ভাবমূর্তি উদ্ধার করতে সক্ষম হতে পারে। চতুর্থত: বিশ্বব্যাপী বিদেশি বিনিয়োগকারীরা কোন দেশে বিনিয়োগের আগে বিশ্বব্যাংকের ‘ইজ অব ডুয়িং বিজনেস’ সূচক বিশেষভাবে বিবেচনায় রাখে। একই সঙ্গে তারা ট্রান্সপারেন্সি ইন্টারন্যাশনালের দুর্নীতির ধারণা সূচকও বিবেচনায় নেন। বিশ্বের অধিকাংশ দেশ বিশ্বব্যাংকের ‘ইজ অব ডুয়িং বিজনেস’ সূচকে উন্নতি সাধনের জন্য নানা ধরনের সংস্কার কার্যক্রম গ্রহণ করে থাকে। তাই বন্ধ না করে এই সূটকের সংস্কার প্রয়োজন যা আগে বর্ণিত হয়েছে এবং এতে করোনা-উত্তর বিশ্ব অর্থনীতিতে বিনিয়োগের ক্ষেত্রে চাঞ্চল্য সৃষ্টি হবে। যার ফলে উন্নত দেশ তৃতীয় বিশ্বের দেশগুলোতে বিনিয়োগে এগিয়ে আসবে।
[লেখক : অধ্যাপক (অর্থনীতি), ডিন ও সিন্ডিকেট সদস্য, সিটি ইউনিভার্সিটি]