বিল হরিণায় মাছ ধরার ধুম

বৃষ্টির পানিতে কানায় কানায় ভরে উঠেছে হরিণার বিল। নতুন পানিতে আসছে দেশি ছোট মাছের ঝাঁক। তাই বসে নেই শিকারির দলও। জাল ফেলে, ছিপ পেতে সমানে চলছে মাছ ধরা। দেশি পুঁটি, ট্যাংরা, গুতুম, বাইম, টাকি, কই, শোল, খলসে সরপুঁটি উঠছে জাল ভরে। ঘুনি ও চিকন সুতোর জাল পেতে ধরা হচ্ছে এসব মাছ। শিকারির হাঁড়ি ও খলই ভর্তি হয়ে উঠছে বিলের মাছে। বিলপাড়ে দাঁড়ালে দেখা যায়, দিগন্ত বিস্তৃত হরিণার বিল ভরে উঠেছে পানিতে। কালাবাগা খাল দিয়ে পানির ঢল তীব্র স্রোত তুলে বিলের এপাশ থেকে ওপাশে ছুটে চলেছে। আর এই ভাসান পানিতে উজাচ্ছে রকমারি ছোট মাছের ঝাঁক। জাল ফেলে চলছে মাছ ধরা। ঘুনি পাশাপাশি মসৃন জাল পেতেও মাছ তুলে আনছেন শিকারিরা। অনেকে আবার বিলের স্থির পানিতে বরশি পেতেও মাছ ধরছেন। আর সাইকেল-মোটরসাইকেল, চার্জার ভ্যান ও ইজিবাইকে চেপে পথচলতি মানুষ এসব দৃশ্য দেখতে থমকে দাঁড়াচ্ছেন। মাছ শিকারিদের কাছ থেকে দরদাম করে মাছ কিনে বাড়ি ফিরছেন। গত কয়েক দিন ধরে শরতের আকাশ যখন তখন গুড়ুম গুড়ুম করেছে। ঝুমিয়ে বৃষ্টিও নামছে। আর বৃষ্টি হলে বিলের পানিও ফুলে-ফেঁপে উঠছে। বিলের পানি চাপে সংলগ্ন কালবাগা খাল দিয়ে জোরালো স্রোত বইছে।

দেখা গেছে, দেশি বিভিন্ন প্রজাতির মাছ ধরার পর হাঁড়িতে, বড় বড় পাত্রে জিইয়ে রেখে কেনাবেচাও চলছে। চাঁচড়া থেকে সাঁড়াপোল যেতে কালাবাগায় মাছ ধরা যেমন চলছে, তেমনি সমানতালে চলছে মাছের বিক্রিও। সাড়াঘুটোর রাস্তায় (দক্ষিণ সাঁড়াপোল) ঢোকার মুখে বসে দেশীয় এসব ছোট মাছ বিক্রি হচ্ছে। এখানে কেজি দরের পাশাপাশি ‘থামকো’ হিসেবেও মাছের বেচাকেনা হয়। ছোট আকৃতির দেশি পুঁটির দাম ১০০ টাকা কেজি, টাকি মাছের কেজি ২০০ থেকে ২৪০ টাকা, গুতুম মাছ ২৮০ থেকে ৩০০ টাকা, শোল আকৃতিভেদে ৩০০ থেকে ৪০০ টাকা, গুচি বাইম কেজি ২৫০ থেকে ৩৫০ টাকা। কাচকি, কুচো চিংড়ি, মায়া, চান্দা, ছোট পুঁটি মিশ্রিত গুঁড়ো মাছের কেজি ৪০ থেকে ৬০ টাকা। কালাবাগায় ঘুটো রাস্তার মোড়ে মাছ বিক্রি করছিলেন তারাপদ সরকার। আলাপচারিতায় জানান, কয়েক দিন ধরে বৃষ্টি হওয়ায় বিলের পানি বেড়েছে। তাই বিলজুড়ে বেড়েছে মাছের আনাগোনা।

তিনি বলেন, জাল ফেলে বেশ কিছু মাছ ধরেছেন। আর পেতে রাখা ঘুনিতেও অনেক মাছ বেঁধেছে। বাড়ির জন্য কিছু মাছ রেখে বাকিগুলো বিক্রি করতে বসেছেন। এখান থেকে মাছ কিনছিলেন আতাউর রহমান। চাঁচড়ার ভাতুড়িয়ার এই বাসিন্দা জানান, বিলের আগের সেই অবস্থা এখন আর নেই। বর্ষা মৌসুমসহ বৃষ্টি-বাদলার দিনগুলোয় আগে বিলে প্রচুর মাছ মিলত। এছাড়াও সারা বছরই বিল থেকে মাছ ধরা পড়ত। কিন্তু ধান চাষাবাদে বিষ ও সার ব্যবহারের কারণে বিলের ছোট প্রজাতির মাছ এখন বিলুপ্তপ্রায়। দেশি মাছের প্রাচুর্য এখন হরিণার বিলে নেই বললেই চলে। তারপরও এখনও বিলে পানি বাড়লে স্বাদেভরপুর সব ছোট মাছ অল্পবিস্তর পাওয়া যায়। আবুল কালাম দরদাম করে মাছ কিনছিলেন। তিনি জানান, যশোর শহর থেকে কাজ সেরে এই পথ দিয়ে বাড়ি ফিরছিলেন। দেশি ছোট মাছ দেখে তার চোখ আটকে গেছে। দেশি পুঁটি, টাকি ও কইসহ বেশ কিছু মাছ কিনেছেন। তিনি বলেন, সদ্য ধরা ও তরতাজা এরকম দেশি মাছ পাওয়াই এখন কঠিন। তাই বেশ কিছু মাছ কিনে ফিরছেন।

শনিবার, ০৯ অক্টোবর ২০২১ , ২৪ আশ্বিন ১৪২৮ ০১ রবিউল আউয়াল ১৪৪৩

বিল হরিণায় মাছ ধরার ধুম

যশোর অফিস

image

বৃষ্টির পানিতে কানায় কানায় ভরে উঠেছে হরিণার বিল। নতুন পানিতে আসছে দেশি ছোট মাছের ঝাঁক। তাই বসে নেই শিকারির দলও। জাল ফেলে, ছিপ পেতে সমানে চলছে মাছ ধরা। দেশি পুঁটি, ট্যাংরা, গুতুম, বাইম, টাকি, কই, শোল, খলসে সরপুঁটি উঠছে জাল ভরে। ঘুনি ও চিকন সুতোর জাল পেতে ধরা হচ্ছে এসব মাছ। শিকারির হাঁড়ি ও খলই ভর্তি হয়ে উঠছে বিলের মাছে। বিলপাড়ে দাঁড়ালে দেখা যায়, দিগন্ত বিস্তৃত হরিণার বিল ভরে উঠেছে পানিতে। কালাবাগা খাল দিয়ে পানির ঢল তীব্র স্রোত তুলে বিলের এপাশ থেকে ওপাশে ছুটে চলেছে। আর এই ভাসান পানিতে উজাচ্ছে রকমারি ছোট মাছের ঝাঁক। জাল ফেলে চলছে মাছ ধরা। ঘুনি পাশাপাশি মসৃন জাল পেতেও মাছ তুলে আনছেন শিকারিরা। অনেকে আবার বিলের স্থির পানিতে বরশি পেতেও মাছ ধরছেন। আর সাইকেল-মোটরসাইকেল, চার্জার ভ্যান ও ইজিবাইকে চেপে পথচলতি মানুষ এসব দৃশ্য দেখতে থমকে দাঁড়াচ্ছেন। মাছ শিকারিদের কাছ থেকে দরদাম করে মাছ কিনে বাড়ি ফিরছেন। গত কয়েক দিন ধরে শরতের আকাশ যখন তখন গুড়ুম গুড়ুম করেছে। ঝুমিয়ে বৃষ্টিও নামছে। আর বৃষ্টি হলে বিলের পানিও ফুলে-ফেঁপে উঠছে। বিলের পানি চাপে সংলগ্ন কালবাগা খাল দিয়ে জোরালো স্রোত বইছে।

দেখা গেছে, দেশি বিভিন্ন প্রজাতির মাছ ধরার পর হাঁড়িতে, বড় বড় পাত্রে জিইয়ে রেখে কেনাবেচাও চলছে। চাঁচড়া থেকে সাঁড়াপোল যেতে কালাবাগায় মাছ ধরা যেমন চলছে, তেমনি সমানতালে চলছে মাছের বিক্রিও। সাড়াঘুটোর রাস্তায় (দক্ষিণ সাঁড়াপোল) ঢোকার মুখে বসে দেশীয় এসব ছোট মাছ বিক্রি হচ্ছে। এখানে কেজি দরের পাশাপাশি ‘থামকো’ হিসেবেও মাছের বেচাকেনা হয়। ছোট আকৃতির দেশি পুঁটির দাম ১০০ টাকা কেজি, টাকি মাছের কেজি ২০০ থেকে ২৪০ টাকা, গুতুম মাছ ২৮০ থেকে ৩০০ টাকা, শোল আকৃতিভেদে ৩০০ থেকে ৪০০ টাকা, গুচি বাইম কেজি ২৫০ থেকে ৩৫০ টাকা। কাচকি, কুচো চিংড়ি, মায়া, চান্দা, ছোট পুঁটি মিশ্রিত গুঁড়ো মাছের কেজি ৪০ থেকে ৬০ টাকা। কালাবাগায় ঘুটো রাস্তার মোড়ে মাছ বিক্রি করছিলেন তারাপদ সরকার। আলাপচারিতায় জানান, কয়েক দিন ধরে বৃষ্টি হওয়ায় বিলের পানি বেড়েছে। তাই বিলজুড়ে বেড়েছে মাছের আনাগোনা।

তিনি বলেন, জাল ফেলে বেশ কিছু মাছ ধরেছেন। আর পেতে রাখা ঘুনিতেও অনেক মাছ বেঁধেছে। বাড়ির জন্য কিছু মাছ রেখে বাকিগুলো বিক্রি করতে বসেছেন। এখান থেকে মাছ কিনছিলেন আতাউর রহমান। চাঁচড়ার ভাতুড়িয়ার এই বাসিন্দা জানান, বিলের আগের সেই অবস্থা এখন আর নেই। বর্ষা মৌসুমসহ বৃষ্টি-বাদলার দিনগুলোয় আগে বিলে প্রচুর মাছ মিলত। এছাড়াও সারা বছরই বিল থেকে মাছ ধরা পড়ত। কিন্তু ধান চাষাবাদে বিষ ও সার ব্যবহারের কারণে বিলের ছোট প্রজাতির মাছ এখন বিলুপ্তপ্রায়। দেশি মাছের প্রাচুর্য এখন হরিণার বিলে নেই বললেই চলে। তারপরও এখনও বিলে পানি বাড়লে স্বাদেভরপুর সব ছোট মাছ অল্পবিস্তর পাওয়া যায়। আবুল কালাম দরদাম করে মাছ কিনছিলেন। তিনি জানান, যশোর শহর থেকে কাজ সেরে এই পথ দিয়ে বাড়ি ফিরছিলেন। দেশি ছোট মাছ দেখে তার চোখ আটকে গেছে। দেশি পুঁটি, টাকি ও কইসহ বেশ কিছু মাছ কিনেছেন। তিনি বলেন, সদ্য ধরা ও তরতাজা এরকম দেশি মাছ পাওয়াই এখন কঠিন। তাই বেশ কিছু মাছ কিনে ফিরছেন।