মিউচুয়াল ফান্ডকে সব সুযোগ-সুবিধা দিতে চান বিএসইসি চেয়ারম্যান

শেয়ারবাজার নিয়ন্ত্রক সংস্থা বাংলাদেশ সিকিউরিটিজ অ্যান্ড এক্সচেঞ্জ কমিশনের (বিএসইসি) চেয়ারম্যান অধ্যাপক শিবলী রুবাইয়াত-উল-ইসলাম বলেছেন, ‘মিউচুয়াল ফান্ড অনেক ভালো পারফরমেন্স করছে। এতে আমরা খুশি। আমরা এই খাতটিকে অনেক দূর এগিয়ে নিতে চাই। এক্ষেত্রে আমরা সেবক হিসেবে যত সুযোগ-সুবিধা দেয়া দরকার, তার সব দিতে চাই। এই মিউচুয়াল ফান্ডকে অনেক অনেক বড় দেখতে চাই।’

গতকাল বিশ্ব বিনিয়োগকারী সপ্তাহ উপলক্ষ্যে অ্যাসোসিয়েশন অব অ্যাসেট ম্যানেজমেন্ট কোম্পানিজ অ্যান্ড মিউচুয়াল ফান্ডসের (এএএমসিএমএফ) আয়োজিত ‘ইন্সটিটিউশনাল রোল ইন সাসটেইনেবল ফাইনান্সিং’ শীর্ষক অনুষ্ঠানে প্রধান অতিথির বক্তব্যে এসব কথা বলেন তিনি। এতে বিশেষ অতিথি হিসেবে অংশগ্রহণ করেন বিএসইসির কমিশনার অধ্যাপক ড. মিজানুর রহমান। অনুষ্ঠানে সভাপতিত্ব করেন এএএমসিএমএফের সভাপতি ড. হাসান ইমাম। সঞ্চালনায় ছিলেন একাশিয়ার প্রধান নির্বাহী কর্মকর্তা অরুনাষ্ণু দত্ত।

শিবলী রুবাইয়াত বলেন, ‘ড. মিজানের ভাষ্য অনুযায়ী, মিউচুয়াল ফান্ডের আকার মাত্র ১৫ হাজার কোটি টাকা। এত ছোট কেন হবে। সবাইকে এই ১৫ হাজার কোটির আকারকে কীভাবে দেড় লাখে নিয়ে যাওয়া যায়, তা নিয়ে আলোচনা করতে হবে। আপনারা আমাদেরকে বলেন, কি করতে হবে, কোথায় সমস্যা। আমরা আপনাদেরকে আইনগতভাবে সব সহযোগিতা করব। কেন আপনারা বলছেন না, ফান্ডের আকার বাড়ানো দরকার। কোথায় বাধা আছে, তা জানান। যারা ভালো পারফরমেন্স করছে, তাদেরকে উৎসাহিত করব। কিন্তু যারা পারফরমেন্স করছে না, তাদেরকে কেন এত উচ্চ ফি নিতে দেব। শেয়ারবাজারে সবচেয়ে গুরুত্বপূর্ণ হচ্ছে মিউচুয়াল ফান্ডের ভূমিকা। এই বাজারের স্ট্যাবলে মিউচুয়াল ফান্ডের মতো দক্ষ ও শিক্ষিত জনবল আর কোথাও পাওয়া যায় না। এ কারণে মিউচুয়াল ফান্ড খাতের দায়িত্বরতদের প্রতি আমাদের আকাক্সক্ষা অনেক। আপনাদের (মিউচুয়াল ফান্ড খাত) বুদ্ধিমত্তা ও বিবেচনাকে কাজে লাগিয়ে শেয়ারবাজার নিয়ে যে ভয়, শঙ্কা ও বিভিন্ন নেতিবাচক মন্তব্য করা হয়, এখন থেকে বের করে নিয়ে আসতে হবে। মিউচুয়াল ফান্ডের অনেক কিছু করার আছে।’

মিউচুয়াল ফান্ডের প্রচার না থাকাকে সবচেয়ে বড় সমস্যা উল্লেখ করে তিনি বলেন, ‘এই খাতের কোন প্রচার নেই। ব্যক্তিগতভাবে প্রতিদিন কমপক্ষে ২ জন লোক ফোন করে কোন মিউচুয়াল ফান্ডে বিনিয়োগ করবে তা জানতে চায়। যেখানে ক্ষুদ্র থেকে বৃহৎ সব শ্রেণীর মানুষ ফোন করে। তারা কোন ফান্ডে বিনিয়োগ করবে, তা জানতে চায়। এছাড়া কেমন রিটার্ন দেয়, তা জানতে চায়। এ বছর ফান্ডগুলো অনেক ভালো রিটার্ন দিয়েছে। তারা অনেক ভালো করছে। যাতে আমরা খুশি। আমরা চাচ্ছি এই খাতটি উন্নতি করার যে সঠিক সময় যাচ্ছে, সেই সুযোগটি নিতে। ফান্ডগুলোর যদি প্রচারণায় অনেক খরচ মনে করেন, তাহলে অ্যাসোসিয়েশনের পক্ষ থেকে করেন। আমিতো যখনই আইপিএলের খেলা দেখতে বসি, তখনই ওই দেশের মিউচুয়াল ফান্ডের বিজ্ঞাপন দেখি। তার মানে ওরা ফান্ড জনপ্রিয় করেছে। ওদের ফান্ডের আকার অনেক বড়। তো আমাদের ফান্ডগুলোকেও এখনই করতে বড় করতে প্রচারণায় নামতে হবে। একইসঙ্গে কোন নেতিবাচক বা সন্দেহ থাকলে, তা দূর করতে হবে। এছাড়া কারও কোন প্রশ্ন থাকলে, তার উত্তর দিতে হবে।’

শিবলী রুবাইয়াত আরও বলেন, ‘সেটা কিন্তু এখনও পরিবর্তন হয়নি। অতএব সবাইকে এক থাকতে হবে। নিজেদের মধ্যে ভুল বোঝাবুঝি হতেই পারে। কাজ করতে গেলে এমন হয়। তবে কথা বলে তা সমাধান করে নিতে হবে। এক থাকতে হবে। এরমাধ্যমে ফান্ড খাতকে বড় বিনিয়োগ আকারে নিয়ে আসতে চাই। তখনই আপনাদের আজকের আয়োজনের লক্ষ্যমাত্রা পূরণ হবে। আপনারা সঠিক দিকনির্দেশনার মাধ্যমে বাংলাদেশের অর্থনীতিকে আরেক পর্যায়ে নিয়ে যেতে পারবেন। গত সপ্তাহেও মিউচুয়াল ফান্ড খাত নিয়ে কমিশন সভায় বসেছিল। কিভাবে এই খাতকে সহযোগিতা ও দশগুণ আকার করা যায়, তা নিয়ে আলোচনা করতেই বসেছিল। তাই আশা করব আপনাদের কি সহযোগিতা দরকার, তা বলবেন।’

ব্যাংক এশিয়ার ব্যবস্থাপনা পরিচালক আরফান আলিকে উদ্দেশ্য করে বিএসইসি চেয়ারম্যান বলেন, ‘অনেকগুলো ব্যাংকের সুযোগ থাকলেও মিউচুয়াল ফান্ডে বিনিয়োগ করে না। তাই আপনার (আরফান আলি) ব্যাংকিং খাতের সহকর্মীদেরকে এই খাতে বিনিয়োগের জন্য উৎসাহিত করার অনুরোধ করব। এই খাত এই বছর গড়ে সবাই ১০ শতাংশের উপরে রিটার্ন দিয়েছে। অর্থনীতি কিন্তু সবার। আমরা শেয়ারবাজারে প্রতিদিন যে ২-৩ হাজার কোটি টাকা লেনদেন করি। সব টাকা কিন্তু ব্যাংকের চলে যায়। সুতরাং শেয়ারবাজার যত বড়ই হোক না কেন, টাকা পয়সা সব আপনাদের (আরফান আলি) কাছে থাকে। আপনাদের মাধ্যমেই টাকা পয়সা লেনদেন হয়। সুতরাং শেয়ারবাজার বড় হয়ে গেলে মানি মার্কেটের ক্ষতি হয়ে যেতে পারে, এটা যেন কেউ কখনও মনে না করে। বরং শেয়ারবাজার যত বড় হবে, ফিসহ নানাভাবে ব্যাংকের তত আয় বাড়বে।’

মিউচুয়াল ফান্ড ও বন্ডে সাপোর্ট দেয়া নিয়ে রাজস্ব বোর্ডের সঙ্গে আলোচনা হয়েছে জানিয়ে তিনি বলেন, ‘এখন শেয়ারবাজার থেকে যে পরিমাণ রাজস্ব দেয়া হয়, তা ১০০ গুণ বেড়ে যাবে। এজন্য মিউচুয়াল ফান্ড ও বন্ডে সহযোগিতা করা দরকার। এ বিষয়ে এনবিআর চেয়ারম্যান সম্মতি জানিয়েছেন।’

অ্যাসোসিয়েশন অব অ্যাসেট ম্যানেজমেন্ট কোম্পানিজ অ্যান্ড মিউচুয়াল ফান্ডসের (এএএমসিএমএফ) সভাপতি ও বাংলাদেশ রেস ম্যানেজমেন্টর সিইও ড. হাসান ইমাম বলেন, ‘শেয়ারবাজারে মিউচুয়াল ফান্ড এখন সবচেয়ে আকর্ষনীয় বিনিয়োগের খাত। দেশের শেযারবাজারে এ সেক্টরের বড় সম্ভাবনা রয়েছে। গত ৬-৭ বছরের এ কথাটা বলা যায়নি, কিন্তু এখন সেটা বলার সময় এসেছে। এ বছরের অবশ্যই মিউচুয়াল ফান্ড ভালো করেছে। ডিভিডেন্ড গেইন হিসাবে এ বছর ইক্যুইটি বা শেয়ারভিত্তিক মিউচুয়াল ফান্ডগুলোর সম্মিলিতভাবে প্রায় ৬শ’ কোটি টাকা নগদ লভ্যাংশ দিয়েছে। যেটা বর্তমান কমিশনের বড় কৃতিত্ব। কারণ তারা আমাদের ভালো লভ্যাংশ প্রদানের জন্য উৎসাহিত করেছেন। মিউচুয়াল ফান্ডগুলো এ ক্যাটাগরির বড় ও মাঝারি কোম্পানির শেয়ারের সিংহভাগ বিনিয়োগ করছে। আর ফান্ডগুলোর পোর্টফোলিওতে গড়ে ৩০ থেকে ৫০টি কোম্পানির শেয়ার থাকে। কাজেই একটি মিউচুয়াল ফান্ডে বিনিয়োগ করে ব্রড ডাইভারসিফিকেশন পাওয়া যাচ্ছে। যেটা নিজের পোর্টফোলিওতে বিনিয়োগ করে সম্ভব নয়।

তিনি আরও বলেন, ‘বাংলাদেশে সাসটেইনেবল ফাইন্যান্স শেয়ারবাজারে প্রসার করতে মিউচুয়াল ফান্ডের বড় ভূমিকা রয়েছে। এটা ভবিষ্যতেও থাকবে। যদি শেয়ারবাজারের সাসটেইনিবিলিটি চিন্তা করা যায়, তাহলে মিউচুয়াল ফান্ড প্রাতিষ্ঠানিক বিনিয়োগকারী হিসেবে গুরুত্বপূর্ণ ভূমিকা পালন করছে। একইভাবে ভবিষ্যতে মিউচুয়াল ফান্ড সেক্টর এ ভূমিকা পালন করে যাবে। ফলে শেয়ারবাজারে সাসটেইনেবল ইনভেস্টমেন্ট হিসেবে মিউচুয়াল ফান্ড ভালো ইনস্ট্রুমেন্ট, যা বিনিয়োগকারীদের ভালো রিটার্ন দিতে সক্ষম হবে। শেয়ারবাজারে সাসটেইনেবল ইনভেস্টমেন্টের শর্ত কোয়ালিটি ইনভেস্টমেন্ট বিবেচনায় মিউচুয়াল ফান্ড ভালো মার্ক পাবে। বর্তমানে ওপেন অ্যান্ড ও ক্লোজ অ্যান্ড মিউচুয়াল ফান্ডগুলো স্বচ্ছভাবে ডিসক্লোজার হচ্ছে। বিনিয়োগকারী একটু যাচাই-বাছাই করে দেখবেন, মিউচুয়াল ফান্ডের পোর্টফোলিওতে এ ক্যাটাগরির শেয়ারের প্রাধান্য সবচেয়ে বেশি। সাসটেইনেবিলিটির হিসেবে বাংলাদেশের শেয়ারবাজারে তালিকাভুক্ত বড় ও মাঝারি মূলধনের কোম্পানিতে গভর্নেন্স, বিজনেস সাসটেইনেবিলিটি, সিনএসআর সবচেয়ে বেশি পালন করা হয়ে থাকে।’

অনুষ্ঠানে ব্যাংক এশিয়ার ব্যবস্থাপনা পরিচালক আরফান আলি শেয়ারবাজারের উন্নয়নে এনবিএফআই ও মিউচুয়াল ফান্ড খাতকে নিয়ে একসঙ্গে কাজ করবেন বলে জানান।

রবিবার, ১০ অক্টোবর ২০২১ , ২৫ আশ্বিন ১৪২৮ ০২ রবিউল আউয়াল ১৪৪৩

মিউচুয়াল ফান্ডকে সব সুযোগ-সুবিধা দিতে চান বিএসইসি চেয়ারম্যান

অর্থনৈতিক বার্তা পরিবেশক

image

শেয়ারবাজার নিয়ন্ত্রক সংস্থা বাংলাদেশ সিকিউরিটিজ অ্যান্ড এক্সচেঞ্জ কমিশনের (বিএসইসি) চেয়ারম্যান অধ্যাপক শিবলী রুবাইয়াত-উল-ইসলাম বলেছেন, ‘মিউচুয়াল ফান্ড অনেক ভালো পারফরমেন্স করছে। এতে আমরা খুশি। আমরা এই খাতটিকে অনেক দূর এগিয়ে নিতে চাই। এক্ষেত্রে আমরা সেবক হিসেবে যত সুযোগ-সুবিধা দেয়া দরকার, তার সব দিতে চাই। এই মিউচুয়াল ফান্ডকে অনেক অনেক বড় দেখতে চাই।’

গতকাল বিশ্ব বিনিয়োগকারী সপ্তাহ উপলক্ষ্যে অ্যাসোসিয়েশন অব অ্যাসেট ম্যানেজমেন্ট কোম্পানিজ অ্যান্ড মিউচুয়াল ফান্ডসের (এএএমসিএমএফ) আয়োজিত ‘ইন্সটিটিউশনাল রোল ইন সাসটেইনেবল ফাইনান্সিং’ শীর্ষক অনুষ্ঠানে প্রধান অতিথির বক্তব্যে এসব কথা বলেন তিনি। এতে বিশেষ অতিথি হিসেবে অংশগ্রহণ করেন বিএসইসির কমিশনার অধ্যাপক ড. মিজানুর রহমান। অনুষ্ঠানে সভাপতিত্ব করেন এএএমসিএমএফের সভাপতি ড. হাসান ইমাম। সঞ্চালনায় ছিলেন একাশিয়ার প্রধান নির্বাহী কর্মকর্তা অরুনাষ্ণু দত্ত।

শিবলী রুবাইয়াত বলেন, ‘ড. মিজানের ভাষ্য অনুযায়ী, মিউচুয়াল ফান্ডের আকার মাত্র ১৫ হাজার কোটি টাকা। এত ছোট কেন হবে। সবাইকে এই ১৫ হাজার কোটির আকারকে কীভাবে দেড় লাখে নিয়ে যাওয়া যায়, তা নিয়ে আলোচনা করতে হবে। আপনারা আমাদেরকে বলেন, কি করতে হবে, কোথায় সমস্যা। আমরা আপনাদেরকে আইনগতভাবে সব সহযোগিতা করব। কেন আপনারা বলছেন না, ফান্ডের আকার বাড়ানো দরকার। কোথায় বাধা আছে, তা জানান। যারা ভালো পারফরমেন্স করছে, তাদেরকে উৎসাহিত করব। কিন্তু যারা পারফরমেন্স করছে না, তাদেরকে কেন এত উচ্চ ফি নিতে দেব। শেয়ারবাজারে সবচেয়ে গুরুত্বপূর্ণ হচ্ছে মিউচুয়াল ফান্ডের ভূমিকা। এই বাজারের স্ট্যাবলে মিউচুয়াল ফান্ডের মতো দক্ষ ও শিক্ষিত জনবল আর কোথাও পাওয়া যায় না। এ কারণে মিউচুয়াল ফান্ড খাতের দায়িত্বরতদের প্রতি আমাদের আকাক্সক্ষা অনেক। আপনাদের (মিউচুয়াল ফান্ড খাত) বুদ্ধিমত্তা ও বিবেচনাকে কাজে লাগিয়ে শেয়ারবাজার নিয়ে যে ভয়, শঙ্কা ও বিভিন্ন নেতিবাচক মন্তব্য করা হয়, এখন থেকে বের করে নিয়ে আসতে হবে। মিউচুয়াল ফান্ডের অনেক কিছু করার আছে।’

মিউচুয়াল ফান্ডের প্রচার না থাকাকে সবচেয়ে বড় সমস্যা উল্লেখ করে তিনি বলেন, ‘এই খাতের কোন প্রচার নেই। ব্যক্তিগতভাবে প্রতিদিন কমপক্ষে ২ জন লোক ফোন করে কোন মিউচুয়াল ফান্ডে বিনিয়োগ করবে তা জানতে চায়। যেখানে ক্ষুদ্র থেকে বৃহৎ সব শ্রেণীর মানুষ ফোন করে। তারা কোন ফান্ডে বিনিয়োগ করবে, তা জানতে চায়। এছাড়া কেমন রিটার্ন দেয়, তা জানতে চায়। এ বছর ফান্ডগুলো অনেক ভালো রিটার্ন দিয়েছে। তারা অনেক ভালো করছে। যাতে আমরা খুশি। আমরা চাচ্ছি এই খাতটি উন্নতি করার যে সঠিক সময় যাচ্ছে, সেই সুযোগটি নিতে। ফান্ডগুলোর যদি প্রচারণায় অনেক খরচ মনে করেন, তাহলে অ্যাসোসিয়েশনের পক্ষ থেকে করেন। আমিতো যখনই আইপিএলের খেলা দেখতে বসি, তখনই ওই দেশের মিউচুয়াল ফান্ডের বিজ্ঞাপন দেখি। তার মানে ওরা ফান্ড জনপ্রিয় করেছে। ওদের ফান্ডের আকার অনেক বড়। তো আমাদের ফান্ডগুলোকেও এখনই করতে বড় করতে প্রচারণায় নামতে হবে। একইসঙ্গে কোন নেতিবাচক বা সন্দেহ থাকলে, তা দূর করতে হবে। এছাড়া কারও কোন প্রশ্ন থাকলে, তার উত্তর দিতে হবে।’

শিবলী রুবাইয়াত আরও বলেন, ‘সেটা কিন্তু এখনও পরিবর্তন হয়নি। অতএব সবাইকে এক থাকতে হবে। নিজেদের মধ্যে ভুল বোঝাবুঝি হতেই পারে। কাজ করতে গেলে এমন হয়। তবে কথা বলে তা সমাধান করে নিতে হবে। এক থাকতে হবে। এরমাধ্যমে ফান্ড খাতকে বড় বিনিয়োগ আকারে নিয়ে আসতে চাই। তখনই আপনাদের আজকের আয়োজনের লক্ষ্যমাত্রা পূরণ হবে। আপনারা সঠিক দিকনির্দেশনার মাধ্যমে বাংলাদেশের অর্থনীতিকে আরেক পর্যায়ে নিয়ে যেতে পারবেন। গত সপ্তাহেও মিউচুয়াল ফান্ড খাত নিয়ে কমিশন সভায় বসেছিল। কিভাবে এই খাতকে সহযোগিতা ও দশগুণ আকার করা যায়, তা নিয়ে আলোচনা করতেই বসেছিল। তাই আশা করব আপনাদের কি সহযোগিতা দরকার, তা বলবেন।’

ব্যাংক এশিয়ার ব্যবস্থাপনা পরিচালক আরফান আলিকে উদ্দেশ্য করে বিএসইসি চেয়ারম্যান বলেন, ‘অনেকগুলো ব্যাংকের সুযোগ থাকলেও মিউচুয়াল ফান্ডে বিনিয়োগ করে না। তাই আপনার (আরফান আলি) ব্যাংকিং খাতের সহকর্মীদেরকে এই খাতে বিনিয়োগের জন্য উৎসাহিত করার অনুরোধ করব। এই খাত এই বছর গড়ে সবাই ১০ শতাংশের উপরে রিটার্ন দিয়েছে। অর্থনীতি কিন্তু সবার। আমরা শেয়ারবাজারে প্রতিদিন যে ২-৩ হাজার কোটি টাকা লেনদেন করি। সব টাকা কিন্তু ব্যাংকের চলে যায়। সুতরাং শেয়ারবাজার যত বড়ই হোক না কেন, টাকা পয়সা সব আপনাদের (আরফান আলি) কাছে থাকে। আপনাদের মাধ্যমেই টাকা পয়সা লেনদেন হয়। সুতরাং শেয়ারবাজার বড় হয়ে গেলে মানি মার্কেটের ক্ষতি হয়ে যেতে পারে, এটা যেন কেউ কখনও মনে না করে। বরং শেয়ারবাজার যত বড় হবে, ফিসহ নানাভাবে ব্যাংকের তত আয় বাড়বে।’

মিউচুয়াল ফান্ড ও বন্ডে সাপোর্ট দেয়া নিয়ে রাজস্ব বোর্ডের সঙ্গে আলোচনা হয়েছে জানিয়ে তিনি বলেন, ‘এখন শেয়ারবাজার থেকে যে পরিমাণ রাজস্ব দেয়া হয়, তা ১০০ গুণ বেড়ে যাবে। এজন্য মিউচুয়াল ফান্ড ও বন্ডে সহযোগিতা করা দরকার। এ বিষয়ে এনবিআর চেয়ারম্যান সম্মতি জানিয়েছেন।’

অ্যাসোসিয়েশন অব অ্যাসেট ম্যানেজমেন্ট কোম্পানিজ অ্যান্ড মিউচুয়াল ফান্ডসের (এএএমসিএমএফ) সভাপতি ও বাংলাদেশ রেস ম্যানেজমেন্টর সিইও ড. হাসান ইমাম বলেন, ‘শেয়ারবাজারে মিউচুয়াল ফান্ড এখন সবচেয়ে আকর্ষনীয় বিনিয়োগের খাত। দেশের শেযারবাজারে এ সেক্টরের বড় সম্ভাবনা রয়েছে। গত ৬-৭ বছরের এ কথাটা বলা যায়নি, কিন্তু এখন সেটা বলার সময় এসেছে। এ বছরের অবশ্যই মিউচুয়াল ফান্ড ভালো করেছে। ডিভিডেন্ড গেইন হিসাবে এ বছর ইক্যুইটি বা শেয়ারভিত্তিক মিউচুয়াল ফান্ডগুলোর সম্মিলিতভাবে প্রায় ৬শ’ কোটি টাকা নগদ লভ্যাংশ দিয়েছে। যেটা বর্তমান কমিশনের বড় কৃতিত্ব। কারণ তারা আমাদের ভালো লভ্যাংশ প্রদানের জন্য উৎসাহিত করেছেন। মিউচুয়াল ফান্ডগুলো এ ক্যাটাগরির বড় ও মাঝারি কোম্পানির শেয়ারের সিংহভাগ বিনিয়োগ করছে। আর ফান্ডগুলোর পোর্টফোলিওতে গড়ে ৩০ থেকে ৫০টি কোম্পানির শেয়ার থাকে। কাজেই একটি মিউচুয়াল ফান্ডে বিনিয়োগ করে ব্রড ডাইভারসিফিকেশন পাওয়া যাচ্ছে। যেটা নিজের পোর্টফোলিওতে বিনিয়োগ করে সম্ভব নয়।

তিনি আরও বলেন, ‘বাংলাদেশে সাসটেইনেবল ফাইন্যান্স শেয়ারবাজারে প্রসার করতে মিউচুয়াল ফান্ডের বড় ভূমিকা রয়েছে। এটা ভবিষ্যতেও থাকবে। যদি শেয়ারবাজারের সাসটেইনিবিলিটি চিন্তা করা যায়, তাহলে মিউচুয়াল ফান্ড প্রাতিষ্ঠানিক বিনিয়োগকারী হিসেবে গুরুত্বপূর্ণ ভূমিকা পালন করছে। একইভাবে ভবিষ্যতে মিউচুয়াল ফান্ড সেক্টর এ ভূমিকা পালন করে যাবে। ফলে শেয়ারবাজারে সাসটেইনেবল ইনভেস্টমেন্ট হিসেবে মিউচুয়াল ফান্ড ভালো ইনস্ট্রুমেন্ট, যা বিনিয়োগকারীদের ভালো রিটার্ন দিতে সক্ষম হবে। শেয়ারবাজারে সাসটেইনেবল ইনভেস্টমেন্টের শর্ত কোয়ালিটি ইনভেস্টমেন্ট বিবেচনায় মিউচুয়াল ফান্ড ভালো মার্ক পাবে। বর্তমানে ওপেন অ্যান্ড ও ক্লোজ অ্যান্ড মিউচুয়াল ফান্ডগুলো স্বচ্ছভাবে ডিসক্লোজার হচ্ছে। বিনিয়োগকারী একটু যাচাই-বাছাই করে দেখবেন, মিউচুয়াল ফান্ডের পোর্টফোলিওতে এ ক্যাটাগরির শেয়ারের প্রাধান্য সবচেয়ে বেশি। সাসটেইনেবিলিটির হিসেবে বাংলাদেশের শেয়ারবাজারে তালিকাভুক্ত বড় ও মাঝারি মূলধনের কোম্পানিতে গভর্নেন্স, বিজনেস সাসটেইনেবিলিটি, সিনএসআর সবচেয়ে বেশি পালন করা হয়ে থাকে।’

অনুষ্ঠানে ব্যাংক এশিয়ার ব্যবস্থাপনা পরিচালক আরফান আলি শেয়ারবাজারের উন্নয়নে এনবিএফআই ও মিউচুয়াল ফান্ড খাতকে নিয়ে একসঙ্গে কাজ করবেন বলে জানান।