ফরিদগঞ্জে থামছে না ড্রেজিং ব্যবসা, নাকি থামানো যাচ্ছে না!

চাঁদপুরের ফরিদগঞ্জের বিভিন্ন ইউনিয়নের আনাচে-কানাচে দেদারছে চলছে অবৈধ ড্রেজিং ও বালুর ব্যবসা। বিশেষ করে উপজেলা সদর থেকে দূরবর্তী এবং সীমান্তবর্তী ইউনিয়নগুলোতে বেপরোয়া হয়ে উঠেছে অবৈধ ড্রেজিং ব্যবসায়ীরা। ৩, ৪, ৫, ১০, ১১, ১২ ও ১৪ নং গোবিন্দপুর ইউনিয়নের বিভিন্ন এলাকায় ড্রেজার মালিক ও প্রভাবশালীদের অবৈধ ব্যবসায় হুমকির মুখে পড়েছে বিপুল সংখ্যক কৃষি জমি ও ঘরবাড়ি। ফলদ ও বনজ বাগানঘেঁষা কৃষি জমি থেকে অবৈধভাবে ড্রেজার দিয়ে বালু ও মাটি উত্তোলন করায় বাগানসহ কৃষি বাড়িঘর এখন ভাঙনের হুমকির মুখে। এতে করে কৃষি জমি নিয়ে শঙ্কায় দিন কাটছে ফরিদগঞ্জবাসীর। প্রভাবশালী ও রাজনৈতিক ছত্রছায়ায় হচ্ছে এ ড্রেজিং ব্যবসা।

প্রভাবশালীদের ভয়ে নামপ্রকাশে অনিচ্ছুক ক্ষতিগ্রস্ত এলাকাবাসী জানান, ১০ নং ইউনিয়নের বিশকাটালী গ্রামের ড্রেজারের মালিক জাকির ও প্রভাবশালী খোরশেদ আলম ড্রেজার মেশিন বসিয়ে ইরি-বোরো ধানের জমির পাশ থেকে বালু উত্তোলন করছে। এতে করে যেকোন সময় আমাদের কৃষি জমিগুলো ভাঙনের ঝুঁকিতে রয়েছে। কৃষি জমি রক্ষায় সংশ্লিষ্টদের দ্রুত হস্তক্ষেপ কামনা করছি আমরা।

একই চিত্র উপজেলার ৫ নং ইউনিয়নে। শ্রীকালি গ্রামে, প্রভাবশালীদের ছত্রছায়ায় ওই এলাকায় কয়েকটি ড্রেজার মেশিন ব্যবহার করে বালু বিক্রির অভিযোগ রয়েছে কবির হোসেন ও সেন্টুু নামক বালু ব্যবসায়ীদের বিরুদ্ধে। ওই এলাকায় বিভিন্ন অজুহাতে একাধিক ড্রেজার চলমান রয়েছে। পাশাপাশি অনেকগুলো পুকুর, ডোবা, জমি ভরাট করা অবস্থায় দেখা গেছে। অবৈধ ব্যবসা করে রাতারাতি বিত্তশালীদের খাতায় নাম লিখাচ্ছে রাজনৈতিক ছত্রছায়ায় ড্রেজিং ব্যবসায়ীরা। প্রশাসনও এ বিষয়ে পদক্ষেপ নিতে ইতস্তত বোধ করে অনেক সময়। ড্রেজিং ব্যবসায় সহযোগিতা করতে এবং ব্যবসার সঙ্গে সংশ্লিষ্টতায় কখনও কখনও গণমাধ্যম কর্মীদের নামও শোনা যায়। কোন কোন প্রতারক নিজেকে সংবাদকর্মী পরিচয় দিয়ে এ সকল কাজের সঙ্গে নিজেকে সম্পৃক্ত বা সুবিধা নিতেও শোনা যায়। আবার কোন কোন প্রতারক মিথ্যা তথ্য দিয়ে প্রশাসনের অনুমতি আছে এমন বানোয়াট কথা বলেও ব্যবসা পরিচালনা করে।

প্রশাসনের কার্যকর পদক্ষেপের মধ্যে ড্রেজার মেশিনের দুই-একটি পাইপ ভাঙা ও কখনও কখনও মেশিন নষ্ট করার মধ্যে সীমাবদ্ধ থাকে। কারও বিরুদ্ধে কোন মামলা, জরিমানা বা কঠোর আইনগত ব্যবস্থা নিতে দেখা যায় না। কখনও কখনও সংবাদ পাওয়ার পর ঘটনাস্থলে যেতে যেতে বেশ কয়েকদিন লেগে যায়। এতে মাটি বা বালু উত্তোলনের কাজ সমাপ্ত এবং ব্যবসায়ীদের অবৈধ কাক্সিক্ষত ফলাফল অর্জিত হয়ে যায়।

এ বিষয়ে ফরিদগঞ্জ উপজেলা নির্বাহী কর্মকর্তা শিউলী হরি জানান, ড্রেজার পরিচালনার কোন অনুমতি উপজেলা প্রশাসন দেয় না, দিতে পারে না। খোঁজ পেলেই আমরা ড্রেজারের সঙ্গে সংশ্লিষ্টদের বিরুদ্ধে মোবাইল কোর্ট পরিচালনা করি। তবে, এর বাইরেও আমাদের অনেক গুরুত্বপূর্ণ কাজ থাকে, কখনও কখনও কাজের চাপ এত বেশি থাকে যে, মোবাইল কোর্ট পরিচালনা করার সুযোগ পাওয়া যায় না। এ ধরনের কাজের সঙ্গে সম্পৃক্তদের ছাড় দেয়া হবে না। যারা ড্রেজার পরিচালনা করে তাদের বিরুদ্ধে আইনগত ব্যবস্থা নেয়া হবে।

রবিবার, ১০ অক্টোবর ২০২১ , ২৫ আশ্বিন ১৪২৮ ০২ রবিউল আউয়াল ১৪৪৩

ফরিদগঞ্জে থামছে না ড্রেজিং ব্যবসা, নাকি থামানো যাচ্ছে না!

কামরুজ্জামান, ফরিদগঞ্জ (চাঁদপুর)

চাঁদপুরের ফরিদগঞ্জের বিভিন্ন ইউনিয়নের আনাচে-কানাচে দেদারছে চলছে অবৈধ ড্রেজিং ও বালুর ব্যবসা। বিশেষ করে উপজেলা সদর থেকে দূরবর্তী এবং সীমান্তবর্তী ইউনিয়নগুলোতে বেপরোয়া হয়ে উঠেছে অবৈধ ড্রেজিং ব্যবসায়ীরা। ৩, ৪, ৫, ১০, ১১, ১২ ও ১৪ নং গোবিন্দপুর ইউনিয়নের বিভিন্ন এলাকায় ড্রেজার মালিক ও প্রভাবশালীদের অবৈধ ব্যবসায় হুমকির মুখে পড়েছে বিপুল সংখ্যক কৃষি জমি ও ঘরবাড়ি। ফলদ ও বনজ বাগানঘেঁষা কৃষি জমি থেকে অবৈধভাবে ড্রেজার দিয়ে বালু ও মাটি উত্তোলন করায় বাগানসহ কৃষি বাড়িঘর এখন ভাঙনের হুমকির মুখে। এতে করে কৃষি জমি নিয়ে শঙ্কায় দিন কাটছে ফরিদগঞ্জবাসীর। প্রভাবশালী ও রাজনৈতিক ছত্রছায়ায় হচ্ছে এ ড্রেজিং ব্যবসা।

প্রভাবশালীদের ভয়ে নামপ্রকাশে অনিচ্ছুক ক্ষতিগ্রস্ত এলাকাবাসী জানান, ১০ নং ইউনিয়নের বিশকাটালী গ্রামের ড্রেজারের মালিক জাকির ও প্রভাবশালী খোরশেদ আলম ড্রেজার মেশিন বসিয়ে ইরি-বোরো ধানের জমির পাশ থেকে বালু উত্তোলন করছে। এতে করে যেকোন সময় আমাদের কৃষি জমিগুলো ভাঙনের ঝুঁকিতে রয়েছে। কৃষি জমি রক্ষায় সংশ্লিষ্টদের দ্রুত হস্তক্ষেপ কামনা করছি আমরা।

একই চিত্র উপজেলার ৫ নং ইউনিয়নে। শ্রীকালি গ্রামে, প্রভাবশালীদের ছত্রছায়ায় ওই এলাকায় কয়েকটি ড্রেজার মেশিন ব্যবহার করে বালু বিক্রির অভিযোগ রয়েছে কবির হোসেন ও সেন্টুু নামক বালু ব্যবসায়ীদের বিরুদ্ধে। ওই এলাকায় বিভিন্ন অজুহাতে একাধিক ড্রেজার চলমান রয়েছে। পাশাপাশি অনেকগুলো পুকুর, ডোবা, জমি ভরাট করা অবস্থায় দেখা গেছে। অবৈধ ব্যবসা করে রাতারাতি বিত্তশালীদের খাতায় নাম লিখাচ্ছে রাজনৈতিক ছত্রছায়ায় ড্রেজিং ব্যবসায়ীরা। প্রশাসনও এ বিষয়ে পদক্ষেপ নিতে ইতস্তত বোধ করে অনেক সময়। ড্রেজিং ব্যবসায় সহযোগিতা করতে এবং ব্যবসার সঙ্গে সংশ্লিষ্টতায় কখনও কখনও গণমাধ্যম কর্মীদের নামও শোনা যায়। কোন কোন প্রতারক নিজেকে সংবাদকর্মী পরিচয় দিয়ে এ সকল কাজের সঙ্গে নিজেকে সম্পৃক্ত বা সুবিধা নিতেও শোনা যায়। আবার কোন কোন প্রতারক মিথ্যা তথ্য দিয়ে প্রশাসনের অনুমতি আছে এমন বানোয়াট কথা বলেও ব্যবসা পরিচালনা করে।

প্রশাসনের কার্যকর পদক্ষেপের মধ্যে ড্রেজার মেশিনের দুই-একটি পাইপ ভাঙা ও কখনও কখনও মেশিন নষ্ট করার মধ্যে সীমাবদ্ধ থাকে। কারও বিরুদ্ধে কোন মামলা, জরিমানা বা কঠোর আইনগত ব্যবস্থা নিতে দেখা যায় না। কখনও কখনও সংবাদ পাওয়ার পর ঘটনাস্থলে যেতে যেতে বেশ কয়েকদিন লেগে যায়। এতে মাটি বা বালু উত্তোলনের কাজ সমাপ্ত এবং ব্যবসায়ীদের অবৈধ কাক্সিক্ষত ফলাফল অর্জিত হয়ে যায়।

এ বিষয়ে ফরিদগঞ্জ উপজেলা নির্বাহী কর্মকর্তা শিউলী হরি জানান, ড্রেজার পরিচালনার কোন অনুমতি উপজেলা প্রশাসন দেয় না, দিতে পারে না। খোঁজ পেলেই আমরা ড্রেজারের সঙ্গে সংশ্লিষ্টদের বিরুদ্ধে মোবাইল কোর্ট পরিচালনা করি। তবে, এর বাইরেও আমাদের অনেক গুরুত্বপূর্ণ কাজ থাকে, কখনও কখনও কাজের চাপ এত বেশি থাকে যে, মোবাইল কোর্ট পরিচালনা করার সুযোগ পাওয়া যায় না। এ ধরনের কাজের সঙ্গে সম্পৃক্তদের ছাড় দেয়া হবে না। যারা ড্রেজার পরিচালনা করে তাদের বিরুদ্ধে আইনগত ব্যবস্থা নেয়া হবে।