সাক্ষাৎকার

আজ শেষ হচ্ছে ‘গঙ্গা-যমুনা সাংস্কৃতিক উৎসব-২০২১’। এই উৎসবের নানা দিক নিয়ে সংবাদের সঙ্গে কথা বলেছেন উৎসব পর্ষদের আহ্বায়ক ও সম্মিলিত সাংস্কৃতিক জোটের সভাপতি গোলাম কুদ্দুছ। সাক্ষাৎকার নিয়েছেন নিথর মাহবুব

মহামারী সংক্রমণের পরে এই উৎসবে কেমন সাড়া পাচ্ছেন?

বর্তমান সরকারের নানাবিধ তৎপরতা এবং জনগণের সচেতনতার কারণে করোনা পরিস্থিতি যখন কিছুটা নিয়ন্ত্রণে তখন স্বাধীনতার সুবর্ণজয়ন্তী এবং বঙ্গবন্ধুর জন্মশতবার্ষিকীকে উপজীব্য করে করে গঙ্গা-যমুনা সাংস্কৃতিক পর্ষদ ভয়কে জয় করে বড় ধরনের একটা চ্যালেঞ্জ নিয়ে এ উৎসবের আয়োজন করেছে। উৎসবকে কেন্দ্র করে সাংস্কৃতিক কর্মীদের মিলনমেলায় পরিণত হয়েছে শিল্পকলা একাডেমি প্রাঙ্গণ। এই উৎসব ঢাকার সংস্কৃতি অঙ্গনে প্রাণ ফিরিয়ে আনার পাশাপাশি সারা দেশের সাংস্কৃতিক অঙ্গনেরও জাগরণ ঘটিয়েছে। এই উৎসবে সাংস্কৃতিকবিষয়ক মন্ত্রণালয় এবং বাংলাদেশ শিল্পকলা একাডেমি আমাদের সহায়তা করেছে। উৎসব উৎসর্গ করা হয়েছে বঙ্গবন্ধু শেখ মুজিবুর রহমানকে।

মিলনায়তনে দর্শক উপস্থিতি কেমন?

দর্শক ভালোই হচ্ছে। অভূতপূর্ব সাড়া পাচ্ছি আমরা। কিন্তু আমাদের নাটকের যারা দর্শক তারা অধিকাংশই মধ্যবিত্ত ও নিম্নœ মধ্যবিত্ত শ্রেণীর। করোনা মহমারীর এই সংকটের পর এই শ্রেণীটা এমনিতেই টানাপোড়েনের মধ্যে আছে, তাই অনেকের পক্ষে টিকিট কেটে নাটক দেখা সম্ভব হচ্ছে না।

উৎসবের আয়-ব্যয় নিয়ে যদি বলতেন

১২ দিনব্যাপী আয়োজনে এবার ভারতের অংশগ্রহণ না থাকলেও আমাদের ক্ষুদ্র নৃগোষ্ঠীর নানা সংস্কৃতির নানা ভাষার অনুষ্ঠান পরিবেশনের মাধ্যমে বৈচিত্র্য আনার চেষ্টা করেছি। সারা দেশের বিভিন্ন অঞ্চলের ১৪০টি সাংস্কৃতিক সংগঠনের প্রায় সাড়ে তিন হাজার শিল্পী ও কলাকুশলীর অংশগ্রহণ রয়েছে এখানে। শিল্প-সংস্কৃতির প্রায় সব ধারার প্রতিনিধিত্ব আমরা রাখার চেষ্টা করেছি প্রদর্শনীগুলোতে। শিল্পী বা সংগঠনগুলোকে শুধু তাদের খরচের টাকাটা দিচ্ছি। তারপরেও প্রায় ২২ লাখ টাকা খরচ হচ্ছে। সাংস্কৃতিকবিষয়ক মন্ত্রণালয় থেকে সাড়ে ১১ লাখ টাকা পেয়েছি, টিকিট বিক্রি করে হয়ত তিন সাড়ে তিন লাখ টাকা আসবে।

রাষ্ট্রকে শিল্প-সাংস্কৃতিক

খাতে বিনিয়োগ

করতে হবে

গোলাম কুদ্দুস

ভারতের দল না থাকায় খরচ তো কমার কথা

করোনার পরে মেডিকেল ভিসা ছাড়া এখনও অন্য কোন ভিসা চালু হয়নি বলে ভারতের শিল্পীদের আনা সম্ভব হয়নি। ভারতের দলগুলোর জন্য প্রতি বছর সাত-আট লাখ টাকা খরচ হয়। কিন্তু তখন ভারতীয় হাইকমিশনের আর্থিক সহযোগিতা পাই। অপরদিকে বড় মিলনায়তনে তিন থেকে চারটা শো হাউসফুল দর্শক হয়। তবে কোন সংকট না থাকলে সামনে এই উৎসব নিয়মিত ভারতের শিল্পীদের নিয়েই হবে।

মহামারীর পর অনেক দলই প্রস্তুত না, এই নিয়ে কোন সংকট তৈরি হয়েছে?

হে, এত বড় একটা সংকট যাবার পর অনেক দল ও শিল্পীরা এখনও প্রস্তুত না। তাছাড়া ঢাকা থেকে অনেক সাংস্কৃতিক কর্মী গ্রামে চলে গেছে, অনেকেই হয়ত আর ঢাকায় ফিরবে না। এমনও হয়েছে দলের নাম ছাপিয়েছি কিন্তু সংকটের কারণে পরে পরিবর্তন আনতে হয়েছে। দলগুলোর এমন সংকট নিরসনের জন্য আমরা নানা ধরনের পদক্ষেপ নিচ্ছি। তবে শুধু অনুদান আর মিলনায়তনের ভাড়া মওকুফ করে কাজ হবে না, রাষ্ট্রকে শিল্প-সংস্কৃতির খাতে বিনিয়োগ করতে হবে। তাহলেই একটি সংস্কৃতির জাগরণ ঘটবে। সাধীনতার সুবর্ণজয়ন্তীকে সামনে রেখে অসাম্প্রদায়িক বাংলাদেশ গড়ে তুলতে তরুণ প্রজন্মকে উদ্বুদ্ধ করা যাবে।

মঙ্গলবার, ১২ অক্টোবর ২০২১ , ২৭ আশ্বিন ১৪২৮ ০৪ রবিউল আউয়াল ১৪৪৩

সাক্ষাৎকার

image

আজ শেষ হচ্ছে ‘গঙ্গা-যমুনা সাংস্কৃতিক উৎসব-২০২১’। এই উৎসবের নানা দিক নিয়ে সংবাদের সঙ্গে কথা বলেছেন উৎসব পর্ষদের আহ্বায়ক ও সম্মিলিত সাংস্কৃতিক জোটের সভাপতি গোলাম কুদ্দুছ। সাক্ষাৎকার নিয়েছেন নিথর মাহবুব

মহামারী সংক্রমণের পরে এই উৎসবে কেমন সাড়া পাচ্ছেন?

বর্তমান সরকারের নানাবিধ তৎপরতা এবং জনগণের সচেতনতার কারণে করোনা পরিস্থিতি যখন কিছুটা নিয়ন্ত্রণে তখন স্বাধীনতার সুবর্ণজয়ন্তী এবং বঙ্গবন্ধুর জন্মশতবার্ষিকীকে উপজীব্য করে করে গঙ্গা-যমুনা সাংস্কৃতিক পর্ষদ ভয়কে জয় করে বড় ধরনের একটা চ্যালেঞ্জ নিয়ে এ উৎসবের আয়োজন করেছে। উৎসবকে কেন্দ্র করে সাংস্কৃতিক কর্মীদের মিলনমেলায় পরিণত হয়েছে শিল্পকলা একাডেমি প্রাঙ্গণ। এই উৎসব ঢাকার সংস্কৃতি অঙ্গনে প্রাণ ফিরিয়ে আনার পাশাপাশি সারা দেশের সাংস্কৃতিক অঙ্গনেরও জাগরণ ঘটিয়েছে। এই উৎসবে সাংস্কৃতিকবিষয়ক মন্ত্রণালয় এবং বাংলাদেশ শিল্পকলা একাডেমি আমাদের সহায়তা করেছে। উৎসব উৎসর্গ করা হয়েছে বঙ্গবন্ধু শেখ মুজিবুর রহমানকে।

মিলনায়তনে দর্শক উপস্থিতি কেমন?

দর্শক ভালোই হচ্ছে। অভূতপূর্ব সাড়া পাচ্ছি আমরা। কিন্তু আমাদের নাটকের যারা দর্শক তারা অধিকাংশই মধ্যবিত্ত ও নিম্নœ মধ্যবিত্ত শ্রেণীর। করোনা মহমারীর এই সংকটের পর এই শ্রেণীটা এমনিতেই টানাপোড়েনের মধ্যে আছে, তাই অনেকের পক্ষে টিকিট কেটে নাটক দেখা সম্ভব হচ্ছে না।

উৎসবের আয়-ব্যয় নিয়ে যদি বলতেন

১২ দিনব্যাপী আয়োজনে এবার ভারতের অংশগ্রহণ না থাকলেও আমাদের ক্ষুদ্র নৃগোষ্ঠীর নানা সংস্কৃতির নানা ভাষার অনুষ্ঠান পরিবেশনের মাধ্যমে বৈচিত্র্য আনার চেষ্টা করেছি। সারা দেশের বিভিন্ন অঞ্চলের ১৪০টি সাংস্কৃতিক সংগঠনের প্রায় সাড়ে তিন হাজার শিল্পী ও কলাকুশলীর অংশগ্রহণ রয়েছে এখানে। শিল্প-সংস্কৃতির প্রায় সব ধারার প্রতিনিধিত্ব আমরা রাখার চেষ্টা করেছি প্রদর্শনীগুলোতে। শিল্পী বা সংগঠনগুলোকে শুধু তাদের খরচের টাকাটা দিচ্ছি। তারপরেও প্রায় ২২ লাখ টাকা খরচ হচ্ছে। সাংস্কৃতিকবিষয়ক মন্ত্রণালয় থেকে সাড়ে ১১ লাখ টাকা পেয়েছি, টিকিট বিক্রি করে হয়ত তিন সাড়ে তিন লাখ টাকা আসবে।

রাষ্ট্রকে শিল্প-সাংস্কৃতিক

খাতে বিনিয়োগ

করতে হবে

গোলাম কুদ্দুস

ভারতের দল না থাকায় খরচ তো কমার কথা

করোনার পরে মেডিকেল ভিসা ছাড়া এখনও অন্য কোন ভিসা চালু হয়নি বলে ভারতের শিল্পীদের আনা সম্ভব হয়নি। ভারতের দলগুলোর জন্য প্রতি বছর সাত-আট লাখ টাকা খরচ হয়। কিন্তু তখন ভারতীয় হাইকমিশনের আর্থিক সহযোগিতা পাই। অপরদিকে বড় মিলনায়তনে তিন থেকে চারটা শো হাউসফুল দর্শক হয়। তবে কোন সংকট না থাকলে সামনে এই উৎসব নিয়মিত ভারতের শিল্পীদের নিয়েই হবে।

মহামারীর পর অনেক দলই প্রস্তুত না, এই নিয়ে কোন সংকট তৈরি হয়েছে?

হে, এত বড় একটা সংকট যাবার পর অনেক দল ও শিল্পীরা এখনও প্রস্তুত না। তাছাড়া ঢাকা থেকে অনেক সাংস্কৃতিক কর্মী গ্রামে চলে গেছে, অনেকেই হয়ত আর ঢাকায় ফিরবে না। এমনও হয়েছে দলের নাম ছাপিয়েছি কিন্তু সংকটের কারণে পরে পরিবর্তন আনতে হয়েছে। দলগুলোর এমন সংকট নিরসনের জন্য আমরা নানা ধরনের পদক্ষেপ নিচ্ছি। তবে শুধু অনুদান আর মিলনায়তনের ভাড়া মওকুফ করে কাজ হবে না, রাষ্ট্রকে শিল্প-সংস্কৃতির খাতে বিনিয়োগ করতে হবে। তাহলেই একটি সংস্কৃতির জাগরণ ঘটবে। সাধীনতার সুবর্ণজয়ন্তীকে সামনে রেখে অসাম্প্রদায়িক বাংলাদেশ গড়ে তুলতে তরুণ প্রজন্মকে উদ্বুদ্ধ করা যাবে।