উদাম গায়ে স্বাস্থ্যকেন্দ্রে টিকা প্রদান

পরনে শুধু প্যান্ট। শার্ট খুলে রেখেছেন। এভাবে উদাম গায়ে নারীদের করোনার টিকা দিচ্ছিলেন কালীচান্দু উপজেলা কমপ্লেক্সের মেডিকেল টেকনোলজিস্ট শাহিদুল ইসলাম। গত রোববার দুপুরে এমনই চিত্র দেখে এলাকায় চাঞ্চল্যের সৃষ্টি হয়েছে। ঘটনাটি ঝিনাইদহের কালীগঞ্জ উপজেলা স্বাস্থ্য কমপ্লেক্সের। এলাকাবাসীর অভিযোগ উনি কাউকে তোয়াক্কা করেন না।

সরেজমিন দেখা যায়, রোববার দুপুরের দিকে হাসপাতালের মধ্যে করোনার টিকা প্রদান করা হচ্ছিল। নারী-পুরুষের কোন আলাদা বুথ ছিল না। এ সময় একজন নার্স ও কালীগঞ্জ উপজেলা স্বাস্থ্য কমপ্লেক্সের মেডিকেল টেকনোলজিস্ট (ইপিআই) শহিদুল ইসলাম একদম খালি গায়ে নারীদের টিকা প্রদান করছিলেন। এ সময় বেশ কয়েকজন নারী অস্বস্তিতে পড়েন। টিকা দেয়া শেষে কেউ কেউ বলছেন, সরকারি হাসপাতালে এভাবে খালি শরীরে টিকা দেয়া এর আগে কখনও দেখিনি। শুধু এটাই নয়, শহিদুল ইসলাম টিকাকেন্দ্রের স্থানে চেয়ারে বসেই সিগারেট ফুঁকছিলেন। এ সময় তার পাশে টিকা প্রদানে সহায়তাকারী রেড ক্রিসেন্টসহ হাসপাতালের কর্মচারীরা উপস্থিত ছিলেন। ধূমপান করার বিষয়টি পাশেই টিকা প্রদান করার দৃশ্যের ভিডিও দেখলে প্রমাণ মিলবে।

করোনা টিকা নিতে আসা একাধিক ব্যক্তি জানান, এ কেমন অভদ্রতা। একটি সরকারি হাসপাতালের চিত্র যদি এমন হয়, তাহলে সেখানে সেবার মান নিয়েও অনুমান করা যায়। নাম প্রকাশে অনিচ্ছুক হাসপাতালের এক কর্মচারী জানান, ওইদিন সকাল সাড়ে ১০টার পর থেকে প্রায় দুপুর ১টা পর্যন্ত তিনি খালি শরীরে টিকা প্রদান করেছেন। এর মধ্যে তিনি ওই চেয়ারে বসেই সিগারেট ধরিয়ে ধূমপান করেছেন, যা একেবারেই মেনে নেয়া যায় না। আর একজন ব্যক্তির জন্য গোটা স্টাফের বদনাম হতে পারে না।

হাসপাতালে আসা রিওন হোসেন নামে একজন জানান, একজন সরকারি কর্মচারী কোনভাবেই খালি শরীরে দায়িত্ব পালন করতে পারেন না। তারপর আবার নারীদের করোনার টিকা প্রদান করছেন। আবার তিনি টিকাকেন্দ্রের চেয়ারে বসেই সিগারেট টানছেন। তাহলে এখানে কি জবাবদিহিতা বলে কিছুই নেই। উনি যতবড় প্রভাবশালী হোন না কেন, উনার খুঁটির জোর যতই শক্ত হোক- এ ঘটনায় তার উপযুক্ত শাস্তি হওয়া উচিত।

টিকা নিতে আসা স্বপ্না খাতুন নামের এক নারী জানান, তাকে খালি গায়ে এক ব্যক্তি টিকা প্রদান করেছেন। এটা বিরাট অস্বস্তিকর। একদমই দায়িত্ব জ্ঞানহীনতার মতো কাজ। আসলে উনি নিজেই হয়তো মানসিকভাবে অসুস্থ। উনার মনে হয় আগে চিকিৎসা করানোর দরকার।

রিতা রানী নামের অন্য এক নারী জানান, সরকারি হাসপাতালে খালি শরীরে দায়িত্ব পালন এই প্রথম দেখেছেন। এমন খালি শরীরে টিকা প্রদান করার বিধান যদি না থাকে, তাহলে উপযুক্ত শাস্তি হওয়া উচিত।

এ ব্যাপারে কালীগঞ্জ উপজেলা স্বাস্থ্য কমপ্লেক্সের মেডিকেল টেকনোলজিস্ট (ইপিআই) শহিদুল ইসলামের সঙ্গে কথা বললে তিনি জানান, কাজের চাপে গায়ের শার্ট ঘেমে ভিজে গিয়েছিল। তিনি খুলে রৌদ্রে রেখেছিলেন। এ জন্য খালি শরীরে টিকা প্রদান করেছি। তবে তিনি স্বীকার করেন, যখন রোগীর চাপ কম ছিল তখন একটু দূরে বসে সিগারেট ধরিয়ে ধূমপান করেছি। তবে আমার কাজটা ঠিক হয়নি।

কালীগঞ্জ উপজেলা স্বাস্থ্য কমপ্লেক্সের স্বাস্থ্য ও পরিবার-পরিকল্পনা কর্মকর্তা (ভারপ্রাপ্ত) ডা. অরুন কুমার বলেন, অফিসে খালি গায়ে দায়িত্ব পালন করার কোন নিয়ম নেই। চাকরিবিধির অমান্য করলেই শাস্তি।

মঙ্গলবার, ১২ অক্টোবর ২০২১ , ২৭ আশ্বিন ১৪২৮ ০৪ রবিউল আউয়াল ১৪৪৩

উদাম গায়ে স্বাস্থ্যকেন্দ্রে টিকা প্রদান

সাবজাল হোসেন, কালীগঞ্জ (ঝিনাইদহ)

image

মেডিকেল টেকনোলজিস্ট শাহিদুল ইসলাম

পরনে শুধু প্যান্ট। শার্ট খুলে রেখেছেন। এভাবে উদাম গায়ে নারীদের করোনার টিকা দিচ্ছিলেন কালীচান্দু উপজেলা কমপ্লেক্সের মেডিকেল টেকনোলজিস্ট শাহিদুল ইসলাম। গত রোববার দুপুরে এমনই চিত্র দেখে এলাকায় চাঞ্চল্যের সৃষ্টি হয়েছে। ঘটনাটি ঝিনাইদহের কালীগঞ্জ উপজেলা স্বাস্থ্য কমপ্লেক্সের। এলাকাবাসীর অভিযোগ উনি কাউকে তোয়াক্কা করেন না।

সরেজমিন দেখা যায়, রোববার দুপুরের দিকে হাসপাতালের মধ্যে করোনার টিকা প্রদান করা হচ্ছিল। নারী-পুরুষের কোন আলাদা বুথ ছিল না। এ সময় একজন নার্স ও কালীগঞ্জ উপজেলা স্বাস্থ্য কমপ্লেক্সের মেডিকেল টেকনোলজিস্ট (ইপিআই) শহিদুল ইসলাম একদম খালি গায়ে নারীদের টিকা প্রদান করছিলেন। এ সময় বেশ কয়েকজন নারী অস্বস্তিতে পড়েন। টিকা দেয়া শেষে কেউ কেউ বলছেন, সরকারি হাসপাতালে এভাবে খালি শরীরে টিকা দেয়া এর আগে কখনও দেখিনি। শুধু এটাই নয়, শহিদুল ইসলাম টিকাকেন্দ্রের স্থানে চেয়ারে বসেই সিগারেট ফুঁকছিলেন। এ সময় তার পাশে টিকা প্রদানে সহায়তাকারী রেড ক্রিসেন্টসহ হাসপাতালের কর্মচারীরা উপস্থিত ছিলেন। ধূমপান করার বিষয়টি পাশেই টিকা প্রদান করার দৃশ্যের ভিডিও দেখলে প্রমাণ মিলবে।

করোনা টিকা নিতে আসা একাধিক ব্যক্তি জানান, এ কেমন অভদ্রতা। একটি সরকারি হাসপাতালের চিত্র যদি এমন হয়, তাহলে সেখানে সেবার মান নিয়েও অনুমান করা যায়। নাম প্রকাশে অনিচ্ছুক হাসপাতালের এক কর্মচারী জানান, ওইদিন সকাল সাড়ে ১০টার পর থেকে প্রায় দুপুর ১টা পর্যন্ত তিনি খালি শরীরে টিকা প্রদান করেছেন। এর মধ্যে তিনি ওই চেয়ারে বসেই সিগারেট ধরিয়ে ধূমপান করেছেন, যা একেবারেই মেনে নেয়া যায় না। আর একজন ব্যক্তির জন্য গোটা স্টাফের বদনাম হতে পারে না।

হাসপাতালে আসা রিওন হোসেন নামে একজন জানান, একজন সরকারি কর্মচারী কোনভাবেই খালি শরীরে দায়িত্ব পালন করতে পারেন না। তারপর আবার নারীদের করোনার টিকা প্রদান করছেন। আবার তিনি টিকাকেন্দ্রের চেয়ারে বসেই সিগারেট টানছেন। তাহলে এখানে কি জবাবদিহিতা বলে কিছুই নেই। উনি যতবড় প্রভাবশালী হোন না কেন, উনার খুঁটির জোর যতই শক্ত হোক- এ ঘটনায় তার উপযুক্ত শাস্তি হওয়া উচিত।

টিকা নিতে আসা স্বপ্না খাতুন নামের এক নারী জানান, তাকে খালি গায়ে এক ব্যক্তি টিকা প্রদান করেছেন। এটা বিরাট অস্বস্তিকর। একদমই দায়িত্ব জ্ঞানহীনতার মতো কাজ। আসলে উনি নিজেই হয়তো মানসিকভাবে অসুস্থ। উনার মনে হয় আগে চিকিৎসা করানোর দরকার।

রিতা রানী নামের অন্য এক নারী জানান, সরকারি হাসপাতালে খালি শরীরে দায়িত্ব পালন এই প্রথম দেখেছেন। এমন খালি শরীরে টিকা প্রদান করার বিধান যদি না থাকে, তাহলে উপযুক্ত শাস্তি হওয়া উচিত।

এ ব্যাপারে কালীগঞ্জ উপজেলা স্বাস্থ্য কমপ্লেক্সের মেডিকেল টেকনোলজিস্ট (ইপিআই) শহিদুল ইসলামের সঙ্গে কথা বললে তিনি জানান, কাজের চাপে গায়ের শার্ট ঘেমে ভিজে গিয়েছিল। তিনি খুলে রৌদ্রে রেখেছিলেন। এ জন্য খালি শরীরে টিকা প্রদান করেছি। তবে তিনি স্বীকার করেন, যখন রোগীর চাপ কম ছিল তখন একটু দূরে বসে সিগারেট ধরিয়ে ধূমপান করেছি। তবে আমার কাজটা ঠিক হয়নি।

কালীগঞ্জ উপজেলা স্বাস্থ্য কমপ্লেক্সের স্বাস্থ্য ও পরিবার-পরিকল্পনা কর্মকর্তা (ভারপ্রাপ্ত) ডা. অরুন কুমার বলেন, অফিসে খালি গায়ে দায়িত্ব পালন করার কোন নিয়ম নেই। চাকরিবিধির অমান্য করলেই শাস্তি।