সাহিত্যের ভাষা, ভাব ও রচনারীতি প্রসঙ্গে

সরকার মাসুদ

ভাষা ও ভাব দুটি আলাদা জিনিস। ভাষার ওপর সওয়ার হয়েই ভাব নিজের চেহারা দেখিয়ে থাকে। কিন্তু যা নিয়ে লেখা হচ্ছে সে সম্বন্ধে যদি পরিষ্কার ধারণা না থাকে ভাষা গোলমেলে হতে বাধ্য। আমি একবার অনূর্ধ্ব চল্লিশ পাঁচজন কবিতাকর্মীকে তাদের সদ্য প্রকাশিত কবিতার থিম সম্বন্ধে প্রশ্ন করেছিলাম। একজনও সদুত্তর দিতে পারেননি। কী সব কথা বলেছেন যার কোনো মানে দাঁড়ায় না।

আবার এমনও হতে দেখা যায় প্রায়ই- লেখার বিষয়বস্তু বেশ পরিষ্কার কিন্তু ভাষাটা জুতসই নয়। দৃষ্টান্ত হিসেবে তিন প্রজন্মের পাঁচজন কবির কথা বলবো- সাইয়িদ আতীকুল্লাহ, শামসুল ইসলাম, সমুদ্র গুপ্ত, হাবীবুল্লাহ সিরাজী, রুদ্র মুহম্মদ শহীদুল্লাহ। বিচ্ছিন্নভাবে এদেরও অল্প কিছু ভালো কবিতা আছে। তবে ‘কবির ভাবমূর্তি’ বলতে যা বোঝায় তা এরা অর্জন করতে পারেননি। হ্যাঁ, রুদ্রর এক ধরনের কবি ইমেজ আছে বটে! তা শক্তিশালী বলে মনে হয় না। কবিসুলভ তেজ, জেদ, নীতিবোধ, সহমর্মিতা তার মধ্যে ছিল। এসব গুণকে, বক্তব্যের স্পষ্টতার মূল্যকে তিনি নষ্ট করেছেন প্রকাশভঙ্গির স্থূলতার মাধ্যমে। তার বলবার ধরন আধুনিক কবিতার ভাষা-অভিব্যক্তির সগোত্র নয়।

বলবার মতো কোনো কথা বা ভাব যদি সুরুচিসম্মতভাবে প্রকাশ করা সম্ভব হয়, যদি লেখকের থাকে ভাষার প্রয়োগসংক্রান্ত পরিচ্ছন্ন ধারণা- তাহলে সেই রচনাকে, কবিতা বা গদ্য যা-ই হোক, আমাদের গ্রহণ না করে উপায় নেই। অথচ আমি দেখেছি- অনেকেই (তার ভেতর পঞ্চাশোর্ধ্ব কবিরাও আছেন) বলেন যে, কবিতার আবার বিষয়বস্তু কী? যেন-বা কাব্য হাওয়ার ওপর ভেসে থাকে, তার কিছু বলার নেই; তার দাঁড়াবার জায়গা নেই। যে ছন্নছাড়া নবীন কবিরা মনে করেন ‘কবিতার আবার থিম কী’ তারা-কি জানেন কাব্য নামধারী যে টেক্সটটি কেবল অনন্য কিছু ভঙ্গি প্রকাশ করছে শৈলীর ওই অনন্যতাই তার থিম। তবে সে রকম কবিতাও কিন্তু আমরা রচিত হতে দেখিনি সম্প্রতি। পুষ্টিশাস্ত্র পড়ে জানা যায় কোন খাদ্যে কী কী ভিটামিন আছে আর তাদের উপকারিতার ক্ষেত্র কোনগুলো। লিখতে শুরু করার আগে লেখা সম্পর্কিত জ্ঞান অর্জন সম্ভব নয়। লেখার ভেতর দিয়ে এগোতে এগোতে, নানা সমস্যা মোকাবেলা করতে করতে একজন লেখক সাহিত্যিক হয়ে ওঠেন; কবিতাকর্মী হয়ে ওঠেন কবি। কিন্তু আমরা দেখেছি চল্লিশ/পঞ্চাশ বছর লেখায় লিপ্ত থাকার পরেও অসংখ্য ব্যক্তি ‘লেখক’ হতে পারেননি, যদিও বহুবার লেখা ছাপা হওয়ার কারণে তাদেরকে কবি বা কথাসাহিত্যিক হিসেবে লোকে চেনেন।

কেন এমনটা ঘটে? ঘটে এজন্য যে, লেখালেখি ব্যাপারটা তারা বুঝে উঠতে পারেননি। অনেকেই নিয়মিত বা অনিয়মিতভাবে পড়াশোনাও করেন। তাদের কারও কারও পাঠরুচিও প্রশংসনীয়। তবু ভাবের উপযোগী ভাষা, দৃষ্টি ও কল্পনার অভাবে তারা লেখক হিসেবে ম্রিয়মাণ। এখানে এসে যাচ্ছে প্রতিভার প্রশ্নটি। লেখার প্রতিভা যার আছে তিনিই তো সচেতন পাঠে লিপ্ত হন; বুঝতে চান ভাষার গঠন প্রক্রিয়া অভিজ্ঞতা ও ব্যক্তির নৈকট্য/দূরত্ব, অনুভবের পলায়নপরতা প্রভৃতি।

একসময় মনে করা হতো নিত্যব্যবহার্য ভাষা সাহিত্যের ভাষা হতে পারে না। এটা যে শুধু বঙ্কিম, শরৎ-যুগেই ভাবা হতো তা নয়, তিরিশের সুদীন্দ্রনাথ, বিষ্ণু, মানিকরাও কমবেশি এমনই ভাবতেন। পরে মানিক চক্রবর্তী, তারাপদ রায়, সন্দীপন চট্টোপাধ্যায়, ভাস্কর চক্রবর্তী, মুস্তফা আনোয়ার, আলতাফ হোসেন প্রমুখের গল্পে ও কবিতায় আমরা দেখলাম ‘প্রতিদিনের ভাষা’। এ সত্ত্বেও আমি বলবো, সাহিত্যের ভাষা ও প্রতিদিনের ভাষা একরকম নয়। দৈনন্দিন জীবনে আমরা যখন ‘আগুন’ শব্দটা উচ্চারণ করি তখন তার দ্বারা আগুন ছাড়া অন্য কিছু বোঝাই না। কিন্তু যখন কবিতায় বলি ‘আগুন আমাকে হাঁটায় অন্ধকারে’ তখন ওই ‘আগুন’ দ্বারা অন্তর্যন্ত্রণা, বিরহ, বিচ্ছেদ, ক্ষোভ, ক্রোধ... এরকম অনেক কিছুই বোঝাই। এভাবে প্রতীকের বিশেষ মর্যাদা লাভ করে সাহিত্যের ভাষা অনন্য হয়ে ওঠে।

অভিজ্ঞতা ও অভিজ্ঞতাপ্রসূত অনুভূতি থেকে ‘ভাব’ আলাদা। লেখক মনের প্রতিক্রিয়া থেকে অভিজ্ঞতা সঞ্চিত হয়। সময় ও সমাজের সঙ্গে সেই অভিজ্ঞতার সম্পর্ক অনুধাবনের ভেতর দিয়ে আমরা ওই ‘ভাব’-এর প্রকৃতি ও গুরুত্ব নির্ণয় করতে পারি।

সুতরাং কোনো লেখকের কৃতির সঙ্গে ‘অভিজ্ঞতা’ শব্দটি যুক্ত হওয়ার গভীর তাৎপর্য আছে। পাঠক বা সমালোচক যখন একটি বিশেষ লেখা সম্বন্ধে ‘মর্মস্পর্শী’ শব্দটি ব্যবহার করেন তিনি কিন্তু সেই লেখাটিতে প্রযুক্ত ভাষাদক্ষতার কথাই পরোক্ষভাবে বলেন। একটি কবিতা বা একটি ছোটগল্পের জটিল ভাবকে কী ধরনের ভাষার মাধ্যমে হৃদয়গ্রাহী করে তোলা সম্ভব- এ চিন্তার প্রয়োজনীয়তা আছে। ডিলান টমাস বা উৎপলকুমার বসুর কবিতায়; সৈয়দ ওয়ালীউল্লাহ বা সন্দীপন চট্টোপাধ্যায়য়ের ছোটগল্পে অসহজ ভাবনার সমান্তরাল ভাষারীতিসমূহ কি আমরা লক্ষ্য করেছি?

আমাদের এখানে অনেক ভুল ধারণাকে সঙ্গী করে লেখালেখি অব্যাহত রেখেছেন বহু লোক। এরা মনে করেন সুখপাঠ্যতা সাহিত্যের এক শ্রেষ্ঠ গুণ। কিন্তু অনেক সুলিখিত গ্রন্থ সুখপাঠ্য নয় অন্তত বাংলাদেশে ‘সুখপাঠ্য’ বলতে যা বোঝায় সেই হিসেবে। মাহমুদুল হক, হুমায়ূন আহমেদ প্রমুখের কিছু রচনা সুখপাঠ্য। আখতারুজ্জামান ইলিয়াস, হাসান আজিজুল হক বা কায়েস আহমেদের লেখা তা নয়। ইলিয়াসের মহাউপন্যাস ‘খোয়াবনামা’ এমনকি শহীদুল জহিরের উপন্যাস ‘সে রাতে পূর্ণিমা ছিল’ অনেকেই পড়তে পারেন না বিনোদনী উপকরণ থাকা সত্ত্বেও। যদি তরতর করে পড়ে ফেলতে পারাটা গদ্যের বড় গুণ মনে করা হয় তবে তো জেমস জয়েস, কাফকা, কমলকুমার মজুমাদাররা বড় লেখক নন।

অস্বস্তিকর গদ্য নয়, আবার তরল গদ্যও নয়- এরকম একটি ভাষা যদি আয়ত্ত করা সম্ভব হয় সেটাই হবে লেখকের ভাবনার সর্বোৎকৃষ্ট বাহন। সেরকম মাননীয় ভাষায় একজন কবি বা গল্পকার রচনা করবেন তার সাহিত্যকর্ম; আত্মস্থকৃত কলা-কৌশলগুলো ব্যবহার করবেন সর্বসামর্থ্য দিয়ে- এটা এ সময়েরই দাবি।

বৃহস্পতিবার, ১৪ অক্টোবর ২০২১ , ২৯ আশ্বিন ১৪২৮ ০৬ রবিউল আউয়াল ১৪৪৩

সাহিত্যের ভাষা, ভাব ও রচনারীতি প্রসঙ্গে

সরকার মাসুদ

image

ভাষা ও ভাব দুটি আলাদা জিনিস। ভাষার ওপর সওয়ার হয়েই ভাব নিজের চেহারা দেখিয়ে থাকে। কিন্তু যা নিয়ে লেখা হচ্ছে সে সম্বন্ধে যদি পরিষ্কার ধারণা না থাকে ভাষা গোলমেলে হতে বাধ্য। আমি একবার অনূর্ধ্ব চল্লিশ পাঁচজন কবিতাকর্মীকে তাদের সদ্য প্রকাশিত কবিতার থিম সম্বন্ধে প্রশ্ন করেছিলাম। একজনও সদুত্তর দিতে পারেননি। কী সব কথা বলেছেন যার কোনো মানে দাঁড়ায় না।

আবার এমনও হতে দেখা যায় প্রায়ই- লেখার বিষয়বস্তু বেশ পরিষ্কার কিন্তু ভাষাটা জুতসই নয়। দৃষ্টান্ত হিসেবে তিন প্রজন্মের পাঁচজন কবির কথা বলবো- সাইয়িদ আতীকুল্লাহ, শামসুল ইসলাম, সমুদ্র গুপ্ত, হাবীবুল্লাহ সিরাজী, রুদ্র মুহম্মদ শহীদুল্লাহ। বিচ্ছিন্নভাবে এদেরও অল্প কিছু ভালো কবিতা আছে। তবে ‘কবির ভাবমূর্তি’ বলতে যা বোঝায় তা এরা অর্জন করতে পারেননি। হ্যাঁ, রুদ্রর এক ধরনের কবি ইমেজ আছে বটে! তা শক্তিশালী বলে মনে হয় না। কবিসুলভ তেজ, জেদ, নীতিবোধ, সহমর্মিতা তার মধ্যে ছিল। এসব গুণকে, বক্তব্যের স্পষ্টতার মূল্যকে তিনি নষ্ট করেছেন প্রকাশভঙ্গির স্থূলতার মাধ্যমে। তার বলবার ধরন আধুনিক কবিতার ভাষা-অভিব্যক্তির সগোত্র নয়।

বলবার মতো কোনো কথা বা ভাব যদি সুরুচিসম্মতভাবে প্রকাশ করা সম্ভব হয়, যদি লেখকের থাকে ভাষার প্রয়োগসংক্রান্ত পরিচ্ছন্ন ধারণা- তাহলে সেই রচনাকে, কবিতা বা গদ্য যা-ই হোক, আমাদের গ্রহণ না করে উপায় নেই। অথচ আমি দেখেছি- অনেকেই (তার ভেতর পঞ্চাশোর্ধ্ব কবিরাও আছেন) বলেন যে, কবিতার আবার বিষয়বস্তু কী? যেন-বা কাব্য হাওয়ার ওপর ভেসে থাকে, তার কিছু বলার নেই; তার দাঁড়াবার জায়গা নেই। যে ছন্নছাড়া নবীন কবিরা মনে করেন ‘কবিতার আবার থিম কী’ তারা-কি জানেন কাব্য নামধারী যে টেক্সটটি কেবল অনন্য কিছু ভঙ্গি প্রকাশ করছে শৈলীর ওই অনন্যতাই তার থিম। তবে সে রকম কবিতাও কিন্তু আমরা রচিত হতে দেখিনি সম্প্রতি। পুষ্টিশাস্ত্র পড়ে জানা যায় কোন খাদ্যে কী কী ভিটামিন আছে আর তাদের উপকারিতার ক্ষেত্র কোনগুলো। লিখতে শুরু করার আগে লেখা সম্পর্কিত জ্ঞান অর্জন সম্ভব নয়। লেখার ভেতর দিয়ে এগোতে এগোতে, নানা সমস্যা মোকাবেলা করতে করতে একজন লেখক সাহিত্যিক হয়ে ওঠেন; কবিতাকর্মী হয়ে ওঠেন কবি। কিন্তু আমরা দেখেছি চল্লিশ/পঞ্চাশ বছর লেখায় লিপ্ত থাকার পরেও অসংখ্য ব্যক্তি ‘লেখক’ হতে পারেননি, যদিও বহুবার লেখা ছাপা হওয়ার কারণে তাদেরকে কবি বা কথাসাহিত্যিক হিসেবে লোকে চেনেন।

কেন এমনটা ঘটে? ঘটে এজন্য যে, লেখালেখি ব্যাপারটা তারা বুঝে উঠতে পারেননি। অনেকেই নিয়মিত বা অনিয়মিতভাবে পড়াশোনাও করেন। তাদের কারও কারও পাঠরুচিও প্রশংসনীয়। তবু ভাবের উপযোগী ভাষা, দৃষ্টি ও কল্পনার অভাবে তারা লেখক হিসেবে ম্রিয়মাণ। এখানে এসে যাচ্ছে প্রতিভার প্রশ্নটি। লেখার প্রতিভা যার আছে তিনিই তো সচেতন পাঠে লিপ্ত হন; বুঝতে চান ভাষার গঠন প্রক্রিয়া অভিজ্ঞতা ও ব্যক্তির নৈকট্য/দূরত্ব, অনুভবের পলায়নপরতা প্রভৃতি।

একসময় মনে করা হতো নিত্যব্যবহার্য ভাষা সাহিত্যের ভাষা হতে পারে না। এটা যে শুধু বঙ্কিম, শরৎ-যুগেই ভাবা হতো তা নয়, তিরিশের সুদীন্দ্রনাথ, বিষ্ণু, মানিকরাও কমবেশি এমনই ভাবতেন। পরে মানিক চক্রবর্তী, তারাপদ রায়, সন্দীপন চট্টোপাধ্যায়, ভাস্কর চক্রবর্তী, মুস্তফা আনোয়ার, আলতাফ হোসেন প্রমুখের গল্পে ও কবিতায় আমরা দেখলাম ‘প্রতিদিনের ভাষা’। এ সত্ত্বেও আমি বলবো, সাহিত্যের ভাষা ও প্রতিদিনের ভাষা একরকম নয়। দৈনন্দিন জীবনে আমরা যখন ‘আগুন’ শব্দটা উচ্চারণ করি তখন তার দ্বারা আগুন ছাড়া অন্য কিছু বোঝাই না। কিন্তু যখন কবিতায় বলি ‘আগুন আমাকে হাঁটায় অন্ধকারে’ তখন ওই ‘আগুন’ দ্বারা অন্তর্যন্ত্রণা, বিরহ, বিচ্ছেদ, ক্ষোভ, ক্রোধ... এরকম অনেক কিছুই বোঝাই। এভাবে প্রতীকের বিশেষ মর্যাদা লাভ করে সাহিত্যের ভাষা অনন্য হয়ে ওঠে।

অভিজ্ঞতা ও অভিজ্ঞতাপ্রসূত অনুভূতি থেকে ‘ভাব’ আলাদা। লেখক মনের প্রতিক্রিয়া থেকে অভিজ্ঞতা সঞ্চিত হয়। সময় ও সমাজের সঙ্গে সেই অভিজ্ঞতার সম্পর্ক অনুধাবনের ভেতর দিয়ে আমরা ওই ‘ভাব’-এর প্রকৃতি ও গুরুত্ব নির্ণয় করতে পারি।

সুতরাং কোনো লেখকের কৃতির সঙ্গে ‘অভিজ্ঞতা’ শব্দটি যুক্ত হওয়ার গভীর তাৎপর্য আছে। পাঠক বা সমালোচক যখন একটি বিশেষ লেখা সম্বন্ধে ‘মর্মস্পর্শী’ শব্দটি ব্যবহার করেন তিনি কিন্তু সেই লেখাটিতে প্রযুক্ত ভাষাদক্ষতার কথাই পরোক্ষভাবে বলেন। একটি কবিতা বা একটি ছোটগল্পের জটিল ভাবকে কী ধরনের ভাষার মাধ্যমে হৃদয়গ্রাহী করে তোলা সম্ভব- এ চিন্তার প্রয়োজনীয়তা আছে। ডিলান টমাস বা উৎপলকুমার বসুর কবিতায়; সৈয়দ ওয়ালীউল্লাহ বা সন্দীপন চট্টোপাধ্যায়য়ের ছোটগল্পে অসহজ ভাবনার সমান্তরাল ভাষারীতিসমূহ কি আমরা লক্ষ্য করেছি?

আমাদের এখানে অনেক ভুল ধারণাকে সঙ্গী করে লেখালেখি অব্যাহত রেখেছেন বহু লোক। এরা মনে করেন সুখপাঠ্যতা সাহিত্যের এক শ্রেষ্ঠ গুণ। কিন্তু অনেক সুলিখিত গ্রন্থ সুখপাঠ্য নয় অন্তত বাংলাদেশে ‘সুখপাঠ্য’ বলতে যা বোঝায় সেই হিসেবে। মাহমুদুল হক, হুমায়ূন আহমেদ প্রমুখের কিছু রচনা সুখপাঠ্য। আখতারুজ্জামান ইলিয়াস, হাসান আজিজুল হক বা কায়েস আহমেদের লেখা তা নয়। ইলিয়াসের মহাউপন্যাস ‘খোয়াবনামা’ এমনকি শহীদুল জহিরের উপন্যাস ‘সে রাতে পূর্ণিমা ছিল’ অনেকেই পড়তে পারেন না বিনোদনী উপকরণ থাকা সত্ত্বেও। যদি তরতর করে পড়ে ফেলতে পারাটা গদ্যের বড় গুণ মনে করা হয় তবে তো জেমস জয়েস, কাফকা, কমলকুমার মজুমাদাররা বড় লেখক নন।

অস্বস্তিকর গদ্য নয়, আবার তরল গদ্যও নয়- এরকম একটি ভাষা যদি আয়ত্ত করা সম্ভব হয় সেটাই হবে লেখকের ভাবনার সর্বোৎকৃষ্ট বাহন। সেরকম মাননীয় ভাষায় একজন কবি বা গল্পকার রচনা করবেন তার সাহিত্যকর্ম; আত্মস্থকৃত কলা-কৌশলগুলো ব্যবহার করবেন সর্বসামর্থ্য দিয়ে- এটা এ সময়েরই দাবি।