শোভন-রাব্বানীর পথেই কি হাঁটছে জয়-লেখক!

চাঁদাবাজি, দলের বিভিন্ন কমিটির পদ বিক্রি বাণিজ্য, টেন্ডার বাণিজ্যসহ নানার অভিযোগে ২০১৯ সালের ১৪ সেপ্টেম্বর বহিষ্কার করা হয় ছাত্রলীগের তখনকার সভাপতি-সাধারণ সম্পাদক শোভন-রাব্বানীকে। তখন ভারপ্রাপ্ত সভাপতি ও ভারপ্রাপ্ত সাধারণ সম্পাদক পদে দায়িত্ব দেয়া হয় যথাক্রমে সহসভাপতি আল নাহিয়ান খান জয় ও যুগ্ম সাধারণ সম্পাদক লেখক ভট্টাচার্যকে। পরের বছর ২০২০ সালের ৪ জানুয়ারি তারা ভারমুক্ত পূর্ণ দায়িত্ব পান।

দায়িত্ব পাওয়ার পর থেকেই কেন্দ্রীয় কমিটিতে থাকা নেতাদের মধ্যে সাংগঠনিক দায়িত্ব বণ্টন না করা, জেলা কমিটি না দেয়া এবং কেন্দ্রীয় নেতাদের সঙ্গে সমন্বয়হীনতাসহ নানা অভিযোগ ওঠে এই দুই নেতার বিরুদ্ধে। এবার এই দুই নেতার বিরুদ্ধে কমিটি বাণিজ্যের অভিযোগ এসেছে।

জয়-লেখক দায়িত্ব পাওয়ার পর গত দুই বছরে তিনটি মহানগর, ১৯টি জেলাসহ আরও ১১টি সাংগঠনিক কমিটি ঘোষণা করেছেন। এর মধ্যে ময়মনসিংহ জেলা কমিটি, রংপুরে জেলা ছাত্রলীগের সভাপতি মেহেদী হাসান রনিকে সভাপতি হিসাবে সাময়িক বহিষ্কারাদেশ প্রত্যাহার করে স্বপদে বহাল, নেত্রকোনায় জেলা কমিটির সভাপতি এবং সাধারণ সম্পাদকের পদের বিনিময়ে টেন্ডার, ইসলামী বিশ্ববিদ্যালয়ের উন্নয়ন প্রকল্পের কাজ থেকে কমিশন, গাজীপুরে মহানগর ছাত্রলীগের সহসভাপতি পদের বিনিময়ে লেখক ভট্টাচার্যের বড়ভাইয়ের টেন্ডারে কোটি টাকার বাণিজ্যের অভিযোগ এসেছে জয়-লেখকের বিরুদ্ধে। সর্বশেষ, গত ১১ অক্টোবর সিলেট মহানগর কমিটিতে কেন্দ্রীয় কমিটির সদস্য রাহেল সিরাজকে টাকার বিনিময়ে সাধারণ সম্পাদক করার অভিযোগ উঠেছে।

সম্মেলন করেও জগন্নাথ বিশ্ববিদ্যালয়, কুষ্টিয়া ইসলামী বিশ্ববিদ্যালয়, ইডেন কলেজ, সোহরাওয়ার্দী কলেজ, কবি নজরুল সরকারি কলেজের কমিটি দিতে না পারা, ঢাকার বিভিন্ন ইউনিটে দায়িত্বপ্রাপ্তদের টাকার বিনিময়ে জেলা-উপজেলায় নেতা বানানো, সম্মেলন না করে প্রেস রিলিজ নির্ভর কমিটি দেয়ায় কেন্দ্রীয় কমিটির একাধিক নেতা বর্তমান কমিটির উপর ক্ষুব্ধ। এছাড়া দীর্ঘদিন পর্যন্ত ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের মতো গুরুত্বপূর্ণ ইউনিটের হল কমিটি দিতে না পারার জন্যও তাদের ব্যর্থতাকে দায়ী করছেন অনেকেই।

বর্তমান কমিটির সহ-সভাপতি সোহান খান সংবাদকে বলেন, ‘বাংলাদেশ ছাত্রলীগের সাংগঠনিক কার্যক্রম বর্তমানে শূন্য অবস্থায়। কেন্দ্রীয় নেতাদের কাজ হচ্ছে বঙ্গবন্ধুর আদর্শ ও মাননীয় প্রধানমন্ত্রীর উন্নয়ন কার্যক্রম সারা বাংলাদেশে ছড়িয়ে দেয়া। কিন্তু ৩০১ সদস্যবিশিষ্ট কমিটি থাকা সত্ত্বেও তারা সাংগঠনিক সফর দিতে ব্যর্থ হয়েছে, আমাদের কাজ করার সুযোগ তৈরি করে দিতে ব্যর্থ হয়েছে। সভাপতি-সাধারণ সম্পাদক তাদের ব্যক্তিগত স্বার্থ চরিতার্থ করার জন্য সংগঠনকে নিষ্কৃয় করে রেখেছে। এ কমিটির মেয়াদও সাড়ে তিন বছর অতিক্রম হয়েছে। তাই আমরা দ্রুত সম্মেলন চাই।’

সহ-সভাপতি সৈয়দ আরিফ হোসাইন বলেন, দায়িত্বে আসার পর থেকেই বর্তমান সভাপতি-সাধারণ সম্পাদক গঠনতন্ত্রকে বৃদ্ধাঙ্গুলি দেখিয়ে আসছে। বঙ্গবন্ধুর আদর্শ কর্মী তৈরি না করে তারা নিজস্ব বলয়ের কর্মী তৈরি করেছে। যারাই ছাত্রলীগকে গঠনতান্ত্রিক-সাংগঠনিকভাবে চলার জন্য সমালোচনা করছে, তাদেরই ষড়যন্ত্রকারী হিসেবে অপবাদ দেয়া হচ্ছে। তাদের এ জায়গা থেকে সরে এসে দ্রুত সম্মেলন দেয়ার আহ্বান জানাই। দায়িত্ব বণ্টনের বিষয়ে তিনি বলেন, যখন দায়িত্ব বণ্টনের দরকার ছিল তখন দায়িত্ব বণ্টন করা হয়নি। এখন মেয়াদোত্তীর্ণ কমিটির দায়িত্ব নিয়ে আমরা কীভাবে তৃণমূল কর্মীদের সামনে দাঁড়াবো!

প্রশিক্ষণ বিষয়ক উপ-সম্পাদক মেশকাত হোসেন বলেন, ‘ঢাকায় বিভিন্ন ইউনিটে রাজনীতি করে সভাপতি-সেক্রেটারির পদলেহন করলে সহজেই জেলা-উপজেলায় বড় বড় পদ পাওয়া যাচ্ছে। এতে তৃণমূলে যারা রাজনীতি করে তারা আগ্রহ হারিয়ে ফেলছে। জেলা পর্যায়ের কোন ইউনিটে যোগ্য কর্মীর এতই অভাব নাই যে, ঢাকায় রাজনীতি করা কাউকে সেখানে সভাপতি-সাধারণ সম্পাদক বানাতে হবে। দ্রুত সম্মেলনের মাধ্যমে আমরা এসবের অবসান চাই।’

এসব বিষয়ে সভাপতি আল নাহিয়ান খান জয় এবং সাধারণ সম্পাদক লেখক ভট্টাচার্যকে মুঠোফোনে একাধিক বার ফোন করে, ম্যাসেজ দিয়েও কোন সাড়া পাওয়া যায়নি।

বৃহস্পতিবার, ১৪ অক্টোবর ২০২১ , ২৯ আশ্বিন ১৪২৮ ০৬ রবিউল আউয়াল ১৪৪৩

শোভন-রাব্বানীর পথেই কি হাঁটছে জয়-লেখক!

খালেদ মাহমুদ, প্রতিনিধি, ঢাবি

চাঁদাবাজি, দলের বিভিন্ন কমিটির পদ বিক্রি বাণিজ্য, টেন্ডার বাণিজ্যসহ নানার অভিযোগে ২০১৯ সালের ১৪ সেপ্টেম্বর বহিষ্কার করা হয় ছাত্রলীগের তখনকার সভাপতি-সাধারণ সম্পাদক শোভন-রাব্বানীকে। তখন ভারপ্রাপ্ত সভাপতি ও ভারপ্রাপ্ত সাধারণ সম্পাদক পদে দায়িত্ব দেয়া হয় যথাক্রমে সহসভাপতি আল নাহিয়ান খান জয় ও যুগ্ম সাধারণ সম্পাদক লেখক ভট্টাচার্যকে। পরের বছর ২০২০ সালের ৪ জানুয়ারি তারা ভারমুক্ত পূর্ণ দায়িত্ব পান।

দায়িত্ব পাওয়ার পর থেকেই কেন্দ্রীয় কমিটিতে থাকা নেতাদের মধ্যে সাংগঠনিক দায়িত্ব বণ্টন না করা, জেলা কমিটি না দেয়া এবং কেন্দ্রীয় নেতাদের সঙ্গে সমন্বয়হীনতাসহ নানা অভিযোগ ওঠে এই দুই নেতার বিরুদ্ধে। এবার এই দুই নেতার বিরুদ্ধে কমিটি বাণিজ্যের অভিযোগ এসেছে।

জয়-লেখক দায়িত্ব পাওয়ার পর গত দুই বছরে তিনটি মহানগর, ১৯টি জেলাসহ আরও ১১টি সাংগঠনিক কমিটি ঘোষণা করেছেন। এর মধ্যে ময়মনসিংহ জেলা কমিটি, রংপুরে জেলা ছাত্রলীগের সভাপতি মেহেদী হাসান রনিকে সভাপতি হিসাবে সাময়িক বহিষ্কারাদেশ প্রত্যাহার করে স্বপদে বহাল, নেত্রকোনায় জেলা কমিটির সভাপতি এবং সাধারণ সম্পাদকের পদের বিনিময়ে টেন্ডার, ইসলামী বিশ্ববিদ্যালয়ের উন্নয়ন প্রকল্পের কাজ থেকে কমিশন, গাজীপুরে মহানগর ছাত্রলীগের সহসভাপতি পদের বিনিময়ে লেখক ভট্টাচার্যের বড়ভাইয়ের টেন্ডারে কোটি টাকার বাণিজ্যের অভিযোগ এসেছে জয়-লেখকের বিরুদ্ধে। সর্বশেষ, গত ১১ অক্টোবর সিলেট মহানগর কমিটিতে কেন্দ্রীয় কমিটির সদস্য রাহেল সিরাজকে টাকার বিনিময়ে সাধারণ সম্পাদক করার অভিযোগ উঠেছে।

সম্মেলন করেও জগন্নাথ বিশ্ববিদ্যালয়, কুষ্টিয়া ইসলামী বিশ্ববিদ্যালয়, ইডেন কলেজ, সোহরাওয়ার্দী কলেজ, কবি নজরুল সরকারি কলেজের কমিটি দিতে না পারা, ঢাকার বিভিন্ন ইউনিটে দায়িত্বপ্রাপ্তদের টাকার বিনিময়ে জেলা-উপজেলায় নেতা বানানো, সম্মেলন না করে প্রেস রিলিজ নির্ভর কমিটি দেয়ায় কেন্দ্রীয় কমিটির একাধিক নেতা বর্তমান কমিটির উপর ক্ষুব্ধ। এছাড়া দীর্ঘদিন পর্যন্ত ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের মতো গুরুত্বপূর্ণ ইউনিটের হল কমিটি দিতে না পারার জন্যও তাদের ব্যর্থতাকে দায়ী করছেন অনেকেই।

বর্তমান কমিটির সহ-সভাপতি সোহান খান সংবাদকে বলেন, ‘বাংলাদেশ ছাত্রলীগের সাংগঠনিক কার্যক্রম বর্তমানে শূন্য অবস্থায়। কেন্দ্রীয় নেতাদের কাজ হচ্ছে বঙ্গবন্ধুর আদর্শ ও মাননীয় প্রধানমন্ত্রীর উন্নয়ন কার্যক্রম সারা বাংলাদেশে ছড়িয়ে দেয়া। কিন্তু ৩০১ সদস্যবিশিষ্ট কমিটি থাকা সত্ত্বেও তারা সাংগঠনিক সফর দিতে ব্যর্থ হয়েছে, আমাদের কাজ করার সুযোগ তৈরি করে দিতে ব্যর্থ হয়েছে। সভাপতি-সাধারণ সম্পাদক তাদের ব্যক্তিগত স্বার্থ চরিতার্থ করার জন্য সংগঠনকে নিষ্কৃয় করে রেখেছে। এ কমিটির মেয়াদও সাড়ে তিন বছর অতিক্রম হয়েছে। তাই আমরা দ্রুত সম্মেলন চাই।’

সহ-সভাপতি সৈয়দ আরিফ হোসাইন বলেন, দায়িত্বে আসার পর থেকেই বর্তমান সভাপতি-সাধারণ সম্পাদক গঠনতন্ত্রকে বৃদ্ধাঙ্গুলি দেখিয়ে আসছে। বঙ্গবন্ধুর আদর্শ কর্মী তৈরি না করে তারা নিজস্ব বলয়ের কর্মী তৈরি করেছে। যারাই ছাত্রলীগকে গঠনতান্ত্রিক-সাংগঠনিকভাবে চলার জন্য সমালোচনা করছে, তাদেরই ষড়যন্ত্রকারী হিসেবে অপবাদ দেয়া হচ্ছে। তাদের এ জায়গা থেকে সরে এসে দ্রুত সম্মেলন দেয়ার আহ্বান জানাই। দায়িত্ব বণ্টনের বিষয়ে তিনি বলেন, যখন দায়িত্ব বণ্টনের দরকার ছিল তখন দায়িত্ব বণ্টন করা হয়নি। এখন মেয়াদোত্তীর্ণ কমিটির দায়িত্ব নিয়ে আমরা কীভাবে তৃণমূল কর্মীদের সামনে দাঁড়াবো!

প্রশিক্ষণ বিষয়ক উপ-সম্পাদক মেশকাত হোসেন বলেন, ‘ঢাকায় বিভিন্ন ইউনিটে রাজনীতি করে সভাপতি-সেক্রেটারির পদলেহন করলে সহজেই জেলা-উপজেলায় বড় বড় পদ পাওয়া যাচ্ছে। এতে তৃণমূলে যারা রাজনীতি করে তারা আগ্রহ হারিয়ে ফেলছে। জেলা পর্যায়ের কোন ইউনিটে যোগ্য কর্মীর এতই অভাব নাই যে, ঢাকায় রাজনীতি করা কাউকে সেখানে সভাপতি-সাধারণ সম্পাদক বানাতে হবে। দ্রুত সম্মেলনের মাধ্যমে আমরা এসবের অবসান চাই।’

এসব বিষয়ে সভাপতি আল নাহিয়ান খান জয় এবং সাধারণ সম্পাদক লেখক ভট্টাচার্যকে মুঠোফোনে একাধিক বার ফোন করে, ম্যাসেজ দিয়েও কোন সাড়া পাওয়া যায়নি।