জেলা-উপজেলার সরকারি কলেজে সংযুক্ত ও ইনসিটু শিক্ষকদের বাড়িভাড়া নিয়ে জটিলতা

রফিকুল ইসলাম (প্রকৃত নাম নয়) কর্মহীন (ওএসডি) অবস্থায় আছেন ঢাকায় মাউশিতে। সংযুক্ত হিসেবে কর্মরত আছেন কুমিল্লা সরকারি ভিক্টোরিয়া কলেজে। তিনি সহকারী অধ্যাপক। বিসিএস সাধারণ শিক্ষা ক্যাডারের এই শিক্ষক বাড়িভাড়া নিচ্ছেন ঢাকার হারে। তবে এই কলেজে স্থায়ী পদে কর্মরত থাকা অন্য সহকারী অধ্যাপকরা ন্যূনতম সাত হাজার টাকা কম বাড়িভাড়া পাচ্ছেন। এই বৈষম্য নিয়ে দীর্ঘদিন ধরেই স্থায়ী পদে কর্মরত থাকা শিক্ষকদের মধ্যে অসন্তোষ বিরাজ করছিল।

শিক্ষাক্যাডার সদস্যরা মফস্বল এলাকায় স্থায়ী ও শূন্যপদে কর্মরত থাকলে মূল বেতনের ৩৫ শতাংশ বাড়িভাড়া ভাতা পান। তবে একই কলেজে ওএসডি ও সংযুক্তি থাকলে মূল বেতনের ৫০ শতাংশ বাড়িভাড়া ভাতা পান।

মাধ্যমিক ও উচ্চ শিক্ষা অধিদপ্তরের (মাউশি) সংশ্লিষ্ট কর্মকর্তারা জানিয়েছেন, বর্তমানে তিন থেকে চার হাজার শিক্ষক ওএসডি ও সংযুক্তিতে কর্মকর্তা রয়েছেন। তাদের মধ্যে প্রায় অর্ধেকই ঢাকার বিভিন্ন কলেজ ও সংশ্লিষ্ট প্রতিষ্ঠানে সংযুক্তিতে রয়েছেন। বাকি অর্ধেক জেলা ও উপজেলা পর্যায়ে সংযুক্তিতে রয়েছেন।

শিক্ষকদের জেলা, উপজেলা ও বিভাগীয় পর্যায়ের কলেজে সংযুক্তি থেকে ঢাকার হারে বাড়িভাড়া নেয়াকে ‘আর্থিক শৃঙ্খলার পরিপন্থী এবং সরকারের আর্থিক ক্ষতি’ হিসেবে দেখছে শিক্ষা মন্ত্রণালয়ের চিফ অ্যাকাউন্টস অ্যান্ড ফিন্যান্স অফিসারের কার্যালয়।

এই প্রতিষ্ঠানের পক্ষ থেকে গত ১১ অক্টোবর মাধ্যমিক ও উচ্চ শিক্ষা অধিদপ্তরের (মাউশি) মহাপরিচালক বরাবর ‘কর্মস্থলের হারে বাড়িভাড়া ভাতা প্রাপ্যতা’ শীর্ষক এক চিঠিতে বলা হয়েছে, ‘আপনার আওতাধীন যে সব কর্মকর্তা ওএসডি (বিশেষ ভারপ্রাপ্ত কর্মকর্তা) হিসেবে মাউশিতে রয়েছেন, কিন্তু সংযুক্ত/ইনসিটু হিসেবে বিভিন্ন উপজেলা/জলা/বিভাগে কর্মরত তাদের সংযুক্তি (অ্যাটাচমেন্ট) ‘আইবাস প্লাস প্লাসে’ তিন কর্ম দিবসের মধ্যে এন্ট্রি দেয়ার প্রয়োজনীয় ব্যবস্থা গ্রহণের জন্য পুনরায় অনুরোধ করা যাচ্ছে। অন্যথায় তাদের বেতন-ভাতার বিল এ কার্যালয় হতে ইএফটির (ইলেক্ট্রনিক ফান্ডস ট্রান্সফার) মাধ্যমে পরিশোধ করা সম্ভবপর হবে না।’

এ বিষয়ে জানতে চাইলে মাউশির পরিচালক (কলেজ ও প্রশাসন) প্রফেসর শাহেদুল খবির চৌধুরী গতকাল সংবাদকে বলেছেন, ‘প্রধানত এটা কোন সমস্যা নয়। কারণ শিক্ষক-কর্মকর্তারা তো নিজ ইচ্ছাই কেউ ওএসডি বা সংযুক্ত হয়নি। পর্যাপ্ত পদ থাকায় তাদের সংযুক্তি থাকতে হচ্ছে। নিচের পদে চাকরি করতে হচ্ছে।’

ওএসডি ও সংযুক্তিতে থাকা শিক্ষকদের তালিকা তৈরি করা হচ্ছে জানিয়ে মাউশি পরিচালক বলেন, ‘কতজন শিক্ষক ওএসডি ও সংযুক্তিতে আছেন, সেটা এখনই সুনির্দিষ্ট করে বলা কঠিন। বিভিন্ন সময়ে এই সংযুক্তি হয়েছে, আবার নিয়মিত পদের বিপরীতে পদায়নও হচ্ছে। এ কারণে তালিকা তৈরিতে একটু সময় লাগছে। এ সংক্রান্ত সব তথ্য সংগ্রহ করা হচ্ছে। এরপর তালিকা দেয়া হবে।’ চিফ অ্যাকাউন্টস অ্যান্ড ফিন্যান্স অফিসারের চিঠিতে আরও বলা হয়েছে, ওএসডি ও সংযুক্তি শিক্ষকদের তালিকা দেয়ার জন্য গত ২৯ আগস্ট ও ২৮ সেপ্টেম্বর দুই দফা মাউশি কর্তৃপক্ষকে চিঠি দেয়া হয়। ‘কিন্তু মাউশি ওই শিক্ষকদের তালিকা দেয়নি। আইবাস প্লাস প্লাসে এ সংক্রান্ত সংযুক্তি এন্ট্রিও দেয়া হয়নি। ফলে তাদের বাড়িভাড়া কর্মস্থলের হারে প্রাপ্ত না হয়ে ঢাকার হারে প্রাপ্ত হচ্ছেন, যা আর্থিক শৃঙ্খলার পরিপন্থী এবং সরকারের আর্থিক ক্ষতি।’

মাউশির সংশ্লিষ্ট একাধিক কর্মকর্তা জানিয়েছেন, সরকারি কলেজের শিক্ষক অর্থাৎ বিসিএস শিক্ষাক্যাডারে প্রায় ১৬ হাজার সদস্য রয়েছেন। তাদের মধ্যে তিন থেকে চার হাজার শিক্ষক ওএসডি আছেন। ওএসডি শিক্ষকদের একটি বড় অংশই রাজধানীসহ বিভিন্ন জেলা, উপজেলা ও বিভাগীয় পর্যায়ের কলেজে সংযুক্তি এবং ইনসিটু (পদোন্নতি পেয়েও নিচের পদে চাকরি) কর্মরত রাখা হয়েছে।

সর্বশেষ গত ২৯ জুন এক হাজার ৮৪ জন সহকারী অধ্যাপককে সহযোগী অধ্যাপক হিসেবে পদোন্নতি দেয় শিক্ষা মন্ত্রণালয়। ওই সময় পদোন্নতির প্রজ্ঞাপনে বলা হয়, পদোন্নতি পাওয়া কর্মকর্তারা পরবর্তী নির্দেশ না দেয়া পর্যন্ত মাধ্যমিক ও উচ্চশিক্ষা অধিদপ্তরে বিশেষ ভারপ্রাপ্ত কর্মকর্তা হিসেবে যোগ দিয়ে আগের পদের দায়িত্ব (ইনসিটু) পালন করে যাবেন।

প্রায় আড়াই মাস আগে পদোন্নতি পেলেও ওই শিক্ষকদের বেশিরভাগই এখন সহকারী অধ্যাপকের দায়িত্ব পালন করছেন।

জানতে চাইলে স্বাধীনতা বিসিএস সাধারণ শিক্ষা সংসদের আহ্বায়ক প্রফেসর নাসির উদ্দিন সংবাদকে বলেছেন, ‘ওএসডি-সংযুক্তি হবে কেন, পদ সৃষ্টি করলেই হয়। পদ না থাকার কারণেই শিক্ষকদের ওএসডি-সংযুক্তিতে রাখতে হচ্ছে। এর জন্য শিক্ষকরা দায়ী নয়, প্রশাসন দায়ী। শূন্য পদে পদায়ন পেলে কাউকেই ঢাকার হারে বাড়িভাড়া ভাতা নিতে হবে না।’

বৃহস্পতিবার, ১৪ অক্টোবর ২০২১ , ২৯ আশ্বিন ১৪২৮ ০৬ রবিউল আউয়াল ১৪৪৩

জেলা-উপজেলার সরকারি কলেজে সংযুক্ত ও ইনসিটু শিক্ষকদের বাড়িভাড়া নিয়ে জটিলতা

রাকিব উদ্দিন

রফিকুল ইসলাম (প্রকৃত নাম নয়) কর্মহীন (ওএসডি) অবস্থায় আছেন ঢাকায় মাউশিতে। সংযুক্ত হিসেবে কর্মরত আছেন কুমিল্লা সরকারি ভিক্টোরিয়া কলেজে। তিনি সহকারী অধ্যাপক। বিসিএস সাধারণ শিক্ষা ক্যাডারের এই শিক্ষক বাড়িভাড়া নিচ্ছেন ঢাকার হারে। তবে এই কলেজে স্থায়ী পদে কর্মরত থাকা অন্য সহকারী অধ্যাপকরা ন্যূনতম সাত হাজার টাকা কম বাড়িভাড়া পাচ্ছেন। এই বৈষম্য নিয়ে দীর্ঘদিন ধরেই স্থায়ী পদে কর্মরত থাকা শিক্ষকদের মধ্যে অসন্তোষ বিরাজ করছিল।

শিক্ষাক্যাডার সদস্যরা মফস্বল এলাকায় স্থায়ী ও শূন্যপদে কর্মরত থাকলে মূল বেতনের ৩৫ শতাংশ বাড়িভাড়া ভাতা পান। তবে একই কলেজে ওএসডি ও সংযুক্তি থাকলে মূল বেতনের ৫০ শতাংশ বাড়িভাড়া ভাতা পান।

মাধ্যমিক ও উচ্চ শিক্ষা অধিদপ্তরের (মাউশি) সংশ্লিষ্ট কর্মকর্তারা জানিয়েছেন, বর্তমানে তিন থেকে চার হাজার শিক্ষক ওএসডি ও সংযুক্তিতে কর্মকর্তা রয়েছেন। তাদের মধ্যে প্রায় অর্ধেকই ঢাকার বিভিন্ন কলেজ ও সংশ্লিষ্ট প্রতিষ্ঠানে সংযুক্তিতে রয়েছেন। বাকি অর্ধেক জেলা ও উপজেলা পর্যায়ে সংযুক্তিতে রয়েছেন।

শিক্ষকদের জেলা, উপজেলা ও বিভাগীয় পর্যায়ের কলেজে সংযুক্তি থেকে ঢাকার হারে বাড়িভাড়া নেয়াকে ‘আর্থিক শৃঙ্খলার পরিপন্থী এবং সরকারের আর্থিক ক্ষতি’ হিসেবে দেখছে শিক্ষা মন্ত্রণালয়ের চিফ অ্যাকাউন্টস অ্যান্ড ফিন্যান্স অফিসারের কার্যালয়।

এই প্রতিষ্ঠানের পক্ষ থেকে গত ১১ অক্টোবর মাধ্যমিক ও উচ্চ শিক্ষা অধিদপ্তরের (মাউশি) মহাপরিচালক বরাবর ‘কর্মস্থলের হারে বাড়িভাড়া ভাতা প্রাপ্যতা’ শীর্ষক এক চিঠিতে বলা হয়েছে, ‘আপনার আওতাধীন যে সব কর্মকর্তা ওএসডি (বিশেষ ভারপ্রাপ্ত কর্মকর্তা) হিসেবে মাউশিতে রয়েছেন, কিন্তু সংযুক্ত/ইনসিটু হিসেবে বিভিন্ন উপজেলা/জলা/বিভাগে কর্মরত তাদের সংযুক্তি (অ্যাটাচমেন্ট) ‘আইবাস প্লাস প্লাসে’ তিন কর্ম দিবসের মধ্যে এন্ট্রি দেয়ার প্রয়োজনীয় ব্যবস্থা গ্রহণের জন্য পুনরায় অনুরোধ করা যাচ্ছে। অন্যথায় তাদের বেতন-ভাতার বিল এ কার্যালয় হতে ইএফটির (ইলেক্ট্রনিক ফান্ডস ট্রান্সফার) মাধ্যমে পরিশোধ করা সম্ভবপর হবে না।’

এ বিষয়ে জানতে চাইলে মাউশির পরিচালক (কলেজ ও প্রশাসন) প্রফেসর শাহেদুল খবির চৌধুরী গতকাল সংবাদকে বলেছেন, ‘প্রধানত এটা কোন সমস্যা নয়। কারণ শিক্ষক-কর্মকর্তারা তো নিজ ইচ্ছাই কেউ ওএসডি বা সংযুক্ত হয়নি। পর্যাপ্ত পদ থাকায় তাদের সংযুক্তি থাকতে হচ্ছে। নিচের পদে চাকরি করতে হচ্ছে।’

ওএসডি ও সংযুক্তিতে থাকা শিক্ষকদের তালিকা তৈরি করা হচ্ছে জানিয়ে মাউশি পরিচালক বলেন, ‘কতজন শিক্ষক ওএসডি ও সংযুক্তিতে আছেন, সেটা এখনই সুনির্দিষ্ট করে বলা কঠিন। বিভিন্ন সময়ে এই সংযুক্তি হয়েছে, আবার নিয়মিত পদের বিপরীতে পদায়নও হচ্ছে। এ কারণে তালিকা তৈরিতে একটু সময় লাগছে। এ সংক্রান্ত সব তথ্য সংগ্রহ করা হচ্ছে। এরপর তালিকা দেয়া হবে।’ চিফ অ্যাকাউন্টস অ্যান্ড ফিন্যান্স অফিসারের চিঠিতে আরও বলা হয়েছে, ওএসডি ও সংযুক্তি শিক্ষকদের তালিকা দেয়ার জন্য গত ২৯ আগস্ট ও ২৮ সেপ্টেম্বর দুই দফা মাউশি কর্তৃপক্ষকে চিঠি দেয়া হয়। ‘কিন্তু মাউশি ওই শিক্ষকদের তালিকা দেয়নি। আইবাস প্লাস প্লাসে এ সংক্রান্ত সংযুক্তি এন্ট্রিও দেয়া হয়নি। ফলে তাদের বাড়িভাড়া কর্মস্থলের হারে প্রাপ্ত না হয়ে ঢাকার হারে প্রাপ্ত হচ্ছেন, যা আর্থিক শৃঙ্খলার পরিপন্থী এবং সরকারের আর্থিক ক্ষতি।’

মাউশির সংশ্লিষ্ট একাধিক কর্মকর্তা জানিয়েছেন, সরকারি কলেজের শিক্ষক অর্থাৎ বিসিএস শিক্ষাক্যাডারে প্রায় ১৬ হাজার সদস্য রয়েছেন। তাদের মধ্যে তিন থেকে চার হাজার শিক্ষক ওএসডি আছেন। ওএসডি শিক্ষকদের একটি বড় অংশই রাজধানীসহ বিভিন্ন জেলা, উপজেলা ও বিভাগীয় পর্যায়ের কলেজে সংযুক্তি এবং ইনসিটু (পদোন্নতি পেয়েও নিচের পদে চাকরি) কর্মরত রাখা হয়েছে।

সর্বশেষ গত ২৯ জুন এক হাজার ৮৪ জন সহকারী অধ্যাপককে সহযোগী অধ্যাপক হিসেবে পদোন্নতি দেয় শিক্ষা মন্ত্রণালয়। ওই সময় পদোন্নতির প্রজ্ঞাপনে বলা হয়, পদোন্নতি পাওয়া কর্মকর্তারা পরবর্তী নির্দেশ না দেয়া পর্যন্ত মাধ্যমিক ও উচ্চশিক্ষা অধিদপ্তরে বিশেষ ভারপ্রাপ্ত কর্মকর্তা হিসেবে যোগ দিয়ে আগের পদের দায়িত্ব (ইনসিটু) পালন করে যাবেন।

প্রায় আড়াই মাস আগে পদোন্নতি পেলেও ওই শিক্ষকদের বেশিরভাগই এখন সহকারী অধ্যাপকের দায়িত্ব পালন করছেন।

জানতে চাইলে স্বাধীনতা বিসিএস সাধারণ শিক্ষা সংসদের আহ্বায়ক প্রফেসর নাসির উদ্দিন সংবাদকে বলেছেন, ‘ওএসডি-সংযুক্তি হবে কেন, পদ সৃষ্টি করলেই হয়। পদ না থাকার কারণেই শিক্ষকদের ওএসডি-সংযুক্তিতে রাখতে হচ্ছে। এর জন্য শিক্ষকরা দায়ী নয়, প্রশাসন দায়ী। শূন্য পদে পদায়ন পেলে কাউকেই ঢাকার হারে বাড়িভাড়া ভাতা নিতে হবে না।’