রোহিঙ্গাদের প্রত্যাবাসন জরুরি বিলম্বে বিপদই বাড়াবে

সংকট নিরসনে আন্তর্জাতিক সম্প্রদায় মায়ানমারের ওপর চাপ প্রয়োগ করছে না

সামাজিক-রাজনৈতিক এবং পরিবেশগত বহুমুখী বিপযর্য় এড়াতে বাংলাদেশে আশ্রয় নেয়া রোহিঙ্গাদের যে মায়ারমারে প্রত্যাবাসন জরুরি। সেই সঙ্গে রোহিঙ্গাদের দেশে ফেরাতে কূটনৈতিক তৎপরতা জোরদার করার পাশাপাশি কক্সবাজারে শরণার্থী ক্যাম্প এলাকায় প্রাকৃতিক বিপযর্য় এড়াতে বিভিন্ন পদক্ষেপ নেয়ার পরামর্শর কথা উঠে এসেছে এক ওয়েবিনারে।

গত বৃহস্পতিবার ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের দুর্যোগ বিজ্ঞান ও ব্যবস্থাপনা বিভাগ এবং ইউনিভার্সিটি কলেজ লন্ডনের (ইউসিএল) ইনস্টিটিউট ফর রিস্ক অ্যান্ড ডিজাস্টার রিডাকশন যৌথভাবে ‘বাংলাদেশে রোহিঙ্গারা : সামাজিক-রাজনৈতিক ও পরিবেশগত দৃষ্টিভঙ্গি’ শীর্ষক ওয়েবিনারের আয়োজন করে। সেখানে বাংলাদেশে রোহিঙ্গাদের অবস্থান দীর্ঘায়িত হওয়ায় যেসব সমস্যা ও ঝুঁকি তৈরি হচ্ছে, সেসব বিষয়ও তুলে ধরেছেন আলোচকরা। প্যানেল আলোচক হিসেবে ছিলেন ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের আর্থ অ্যান্ড এনভায়রনমেন্টাল সায়েন্সেস অনুষদের ডিন অধ্যাপক মো. কাউসার আহাম্মদ, সামাজিক বিজ্ঞান অনুষদের ডিন অধ্যাপক সাদেকা হালিম, আন্তর্জাতিক সম্পর্ক বিভাগের অধ্যাপক দেলোয়ার হোসাইন এবং ইউনিভার্সিটি কলেজ লন্ডনের (ইউসিএল) ডিজাস্টার রিডাকশন ইনস্টিটিউটের প্রভাষক বায়েস আহমেদ। ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয় ডিজাস্টার সায়েন্স অ্যান্ড ম্যানেজমেন্ট বিভাগের চেয়ারম্যান মো. শাখাওয়াত হোসেন ধন্যবাদ জ্ঞাপন করেন।

ওয়েবিনারে ‘ইম্প্যাক্ট অব রোহিঙ্গা ইনফ্লাক্স ইন বাংলাদেশ অন লোকাল টু রিজিওনাল পিস অ্যান্ড স্ট্যাবিলিটি’ শীর্ষক প্রবন্ধ উপস্থাপন করেন ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয় আন্তর্জাতিক সম্পর্ক বিভাগের অধ্যাপক ও সেন্টার ফর জেনোসাইড স্টাডিজের পরিচালক ড. ইমতিয়াজ আহমেদ। তিনি বলেন, ‘রোহিঙ্গা সংকট নিরসনে আন্তর্জাতিক সম্প্রদায় মায়ানমারকে ওভাবে চাপ প্রয়োগ করছে না। এই সমস্যা সমাধানে যেসব দেশ জোরালো ভূমিকা রাখতে পারে, তারা তাদের ব্যবসায়িক স্বার্থ নিয়ে ব্যস্ত। আন্তর্জাতিক সম্প্রদায় মায়ানমারের ওপর নিষেধাজ্ঞা আরোপ করতে পারে, কিন্তু তারা এ বিষয়ে ইতস্তত করছে যে, সেখানে সাধারণ মানুষ ক্ষতিগ্রস্ত হবে।’

তিনি বলেন, ‘আন্তর্জাতিক সম্প্রদায় যদি ইরান বা উত্তর কোরিয়ার ওপর নিষেধাজ্ঞা আরোপ করতে পারে, তাহলে মায়ানমারের ওপর কেন নিষেধাজ্ঞা পুনরায় আরোপ করা যাবে না? এ ধরনের পরস্পরবিরোধী ভূমিকা, মানুষ আন্তর্জাতিক সম্প্রদায়কে গুরুত্ব সহকারে নেবে না।’ তিনি রোহিঙ্গাদের একজনের পরিবর্তে একাধিক নেতা বেছে নেয়ার পরামর্শ দেন।

অধ্যাপক ইমতিয়াজ আহমেদ বলেন, ‘তাদের মধ্যে শুধু একজনই নেতা হওয়া উচিত না। মায়ানমার সামরিক বাহিনী চায় রোহিঙ্গাদের মধ্যে যাতে কোন নেতা না থাকে। বর্তমানে যে সাত কোটি রোহিঙ্গা জনগোষ্ঠী রয়েছে, তাদের কোন নেতা নেই। আমরা দেখছি, রোহিঙ্গা ক্যাম্পেও তারা নেতৃত্বশূন্য।’

ওয়েবিনারে ‘রোহিঙ্গা ইনফ্লাক্স : ন্যাচারাল হ্যাজার্ডস ইন কক্সবাজার রিজিওন’ শীর্ষক প্রবন্ধ উপস্থাপন করেন ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের উপ-উপাচার্য (শিক্ষা) ও দুর্যোগ বিজ্ঞান ও ব্যবস্থাপনা বিভাগের অধ্যাপক এসএম মাকসুদ কামাল।

তিনি বলেন, ‘মানবিক কারণে রোহিঙ্গাদের আশ্রয় দিয়ে বহুমুখী ঝুঁকিতে বাংলাদেশ। পর্যটন নগরী কক্সবাজার এখন পরিবেশ বিপর্যয়ের মুখে। প্রকৃতি, বাস্তুতন্ত্র সম্পূর্ণ ভারসাম্যহীন।’

তিনি আরও বলেন, ‘রোহিঙ্গা প্রবাহের কারণে কক্সবাজারে বন উজাড় করে, পাহাড় কেটে অপরিকল্পিতভাবে আবাসন তৈরি হয়েছে। ফলে সেখানে ভূমি ক্ষয়, ভূমি ধস, বন্যা ও অগ্নিকা- সাধারণ ঘটনা হয়ে পড়েছে।’ তিনি আরও বলেন, ‘রোহিঙ্গা ক্যাম্পগুলোতে সামাজিক-সাংস্কৃতিক, রাজনৈতিকসহ নানা ধরনের প্রাকৃতিক বিপর্যয় ঘটছে, ভবিষ্যতে এটা ‘ভয়াবহ রূপ’ নিতে পারে।’ এসব বিপর্যয় এড়াতে রোহিঙ্গাদের প্রত্যাবাসনকে মূল সমাধান হিসেবে তুলে ধরে অধ্যাপক মাকসুদ কামাল বেশ কিছু সাময়িক সমাধানের কথা তুলে ধরেন। তিনি রোহিঙ্গাদের স্থানান্তর, ভূমি ক্ষয়রোধ, বনায়ন, ড্রেইনেজ সিস্টেম উন্নয়নে পদক্ষেপ নেয়ার পরামর্শ দেন।

ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয় ভূতত্ত্ব বিভাগের অধ্যাপক ড. কাজী মতিন উদ্দিন আহমেদ ‘মনিটরিং অ্যান্ড মডেলিং অব গ্রাউন্ডওয়াটার ইন উখিয়া-টেকনাফ রিজিওন ফর এসেসিং ইম্প্যাক্টস অব হেভি অ্যাবস্ট্রাকশন ডিউ টু রোহিঙ্গা ইনফ্লাক্স’ শীর্ষক প্রবন্ধ উপস্থাপন করেন। তিনি বলেন, ‘বাস্তুচ্যুত রোহিঙ্গাদের জন্য মানবিক সেবা প্রদানের পাশাপাশি ভূগর্ভস্থ জল একটি গুরুত্বপূর্ণ সম্পদ। উখিয়া-টেকনাফ অঞ্চলের ভূগর্ভস্থ পানি সম্পদের জন্য সম্ভাব্য ঝুঁকি রয়েছে যা রোহিঙ্গা প্রবাহের সঙ্গে জড়িত এবং উপযুক্ত ব্যবস্থাপনা পরিকল্পনা হাতে নিয়ে এর অনাকাক্সিক্ষত প্রভাব এড়ানো প্রয়োজন।’

‘রোহিঙ্গাস ইন বাংলাদেশ : সোশ্যাল কোহেশন অ্যান্ড কনফ্লিক্ট ইন দ্য হোস্ট কমিউনিটি’ শীর্ষক প্রবন্ধে বিশ্ববিদ্যালয়ের শান্তি ও সংঘর্ষ অধ্যয়ন বিভাগের অধ্যাপক মো. রফিকুল ইসলাম। তিনি বলেন, ‘রোহিঙ্গাদের নিয়ে স্থানীয় সম্প্রদায়ের অবিশ্বাস ও অভিযোগ দিন দিন বৃদ্ধি পাচ্ছে। সংকট সমাধানে সমগ্র রোহিঙ্গা জনগোষ্ঠীকে মায়ানমারে প্রত্যাবাসন করা ছাড়া আর কোন বিকল্প নেই।’ বিশ্ববিদ্যালয়ের ডিজাস্টার সায়েন্স অ্যান্ড ম্যানেজমেন্ট বিভাগের অধ্যাপক জিল্লুর রহমান রোহিঙ্গাদের ভাসানচরে স্থানান্তরের বিষয়ে কথা বলেন। ইউনিভার্সিটি কলেজ লন্ডনের (ইউসিএল) ডিজাস্টার রিডাকশন ইনস্টিটিউটের পরিচালক অধ্যাপক পিটার স্যামন্ডস বলেন, ‘রোহিঙ্গারা এদেশে আসার পর বাংলাদেশে পাহাড় ধস, পানি দূষণসহ নানা ধরনের মানবসৃষ্ট দুর্যোগের সম্মুখীন হয়েছে। এই প্রাকৃতিক দুর্যোগ ঠেকাতে প্রত্যাবাসন জরুরি।’

ওয়েবিনারে অংশ নিয়ে দুর্যোগ ব্যবস্থাপনা ও ত্রাণ প্রতিমন্ত্রী মো. এনামুর রহমান বলেন, ‘রোহিঙ্গারা মায়ানমারেরই নাগরিক। তাদের অধিকার আছে দেশে ফিরে যাওয়ার, নাগরিক সুযোগ-সুবিধা পাওয়ার। মায়ানমারকে অবশ্যই রোহিঙ্গাদের ফেরত নিতে হবে। রোহিঙ্গা সমস্যা সমাধানে সরকার কাজ করছে। তাদের প্রত্যাবাসনে আন্তর্জাতিক কমিউনিটিকে এগিয়ে আসতে হবে।’ দুর্যোগ ব্যবস্থাপনা ও ত্রাণ মন্ত্রণালয়ের সচিব মো. মোহসীন এবং ফুড অ্যান্ড এগ্রিকালচার অরগানাইজেশনের (ফাও) বাংলাদেশ প্রতিনিধি রবার্ট সিম্পসনও আলোচনায় অংশ নেন।

শনিবার, ১৬ অক্টোবর ২০২১ , ৩১ আশ্বিন ১৪২৮ ০৮ রবিউল আউয়াল ১৪৪৩

রোহিঙ্গাদের প্রত্যাবাসন জরুরি বিলম্বে বিপদই বাড়াবে

সংকট নিরসনে আন্তর্জাতিক সম্প্রদায় মায়ানমারের ওপর চাপ প্রয়োগ করছে না

নিজস্ব বার্তা পরিবেশক

সামাজিক-রাজনৈতিক এবং পরিবেশগত বহুমুখী বিপযর্য় এড়াতে বাংলাদেশে আশ্রয় নেয়া রোহিঙ্গাদের যে মায়ারমারে প্রত্যাবাসন জরুরি। সেই সঙ্গে রোহিঙ্গাদের দেশে ফেরাতে কূটনৈতিক তৎপরতা জোরদার করার পাশাপাশি কক্সবাজারে শরণার্থী ক্যাম্প এলাকায় প্রাকৃতিক বিপযর্য় এড়াতে বিভিন্ন পদক্ষেপ নেয়ার পরামর্শর কথা উঠে এসেছে এক ওয়েবিনারে।

গত বৃহস্পতিবার ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের দুর্যোগ বিজ্ঞান ও ব্যবস্থাপনা বিভাগ এবং ইউনিভার্সিটি কলেজ লন্ডনের (ইউসিএল) ইনস্টিটিউট ফর রিস্ক অ্যান্ড ডিজাস্টার রিডাকশন যৌথভাবে ‘বাংলাদেশে রোহিঙ্গারা : সামাজিক-রাজনৈতিক ও পরিবেশগত দৃষ্টিভঙ্গি’ শীর্ষক ওয়েবিনারের আয়োজন করে। সেখানে বাংলাদেশে রোহিঙ্গাদের অবস্থান দীর্ঘায়িত হওয়ায় যেসব সমস্যা ও ঝুঁকি তৈরি হচ্ছে, সেসব বিষয়ও তুলে ধরেছেন আলোচকরা। প্যানেল আলোচক হিসেবে ছিলেন ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের আর্থ অ্যান্ড এনভায়রনমেন্টাল সায়েন্সেস অনুষদের ডিন অধ্যাপক মো. কাউসার আহাম্মদ, সামাজিক বিজ্ঞান অনুষদের ডিন অধ্যাপক সাদেকা হালিম, আন্তর্জাতিক সম্পর্ক বিভাগের অধ্যাপক দেলোয়ার হোসাইন এবং ইউনিভার্সিটি কলেজ লন্ডনের (ইউসিএল) ডিজাস্টার রিডাকশন ইনস্টিটিউটের প্রভাষক বায়েস আহমেদ। ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয় ডিজাস্টার সায়েন্স অ্যান্ড ম্যানেজমেন্ট বিভাগের চেয়ারম্যান মো. শাখাওয়াত হোসেন ধন্যবাদ জ্ঞাপন করেন।

ওয়েবিনারে ‘ইম্প্যাক্ট অব রোহিঙ্গা ইনফ্লাক্স ইন বাংলাদেশ অন লোকাল টু রিজিওনাল পিস অ্যান্ড স্ট্যাবিলিটি’ শীর্ষক প্রবন্ধ উপস্থাপন করেন ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয় আন্তর্জাতিক সম্পর্ক বিভাগের অধ্যাপক ও সেন্টার ফর জেনোসাইড স্টাডিজের পরিচালক ড. ইমতিয়াজ আহমেদ। তিনি বলেন, ‘রোহিঙ্গা সংকট নিরসনে আন্তর্জাতিক সম্প্রদায় মায়ানমারকে ওভাবে চাপ প্রয়োগ করছে না। এই সমস্যা সমাধানে যেসব দেশ জোরালো ভূমিকা রাখতে পারে, তারা তাদের ব্যবসায়িক স্বার্থ নিয়ে ব্যস্ত। আন্তর্জাতিক সম্প্রদায় মায়ানমারের ওপর নিষেধাজ্ঞা আরোপ করতে পারে, কিন্তু তারা এ বিষয়ে ইতস্তত করছে যে, সেখানে সাধারণ মানুষ ক্ষতিগ্রস্ত হবে।’

তিনি বলেন, ‘আন্তর্জাতিক সম্প্রদায় যদি ইরান বা উত্তর কোরিয়ার ওপর নিষেধাজ্ঞা আরোপ করতে পারে, তাহলে মায়ানমারের ওপর কেন নিষেধাজ্ঞা পুনরায় আরোপ করা যাবে না? এ ধরনের পরস্পরবিরোধী ভূমিকা, মানুষ আন্তর্জাতিক সম্প্রদায়কে গুরুত্ব সহকারে নেবে না।’ তিনি রোহিঙ্গাদের একজনের পরিবর্তে একাধিক নেতা বেছে নেয়ার পরামর্শ দেন।

অধ্যাপক ইমতিয়াজ আহমেদ বলেন, ‘তাদের মধ্যে শুধু একজনই নেতা হওয়া উচিত না। মায়ানমার সামরিক বাহিনী চায় রোহিঙ্গাদের মধ্যে যাতে কোন নেতা না থাকে। বর্তমানে যে সাত কোটি রোহিঙ্গা জনগোষ্ঠী রয়েছে, তাদের কোন নেতা নেই। আমরা দেখছি, রোহিঙ্গা ক্যাম্পেও তারা নেতৃত্বশূন্য।’

ওয়েবিনারে ‘রোহিঙ্গা ইনফ্লাক্স : ন্যাচারাল হ্যাজার্ডস ইন কক্সবাজার রিজিওন’ শীর্ষক প্রবন্ধ উপস্থাপন করেন ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের উপ-উপাচার্য (শিক্ষা) ও দুর্যোগ বিজ্ঞান ও ব্যবস্থাপনা বিভাগের অধ্যাপক এসএম মাকসুদ কামাল।

তিনি বলেন, ‘মানবিক কারণে রোহিঙ্গাদের আশ্রয় দিয়ে বহুমুখী ঝুঁকিতে বাংলাদেশ। পর্যটন নগরী কক্সবাজার এখন পরিবেশ বিপর্যয়ের মুখে। প্রকৃতি, বাস্তুতন্ত্র সম্পূর্ণ ভারসাম্যহীন।’

তিনি আরও বলেন, ‘রোহিঙ্গা প্রবাহের কারণে কক্সবাজারে বন উজাড় করে, পাহাড় কেটে অপরিকল্পিতভাবে আবাসন তৈরি হয়েছে। ফলে সেখানে ভূমি ক্ষয়, ভূমি ধস, বন্যা ও অগ্নিকা- সাধারণ ঘটনা হয়ে পড়েছে।’ তিনি আরও বলেন, ‘রোহিঙ্গা ক্যাম্পগুলোতে সামাজিক-সাংস্কৃতিক, রাজনৈতিকসহ নানা ধরনের প্রাকৃতিক বিপর্যয় ঘটছে, ভবিষ্যতে এটা ‘ভয়াবহ রূপ’ নিতে পারে।’ এসব বিপর্যয় এড়াতে রোহিঙ্গাদের প্রত্যাবাসনকে মূল সমাধান হিসেবে তুলে ধরে অধ্যাপক মাকসুদ কামাল বেশ কিছু সাময়িক সমাধানের কথা তুলে ধরেন। তিনি রোহিঙ্গাদের স্থানান্তর, ভূমি ক্ষয়রোধ, বনায়ন, ড্রেইনেজ সিস্টেম উন্নয়নে পদক্ষেপ নেয়ার পরামর্শ দেন।

ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয় ভূতত্ত্ব বিভাগের অধ্যাপক ড. কাজী মতিন উদ্দিন আহমেদ ‘মনিটরিং অ্যান্ড মডেলিং অব গ্রাউন্ডওয়াটার ইন উখিয়া-টেকনাফ রিজিওন ফর এসেসিং ইম্প্যাক্টস অব হেভি অ্যাবস্ট্রাকশন ডিউ টু রোহিঙ্গা ইনফ্লাক্স’ শীর্ষক প্রবন্ধ উপস্থাপন করেন। তিনি বলেন, ‘বাস্তুচ্যুত রোহিঙ্গাদের জন্য মানবিক সেবা প্রদানের পাশাপাশি ভূগর্ভস্থ জল একটি গুরুত্বপূর্ণ সম্পদ। উখিয়া-টেকনাফ অঞ্চলের ভূগর্ভস্থ পানি সম্পদের জন্য সম্ভাব্য ঝুঁকি রয়েছে যা রোহিঙ্গা প্রবাহের সঙ্গে জড়িত এবং উপযুক্ত ব্যবস্থাপনা পরিকল্পনা হাতে নিয়ে এর অনাকাক্সিক্ষত প্রভাব এড়ানো প্রয়োজন।’

‘রোহিঙ্গাস ইন বাংলাদেশ : সোশ্যাল কোহেশন অ্যান্ড কনফ্লিক্ট ইন দ্য হোস্ট কমিউনিটি’ শীর্ষক প্রবন্ধে বিশ্ববিদ্যালয়ের শান্তি ও সংঘর্ষ অধ্যয়ন বিভাগের অধ্যাপক মো. রফিকুল ইসলাম। তিনি বলেন, ‘রোহিঙ্গাদের নিয়ে স্থানীয় সম্প্রদায়ের অবিশ্বাস ও অভিযোগ দিন দিন বৃদ্ধি পাচ্ছে। সংকট সমাধানে সমগ্র রোহিঙ্গা জনগোষ্ঠীকে মায়ানমারে প্রত্যাবাসন করা ছাড়া আর কোন বিকল্প নেই।’ বিশ্ববিদ্যালয়ের ডিজাস্টার সায়েন্স অ্যান্ড ম্যানেজমেন্ট বিভাগের অধ্যাপক জিল্লুর রহমান রোহিঙ্গাদের ভাসানচরে স্থানান্তরের বিষয়ে কথা বলেন। ইউনিভার্সিটি কলেজ লন্ডনের (ইউসিএল) ডিজাস্টার রিডাকশন ইনস্টিটিউটের পরিচালক অধ্যাপক পিটার স্যামন্ডস বলেন, ‘রোহিঙ্গারা এদেশে আসার পর বাংলাদেশে পাহাড় ধস, পানি দূষণসহ নানা ধরনের মানবসৃষ্ট দুর্যোগের সম্মুখীন হয়েছে। এই প্রাকৃতিক দুর্যোগ ঠেকাতে প্রত্যাবাসন জরুরি।’

ওয়েবিনারে অংশ নিয়ে দুর্যোগ ব্যবস্থাপনা ও ত্রাণ প্রতিমন্ত্রী মো. এনামুর রহমান বলেন, ‘রোহিঙ্গারা মায়ানমারেরই নাগরিক। তাদের অধিকার আছে দেশে ফিরে যাওয়ার, নাগরিক সুযোগ-সুবিধা পাওয়ার। মায়ানমারকে অবশ্যই রোহিঙ্গাদের ফেরত নিতে হবে। রোহিঙ্গা সমস্যা সমাধানে সরকার কাজ করছে। তাদের প্রত্যাবাসনে আন্তর্জাতিক কমিউনিটিকে এগিয়ে আসতে হবে।’ দুর্যোগ ব্যবস্থাপনা ও ত্রাণ মন্ত্রণালয়ের সচিব মো. মোহসীন এবং ফুড অ্যান্ড এগ্রিকালচার অরগানাইজেশনের (ফাও) বাংলাদেশ প্রতিনিধি রবার্ট সিম্পসনও আলোচনায় অংশ নেন।