সমবায়ের নামে গ্রাহকের ৫০ কোটি টাকা নিয়ে উধাও সমিতি

নরসিংদীর মনোহরদীর খিদিরপুরে শাহ্ সুলতান সঞ্চয় ও ঋণদান সমবায় সমিতি নামে গ্রাহকদের অর্ধশত কোটি টাকা আমানত ও সঞ্চয় নিয়ে পালিয়ে গেছে । গত ১২ অক্টোবর) গ্রাহকরা আমানত ফেরত নিতে এসে দেখেন কার্যালয় তালাবন্ধ দেখতে পান । কর্মকর্তারাও লাপাত্তা। এরপর থেকে প্রতিদিন ভুক্তভোগী গ্রাহকরা কার্যালয়ের সামনে ভিড় করেন। জানা গছে প্রায় ৫০০ অসহায় গ্রাহক ও তাদের পরিবার সর্বস্বান্ত।

মনতলা ফাযিল মাদরাসার সহকারী মৌলভী মাওলানা আবুল কালাম আজাদ সমিতির উদ্যোক্তা যিনি জামায়াতে ইসলামীর রাজনীতির সঙ্গেও সম্পৃক্ত ছিলেন। তিনি নরসিংদীর ঘোড়াদিয়া-সংগীতা রোড, গাজী মার্কেটের দ্বিতীয় তলায় প্রধান কার্যালয়ের ঠিকানা দেখিয়ে কার্যক্রম শুরু করে এ সমিতি। ২০ জন কমিটির এই সমিতির সহসভাপতি পশ্চিম বীরগাঁও বালিকা দাখিল মাদরাসার সুপার হাবিবুর রহমান পাঠান, সাধারণ সম্পাদক মনতলা ফাযিল মাদরাসা সহকারী মৌলভী মো. মফিজ উদ্দিন, এই মাদরাসার ইবতেদায়ী মৌলভী মুজিবুর রহমান ছিলেন ব্যবস্থাপনা কমিটির সদস্য। তাদেরকে সহযোগীতা করেছেন মনতলা আশরাফিয়া বালিকা দাখিল মাদরাসার সহকারী শিক্ষক মাওলানা মুজিবুর রহমান, চরসাগরদী আলিম মাদরাসার শিক্ষক উসমান গণি, পাড়াতলা গ্রামের হাদিউল ইসলাম। সমিতির নামে প্রতারণা করায় আবুল কালাম আজাদ, মো. মফিজ উদ্দিন এবং মুজিবুর রহমান সাহীকে সাময়িক বরখাস্ত, বেতন স্থগিত এবং চাকুরীচ্যুত কেন করা হবে না এই মর্মে কারণ দর্শনোর নোটিশ দিয়েছে মনতলা ফাযিল মাদরাসার অধ্যক্ষ।

জানা যায়, শাহ সুলতান সঞ্চয় ও ঋণদান সমবায় সমিতি নামে ২০১৩ সালেসালে জেলা সমবায় কার্যালয় থেকে (০০০৪০) রেজিষ্ট্রেশন নিয়ে মনোহরদী উপজেলার খিদিরপুর বাজার এলাকায় শুরু করে ক্ষুদ্র ঋণ কার্যক্রম। এনজিওটি খিদিরপুর ইউনিয়নসহ আশপাশের কয়েকটি এলাকায় কার্যক্রম চালিয়ে আসছিল। তারা মাঠ কর্মীর মাধ্যমে ১ লাখ টাকার ডিপিএস করলে প্রতিমাসে এক হাজার ৪০০ টাকা লাভ দেওয়ার কথা বলে। এছাড়াও বিভিন্ন প্রকল্পে সঞ্চয় স্কীমের নাম করে বিপুল পরিমাণ জামানত আদায় করা হয়। এ হিসেবে ওই কার্যালয়ের প্রায় ৫শ’ গ্রাহক থেকে অর্ধশতকোটি টাকা গ্রহণ করে সমিতিটি।

কাজিরচর গ্রামের দিনমজুর ফালু বলেন, সমিতির সভাপতি মাওলানা আবুল কালামকে বিশ্বাস করে তার এনজিওতে জমি বিক্রির চার লাখ টাকা আমানত রেখেছিলাম। এই টাকা না পেলে ভিক্ষা করা ছাড়া কোন উপায় থাকবে না।

খিদিরপুর ইউনিয়নের নয়াপাড়া গ্রামের হাজেরা বেগম জানান, প্রবাসী স্বামীর কষ্টার্জিত সব আয়, মা, বোন এবং ভাগিনার কাছে ১৯ লাখ টাকা এনে সমিতিতে জমা রাখি। এই টাকা না পেলে স্বামীর সংসার ছাড়তে হবে। বাবার বাড়িতেও আমার জায়গা হবে না।

এ ছাড়াও রামপুর গ্রামের উপসহকারী কমিউনিটি মেডিক্যাল অফিসার তপন কুমার বণিকও তার পরিবারের এক কোটি পাঁচ লাখ, চরমান্দালিয়া গ্রামের কানন মিয়া ও তার প্রবাসী শ^শুর এবং ফুফার ৩৮ লাখ টাকা, রামপুর গ্রামের আশরাফুল ইসলামের ৩০ লাখ, নয়াপড়া গ্রামের নিপা বেগমের ১০ লাখ, কালিরচরের জনি আক্তারের সাড়ে ৬ লাখ, একই গ্রামের কাউসার মিয়ার ৫ লাখ টাকা,পশ্চিম চরমান্দালিয়া গ্রামের আব্দুস সালামের ৮ লাখ, সুবর্না আক্তারের ৬ লাখ টাকা, আব্দুল কাদিরের ২ লাখ, সোহেল মিয়ার সাড়ে ৪ লাখ, সাবিনা আক্তারের সাড়ে ৪ লাখ, ঝরনা বেগমের ২ লাখ টাকা আমানত রেখেছেন।

এ বিষয়ে কথা বলতে আবুল কালাম আজাদের বাড়িতে গিয়ে তাকে পাওয়া যায়নি। তবে তার ১০ম শ্রেনীতে পড়–য়া মেয়ে নাইমা জানিয়েছেন তার বাবা পলাতক নয়। জরুরী কাজে নরসিংদী গেছেন।

এ বিষয়ে উপজেলা সমবায় কর্মকর্তা মো. ওমর ফারুক জানান, শাহ সুলতান সঞ্চয় ও ঋণদান সমবায় সমিতির তালাবদ্ধ করে কর্মকর্তারা পালিয়ে গেছেন বলে জানতে পেরেছি। আমাদের কাছে কেউ লিখিত অভিযোগ করেননি।

এসব বিষয়ে উপজেলা নির্বাহী কর্মকর্তা এএসএম কাসেম বলেন, বিষয়টি খিদিরপুর ইউপি চেয়ারম্যানের মাধ্যমে জানতে পেরেছি। উপজেলা সমবায় কর্মকর্তাকে সমিতি পরিদর্শন করার নির্দেশ দেওয়া হয়েছে।

সোমবার, ১৮ অক্টোবর ২০২১ , ০২ কার্তিক ১৪২৮ ১০ রবিউল আউয়াল ১৪৪৩

সমবায়ের নামে গ্রাহকের ৫০ কোটি টাকা নিয়ে উধাও সমিতি

প্রতিনিধি, মনোহরদী (নরসিংদী)

নরসিংদীর মনোহরদীর খিদিরপুরে শাহ্ সুলতান সঞ্চয় ও ঋণদান সমবায় সমিতি নামে গ্রাহকদের অর্ধশত কোটি টাকা আমানত ও সঞ্চয় নিয়ে পালিয়ে গেছে । গত ১২ অক্টোবর) গ্রাহকরা আমানত ফেরত নিতে এসে দেখেন কার্যালয় তালাবন্ধ দেখতে পান । কর্মকর্তারাও লাপাত্তা। এরপর থেকে প্রতিদিন ভুক্তভোগী গ্রাহকরা কার্যালয়ের সামনে ভিড় করেন। জানা গছে প্রায় ৫০০ অসহায় গ্রাহক ও তাদের পরিবার সর্বস্বান্ত।

মনতলা ফাযিল মাদরাসার সহকারী মৌলভী মাওলানা আবুল কালাম আজাদ সমিতির উদ্যোক্তা যিনি জামায়াতে ইসলামীর রাজনীতির সঙ্গেও সম্পৃক্ত ছিলেন। তিনি নরসিংদীর ঘোড়াদিয়া-সংগীতা রোড, গাজী মার্কেটের দ্বিতীয় তলায় প্রধান কার্যালয়ের ঠিকানা দেখিয়ে কার্যক্রম শুরু করে এ সমিতি। ২০ জন কমিটির এই সমিতির সহসভাপতি পশ্চিম বীরগাঁও বালিকা দাখিল মাদরাসার সুপার হাবিবুর রহমান পাঠান, সাধারণ সম্পাদক মনতলা ফাযিল মাদরাসা সহকারী মৌলভী মো. মফিজ উদ্দিন, এই মাদরাসার ইবতেদায়ী মৌলভী মুজিবুর রহমান ছিলেন ব্যবস্থাপনা কমিটির সদস্য। তাদেরকে সহযোগীতা করেছেন মনতলা আশরাফিয়া বালিকা দাখিল মাদরাসার সহকারী শিক্ষক মাওলানা মুজিবুর রহমান, চরসাগরদী আলিম মাদরাসার শিক্ষক উসমান গণি, পাড়াতলা গ্রামের হাদিউল ইসলাম। সমিতির নামে প্রতারণা করায় আবুল কালাম আজাদ, মো. মফিজ উদ্দিন এবং মুজিবুর রহমান সাহীকে সাময়িক বরখাস্ত, বেতন স্থগিত এবং চাকুরীচ্যুত কেন করা হবে না এই মর্মে কারণ দর্শনোর নোটিশ দিয়েছে মনতলা ফাযিল মাদরাসার অধ্যক্ষ।

জানা যায়, শাহ সুলতান সঞ্চয় ও ঋণদান সমবায় সমিতি নামে ২০১৩ সালেসালে জেলা সমবায় কার্যালয় থেকে (০০০৪০) রেজিষ্ট্রেশন নিয়ে মনোহরদী উপজেলার খিদিরপুর বাজার এলাকায় শুরু করে ক্ষুদ্র ঋণ কার্যক্রম। এনজিওটি খিদিরপুর ইউনিয়নসহ আশপাশের কয়েকটি এলাকায় কার্যক্রম চালিয়ে আসছিল। তারা মাঠ কর্মীর মাধ্যমে ১ লাখ টাকার ডিপিএস করলে প্রতিমাসে এক হাজার ৪০০ টাকা লাভ দেওয়ার কথা বলে। এছাড়াও বিভিন্ন প্রকল্পে সঞ্চয় স্কীমের নাম করে বিপুল পরিমাণ জামানত আদায় করা হয়। এ হিসেবে ওই কার্যালয়ের প্রায় ৫শ’ গ্রাহক থেকে অর্ধশতকোটি টাকা গ্রহণ করে সমিতিটি।

কাজিরচর গ্রামের দিনমজুর ফালু বলেন, সমিতির সভাপতি মাওলানা আবুল কালামকে বিশ্বাস করে তার এনজিওতে জমি বিক্রির চার লাখ টাকা আমানত রেখেছিলাম। এই টাকা না পেলে ভিক্ষা করা ছাড়া কোন উপায় থাকবে না।

খিদিরপুর ইউনিয়নের নয়াপাড়া গ্রামের হাজেরা বেগম জানান, প্রবাসী স্বামীর কষ্টার্জিত সব আয়, মা, বোন এবং ভাগিনার কাছে ১৯ লাখ টাকা এনে সমিতিতে জমা রাখি। এই টাকা না পেলে স্বামীর সংসার ছাড়তে হবে। বাবার বাড়িতেও আমার জায়গা হবে না।

এ ছাড়াও রামপুর গ্রামের উপসহকারী কমিউনিটি মেডিক্যাল অফিসার তপন কুমার বণিকও তার পরিবারের এক কোটি পাঁচ লাখ, চরমান্দালিয়া গ্রামের কানন মিয়া ও তার প্রবাসী শ^শুর এবং ফুফার ৩৮ লাখ টাকা, রামপুর গ্রামের আশরাফুল ইসলামের ৩০ লাখ, নয়াপড়া গ্রামের নিপা বেগমের ১০ লাখ, কালিরচরের জনি আক্তারের সাড়ে ৬ লাখ, একই গ্রামের কাউসার মিয়ার ৫ লাখ টাকা,পশ্চিম চরমান্দালিয়া গ্রামের আব্দুস সালামের ৮ লাখ, সুবর্না আক্তারের ৬ লাখ টাকা, আব্দুল কাদিরের ২ লাখ, সোহেল মিয়ার সাড়ে ৪ লাখ, সাবিনা আক্তারের সাড়ে ৪ লাখ, ঝরনা বেগমের ২ লাখ টাকা আমানত রেখেছেন।

এ বিষয়ে কথা বলতে আবুল কালাম আজাদের বাড়িতে গিয়ে তাকে পাওয়া যায়নি। তবে তার ১০ম শ্রেনীতে পড়–য়া মেয়ে নাইমা জানিয়েছেন তার বাবা পলাতক নয়। জরুরী কাজে নরসিংদী গেছেন।

এ বিষয়ে উপজেলা সমবায় কর্মকর্তা মো. ওমর ফারুক জানান, শাহ সুলতান সঞ্চয় ও ঋণদান সমবায় সমিতির তালাবদ্ধ করে কর্মকর্তারা পালিয়ে গেছেন বলে জানতে পেরেছি। আমাদের কাছে কেউ লিখিত অভিযোগ করেননি।

এসব বিষয়ে উপজেলা নির্বাহী কর্মকর্তা এএসএম কাসেম বলেন, বিষয়টি খিদিরপুর ইউপি চেয়ারম্যানের মাধ্যমে জানতে পেরেছি। উপজেলা সমবায় কর্মকর্তাকে সমিতি পরিদর্শন করার নির্দেশ দেওয়া হয়েছে।