নিরবচ্ছিন্ন যোগাযোগ ব্যবস্থার সুফল পাবে দক্ষিণাঞ্চলের মানুষ
স্বপ্নের ‘পায়রা সেতু’ খুলে দেয়া হলো সর্বসাধারণের জন্য। সেতুটি চালু হওয়ায় দক্ষিণ অঞ্চলে কৃষি, শিল্প ও পর্যটন খাতের প্রসার ঘটবে বলে মনে করছেন উদ্যোক্তা ও স্থানীয়রা । যোগাযোগব্যবস্থা নিরবচ্ছিন্ন হওয়ায় এর সুফল মিলবে সামগ্রিক অর্থনীতি ও মানুষের জীবনযাত্রায়। আগের তুলনায় সময় কম লাগায় কমে আসবে খরচও। চাঞ্চল্যময় হয়ে উঠবে দক্ষিণের অর্থনীতি। উন্নয়নে রূপান্তর ঘটবে দুর্গম উপকূলবাসীর জীবনযাত্রার মান। গতকাল গণভবন থেকে ভিডিও কনফারেন্সের মাধ্যমে প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা পায়রা সেতু উদ্বোধন করেন।
প্রায় দেড় হাজার কোটি টাকা ব্যয়ে নির্মিত দেড় কিলোমিটার দীর্ঘ এ সেতু চালু হওয়ায় সড়কপথে সরাসরি কুয়াকাটা পৌঁছানো আরও সহজ হলো। বরিশালের সঙ্গে পটুয়াখালী ও বরগুনার সড়ক যোগাযোগে ফেরি পারাপারের ভোগান্তি কমানোর পাশাপাশি সময় ও অর্থ বাঁচাবে এ সেতু। একসময় সড়কপথে ঢাকা থেকে বরিশাল হয়ে সমুদ্র সৈকত কুয়াকাটা যেতে দশটি ফেরি পার হতে হতো। বিগত বছরগুলোতে সড়ক অবকাঠামোর ব্যাপক উন্নয়নের ফলে এই পথে বাকি ছিল কেবল দুটি ফেরি। এরমধ্যে পায়রা নদীতে সেতু চালু হওয়ায় এখন বাকি থাকল কেবল পদ্মা। আগামী বছর পদ্মা সেতু চালু হয়ে গেলে কোন ফেরি পারাপার ছাড়াই ঢাকা থেকে সড়কপথে কুয়াকাটা যাওয়া যাবে। বরিশাল থেকে কুয়াকাটা যেতে সর্বোচ্চ দুই ঘণ্টা সময় লাগবে।
পরিকল্পনা মন্ত্রণালয়ের ২০২০ সালে করা পায়রা সেতু নির্মাণ প্রকল্পের দ্বিতীয় (সংশোধিত) পরিবীক্ষণ প্রতিবেদন অনুযায়ী সেতুটি বাস্তবায়নের ফলে এ অঞ্চলের যোগাযোগব্যবস্থার বৈপ্লবিক পরিবর্তন ঘটবে। এতে কুয়াকাটা, তালতলীর টেংরাগিরি, শুভসন্ধ্যা, বরগুনা, পাথরঘাটাসহ সংলগ্ন এলাকা এমনকি সুন্দরবনকেন্দ্রিক পর্যটনশিল্পের বিকাশ ত্বরান্বিত হবে। পাশাপাশি পায়রা বন্দরের সঙ্গে মোংলা বন্দর, রাজধানী ঢাকা ও সারাদেশের নিরবচ্ছিন্ন যোগাযোগ স্থাপিত হবে। পায়রা তাপবিদ্যুৎকেন্দ্র, তালতলী তাপবিদ্যুৎকেন্দ্র, জাহাজ নির্মাণ শিল্পের পরিকল্পনা গতি পাবে। ফলে এ অঞ্চলের আর্থসামাজিক ক্ষেত্র অভূতপূর্ব প্রসার ঘটবে। দারিদ্র্য বিমোচন ও মানুষের আয় বৃদ্ধি পাবে।
সমীক্ষায় ২০১১ সালের এক জরিপের বরাত দিয়ে উল্লেখ করা হয়েছে, লেবুখালী ফেরি পারাপারে প্রতিটি যানবাহনের সর্বনি¤œ ১১ মিনিট এবং সর্বোচ্চ ১ ঘণ্টা ১৬ মিনিট বিলম্ব হয়েছে। সেতু চালু হওয়ায় এই সময় হ্রাস পাবে। যাত্রীদের ভোগান্তি কমার পাশাপাশি যানবাহনের সংরক্ষণ ব্যয় কমবে।
বরিশাল উইমেন চেম্বার অব কমার্স অ্যান্ড ইন্ডাস্ট্রি লিলি আহমেদ বলেন, অর্থনৈতিক কর্মকা-ে দক্ষিণাঞ্চল পিছিয়ে থাকার জন্য যোগাযোগ ব্যবস্থায় মূলত দায়ী ছিল। পায়রা সেতুটি হওয়ায় পটুয়াখালী ও বরগুনা জেলার সঙ্গে যোগাযোগের ক্ষেত্রে একটি বড় বাধার সমাপ্তি হলো। এখন পদ্মা সেতু চালু হলে ঢাকার সঙ্গে আমাদের দূরত্ব কমবে।
তিনি বলেন, যোগাযোগ ব্যবস্থা উন্নতির সঙ্গে দেশের অর্থনীতির চাকাও গতি পায়। অর্থনীতির পরিধিও বাড়ে। নদীর মাঝে সেতু না থাকায় এক পাড়ের ব্যবসায়ীরা অন্য পাড়ে বিনিয়োগ করতো না। সেতু হওয়ায় এখন দেশের অন্যান্য অঞ্চলের ব্যবসায়ীরাও এখানে বিনিয়োগ করবে। ঢাকা থেকে চট্টগ্রাম বন্দরে পণ্য যেতে সময় লাগে ৮ থেকে ১০ ঘণ্টা। পদ্মা সেতু চালু হলে বরিশাল থেকে পায়রা ও মোংলা যেতে লাগবে মাত্র ২ ঘণ্টা।
কুয়াকাটা হোটেল-মোটেল মালিক সমিতির সাধারণ সম্পাদক মোতালেব শরীফ বলেন, আগে দূরত্ব ও ভোগান্তির কথা ভেবে অনেক মানুষ কুয়াকাটায় আসতে চাইতেন না। কিন্তু এখন সেতু হয়ে যাওয়ায় পর্যটকরা আগ্রহী হবে। সামনের বছর পদ্মা সেতু হয়ে গেলে তখন পায়রা সেতুর শতভাগ সুবিধা ভোগ করা সম্ভব হবে। কারণ তখন আর কোন ফেরি না থাকায় ঢাকা ও অন্যান্য জেলা থেকে পর্যটকদের আনাগোনা বাড়বে।
বাংলাদেশ সরকার ও কুয়েত ফান্ড ফর আরব ইকোনমিক ডেভেলপমেন্টের যৌথ অর্থায়নে চীনের ঠিকাদারি প্রতিষ্ঠান ‘লংজিয়ান রোডস অ্যান্ড ব্রিজ কোম্পানি’ সেতুটি নির্মাণ করেছে। দৃষ্টিনন্দন এ সেতু নির্মাণ করা হয়েছে ‘এক্সট্রাডোজড কেবল স্টেইড’ প্রযুক্তিতে, চট্টগ্রামের কর্ণফুলী নদীর উপর শাহ আমানত সেতুও একই পদ্ধতিতে নির্মিত।
পানি প্রবাহ ঠিক রাখতে পায়রা নদীর মাঝখানে মাত্র একটি বড় পিয়ার স্থাপন করে গড়ে তোলা হয়েছে এক হাজার ৪৭০ মিটার দৈর্ঘ্য (১.৪৭ কিলোমিটার) ও ১৯ দশমিক ৭৬ মিটার প্রস্থের সেতুটি। পুরো সেতুটি নির্মাণে খরচ হয়েছে ১১১৭.৮১ কোটি টাকা। ১৩০ মিটার গভীর পাইলিং করে বসানো হয়েছে পিয়ারটি। ভূমিকম্পের মতো দুর্যোগ থেকে সেতুকে নিরাপদ রাখতে ব্যবহার করা হয়েছে ‘ব্রিজ হেলথ মনিটর’। এ প্রযুক্তিতে সেতুর ক্ষতি হতে পারে এমন অতিরিক্ত ভারি যানবাহন সেতুতে উঠলেও বেজে উঠবে বিপদ সংকেত। এই সেতুর জন্য আলাদা সাব স্টেশনের মাধ্যমে সেতুতে বিদ্যুৎ সরবরাহের মাধ্যমে বাতি জ্বলবে । থাকছে সৌর বিদ্যুতের ব্যবস্থাও।
প্রকল্প কর্মকর্তারা জানান, সরকার ২০১২ সালের মে মাসে সেতু নির্মাণের প্রকল্পে অনুমোদন দেয়। বিদেশি অর্থায়নে নির্মিত প্রকল্পটি ২০১৬ সালের ডিসেম্বরের মধ্যে সেতু নির্মাণ শেষ হওয়ার কথা এবং ব্যয় ধরা হয়েছিল ৪১৩ দশমিক ২৮ কোটি টাকা। কিন্তু সেতুর প্রাথমিক নকশাটিতে অনেক পরিবর্তন এনে পরামর্শদাতারা টেন্ডারের নথি প্রস্তুত করে, দরপত্র প্রক্রিয়ায় প্রতিটি পর্যায়ে দাতা সংস্থার সম্মতি নিতে হয়েছে। ফলে নির্মাণ কাজ শুরু হতে দেরি হয়ে যায়।
এছাড়াও প্রাথমিক পর্যায়ে প্রকল্প ব্যয় একটি ধারণাগত নকশার ভিত্তিতে অনুমান করা হয়েছিল। কিন্তু পরে বিস্তারিত নকশা অনুসারে প্রকৃত নির্মাণ ব্যয় চূড়ান্ত করা হয়। ফলে সেতু নির্মাণ ব্যয় বেড়ে যায়। সর্বশেষ এই সেতুটি নির্মাণে চুক্তিমূল্য ছিল এক হাজার ১৭০ কোটি টাকা। তবে সেতুটি নির্মাণে ব্যয় হচ্ছে এক হাজার ১১৮ কোটি। সাশ্রয় হয়েছে ৫২ কোটি টাকা। এ সেতু নির্মাণের জন্য একনেকে প্রকল্প অনুমোদন হয়েছিল ২০১২ সালের ৮ মে। পরের বছর তেরই মার্চ এটির ভিত্তিপ্রস্তর স্থাপন করা হয়। ২০১৬ সালের ২৪ জুলাই সেতুটির নির্মাণ কাজ শুরু হয়।
পায়রা সেতু প্রকল্পের পরিচালক আবদুল হালিম বলেন, এই সেতুর ফলে পায়রা নদী বন্দর এবং কুয়াকাটা পর্যটন সৈকতের সঙ্গে নিরবচ্ছিন্ন যোগাযোগ তৈরি হলো। কাউকে পথে আর কোন বাধার মুখে পড়তে হবে না। ফেরিতে যে সময় ব্যয় হতো, যে যানজট হতো, তা থেকে মানুষ মুক্তি পাবে। এর ফলে বেশ কিছু সুবিধা আসবে জানিয়ে তিনি বলেন, এসব এলাকায় শিল্পায়ন হবে, ব্যবসা বাণিজ্য সম্প্রসারণ হবে, কুয়াকাটাসহ অন্যান্য এলাকার পর্যটন বিকশিত হবে, সবমিলিয়ে মানুষের আর্থসামাজিক অবস্থার উন্নতি হবে।
খুলে দেয়ার পর মানুষের পদচারণায় মুখরিত পায়রা সেতু -সংগৃহিত
আরও খবরসোমবার, ২৫ অক্টোবর ২০২১ , ০৯ কার্তিক ১৪২৮ ১৭ রবিউল আউয়াল ১৪৪৩
নিরবচ্ছিন্ন যোগাযোগ ব্যবস্থার সুফল পাবে দক্ষিণাঞ্চলের মানুষ
নিজস্ব বার্তা পরিবেশক
খুলে দেয়ার পর মানুষের পদচারণায় মুখরিত পায়রা সেতু -সংগৃহিত
স্বপ্নের ‘পায়রা সেতু’ খুলে দেয়া হলো সর্বসাধারণের জন্য। সেতুটি চালু হওয়ায় দক্ষিণ অঞ্চলে কৃষি, শিল্প ও পর্যটন খাতের প্রসার ঘটবে বলে মনে করছেন উদ্যোক্তা ও স্থানীয়রা । যোগাযোগব্যবস্থা নিরবচ্ছিন্ন হওয়ায় এর সুফল মিলবে সামগ্রিক অর্থনীতি ও মানুষের জীবনযাত্রায়। আগের তুলনায় সময় কম লাগায় কমে আসবে খরচও। চাঞ্চল্যময় হয়ে উঠবে দক্ষিণের অর্থনীতি। উন্নয়নে রূপান্তর ঘটবে দুর্গম উপকূলবাসীর জীবনযাত্রার মান। গতকাল গণভবন থেকে ভিডিও কনফারেন্সের মাধ্যমে প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা পায়রা সেতু উদ্বোধন করেন।
প্রায় দেড় হাজার কোটি টাকা ব্যয়ে নির্মিত দেড় কিলোমিটার দীর্ঘ এ সেতু চালু হওয়ায় সড়কপথে সরাসরি কুয়াকাটা পৌঁছানো আরও সহজ হলো। বরিশালের সঙ্গে পটুয়াখালী ও বরগুনার সড়ক যোগাযোগে ফেরি পারাপারের ভোগান্তি কমানোর পাশাপাশি সময় ও অর্থ বাঁচাবে এ সেতু। একসময় সড়কপথে ঢাকা থেকে বরিশাল হয়ে সমুদ্র সৈকত কুয়াকাটা যেতে দশটি ফেরি পার হতে হতো। বিগত বছরগুলোতে সড়ক অবকাঠামোর ব্যাপক উন্নয়নের ফলে এই পথে বাকি ছিল কেবল দুটি ফেরি। এরমধ্যে পায়রা নদীতে সেতু চালু হওয়ায় এখন বাকি থাকল কেবল পদ্মা। আগামী বছর পদ্মা সেতু চালু হয়ে গেলে কোন ফেরি পারাপার ছাড়াই ঢাকা থেকে সড়কপথে কুয়াকাটা যাওয়া যাবে। বরিশাল থেকে কুয়াকাটা যেতে সর্বোচ্চ দুই ঘণ্টা সময় লাগবে।
পরিকল্পনা মন্ত্রণালয়ের ২০২০ সালে করা পায়রা সেতু নির্মাণ প্রকল্পের দ্বিতীয় (সংশোধিত) পরিবীক্ষণ প্রতিবেদন অনুযায়ী সেতুটি বাস্তবায়নের ফলে এ অঞ্চলের যোগাযোগব্যবস্থার বৈপ্লবিক পরিবর্তন ঘটবে। এতে কুয়াকাটা, তালতলীর টেংরাগিরি, শুভসন্ধ্যা, বরগুনা, পাথরঘাটাসহ সংলগ্ন এলাকা এমনকি সুন্দরবনকেন্দ্রিক পর্যটনশিল্পের বিকাশ ত্বরান্বিত হবে। পাশাপাশি পায়রা বন্দরের সঙ্গে মোংলা বন্দর, রাজধানী ঢাকা ও সারাদেশের নিরবচ্ছিন্ন যোগাযোগ স্থাপিত হবে। পায়রা তাপবিদ্যুৎকেন্দ্র, তালতলী তাপবিদ্যুৎকেন্দ্র, জাহাজ নির্মাণ শিল্পের পরিকল্পনা গতি পাবে। ফলে এ অঞ্চলের আর্থসামাজিক ক্ষেত্র অভূতপূর্ব প্রসার ঘটবে। দারিদ্র্য বিমোচন ও মানুষের আয় বৃদ্ধি পাবে।
সমীক্ষায় ২০১১ সালের এক জরিপের বরাত দিয়ে উল্লেখ করা হয়েছে, লেবুখালী ফেরি পারাপারে প্রতিটি যানবাহনের সর্বনি¤œ ১১ মিনিট এবং সর্বোচ্চ ১ ঘণ্টা ১৬ মিনিট বিলম্ব হয়েছে। সেতু চালু হওয়ায় এই সময় হ্রাস পাবে। যাত্রীদের ভোগান্তি কমার পাশাপাশি যানবাহনের সংরক্ষণ ব্যয় কমবে।
বরিশাল উইমেন চেম্বার অব কমার্স অ্যান্ড ইন্ডাস্ট্রি লিলি আহমেদ বলেন, অর্থনৈতিক কর্মকা-ে দক্ষিণাঞ্চল পিছিয়ে থাকার জন্য যোগাযোগ ব্যবস্থায় মূলত দায়ী ছিল। পায়রা সেতুটি হওয়ায় পটুয়াখালী ও বরগুনা জেলার সঙ্গে যোগাযোগের ক্ষেত্রে একটি বড় বাধার সমাপ্তি হলো। এখন পদ্মা সেতু চালু হলে ঢাকার সঙ্গে আমাদের দূরত্ব কমবে।
তিনি বলেন, যোগাযোগ ব্যবস্থা উন্নতির সঙ্গে দেশের অর্থনীতির চাকাও গতি পায়। অর্থনীতির পরিধিও বাড়ে। নদীর মাঝে সেতু না থাকায় এক পাড়ের ব্যবসায়ীরা অন্য পাড়ে বিনিয়োগ করতো না। সেতু হওয়ায় এখন দেশের অন্যান্য অঞ্চলের ব্যবসায়ীরাও এখানে বিনিয়োগ করবে। ঢাকা থেকে চট্টগ্রাম বন্দরে পণ্য যেতে সময় লাগে ৮ থেকে ১০ ঘণ্টা। পদ্মা সেতু চালু হলে বরিশাল থেকে পায়রা ও মোংলা যেতে লাগবে মাত্র ২ ঘণ্টা।
কুয়াকাটা হোটেল-মোটেল মালিক সমিতির সাধারণ সম্পাদক মোতালেব শরীফ বলেন, আগে দূরত্ব ও ভোগান্তির কথা ভেবে অনেক মানুষ কুয়াকাটায় আসতে চাইতেন না। কিন্তু এখন সেতু হয়ে যাওয়ায় পর্যটকরা আগ্রহী হবে। সামনের বছর পদ্মা সেতু হয়ে গেলে তখন পায়রা সেতুর শতভাগ সুবিধা ভোগ করা সম্ভব হবে। কারণ তখন আর কোন ফেরি না থাকায় ঢাকা ও অন্যান্য জেলা থেকে পর্যটকদের আনাগোনা বাড়বে।
বাংলাদেশ সরকার ও কুয়েত ফান্ড ফর আরব ইকোনমিক ডেভেলপমেন্টের যৌথ অর্থায়নে চীনের ঠিকাদারি প্রতিষ্ঠান ‘লংজিয়ান রোডস অ্যান্ড ব্রিজ কোম্পানি’ সেতুটি নির্মাণ করেছে। দৃষ্টিনন্দন এ সেতু নির্মাণ করা হয়েছে ‘এক্সট্রাডোজড কেবল স্টেইড’ প্রযুক্তিতে, চট্টগ্রামের কর্ণফুলী নদীর উপর শাহ আমানত সেতুও একই পদ্ধতিতে নির্মিত।
পানি প্রবাহ ঠিক রাখতে পায়রা নদীর মাঝখানে মাত্র একটি বড় পিয়ার স্থাপন করে গড়ে তোলা হয়েছে এক হাজার ৪৭০ মিটার দৈর্ঘ্য (১.৪৭ কিলোমিটার) ও ১৯ দশমিক ৭৬ মিটার প্রস্থের সেতুটি। পুরো সেতুটি নির্মাণে খরচ হয়েছে ১১১৭.৮১ কোটি টাকা। ১৩০ মিটার গভীর পাইলিং করে বসানো হয়েছে পিয়ারটি। ভূমিকম্পের মতো দুর্যোগ থেকে সেতুকে নিরাপদ রাখতে ব্যবহার করা হয়েছে ‘ব্রিজ হেলথ মনিটর’। এ প্রযুক্তিতে সেতুর ক্ষতি হতে পারে এমন অতিরিক্ত ভারি যানবাহন সেতুতে উঠলেও বেজে উঠবে বিপদ সংকেত। এই সেতুর জন্য আলাদা সাব স্টেশনের মাধ্যমে সেতুতে বিদ্যুৎ সরবরাহের মাধ্যমে বাতি জ্বলবে । থাকছে সৌর বিদ্যুতের ব্যবস্থাও।
প্রকল্প কর্মকর্তারা জানান, সরকার ২০১২ সালের মে মাসে সেতু নির্মাণের প্রকল্পে অনুমোদন দেয়। বিদেশি অর্থায়নে নির্মিত প্রকল্পটি ২০১৬ সালের ডিসেম্বরের মধ্যে সেতু নির্মাণ শেষ হওয়ার কথা এবং ব্যয় ধরা হয়েছিল ৪১৩ দশমিক ২৮ কোটি টাকা। কিন্তু সেতুর প্রাথমিক নকশাটিতে অনেক পরিবর্তন এনে পরামর্শদাতারা টেন্ডারের নথি প্রস্তুত করে, দরপত্র প্রক্রিয়ায় প্রতিটি পর্যায়ে দাতা সংস্থার সম্মতি নিতে হয়েছে। ফলে নির্মাণ কাজ শুরু হতে দেরি হয়ে যায়।
এছাড়াও প্রাথমিক পর্যায়ে প্রকল্প ব্যয় একটি ধারণাগত নকশার ভিত্তিতে অনুমান করা হয়েছিল। কিন্তু পরে বিস্তারিত নকশা অনুসারে প্রকৃত নির্মাণ ব্যয় চূড়ান্ত করা হয়। ফলে সেতু নির্মাণ ব্যয় বেড়ে যায়। সর্বশেষ এই সেতুটি নির্মাণে চুক্তিমূল্য ছিল এক হাজার ১৭০ কোটি টাকা। তবে সেতুটি নির্মাণে ব্যয় হচ্ছে এক হাজার ১১৮ কোটি। সাশ্রয় হয়েছে ৫২ কোটি টাকা। এ সেতু নির্মাণের জন্য একনেকে প্রকল্প অনুমোদন হয়েছিল ২০১২ সালের ৮ মে। পরের বছর তেরই মার্চ এটির ভিত্তিপ্রস্তর স্থাপন করা হয়। ২০১৬ সালের ২৪ জুলাই সেতুটির নির্মাণ কাজ শুরু হয়।
পায়রা সেতু প্রকল্পের পরিচালক আবদুল হালিম বলেন, এই সেতুর ফলে পায়রা নদী বন্দর এবং কুয়াকাটা পর্যটন সৈকতের সঙ্গে নিরবচ্ছিন্ন যোগাযোগ তৈরি হলো। কাউকে পথে আর কোন বাধার মুখে পড়তে হবে না। ফেরিতে যে সময় ব্যয় হতো, যে যানজট হতো, তা থেকে মানুষ মুক্তি পাবে। এর ফলে বেশ কিছু সুবিধা আসবে জানিয়ে তিনি বলেন, এসব এলাকায় শিল্পায়ন হবে, ব্যবসা বাণিজ্য সম্প্রসারণ হবে, কুয়াকাটাসহ অন্যান্য এলাকার পর্যটন বিকশিত হবে, সবমিলিয়ে মানুষের আর্থসামাজিক অবস্থার উন্নতি হবে।