নদীর দু’পাড়ে মানুষের উল্লাস

বরিশাল- পটুয়াখালী­- কুয়াকাটা মহাসড়কের লেবুখালীতে পায়রা নদীর দুপ্রান্তে এখন আনন্দের বন্যা ও উল্লাস।

দীর্ঘ প্রতিক্ষার অবসান ঘটিয়ে রোববার সকাল ১১টায় প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা দক্ষিণাঞ্চলবাসীর স্বপ্নের পায়রা সেতু উদ্বোধনের পর সাধারণ মানুষের মধ্যে খুশির বন্যা বয়ে যায়। হাজার হাজার মানুষ পায়রা নদীর দুধারে অপেক্ষায় ছিলেন কখন সেতুটি যান চলাচলের জন্য খুলে দেয়া হবে। এক হাজার ৪৭০ মিটার দীর্ঘ স্বপ্নের পায়রা সেতু যানবাহন চলাচলের জন্য খুলে দেয়া হয়। তার আগে থেকেই অনেক যানবাহন সেতুটির দুপ্রান্তে পারাপারের অপেক্ষায় ছিল। সবাই টোলপ্লাজায় নির্ধারিত টোল দিয়ে সেতুতে ওঠার সুযোগ পায়। প্রায় দেড় হাজার কোটি টাকা ব্যয়ে নির্মিত এ সেতুতে সম্পূর্ণ কম্পিউটারাইজড টোল আদায় পদ্ধতি চালু করা হয়েছে।

তবে রোববার সকাল সাড়ে ১১টার দিকে সেতুটি যান চলাচলের জন্য খুলে দেবার সঙ্গে সঙ্গে বন্ধ হয়ে যায় লেবুখালীর ফেরি সার্ভিস। সঙ্গে সঙ্গে বন্ধ হয়ে যায় ফেরি ঘাটটির পায়রা নদীর দুপাড়ের প্রায় এক হাজার অস্থায়ী ব্যবসা প্রতিষ্ঠানও। দীর্ঘ ৪২ বছর পর ফেরিঘাটে নেমে আসে শুনশান নীরবতা। গত প্রায় ৪২ বছরে এই ফেরিঘাটে নানা ধরনের ব্যবসা করে সহ¯্রাধিক পরিবারের অন্তত ৫ হাজার মানুষ জীবীকা নির্বাহ করে আসছিল। গতকাল সকাল সাড়ে ১১টায় দক্ষিণাঞ্চলের জনগণের দীর্ঘ প্রতিক্ষিত পায়রা সেতু খুলে দেবার মাধ্যমে যবনিকাপাত ঘটলো লেবুখালীর ফেরি সার্ভিস। আর সঙ্গে সঙ্গে নেমে আসে এখানকার সহ¯্রাধিক পরিবারে বিষাদের ছায়া। একে একে বন্ধ হতে দেখা যায় পায়রা নদীর দুপাড়ের ফেরিঘাট কেন্দ্রিক অস্থায়ী দোকানপাট, হোটেল, টিস্টলগুলোর দরজা। এদের প্রায় সবারই চোখেমুখেই ছিল চরম হতাশা ও অনিশ্চয়তার ছাপ। অনেকেই কয়েক যুগের জীবিকা বন্ধের কষ্টে চোখের পানি ধরে রাখতে পারেননি। চা দোকানি হানিফ মিয়া জানান, আমার পিতৃপুরুষের দীর্ঘ ৪০ বছরের ব্যবসা আমার হাতে আজ বন্ধ করে দিতে হলো। আমার মতো এখানে সহ¯্রাধিক পরিবারের ভবিষ্যত কি তা আমরা কেউ জানি না। এমনকি আমরা কিভাবে সংসার চালাব, কিভাবে সন্তানদের লেখাপড়া করাব তাও ভেবে কূল করতে পারছি না।

লেবুখালী ফেরিঘাটের দুপ্রান্তে অস্থায়ী সহ¯্রাধিক দোকান বন্ধের ফলে জীবিকা হারিয়েছে অন্তত ৫ হাজার মানুষ। শুধুমাত্র দোকানি নয় ফেরিকে কেন্দ্র করে প্রতিদিন যে তাজা মাছের বাজার বসত তাও বন্ধ হয়ে গেছে। দোকানগুলোতে কর্মরত শ্রমিকদের জীবনও এখন অনিশ্চিত। এসব দোকানের মালিক, শ্রমিক কর্মচারীরা ইতোপূর্বে কর্মস্থানসহ পুনর্বাসনের দাবিতে একাধিকবার মানববন্ধনসহ নানান কর্মসূচি পালন করেছেন। সে সময়ে স্থানীয় উপজেলা নির্বাহী কর্মকর্তা সরকারের ননামুখী পুনর্বাসন কর্মসূচির কথা জানিয়ে জীবিকা হারানো এসব মানুষের জন্য যতদূর সম্ভব সব কিছু করার কথা জনালেও বাস্তবে কিছুই হয়নি।

সোমবার, ২৫ অক্টোবর ২০২১ , ০৯ কার্তিক ১৪২৮ ১৭ রবিউল আউয়াল ১৪৪৩

নদীর দু’পাড়ে মানুষের উল্লাস

মানবেন্দ্র বটব্যাল, বরিশাল

বরিশাল- পটুয়াখালী­- কুয়াকাটা মহাসড়কের লেবুখালীতে পায়রা নদীর দুপ্রান্তে এখন আনন্দের বন্যা ও উল্লাস।

দীর্ঘ প্রতিক্ষার অবসান ঘটিয়ে রোববার সকাল ১১টায় প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা দক্ষিণাঞ্চলবাসীর স্বপ্নের পায়রা সেতু উদ্বোধনের পর সাধারণ মানুষের মধ্যে খুশির বন্যা বয়ে যায়। হাজার হাজার মানুষ পায়রা নদীর দুধারে অপেক্ষায় ছিলেন কখন সেতুটি যান চলাচলের জন্য খুলে দেয়া হবে। এক হাজার ৪৭০ মিটার দীর্ঘ স্বপ্নের পায়রা সেতু যানবাহন চলাচলের জন্য খুলে দেয়া হয়। তার আগে থেকেই অনেক যানবাহন সেতুটির দুপ্রান্তে পারাপারের অপেক্ষায় ছিল। সবাই টোলপ্লাজায় নির্ধারিত টোল দিয়ে সেতুতে ওঠার সুযোগ পায়। প্রায় দেড় হাজার কোটি টাকা ব্যয়ে নির্মিত এ সেতুতে সম্পূর্ণ কম্পিউটারাইজড টোল আদায় পদ্ধতি চালু করা হয়েছে।

তবে রোববার সকাল সাড়ে ১১টার দিকে সেতুটি যান চলাচলের জন্য খুলে দেবার সঙ্গে সঙ্গে বন্ধ হয়ে যায় লেবুখালীর ফেরি সার্ভিস। সঙ্গে সঙ্গে বন্ধ হয়ে যায় ফেরি ঘাটটির পায়রা নদীর দুপাড়ের প্রায় এক হাজার অস্থায়ী ব্যবসা প্রতিষ্ঠানও। দীর্ঘ ৪২ বছর পর ফেরিঘাটে নেমে আসে শুনশান নীরবতা। গত প্রায় ৪২ বছরে এই ফেরিঘাটে নানা ধরনের ব্যবসা করে সহ¯্রাধিক পরিবারের অন্তত ৫ হাজার মানুষ জীবীকা নির্বাহ করে আসছিল। গতকাল সকাল সাড়ে ১১টায় দক্ষিণাঞ্চলের জনগণের দীর্ঘ প্রতিক্ষিত পায়রা সেতু খুলে দেবার মাধ্যমে যবনিকাপাত ঘটলো লেবুখালীর ফেরি সার্ভিস। আর সঙ্গে সঙ্গে নেমে আসে এখানকার সহ¯্রাধিক পরিবারে বিষাদের ছায়া। একে একে বন্ধ হতে দেখা যায় পায়রা নদীর দুপাড়ের ফেরিঘাট কেন্দ্রিক অস্থায়ী দোকানপাট, হোটেল, টিস্টলগুলোর দরজা। এদের প্রায় সবারই চোখেমুখেই ছিল চরম হতাশা ও অনিশ্চয়তার ছাপ। অনেকেই কয়েক যুগের জীবিকা বন্ধের কষ্টে চোখের পানি ধরে রাখতে পারেননি। চা দোকানি হানিফ মিয়া জানান, আমার পিতৃপুরুষের দীর্ঘ ৪০ বছরের ব্যবসা আমার হাতে আজ বন্ধ করে দিতে হলো। আমার মতো এখানে সহ¯্রাধিক পরিবারের ভবিষ্যত কি তা আমরা কেউ জানি না। এমনকি আমরা কিভাবে সংসার চালাব, কিভাবে সন্তানদের লেখাপড়া করাব তাও ভেবে কূল করতে পারছি না।

লেবুখালী ফেরিঘাটের দুপ্রান্তে অস্থায়ী সহ¯্রাধিক দোকান বন্ধের ফলে জীবিকা হারিয়েছে অন্তত ৫ হাজার মানুষ। শুধুমাত্র দোকানি নয় ফেরিকে কেন্দ্র করে প্রতিদিন যে তাজা মাছের বাজার বসত তাও বন্ধ হয়ে গেছে। দোকানগুলোতে কর্মরত শ্রমিকদের জীবনও এখন অনিশ্চিত। এসব দোকানের মালিক, শ্রমিক কর্মচারীরা ইতোপূর্বে কর্মস্থানসহ পুনর্বাসনের দাবিতে একাধিকবার মানববন্ধনসহ নানান কর্মসূচি পালন করেছেন। সে সময়ে স্থানীয় উপজেলা নির্বাহী কর্মকর্তা সরকারের ননামুখী পুনর্বাসন কর্মসূচির কথা জানিয়ে জীবিকা হারানো এসব মানুষের জন্য যতদূর সম্ভব সব কিছু করার কথা জনালেও বাস্তবে কিছুই হয়নি।